কবিতা: অগাস্ট, ২০১৭

কুয়ার ব্যাঙ

একটা কুয়ার ভিতর
বইসা ভাবি, আরেকটা
কুয়ার ভিতর
পানি
কতো কম!

মানে, আরো আরো কুয়া
আছে তো দুনিয়ায়

আরো আরো পুকুর আর নদী
আরো আরো ব্যাঙ

একটা ব্যাঙ হইয়া আমি
আরো আরো ব্যাঙের কথাই
ভাবলাম; ভাবলাম – সাপ আর
বেজির দুনিয়ায়
আমরা যে ব্যাঙ আর
আমাদের কুয়ার ভিতর
পানি যে কম

আমরা তো জানতাম-ই

আমরা জানতাম, আমাদের জানা-বোঝা
নিয়া যদি আমরা চুপ কইরা
থাকতাম, যদি ভাবতাম –
আমি ব্যাঙ বইলাই
তুমি তো হইতে পারো
ইন্দুর কোন, অথবা
ঈগল পাখির ঠ্যাং…

 

স্পেইস অ্যান্ড টাইম

বৃষ্টির পরে রাস্তায়, গুলশানের শ্যুটিং ক্লাবের গলিতে, গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের চিপায় থাকা ডাইলের মৌ মৌ গন্ধের বাতাস…
১৯৯৫-এর মনেহয়

 

ইয়েস্টারডে

কালকে তোমার কথা ভুইলা যাবো আমি
কালকে থিকা তোমার কথা আর ভাববো না

কালকে আমি জানবো আবার,
তুমি জাস্ট একটা ভাবনা-ই ছিলা আমার…

কালকে’টা আসতে আসতে
চইলা আসছিলো আজকে পর্যন্ত

তারপরে, থাইমা গেলো

 

রাতের রেলস্টেশন

তুমি নাই,
তোমার না-থাকার পাশে থাকতেছে রেললাইন
মসজিদে নামাজ শেষে মাথার নিচে ব্যাগ রাইখা শুইয়া থাকা কয়েকটা মানুষ;
প্লাটফর্মে বস্তা, কফি খাইতে থাকা টি-শার্ট, ইউনিভার্সিটি থিকা পাশ, প্রাইভেট চাকরি, লোনলি ব্যাকপ্যাক, বোরকা-পরা চোখ পিট পিট কইরা তাকায়া থাকা কিশোরী বউ, ইয়াং মৌলবী’র পাঞ্জাবি
হেডফোন কানে দিতে পাইরা হাসিখুশি মস্করা করতে থাকা দুইজন মাগি,
আরেকজন মিউট হেডফোন’রে কইলো,
‘তরে ত আমি লাগামুই না…’
আর সেই হেডফোন যেন শুনেই নাই কিছু,
ভ্যানগগের কাটা কান হাতে নিয়া দৌড়ানির সিন ভাবতেছে মনেহয়, বলতেছে:

তুমি নাই

 

ট্রুথ চাষের দুনিয়ায়

একটা বাক্স নিয়া আমি যাই
আরেকটা বাক্সের কাছে

আরেকটা বাক্স কয়,
আপনার বাক্স তো ছোট
তারপরও এম্পটি,
এম্পটি ভ্যাসেল সাউন্ডস টুউ মাচ

আমার বাক্সের ভিতর
কিলবিল করতে থাকে মৌমাছি
কি কি না-বলার মধু যে
আমি জমাইতেছি!

আমার বাক্সের মাপে
আরো অনেক অনেক বাক্স, রাস্তায়
ভিতরে তাদের আরো অনেক মধু,
সরিষা খেতের, লিচু বাগানের…
আন-এভেয়ডেবল ট্রুথের

একটা বাক্স নিয়া আমি
আরেকটা বাক্সের কাছে যাই
বাক্সটা গুদামঘরের মতোন ফাঁকা,
ইকো হয় খালি, যে ঢুকে তার কথার

আমি বাইরে থিকা দেখি,
দেখি, আরেকটা বাক্স
আমার ছোট বাক্সের মতোন
এম্পটি না তো!

অনেক অনেক ট্রুথ আর অনেক অনেক ইকো…

 

সিগনিফাইড

কয়েকটা সিগনিফায়ার
খুঁজে বেড়াইতেছে
সাইন;

রেড রেড
গ্রীণ গ্রীণ
পিঙ্ক, পেইল
ডিপ আর উঁচা আর
সারফেইসে ছড়ায়া ছড়ায়া যাওয়া
আরো যারা গ্রে, বাদামি, ঝাপসা
অব্যক্ত

তোমাদের কি মিনিং?

কয়েকটা সিগনিফায়ার
খুঁজে পাইলো
সাইন

আমারে দেখায়া দিলো
এইরকম, এইরকম আর এইরকম

আমি দেখলাম,
আর কেউ হাততালি দিয়া উঠলো

কইলো, আমি জানতাম!

 

কয়েকটা ভুল

খুবই উল্টা-পাল্টা, বুঝলা? খুবই…

শুভ্র হসপিটালে; এমনি’তে তো নরমাল
কিন্তু ভিতরে জানি কি হইছে,
তিনজন ডাক্তার মিইলা অরে আটকাইয়া ফেলছে;
এখন অর লগে দেখা করতে যাইতে যাইতে আমারেও ডাক্তারি শিইখা ফেলতে হইতেছে…

রাতের বেলা বগুড়া গিয়া আবার ফিরা আসতে হবে রাতেই,
বাসে তো আর যাওয়া যাবে না, কিন্তু প্রাইভেট কারে এই ডিসট্যান্স কি কাভার করা যাবে?
আর প্লাস্টিকের তলানি’তে পইড়া থাকা একটু গাঞ্জা’রে
বেকুব পুলিশ যদি হেরোইন ভাইবা ভুল কইরা ফেলে?
মানে, দুনিয়াতে আছে না কতো ধরণের বেকুব
বা যারা অল্প একটু বেনিফিটের লাইগাই পাগল হইয়া যাইতে চায়
আর পাগল হওয়া তো ফুল-টাইম জব
বারবার প্রুফ করা লাগে, সে যে পাগল…

রিকশাওলা’টা পাগল আছিলো না,
শুভ্র আর আমি যার রিকশায় কইরা যাইতেছিলাম, সন্ধ্যায়
উঁচা একটা ব্রীজ, নামার সময় রিকশাওলারে কইলাম,
‘ভাই, ব্রেক ধইরা নামেন’
পয়লা ব্রেক ধরে নাই সে, একদম টাইমমতো
লুঙ্গির গিঁট ঠিক কইরা ব্রেক’টা ধরতে পারলো সে, হাসলো
ব্রীজ থিকা নামার পরে ট্রাফিক জ্যাম নাই আর কোন
কি স্মুথ রাস্তা, কোথাও পৌঁছানোর আগেই মনেহয় পৌঁছায়া গেছি আমরা…

বাউন্ডারি’র পরে সবুজ ঘাসের কারণে
বাড়িটা চিনতে পারি নাই আমি
একটু খালি মতোন জায়গা পার হইয়া যেই বিল্ডিংয়ে যাই
গিয়া দেখি, কোন সরকারি কলোনি’র বিল্ডিং, ঢুকি না আর
ফিরার পথে দেখি বাচ্চারা খেলতেছে, বৃষ্টি হইছিলো একটু আগে
আমার মতোন ভুল কইরা আরেকটা লোক ওই বিল্ডিংয়েই ঢুকতেছে
অথবা হয়তো ঠিকই আছে সে…

আসল বিল্ডিংটা আছিলো দুইটা বিল্ডিং আগে
দেখি নিচে চেয়ারে বইসা ডেভলাপারের সাথে কথা চলতেছে,
একজন বুড়া মহিলা আর তার পোলার,
বইন আর ভাইগানারাও আছে লগে
৬০%-এ ম্যানেজ কইরা ফেলছে অরা,
খুবই খুশি, বইনটা কইলো, আমার ফ্ল্যাট লাগবো না, তোমরা যে আমারে দিতেছো,
এতেই আমি খুশি! বুড়া মহিলার চোখে তখন প্রাইড,
মেয়ে’রে যে শে দিতে পারছে; শে জানে
মেয়ে’র দরকার এই ফ্ল্যাট
ইয়াং নাতি’টা তাঁর গ্রাটিটুড জানায়,
সে তো পোলা, ফ্ল্যাটের ভাগ সে পাইতেই পারে, অর মায়ে না পাইলেও
আমি ভাবি, আমিও কি এদের কেউ?…

আমি উপরে উঠি, তিনতলা না চারতলা মনে নাই
উইঠা দেখি আর কোন সিঁড়ি নাই
এইটাও কি ভুল বিল্ডিং?
কিন্তু একবার দেখছিলাম তো জানালায়
উঁকি দিছিলো কেউ…

আমি কি এই বিল্ডিংটা থিকাও বাইর হয়া যাবো?
এই ড্রিম থিকা?
জাইগা উঠবো কোন বিছানায়, বালিশের উপরের মাথা
এখন সকাল, পর্দার ফাঁক দিয়া আসতেছে একটু একটু রোদ…

খুবই উল্টা-পাল্টা লাগতে থাকে সবকিছু, বুঝলা? খুবই উল্টা-পাল্টা…

 

মিথ্যার মতো শান্ত দিন

‘সৎ হওয়াও আরেকটা ধান্দাই,
তোমার মোরালিটির কলা
তুমিই খাও!’ বইলা তাঁর
কাহিনিটা শে শুরু করে
আবার।

আমি শুনি, কাহিনির ভিতরে
শে যে সাপ, শে যে লাঠি
শে যে ওঝা, শে যে বিষ…

আমি ভাবি, আমার পার্ট’টা
কখোন আসবে!

কাহিনি শেষ হওয়ার পরে
মনেহয়, আরো একটা
রাত আমাদের শেষ হইলো
এইভাবেই…

তর তর করা তোমার কাহিনি
আটকাইলো কোন চরে
আর তারপর চইলা যাইতে থাকলো
অন্য কোনদিকে, অন্য কোনদিনে…

দেখো, সকাল হইতেছে
কাহিনির লেজ লুকায়া আসতেছে
রইদের ভিতর ঘুমায়া পড়বে অরা

আমি ভাববো, আরো একটা রাত
শাহেরজাদী, শেষ হইলো
জাইগা থাকায়, তোমার কাহিনির
ঘুমের ভিতর চাপা পইড়া থাকবে
গুম, খুন, ডর আর মিডলইস্টের যুদ্ধের ছবির মতোন ছিঁড়া-ফাড়া দিন…

প্যাঁক-কাদা-বর্ষার রাস্তায়
নাইমা আসবে কোন না কোন রিকশা

ইল্যুশন থিকা কনশাসনেসে ফিরা আসবো আমি
বলবো, ‘শাহেরজাদী, বিদায়! দেখো, জাগছে দিন!’

 

 

১লা ভাদ্র, ১৪২৪

কল্পনা করতে করতে
আমার কোমর ভাইঙ্গা যাইতেছে
আর বাস্তবের ছবিটা, ‘বাস্তব বাস্তব’ বইলাই
চিল্লাইতে থাকলো, হাঁটুপানিতে
দাঁড়ায়া, বন্যার

 

আমি

তোমার ‘আমি’ নাই।
আমার ‘তুমি’ থাইকা গেছো।

‘আমি’টারে যে তুমি বাইর কইরা দিলা
অরে নিয়া কই যাই আমি, ভাবি

রাস্তার সাইডে দাঁড়া করাইয়া রাখি,
কই, ‘তুমি চা খাও, আমি আসতেছি!’

বুঝে সে চইলা যাইতে চাইতেছি আমি
‘তুমি’রে নিয়া;
বড় বড় চোখে নিয়া তাকায়া থাকে সে

অরে কিছু কই না আর
সেও ঘুরতে থাকে আমার
পিছন পিছন, সাইডে, একটু দূরে

বেওয়ারিশ কুত্তার মতোন,
একটা মইরা যাইতে থাকা গাছের
ছায়ার মতোন,
সিটি করপোশনের উচ্ছেদ অভিযানে বেদিশা
হয়া যাওয়া ফুটপাতে চায়ের দোকানের মতোন

কতকিছুই তো থাকে অনেক সময়,
কিন্তু থাকতে পারে না আর

‘আমি’টা যে নাই,
আমি’টা বুঝতেই চায় না

তোমার ট্রাপে পইড়া এখন
আমার কাছেই ফিরা আসতে চায়

পারে

না।

 

Now and Forever

I will love you forever, she said.
Love me now, he cried.

She smiled and drifted away in a rainy evening.

 

নেরুদা

আই ওয়ান্ট টু ডু উইথ ইউ হোয়াট ভাদ্রমাস ডাজ উইথ দ্য তাল গাছ

 

মিনিংলেস

প্রতিটা সাইন
মিনিংফুল হয়া উঠতেছে
আর অ্যাবসার্ডিটির ভিতর
আমি লুকায়া ফেলতেছি
নিজেরে

নরমাল দিনের ভিতর নরমাল রইদ
নরমাল অফিসের দিনে নরমাল ট্রাফিক জ্যাম
নরমাল একজন মানুষ, মাথায় টাক
নরমাল একটা টবে নরমাল একটা গাছ, পাতাবাহার…

নরমাল একটা ছবিতে নরমাল কিছু লাইক
নরমাল একটা কমেন্ট…

নরমাল ট্যাপের পানিতে নরমাল গোসল

নরমাল রাস্তা পার হইলো কেউ,
নরমাল বাসের জানালা, নরমাল হেডফোন…

প্রতিটা সাইন
নিজেদেরকে লুকায়া ফেলতেছো, দেখো
মিনিংয়ের ভিতর!

তারপর
হাসতেছে, শরতের রইদের মতোন

 

ক্যামেরা লুসিডা

অবজেক্ট’টা স্মাইল করতেছে, আমার দিকে তাকায়া।
কইতেছে, আপনিও একটু স্মাইল করেন না!

আমি তাকায়া আছি অবজেক্ট’টার দিকে
আমি যে অবজেক্ট’টারে দেখতেছি
সে-ই আমি হয়া উঠতে চাইতেছে

যখন আমি আর দেখতেছি না
অন্য কেউ তো দেখতেছে তারে

আর সে তখন অন্য একটা ‘আমি’র মতো
সাবজেক্ট হয়া উঠতে চাইতেছে, বলতেছে:
‘এইরকম ন্যাচারাল হয়াই থাকতে পারো তো!’

 

শিউলিগাছটা হাসে

আমি জানি,
ইনফিরিয়দের জেলাসি আমারে বাঁচায়া রাখবে না
কাবিলদের হেইট্রেট
সুপিরিয়রদের ইগনোর করাও…

যারা যারা বাঁইচা আছে, নিজেদের লগে নিয়া
মরতে পারবে সবাই

যেহেতু মারা যাবে অরা,
আমারে বলতেছে আইসা কানে কানে
‘তুমি অমর কবিতা লিখো!’

একটা শিউলিফুলের গাছ
তার শাদা শাদা ফুল নিয়া হাসতেছে তখন

আমিও হাসি তার দিকে তাকায়া
‘আমাদের এই হাসিটা কি অমর?’

শিউলিগাছটা হাসে, কথা বলি না আমরা আর।

 

ঠিকাছে!

আবার একটু মদ খাওয়ার পরে
আবার একটু মাতাল হওয়ার পরে

আবার একটু মদ হওয়ার পরে
আবার একটু মাতাল খাওয়ার পরে

দেখলাম, দুনিয়াটা যে উল্টায়া যাইতে নিছিলো
সোজা হইতেছে আবার, ধীরে ধীরে…

 

জী. দাশ

আমার সকল ‘স্ট্যাটাস’ তবু তোমার ‘লাইক’রে লক্ষ্য করে

 

‘তার মানে’

‘তার মানে…’
শে; অন্য কেউ
থাকলে থাকুক, না
থাকলে নাই,
থাকতেছে তো শে-ই,
যখন বলতেছে শে,
‘তার মানে…’

 

আমার গরু

আমার যে গরু,
সে তো আমার গরু
না।

আমার গরু বাজারে
বাজারে ঘুরে

আমি কিনবো
আমার গরু’রে

তারপরে বলবো,
এইটা আমার গরু।

আমার গরু যে
আমার গরু না

আমার গরু তো সেইটা
জানে না।

 

অল রোডস লিড টু রোম

রাস্তায় রাস্তায় হাঁটি
রাস্তাগুলি আইসা হাঁটতে শুরু করে
আমার সাথে

রাস্তায় দেখা হয় ধূলাবালির সাথে

উল্টাপাল্টা বাতাসে
গাছের ডালগুলি নড়তে থাকে জোরে,
‘না, না’ করে…

রাস্তায় রাস্তায় হাঁটি
রাস্তার ধূলাবালিদের সাথে

 

ঠান্ডা

দুনিয়াতে বাঁইচা থাকবে
আরো অনেক সন্ধ্যা
আরো অনেক রাতের ভিতর
গুটিশুটি অন্ধকার, বৃষ্টির শাদা

আরো যারা বাঁইচা থাকবে
বলবে আমারে আইসা
‘ভালো করছেন ভাই
মইরা গিয়া! আপনারে তো
দেখা লাগে না আর
রোহিঙ্গাদের চেহারা’

আমি ভাবি, মইরা যাওয়া
ব্যাপারটা এতোটা খারাপ তো
না। হয়তো একটু বেশি ঠান্ডা,
এইটুকই তো, এর বেশি কিছু তো না…

 

Tomake Ovibahon Priotoma…

You can’t complaint about a wild pig why it is not a mud.

 

চড়ুই

ডেফিনেশনের একটা সার্কেল আঁকার পরে
তার ভিতরে গিয়া বসলো চড়ুইটা
কইলো, আমি চড়ুই।

 

‘তোমার কথার ময়ূর সিংহাসন আসে…’

আমাদের মিথ্যাগুলিরে আমরা রাইখা দিলাম, আমাদের কাছেই।
না-বলায় বাঁইচা থাকলো যেন অরা-ই।
আমরা, সত্যি সত্যি যারা ছিলাম, বলতেছিলাম
বলার কারণেই থাকতে পারতেছিলাম না আর।

মিথ্যাগুলি আমরা আর বলতেছিলাম না
মিথ্যাগুলিরে আমরা বাঁচায়া রাখছিলাম

অ্যাজ ইফ, মিথ্যাগুলি আমাদেরকে বাঁচায়া রাখতেছে,
বাঁচায়া রাখবে আরো অনেকদিন

 

Leave a Reply