আমি অনুবাদ বা তরজমা করা শুরু করি ২০০৭/৮ সালের দিকে। ফ্রেঞ্চ ফিলোসফি’র ইংরেজি তরজমাগুলা পড়তে ঝামেলা হইতেছিল, তখন ভাবলাম, অনুবাদ করতে করতে পড়লে বুঝ’টা ভালো হইতে পারে। অনুবাদ করতে গিয়া দেখলাম অনেক শব্দ বাংলাতে নাই, এই কারণে না যে, বাংলা একটা ইনফিরিয়র ভাষা, এইখানে শব্দ কম; বরং বাংলা-ভাষায় আমরা যেমনে চিন্তা করি, ফরাসি’তে বা ইংলিশে চিন্তা বা কথা বলার ধরণটাই অন্যরকম। আর শব্দগুলার যেই মিনিং সেইটাগুলাও খুব ফিক্সড কিছু না, আলাপের কনটেক্সট অনুযায়ী চেইঞ্জ হইতেছে; ডিজায়ার শব্দটা দেল্যুজে যেই মিনিং, লাঁকা’তে একই না। এইরকম। আপনি যদি চিন্তা’টারে ঠিকমতো রিড করতে না পারেন, অনুবাদ খালি অন্যরকমই হবে না, বরং উল্টা-পাল্টা, বা মিনিংলেসও হইতে পারে।…
আর ‘বাংলা-ভাষা’ বইলা যে ফিক্সড, রিজিড একটা ধারণা আছে, সেইটা তো আরো ঝামেলার। ভাষা জিনিসটারে তো আগলায়া রাখার কিছু নাই! মানে, ‘শুদ্ধ বাংলায়’ লিখতে হবে – এইটা যে একটা ট্রাপ, এইটা খেয়াল করতে পারাটা দরকার। যা-ই হোক… এইরকম অনুবাদ বা তরজমা করার জায়গা থিকা ভাষার ব্যাপারগুলা ফিল করতে পারি তখন। ব্যাপারগুলা ইন্টারেস্টিং। এরপর থিকা, যখন নিজের লেখালেখির জায়গাতে মনেহয় ব্রেক নেয়া দরকার, তখনই নানান জিনিস অনুবাদ করতে থাকি। 🙂 তো, অনুবাদ আমার স্ট্রেংথের জায়গা না।
কিন্তু আমার ধারণা, আমার বাংলা-অনুবাদ অলরেডি কিছু ‘ঝামেলা’ তৈরি করছে, বা করতে পারতেছে। 🙂 এই কারণে না যে, এইগুলা খুব ‘ভালো’ অনুবাদ, বরং ‘বাংলা-অনুবাদ’ কি রকম হইতে পারে – সেইটার ব্যাপারে কিছু সাজেশন আমি রাখতে চাইছি। এক ধরণের জড়তা’র যে জায়গা ছিল, সেইগুলা ভাঙ্গতে শুরু করছে। সেই জড়তার জায়গাটারে বাদ দিলে অনুবাদগুলা যে ‘ভাবানুবাদ’ হয়া যায় না, এইটা রিডার’রা ধীরে ধীরে হইলেও মাইনা নিতে পারবেন বইলা আমি আশা করি।
এমন না যে, ব্যাপারটা আমি-ই শুরু করছি; বরং আমার ধারণা, একই রকমের চেষ্টা অনেকেই করছেন, করতেছেন। ফকনার একটা কথা বলছিলেন যে, যদি উনি না লিখতেন, উনার লেখাগুলা অন্য কেউ লেইখা ফেলতো আসলে; হেমিংওয়ে বা দস্তয়েভস্কি… সবার লেখাই… মানে, সময়ের একটা ব্যাপার আছে। বাংলা কবিতায় যখন ‘মর্ডানিটি’র ধারণা আসছিল তখন বুদ্ধদেব বসু’র বোদলেয়ারের অনুবাদ ফুয়েল যোগাইছিল; মর্ডানিটি’র লগে বোদলেয়ার আসতোই, বুদ্ধদেব বসু জাস্ট তারে টাইমলি পিক করছিলেন।… পুরাপুরি সিমিলার ঘটনা না হইলেও, আমাদের টাইমে রুমি, বুকোউস্কি… উনারা রিলিভেন্ট হয়া উঠতেছেন; আমি তরজমা না করলেও অন্যরা করতেন, বা করতেছেনও।
তবে যেইটা খেয়াল করতে পারাটা দরকার, এইখানে ‘অরিজিনাল’ বা ‘বিশুদ্ধ’ কোন রুমি বা বুকোউস্কি নাই; বরং বোর্হেস’রে কোট কইরা এডওযার্ড সাঈদ যেইটা বলতেছিলেন যে, একেকটা ভাষায় একেকটা “অরিয়েন্টালিজম” জন্ম নিতেছে; মানে, কেউ নতুন কইরা লিখতেছে না, কিন্তু একেকটা ইন্টারপ্রিটেশন তৈরি হইতেছে; এইটা আছে আর কি! অনুবাদ জিনিসটারে এইরকম ওয়াইড একটা জায়গা থিকা দেখেন! – এইটা আমার একটা সাজেশন, বা আর্জি; সবসময়।
Leave a Reply