এপ্রিলে লেখা কবিতা, ২০১৬।

~ ইট বিছানো রাস্তা ~

একটা ইট
আরেকটা ইটের পাশে
আরেকটা ইট আরেকটা ইটের পাশে
এবড়ো থেবড়ো, কিন্তু
পাশাপাশি
মাঠের ভিতরে,
একটা রাস্তা থিকা আরেকটা রাস্তা অব্দি
হাঁইটা গেছে;

একটা পা মিস করতেছে আরেকটা পায়েরেই
বৃষ্টির দিনে…

 

পুরষ্কার

ছয়টা মেডেল গলায় ঝুলাইয়া ছবি তুলতেছি

মরার পরে মেডেল ছয়টা ছবির গলায় ঝুলাইয়া দিবো

 

~ সকালবেলার সিন-সিনারির ভিতর দিয়া হেঁটে যাইতেছি

সকালবেলা একটা ঘুম
সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে
চলে গেলো শাদা বিল্ডিংয়ের ভিতরে

মেবি নাইট কোচে ঢাকায় ফিরছে শে

আমার ঘাড়ে উঁকি দিয়া তারে দেখতে চাইলো
মনিং ওয়াক করতে আসা লোকটা;
আমি কইলাম তারে, “ভাইরে,
আমার ঘুম আমি আপনারে দেখামু কেরে?”

ভ্রূ কুঁচকাইয়া একজন লাঁকা
তাকাইতেছিলেন, সামনে থিকা;
এই ভঙ্গিটাই কি উনার জিজ্ঞাসা?

কলমি শাক হাতে হেঁটে আসছেন চশমা পরা বয়স্ক রোজিনা

থ্রি মাস্কেটিয়ার্স
ভার্জিনিয়া উলফ, ক্লিন শেইভড সিলভিয়া প্লাথ, বিষন্ন ফকনার,
দাঁড়িওলা জীবনানন্দ দাশ (দন্ত্য-স কাইটা যিনি তালেব্য-শ লিখছেন…)
বাইর হইয়া আসতেছিলেন

ঘুমটা এই সিন টের পাইয়া কইলো,
হইছে, হইছে… এখন চুপ কর হারামজাদা!

খালি ট্রাকের ঝনঝন আওয়াজে স্কেটারর্ড হইতেছিল মনেহয় শে

হয়তো মেজাজও টং হয়া আছে

চৈত্র মাসে দুর্বা ঘাসে
শিশিরের ফোঁটা
দেখছি যে আমি
– এইটা বলাটা মনেহয় ঠিক হইবো না তারে?

ইলেকট্রিকের তারে বসা তিনটা ভিন্ন পাখি
তিনটা ভিন্ন ভাষায় বলতেছিল, হ্যাঁ, হ্যাঁ…

একটু দূরে দূরে অন্য পাখিগুলিও মিলাইতেছিল কোরাস

গাছের পাতার ফাঁকে
সূর্য আইসা কইলো, কই? দেখি, দেখি…

ঘুমটা তখন ছোট্ট একটা মাঠে
মাঝবয়েসীদের পায়ে পায়ে
ফুটবল হয়া ঘুরতেছে

একজন বুড়া ডেভিলের পকেট থিকা
আবদুল জব্বার বাইর হয়া আসলেন,
মনের নোঙর খুঁজতে খুঁজতে, সারেং বাড়ির ঘাটে…

একটু পরে পাইলিং মেশিনের ঘড়ঘড় আওয়াজ আইসা
নিয়া যাবে তারে
ছয় ফিট মাটির আন্ডারে

গোরস্তানে বইবে বাতাস

বাতাসে ওড়ে যাবে ছোট্ট চড়ুই
বারন্দার গ্রীল থিকা আরেকটা বারান্দারই গ্রীলে

ঘুম, ঘুমাইছো কি তুমি, ঘুমের ভিতরে?

 

~ পলাশীর প্রান্তরে~

“লাত্থি মইরা ফেলে দিয়ে
চইলা যাবো, তোমার এই
সোনার সংসার…”

ইংরেজরা চইলা গেলেও
সিরাজদ্দৌলা
কাম ব্যাক করবেন না তো আর।

।। মাছ ধরা ।।

না ছুঁইয়া পানি মাছ ধরবো আমি।
মাছ তুমি কই?
পানির উপ্রে আসো
লেবু আর বরফ দিয়া
আমি ট্রে সাজাইতেছি তো।

 

~ কবিতা-ভাবনা ~

বামুন, তোমারে চিনি তো আমি।
কিন্তু পৈতা ছাড়া ব্যাপারটা কেমন না!
তখন তো একটু বইলা বুঝাইতে হবে।

 

~ সুতার কাজ ~

এখনো একটা সুতা ঝুলায়া রাখি আমি

এই সুতা বাইয়া একটা পিঁপড়াও উঠতে পারবে না;
আমি ভাবি, নিচে হাঁটতে থাকা হাতির বাচ্চাটা
বোরড হয়া কোনদিন উড়ার কথা ভাবতে পারে না?
এই সুতা তারে কি ইন্সপায়ার্ড করবে না?

সুতাটা দুলতে থাকে বাতাসে

হাতির পরে ঘোড়া যায়
জোয়ান মাকড়সা আর বুড়া তেলাপোকা

সুতাটার কথা বাদই দিলাম
এদের কারোরই নিজেদের উপ্রে কোন কনফিডেন্স নাই?

এমনকি মানুষের মতো পাখি হওয়ার কথাও মনেহয় ভাবতে পারে না

সুতাটা ঝুলায়া রাখলাম আমি

কোন এক্সপেক্টশন ছাড়া এখন, এমনে এমনেই

যারা যারা যায় আর আসে
ওরাও হয়তো ভাইবা নিছে, দুনিয়াটা এইরমই
খামাখা একটা সুতা ঝুইলাই থাকে

গল্পে যেহেতু আছে
আমিও ঝুলাইয়া রাখছি; মানে
গল্পের কাজটাই আমি করছি
আর গল্পের ভিতর আমি তো যে কোন একটা আমি-ই

সুতার পিছনে বইসা সুতাটারে নাড়াইতেছি

এইমাত্র একটা ইন্দুর দেইখা হাসছে
তার মানে, সুতাটা তো আছে
আর তারে ঝুলাইয়া রাখতেছি আমি, এখনো…

 

।। না ।।

কি যে উল্টা-পাল্টা বাতাস। গাছের ডালগুলি তাদের সব পাতা নিয়া ঝুইকা পড়তেছে। দক্ষিণ থিকা উত্তরে। আমি কথা বলার আগেই তারা আগাম বলে দিতেছে, এইটা ওরা মানবে না। আমি যেন আর কোন কথা না বলি। দূর থেকে আসতেছে হলুদ রঙের ট্রাক। কোন শব্দ শোনা যায় না। ‘এতোটাই দূরে চইলা আসছি আমরা?’ ফড়িং উড়তেছে কয়েকটা। কয়দিন ধরে শুধু বাতাস। বৃষ্টি নাই। ‘বৃষ্টি আসলেও তো ভিজবো না আমরা!’ মাগরিবের আজান শুরু হয়া গেছে মসজিদে মসজিদে। অনেকগুলি পাতা নিয়া গাছটা এখনো ঝুকে পড়তেছে, একটু পরে পরে। ঘাসগুলি কাঁপতেছে। সূর্য ডোবার পরে আবছা আলোর অন্ধকার ডুবে যাইতেছে। কালো একটা ডটের মতো কালো একটা দৃশ্যের ভিতরে বসে থাকলাম। বাতাস ছিল তখনো। বলতেছিল জোরে জোরে, না, না…

 

।। সিমিলারিটি ।।

একটা কুত্তা হওয়ার পরেই আমি দেখতে পাইলাম আরেকটা কুত্তারে।

 

।। গাধা।।

‘হইছে তো, আর কত স্বপ্ন দেখবা তুমি? উঠো, এইবার!’ গাধাটারে ঘুম থিকা জাগায়তে চায় বিলাই।

‘স্বপ্ন ভাঙার পরে যদি দেখি আমি আরেকটা বিলাই?’ স্বপ্নেই ভাবতে থাকে গাধাটা আবার।

আয়তকার একটা মাঠে ঘুরতে থাকে সে চক্রাকারে। হালকা বৃষ্টির মতোন কুয়াশা। জায়গাটা মে বি সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

 

।। মুর্গি আর বনবিড়াল ।।

বনবিড়ালের পিছনে ছুটতে ছুটতে মুর্গিটা ক্লান্ত।
একটু দূরে বইসা দুইজনেই হাঁফাইতেছে
বনবিড়ালটা বলে, ‘আমি মুর্গি খাই না তো!’
মুর্গিটা তখন খেইপা গিয়া আবার দৌড়ানো শুরু করে
দৌড়াতে দৌড়াইতেই কয়, ‘তোরে খাইতে কইছে কোন শালা?
আমরা তো ঘর-সংসার খেলবো একটু কাছাকাছি থাইকা।’

মুর্গিটা ভাবে, বনবিড়ালটা নিজেরে হয়তো ভাবছে খেঁকশিয়াল
তার এই ভুল তো ভাঙানো দরকার।

বনবিড়াল দৌড়ায় তার লেজের গর্ব নিয়া
‘খামাখা রিয়ালিটির মুর্গিগুলারে এভেয়ড করাটাই ত বেটার।’

 

9a2f6ba131fce92080e30d343d261640

Leave a Reply