কবিতা: ফেব্রুয়ারি ২০২২

জ্বর

সারা শরীরে আগুন নিয়া মরুভূমিতে দৌড়াইতেছি আমি
আম্মা গো, আপনার হাত, কুয়ার পানি আমার
আর কতো দূর!

 

বিচার

বিচারে আমার মৃত্যুদন্ড হইলো। আমারে নিয়া যাওয়া হইলো সকালবেলায় কুয়াশা-ঘেরা কোন একটা শীতের দেশের কান্ট্রি ফার্মে। অইখানে মোটা একটা গাছের গুড়ি রাখা, সাইডে কুড়াল নিয়া দাঁড়ায়া আছে একজন। চেহারা দেখা যায় না স্পষ্ট। আর সামনে একটা কাঠের গরু বানানো। গরু’টা কইলো, তুমি যে আমার মাংস খাইছো, ব্যাপারটা আমার পছন্দ হয় নাই।


জীবন আর মরণ

জীবন – তোমার দিকে তাকায়া থাকি আমি অনেক অবিশ্বাস নিয়া।
মরণ – তোমার দিকে তাকায়া আছি আমি একটা স্থির বিশ্বাস নিয়া।

বাঘ ও বিলাই

একটা বিলাই তো নিজেরে বাঘ মনে করতেই পারে। আয়নাতে নিজের মুখ দেইখা। দুইটা ভেংচি কাইটা। বা কয়েকটা মুর্গিরে বাড়ির উঠান থিকা খেদায়া দিয়া। নিজেরে নিজে ভাবতেই পারে, আমি তো একটা বাঘ!

কিন্তু একটা বাঘ যদি নিজেরে একবার বিলাই মনে করে, সেই জায়গা থিকা তারে বাইর করা মুশকিল। বাঘ যদি নিজে নিজেরে বাঘ না মনে করতে পারে, তারে অন্য কেউ সেইটা বিশ্বাস করাইতে পারবে – এই চান্স আসলে কম।

বাংলাদেশের মানুশ-জন বা পিপল-পাওয়ার জিনিসটা হইতেছে অই বাঘ’টা, যে নিজেরে বিলাই মনে করে।

ড্রিম

নিড়াইয়া ফেলা ধানের খেতে
ভোরের কুয়াশার মতন

শীত হইয়া
ঘুমায়া ছিল শে
শরীরে আমার

শীতের রাতে

খেত থিকা আলু তুইলা আইনা
মাটির চুলায় পুড়াইতেছি

পোড়া আলু খাইতেছি আমরা শীতের রাতে
একটু লবণ দিয়া

আর মাটির চুলায় আগুন পোহাইতেছি

গন্ধম ফল

জীবনে, যারা
দুইদিনের প্রেমে
পড়তে পারে নাই, তারা
সারা জীবন
হেইট করার কসম
খায়া বইসা আছে

আমি জানি না
কোনটা বেশি কঠিন
অদের জন্য

মনে-রাখা
নাকি ভুইলা-যাওয়া?

একটা দুইমুখা
ছুরি হাতে নিয়া
তারা বইসা আছে

হাতটা কাটতে
চাইতেছে না বইলা
আপেলটাও
কাটতে পারতেছে না

কালনীর ঢেউ

কত যে বাতাস ঘুরে বেড়াইতেছে
কত যে দেশে, কতো যে শহরে,
কদম্বেরও ডালে

“আরো কিছুদিন, আরো কিছুদিন পরে
বালেগ হবো আমি,
ঘুইরা বেড়াইতে আসবো তখন
তোমার বাড়ির পাশে”

বে-ভুলা বাতাস আমারে বলতেছে,
আমার চুল আঁচরাইয়া দিতেছে যেন
সখীগণে

সরলা’র নামে, দিরাই বাজারে
বসন্ত বাতাস আসি আসি করতেছে

শীতের পাখিরা চইলা গেলে পরে
কুকিল ডাকবে সুরে
করিম তুমি ঘুমাইলানি রে,
কালনীরও ঢেউয়ে?

শীত যাই যাই করে
উত্তুরের বাতাস চইলা যাবে, তারও আগে

একলা থাকার কবিতা

একলা চলবা না,
ইগো’র গু দিয়া
পেট ভইরা রাখবা না

দম নিবা,
দম ছাইড়া দিবা না

সামনে যারে পাবা
লগে যারে দেখবা
তার লগেই কথা কইবা

একলা-মারানিগুলা
সুইসাইড খাইতে যাক

একলা হইতে পারাটা
কোন বেটাগিরি’র ঘটনা না

আমরা একলা বইলা
ইউনিক না,
আমরা মিলতে পারি বইলাই
আমরা মানুশ হইতে পারি

ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানের মাঝখানে
বাংলাদেশ কোন একলা দেশ না
আমরা একলা না
ত্রিপুরা আর কাশ্মীর
আর বেলুচিস্তান
আর ফিলিস্তিন
আর আরো আরো
আজাদীর
নিশান আমরা

একলা চলবা না,
আমরা একইসাথে
একটা সময়ে আছি

একলা হওয়ার মোরাল বুস্টিং দিয়া
মোটিভেশন নিয়া
জঙ্গলে পালায়া যাইও না

একই ফ্রিডমের লড়াইয়ে
আমরা আছি,
আমি একলা হয়া গেলে
আমি জানি,
তুমিও একলা হয়া যাবা

একলা একলা পথ হাঁটবা না
আশে-পাশে অনেক মানুশ

অনেকরেই আমরা চিনি না

অরাও একলা হয়া যাইতে চাইতেছে

একলা হওয়া মানে কখনোই
একলা হওয়া না

একলা হওয়া মানে
অনেকগুলা মানুশের সাথে এক হওয়া

একলা চলা মানে
অনেকগুলা মানুশের লগে চলা

একলা চলবা না
অনেক অনেক মানুশের লগে
একলগে চলতেছি আমরা

অইটারে ফিল করবা
বুঝার ট্রাই করবা

আমরা কখনোই একলা না

মানুশ মানেই হইতেছে
অন্য কোন মানুশের লগে
আছি আমরা
ইভেন যখন আমরা বলি, একলা
তখনো আমরা কাউরে চাইতেছি আসলে

বলতেছি, “বুঝছো,
একলা থাকতে আমার
আর ভাল্লাগতেছে না!”

ভালো-বাকশালিদের মুভমেন্ট

রোড একসিডেন্টে
মারা যাওয়া
একটা লাশ ভাবতেছে,
‘মরমানতিক’ বানান’টা
ঠিকঠাক মতো
লেখতে পারবে তো
অনলাইন নিউজপোর্টালের
সাব-এডিটর’রা?

নাকি
‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’
পক্ষ থিকা
সব পত্রিকা অফিসগুলাতে
একটা কইরা
পরমিত-বাংলা ডিকশনারি
গিফট করা দরকার?

মানে, যেইভাবেই হোক
আন্দোলন তো
কন্টিনিউ করা দরকার
আমাদের…

মাঘ নিশীথের কুকিল

কুকিল ডাকতেছে বইলা
বসন্ত আসতেছে না;
বসন্তের বাতাসে গায়ে লাগতেছে বইলা
কুকিল গান গাইয়া উঠতেছে,
আর আমাদেরও শুনতে ভালো লাগতেছে
কারণ বসন্ত-বাতাস লাগতেছে আমাদেরও শরীরে,
আর তখন কুকিলের ডাক না শুনলে
অবাক হইতেছি আমরা,
“হেই কুকিল, তুমি গান গাইতেছো না কেনো!
এখন বসন্ত না!”

কুকিলে গান না গাইলে
বসন্ত ব্যাপারটারে তো কনফার্ম করা যাইতেছে না!

শীতের বাতাস
তার ডেথ-বেডে শুইয়া শুইয়া বলতেছে,
“শোন, জোর কইরা বসন্ত আনা যায় না।”

বসন্ত-বাজার

বাটখারা’টা কইলো, আমি আর মাপামাপি করবো না কোন,
আমি খালি ভালোবাসবো!

(মানে, এক কেজি’র ওজনে এখন থিকা ১০০ গ্রাম কইরা কম দিবো )

রাইটার

কারো অনেক সময় আছে বইলাই সে বই লেখে না। সময় থাকলে তো সে ঘুমাবে, রেস্ট নিবে, ঘুইরা বেড়াবে। আরো কতকিছু করার আছে দুনিয়ায়, সেইসব কিছু সে করতে থাকবে।

একজন মানুশের বলার মতো কোন কথা থাকলে সে লেখে। অই কথাগুলা বলার লাইগা সময়টারে সে বাইর কইরা নেয়, সময়ের কাছ থিকা। নিজের কুয়ার ভিতরে নিজেরে কলসী বানায়া নিজের দড়ি দিয়া নিচে নামায়, পানি তুইলা নিয়া আসে। সময় তো লাগেই অনেক।

কিন্তু কারো সময় আছে বইলাই সে লেখে না। একজন রাইটার তার সময়টারেই লেখে।

মেঘলা আকাশ

কি সুন্দর, ফ্রয়েডের দিন!

অশ্লীল-সিনেমার নায়িকার মতো মেগগুলা বলতেছে,
(নায়ক, ভিলেন, ডিরেক্টর, ক্যামেরাম্যান, দরশক
লিবারাল, ভারসিটি’র টিচার, সেক্সিস্ট, ফেমিনিস্ট
এবং কবি’দের)

ভাই, আমারে মাফ করে দেন!

আমি আর আমার মন

নিজেরে বুঝাই,
তুমি তো এতো কিছু বুঝো না,
বুঝছো?

মন কয়, হ
না বুইঝাই এতো,
বুঝলে কি জানি হইতো!

মন জানে,
আমি যে জানি না,
না-জানা কতো যে ভালো…

যেন

ঝড় আসলো
আম পড়লো না
বাতাসে

আমের মুকুলগুলা
ছড়ায়া পড়লো
রাস্তায়

যেন
ছোট ছোট
বকুল ফুল

আমসত্ত্ব

আজ শুক্রবার।
গাছে গাছে ঝুলতেছে বাজারের ব্যাগ।

বাজার’টি আমি খাবো পেড়ে!

কবি

(“কে কবি – কবে মোরে? ঘটকালি করি,
শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন,
সেই কি যম-দমী?”
মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

ধরো, অই লোকটাই গ্রেট
যে ফাঁপর দিতেছে,
বলতেছে, বুঝলা না তুমি
আমি যে গ্রেট!

ধরো, অই লোকটারেই
মরার পরে ফুল দিতে যাইতেছি আমি
মনে মনে বলতেছি, সরি, বুঝি নাই!

আর ভাবতেছি,
এতো যে গ্রেট লোকরে আমি চিনি
কোনদিন না আবার নিজেই গ্রেট
হয়া যাই বাল!

ধরো, অই লোকটাই আমি
মরণে যারে তুমি দিতে এলে ফুল…

বাংলা-সাহিত্যের সন্ধ্যাবেলায়

বাংলা-সাহিত্যের টিলার উপরে বইসা আছি, সন্ধ্যাবেলায়

বাংলা-সাহিত্য আমারে বুঝাইতেছে,
সূর্য কিন্তু এতো বড় না, বুঝছো, অই রবি-ঠাকুরের মতোই ঘটনা…

ক্রিটিকের শিয়াল-বন্দনা

শিয়ালটা যে মুর্গিটারে খাইতেছে এখন
এইটা কি খালি শিয়ালটারই সমস্যা?
মুর্গিটার কি কোন দোষ নাই!

শিয়ালটা কতো সাহসী দেখছো!
গেরস্ত বাড়ির উঠান থিকা আইসা
মুর্গিটারে থাবা মাইরা নিয়া যাইতেছে!

“মারহাবা!” বলবো না আমরা?
আমরা হাততালি দিলেও সমস্যা?

মুর্গিটা কি ভাবছিলো?
গেরস্ত আইসা অরে বাঁচাইবো?
এতো সোজা! গেরস্তের আর কোন কাম নাই!

আর গেরস্তও তো পাজি আছে,
মেহমান আসলে মুর্গিটারে তো সে-ই জবাই দিতো,
এখন শিয়াল নিয়া গেছে বইলা, অর দোষ!

শিয়ালের কি খিদা নাই!
শিয়াল কি মানুশ না!
(মানে, জান তো আছে তার)

কবে যে আমরা পরিবেশবাদী হইতে পারবো!
(কতো বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লে আমাদের কথা
তোমরা বিশ্বাস করবা!)

একটা কমেডিয়ান মুর্গি’রে সাহসী শিয়াল খাইতেছে,
ঘটনা তো এইটুকই!

সবকিছু নিয়া বাড়াবাড়ি না করলে না
তোমাদের পেটের ভাত হজম হয় না!

শিয়ালের মতো সাহসী হইতে ডরাও তোমরা,
এইটা হইতেছে আসল কথা
মরা মুর্গির রান তো ঠিকই চাবাইতে পারো!

সব দোষ শিয়ালের এখন,
আর মুর্গিটা খুব ভালো!
মুর্গিটার কি দোষ নাই কোন!

অবশ্য বাঘের তুলনায় শিয়াল একটু কম ভালো,
কিন্তু তারপরও ভালো তো!

যদি বাঘ নামে ময়দানে,
তখন আমরা বাঘের পক্ষ নিবো নে
মানে, পাওয়ারের একটা “সৌন্দর্য্য” আছে না!

শিয়ালের “সৌন্দর্য্য” হইতেছে মুর্গি শিকার করা,
এই সত্যি-কথা কি আমরা কইতেও পারবো না!

পশ্চিমা ফ্রিডম অফ স্পিচ
কি রকম হিপোক্রেট দেখছো!

একটা শিয়াল একটা মুর্গিরে খাইতেছে,
কয়, এইটা নাকি ঠিক না!

পাওয়ারফুল লোকজন এইটুকও করতে পারবে না!
পাওয়ার দিয়া কি করবে তাইলে অরা!
মুর্গি-ই তো খাবে, তাই না!

মুর্গি খাওয়া শেষ হইলে
মুখ মুইছা ফেললেই হবে।

আমাদের কাজ হইলো,
এইটারে নরমাল ব্যাপার বইলা ভাবতে পারা।
দুনিয়াটা তো এইরকমই!

এইরকম, এইরকম ভাবতে ভাবতে
সবকিছু বুইঝা ফেলা, যে
এইটা হইতেছে অইটা, আর অইটা হইতেছে সেইটা…

একটা শিয়াল একটা মুর্গিরে খাইতেছে,
এইরকম নরমাল ঘটনাই তো এইটা!

Leave a Reply