পুরান কবিতার মতো
লোভ লাগে,
ইচ্ছা করে পুরান কবিতার মতো
আরেকটা কবিতা লেখি;
পুরান কবিতাগুলা হাসে,
আমার গালে হাত বুলায়া দেয়,
যেন একটা মা তাঁর বাচ্চা ছেলেরে
আদর করে দিতেছে;
পুরান কবিতাগুলার কথা মনে কইরা
আমি নতুন একটা কবিতা লেখি
কেরু খাই, কবিতা লেখি
কেরু খাই, কবিতা লিখি
আর্ট-কালচার করা লোকেরা
কয়, এইসব কি!
অশ্লীল কথা-বার্তাই
আজকাল
কবিতা নাকি!
অথচ
কাওরান বাজারের লেবার’রা
বাংলা-মদের বারে
আমারে
ঠেস মাইরা কয়,
“ভাই, ভালোই তো ভাব
চুদাইলেন!”
নভেল
লেখক বলিলেন, “আমি আমার মনের মাধুরী দিয়া
চরিত্রটিকে রূপ দান করিয়াছি।”
কারেক্টার’টা কইলো, “ভাই, আমি তো একটু আমার মতোও হইতে পারতাম!”
হোয়াট ইজ অ্যা গরু?
সংজ্ঞার জামাটা পরানো হইলো গরুটারে,
কিন্তু লেজটা তার বাইর হয়া-ই থাকলো
ডেফিনেশনের এই পেরেশানি দেইখা
পরে গরুটাই কইলো, বাদ দেন!
অই জিনিস এতোটা গরু তো না!
ফুলের আঘাত সয় না
আমার মনে ধনুষ্টংকার,
আমার মনের শরীর বাঁকা হয়ে গেছে;
আমার ‘ফুলের আঘাত সয় না’ মনে
সার্কাস
যাদুকর হাততালি দিলো, ম্যানিকুইনটার শরীর থিকা ওড়নাটা পইড়া গেলো।
যাদুকর হাততালি দিলো, ম্যানিকুইনটা একটা মানুশ হয়া হাঁটতে শুরু করলো।
ওড়নাটা তুইলা নিয়া একটা হাসি দিয়া আবার তাঁর জায়গায় গিয়া দাঁড়াইলো।
যাদুকর হাততালি দিলো, ম্যানিকুইনটা ভ্যানিশ হয়া গেলো।
যাদুকর হাততালি দিলো, ম্যানিকুইনটা তার পিছনে আইসা দাঁড়াইলো।
যাদুকরের মাথায় আইসা একটা টোকা মারলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে সবাই হাইসা দিলো।
ম্যানিকুইনটা এইবার হাততালি দিলো, যাদুকরটার প্যান্ট খুইলা পইড়া গেলো।
যাদুকরটা তাড়াতাড়ি প্যান্ট পরতে পরতে বোকা বোকা হাসি হাসলো।
কিন্তু ততক্ষণে সে যাদুকর থিকা জোকার হয়া গেলো। একটা লাল টমেটোর নাক গজাইলো।
ম্যানিকুইনটা আবার হাততালি দিলো, যাদুকরটা স্ট্যাচু হয়া গেলো।
সবাই হাসতে লাগলো। ম্যানিকুইনটা যাদুকরের পাছায় একটা লাত্থি দিলো।
যাদুকরটা মানুশ হয়া উঠলো আবার। কি হইলো? এইদিক-অইদিক তাকাইতেছিল।
ম্যানিকুইনটা তখন ঘুইরা ঘুইরা নাচতেছিল।
যাদুকরটাও তখন জায়গায় দাঁড়ায়া ঘুরতেছিল।
যাদুকরটা হাততালি দিলো।
ম্যানিকুইনটা হাততালি দিলো।
তারপর দুইজনে একলগে হাওয়া হয়া গেল।
দর্শকরাও খুশি হইলো; কিন্তু কেউ কেউ কইলো, চুতমারানিরা!
উপমার উটপাখি
উপমার ভিতরে উবু হয়া আছে
একটা উটপাখি
বলতেছে, আমাদের তো চোখ বাঁধা নাই,
আমরা দেখতে পারি!
আমরা কথা বলতে পারি!
বলতে বলতে উটপাখি’টা
নিজেই একটা উপমা হয়া উঠতেছে,
বালু জমা করতেছে তার চারপাশে
বালুর ডিবি’র কাছে মুখ ডুবায়া বলতেছে,
আমিই উটপাখি!
রাত ৩:৩০’শের কবিতা
এই সময়টাতে আইসা অনেকসময় সময়’টা থাইমা যায়,
এক মিনিট পার হইতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে,
আর সামনের রাস্তাটাও আটকায়া যাইতে থাকে
অনেকগুলা কানাগলির ভিতরে, আর প্রতিটা গলিতে
অনেকগুলা কুত্তা দিতে থাকে পাহারা
৩:৩০ থিকা ৩:৩৫ হইতে অনেক ঘন্টা সময় লাগে,
তারপরে হঠাৎ কইরা ভোরের আজান শুরু হয়
“আসসালাতু খায়রুম মিনান নাউম…”
সময়’টা আবার সময়ের কাছে ফিরা যায়, সেকেন্ড আর মিনিটের ভিতর
আশুরা, ১৪৪৩
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
বাংলাদেশ আজকে হাজির, কারবালার ময়দানে!
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
গুম-হওয়া মানুশগুলা হাজির হবে তো হাশরের দিনে!
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
বাংলাদেশ জাইগা উঠবে প্রতিটা স্বৈরাচারের পতনের পরে!
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
এই ফেরাউন ডুইবা যাবে একদিন পদ্মা, মেঘনা আর যমুনার পানিতে!
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
ইবরাহিম পুইড়া মরবেন না আর নমরূদের আগুনে!
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
ইসা নবীরে উঠায়া নিবেন আল্লাহ তার আরশে!
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
বাংলাদেশ জাইগা উঠবে ঠিকই, প্রতিটা স্বৈরাচারের পতনের পরে!
চশমা
স্বপ্নে আমার চশমা’টা ভাইঙ্গা গেলো।
অইটা তো স্বপ্ন! – এই ভাইবা আমি জাইগা উঠলাম।
তারপরে চশমা’টা পইরা এই কবিতাটা লেখলাম!
তসলিমা নাসরিন
তার চে’ জাস্ট-ফ্রেন্ড পোষা ভালো
কার্ফুমাছের জন্য লেখা কবিতা
একটা কার্ফুমাছ আসে আমার কাছে কয়দিন পরে পরে,
আমারে বলে, এইভাবে তো কবিতা লেখা যায় না!
কবিতা লেখবা জীবনের ফাইনার ফিলিংগুলা দিয়া,
শুদ্ধ, পবিত্র, মন-খারাপ-করা এবং ভালো ভালো শব্দ দিয়া,
পাদ ও ঘামের গন্ধ থাকবে না সেইখানে, জীবনের বাটপারিগুলাও বাদ দিবা;
আর মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি মাঝে-মধ্যে মুখ দিয়া শ্বাস নিবা,
তাইলে দুনিয়াটা কিছুটা টের পাবা, বুঝছো?…
এইরকম মুখস্ত কথাগুলা শুনতে শুনতে আমার ঘুম আসে,
আমি আমার মতো হুঁ-হ্যাঁ করতে করতে আমার দমের ভিতরে
ঢুকে যাই, একটা দম থিকা আরেকটা দমে যাইতে গেলে
কয়টা দুনিয়া যে পার হয়া যাইতে হয়,
কতো মরভূমি, কতো পাহাড়, কতো যে সাগর
কার্ফুমাছ তো সেইটা জানে না!
মাছের বাজারে কেজি দরে বেচা হইতেছে শে
বাটখারাটারে দেইখা বলে, এইরকম সুন্দর
কেন তুমি হইতে পারো না!
আগলি পোয়েট আমার, কেনো তুমি সুন্দর কবিতা লেখো না!
বিনয় মজুমদার
উইড়া যাইতে যাইতে
একটা সারস-পাখি কইলো,
‘প্রকৃত মানুশ’ আমি ভয় পাই
দোয়া
বাতাসে ভাসতে থাকা বীজটারে মাটি দাও।
মাটিতে পইড়া থাকা বীজটারে ফুইটা উঠতে দাও।
চারাগাছটারে একটু পানি দাও। একটু বাতাস দাও। আর একটু রইদ দাও।
চারাগাছটারে বড় হইতে দাও। ঝড়ের হাত থিকা বাঁচাও।
গাছটারে ডাল ছড়াইতে দাও। পাতা গজাইতে দাও। ফুল আর ফল দিতে দাও।
আরো আরো বীজ ছড়াইতে দাও।
গাছটারে অনেকদিন একটা গাছ হয়া থাকতে দাও।
ছায়া দিতে দাও। মায়া দিতে দাও।
আর যখন মরার সময় আসে, গাছটারে মরতে দাও।
Leave a Reply