কবিতা: অগাস্ট – অক্টোবর, ২০১৯

সুখী মানুষের জামা

একবার এক দর্জি তার বাচ্চার জন্য একটা জামা বানাইলো। বানানোর পরে দেখলো, জামা’টা বড় হয়া গেছে অনেক। তখন জামাটা সে রাইখা দিলো। যে, বড় হইলে পরতে পারবে। তারপরে সে আবার একটা জামা বানাইলো। ছোট হয়া গেলো সেই জামা। আবারো বানাইলো। আবারো ছোট হইলো। এইভাবে তার বানানো কোন জামা তার বাচ্চাটা পরতে পারলো না আর। বাজার থিকা অন্য জামা কিইনা দিলো তারে। আর বড় যে জামাটা বানাইছিলো সবচে আগে, সেইটার কথা সে ভুইলা গেলো ততদিনে, ছোট ছোট জামা বানাইতে বানাইতে।

 

কালা রংয়ের জ্যাকেট

স্টেডিয়ামের কনসার্ট শেষে বাইর হয়া আসছি সোহরাওয়ার্দি’র মাঠে। সেইখানে থিকা উঠার সময় কালা রংয়ের জ্যাকেট’টা ফালায়া গেলাম। তখন রাত হয়া আসছে, শীতের সন্ধ্যাবেলা পার হওয়ার পর। রাস্তায় গিয়া মনে হইলো। খারাপই লাগতেছিল। জ্যাকেট’টা ভালো ছিল। আর পাওয়া যাইবো না মনেহয়। সেই না-পাওয়া’টা থাইকা গেলো কোথাও না কোথাও।

মিউনিসিপ্যালিটি অথরিটি এক সুইমিংপুল বানাইছে নাগরিকদের গোসল করার লাইগা। সেইখানে গেলাম আমরা। সাঁতরাইলাম। দেখি আরো অনেকে আসতেছে। মানুষ বাড়তে বাড়তে হয়া উঠলো সেইটা নদীর পাড়, তারপর বিশাল সি-বিচ। একটা কবিতার লাইন আইসা হারায়া গেলো। পাড়’টা বাঁধাই করা। আঁকিবুঁকি কি জানি আঁকতেছে পোলাপাইন – ‘পুলিশ চুদি না!’ লিইখা আবার মুছে ফেলতেছে। পার্কিং জোনে গিয়া খারাপ লাগতেছিল আবার আমার। কে জানি আসছে, কার সাথে জানি আমি কথা কইতেছি। আমার কালা জ্যাকেট’টা যে নাই মনে পড়লো তখন।

আমার মনে হইলো, এই জিনিস তো আমি হারাই নাই। খালি স্বপ্ন বইলাই মিসিং লাগে মনেহয়। মনেহয় সারাক্ষণ, সবখানে, কি জানি নাই, কি জানি নাই… তারপর মনে হইলো, তোমার স্বপ্নে অন্য অনেক মানুষের লগে ঘুরে বেড়াইতেছি আমি, তোমারে ছাড়াই।

 

একটা ছবি

ছোট একটা বারান্দায়
মুখামুখি দুইটা চেয়ার বইসা আছে

বলতেছে, রাস্তা থিকা আমাদের একটা ছবি তোলেন!

 

আমার সোনার হাঁস

সোনার ডিম-পাড়া হাঁস আমার,
আমার ইচ্ছা হয় খুন করি তোমারে

তুমি হাঁস, ডিম পাড়তেই থাকো
আর তোমারে আমি থামাইতেই পারি না

তোমার সোনার ডিম, তোমারে বানায়া ফেলে
অন্য একটা হাঁস

ইচ্ছা হয়, তোমারে খুন করি আর দেখি
তুমি জাস্ট অন্য একটা হাঁস

ইমাজিনেশনের, আমার

 

রিয়েল

একটা বাস্তব তুমি তো আছো,
যার ইমাজিনেশন হয়া বাঁইচা থাকতেছি আমি

আর এই তুমি একদিন আমারে বলতা,
‘ভালোই তো ইমাজিনেশন আপনের!’

 

প্রেম

মানুষ যেইভাবে ঘুমায়, সেইখানে
আড়ষ্টতা থাকে একটু, যেইখান থিকা সে
জাইগা উঠতে পারে।

অইরকম একটা ভঙ্গিমার মতোন
মনে রাখি তোমারে,
সবসময়।

 

 

একটা টানেল তার অন্ধকারের ভিতর দিয়া আমারে দেখতেছে

জেলাসি আর ঘৃণা প্রেমে পড়লো খুব। অদের প্রেমে পয়দা হইলো ডর। ডরের দোস্ত হইলো ডিজায়ার। অরা রাস্তায় ঘুইরা বেড়ায়। অরা হাসে। অদের হাসিগুলা হয়া উঠে গুজব।

শুইনা সবাই কয়, এইগুলা তো পরা-বাস্তব, তাই না? নাকি ম্যাজিক রিয়ালিজম? এস্কেইপ ফ্রম রিয়ালিটি? কাবজাব?

সবাই সবকিছু বুইঝা ফেলে কোন না কোন জানা’র ভিতর দিয়াই। একটা কিছু জানা’র পরে আরো অনেকগুলা জানালা ওপেন হইতে শুরু করে। হু হু বাতাস আসে।

এক একটা উইন্ডো’তে যেন এক একটা সিনেমা চলতেছে। একটা মেয়ে তার ফ্রক টাইনা হাঁটুর নিচে নামাইতে নামাইতে বলতেছে, আমার গরিবিও দেখেন! তাঁর মুখে কালি-মাখা। মাইগ্রেন্ট শে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের শিশু। রোহিঙ্গা। কাদা-মাখা পানি পার হয়া আসছে। অথবা বোমা ফাটছে আশেপাশে, কোথাও। ছবিতে নাই।

আমি দেখতেছি, একটা টানেলের ভিতর দিয়া আলো আসতেছে, তার পিছনে অন্ধকার। আর টানেল’টা দেখতেছে আমারে। আমি অন্য আরেকটা আমি হওয়ার পরে আবার একটাই আমি হয়া থাকতেছি। টানেলটা ফ্রাস্ট্রেটেড হয়া উঠতেছে। আরেকটা আমি’রে খুঁইজা পাইতে হবে তাঁর। তা নাইলে টানেল’টা টানেল হয়াও থাকতে পারবে না তো আর!

অথবা আমি না থাকলেও টানেলটা থাকতেছে তো! আলো আর অন্ধকার। অন্ধ করা চোখগুলা। ইমেজের। আমরা’র।

 

 

অরিজিনাল

হুঁশ ফিরা’র পরে, সাপরেও মনেহয় দড়ি

 

অগাস্টে, শরতে

জীবন নদীর পারে
সন্ধ্যা নামতেছে ধীরে

সিএনজিঅলা মোবাইলে বাজাইতেছে গান,
‘সন্ধ্যা হলো ডাক দিলি না মোরে, বন্ধু রে…’

রাস্তায় দুপুরবেলার জ্যাম

আমি যাইতেছি দূরে, ফ্লাইওভারের উপরে
বাদাম বেচতেছে একটা লোক

আমি ভাবতেছি, ফিরতে হবে
জীবন নদীর পারে

সব ইমাজিনেশন বন্ধক রাখার পরে
যেই রিয়ালিটি থাইকা যাবে, তার কাছে

যারে দেখি নাই আমি কোনোদিন
যে আমারে দেখে আর বলে,
‘রোগা হয়ে গেছো এতো,
চাপা প’ড়ে গেছো যে হারিয়ে, পৃথিবীর ভীড়ে তুমি…’

সেই অন্যমনস্কতার ভিতরে,
নতুন পুরাতন যত রেফারেন্স ছিল আর
থাইকা যাইতেছে

তাদের সকল কিছু, সমস্ত কিছু
নিভে যাইতেছে, ধীরে

সময়ের ওড়নার পিছে, উড়তেছে মেঘ
কোন একটা থিয়েটারের স্টেইজে

আবারো অন্ধকার নাইমা আসবে বইলা
আমি বইসা থাকতেছি

অন্য অনেকের আছে অন্য অনেক কারণ

তারা বাঁইচা থাকবে বইলা
হাঁটতেছে, দৌড়াইতেছে, কথা বলতেছে

দেখো, এইটা এইটা আর এইটাও তো
আছে!

দৃশ্যগুলা মুছে যাবে
কথাগুলা কেরোসিনের কুপি’র মতোন একটু একটু কইরা ফেড হইতে থাকবে

কি কি জানি বলতেছিলাম আমরা?

মন থিকা অনেকগুলা মনের কথা মনে হবে

কাশফুলগুলা যেমন মাথা উঁচা কইরা জাগতেছে শরতে

হেমন্তে, ঝইরা যাবে

মৃদু একটা শ্বাসের মতোন

একটা ঘাসফড়িং ঘাসগুলার ভিতরেই হারায়া যাবে

গলার ভিতরে একটা মাছের কাঁটা আটকানোর পরে নাইমা গেলে
যেমন ব্যথাটা থাকে আরো কিছু সময়,
অইরকম মনে হবে,
হিমালয়ের চূড়াতেও যেমন মাছের ফসিল পাওয়া গেলো, এই এতো বছর পরে
এইরকম পরিচিত ব্যথা, বিচিত্র তথ্যের লগে মিলতে তো পারে!
তথ্য দিয়া ঘেরাও হইতে থাকা মন ফিলিংগুলারে জাপটায়া ধরতে গিয়া দেখবে,
হায়! কিছুই তো থাকে না দেখি!

অগাস্টে, শরতে
মেঘগুলা অপারেশনের টেবিলে শুইয়া থাকা একটা মানুষের মতোন
অ্যানস্থেশিয়া দেয়ার আগে ভাবতেছে,
উইড়া যে যাবো, তারপরে ফিরা আসবো তো আবার?
আর ফিরা আসার পরে
স্ট্রেচারে যাইতে যাইতে ভাববো, একটা নিয়ার ফিউচার
সবসময় একটু দূরে দূরে যে থাইকা যাইতেছিল,
সেইটাই তো ভালো ছিল!

গলিতে একটা রিকশা
আরেকটা রিকশার অনেক কাছে চইলা আসার পরে
বেল বাজাইতেছে টুং টাং, বলতেছে
‘দূরত্ব মহান!’

একটা গান চলে আসতে চাইতেছিলো আমাদের কাছে,
এখন চলে যাইতেছে দূরে

বাতাস উড়ায়া নিয়া যাইতেছে সবকিছু
যেন
‘ফিরায়া দিবে না তারে আর!’

তারা’রা জ্বলতেছে রাতে,
জীবন নদীর পারে

সন্ধ্যা নামার পরে

 

 

 

 

 

রিগ্রেশন 

যখন আমি আসবো না,
হাসবো না, ভাসবো না,
কাশবো না… মানে, কি কি
যে, মিল আর অমিল,
ফিলিংসের মতোন,
ভাসি ভাসি বলে
শরত-বাতাসে মন,
পূজা-মন্ডপে ঘুরতে ঘুরতে
রইদ আর পানি খাইতে খাইতে
ভাবি, শব্দ, কথারা, এমন
কোনদিন অরা দোস্ত আমার
ঘাস আর বালি, পায়ের নিচের
মাটি, আমারে দিতেছে না
ভাসতে আর… সো, এখন
শুরু করা যাইতে পারে, আবার
কাশবন, ফাঁসবনে হাঁটতে হাঁটতে
মন, মনে হইতে পারে যেইরকম
এইসব শব্দ আর কথারা, আমাদের
কেউ না, আর আমরা চাইতেছিলাম
আমাদেরকেও নিয়া নিক না অরা!
কিন্তু অদের আছে নিজ নিজ তরিকা
নুইয়া পড়ার, শীতের বাতাসের অপেক্ষা,
অরা জানে কেউ ইনফিরিয়র না, বরং
কেউ ডরায়, আর কেউ যে জানে, কৌশল
কেউ কেউ, টার্ন অ্যারাউন্ড, ঘুইরা-ফিরা
পাখি, জন্তু, জানোয়ার ভালোবাইসা আবার
মানুষ হইতে চায়, যেন সেক্যুলার মেঘ
দূরে, দূরে আর অই দূরে, বইসা থাকে
আর ঘুইরা বেড়ায়; তাকায়, আর কয়,
মাফ কইরা দিছি তো রে ভাই! আর
আমি মনে রাখি নাই, পোঁ পোঁ, মেলার বাঁশি
যেন বাজে নাই, বা আমি ভাবি, ক্লিক ক্লিক
ক্লিক, ঘড়িটাই যেন সময়, টাইম একটা
সন্ধ্যার ট্রেন, মেঘনাব্রীজের উপর দিয়া
আরেকটা অন্ধকারের দিকেই চইলা যায়…
আর যায় না যে, তার তো আছে নিশ্চয়, কোন
না কোন কারণ, আর কারণ তো মিথ্যা না, কোনসময়

আমি জানি, আর এই জানা’র ভিতর দিয়া
না-জানা’রে, না-জানতে-চাওয়া’টারে আমি
ঠেকায়া রাখি; যেন আমরা দুইজন না-জানা
থাকতেই পারি না আর, কোনসময়, কোন একটা
সময়ে, কেউ না কেউ থাকা আর না-থাকাই খালি
ছড়ায়া যাইতেছে, দেখো, এই এই আর এই
এইটা এইটা এইটা আর এমন এমন এমন

যে কোন রকমই হইতে পারে, তারপরও
একটা রকম, একটাই আর যে গেলো হারায়া
সেই সুডো, সেই মহান, আছেন, থাকবেন
একজন অ্যাভারেজ মেঘের আড়াল
হাসতেছেন, গান গাইতেছেন, কবিতাও লিখতে
পারতেন, অথবা লেখেন, রাইখা দেন, নিজ খাতায়
বলেন, বলা কথাগুলা মনে থাকে না তো আর…

এইরকম আছে অনেক জীবন, এইরকম
অভিশাপগুলা জানালা বাইয়া নাইমা যাইতেছে
বিকালের রইদের মতোন, রাস্তায় ক্রিকেট
খেলতেছে পোলাপাইন, আর দূরের ছাদগুলাতে
দুইটা, একটা মানুষ, মনেহয়, অরা-ই মানুষ
মানব যেইরকম, রামদা নিয়া ছুইটা আসবে না
মুচকি মুচকি হাসতে থাকবে, পারমিশন চাইবে,
চুমা খাওয়ার, না দিলে, চইলা যাবে দূরে, আরো
দূরের ছাদে, দাঁড়ায়া থাকবে, একটু দূরে, এরা
তো কেউ রেইপ কেইসের আসামি না, এরা
পত্রিকার পাতায় যেমন থাকে ধূসর, একটা
মন নিয়া থাকে, উথাল-পাথাল করে না তেমন,
প্রাইজ-টাইজ পায়, কথা-বার্তাও বলে, সুন্দর
অথবা যখন খেইপা যায়, থাকে যৌক্তিক কারণ,
বিপ্লবীরা যেমন খুন করার পরেও বিপ্লবীই থাকেন

অথচ ভুল একটা পুলিশের মতোন, আমি
লিখতেছি ক্রসফায়ারের কাহিনি, হইতেছে না তেমন
কিন্তু কে কি কইবো আর, বড়জোর

যখন আমি আসবো না,
হাসবো না, ভাসবো না,
কাশবো না…

শীতের আগে আসা একটা ঠান্ডা বাতাসের মতোন
আনবিলিভেবল, বইলা চুপই থাকবে না, যে
যার কাহিনিগুলা বলতেই থাকবো, এইরকম
এইরকম, এইরকম… আমি বলতে গিয়া
থাইমা যাইতেছি, আবার ভাবতেছি, বলা
তো হইলোই অনেক, তাই না? তাই না?
হুমম…হুমম… হুমম?… আর তারপরে

ভাঙ্গা রাস্তার অইপারে জাইগা উঠলো একটা চাঁদ

আমি ভাবতেছিলাম, একটা পথে এখনো হাঁটতেছি
আমি আর হঠাৎ কইরাই চইলা আসছো তুমি
আয়নার অন্য একটা সাইডে যেইরকম থাকে অন্ধকার
তার ভিতরেও নিজেরে দেখার এক্সপেক্টশন
থাকতে পারে তো সবার, একইরকম ভুল
আর ভুলটারে সত্যি না ভাবলে এইটা কেমনে
হইতে পারে যে, আমরা বাঁইচা ছিলাম! সো,
উই ড্যান্সড, অ্যান্ড ড্যান্সড আর নেক্রোপলিসের
একটা কারেক্টার আইসা আমারে কইতেছে,
‘নাচ, বেটা নাচ… নাইলে গুলি কইরা মাইরা
ফালাবে তোরে, বারের বারটেন্ডার…’, হাসতেছিল
অরা তখন… আর অদের হাসি আর চিল্লানির ভিতর
বড় হইতেছিল রাত, আমি ঢুকে যাইতে চাইতেছিলাম
একটা বোতলের ভিতর জ্বীনের মতোন, আরো
ঘুমায়া থাকতে কয়েকটা বছর, সাগরের
ঢেউয়ের মতোন, একটা গান আইসা
ঘুম পাড়ায়া দিক আমারে, আর আমি দেখবো
যে,
কিছুই চেইঞ্জ হয় নাই, খালি আমার শরীরে
অনেকগুলা ঘুণপোকা, গুনগুন গুনগুন
গাইতেছে গান,
একটানা, ঘুম-ভাঙ্গার…আমি বলতেছি, অদেরকে,
থাম! আর অরা হাসতেছে, যেন গান গাইতেছে
না কোন, এইটাই অদের লাইফ আর আমি রিলিভেন্ট
না কোনভাবেই, একটা কনটেক্সট, ভুল-বোঝার…

দ্যান, ইট ক্রাশেস… যেন একটা বিমান, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে
ইট রিচেস সামহোয়্যার এলস… আর তুমি বললা,
(মানে, তুমি তো বলবা এইরকমই যে,) আজাইরাই…

 

একটা বিড়ালের থাবার মতোন 

…আর
তারপর

একটা বিড়ালের থাবার মতোন

সন্তর্পণে
আসতেছিলো

একটা
ভোর

 

চা খাইতেছি

রাস্তার পাশে, বেদনা হয়া বইসা আছি
তোমার লাইগা; চা খাইতেছি, টংয়ের দোকানে,
ভাবতেছি, সিগ্রেটও ধরাবো কিনা…

বেদনা তো বেশিক্ষণ থাকে না,
চা শেষ হইলেই উইঠা যাবো

আমারে দেখবা না তুমি;

আমি বইসা ছিলাম তোমার লাইগা

তুমি বাসে কইরা চলে যাইতেছো
অন্য অনেক মানুষদের মতো

 

ব্রুটাস

আমার ব্রুটাস’রে নিয়া বইসা আমি মদ খাইতেছি।
ব্রুটাস’রে কইলাম, ‘ব্রুটাস, তুমিও?’

ব্রুটাস কয়, ‘আপনে কি ভাবছেন?
আপনে আমারে ব্রুটাস কয়া ডাকবেন,
আর আমি ব্রুটাস হইতে পারবো না?’

বইলা, ব্রুটাস হাসে।
আমিও হাসি।
আমরা এক লগে বইসা মদ খাই।

এই ব্রুটাস’টা এতোটা ভালো না,
মানে, আমি যেইরকম
জুলিয়াস সিজার,
অইরকমই।

 

শরত রাতের বাতাস

আমি কি তোমারে দেখবো? তোমারে
কি বাইন্ধা রাখবে কলকাকলিমেলা, তৎসম শব্দরা?
অথবা আমি আর নাই, কবিতা লিখতে লিখতে
আজাইরা শব্দগুলার মতো, মরা
আর বাতাস কি ফুরফুরা! শীত আসার আগে
একলা একলা ঘুইরাফিরা বেড়াইতেছে সে, কোন
কাহিনির ভিতর থিকা যেন সে বাইর হয়া আসছে, আর
বলতেছে, চলে যাইতে যাইতে, “আমি তো ফিরা যাবো না..”

আর কাহিনি’টারে খুঁইজা বাইর করার ভার
সে আমারে দিয়া যাইতেছে,
শীতঘুমের ভিতরে
ঢইলা পড়ার আগে,
আরেকবার।

 

হাসি

অন্তহীন মিমিক্রি’র ভিতরে বইসা আছি;
একটার পরে একটা আসতেছে অরা, হাসতেছে
আর আমারে কইতেছে, হাসো না ক্যান তুমি? হাসো!

আমি হাসি, আমি ডরাই (মানে, ভয় পাই)
যদি অরা আমার পেটে ছুরি চালায়া দেয়,
কয়, শুয়োরের বাচ্চা, এরপরেও তোর হাসি
আসে না ক্যান!… আমি ডরে ডরে হাসি,
হঠাৎ কইরা ফারাক্কা বাঁধ খুইলা দেয়ার মতোন
হাসি আসতে থাকে আমার, আর টয়লেটের
শান্ত-শিষ্ট মাকড়সা’টা, কাফকার; অবাক হয়া
তাকায়া থাকে আমার দিকে। হাসি থামার পরে
আমি জুতা’টা নিয়া মাকড়সাটারে মাইরা ফেলি
‘শালার! কতো বড় সাহস, আমার হাসিটারে সে দেখে…’

নিজের ভিতরের হাসিটারে আমি জমায়া রাখি,
কোনদিন কোন দরকারে যাতে সময় মতো
আমি হাইসা উঠতে পারি; কিন্তু এখন চুপচাপ
আমার দিকে যেইসব মিমিক্রিগুলা আসতেছে
তাদের দিকে তাকায়া থাকি, অরা মনেহয় জানে
আমি যে হাসতে পারি, আর এই কারণে, অরা
আসে আমার দিকেই, আমার হাসিটারে দেখতে

অরা চইলা যাওয়ার পরে আমি আরেকটা
মাকড়সা’রে খুঁজতে থাকি, কিন্তু দুনিয়াতে
যত ভাঁড়ামি আছে, যত হাসি আছে, যত
মেটামরফসিসের ইন্টারপ্রিটেশন আছে, কাফকা’র
তত মাকড়সা তো নাই, বা ধীরে ধীরে কমে যাইতেছে

এখন হাসতে গেলেও ডর লাগে, যদি মাকড়সা
না পাই আর; তখন হাসা’র পরে কি করবো আমি?
কিন্তু মিমিক্রিগুলা তো আসতেই আছে, এতো
হাসি আমি কই পাবো? আর যদি আমি না হাসি
অরা আমারে মাইরা ফেলবে না তো? আমি ভাবি,

আর একটা মাকড়সার মতো মিমিক্রিগুলার দিকে তাকায়া থাকি

Leave a Reply