রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আর সুফিয়া কামাল

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আর সুফিয়া কামাল – এই দুইজনরে বাংলাদেশে ফেমিনিজমের আইকন হিসাবে আমি নিতে চাই, একটা আলাপে।* উনারা দুইজনই কিছু জিনিস এচিভ করছিলেন, কিন্তু যেইভাবে করছিলেন, সেইটারে কোশ্চেনেবল ভাবা হয় এখনো।

রোকেয়া’র এচিভমেন্ট হইতেছে “নারী-শিক্ষা” ব্যাপারটারে সমাজে উনি ‘কমন’ ও ‘নরমাল’ কইরা তুলতে পারছিলেন। সুফিয়া কামালের এচিভমেন্ট হইতেছে ১৯৬১ সালে পাকিস্তানে “মুসলিম পারিবারিক আইন” এর পক্ষে খুবই ফার্ম একটা পজিশন নিছিলেন। এর বাইরেও উনাদের এচিভমেন্ট আছে, কিন্তু এই দুইটা জিনিসই খুব সিগনিফিকেন্ট। রোকেয়া খালি মেয়েদের পড়াশোনাই চালু করেন নাই, উনার এই ইনিশিয়েটিভের ফলে পাবলিক স্পেইসে মেয়েদের চলাফেরা, কাজ-কাম করাও নরমাল হয়া উঠতে পারছে। এখন জিনিসগুলা নরমাল হইয়া যাওয়ার পরে হয়তো এতোটা চোখে পড়ে না আর।** সুফিয়া কামালও যখন মুসলিম পারিবারিক আইনের পক্ষ নিছিলেন, মেয়েরাও যে লিগ্যালি সম্পত্তির মালিক হইতে পারে, এই জায়গাটারে “অ্যাবনরমাল” হওয়ার জায়গা থিকা কিছুটা সরাইতে পারছিলেন। যে, “বউ” খালি “জামাই”র সম্পত্তি না, “জামাই”-ও “বউ” পজিশনটার কাছে কিছুটা হইলেও বান্ধা। আর এইভাবে মহিলাদের সম্পত্তির মালিকানার ব্যাপারটা লিগ্যালি মাইনা নেয়ার ঘটনা’টা ঘটছিল।

কিন্তু রোকেয়া’র “নারী-শিক্ষার” মেইন পেট্রোনাইজার ছিলেন দখলদার ইংরেজরা, উপনিবেশিক শক্তি! কলকাতায় যখন “স্বদেশী আন্দোলন” চলে, তখন রোকেয়া ছিলেন ইংরেজদের “কোলাবরেটর”! 🙂 অই সময়ে উনারে গালি-গালাজই শুনতে হইতো, আর এখনো এই ‘দোষ’ উনার থাকারই কথা। কিন্তু উনি পলিটিক্যাল কোশ্চেনের বাইরেও সোশ্যাল ইস্যু হিসাবে “নারী-শিক্ষা” ব্যাপারটারে এস্টাবলিশ করতে পারছিলেন, যার ফলে ‘হিন্দু-স্বদেশী’রা নারী-শিক্ষা বিষয়টারে আমলে নিয়া মেয়েদের স্কুল শুরু করে, আর তখন মুসলমান মেয়েদের জন্য ব্যাপারটা আর ট্যাবু হিসাবে থাকতে পারে নাই।… (ফ্যাক্টস কিছু দিতে পারলে ভালো হইতো।)

আমি বলতে চাইতেছি, পলিটিক্যাল সুযোগ-সুবিধা’র বাইরে উনি সোশ্যাল কজ’র জায়গাটারে এস্টাবলিশ করতে পারছিলেন, যার ফলে “কলোনিয়াল” এবং “ন্যাশনালিস্ট” দুই গ্রুপই এর পক্ষে থাকার ট্রাই করছিল। সমাজে এর বিরোধিতা’টা “নিয়ম” হিসাবে আর থাকে নাই। (এইখানে কলোনিয়াল শিক্ষা বা নারী-অধিকার… এইগুলা অন্য একটা আলাপ।)

হাউএভার, সুফিয়া কামালের ঘটনা’টা একটু অন্যরকমই ছিল। আইয়ুব খান বিপদে পড়ছিল যখন পাকিস্তানের অনেক ইসলামি বুজুর্গ’রা ফাতেমা জিন্নাহ’র পক্ষে রায় দিছিলেন যে, নারী হইলেও উনারে নেতা মানা ঠিকাছে। তখন উনি মৌলানা-মৌলভীদের “টাইট” দেয়ার জন্য, নারীদের “পক্ষে” নেয়ার জন্য এই মুসলিম পারিবারিক আইন পাশ করাইছিলেন। (মানে, এইরকমের একটা নেরিটিভ আছে, যেইটা নিয়া আরো শিওর হওয়ার দরকার আসলে।) তখন এর এগেনেস্টে অনেক আলাপ উঠলে ঢাকা থিকা সুফিয়া কামাল এর প্রটেস্ট করছিলেন। যার ফলে আইন’টা বাতিল হইতে পারে নাই। পরে যারা ক্ষমতায় আসছেন, উনারা টের পাইছেন যে, এই আইন বাতিল করলে পাবলিকের, স্পেশালি মেয়েদর সার্পোট বা ভোট পাওয়া যাবে না। এখন তো অই আইন আপডেট হওয়ারই দরকার কিছু।… কিন্তু ঘটনা যেইটা হইলো, আইনে আছে বইলাই কিছু সমাজে মেয়েদের বাপের সম্পত্তি পাওয়ার জিনিসটা চালু হইতে পারে নাই পুরাপুরি, এখনো। জামাই আরেকটা বিয়া করলে, বিপদে পড়লে মামলা করা যায় – এইটুকই।… Continue reading