কবিতা: জুলাই, ২০২৩

বর্ষাকাল

বিস্টি ভালো, বাতাসও ভালো
ভালো শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়া দেখা বিস্টি ও বাতাস
তোমার কথা-ভাবা আর কোনদিনই দেখা-না-হওয়া

সন্ধ্যায় লেখা সকালের কবিতা

কতকিছু যে লেখার বাকি রইয়া গেলো!
তারপরে মনে হয়, এতোসব লেখারও তো কিছু নাই!

সময় যাইতেছে ধীরে ধীরে সকালের রিকশাটার মতো,
তারপরে উল্টায়া যাইতেছে আবার, সন্ধ্যায়

সূর্য যেইরকম উঠলো আর ডুইবা গেল

ওয়েটিং রুম

“কেউ নেই”র হাতে আমরা নিজদেরকে সইপা দিলাম,
টিভি’তে দেখাইতেছিল ক্রিকেট খেলা
কোন কিছুর দিকে তো চায়া থাকতে হবে আমাদেরকে
তাই আমরা দেখতেছিলাম

বাথরুমের দরজার সামনে দুইটা সেন্ডেল
দুইটা চোখ হয়া দেখতেছিল আমাদেরকে
আমরা অদেরকে না-দেখার ভান করতেছিলাম
আর তখন টিভিতে নিউজ-প্রেজেন্টার মেয়েটা
চোখ বড় বড় কইরা মারামারি’র খবর পড়তেছিল

বলতেছিল, এই, তুমি ভয় পাও না কেন! কি সমস্যা তোমার!
আমি কি মজার আরেকটা খবর পড়বো তাইলে এখন?

তাঁর ঝিঁকিমিকি দাঁতের হাসি
কু ঝিকঝিক কু ঝিকঝিক কুঝিকঝিক

প্লাটফর্ম ছাইড়া চলে যাইতেছে ট্রেন

গোরস্থান

এইখানে আছে শিয়ালগুলি
আর এইখানে আছে আমার কবর

অরা মাটি খামচায়া বাইর করতেছে আমার লাশ

চান্দের আলোতে চক চক করতেছে অদের চোখ, ঘৃণায়

আর তাড়াহুড়া করতেছে
স্টেশন থিকা রাত বারোটার লাস্ট লোকাল ট্রেইন
ছাইড়া যাওয়ার আগেই যেন শেষ করতে হবে অদের কাজ

কবরের ভিতরে আমার লাশ
আমার কবর খুঁড়তেছে কয়েকটা শিয়াল, সা রা রা ত

জীবনানন্দ X জসীমউদ্দীন

“পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।”
“কাল সে আসিবে, মুখখানি তার নতুন চরের মতো”
Continue reading

কবিতা: জুন, ২০২৩

বিউটিফুল

সুন্দর হয়া বইসা থাকো,
সুন্দর হয়া থাকা ছাড়া আমাদের তো আর কোন কাজ নাই

তারপরও সুন্দর হয়া থাকতে আমাদের টায়ার্ড লাগে
আমরা তো একসাইটিং হইতে চাই, আন-প্রেডিক্টেবলও
আর এই কারণেই না আমাদেরকে সুন্দর লাগে!

সুন্দর হাসে, সুন্দর হাঁটে
সুন্দর চুপচাপ বইসাও থাকে
বলে, আজকে আমাদের মন খারাপ;

তখন তাঁরে কি আরেকটু বেশি সুন্দর লাগে?
যেইরকম গরমের দিন শেষে আকাশে উঠে চান্দ?

একটা সুন্দর ফটো’র মতো ঘুরতে থাকে,
একটা সুন্দর সুরের মতো মনে পড়তে থাকে
আর তারপরে মন-খারাপ হয় আমাদেরও
কারণ আমার জানি, এই সুন্দর হারায়া যাবে,
হারায়া যাবো আমরাও তার সাথে

হেই সুন্দর,
তুমি সুন্দর হয়া আরেকটু বইসা থাকো!

তিন পাগলের মেলা

একটা পার্ট অফ মি
আরেকটা পার্ট অফ মি’রে বলতেছে,
আমরা দুইজনে মিইলাই পুরাটা, তাই না?

এই কথা শুইনা
আরেকটা পার্ট অফ মি হাসতেছে,
আরো কত কত আয়নাতে যে তারে দেখা যাইতেছে!

অনেকগুলা আমি তখন অনেকগুলা আমি’রে বলতেছে
আমারে তুমি চিনলা না!
যেন এতোই সহজ একটা জিনিস; সহজ ও স্বাভাবিক

নিউ হাওড়া বেকারি

হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে
হাওড়া বেকারি-তে আসছি

এসি’র বাতাসে বইসা খাইতেছি ফালুদা
গোলাপি ও শাদা

যদিও সন্ধ্যা,
তারপরেও গরম, বাইরের বাতাস
যেন দেশি বাংলা-ভাশায়
কেউ খিস্তি করতেছে

ভুস ভুস কইরা গাল ফুলাইয়া
চেততেছে সূর্য, কাছাকাছি কোথাও
আর তার মা পেরেশান হয়া তারে ডাকতেছে,
“ঘুমাইবা না সুরুয মিয়া,
ও সুরুয মিয়া, ঘুমাইবা না…”
Continue reading

নোটস: জুলাই, ২০২৩

জুলাই ০১, ২০২৩

Break Point

১. ঈদের ছুটিতে Break Point’র ১০টা এপিসোড দেইখা শেষ করলাম। স্পোর্টস ডকুমেন্টারি হিসাবে ভালো হইছে জিনিসটা। টেনিসের কয়েকটা গ্যান্ড স্লাম ট্রফি নিয়া বানানো।

২. নরমালি যেইরকম হয়, স্পোর্টস ডকু-তে তো কোন না নো হিরো’রে হাইলাইট করা হয়। এইখানে ঘটনা এইরকম না; মানে, হিরো আছে, হিরোজম-ও আছে; কিন্তু ফেইলওরও আছে। অনেকটা যেন অডিয়েন্স’স পিক; একজনরে ফলো করতে থাকলেন টুর্নামেন্টের শুরুতে, কিন্তু দেখা গেলো সে/শে জিততে পারলো না, শেষে। জয়-পরাজয় না, ইভেন্টস হইতেছে গিয়া সেন্টার ঘটনা।

৩. মাল্টিপল প্লেয়ার আছে এইখানে; বেশিরভাগই টপ টেনের লোকজন; কিন্তু সবাই গ্রেট না। গ্রেট এবং এভারেজের ডিফরেন্সটাও আসলে টের পাওয়া যাইতেছে। যেমন, আমার ভাল্লাগছে Iga Świątek’রে। ফানি, উইটি এবং কম্পোজড বইলা না, এইটা হইতেছে নরমালিটি একটা তাঁর কাছে, এইরকম গ্রেট হওয়াটা। অন্যরা, অনেকেই নরমাল হিসাবে, ইন্টারনাল অবস্থা হিসাবে নিতে পারতেছে না! যেন এইটা বাইরের একটা জিনিস, যা এচিভ করা লাগবে! আর ইগা’র ঘটনাটা হইতেছে ইন্টারনাল; আমার ভিতরে তো আছে জায়গা’টা, অইখানে থাকতে পারতে হবে। আর অন্যরা, অনেকেই অই জায়গাটাতে যাওয়ার ট্রাই করতেছে, এইরকম।

৪. টনি নাদালের জায়গাটাও ইন্টারেস্টিং লাগছে। সে ফ্যামিলি’রে ছাড়তে রাজি না! কয়েকটা দামি কথা বলছে সে; যে, আপনি যদি কাউরে রেসপেক্ট না করেন, তার কাছ থিকা তো কিছু শিখতে পারবেন না! আর যদি কারোর দমের/প্রতিভার উপরে যদি আপনার বিশ্বাস না থাকে, তাইলে তো তারে মন থিকা কিছু শিখাইতে পারবেন না। এইরকম খুচরা কাহিনি সব এপিসোডেই কম-বেশি আছে।

৫. কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান নিক কিওরিঅস’রে যতোই জাস্টিফাই করা হোক, ভাল্লাগে নাই। বরং ফিল করা গেছে যে, এন্টারেটেইনিং ইজ ইরিটেটিং আসলে!

৬. ইন্টারেস্টিং লাগছে বেলারুশের Aryna Sabalenka-রেও। পলিটিকাল ক্রাইসিস কেমনে মানুশের পারসোনাল জায়গাটারে এফেক্ট করে, নার্ভাস-ব্রেক ডাউনের একটা কারণ হয়া উঠতে পারে, সেই জিনিসটারে (অবভিয়াসলি পশ্চিমাকরণের জায়গা থিকা) হাইলাইট করলেও জিনিসটারে ডিগ-ডাউন করা হয় নাই আসলে। যেইরকম Ons Jabeur’র কেইসটা ফার্স্ট আফ্রিকান, আরব ওমেন হিসাবে গ্লোরিফাই করা হইতেছে, সেলিব্রেট করা হইতেছে, কিন্তু একইসাথে টেনিস জিনিসটা যে একটা ইউরোপ-আম্রিকান গেইম, এই জায়গাটা ওভারলুক করতে পারাটা এতোটাই ইম্পসিবল যে, এই কারণেই যেন মিসিং!

৭. তবে গ্রেটনেসের জায়গাটাতে একটা সাজেশন কিছুটা চোখে লাগছে, যেইটা ক্রিস এভার্ট-ও বলতেছিলেন Ajla Tomljanović’র ব্যাপারে অনেকটা যে, টুউ মাচ পোলাইটনেস উইল কিল ইউর থিংকস! Taylor Fritz’র ব্যাপারেও ব্যাপারটা ফিল করা যায় অনেকটা যখন সে তার বাচ্চার সাথে আলাপের ব্যাপারে বলে যে, সে তো দুনিয়ার সেরা টেনিস প্লেয়ার না! এইটা তার পোলাইটনেসই এক রকমের। (সে যে কেন হলিউডের হিরো হইলো না 🙂 ) তো, ব্যাপারটা এইরকম না যে, উনারা পোলাইট বইলা গ্রেট না, বরং উনারা সার্টেন এরিয়ারে পুশ করার বাটনটা খুঁইজা পাইতেছে না আসলে।

৮. তো, টেনিসের ভালো-রকম একটা ডিসপ্লে হইছে ডকু’টা। নেরেটিভের ধরণটা লিনিয়ার না হয়া যে নানান দিক থিকা আগাইছে অইটা ভালো হইছে, সাসপেন্স ক্রিয়েট করতে পারছে। (ডকু-তে সাসপেন্স লাগে না বা না হইলেও চলে – এইটা খুবই ভুল-চিন্তা।)

৯. এমনিতে আমি তো ডকু-লাভার। একটা সময়ে যেইরকম খালি গল্প-উপন্যাস ছিল পড়ার বই, নন-ফিকশন ছিল খুবই পাইনশা; সিনেমাতেও আমার ধারণা ডকুমেন্টারি অই অবস্থাটাতে আছে এখনো; কিন্তু আরো অনেক ভাস্ট এরিয়া এক্সপ্লোর করার বাকি আছে আসলে, এইখানে। Continue reading

নোটস: জুন, ২০২৩

অবিচুয়ারি: সিরাজুল আলম খান

আমাদের চোখের সামনে আমরা যা যা কিছু দেখি তা তো সত্যি না পুরাপুরি; বরং আমাদের দেখাদেখির ঘটনাটাই অনেক বেশি বায়াসড হয়া থাকে; কিন্তু তাই বইলা যা কিছু আমরা দেখি না, বা যা কিছু গোপনে ঘটে, সেইসব কিছু গোপন বইলাই সেইগুলা বেশি সত্যি না আর কি!

মানে, ফ্রন্টলাইনে, নিউজপেপারের হেডলাইনে যা ঘটছে এবং এর বাইরে ‘ব্যাক সাইডে’ যারা আছেন বা ছিলেন – এই গ্রুপ মিইলাই হিস্ট্রির ঘটনাগুলা ঘটান নাই; হিস্ট্রিরে একটা লিনিয়ার লাইন হিসাবে দেখতে গেলেই বরং এই ধরণের ইলুশন/বিভ্রমের তৈরি হয়। যেন কতগুলা মানুশ গোপনে শলা-পরামর্শ কইরা হিস্ট্রি তৈরি কইরা ফেলতেছেন! বা মানুশের করার কিছু নাই, ইতিহাস তার ‘নিজের গতিপথে’ চলতেছে! দুইটাই এইরকম লিনিয়ারিটির কথা।

আমরা যে কোন সময়েই একটা হিস্ট্রিকাল রিয়ালিটির ভিতরে আছি, আর এর ভিতরেই ইন্টারএক্ট করতেছি। হিস্ট্রিরে আমরা কিভাবে দেখতেছি, সেইটাই আবার হিস্ট্রিতে আমরা কি কন্ট্রিবিউট করতে পারতেছি, সেইটারে পসিবল কইরা তুলে। হিস্ট্রিকাল রিয়ালিটিরে বদলানোর জন্য হিস্ট্রির আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা জরুরি একটা জিনিস।

সিরাজুল আলম খান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওমিলিগের স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ছাত্রলিগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৩-৬৪ এবং ১৯৬৪-৬৫), দুই বছর। কিন্তু অই দুই বছরই ডাকসু ইলেকশনে ছাত্রলিগ জিততে পারে নাই, ছাত্র ইউনিয়নই মেবি জিতছিল। মানে, ছাত্রলিগ বড় স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন না হইলেও এক ধরণের ‘সাংগঠনিক বিস্তার’ হইতেছিল; যার ক্রেডিট সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সিরাজুল আলম খান পাইছেন, উনার কন্ট্রিবিউশনও মেবি ছিল কিছু। তখনকার দিনে তো ‘বিপ্লব’ অনেকবেশি বেচা হইতো; তো, ছাত্রলিগ কইরাও আপনি ‘বিপ্লবী’ হইতে পারেন – এইটাই ছিল সিরাজুল আলম খানের সবচে বড় পলিটাকাল কন্ট্রিবিউশন। পরেও এইরকমের ‘বিপ্লবী-জোশ’ যারা ধইরা রাখতে চাইছেন, তারা তাদের সামনে আইকন হিসাবে সিরাজুল আলম খানরে দেখতে পাইছেন।

কিন্তু ছাত্রলিগ শুরু থিকাই ছিল আওমিলিগের স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন। ছাত্র ইউনিয়ন সৌললি সিপিবি’র জিনিস ছিল না, কিছুটা ইন্ডিপিন্ডেডই ছিল শুরুতে, যেইটারে নানান ধরণের ‘ভাঙন’ বলা হয়, সেইটা আসলে সিপিবি’র কব্জাতে যাওয়ার একটা ঘটনাই।

[তারপরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সিরাজুল আলম খান কি করছেন – এই নিয়া তেমন কোন আলাপ কোথাও দেখা যায় না। যদিও শোনা যায়, উনি ইন্ডিয়ান এম্বেসি’র লগে যোগাযোগ রাখতেন। থিওরেটিকালি আমার আন্দাজ হইতেছে, ইন্ডিয়ান আর্মি নামানোর কাজকামের লগে উনার যোগাযোগ থাকতে পারে, এক রকমের। মুজিব-বাহিনি’র লগে উনি এসোসিয়েটেড ছিলেন, কিন্তু পারসোনাল কোন খোঁজ-খবর আলাপে মিসিংই অনেকটা।]

তো, আওমিলিগ কইরা আপনি তো ‘বিপ্লব’ করতে পারবেন না! যার ফলে, সিরাজুল আলম খানের পক্ষে আওমিলিগ করা পসিবল হয় নাই। উনার ভিজিবল পলিটিকাল ক্যারিয়ার ছাত্রলিগেই শুরু, ছাত্রলিগেই শেষ। জাসদ বানানোর পরেও এর স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের নাম দিছিলেন – ছাত্রলিগ (জাসদ)।

সিরাজুল আলম খান যেই বিপ্লব করতে চাইছেন, মজলুমের একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাইছেন, সেইটা ততদিনে একটা জুলুমবাজ একটা আইডিওলজিই হয়া উঠছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। নিজেরাও নিজেদের গদি বাঁচাইতেই হিমশিম খাইতেছিল। যার ফলে, ইন্টারন্যাশনাল হেল্প উনি পান নাই। ইন্ডিয়ার ব্যাক-আপ নিয়াই ‘জাসদ-বিপ্লব’ করতে চাইছেন। অই ব্যর্থ-ক্যু’র পরে উনার পলিটিকাল কোন ইনলভবমেন্ট বা এচিভমেন্টের কথা জানা যায় না। তবে গুরু হিসাবে উনারে নিয়া উনার শিষ্যদের উচ্ছ্বাস এখনো জারি আছে। কিছুটা প্রকাশ্যে, কিন্তু অনেক বেশি গোপনেই। Continue reading

ফিকশন: রিদয় আর্ট

আমরা যখন সাহিত্য-পত্রিকার নামের লেটারিং কইরা দিতে বললাম, রিদয় একটু অবাক হইলো। কইলো আমি তো রিকশা, ব্যানারের ডিজাইন করি, তোমাদের পত্রিকার নামের ডিজাইন কি পছন্দ হবে? আমি তখন একটু পেম্পার করলাম, কইলাম, না, না, তোমার আর্টও তো ভালো! দোকানের পিছন দিকে অর কয়েকটা আর্ট রাখা ছিল, অইগুলার দিকে তাকায়া বললাম।

রিদয় আসলে আর্টিস্টই হইতে চাইছিল। ক্লাস ফাইভের পরে আর পড়াশোনা করে নাই। ক্লাস টু-তে পড়ার সময় তার মা মারা গেছিল। পরে বাপ আরেকটা বিয়া করছিল। অই সৎ-মা’রও একটা বাচ্চা ছিল। রিদয় অই সংসারে থাকতে চাইতো না। বাপের ইনকামও খুব বেশি ছিল না। এই কারণে প্রাইমারি স্কুল পাশ করার পরে হাইস্কুলে আর ভর্তি হয় নাই। স্টুডেন্ট হিসাবে ভালো না হইলেও খারাপ ছিল না। কিন্তু স্কুলের আর্ট পরীক্ষায় ফুল মার্কস পাইতো সবসময়। টিচার’রাও অবাক হয়া অর ছবি আঁকা দেখতো। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পরে ফাংশনের ব্যানার-টানারও অরে দিয়া লেখানো হইতো।

রিদয় ছিল খুবই চুপচাপ স্বভাবের। খুব নরম কইরা কথা বলতো। গলার আওয়াজ কখনোই উঁচা পারতো না। আমাদের চে এক ক্লাস উপরেই পড়তো। কিন্তু যেহেতু আর স্কুলে পড়ে না এখন অরে তুমি কইরাই বলতে পারতাম আমরা। স্কুলে জুনিয়র-সিনিয়র ঘটনা, স্কুলের বাইরে আমাদের বয়স তো একই আসলে। খুব একটা বাড়ে না, বা বছর বছর বয়স বাড়ে না।

এইভাবে ৫-৬ বছর পার হয়া গেছে। আমরা ছোট ক্লাস থিকা বড় ক্লাসে উঠতে উঠতে আমরা বড় হয়া যাইতেছি। রিদয়ও দোকানের সাইনবোর্ড, সিনেমার ব্যানার, বিয়া-বাড়ির ডিজাইন করতে করতে মোটামুটি বিজনেস-এরিয়ার ঢুকে পড়ছে। আমাদের চাইতে বড় হয়া গেছে। আলাদা একটা ঘর নিয়া থাকে। সুন্দর একটা বাই-সাইকেল চালায়। চুল বড় রাখছে। অর গায়ের রং কালা, কিন্তু মিষ্টি রকমের। তেমন কোন ফ্রেন্ড নাই। থাকে একলা একলাই।

তখন আমরা মেট্রিক-পরীক্ষা দিছি। সাহিত্য-টাহিত্য করি। ধর্ম মানি না। বিপ্লব করতে চাই। বাপ-চাচাদের বয়সী লোকজনের লগে চা-সিগ্রেট খাই। সারাদিন আড্ডা দেই। বাজারে, নদীর পাড়ে, রাস্তার পাশের দোকানে। যেহেতু স্কুলের পড়াশোনা নাই, কলেজ এখনো শুরু হয় নাই, আমরা ডিসিশান নিলাম ত্রৈমাসিক সাহিত্য-পত্রিকা ছাপাবো। বিজ্ঞাপণের টাকা এলাকার বিজনেস-ম্যানদের কাছ থিকা নিব। আর ঢাকায় পত্রিকায় কাজ করেন এইরকম বড় ভাইরা প্রেসের কাজ কইরা দিবেন। কলেজের বাংলা-বিভাগের অধ্যাপকদের, সিনিয়র কবি-সাহিত্যিকদের লেখা নিবো, লগে ঢাকার সাহিত্যিকদের লেখাও আমরা ছাপাবো – একইসাথে লোকাল এবং ন্যাশনাল। এবং সেইটা হবে লিটলম্যাগও।

কবি-সাহিত্যিকদের লগে আমাদের যোগাযোগ আছে, কিন্তু কোন আর্টিস্ট তো নাই আমাদের! এই কারণে কথায় কথায় রিদয়ের নাম আসলো। ও এখন দোকান নিছে আইস কোম্পানির মোড়ে। একটা সাইকেলের দোকানের পাশে। দোকান বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। কাজ সে তার বাসাতেই করে। বিকালের দিকে ও আসে, এক-দুইঘন্টা বসে। নতুন কোন ক্লায়েন্ট পায় কিনা, এই জন্য।

এইরকম একটা বিকালবেলায় রিদয়রে পাইয়া গেলাম আমরা অর দোকানে। সবাইরে বসার জন্য মোড়া-টোড়া আগায়া দিতে লাগলো। তারপরে গিয়া অর চেয়ারে বসলো। আমরা জিনিসটারে অরে বুঝায়া বললাম। পত্রিকার নাম লেইখা দিতে হবে। নাম হইতেছে – অরিন্দম। নামের ব্যাখাও দিলাম, অরি-কে বা শত্রুকে দমন করে যে; মধুসুদন এর কবিতা আছে, “-এতক্ষণে অরিন্দম, কহিলা বিষাদে”। বইলা আমরা নিজেরা নিজেরা প্রাউড ফিল করলাম। কতো কিছু যে জানি আমরা!

কিন্তু রিদয়ের ইন্টারেস্ট টেকনিকাল জায়গাগুলাতে। কইলো, বানানটা লেইখা দাও। একটা কাগজ বাড়ায়া দিল। আর মাপ’টা কি হবে? জিগাইলো। কিন্তু আমরা তো মাপ’টা জানি না! প্রেসের কাজ যিনি কইরা দিবেন, সেই বড়ভাইরে জিগাইতে হবে। তখন রিদয় কইলো, সমস্যা নাই, আমি আমার মতো একটা মাপে বানাই, পরে ছোট-বড় কইরা দেয়া যাবে। কয়দিনের মধ্যে লাগবে জিগাইলো। এক সপ্তাহ! এক সপ্তাহের মধ্যে দিলেই হবে!

আমরা তো মোটামুটি খুশি। লাস্ট পাজল’টাও সলভ করা হয়া গেলো। এখন আমরা সমাজ বদলাইয়া দিতে পারবো। বিপ্লবের কাছাকাছি পৌঁছাইয়া যাইতে পারবো! Continue reading