কবিতা: জানুয়ারি – ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মন-খারাপ

মন-খারাপ’টারে পকেটে নিয়া ঘুরতে বাইর হইলাম;

বাইর হয়া দেখি, আরে, পকেট’টাই তো নাই!

মন-খারাপের মতন আরো কতোকিছুই যে আসলে নাই, এই দুনিয়ায়

 

আমরা হাঁটতেছি

শোনো মদ, মাতাল হইতে যাও!
আমরা হাঁটতেছি, তাউরাইতেছি একটু একটু

দুপুরবেলার রইদ শরমাইতেছে,
লেকের পাড়ে গাছগুলা
দুলতেছে একটু একটু

‘হেই, হেই!’ মাছেরা ডাকতেছে
‘আমাদের কাছেও একটু বসো!’

শীতের বাতাসের মতন আমরা আসছিলাম,
আর চলে যাইতেছি তো…

 

তোমার কথাগুলা আমি অনুবাদ করে দিতে চাই ২

যেই ভাষা মরে গেছে,
সেইখানে তুমি কই?
আমিও আছি নাকি? পারবো থাকতে, কোনদিন?

তুমি,
একটা ভাষা থিকা আরেকটা’তে যাও
একটা বাসা থিকা আরেকটা বাসায়
একটা পাড়া থিকা আরেকটা পাড়ায়
একটা শহর থিকা আরেকটা শহরে…

তোমার ডানার নিচে বাতাস হইতে চায়া আমি
একটা টাইম থিকা খালি যাইতে থাকি আরেকটা টাইমের দিকে

ফারাক অইটুক থাকেই আসলে, সবসময়…

তুমি বললা তখন, “ও, বুঝছি
ট্রান্সলেশন!”

প্রুফ রিডিং

আমি তোমার ছোট্ট একটা বানান-ভুল
তুমি বারবার দেখতেছো, অথচ
চোখে পড়তেছে না,
মনে মনে খচখচ করতেছে –
কি জানি ভুল, কি জানি ভুল…

আমি তোমার কথা-বলার ভিতর
একটা উচ্চারণের ভুল
তুমি ভাবতেছো, ঠিকই তো আছে! অথচ
আমি বইসা আছি তোমার ঠোঁটের আগায়,
আল-জিবের ভিতরে,আত্মার ভিতরে একটা দম

আমি তোমার সমস্ত জীবন, ছোট্ট একটা ভুল
তোমার সাথে সাথে আছি, থাকতেছি…

যেই দিন তুমি থাকবা না, হারায়া যাবো তো
আমিও, তোমার না-থাকার ভিতর

 বৃক্ষরোপন

“ভালোবাসা একটা অভ্যাস, ঘৃণার মতোই”

তিল’রে তাল করতে করতে
এখন তালগাছটাই তোমার!

 

এইম ইন লাইফ

আমি সেই ফেইক আর্টিস্ট হইতে চাই, তোমার কাছে যারে রিয়েল মনেহয়

 

আমি পাখি বইসা আছি, শিয়রে তোমার

আমি পাখি, তোমার বুকের ওমে
লেপ্টায়া আছি

তুমি শ্বাস নাও, নাক ডাকো
তোমার বুকে নিয়া রাখো আমার হাত

আমি পাখি, তোমার বুকের ভিতর
জাইগা আছি, দেখি তুমি দুঃস্বপ্নে, ডরের ভিতর
কুঁকড়ায়া আছো
কানতেছো…

আমি একটা চড়ুই পাখির মতন

তোমার বারান্দায় গ্রিলের উপর আইসা বসছি

তোমার ঘুম ভাঙতেছে না,
তোমার ডর যাইতেছে না
সূর্যমুখী ফুলের খেতে সূর্য ডুইবা যাওয়ার মতন পেরেশান হয়া আছো তুমি,
থাকতেছো

আমি পাখি, বইসা আছি
শিয়রে তোমার

আর তুমি বলতেছো, গ্রাম্য!
কি লোকাল!

 

কলব

একটা ভুলের ভিতর থিকা এখন
শুরু হয়া যাবে অনেকগুলা ভুল

ভুলটুল টুলবুল টলমল ঢিসুম ঢিসুম
হেই হই টই টই এই সেই ধানচালখই…

একটা আয়নার ভিতর তাকায়া দেখবো
আরেকটা আয়নার ভিতর
তোমার ছবি
করুণ, ধুসর
সুন্দর।

 

স্টিমুলেশন

একটা বাচ্চা ঘোড়ার মতন
একটা জায়গাতে দাঁড়ায়া ঠ্যাং নাড়ায়া যাইতেছি আমি
ভাবতেছি, কতো দূরে না জানি
চইলা গেছি!

অই যে পাহাড়
অই যে ঝলমল ঘাসের দুনিয়া

আমি ঠ্যাং নাড়াইতেছি আর
চলে যাইতেছি যেন

পাহাড়গুলা কি ওয়াটার কালারে আঁকা?

ভাবতেছে, আমার মনের ছোট্ট ঘোড়া…

দুপুর

সময়, একটা চুপচাপ দুপুর

ঘুম ভাঙার পরে শোনা যাইতেছে
একটা রিকশার আওয়াজ,

টিক টিক টিক টিক টিক টক…
দেয়াল ঘড়িটা বাজতেই আছে

আমি জানতে চাই না সময়

একটা চুপচাপ দুপুরের ভিতর

একটু একটু কইরা আবার ঘু মা য়া প ড় তে ছে স ম য়

 

সন্ধ্যাবেলার গান

কই যে চলে আসছি আমি…

একটা অন্ধকার রেলব্রীজের নিচে
সন্ধ্যাবেলায়
কুপি’র আলোতে দেখতেছি

ছোট ছোট মাছ আর
সব্জিগুলা
সরে সরে যাইতেছে

ছোপ ছোপ অন্ধকারগুলা
বইসা আছে
আলোর দেয়ালের পাশে

একটা ট্রেন হুইসেল বাজাইতে বাজাইতে
আসতেছে

আর তার আগেই
থরথরায়া কাঁপতেছে লোহার ব্রীজটা…

নিচে, চিক চিক করতেছে
খালের অল্প পানি

কোথায় চইলা আসছি আমি?

এক দল ঝিঁঝিঁ পোকাদেরকে জিগাইতেছে
ফণীমনসার কাঁটা

তার অন্ধকারের ভিতর ডুবে যাইতে যাইতে…

 

জুতা কাহিনি

আমার অনেকগুলা জুতা হারায়া গেছে;
তোমার বাসায় খুঁজতে গিয়া দেখি আরো
অনেকগুলা জুতা পইড়া আছে, আর তার
মধ্যে আমার জুতাও আছে, কিন্তু দেখি সব
একটা কইরা; আর যেই জুতাটা খুঁজতেছি, সেইটাও নাই।
আমি খালি পায়ে হাঁটতে বাইর হইলাম।
তোমার বাসাতে তো তুমি নাই। আমার জুতাও
নাই। হাঁটতে হাঁটতে আমি চলে আসছি একটা খোলা
জায়গায়, অনেকেই হাঁটতেছে, জুতা পায়ে। তাদের
পায়ের দিকে আমি তাকায়া থাকি। জুতা আছে তো
সবার পায়েই, আর জুতা থাকা বা না-থাকাটা কোন
ঘটনা না তেমন; জুতা না থাকলেও তো আমি একই
মানুশ! তখন আমি আমার ভয়’টা থিকা বাইর হয়া
আসি, আর পিছনে তাকায়া দেখি তুমি ডাকতেছো,
“আরে, অই তো তোমার জুতা, অইখানে!” আমারে
দেখাও তুমি, একটু দূরে। আমি আমার জুতা দেখি
না তখন, দেখি না তোমারেও। ঝাপসা হইতে হইতে
তুমি একটা একটা চইলা যাওয়া শীতের কুয়াশার
মতন, বাতাসে মিলায়া যাওয়া সিগ্রেটের ধোঁয়ার
মতন, একটা জুতার স্বপ্নের ভিতর, হয়তো ছিলা,
হয়তো ছিলা না, কিন্তু নাই আর এখন; এখন সামারের
রইদ, এখন সুন্দর দিন-রিয়ালিটির, কোন ইল্যুশন নাই
আর একটা না-থাকা জুতার

Leave a Reply