আর্ট, ক্রিটিক এবং মকারি

 

এইরকম একটা টেনডেন্সি আছে যখন আমি কোনকিছুরে মকারি করতে পারলাম, তখন তার গুরুত্ব আর নাই! কোন টেক্সটরে চিন্তার দিক থিকা বা তার সাহিত্য-মূল্যরে জিরো কইরা দিতে পারলাম। যেমন ধরেন, শামসুর রাহমান-এর কবিতার বইয়ের নাম – আমি অনাহারী; কেউ একজন কইলেন খুলে ফ্যাল (বানানে ‘য-ফলা’ দিয়া উচ্চারণটারে ক্রিটিক্যাল করা লাগবে) তোর শাড়ি! আনিসুল হক তার উপন্যাসের নাম রাখলেন ভালোবাসো, বাঁচো; কেউ একজন কইলেন, ভালোবাসো, খেঁচো! দিস আর দ্য থিংকস।

মানে, শামসুর রাহমান বা আনিসুল হক খুব ভালো কবিতা উপন্যাস লিখেন বা ব্যাপারটা খুব পবিত্র কিছু, এইসব নিয়া হাসি-ঠাট্টা করা যাইবো না, সেইটা না; বরং একটা জিনিস যেই জায়গটাতে ‘বাজে’ সেইটা না বইলা খালি মকারি করা সম্ভব বইলাই যে তারে বাতিল কইরা দেয়া যায়, এইটাই ঘটনা। এইটা এমন একটা গ্রাউন্ডে অপারেট করে যেইখানে তাদের ‘বাজে’ ধরণটা এস্কেইপের জায়গাটাই খালি খুঁইজা পায় না, রিপিটেটলি করতেও থাকতে পারে, কারণ মকারিই ত এইগুলা, সমালোচনা তো আর না! আর যারা এই ধরণের মকারি করেন তারাও ব্যাখ্যা না করতে পারাটারে এইভাবে এড়াইতে পারেন যে, এইটা নিয়া তো কথা বলার কিছু নাই, রায় ঘোষণা করেন, বাতিল! আর যারা রিসিভার এন্ডে থাকেন, তারা আরেকটু বেশি কইরাই হাসতে পারেন এবং ভাবতে পারেন যেহেতু মকারি করা যায় সেই কারণেই এরা বাতিল। এখন যে এমনেই বাতিল, তারে নিয়া আর কী কথা! Continue reading

রিডিং বিটুইন দ্য লাইনস: মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার

হিরণ্ময় কথকতা; মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার। সম্পাদনা আহমাদ মোস্তফা কামাল। পৃষ্টা ৯৩। মূল্য ১৮০ টাকা।  

 আমরা যে কটি সাক্ষাৎকারের সন্ধান পেয়েছি, সবগুলোকেই গ্রন্থভুক্ত করেছি।

এই বাক্যটা লিখছেন আহমাদ মোস্তফা কামাল ‘মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার’ বইয়ের ইন্ট্রোডাকশনে। মানে যা পাইছেন, তার সবই নিছেন, কিন্তু নাম দিছেন ‘নির্বাচিত’; যদি সবই নেয়া হয়, তাইলে ব্যাপারটা ‘নির্বাচিত’ কেমনে হয়?

এইরকম অস্বস্তি নিয়াই বইটার পড়া শুরু।


ভাষা নিয়া 

১৬ নম্বর পৃষ্টাতে মাহমুদুল হক বলতেছেন যে,

এক কথায় আঞ্চলিক ভাষা বলে সবকিছুকে চালানো যায় না। বুড়িগঙ্গার ওপারেই আঞ্চলিক ভাষা প্রায় চার ধরণের। কুট্টিদের ভাষা, পুবাদের ভাষা, চৌরাদের ভাষা, কিংবা কাছাইরাদের ভাষার তফাত অনেক।

এবং এর পরের পৃষ্টায় বলছেন বলে লেখা আছে

আমার ধারণা, আমাদের আমির বাংলাভাষা এখনও সম্পূর্ণ তার নিজস্ব রূপ ধারণ করেনি, করতে চলেছে।

এবং ২১ নাম্বার পৃষ্টাতে বলছেন যে,

আমার বিশ্বাস বাংলা ভাষা নিজেই গুরুচণ্ডাল দোষে দুষ্ট। ভাষার এই গুরুচণ্ডালিটাকে কাজে লাগাবার চেষ্টা ছিল দোষটাকে গুণে পরিবর্তন করার।

অথচ আহমদ মোস্তফা কামাল উনার সমালোচনা করছেন ২ নম্বর পৃষ্টাতেই যে,

আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে যথেষ্ঠ পারঙ্গমতা থাকা সত্বেও… তিনি কখনো কখনো নিম্নবর্গের ঢাকাইয়া চরিত্রের মুখে কলকাতার বুলি বসিয়ে দিয়েছেন।

এখন আপনি যদি মাহমুদুল হকের আঞ্চলিকতা’র বিভিন্নতার এবং গুরুচন্ডালির সম্ভাবনারে আমলে নেন, তাইলে ঢাকাইয়া কোন নিম্নবর্গের চরিত্রের ‘কলকাতার বুলি’ বলাটা কেমনে অসম্ভব হয়? তারপর সর্বশেষ ৮০ নম্বর পৃষ্টায় লেখা

এত একিউরিসি ধারণ করা যায় না তো।

মানে, ঢাকাইয়া চরিত্র ঠিক আছে, কিন্তু সে যে কলকাতার ভাষায় কথা বলতে পারে না – এই রিজিডিটি মাহমুদুল হক নিজেও ত রাখেন নাই এবং বেশকিছু জায়গাতে এইটা নিয়া বলছেন, বইয়ের ভিতরেই। মানে মাহমুদুল হকের ভাষা নিয়া যখন কথা বলা হইতেছে, তখন ভাষা বিষয়ে মাহমুদুল হকের কথা-বার্তার কোন রিলিভেন্সই নাই! Continue reading

সাহিত্য ও রাজনীতি: আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত ‘ফররুখ আহমদের শ্রেষ্ঠ কবিতা’র প্রেক্ষিতে

‘ফররুখ আহমদের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ আমি প্রথম পড়ি ১৯৯৩ সালের দিকে। ফররুখ আহমদ মারা যান ১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর। আর বইটা প্রকাশিত হইছিল ১৯৭৫ সালের জুন মাসে, ফররুখ স্মৃতি তহবিল এর পক্ষ থেকে। আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদনা করছিলেন। বইটা পড়ার মাধ্যমেই আমি কবি ফররুখ আহমদরে আবিষ্কার করি।

আবদুল মান্নান সৈয়দ

আবদুল মান্নান সৈয়দ

 

‘ফররুখ আহমদের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বইটা যখন প্রকাশিত হয়, আমি ওই সময়টায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কথা ভাবি। স্বাধীনতার পর সেক্যুলার ধারণা তখন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রশ্নাতীত একটা ব্যাপার; এমনকি মনে হয়, তখনকার রাজনৈতিক এবং দার্শনিক যে চিন্তা, সেইটা মর্ডানিটির সাথে কোন মোকাবিলায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে নাই, বাংলাদেশে। সেই পরিস্থিতিতে, ‘ইসলামী চেতনার পুর্ণজাগরণের’ তকমা লাগানো কবি’র শ্রেষ্ঠ কবিতা সম্পাদনা করা এবং প্রকাশ করাটা অনেকবেশি সাহিত্যিক একটা ঘটনা, কিছুটা রাজনৈতিক রিস্কসহ  –  এইভাবেই আমি দেখি।

আসলে সাহিত্যের সাথে রাজনীতির সর্ম্পকটা কি রকম? যে কোন সাহিত্যই সরাসরি অথবা তার দূরবর্তী ধারণায় কোন না কোন রাজনীতিরে সমর্থন দেয়, আবার একইভাবে অনেক সাহিত্যরে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা সম্ভব আর সেইটা হয়ও। যেমন ’৬০ এর দশকে রবীন্দ্রনাথরে আশ্রয় করছিল বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ, কিংবা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে শামসুর রাহমানের কবিতা অথবা আল মাহমুদ এর জামাত-পন্থী হয়া উঠা, এছাড়াও কমিটেড কমিউনিস্ট লেখকরা তো ছিলেন বা আছেনও হয়তো। তার মানে, রাজনৈতিক মতাদর্শগুলি বা পরিস্থিতির সাথে সাহিত্যের একটা সর্ম্পক আছে। সাহিত্য যেমন রাজনীতিরে সার্পোট অথবা অপোজ করে, রাজনীতিও সাহিত্যরে ব্যবহার করে। কিন্তু এই ব্যবহার সর্ম্পকে লেখক নিজে কতোটা সচেতন –  এই প্রশ্নটা সম্ভবত আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়া উঠতেছে।[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

ফররুখ আহমদ এর রাজনৈতিক সচেতনতা কি রকম ছিল? এইখানে বরং ফররুখ আহমদ এর কবিতার জায়গাটারে আবদুল মান্নান সৈয়দ কিভাবে দেখছেন সেইটা নিয়াই বলি। ১৯৮১ সালে তিনি চল্লিশের দশক এর বাংলা-কবিতার ধারায় ফররুখ আহমদরে ব্যাখ্যা করছেন এইভাবে: “প্রায় পাশাপাশিই চলেছিল ফররুখের স্বতন্ত্র সংস্কৃতিচেতন কবিতার ধারা। কিছুকাল আগেও আমি এ ধরণের কবিতা বলতে ‘ইসলামসচেতন’ শব্দ ব্যবহার করেছি। এখন ব্যবহার করছি ‘স্বতন্ত্র সংস্কৃতিচেতন’ কথাটি। আমার বিবেচনায়, এই শব্দগুচ্ছ প্রয়োগ করলে সত্যের নিকটতর হওয়া যায়। কেননা ফররুখ ব্যবহৃত ইসলামি ঐতিহ্য সর্বক্ষণই বাঙালি-মুসলামানের স্বাত্যন্ত্রিক ধর্ম-সাংস্কৃতিক পটে স্থাপিত।” (পৃষ্টা: ৫৯, ফররুখ আহমদ: জীবন ও সাহিত্য, আবদুল মান্নান সৈয়দ, সূচীপত্র, ২০০৯)

Continue reading