‘ধান কাটা হয়ে গেলে পরে…’

ধান কাটা হয়ে গেছে কবে যেন — ক্ষেত মাঠে পড়ে আছে খড়
পাতা কুটো ভাঙা ডিম — সাপের খোলস নীড় শীত।
এই সব উৎরায়ে ওইখানে মাঠের ভিতর
ঘুমাতেছে কয়েকটি পরিচিত লোক আজ — কেমন নিবিড়।

ওইখানে একজন শুয়ে আছে — দিনরাত দেখা হত কত কত দিন
হৃদয়ের খেলা নিয়ে তার কাছে করেছি যে কত অপরাধ;
শান্তি তবু: গভীর সবুজ ঘাস ঘাসের ফড়িং
আজ ঢেকে আছে তার চিন্তা আর জিজ্ঞাসার অন্ধকার স্বাদ।
 

 /ধান কাটা হয়ে গেছে, জীবনানন্দ দাশ

 ————————————————————-

 ———————————————————
লেখার টাইম: ডিসেম্বর, ২০১৪ – ডিসেম্বর, ২০১৫।
 ———————————————————-

 

 ধান কাটা হয়ে গেলে পরে…’

অর্গি ইজ মিস্টিরিয়াস
ধানের খেতের পাশে, ধান কাটা হয়ে গেলে পরে

পাশে রাখা আঁটিগুলা একটা আরেকটার গায়ের উপ্রে
আগে, পিছে, উপ্রে আর নিচে,
পইড়া আছে

কোন বডি ফিলিংস নাই আর
অর্গান খুলে রাইখা নেতাইয়া শুইয়া আছে

ধান-কাটা হয়া গেছে বইলা?
ধানের খেতের পাশে; সন্ধ্যাবেলায়, হেমন্তে…

 

একটা বিড়াল

একটা বিড়াল আসছে আমার কাছে
আমার বুকে শুয়ে শুয়ে
আকাশের দিকে তাকায়া আছে…

একটা বিড়াল তার বাঘ হওয়ার প্রতিভা নিয়া
আমার বুকের ‘পরে শুইয়া আছে।

 

স্বপ্ন-মধুর-মোহে

আমি তোমার কাছে রাখলাম অবিশ্বাস। তুমি বললা, স্বপ্নগুলা আমি লিইখাই ফেলি তাইলে। আমি দেখছিলাম বিল্ডিংটা ধসে গেছে; লিফটের ভিতরে আটকাইয়া না থাকতে পাইরা আমি চইলা আসছি খোলা মাঠে; শুয়া আছি, রিফিউজি ক্যাম্পে, নীল কম্বলের নিচে। আশেপাশে অনেক মানুষ; ঘুরাফিরা করে, চানাচুর খায়, বেচে; উদ্ধারকাজ দেখে। তোমারে পাই না তখোন তোমার স্বপ্নে আর। ঘাসে ঘাসে কুয়াশার ফুস্কুরি।

Continue reading

শি, অ্যান্ড দ্য রিটার্ন অফ শি (২)

 

এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]।

তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।

————————-

১ ।।

————————-

 

রেলস্টেশনে

একটা রেলস্টেশনে আইসা দাঁড়াইছি। কতগুলা ফলের ঝুড়ি বইসা আছে প্ল্যাটফর্মে; কলা, কমলা আর আঙুর, ঝিমাইতেছে। কুত্তা একটা, কংক্রিটের মইধ্যেও কী কী জানি শুঁকে। মাল-গাড়ি’র একটা বগি থাইমা আছে আরেকটা লাইনে, একটু দূরে। ট্রেইনেও মানুষজন নাই কোন। খালি শি’রে নিতেই আসছে মনেহয়। পারলে ট্রেনটাও এই প্ল্যাটফর্মেরই থাইকা যাবে। শি আর যাবে না আসলে। আমরা চা খাইতে খাইতে খেয়ালই করতে পারবো না, কোন ট্রেন আছে কি নাই। পাশের গাবগাছের পাতলা ডালে পাতারা নড়বো বাতাসে। সময় একরকমের স্থবিরতাই আসলে। অথচ এই স্থবিরতাও দুললো, মৃদু ভূমিকম্পের ভিতর ট্রেনটা চলতে শুরু করলো হঠাৎ, হুইসেল ছাড়াই, সাদা-কালো নির্বাকযুগের সিনেমার মতো। খুবই ধীরে, যেন যাইতে চায় না সে, না-যাওয়ার মতো কইরাই চাকাগুলি ঘুরতেছে। প্রতিটা কণা ঘুরতেছে এতো ধীরে যে, সরতেছেই না সে, অথচ চলেই যাচ্ছে, যাবে… চলে-যাওয়া, এতো দীর্ঘ, এতো বিশাল, না-যাওয়ার মতোই, না-থাকার মতো সময়! ট্রেনের চাকার কাছে আমার পুরা জীবন, পুরা দৃশ্য আটকাইয়া আছে। একটা ছোট্ট রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। আর শি’রে নিয়া ট্রেনটা চলে যাইতেছে… এখনো, এই এতদিন পরে। 

 

হাঁটতে হাঁটতে

হাঁটতে হাঁটতে উঁচা একটা টিলাতে গিয়া বসলাম। দুপুর থিকা একসাথে ঘুরতেছি আমরা। এইখানে যাই, ওইখানে যাই; আমাদের ভাল্রাগেনা। হাঁটতে হাঁটতে শহরের শেষে, শরতের দুইটা শাদা মেঘের মতো একসাথে ভাসতে ভাসতে এই দূরে চলে আসছি। বসার আগেই মনে হইলো, বাসায় ফিরতে হবে। আমাদের ঘর-সংসার আছে, সমাজ-সভ্যতা আছে; আর এইখানে শেয়াল-কুকুর-বিলাই-সাপ-পুলিশ-গার্ড কতকিছুই না থাকতে পারে। এইখানে থাকাটা ঠিক হইবো না। তারপরও বসলাম আমরা। একটু সময় বইসা থাকাই তো। টিলার উপরে সন্ধ্যা নেমে আসতেছে ধীরে; ধানখেতে বাতাস নুয়ে পড়ে। আমার কাঁধে মাথা রাইখা কানতেছে শে, আর বলতেছে, এমন জন্ম কেন হইলো আমাদের! ধরো, আমরা অন্য কোন দেশে চইলা গেলাম, অন্য কোন দুনিয়ায় আর তারপর আমরাই থাইকা গেলাম; হইতে পারে না, এইরকম!

এইরকম একটা দিন; তারপর এইদিনও শেষ হয়া যাবে। বাসার পাশের একলা জামগাছের ভূত শি’র লাইগা ঝুইলা আছে ডালে। সেও হয়তো কান্দে। আমি আমারে দেখি চুপচাপ বসে আছে। আমি আর থাকতেই চাই না এইখানে। এইরকম একটা দিনের শেষে; শি’র পাশে, অনুতাপের সন্ধ্যায়। কী ভুল করলাম আমরা সারাদিন। কী ভুল! কী ভুল! শি’র জামার ফুল, শি’র খোঁপার কাঁটা, বলতেছে; খরগোশের মতো লম্বা আমার কানে কানে। Continue reading

ছোট শহরের গল্প

ছোট শহর মানে একজন কবি থাকেন সেইখানে। জীবনানন্দ দাশ পরবর্তী, ইন্ডিয়া রাষ্ট্রের পশ্চিমবাংলা প্রদেশের, কবি রণজিত দাশ এই কথা কইছেন; ইন ফ্যাক্ট উনি কবিতাই লিখছেন এইরকম; এমন পাওয়ারফুল! কিন্তু উনি মনে হয় বড় শহরেই থাকেন, মুম্বাই অথবা দিল্লী। এই কথা সত্যি না হইলেও সমস্যা নাই; এইটা ত গল্প-ই। গবেষণা না। সুতরাং না-জানা দিয়াও গল্প লেখা যাইতে পারে, ধারণা কইরা। আসলে যা যা আমরা জানি খালি তা নিয়াই গল্প লেখার মতো বাজে জিনিস তো আর কিছু হইতে পারে না। উনি ঢাকা শহরেও মনে হয় আইছেন কয়েকবার। কবিদের লিস্ট বানাইছেন এবং কবিরে প্রাবন্ধিক ও অনুবাদকরে কবি হিসাবে চিনছেন, এইরকম। সার্টিফিকেটও নাকি দিছেন, মৌখিক; আর যেইটা লিখিত, তারে কইছেন, সিলেকশন, পরিবর্তনযোগ্য। যদিও পরে কইছেন যে, উনার না-জানা আছে, ধারণা কইরাই দিছেন। এই অর্থে, উনার কবি বাছাইয়ের ঘটনা উনার শারীরিকভাবে বড় শহরে থাকা, না-থাকার মতোই প্রায়।

যা-ই হোক, সেইটা বিষয় না। বিষয় হইলো, ছোট শহর। সেইখানে একজন কবি থাকেন বা না-থাকেন, বেশ কিছু গল্প এবং গল্পকার অবশ্যই আছেন।

সেই কথা মনে হইলো, যখন ছোট শহরের একটা গল্প আমারে একজন (যিনি শব্দের ভিতরেই প্রকাশ্য থাকতে চান, এইরকম) শুনাইছেন; যে, ছোট শহরে একটা কিশোরী মেয়ে থাকে, শে বাঘের বাচ্চা পালে; একসময় বাঘের বাচ্চাটা বড় হয়া যায়, ছোট শহরে আর আঁটে না, সে তখন কী করে! বড় শহর’রে জঙ্গল মনে কইরা সেইখানে গিয়া রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা পড়ে! আহারে যদি সে ছোট শহরে থাকতো, তাইলে বড়জোর রিকশার তলে পড়তো, হাত-পা মচকাইতো, ব্যান্ডেজ-বাঁধা শরীর দেইখা আমাদের মনে জাগতো কামনা – বাঘের বাচ্চা এবং কিশোরী মেয়ে’র প্রেম এই জাতীয় গল্পও লেখা যাইতো হয়তো; আর এই কারণেই ছোট শহর অনেক রোমাণ্টিক ব্যাপার, তাই না?

আমি কই, হায় হায় আমার জীবন দেখি গল্প হয়া যাইতেছে। দ্রুত গল্প লিখার সিদ্ধান্ত নেই আমি। অথেনটিক ছোট শহরের একটা গল্প, যেইটা আবার গল্প-লেখা নিয়া।

সময় বিকালবেলা। সন ইংরেজী ১৯৮৯। গরমের দিন। বাতাস বহিতেছে।

স্থান অবকাশ হোটেল। অবস্থান লঞ্চঘাটের কিনারায়।

একজন মদখোর ও একজন দার্শনিকের আলাপ এবং পরে একজন কবি ও রাজনৈতিক নেতাও যোগ দিবেন। একজন স্কুলশিক্ষকও আসার কথা, তবে নাও আসতে পারেন। শেষ পর্যন্ত, সাংবাদিক আইসা পুরা গল্পটার কন্ট্রোল নিবেন।

টেবিলে চা আসার পরে মদখোর শুরু করেন,‘কিঅ, আমার বাপে নাইলে মদই খা; ইলিগ্গা হে এইডা নিয়া গল্প লিখবো! লেখচছ বালা কতা, এইডারে ছাপাইয়া আবার লুকজনের মইধ্যে বিলিও করছ! তোমরা’র আস্কারা পাইয়া পাইয়া এই বাদাইম্মা পোলাপাইনগুলা এই কাম করার সাহস পা, নাইলে টেঙ্গি-টুঙ্গি ভাইঙ্গা ড্রেইনো ফালাইয়া রাখতাম। হে আমার বাপরে লইয়া লেখে, ইলা বলে মদ খাইয়া ড্রেইনো পইরা রইছে! আরে ইলা ত অহনও বাইচ্চা রইছে, তুই হেরে লইয়া কেমনে গল্প লেহছ! হে জীবিত মানুষরে গল্প বানাইয়া লাইছে, আর তোমরাও কিচ্ছু কও না!’

‘তোমারে বাল্টার বেনিয়ামিন এর একটা গল্প কই; ভুলেও কইলাম ওয়াল্টার বেঞ্জামিন কইয়ো না, রংফর্সাকারী গল্পলেখকের লাহান।’

‘হ, তোমার ত খালি পুটকিপুড়া আলাপ!’

Continue reading

কুড়ি বছর পরে ২

 

কুড়ি বছর পরে, তখন তোমারে নাই মনে – জীবনানন্দ দাশ

 

এখনো মনে হয়, কেন যে দাঁড়াই নাই, সকালবেলায়
তোমার প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে

ধরো, দাঁড়ানো ত যাইতো
ইলেকট্রিকের পোলের মতোন, স্থির অব্যয়;
অথবা সঞ্চরণশীল কেঁচোর মতোন
পুরি-পিঠা কিনতে যাওয়ার পথে

যেন আমি তোমারে দেখতেই আসি নাই

দেখতাম, প্রেম হেঁটে যায়, সকালবেলায় Continue reading