“No war is a war until a brother kills his brother…” সিনেমার লাস্টের দিকে এই ডায়লগটা আছে। সিনেমার পরিচালকও বলছেন যে, এইটা যুদ্ধ নিয়া সিনেমা।
কিন্তু এইভাবে আমি ডিফাইন করতে চাই না ব্যাপারটারে। বরং এইটা অনেকটা লাউড টোনের সিনেমা; লাউড, একটা অ্যাসথেটিক্যাল সেন্সে, যেমন এই ডায়লগটা; যুদ্ধের আল্টিমেট একটা সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করে, যার পরে আর কিছু নাই, ফুলষ্টপ টাইপের নিরবতা। সংজ্ঞা হিসাবে ঠিক কি বেঠিক সেইটা পরের কথা, কিন্তু এর যে একটা আল্টিমেট টোন আছে সিনেমার ভিতর, অ্যাসথেটিক্যালি সেইটারে মিস করা সম্ভব না।[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]
‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ সিনেমাটা আমি দেখছিলাম প্রায় ১৪/১৫ বছর আগে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলাতে কমিউনিস্ট শাসন শেষ হয়া যাওয়ার পরে ওইসব দেশের কনটেস্পরারি সিনেমা দেখাইতেছিলো কোন একটা ফিল্ম সোসাইটি ঢাকার গ্যেটে ইন্সটিটিউটে। বহুদিন পরে বিজয় আহমেদ যখন সিনেমাটার কথা মনে করাইলেন, তখনো দেখলাম যে আমার মনে আছে, কাহিনিটা। ডিটেইলসগুলা ভুলে গেছি প্রায়, দুই একটা জায়গা ছাড়া। পরে যখন দেখতে বসলাম, দেখি কি, সিনেমা দেখাটাই পাল্টাইয়া গেছে আমার!
শুরুর দিকের একটা সিনের কথাই বলি। চিড়িয়াখানা’র পশুরা মারা যাইতেছে বিমানের গোলায়। এই যে দৃশ্য, এর সরল ব্যাখ্যা করা সম্ভব – ‘আমরা’, যারা ‘আম-জনতা’ সামাজিক প্রাত্যহিকতার চিড়িয়াখানার ভিতর যারা বন্দী হয়া আছি, হঠাৎ কইরা বিমানের গোলায়, যেন আজাইরা, খামাখা, কোন কারণ ছাড়া যুদ্ধের ভিতর মারা যাইতেছি। এরা চিড়িয়াখানার বন্দী পশু-পাখি না, এরা দর্শক-জনতার রূপক, এরা মানে আমরা, আমি, যে দেখি। এই যে ‘দেখা’টা, এইটা পুরা সিনেমাটারেই ডির্স্টাব করছে।
অথবা ধরেন, যুগোশ্লাভিয়া রাষ্ট্রের যে ভাইঙ্গা যাওয়া, এইটা ত শুধুমাত্র কমিউনিস্ট শাসনের শেষ হয়া যাওয়া না, বরং রাষ্ট্র-ব্যবস্থার বিপরীতে লিবারাল গ্লোবাইলাজেশনের শুরু। বিশেষ কইরা শেষ সিনটাতে, যেইখানে যুগোশ্লাভিয়া ভাইঙ্গা যাইতেছে (মানে, সিনেমাতে দেখায় যে একটা ভূখন্ড পানির উপরে ভাসতে ভাসতে আলাদা হয়া সইরা যাইতেছে) আর যেই ভাইটা চিড়িয়াখানার পাহারাদার (সিনেমার ডাইরেক্টর মনে হয়, অ্যাসথেটিক্যালি) ছিল, সে বলে যে, রূপকথার গল্প’র মতো তারা বলবে তাদের বাচ্চা-কাচ্চাদের, এক যে ছিল দেশ… এইভাবে সে তার অতীতরেই ডিফাইন করার চেষ্টা করতেছে, অথচ অতীত ত সবসময়ই রি-ডিফাইনড হইতেছে ভবিষ্যত দিয়া। ১৯৯৫ সালে যুগোশ্লাভিয়া যেইভাবে ডিফাইনড হইছে, ২০১৩ তে আইসা একইভাবে ডিফাইন করাটা সম্ভব না।
অথচ এই ফিনিশিংয়ের মানে ত হইলো যে, সলিড কোন গ্রাউন্ড নাই আর; সবাই আমরা ভাসতেছি মাল্টিন্যাশনাল ক্যাপিটালিজমের পানির উপ্রে, রাষ্ট্রের ভূমিতে না; সেই ডিটেইলটারেই এইভাবে দেখাইতে চায় নাই আর এই সিনেমা। কারণ তারে স্মৃতিকাতর কইরা তোলছে পুরান মিউজিক দিয়া, যেন এইটা নিয়তি এবং মাইনা নেয়ারই সাজেশন, ব্যাখ্যার আর দরকার নাই, তোমার বিষাদময়তাই এনাফ; এখন জীবনানন্দের কবিতা পড়ো গিয়া! মানে, ব্যক্তির জীবনে কোন চেইঞ্জ নাই, রাষ্ট্র বা রাজনীতি যা হয় একটা কিছু হোক – এইরকম।
ব্যাপারটা এইরকম না যে, তখনকার বাস্তবতা এখন আইসা পাল্টাইয়া গেছে, বরং যেইটারে আমরা ‘বাস্তবতা’ বইলা পারসিভ করতাম সেইটা চেইঞ্জ হয়া যাইতেছে। আর সেইটা এমনভাবে যে, যখন এইটারে ভাবা যাইতো ‘অতীত বেদনার’ রূপ হিসাবে, সেইটারে এখন ‘দেখা’ যাইতেছে গ্লোবাল লিবারাল পলিটিক্যাল প্রজেক্টের একটা অংশ হিসাবে। এই ‘হিসাব’ কখনোই আসতো না সামনে, যদি না এই সিনেমা তার ব্যাখ্যাযোগ্য রূপকগুলা দিয়া পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্সের জায়গাটা সামনে না নিয়া আসতো। এইটা যে খারাপ হইছে ব্যাপারটা তা না। নাম যেহেতু আন্ডারগ্রাউন্ড, পরিস্থিতির আন্ডারলায়িং রাজনীতিরে রিপ্রেজেন্ট করার একটা দায়িত্ব সে অবশ্যই নিতে পারে এবং সেইটা নিছেও।
তার রিফ্লেক্ট করা রাজনীতির প্রতি আমার অ-সমর্থন আছে, কারণ অ্যাসথেটিক্যালি ষ্ট্যালিন আমলের কমিউনিজমরে স্যাটায়ার করার ভিতর দিয়া সে গ্লোবাল লিবারাল রাজনীতির পক্ষে ব্যক্তি’র বিষাদাক্রান্ত নৈতিক সমর্থন আদায়ের রাস্তা তৈরি করছে।
এমনিতে সিনেমা ভালো। ‘দেখা’য় আনন্দ আছে।
মার্চ ১৩, ২০১৩
(লেখাটা লাল জীপের ডায়রি’তে প্রচার করা হয় এপ্রিল ১৩, ২০১৩ তে। সেইটার লিংক: http://bit.ly/16UTKMq)
Leave a Reply