কবিতা: মার্চ, ২০২১

দুপুরের রইদ

“writing this letter is like putting a note in a bottle
– and hoping, it will reach Japan”

কি সুন্দর রইদ!
মরা পাতাগুলা কড় কড় করে উঠতেছে,
তেলে-ভাজা পুরি’র মতন, হলুদ-ব্রাউন;
আর বাতাসে নিজে নিজেই উল্টাইতেছে
গড়াগড়ি করতেছে, তড়পাইতেছে
রাস্তায় উড়ে উড়ে বেড়াইতেছে
বেনামি কোন চিঠির মতন, কার কাছে যাবে?
কার কাছে যে যাবে…

শীত চইলা যাওয়ার পর

শীত চইলা যাওয়ার কয়দিন পর থিকাই মনেহয়, বৃষ্টি কখোন নামবে! বৃষ্টি নামতে থাকলে কয়দিন পরে মনেহয় এই ঘোলা ঘোলা প্যাঁক-কাদার দিনগুলা কবে শেষ হবে! কখোন রইদ উঠবে, ঝলমল কইরা। রইদ উঠলে পরে ঘামতে ঘামতে এক সময় মনেহয় কবে শেষ হবে এই গরমের দিন! কুয়াশার নরোম দিন আবার কবে আসবে! ভাবতে না ভাবতেই তখন শীত চইলা আসে। তারপরে মনেহয়, শীত’টা শেষ হয় না কেনো! শীতও শেষ হয়। শেষ হয় জীবনের দিনও, এই ঘুরা-ফিরা, একটা সময়।

কোনকিছু আছে বইলা থাকে না, কোনকিছু নাই বইলা ফিরা আসে না, সবসময়।

গরম সিঙারা

গরম সিঙারার মতন তিনকোণা একটা দুপুর
তেরছা কইরা তাকায়া আছে আমার দিকে

জিগাইতেছে, তুমি কে? শাহবাগী? নাকি যুদ্ধাপরাধী?

বৃষ্টি

বৃষ্টি আসলে সব পাতারা ভাইসা যাবে
বৃষ্টি আসার পরে আমরা তাকায় থাকবো জানালা দিয়া বাইরের দিকে,
বৃষ্টিতে গাছগুলা ভিজবে,
কয়েকটা কাক বইসা থাকবে ইলেকট্রিকের তারে,
শুয়ে শুয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে আমাদের মনে হবে,
বৃষ্টি যেন পড়তেছে কোন টিনের চালে
বৃষ্টি যেন পড়তেছে কোন সাউন্ড-প্রুফ কাঁচের দেয়ালের বাইরে,
আর আমাদের আত্মা জেগে উঠতে চাইতেছে
পুরান সব কথা, পুরান সব গানের সুর পার হয়া
একটা নিরবতার কাছে;

যেন বলতেছি মনে মনে
একজন আরেকজনরে আমরা, দেখো,
বৃষ্টি পড়তেছে!

আর সেই নিরবতার ভিতর ভিজে যাইতেছে,
বাতিল হয়া যাওয়া মালগাড়ির ওয়াগনের মতন
লক্কর-ঝক্কর আমাদের লোহার আত্মাগুলি…

একটি গোরু রচনা

‘গোরুটি এখন কোই যাবে?’

গরু’র দড়িটি গোরুটিরে
জিগাইতেছে

বরইগাছ

আমি তোমার ইমেজের বরইগাছ তলায় বইসা থাকি,
আর দেখি অরা বরইগাছ নিয়া কবিতা লেখে,
তোমার কি যে ভালোলাগে!
হালকা বাতাস যেন বইতেছে,
সকাল-দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যা, সারাটা সময়…

বরইগাছ’টা আমারে বলে, “কি রে ভাই,
তুমিও লিখবা না একটা কবিতা, আমারে নিয়া?”
বইলা হাসে;
আমিও হাসি অর সাথে,
কবিতা দিয়া আমরা কি করবো!

আমরা বইসা থাকতে থাকতে
খালি তো বইসাই থাকবো

(হুমায়ূনআহমেদের অনন্তনক্ষত্রবিথীতলে)
জড়োসড়োজড়োসড়ো
বৃষ্টির আগের বাতাসে ধূলাবালিরমতো
বালিধূলারমতো

একটা বরইগাছের তলায়
একটা বরইগাছের ছায়ার মতো

সিগ্রেট আফটার সেক্স

তোমার মন-খারাপের মাঠে
একটা ইন্দুর আইসা বইসা থাকে

“ধান কাটা হয়ে গেলে পরে – ”

অ্যা শর্ট ফিল্ম এবাউট লাভ

ফেসবুকে পোস্ট দিছে তাঁর লাভার-ছেলেটা
“Respect your woman.
It’s not a crime that she loves you.”

সেই পোস্টে লাভ দিয়া
তার টাইমলাইনে শেয়ার দিতেছে শে,
“ ❤ ” সাইন লেইখা

ভালোবাসা ব্যাপার’টা হইতেছে এইরকম!
আমারে বুঝাইতেছে অরা

শব্দের জেলখানায়

মেবি আমি একটা বোম্বে সুইটসের হলুদ রিং চিপস
মেবি আমি একটা নাবিস্কো বিস্কুটের গোলাপি প্যাকেট
মেবি আমি একটা সন্ধ্যা, নিভতে থাকা পাখিদের আওয়াজ

“ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল” টাইপের ক্লিশে একটা
“আমি কে ছিলাম, কি ছিলাম…” মনে করতে করতে
হারায়া যাওয়া একটা কবিতার লাইন

মেঘনার রেলব্রীজের উপর দিয়া যাইতে থাকা
রাতের বেলার লোকাল ট্রেন
কু-ঝিক-ঝিক কু-ঝিক-ঝিক অন্ধকার, একটা সময়ের

মেবি আমি নিরবতা-ই একটা,
শব্দ যারে কইতে পারে নাই কোনদিন

“মেবি তুমি আসলে নাই, নাথিং!”
হাসতে হাসতে কইলো তখন নদীর পানি
যমুনার কালো জল

মায়া

আমার একটা চ্যাটবট (chatbot) বানায়া
আমি তার লগে কথা কইতেছি

চ্যাটবট’টা আমারে জিগাইতেছে,
“অ্যাই কি হইছে তোমার!
তোমারে তো তোমার মতো লাগতেছে না যে…”

ছবি’র মতো সুন্দর

একটা সারস-পাখি
তার লম্বা ঠোঁটে একটা মাছ নিয়া
দাঁড়ায়া আছে, একটু পানির উপরে

মাছ’টা বলতেছে, আমি আর কতোদিন
জ্যান্ত-ভাব নিয়া থাকবো?
মরতে পারবো না কোনদিন?
সারস’টা বলতেছে, আমি কি
উইড়া যাইতে পারবো না আর?
আটকা পইড়া থাকবো সবসময়
এইরকম লাইন, ড্রয়িংয়েই?

হাশেম খান কইলেন, আরে,
আমি কি করবো! এইটা তো ছবি-ই
একটা! তোমরা এইরকম কেন করতেছো!

সারস, মাছ আর হাশেম খান
তিনজনই মন-খারাপ কইরা বইসা থাকেন
আমার বই তৃতীয় ভাগ বইয়ের
ছবিটার ভিতর,
তখন

একটা অন্ধকার, সন্ধ্যার

একটা অন্ধকার, সন্ধ্যার
পর্দা সরায়া
ঢুকে পড়লো ঘরে

তোমার নাভী’র নিচের অন্ধকারে
গুটিশুটি হয়া
বইসা থাকলো সে

বললো আমারে, তুমি তো
চলে যাবা! চলে যাবা তোমার
নিজের অন্ধকারের কাছে, আবার…

রিশকা

রিশকা দাঁড়ায়া থাকে
রিশকা দাঁড়ায়া থাকে না

ধানি-জমির পাশে একটা নতুন গাছ
বাতাসে মাথা নাড়ে, কয়
হেই, রিশকার মতো তুমিও কেন
চলে যাও, ফিরা আসো, চলে যাইতেই
থাকো না!

রিশকা’টা চলে যায়, বাতাসে ধূলার মতো
রিশকা দাঁড়ায়া থাকে না

ইগো নদীর পাড়ে

ইগো নদীর পাড়ে
একটা ইন্দুর বইসা ভাবে

এই ভব-নদী আমি পার হইবো কেমনে!

ভাঁটফুল, রাস্তার পাশে, সকালে

ভাঁটফুল, তাকায়া আছে
সকালবেলার রাস্তায়

অপেক্ষার সময়ের মতন ছড়ায়া যাইতেছে পথ
একটু একটু করে সরে যাইতেছে ফিরা-না-আসার পথে

ভাঁটফুল, তবু তাকায়া আছে
তুমি আসো নাই যে!

একটা গানের শেষে অনেক নিরবতার মতন
এই সকালটাও যে কোন একটা সকালের মতন শেষ হয়া যাবে

একটা রিশকা তার ক্রিং ক্রিং বেল বাজায়া বলতেছে, “ভাই, সাইডে সাইডে…”

বসন্তের কুকিল

কুকিল ডাকলেই বসন্ত আসে না;

কুকিল ভুলও করতে পারে,
বসন্ত আসার আগে, একটু দখিনা বাতাসে
ডাইকা উঠতে পারে, ভাবতে পারে
আরে, বসন্ত তো চইলা আসছে!
এইরকম ভুল হয়, দুয়েকবার

তারপর, বসন্ত আসে

কিন্তু যখন চলে যায় বসন্তের বাতাস
বুঝা যায়, তখন কুকিলও
ভুল করে না; যা কিছু থাকে, যখন থাকে
মনে হইতে পারে – নাই, কিন্তু যখন
চলে যায়, তখন টের পাওয়া যায়
আসলেই তো, নাই!

স্বাধীনতা তুমি
স্বাধীনতা তুমি শামসুর রাহমানের ফ্লাওয়ারি কথা-বার্তা

ল্যুভর মিউজিয়াম

আমি যে ল্যুভর মিউজিয়াম দেখলাম না,
এর লাইগা আমার আফসোস তো হইতেই পারে
(আফসোস করবো কিনা, বুঝতেছি না অবশ্য…)

কিন্তু ল্যুভর মিউজিয়াম যে আমারে দেখলো না,
অর কি খারাপ লাগতে পারে না? মন-খারাপ
হইতে পারে না একটু?

“এইরকম হাজার হাজার মন-খারাপ নিয়া
আমি দুনিয়াতে ঘুরি ডেইলি। শোনো! আমার
মন-খারাপ হয় না এতো!” ল্যুভর মিউজিয়াম’টা আমারে কইলো

Leave a Reply