ইন্টারভিউ উইথ কীর্তিকলাপডটকম

তালাশ তালুকদার: কবিতার কোন সংজ্ঞাটিরে আপনার বিবেচনায় প্রমিনেন্ট মনে হয়? কবিতা নিয়া আপনার আইডিয়া, চিন্তার কথা বলুন। কবিতা নিয়া আপনার কোনো মিশন আছে কি?

ইমরুল হাসান: ইমেজই কবিতা। এইরকম লিখছিলাম একটা সময়। ওইটার কথাই মনে হইতেছে এখন।

কবিতার বাইরে গিয়া কবিতার কথা বলতে গেলে বেশ আন-রিয়েল মনেহয়। মানে, বলা-টলা গুলা বেশ ভচকাইয়া যায়, কোন মিনিং তৈরি করতে পারে না, বেশিরভাগ সময়ই এই সমস্যাটা হয় আমার। এমনিতে দুইটা ট্রেন্ডের কথা মনে হইতেছে – যাঁরা কবিতারে তাঁদের বু্দ্ধি, ভাবনা, জীবন-বাস্তবতা ব্লা ব্লা ব্লা বলার মিডিয়াম হিসাবে ইউজ করেন, সহজ-সরল প্রাকটিস করেন; আবার সিমিলারলি আরেকটা ট্রেন্ড আছে জোর কইরা রহস্য, কল্পনা পয়দা করতে থাকেন, যা কিছু জানা আছে, তারে অ-জানা বানাইতে থাকেন; এই দুইটা ট্রেন্ডই কবিতারে মিনিমাইজ করার একটা প্যার্টান; মানে, কবিতা বা আর্ট ঠিক রিয়ালিটিটারে রিপ্রডিউস করে না বা আজাইরা কিছু জিনিসও না, বরং একজেগ্ট রিয়ালিটিটারে ক্রিয়েট করতে পারার ঘটনাই।…

কবিতা নিয়া প্রি-ফিক্সড কোন মিশন আমার নাই।

তা. তা.: আপনার কবিতা লেখার প্রসেসটা বলেন? ভাবনা থেকে সৃজন পর্যায়ে নিয়া যাইতে কি করেন? (মানে, খেলার আগে ওয়ার্মআপ!) -লেখার আগে একটু পইড়া নেন? নাকি দিব্যি দেখাইতে চান আপনার যাপনচিত্র- নাকি পুরোটাই শ্রম দিয়ে একটা বায়বীয় মেশিনকে সামনে দাড় করান?

ই. হা.: কনশাসলি ভাবি নাই কখনো প্রসেসটারে। কোনএকটা কিছু মনে-হয়, সেই মনে-হওয়া থিকা মনেহয় জিনিসটা ছড়াইতে থাকে। এই মনে-হওয়াটাও একদমই যে ইরিলিভেন্ট সেইটা না, বাঁইচা থাকার ভিতরের একটাকিছুই, যেইটা ফিল করতে পারলাম আমি আর কানেক্ট করতে চাইলাম এইরকম একটা ডিজায়ারের ভিতর দিয়া হয়তো আগাইতে থাকে।

তবে কোন বই, গান এইসবকিছু থিকা আসে না মনেহয়। কবিতা লিখতে গেলে রিয়েল একটাকিছু লাগে।

শ্রম, টেকনিক এইসবকিছুও লাগে আমার।

তা. তা.: কবিতা ও সাহিত্যের অন্যান্য শাখা প্রশাখা (গান, নাটক, ফিল্ম, উপন্যাস, গল্প)-এগুলির মধ্য থিকে কোন প্রভাবটা জনজীবনরে বেশি প্রভাবিত কইরা থাকে? তেমনিভাবে সাহিত্যের সঙ্গে শিল্পের অন্যান্য শাখা, প্রশাখা (যেমন, আর্ট, স্থাপত্যবিদ্যা) কোনটার প্রভাব জনজীবনে বেশি দেখা যায়?

ই. হা.: ডেফিনেটলি, সিনেমা। উই আর হোয়াট উই ক্যান সি ইন আওয়ার সিনেমাস!

মেশিনগুলা ইর্ম্পটেন্ট। আমাদের লাইফ তো এখন সারাউন্ডেড বাই লটস অফ মেশিনস।

তা. তা.: একজন কবিকে মানুষ হিসাবে আপনি কেমন আশা কইরা থাকেন? কবির ব্যক্তিচরিত্র, সামাজিকচরিত্র কেমন হওয়া উচিত বইলা মনে করেন? আপনার যাপিত সময় কবিতায় কতটুকু উঠে আসতেছে? এবং তা কতটুকু বাস্তবসমাজনির্ভর?

ই. হা.: সোশ্যাল সেন্সে, কবিরা একটু বাটপার-ই হয়, আনবিলিভেবল রকমের সেলফিশ, জেলিফিশের মতোও একটু, বাজে কাজগুলার স্মৃতি-টৃতি মনে রাখে না… তারপরও আমি আশা করি যে, সে আর যা-ই হোক আশেপাশের মানুষের সাথে বাজে বিহেভ করবে না; আবার এটলিস্ট হি শ্যুড ট্রাই, ভান-টান কম করার।

বরং আমি ভাবি যে, যে কোন সামাজিক মানুষই যাতে কবি হইতে পারেন। কবি হওয়ার লাইগা তার যাতে আরেকটা আইডেন্টিটি ক্রিয়েট করা না লাগে। যে কোন সোসাইটিতেই কবিতা-লেখাটা’রে প্রফেশন হিসাবে নেয়া পসিবল না।

বাঁইচা থাকাটাই তো কবিতা। মানে, আমার বাঁইচা থাকার বাইরে তো আর আমার কবিতা নাই। আমি সিলেটে থাকতে সিলেটের কবিতা লিখতাম, চিটাগাংয়ে থাকতে চিটাগাংয়ের কবিতা, এখন ঢাকায় থাইকা ঢাকার কবিতা লিখি। অন্যান্য জায়গার কবিতা লিখারও ট্রাই করি, ধরেন ময়মনসিংহ বা নরসিংদী’র… হয় না অবশ্য তেমন একটা। কিন্তু মইরা গেলে তো আর লেখাও হবে না, কবিতা।

আমার রিয়ালিটি তো আমি-ই ক্রিয়েট করি থ্রু মাই পোয়েট্রি।

তা. তা.: কবিতায় ছন্দ এবং ভাষা এই দুটি উপাদান এক কবি থেকে আরেক কবিকে পৃথক করে কি? আপনার পক্ষপাত কোনদিকে? মুখের ভাষা নাকি লেখনির ভাষার দিকে? আগামী পঞ্চাশ বছর পর বাংলা কবিতার ভাষা কেমন হইতে পারে?

ই. হা.: ভাষাটারেই ছন্দ ভাইবা আমি লিইখা ফেলি। এমনিতে ছন্দ খুব একটা জানি না আমি। আমি ট্রাই করছি জানার, কেমন জানি, হয় না আমার। আরো ট্রাই করার ইচ্ছা আছে অবশ্য।

মুখের ভাষা বা লেখার ভাষা এইভাবেও ঠিক আলাদা করতে পারি না। যেইভাবে চিন্তা-ভাবনা করি, ওইটার কাছাকাছি কোন একটা ভাষাতেই লেখার ট্রাই করি যাতে ডিস্টরসনটা কম হয়। একটা থট’রে অ্যাজ ইট ইজ এক্সপ্রেস করতে পারাটা তো কঠিন একটা ব্যাপার।

তা. তা.: আল মাহমুদ নাকি শামসুর রাহমানরে এগিয়ে রাখবেন? জসীমউদ্দিন কি এ সমাজবাস্তবতায় এখনো গুরুত্বপূর্ণ বইলা মনে করেন? আপনার কাছে রবী ঠাকুরের কবিতা জীবিত নাকি মৃত?

ই. হা.: আল মাহমুদ বেটার মনেহয় এখন।

না, জসীমউদ্দিনরে ইর্ম্পটেন্ট লাগে না।

যাঁরা কবিতা লিখেন তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথের কবিতা অনেক আগেই মারা যাওয়ার কথা, উনি বাঁইচা থাকার টাইমেই।

তা. তা.: বর্তমান সময়ের কলকাতার কবিতা, বাংলাদেশের কবিতা সম্ভাবনা, সফলতা কার কতটুকু? এগিয়েছে, পিছিয়েছে কে কতটা?

ই. হা.: এইভাবে ভাবি নাই, আগানো-পিছানো নিয়া! তবে, কলকাতা (বঙ্গ) এবং ঢাকার (বাংলাদেশের) কোন তুলনা হইতে পারে না আসলে। কলকাতা, দিল্লী বা মুম্বাই-এর এক্সটেনশন। পলিটিক্যাল এনটিটি হিসাবে ঢাকা একটা সেন্টার পয়েন্ট। কলকাতায় থাকা লোকজন বাংলা কবিতা লিখলে ঢাকার কবিতাই লিখেন।

তবে যাঁরা বিদেশে (ঢাকা বা কলকাতার বাইরে) থাকেন তাঁরাই মনেহয় এখন বাংলা-ভাষায় সিরিয়াসলি কবিতা লেখার ট্রাই করেন। উনারা নানার রকমের ঢাকা ও কলকাতা ক্রিয়েট করার মধ্যে আছেন। ভালো জিনিস এইটা।

তা. তা.: সাহিত্যের সিন্ডিকেট নিয়ে কিছু বলুন? আপনার উত্থান সময়ের গল্প বলুন? সে সময়ের কবি বন্ধুদের হাসিমাখা মুখ, প্রকাশ্য সমালোচক, হন্তারক, খাঁটি নিন্দুক, খাঁটি বন্ধু এদেরকে কিভাবে সামলিয়ে ছিলেন? সমালোচনা সাহিত্য কিভাবে নেন আপনি?

ই. হা.: সিন্ডিকেট নিয়া বলা’টা একটু মুশকিলই, কারণ সিন্ডিকেট-বিরোধিতাও বেশিরভাগ সময় আরেকটা সিন্ডিকেট হিসাবেই কাজ করতে থাকে। তবে এইটা নিয়া আমার তেমন একটা ঝামেলা হয় না, কারণ আমি কবি হওয়ার চাইতে কবিতা লিখাটারেই প্রেফার করি। কবি হইতে হইলে এইসবকিছু নিয়া ভাবার দরকার আছে, কবিতা লিখার জন্য খুব বেশি নেসেসারি না।

আমার উত্থান তো হইতেছে না এখনো, বয়সও হয়া যাইতেছে, এইদিকে… কি যে করি!

আমার কবিতা নিয়া তেমন কোন আলাপ আমি দেখি নাই। খালি জাহেদ আহমদ-ই লিখছিলেন, লালজীপের ডায়েরি’তে। ওইটাতে সমালোচনা ছিল না তেমন, জাহেদ তো এমনেও খুব সফট টাইপের মানুষ।

তা. তা.: ছোটকাগজের সঙ্গে বড় কাগজের গ্যাঞ্জাম সেই পুরনো, হাল আমলেও একই অবস্থা। তো, বড়কাগজের কেউ যদি বড় কবি হয় তবে ছোটকাগজের কবিরা তাকে কি স্বীকৃতি জানাবে না (এভাবে ছোটকাগজের কবির ক্ষেত্রেও একই কথা।)? এই অস্বীকৃতির সংস্কৃতি নিয়া কিছু বলুন? সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশমাধ্যম হিসেবে কোন ক্ষেত্রকে আদর্শ বলে মানেন?

ই. হা.: হায়, হায়, বড়কাগজ ছোটকাগজ এইগুলা এখনো আছে নাকি! কবিতা নিয়া স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি’র কিছু নাই। তারপরও এইগুলা থাকতেই থাকে সোসাইটিতে। এইগুলা নিয়াও আসলে করার কিছু নাই।

এখন পর্যন্ত অ্যাভেইলেভেল কোন প্রকাশমাধ্যমরেই আদর্শ মনে হয় না।

তা. তা.: আপনার সময়ে কোন কোন কবিকে সফল, সম্ভাবনাময় মনে করেন? আপনার সময়ের ৫ জন কবির ৫ টি কাব্যগ্রন্থ’র নাম উল্লেখ করুন।

ই. হা.: কবি ব্রাত্য রাইসু’কে সম্ভাবনাময় মনে করতাম। কবি সুমন রহমানকেও সফল মনে হইতো। উনারা একটু সিনিয়র আমার। এইসব জিনিস তো টাইম টু টাইম চেইঞ্জ হয়। অনেকসময় আমি ফিল করি যে আমি লাকি, আমার বন্ধু আমিনুল বারী শুভ্র এবং শাহাদাত হোসেন রবিন বেশিদিন কবিতা লিখেন নাই। তারপরও অনেকেই লিখছেন, লিখতেছেন; যেমন শাখওয়াত টিপু, মজনু শাহ, মুজিব মেহেদী, শশী হক, আরো অনেকে আছেন, ফ্রেন্ড না বইলা হয়তো অনেকের নাম মনে পড়তেছে না। অনেকের লেখারে আমি ইর্ম্পটেন্ট মনে করি না, একইরকমভাবে অনেকেই আমার কবিতারে পাত্তা দিবেন না। এইরকমই তো ব্যাপারটা।

আমার সময়ের কবিদের কবিতা আমি আসলে কম-ই পড়ছি। যেই বইগুলা পড়ছি সেইখান থিকাই বলি –

কবিতা – রবিন আহসান।
আকাশে কালিদাসের লগে মেগ দেখতেছি – ব্রাত্য রাইসু।
ঝিঁঝিঁট – ঈশান জয়দ্রথ।
কৈ ও মেঘের কবিতা – মাহবুব কবির।
মামুজির নৌকায় – কামরুজ্জামান কামু।

 

লিংক: http://bit.ly/1K0E7e4

 

Leave a Reply