সেক্স, বিয়া আর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়া একটা কথা

এই জিনিসটা বেশ কিছুদিন ধইরাই চোখে পড়তেছে আমার ফেইসবুক নিউজফিডে, আলাদা আলাদাভাবে অনেকেই এইরকম সাজেশন দিছেন যে, বিয়া করা হইতেছে সেক্সুয়াল সব সমস্যার সমাধান 🙂 নো ডাউট, এই ধরণের সাজেশন যারা দিতেছেন, তাদের বেশিরভাগই লাইফে এখনো বিয়া করেন নাই; তো, বিয়া করলেই উনারা এই সাজেশন দেয়া বন্ধ কইরা দিবেন – এইটা আমার পয়েন্ট না; আমার পয়েন্ট হইতেছে, একজন অ্যাডাল্ট পারসনের কন্সটেন্ট একজন সেক্স-পার্টনার থাকাটা সবসময়ই ভালো; কিন্তু বিয়ার উদ্দেশ্য খালি লেজিটিমেট সেক্সের ঘটনা না; বরং সোশ্যাল সেন্সে, অনেক বেশি সম্পত্তির উত্তরাধিকার কন্টিনিউ করার একটা ঘটনা।

দুইটা সহজ হিসাব করতে বলবো আমি; পয়লা জিনিস হইলো, বাংলাদেশে যা সম্পত্তি আছে, এর কতো ভাগের মালিক পোলা, আর কতো ভাগের মালিক মাইয়া? আর দুসরা জিনিস হইলো এর কতো ভাগ আসলে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া?

উত্তরগুলা কম-বেশি হয়তো আন্দাজ করতে পারবো আমরা। আমার অনুমান হইতেছে, ৭০%-৮০% বা তার চাইতেও বেশি সম্পত্তির (জমি-জিরাত, বিল্ডিং, কোম্পানি, টাকা-পয়সা-সেভিংস) মালিক পোলারাই; আর দেখবেন, এর বেশিরভাগই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। (আরেকটা ব্যাপার হইতেছে, অনেকে বউয়ের নামে সম্পত্তি কিনেন, টাকা লুকাইবার লাইগা; কিন্তু অই সম্পত্তির উপ্রে বউয়ের তেমন কোন দখল থাকে না। যেমন কক্সবাজারে বদি’র বউ হইলেন এমপি; কিন্তু পাওয়ার এক্সারসাইজ বদি’র করার কথা। এইরকম। তো, অইটা স্ট্যাস্টিকস দিয়া এতোটা বুঝা যাওয়ার কথা না।…) এই ট্রান্সফার অফ এসেট একটা বিয়ার সম্পর্ক ছাড়া সম্ভব না কখনোই। আপনি যদি বিয়া না-ও করেন, পোলা-মাইয়া না-ও থাকে, আপনার ভাই-ভাতিজারাই এই সম্পত্তির মালিক হবে; মানে, পরিবার, বিয়া সম্পর্কের বাইরে সম্পত্তির মালিকানা খুববেশি যাইতে পারে না। দান-খয়রাত, ট্রাস্ট্রি… এইগুলা যাদের অনেক অনেক সম্পত্তি আছে, তাদের ব্যাপার; খুব চালু জিনিসও না, সোসাইটিতে।

আমি বলতে চাইতেছি, সম্পত্তির উত্তরাধিকার ধইরা রাখার জন্য পাবলিক বিয়া করে – ঘটনাটা তা না; কিন্তু বিয়া’র ওয়ান অফ দ্য মেজর ইমপ্লিকেশন এইটা। তো, ‘নারী অধিকার’ এর জায়গা থিকা বিয়া’র ঘটনাটাতে যদি সেক্সের বদলে সম্পত্তির উত্তরাধিকার’রে আপনি সেন্টার পয়েন্ট হিসাবে ভাবতে পারেন, আপনি সেক্স করা বাদ দিয়া দিবেন না, বরং এই যে সম্পত্তির ট্রান্সফারের জায়গাটা, এইখানে নজর বেশি দিতে পারবেন। আর বুঝতে পারবেন, ‘অধিকার’ জিনিসটারে যে আমরা চাকরি করা, সেক্স করা, নিজের মতো থাকতে পারার সাথে এসোসিয়েট করতেছি, সেইটা অনেক বেশি ‘মালিকানা’র সাথে জড়িত একটা ঘটনা।

 

চিন্তা করেন, আপনার বাপের দুইটা বাড়ি আছে, আপনারা দুই বইন; আপনার বাপ যদি উইল না কইরা দিয়া যান, তাইলে মারা যাওয়ার পরে আপনার বাপের বিল্ডিংয়ের মালিক কিন্তু আপনারা পুরাপুরি হইতে পারবেন না! (এইরকমই জানি আমি।) অথচ যদি আপনারা মালিক হইতে পারতেন, নিজেরা বিল্ডিংয়ের ‘মালিক’ হিসাবে, ভাড়া বাসার চাইতে বেশি ‘অধিকার’ নিয়া থাকতে পারতেন তো!
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, নারী অধিকারের অন্য সব ইস্যু নিয়া কথা বলা যাবে না – তা না; কিন্তু যারা এই ব্যাপারটা নিয়া ভাবেন, তারা যদি এই উত্তরাধিকার আইন নিয়া যদি ‘লড়াই’ও না ঠিক, এই জায়গাটা নিয়া ভাবতে রাজি করাইতে পারেন নিজেদেরকে, ব্যাপারটা অনেক বেশি এফেক্টিভ হওয়ার কথা।

এই জায়গায় বইলা রাখা ভালো, “কোন কিছুই চেইঞ্জ হয় না” – আমি এই ভাবনার লোক না। একটা ছোট্ট চেইঞ্জের কথা বলতে পারি, এইখানে। “মাটির প্রজার দেশে” নামে একটা এনজিও-সিনেমা দেখছিলাম দুয়েক বছর আগে, যেইখানে দেখায় যে, বাপের নাম থাকে না বলে, এক বাচ্চারে স্কুলে ভর্তি নিতে চায় না; কিন্তু ফ্যাক্ট হিসাবে এইটা ভুল হওয়ার কথা। কারণ আমি যদ্দুর জানি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে আপনার মায়ের নামটাই হইতেছে প্রায়োরিটি; মানে যদি একজন প্যারেন্টের নাম লেখতে হয়, তাইলে সেইটা হবে মায়ের নাম; বাপের নাম না থাকলেও চলবে। (আমি শিওর না পুরাপুরি, কোন আইন জানা ফ্রেন্ড থাকলে ঠিকঠাক বইলেন। আমি যেইটা খেয়াল করছি ক্রেডিট কার্ডের জন্য বা কোন ব্যাংকিং ইনফরমেশন জানার জন্য কল-সেন্টারে কল করলে ভাইটাল ইনফরমেশন হিসাবে, মায়ের নামটাই জিগায়, বাপের না। কোন আইন না থাকলে এইটা হওয়ার কথা না।) এই চেইঞ্জের ঘটনাটা খুব বেশিদিন আগের কথা না, ১৯৯০’র আগে-পরে হবে মেবি।…
এইটাতে খুব বেশি যে কিছু চেইঞ্জ হইছে – তা না; কিন্তু আইডেন্টিটি’র জায়গাটাতে মা’রে যেহেতু সেন্টার করা যাইতেছে, সম্পত্তির জায়গাতেও মেয়ে এবং বইনরে সমান হিস্যা দেয়ার বা এখন যা আছে, তা থিকা হিস্যা বাড়ানোর প্রস্তাব তোলা যাইতে পারে। আইনিভাবে করলেই সমাজে সেইটা প্রাকটিস হিসাবে চালু হয়া যাবে – তা না; কিন্তু ক্লেইম করার রাস্তাটা অন্তঃত শুরু হইতে পারবে।…

রাষ্ট্রের আইন যেমন সহজে চেইঞ্জ করা যায় না, সমাজের নিয়মও একদিনে পাল্টায় না। কিন্তু কোন জায়গাটারে চেইঞ্জ করতে হবে – এইটারে কনশাসলি লোকেট করতে না পারলে চেইঞ্জগুলা আসতে আরো বেশি সময় লাগার কথা।

 

Leave a Reply