কবিতা: ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

 মিনিং

মিনিংগুলি ছড়ায়া যাইতেছে,
রাতের আন্ধারের মতোন
এতো এতো ল্যাম্পপোস্ট, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, গাড়ির হেডলাইট
ফোকাস দিতে দিতে
যাইতেছে, আসতেছে… কিন্তু
মিনিংয়ের যে আন্ধার, তারা
থাইকাই যাইতেছে
একটা হরাইজনে একটা রিয়ালিটি’র মতো

একটা মিনিংয়ের আন্ধার আসলো
আর নিয়া গেলো, তোমারেও।

 

গতকালকে রাত্রে

গতকালকে রাত্রে আমি একটা স্বপ্ন দেখছি। আর স্বপ্নটা আমারে দেখতেছে। কি রকম ফ্রেজাইল! গইলা গইলা পড়তেছি আমি। মাটির কলসি ফুটা হয়া পড়তে থাকা গুড়ের সিরা’র মতোন। ঘন, কালো, লিকুইড। আমি একটু একটু কইরা গড়ায়া গড়ায়া পড়ে যাইতেছি, স্বপ্নটার ভিতর। স্বপ্নটা আমারে দেখতেছে। আর আফসোস কইরা কইতেছে, কি রকম ফ্রেজাইল এই মানুষের জীবন।

 

প্রাণি জগৎ

একটা লোনলিনেসের ভিতরে একশ’টা ইন্দুর দৌড়াইতেছে
কুট কুট করতেছে আর কইতেছে,
“বিলাই’টা যে কই গেছে!”

 

প্রাণি জগৎ

শীত শেষে গলতে থাকা বরফের পানির সাইডে দাঁড়ায়া,
একটা ভাল্লুক কইতেছিলো নিজেরেই,
“মানুষ একটা লোনলি অ্যানিমেল, বুঝলা!”

 

প্রাণি জগৎ

মরা’র আগে জাতীয়তাবাদী ডাইনোসারগুলি বলতেছিলো,
“পোস্ট-কলোনিয়াল বান্দরগুলাও একদিন মরবো,
দেইখো!”

 

ভুল

‘ভুল’ করা ব্যাপারটা ঠিকাছে। ভুল তো করা যাবে! করেও মাইনষে। কিন্তু যারা সব ‘ঠিক’ জাইনা বইসা রইছে, ইচ্ছা কইরাই বানাম ভুল করতেছে আর হাসতেছে – ভুল বইলা, ভুলের দিকে তাকায়া বলতেছে, “দেখো, কি ভুল অরা! হ্রস্ব ঈ-কার আর দীর্ঘ ঈ-কারের ডিফরেন্সও জানে না। :p ” (শেষে আবার জিভ বাইর করা একটা ইমোও দিতেছে!) অদের ভুলের ভিতর ভুলগুলি আমার মুখ নিচা কইরা বইসা রইছে। আমি অদেরকে বলতে চাইতেছি; দেখো, ভুল তো ভুলই, তোমরা এতো বেশি মন-খারাপ কইরো না! কিন্তু ভুলগুলি মানতেই পারতেছে না! ঠিক যেমন ঠিক, ভুল তো এইরকমই, ভুল। আমরা যারা ভুল – আমরা এইটা জানি। কিন্তু যারা ‘ঠিক’ – অরা কি এইরকম ‘ভুল’ করতে পারে, কোনদিনও? অনেকগুলি কোকিলের ডাক শুইনা, অনেকগুলি আমের মুকুল দেইখা, অনেক অনেক দুপুরবেলা পার হওয়ার পরেও?

 

জবাগাছ

জবাগাছ’টার কাছে গিয়া বসি।
নিয়তির মতোন একটা কালো হাসি, আসে
একটু দূর থিকা হাঁটতে হাঁটতে,
আমাদের ছায়াগুলিও নিয়া নেয় সে,
তার দখলে।

একটা সন্ধ্যার ভিতর
আমি আর জবাগাছ’টা বইসা থাকি।

 

 

আমার জানালার পাশে

আমার জানালা পাশে রইদ
গইলা গইলা পড়তেছে,
একটা বাতাস টের পাওয়া যায়

২.
তুমি ফিরা আসো

৩.
যেন আমি ভুলে না যাই!

৪.
‘কোথায় লুকাই আপনারে’
দৃশ্য থিকা দৃশ্য
মুইছা যাওয়ার পরে

৫.
দেখেন, একটা ‘গ্রাম্যতা’ লাগে আমাদের, যেহেতু আরবান সেন্সগুলি তৈরি হইতেছে। আপনার যে ‘বিরোধিতা’ বা ‘শত্রুতা’ সেইটাই আপনারে বানাইতেছে, নিয়া আসতেছে একটা জায়গাটাতে, শত্রু’র সাথে, বিরোধগুলির জায়গাটাতে, যেইখান থিকা কথা বলা যাইতেছে। সেইখানে এই যে ‘গ্রাম’ বা ‘কান্ট্রি’-এলাকা, তারা শহরের ইমাজিনেশনরেই ফুলফিল করে। এখন যখন আপনি কইতে যাবেন, ‘শহর’-এর কথা, একটা না একটা ‘গ্রাম’ লাগবে। এইভাবে ফুলফিল হইতে পারা’টা কি কি পারপাস সার্ভ করতেছে আর করতে পারে, একটু হইলেও টের পাওয়া যায় তো! তাই না!

একটা তর্ক থিকা দূরে, আরো রাস্তা বাইর হয়া চইলা যাইতেছে। সন্ধ্যাবেলা বইলা ইগনোর করতে করতে পাখিগুলি গাছেদের কাছে ফিরা যাইতেছে। গরুগুলি ফার্মের বাউন্ডারি’র ভিতরে।

৬.
কাহিনিগুলি রিনিউড হবে। তখন আমি কোন মনে-থাকা’রে খুঁইজা নিতে বাইর হবো।

৭.
এতো আলাদা না জিনিসগুলি। আমি বলতে চাইলাম। একই একই বাতাস অনেক অনেক দিক থিকা আসতে থাকলো।

৮.
অস্পষ্টতা, তুমি ভালো আছো তো?

৯.
হাসি কিছু, আসতে গিয়া থামলো। পথ হারাইলো। নিরবতার ভিতর কতোকিছুই যে ঘটে। – আমারেই কেউ বলতে চাইলো।

 

 

ছোট্ট চড়ুই পাখি একটা

পিছনের ঘরের বারান্দা দিয়া ঢুকলো সে। তারপরে মাঝখানের ঘর দিয়া হাঁটতে হাঁটতে রান্ধাঘরের কাছে আসলো। সামনে যাবে নাকি সাইডে বুঝতেছিলো না। আর তখনই সে দেখলো আমারে। সামনের ঘরটাতে, বিছনায় শুইয়া আমি তার দিকে তাকায়া আছি। আমি, মানুষটারে দেইখা তার মানুষ-ভাব মাটিতে রাইখা উইড়া গেলো সে। ছোট্ট চড়ুই পাখি একটা। সকাল সাড়ে এগারোটায়। কোন আওয়াজ ছিলো না চারপাশে তখন। তার উইড়া যাওয়ার শব্দটা ছাড়া।

 

আমাদের পার হয়া চইলা যাইতেছে সময় 

সময়ের ট্রেন’টা আমাদের পার হয়া চইলা গেলো আরেকটু সামনে. . .

তখন আমরা বইসা ছিলাম, ফুটপাতে
তিন রাস্তার মাথায়
রাত এগারোটার সময়,
বলতেছিলাম, কে কি ভাবতেছে আর কে কি ভাবতে পারে

আর সাইড দিয়া, সামনে দিয়া
রিকশা, সিএনজি আর প্রাইভেট কারে কইরা
হুটহাট চইলা যাইতেছিলো সময়

আমরা পিছনে চইলা যাইতেছিলাম আরো

সময়ের ভিতরে আমরা নাই
আমাদের পার হয়া আরো অনেক দূরে চইলা যাইতেছিলো সময়

হঠাৎ একটা হাস্নাহেনা’র গন্ধে আমরা টের পাইলাম

 

দুপুরবেলা, রাস্তায়

কিছুটা বিরহ পইড়া থাকে তো
রাম্তার ধূলায়, কিছু দেখা আর না-দেখা
থাকলো; তারপরে অনেকক্ষণ
মনে থাকে না আর কিছুই

আমাদের আর কোন আমরা নাই;
পথে পথে থাকে তো কিছু না কিছু
আমি ভাবলাম, বিরহ; আর একটা
সিএনজি অটোরিকশা কিছু না ভাইবা (হয়তো)

মোড় ঘুইরা হারায়া গেলো, অন্য রাস্তায়

 

একটা পাত্থর

একটা পাত্থর সরানোর ট্রাই করতেছি অনেকক্ষণ ধইরা।

পাত্থরটা সরতেছেই না।

অনেকক্ষণ পরে বুঝলাম, পাত্থরটা আসলে নাই।

পাত্থরটা আমি বানাইছি আমার লাইগা।

পাত্থরটা এই কারণে সরতেছেই না।

আমি ভাবতেছি, এইটা তো নাই!

না-থাকা পাত্থরটারে তারপরও আমি সরাইতেই পারতেছি না।

Leave a Reply