হে মূলধারা, থিওরী অফ বাইনারি এবং অভিযোজন-প্রিয় ব্যাঙের কাহিনি

ব্যাপারটা সামান্যই। কিন্তু এর ইমপ্লিকেশন সামান্য না।

গত মাসে [নভেম্বর, ২০১৩-তে] ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়া হে ফেস্টিভ্যাল নামে যে প্রোগ্রাম হইছিল সেই বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার শিল্প-সাহিত্য পাতায় এইটা নিয়া লিখেন শুভময় হক, নভেম্বর বাইশ, দুইহাজার তের সনে (ইংরেজি)। সেইখানে তিনি লিখেন – (কোট) বাংলাদেশের মূলধারার অনেক কবি লেখকদের অনুপস্থিতি দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। (আনকোট) লেখক মূলধারার কবি লেখকদের নামও নিছেন, নিয়া বলছেন যে তাদেরকে, (কোট) ‘…হে উৎসবে দেখা যায়নি। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে উৎসবটি নিশ্চয় আরো পূর্ণতা পাবে।’ (আনকোট) শুভময় হক-এর লেখায় এবং প্রথম আলো’র ইনডোর্সমেন্টে বাংলাদেশের মূলধারার কবি লেখকরা হইলেন – (কোট) ‘নির্মলেন্দূ গুণ, মঞ্জু সরকার, মঈনুল আহসান সাবের, ওয়াসি আহমেদ, নাসরীন জাহান, ব্রাত্য রাইসু, কামরুজ্জামান কামু, অদিতি ফাল্গুনীসহ আরো অনেকেই’। (আনকোট) ত, এই নামগুলি একইসাথে উচ্চারিত হইবার নিশ্চিতভাবেই একটা গুরুত্ব আছে, কিন্তু সেই প্ররোচনারে এইখানে ইগনোরই করা গেলো। কারণ আমার আগ্রহের জায়গাটা মূলধারা নিয়া।[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

এইখানে মূলধারার আইডেন্টিফিকেশনটাই জরুরি, তাদের ইনক্লুড করা বা না-করাটা ঘটনা না। কারণ জরুরি হইতেছে এই মূলধারার সাপেক্ষে একটা নতুন কিছু’রে ক্লেইম করা; মূলধারা যদি না থাকে তাইলে এই কাজকামের (হে ফেস্টিভ্যালের) কোন ভ্যালুই তৈরি হইতে পারে না। প্রতিদ্বন্দ্বী যত শক্তিশালী, পক্ষতা তত জরুরি। হে ফেস্টিভ্যাল তখনই একটা অবস্থান হইতে পারে যখন এর বিপরীতে বাংলাসাহিত্যের মূলধারা বইলা একটা কিছুর অস্তিত্ব থাকে। এই দুইটা পারস্পরিক ভিন্নতা বা বাইনারি দিয়া যে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হইতেছে, সেইটা ভয়ংকর; যদ্দূর পর্যন্ত ভাবা যায় তার চাইতেও বেশি হওয়ার কথা।

কয়েকটা উদাহারণ দিয়া এইটা বোঝা যাইতে পারে। একদম এসট্রিম যদি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসী আদর্শের পরিস্থিতি। জার্মানিতে ইহুদিরা তখন সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক নানান দিক দিয়াই আপার-ক্লাশ, শক্তিশালী এবং এইটা মিথ্যা না; কিন্তু নাৎসীদের জন্য জরুরি ছিল এই ইমাজিনেশন’টা যে, তারা যখন এতোটা পাওয়ারফুল, তখন এরা কী-ই না করতে পারে! হয়তো পিপল তখন ভাবতে পারে নাই যে একটা সম্ভাব্য ধ্বংসযজ্ঞরে এড়াইতে গিয়া তারা অবিশ্যম্ভাবী ধ্বংসযজ্ঞের পার্ট হইতে যাইতেছে। যে কোনভাবেই হোক, ইহুদি এবং নাৎসী – এই দুইটা বিষয় বা আদর্শ এমনভাবে বৃত্ত’টারে তৈরি করছিল যে, আপনারে এর দুইটার একটাতে নাম লিখাইতে হইবো। কিন্তু ইহুদি-আধিপত্য বিরোধী হইতে গিয়া আপনি ত নাৎসী সমর্থক হইতে পারেন না! কিন্তু সত্য এবং মিথ্যা যদি এই আকারে উপস্থাপিত হয় তখন এইটা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চুজিংয়ের সমস্যা না, বরং উপস্থাপনাটারই সমস্যা। অবশ্য এইখানে রাজনৈতিক কল্পনা কেমনে সাহিত্যিক বাস্তবতারে এমপ্লিফাই করে সেইটা নিয়াও আলাপের সম্ভাবনা আসে; তবে পরেও বলা যাইতে পারে।

আবার, খুব মিনিমাম একটা উদাহারণের কথা যদি বলেন, টুথপেস্ট নিয়া বলা যায়। এখন পর্যন্ত দাঁত মাজার পেস্টের দুইটা পপুলার ক্যাটাগরিই সম্ভব – জেল এবং ফ্লুরাইড। আপনি পিএনজি’র কোলগেটে সম্ভাব্য সব ভ্যারিয়েশনই পাইবেন অথবা ইউনিলিভা্র-এর ক্ষেত্রে ক্লোজ-আপ এবং পেপসোডেন্টে এই দুইটা নিড-ই ফুলফিল করতে পারবেন; যদিও পণ্য শুধুমাত্র তা-ই না যে ভ্যালুটা সে প্রোভাইড করে; এবং তার অতিরিক্ততাই পণ্যরে তৈরি করেতেছে। সেই আলাপ স্থগিত রাখলেও, এই যে ইমাজিনেশন তারে স্যাটিসফাই করতে পারার সমক্ষমতার যত সম্ভাব্য রাস্তা আছে, তার মধ্যেই তারা অপারেট করে এবং সম্ভাব্য নতুন-ভাবনারে শুধু অউন করা না, তার প্রসেসটারে কন্ট্রোল এবং ডিকটেট করার মাধ্যমে সাসটেইন করে।

বাংলাসাহিত্যের মূলধারা আবিষ্কার এবং হে ফেষ্টিভ্যাল এইরকম একটা উদাহারণই আসলে।

 

২.

এই থিসিসটারে যদি পলিটিক্যাল জায়গাটাতে এপ্লাই করেন দেখবেন সেই প্রথম গালফ ওয়ার থিকাই আম্রিকা এবং ইসলাম – দুইটা অপোনেন্ট মিইলাই বিশ্ব-ব্যবস্থার বাইনারিটা তৈরি করতেছে। আপনি ব্রডলি বুশরে সার্পোট দিবেন তা নাইলে সাদ্দামরে। এইখানে থার্ড কোন স্ট্যান্ড নাই, ইথিক্যালি; এই যে না-থাকতে পারা এইটাই মোটামুটি কমিউনিস্টদেরকে দুনিয়াতে বাতিল কইরা দিতে পারছে। উনারা লিবারাল-ডেমোক্র্যাটদের নকল মানবিকতার খপ্পরে পড়ছেন অথবা ইসলামী বিপ্লবের রোমাণ্টিসিজমে হাবুডুবু খাইতেছেন। কিন্তু একইসাথে আম্রিকা এবং ইসলাম এই বাইনারিটার কোন মোকাবিলার মধ্যে নিজেদেরকে রাখতে পারতেছেন না আর।

বাইনারি’র বৃত্তটা তৈরি হয় আসলে একটা কিছুরে ‘মূল’ বা কেন্দ্র ধইরাই। হে ফেস্টিভ্যালের ক্ষেত্রে ‘বাংলা-সাহিত্য’; আম্রিকা’র ক্ষেত্রে ‘সভ্যতা ও গণতন্ত্র’; একইভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্র হিসাবে আর্বিভূত হইতে পারছে – ঊনিশো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এইটা বাদ দিয়া রাজনৈতিক পক্ষতা তৈরি করা অসম্ভব না হইলেও, কঠিনই এখন।

এখন এই বাইনারিটার কয়েকটা ইন্টেলেকচুয়াল সমাধান অবশ্য কয়েকটা তৈরি হইছে। এর মধ্যে অন্যতম হইলো পোস্টমর্ডান মাল্টিপল; যে, বিচার কি ও কেন, কেমনে? শুধুমাত্র এইটা কেন? ইত্যাদি। কিন্তু এই পদ্ধতিটা আসলে কোনভাবেই বাইনারিটারে বাতিল করতে পারে না; অন্যান্য ইস্যু’র সাথে জড়ানোর মাধ্যমে নতুন নতুন কেন্দ্র আবিষ্কারের ভিতর দিয়া তারে কম ভাবনা-যোগ্য বইলা প্রমাণ করতে থাকে। ইস্যু হিসাবে একদিক দিয়া এড়ানো মাধ্যমে যেন সমাধান করা গেলো, এই সাজেশনই দেয়।

 

৩.

এই সাজেশনটা, ব্যাঙের গল্পটার মতোই অনেকটা। আমার ধারণা, এইটা অনেকেই আমার মতো আবছাভাবে জানেন যে, ব্যাঙ আসলে অভিযোজন-প্রিয় প্রাণী; এতোটাই যে, আপনি যদি একটা বোলে (বা বৃত্তেও পড়তে পারেন) গরম পানি রাখেন এবং তার মধ্যে একটা ব্যাঙ, শে নিজের শরীরের তাপমাত্রারে তার সাথে অ্যাডজাস্ট কইরা বাঁইচা থাকতে চাইবে। আপনি যদি হিট আরো বাড়াইয়া দেন, পানি যদি আরো গরম হয়, ব্যাঙ তত নিজের শরীররে অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করতে থাকবে; এইরকম শে করতেই থাকবে, আনটিল শি ডাই! এখন, এই ইন্টেলেকচুয়ালিটি পাবলিকরে ভাবে ব্যাঙ, কয়, ব্যাটা লাফ দে!

ঠিকাছে, এইটা বলা/করা যাইতেই পারে। কিন্তু আমার ধারণা, এইখানে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রবণতাটাই হইতেছে ব্যাঙ-এর কাউন্টার পার্ট, যে খালি ফাল মাইরা বাইরাইয়া যাইতে চায়। গরম পানির রিয়ালিটি’টারে অস্বীকার করার ভিতর দিয়াই তার বুদ্ধিবৃত্তিকতার শুরু সম্ভব হয়। কিন্তু যদি একইসাথে পানি’র গরম হওয়া বিষয়ে সাজেশন হাজির করতে না পারে, এই মাল্টিপল’রে এস্কেপিস্ট ভাবা ছাড়া ব্যাঙটা আর কি করতে পারে?

 

Leave a Reply