রাশোমন’ গল্পের একটাই বিষয় আছে, তা হচ্ছে সংশয়ের তীর, যা সবাইকে বিদ্ধ করেছে – কাহিনীকার, চরিত্র ও পাঠককে। ঘটনার ঘটার সময় আমরা কেউই ছিলাম না, তাই আমরা সবাই আবিষ্কার করতে চাইছি একটা কারণ আর এই ‘কারণ’ নির্মাণ লাভ করছে আমাদের পারস্পরিক সর্ম্পকের লুকানো গহ্বরগুলি পূরণের উদ্দেশ্যে, যদিও আমরা নিজেদের পরিখা খনন করে চলেছি, পরোক্ষে। যেহেতু ছিল না, যেহেতু নাই, অথচ নিশ্চিতভাবেই জানি, আমরা তৈরী হয়ে গেছি; পরস্পরের সান্নিধ্যেই উপলদ্ধি ঘটছে এর, তাই ধরে নিচ্ছি এইখানে জড়িত আমরাই। অব্যর্থ নিয়তি এই মানব ভাবনার। এইখানে মুক্তি প্রত্যাশী যে কেউই নিরবতার গলিতে হাতড়ে মরে, অবশেষে সুদূর কোন আলোকবিন্দুকে পরিত্রাণের মহিমা বলে ভাবার আগেই চেতনা ফিরে পাবে; প্রলাপে মগ্ন হয়ে দেখবে পরস্পরের মরীচিকা।
যে কোন পথে, যে কোন দিকেই, উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না আর।
একটাই গতি, তা হলো অস্বীকার করা, গল্পের ভিতর থেকে বের হয়া আসা, পুন:নির্মাণের যে কোন প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা; কিন্তু যে চরিত্রগুলি তৈরী হয়ে গেছে, তাদের আর মৃত্যু নাই, পুনরাবৃত্তির চক্রে একটাই গল্প নির্মিত হতে থাকবে, সংশয়ের উল্টানো পৃথিবীতে।
আবেগের তুরীয় পর্যায়ে যে ঘটনার জন্ম, অর্থাৎ যেখানে আমরা থরথর, কম্পিত নিজেদের অস্তিত্বের মূলে, সেখানে আসে রাশোমন গল্প। সেইখানে বধির আত্মা, ‘আমাদের বোধের উপর টেনে দেয়া যোগাযোগহীনতা’ । তাই ব্যাখ্যা মাত্রই অস্তিত্বের সংশয়াকুল প্রকাশ, যে কোন পর্যায় থেকেই – প্রাথমিক অথবা গভীর।[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]
অস্তিত্বের গূঢ়তম অভ্যাস বেঁচে থাকা। তাই নিজেদের হাস্যকর যুক্তিগুলি উপস্থাপন। আশেপাশে সংশ্লিষ্টতাকে খুঁজে বের করে আনা। অন্যদিক থেকে বলতে গেলে, যেখানে ঘটনা তার সংশ্লিষ্টতাকে হারিয়ে ফেলছে, সেইখান থেকে এর বিস্তার। অস্তিত্বের মর্মমূলে এর আঘাত। একে বহন করে চলেছি আমরা তবুও অস্তিত্বের অনিবার্যতায়। বলতে চাইছি যে কথা অনুক্ত থেকে যাবে সবসময় অথবা এমনই স্পষ্ট যে তা দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে বারবার। এর বিকাশ কখনোই স্তব্ধ হবে না, প্রতিটি মানব সর্ম্পকের গভীরে লুকানো রাশোমন গল্প জেগে উঠতে পারে যে কোন সময়েই।
তাই বলে আবেগের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বসে নেই কেউ, চলে যাচ্ছে সবাই নিয়তির অমিমাংসিত পথে, নিজের।
১৯৯৮।
Leave a Reply