সেপ্টেম্বর, ২০১৬ – কবিতা

ফটো: উম্মে রায়হানা
———————-

রইদের ছায়া

হঠাৎ রইদ আসে
কাঁঠাল পাতার ফাঁকে
কয়, ‘তুমি কি ভাবছিলা আমি আসবো না?’

আমি হাসি, কই, ‘তুমি তো ফাঁকিবাজ…’

রইদ হাসে, আরো

ঝলমল করে বাসের জানালাগুলি

ছাতা খুলে তরুণী মেয়েটা, যিশুখ্রীষ্টের ছবিওলা

রইদ তখন নুইয়া আসে, তাঁর ঘাড়ের কাছে
পোষা বিলাইয়ের মতো শুইয়া পড়ে
আবার

রিকশার পাদানিতে
রাস্তায়, গর্তের পানিতে
নিভে আসে রইদের আলো

আমি ভাবি, ‘আসছিলাম তো…’
এইটুক বলার লাইগাই সে
ঝুইলা ছিল কাঁঠাল পাতার ফাঁকে?

অন্যমনস্ক…

 

সাংগ্রি-লা

কতগুলি কাক

চড়ুই

সন্ধ্যার আকাশে

গাছে গাছে

একটা গাড়ির পিছনে আরেকটা গাড়িই আছে
হর্ণ দিতে দিতে পাগল হয়া যাবে সবাই
পাগল তবু হর্ণ-ই দিতেছে

সন্ধ্যার গ্রে আকাশে
কতগুলি কাক
আর
চড়ুই
উড়ে যাইতেছে
গাছে গাছে

একটা ব্রীজের গোড়ায়
মাঝখানে
কালো পানিগুলি ঝাপসা হয়া আসতেছে
জায়গাটা ধানমন্ডি বলে সুন্দরও লাগতেছে

নতুন মসজিদের মিনার
নতুন নতুন আলো
জাদুঘরের রোডে

হাঁটতে হাঁটতে

হাঁটতে হাঁটতে

একটা নিরবতার ভিতর দিয়া আরো একটা নিরবতার কাছেই তো যাইতে চাইতেছে…

 

রইদের আয়না

চোখ

রোদ

চশমা

ছাতা

‘হেই হেই…’ গাছটা ডাকতেছে
‘এত পিনিক নিয়া দাঁড়ায়া থাকা তো যায় না!’ 🙁

দুলতেছে বাতাসে সে,

হাসতেছে রইদে,
রইদের আয়নায়

‘এত কথা কইলে কেমনে কি!
একটু নিরব থাকো না!’

বইলা শে-ও হাসে;

দোকানের বোবা বোবা চিপসের প্যাকেটগুলি
অবাক হইয়া দেখতেছে

বারান্দার বেগুনি জামার ঢং-গুলা…

 

টাইনি মেটাফোর

এইসব অনুস্বার আর বিসর্গের লাইফ নিয়াই তো আমরা খুশি হইতে চাইছিলাম!

 

কথার ভিতরে তোমার

যতক্ষণ আমি জাইগা থাকি
জাইগা থাকি কথার ভিতরে তোমার

‘তোমার কথার ময়ূর সিংহাসন আসে
একটি পদভারও সয় না আমার…’*

একটা বিকাল, একটা সন্ধ্যা, একটা রাত…

তারপর ঘুম থিকা আবার জাইগা উঠে সকাল

জড়োসড়ো পায়ের কাছে তোমার

ঘুমায়া থাকি… রাস্তায় রিকশার টুং টাং

কি যে নরোম আলোর ভিতর দিন জাইগা থাকে

একটু একটু কইরা শুকায় আলো

রেলব্রীজের গোড়ায় গুমটি ঘরে
বইসা থাকে যে গার্ড, ঝিমায়, দুপুরবেলায়

রাত-জাগার কথা যার, সেও কি কথা কয় একলা একলা?
লগে তার মোবাইল ফোনও নাই

ট্রেনের তলে চাপা-পড়া লাশের
থ্যাঁতলানো মগজের গন্ধে ঘুম আসে না

একলা জেগে রই? এইরকম ইমেজ, পুরান?

সাপের দড়ি ঝুলে,
তোমার কথার মতো নড়ে, অন্ধকারে
নিচে জিআরপি থানায়

পাখির পালক নিয়া বুকপকেটে
কে আর যাবে মরার সাহস দেখাইতে?

যখন বাঁইচা থাকতে থাকতেই
থাকতে থাকতেই ভাবা যায়

মরছি তো, এই বাঁচা মরার মতোই
মানে, মরলে, মরতে পারলেই আর মরবো নাকি

কাঁই কুঁই করবো না কিছুদিন?

কিছুদিন বাদাম পাতায়, সরিষার খেতে
সূর্যমুখী ফুলের গোড়ায় গুবরের পোকা হয়া
থাকবো না জড়ায়ে?… বলবো,
‘কিছু কথা না এমনিতেই, শীত আসার আগে
হারায়া গেছিল; চলো খুঁজতে বাইর হই’

তখন উঁচা কোন পাহাড়ে হাঁটতে গিয়া পিছলাইয়া পড়লাম
তখন স্রোতের কোন নদীতে সাঁতরাইতে গিয়া ভাইসা গেলাম

তখন কথাগুলি তোমার ফিরা আসলো না কোনদিন আর!

————————-
* কবি সুনীল সাইফুল্লাহ’র কবিতার লাইন

 

ছোট্ট একটা মার্বেলের দুনিয়া

একটা নিরুত্তাপ আলোর ভিতর দুলতেছে দুনিয়াটা
তির তির কইরা আগায়া যাইতেছে

সূর্যের সুতায় বান্ধা
ছোট্ট মার্বেল একটা

কোন এক অন্ধকার গর্তের দিকে
ছিটকাইয়া বাইর হয়া যাবে

তখন স্থির;
অথবা ইমেজ আর নাই কোন

একটা শেষ না হওয়া, শোনা-ই যায় না প্রায়
এইরকম একটা মিউজিক
অস্পষ্ট

দুলতেছে অন্ধকারটাই
অন্ধ কোন ঢেউয়ের ভিতর

তির তির কাঁপতেছে…

আমরা যাইতেছি না কোথাও
যেইখানে আছি আমরা তা-ই সরে সরে যাইতেছে

কোথায় যে…

ঢেউ তো জানে না, অন্ধকার জানে না
দুনিয়ার জানা ও অ-জানা বইলা নাই আর তখন কিছু

কেন যে ভেসে যাইতেছিলাম
আমাদের এই মানুষ-জন্ম মনেও রাখবো না

কোন একটা সকালের নিরুত্তাপ আলোর ভিতর মনে হবে,
কোথাও না কোথাও কোনএকটা কিছু তো দুলতেছিল মনেহয়… না?

 

হর্ণ বাজাইতেছে কেউ

ভয়ের ভিতর গোপন ছিল
ছিল না-থাকার মতো মিথ্যা

এখন বললা যখন, কি রকম না!

মনে হইলো, তোমার বলাগুলি আসলে না-বলাই
না-বলাগুলি যখন বলতেছিলা, তখন
আকাশে বিকালের মেঘ, কয়েকটা কাক
গাছের পাতার অন্ধকার;
রাস্তায় মানুষ আর মানুষ, রিকশা আর রিকশা
বাস, গাড়ি আর আমাদের পা…

ও, হাঁটতেছিলাম তো!…

এক একটা কনর্ভাসেশন কি রকম যে আজাইরা…
তারপরও ভালো তো বলা, না-বলাগুলির মতোন
চারপাশে কতো কতো আওয়াজ

আমরা শুনতেছি গাড়ির হর্ণ, এতোদূর থিকা…
কেউ যাইতে চাইতেছে আর যাইতে পারতেছে না – এইরকম?
নাকি এমনেই, আমাদের শুনাইতে চাইলো…
‘এতো যে কথা সই, এইসব তো ভালো না!’ 😛

 

 

ড্রিমার

জাইগা যে উঠবো, এইরকম দুনিয়া কই!

 

 

Leave a Reply