য়্যু আর অ্যা বাস্টার্ড, য়্যু নো দ্যাট!
শে কাইন্দা-কাইটা বলে।
আমি ভাবি, তার ভাবনা ভুলও ত হইতে পারে।
১.
– লেটস ডু ইট স্ট্রেইট। শে কইলো।
– কেন তোমার কি হাঁটুতে সমস্যা হচ্ছে? আমি জিজ্ঞাসা করি।
– না, আমি তোমার চোখটা দেখতে চাই। দেখতে চাই তুমি কার কথা ভাবো? আকুল হয়া বলে শে।
আয়নার ভিতর আমি হাসার চেষ্টা করি।
– হাসির ভিতর নিজেরে লুকাইয়ো না। শে সিরিয়াস।
– লেটস ডু ইট স্ট্রেইট দ্যান। আমি তার কথাই বলি।
২.
‘তাইলে কী দেখলা তুমি?’ – আমি জিগাইলাম শেষে।
শে চুপ কইরা থাকলো। আমি সিগ্রেট ধরাইলাম। সিগ্রেটের গন্ধ তাঁর অপছন্দ। শে শরীরটারে ঘুরাইলো। তখনই প্রথম আমি তাঁর পিঠের তিলটা দেখতে পাইলাম। বাম কাঁধের একটু নিচে। কালো ছোট একটা বিন্দু। চামড়ার মধ্যে কিছুটা উঁচা, না ছুঁইলে বোঝা যায় না। একবার ইচ্ছা করলো সিগ্রেট দিয়া জায়গাটা ছুঁইয়া দেই। আমার এই প্রেম তারে ব্যথা দিতে পারে এই কারণে ভাবলাম যে, না, ঠোঁট রাখি। সিগ্রেট রাখলে যে ব্যথা পাইতো, তার বদলে আদর কইরা দিলাম যেন, এইরকম। ঠোঁট রাখার ভাবনার পরে মনে হইলো, দাঁত দিয়া একটা কামড় দেই, যেন খাইতে চাই ছোট্ট একটা তিল। লুচির মধ্যে কালোজিরা যেইরকম তার গন্ধ নিয়া থাকে, শরীরের তিলে তা নাই, একটা মৃদুচিহ্নই খালি।
এইটা যে শরীর, পিঠ; তারে সিগনিফাই কইরা রাখছে এই তিল। পুকুরের মধ্যে প্রাণভোমরা, দৈত্যের। আমি খুঁজতে খুঁজতে সারা শরীর ঘুইরা পিঠে গিয়া তারে পাইছি। এখন তারে চামড়ার খোলস থিকা মুক্ত করি, তাইলে কেউ না কেউ হয়তো মুক্তি পাবে। শে। অথবা আমি। তিলটাতে আমি হাত রাখতে চাই। আমি কি ছুঁইবো তারে? কেমনে? কবে? তবে বেস্টওয়ে অবভিয়াসলি গডফাদার-এর রিপিটেশন; সিগারেটের ছাইটা জমতে জমতে একটা সময় টুপ কইরা গিয়া পড়লো তিলটার ওপর। সিনেমাতে ইমেজটা পুরা ভচকাইয়া গেছে। দেয়ার শ্যুড বি এটলিস্ট একটা তিল এবং মাইকেল কর্লিয়নির হাতে-ধরা সিগ্রেটের ছাইটা কে অ্যাডামসের পিঠের তিলে পড়তেছে। ক্যান বি সাডেন, ইনসিগনিফিকেন্ট, কয়েক সেকেন্ডের একটা ব্যাপার। কারণ আর্টের ঘটনাটাই হইলো সাডেন একটা মোমেন্টের ডিটেইলিংরে দেখা এবং এড়াইয়া যাওয়ার জায়গাটাতে আসলে।
আমার এই ভাবনা যেন তাঁর শরীরে গিয়া পৌঁছাইলো। একটা হাত রাখলো শে তার পিঠের তিলের ওপর। তারপর আবার উল্টাইলো শরীরটা। হাতটা পিঠের নিচে রাইখা। চোখ বন্ধ তাঁর। শে কি মনে করতেছে, কী দেখছিলো সেইটা ভাবতেছে? নাকি ইমাজিন করতেছে এখন তাঁর আগের দেখাটারে। আমি কইলাম, হাতটা সরাও। শে তার যোনি’র ওপর থিকা হাতটা সরাইলো। একপাশে। বুকের ওপর ক্রস হয়া আছে ডান হাতটা।
ওর শরীর আমি ভালোবাসি। এমনো মনে হয় যেন শরীরের ভিতর গিয়া বইসা থাকি। ঠোঁটটা যেখানে একটু সরু হয়া ওঠছে সেইখানে বইসা শ্বাসের বাতাসে কাঁপি। রাজহাঁসের মতো লম্বা গলার মরুভূমিতে উটের পিঠে কইরা যাই। কী যে পিপাসা! কলসের গলা ধইরা পানিতে ডুব দেই। অন্ধকার চুল ধইরা ভাইসা ওঠি। প্রাসাদের ব্যালকনিতে। গোল। ঘুরতে ঘুরতে একদম উঁচাতে। ছোট্ট কালো একটা মেঘের গুহা থিকা বালুর পাহাড়ে। নরোম বৃষ্টির দিনের মতো বাতাস, ঘোঙগাইতেছে, আমার ভিতর। ঘুমাইতেছে নাকি শে?
‘হেই… ঘুমায়া গেলা নাকি? তুমি কি এতোটাই স্যাটিসফাইড?’
‘শালা, বাইনচোত…’ চোখ বন্ধ কইরাই বলে শে। আমি কি জি-স্পটে হিট করতে পারলাম নাকি? এইরকম সাফল্যবোধ হইলো! আমার পুরুষ-মন কতো অল্পতেই না খুশি হইতে পারে; এমনকি একটা গাইল শুইনা অথবা একটা সামান্য তিলে! এই খুশি হওয়াটা সমরখান্দের মতোই একটা ব্যাপার। এইরকম বিরাট। ধ্বনিময়তাই মুখ্য আসলে, শব্দের; মিনিংয়ের চাইতে।
এবং সিনস দ্যান, আমি ভাবতে থাকি। ক্লাশ এইটের কথা। সন ঊনিশো অষ্টাশি। আই হার্ড ইট ফ্রম হার। ‘শালার…’ এবং চিন্তিত হই যে, একজন নারী কিভাবে সামাজিকভাবে ‘শালা’ সর্ম্পকে জড়াইতে পারে অথবা এইটা কেমন গালি হয়? সম্বোধনই ত, শেষ পর্যন্ত। তবে রিয়ালিটি ইজ নট দ্য রিয়ালিটি অ্যাজ সাচ। শব্দও খালি তা না, যা সে বলতে পারে। উচ্চারণমাত্রই সে উড়ে যাইতে পারে এবং যে অসম্পূর্ণতা সে বাতাসে ক্রিয়েট করে, ওইটুক শূন্যতারে ফিল-আপ করার লাইগা আজাইরা আজাইরা অর্থ দেয়। এই কারণে দেরিদার ডিকন্ট্রাকশন এতো আনন্দ দেয় যে এইটা নিজে নিজেই চলতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত নার্সিসিস্ট একটা ব্যাপার হয়া দাঁড়ায়। আর শে শব্দের ভিতর থিকা খালি শব্দই জাইগা ওঠে, আরো।
‘আচ্ছা, হোয়েন ডিড য়্যু ইউ ইনকাউন্টার দ্যাট যে ইউ আর স্যাডিস্ট?’ হঠাৎ কইরাই শে রোমাণ্টিক হইতে শুরু করে।
এইটা মনে হয়, হয়। যখন খুব স্যাটিসফাইড ফিল করা যায় অথবা এরপরে বোরিং লাগতে শুরু করে, রোমাণ্টিকতা শুরু হইতে থাকে। রবীন্দ্রনাথের এইরকম সমস্যা আছিলো। রবীন্দ্রনাথরে যাঁদের ভালোবাসতেই হইবো, তাঁদেরও এইটা আছে। এইরকম ফিলিংস যে, তাঁরা পাদ দিলেও জানি গন্ধ বাইর হয় না! পায়খানায় যায় এমনিএমনি; হাগে না। খালি দরোজাটা বন্ধ হইয়া যায়। কথা-বার্তা কয় খুব গোপন-গভীর জায়গা থিকা। অনেক মিনিংফুল, কিন্তু একদমই দরকারি না। খুবই বিশ্রী একটা ব্যাপার, এইটা! তোমার বোরিং-লাগারে তুমি আমি-অ্যাজ-অ্যান-অবজেক্ট-এর উপর চালান কইরা দিলা! এইটারে বলা যায়, ইমোশনাল চোরাচালানি। বেবি-ডলের সাথে সেক্স করাও ভালো, যদি চুদাচুদির পরে এইরকম রোমাণ্টিকতারে ফেইস করতে হয়। বাট আই হ্যাভ টু প্লে মাই টেগোর’স রোল অলসো! যেহেতু বাংলায় ভালোবাসি, বাংলাকে ভালোবাসি:
‘যখন তোমারে হেরিলাম হে নারী…’
‘বোকাচোদা…’ থ্যাংকস; শি গেট রিড অফ হার হ্যাং-ওভার রোমাণ্টিসিজম। অ্যান্ড আই গট এনক্যারেজড;
‘রসময়গুপ্তরে মারলা নাকি…’
‘ও, তাহলে ওইখান থিকা শুরু! ইউ গট স্টাক ইন দ্য রেফারেন্সেস অফ দ্য ওয়ার্ডস!’
শালার রোমাণ্টিকতাই ত ভালো ছিল, মওলানা যুক্তিবাদী’র থাইকা। আমি ভাবার চেষ্টা করলাম, রাস্তাটা; ফ্রম রোমাণ্টিসিজম টু র্যাশনালিজম। এত ভাবনাও আসলে ভালো না যদি না শরীর থাকে। এই পাজল থিকা বাইর হইতে হবে। আমি তাই কথা বলতে শুরু করি।
‘তুমি আসলে সত্যি সত্যিই গল্পটা শুনতে চাও?’
শে ওইঠা বসে, যেন হেইলা পড়তে চায় আমার শরীরের উপ্রে। স্টিল ইমবেলন্সের মধ্যে; তার মাথা ঝাঁকায়। আমি কই, ‘তাইলে ত তোমার চোখ খুলতে হবে, আমি দেখতে চাই তুমি কার কথা ভাবো।’
‘হা হা হা…’ কল-খোলা ট্যাপের পানির মতো শে হাইসা ওঠে। আর চোখ খুলে। আহ! শে ত চোখই নাকি! থরথরাইয়া কাঁপে, মৃদু ভূমিকম্পের মতো। কালো দ্বীপের মুক্তা-মণি। শে ওইঠা বসে। বলে, ‘ফর গডস সেইক, তোমার লোকাল টোনের ইমপ্যাক্টটা একটু কম দিও।’
আল্লারে, রোমাণ্টিকতা আর আমারে ছাড়িবে না যেন!
৩.
ঘটনাটা রেললাইনের পাশে। বুঝলা, রেললাইন মানে ত মেডিভ্যাল ইংল্যান্ডের স্মৃতি। তথাপি শীতকাল। শীৎকারের সাথে একটা মিল আছে না! রাত বারোটা বাজে নাই তখনো। পলাশ থিকা নাইট শো দেইখা ফিরতেছি। গোরস্তান পার হইয়া ষ্টেশনে গিয়া দেখি বাল্লা লোকাল ষ্টেশনেই আছে। ট্রেন থাকা মানেই ষ্টেশনে মানুষ আছে। ট্রেন না থাকলে মানুষগুলাও ঝিমাইতে থাকে। তখন নিরবতা থাকে। ষ্টেশনের মাগিরা বইসা থাকে থার্ড লাইনের বাতিল কয়েকটা বগির ভিত্রে। কাস্টমার না পাইলে হাঁটাহাঁটি করে। আমরার মনে হয় দেরিই হইয়া গেলো আজকে। দুই চক্কর দিয়াও কাউরে পাইলাম না। শীতের বাতাস শুরু হইছে। চাদর গায়ে দিয়াও সাদী কাঁপতেছে। সে মোটামুটি চেইতাই গেলো আমার উপ্রে। সে বাড়ি চইলা যাইতে চায়। আর কেন আমি এতোক্ষণ দেরি করলাম, এইটা নিয়াও কমপ্লেইন তার। মানে, পুরা ঘটনাটা আমারই, সে খালি যোগালি মাত্র। আমি সার্চিংটা আরো কিছুক্ষণ জারি রাখতে চাইতেছিলাম। শালীরা কেউ না কেউ ত নাইট শো’টা ভাঙ্গা পর্যন্ত ওয়েট করার কথা!
পরে বিকল্প প্রস্তাব দিলাম আমি। ফিরার রোডম্যাপটা চেইঞ্জ কইরা দেখি। নিচের রাস্তা দিয়া না গিয়া, রেললাইন দিয়াই যাই। দেখি ষ্টেশনে কাস্টমার না পাইয়া কেউ আরো সামনে বাজারের পাশের বস্তিতে চইলা গেছে কিনা। ওইখানে গেলে ত আর আমরার খাওয়া নাই। কলেজের মাস্তানরা ওয়েট কইরা আছে। দুপুরবেলা সায়েন্স বিল্ডিংয়ের পিছনে বইয়া কলেজের মাইয়ারার দুধ টিপবো আর রাইত হইলে মাগি লাগাইবো, অমর প্রেম উহাদের।
রাজনৈতিক নেতারা কেন রোডম্যাপরে এতো গুরুত্ব দেন সেইদিনই প্রথম বুঝতে পারছিলাম। বেশিদূর আগাইতে হইলো না; আলগাআডির আগে যেইখানে রেললাইনটা ভাগ হয়া একটা উপরে আর আরেকটা নিচের দিকে দিয়া খাদ্যগুদামের দিক গেছে সেইখানে পাইলাম তারে। পা ফাঁক কইরা হাঁইটা যাইতেছে।
‘কই যাও?’ জিগাইলাম আমি।
‘আহ-হারে শান্তি নাই আমার! আজকা বাদ দে। বহুত কষ্ট হইছে।’
তখন আমার প্রেম আরো জাইগা ওঠছে। কেমনে বাদ দিবো! হাই কুড আই!
শীতের শুরু। কুয়াশায় ভিজে আছে ঘাসগুলা।
সাদী শালা আসলাম হয়া গেলো তখন, সুযোগ-সন্ধানী স্ট্রাইকার। কয়, আমারে অতক্ষণ ধইরা ঘুরাইতাচছ, আই উইল ইন্টার ফার্স্ট। যা শালা, তুই যখন কলেজে ওঠচছ, তুই-ই আগে যা। আমি সিগ্রেট ধরাইলাম; প্রেম যদিও কন্ট্রোল করার কোন বিষয় না, তারপরও ইট ক্যান ওয়েট। এই গ্রাউন্ডে আমি বিষয়টা মাইনা নিলাম।
মৃদু বাতাসে আমার কি রকম জানি লাগতেছিলো। আমি একবার তোমার কথা ভাবলাম, মানে তখন ত তুমি ছিলা না, ষ্টিল আই ক্যান ইমাজিন সামথিং লাইক ইউ, নট ইউর বাট অনলি, তুমি ত জানো… শে হাসলো না, তাকাইয়াই থাকলো, আমার চোখের দিকে, কারে যেন খুঁজে শে; আমার মায়ের সোনার নোলক, বাংলাদেশ যেইটা হারাইছে? হাত দিয়ো না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে, এইরকম একটা ডিসট্যান্স… আমি আর দেখি না তাই। বলতে থাকি। যদিও বলবার মতো কথা খুব কমই আছে।
সাদীর চোখের দিকেও আর তাকানো যায় না। শালা, শরমাইছে। ওর শরম আমারে সরে যাইতে বলে। আমি সামনে আগাই। প্রিণ্টের কামিজটা ছিল খয়েরী। ষ্টেশন থিকা কিনা কলাগুলা পাশে রাখা ছিল। অন্ধকারে আর দেখা যায় নাই। পরে দেখা গেলো, কলাগুলা চ্যাপ্টা হয়া গেছে। আইট্টা কলা। কালো কালো বিচিগুলা বাইর হয়া রইছে। শে কান্তেছিল। আর আমাদের কাছেও কোন টাকা আছিলো না। সিনেমা দেইখাই ত সব টাকা শেষ। তাও থার্ড ক্লাশের টিকিটই কাটতে পারছিলাম আমরা। মাথা উঁচা কইরা মুনমুনের পায়ের মোটা মোটা দাবনাগুলা দেখার লাইগা।
‘এইডা কোন কাম করলি।’ শে শুধু এট্টুকই বলতে পারছিলো। আর আমি দ্রুত তার গন্ধ আমার শার্ট থিকা মুইছা ফেলতে চাইতেছিলাম।
আর ওইসময়ই, সাডেনলি আই ফিল দ্য ফিলিং; আমি শিওর না এই কারণেই কিনা যে, আনন্দ যা ইচ্ছার বিপরীত; অথবা একটা দুঃখ; আমি যেন শে হয়া কষ্ট পাই আর সেইটা এইরকমের শারীরিক যে এর কোন শেষ নাই; উরাতের চামড়া ছিইলা গেছে, রাতের খাওয়া নাই; যেই ফিলিংস আমার টের পাওয়ারই কথা না, আর আমি তার লোমে লোমে গিয়া বইসা আছি; দেখতেছি তার দুঃখ, আনন্দই যেইটা আমার; আমি যদি আনন্দ হয়া না থাকি, শে তো আর তার দুঃখ নিয়া নাই; কই কই ভেসে যাইতেছে, এই শরীর নিয়া; আর যদি শে বলতে পারতো তারপরও, তাইলেও শে বলতোই না। কারণ এইটা এইরকমের একস্ট্রিম, আমার জন্যও। মানে, ব্যাপারটা খালি না-দেখার না, খালি দেখাদেখিরও না; একটা সার্টেন মোমেন্ট, যেইখানে সবকিছু থাইমা যাওয়ার পরে ঘটনাগুলি আবার ঘটতেছে, আবারো শুরু হইতেছে, আবার ফিরা ফিরাই আসতেছে; একটা ঘটনা যা নিজেরে ন্যাংটা করতেছিলো কাপড় পরার সময় আর আমি সেইটার ভিতর ডুবে যাইতেছিলাম বারবার, গোত্তা খাইয়া পইড়া যাইতে যাইতে, উঠতে উঠতে আবার; ঢেউয়ের পরে ঢেউ, আসতেছেই খালি, হেরোইনের চাইতেও জঘন্য; অবশ্য ইয়াবার ব্যাপারে শিওর না তখনো। কারণ তুমি ত সচেতন-মন মোর পায় না ডানা, তাই না? কিন্তু ওই মুহূর্তে না ছিল মুনমুনের পা, না ছিল টাকা না-থাকার কথা।
মানে, তোমারে আমি ঠিক বুঝাইতে পারবো না!
একটা শরীর শরীর থিকা বাইর হয়া গিয়া বইসা আছে!
আমার কণ্ঠে আবেগ টের পাইয়া শে চোখ সরাইয়া নিলো। যেহেতু মুখটা একটু ঘুরলো, তার পিঠের তিলটা আমি আবার খুঁজতে থাকি। কই গো তুমি, প্রাণভোমরা।
‘এইটা কার গল্প?’ আবেগহীন গলায় শে জিগায়।
‘নাদিমের।’ আমি বলি। উচ্চারণটা এতোটাই স্পষ্ট যে মনে হয় গল্পটা আমারই, নাদিমের না।
‘ছোটগল্প হইছে এইটা।’ শে কইলো।
কোনরকম হাসি-করুণা-ভালবাসা ছাড়াই শে এই ঠাট্টাটা করলো। তার শরীর বেঁকে গেলো আরো।
আমি স্পষ্টভাবে তার পিঠের তিলটা দেখতে পাইলাম।
আমার প্রেম নিবে গেলো।
৪.
প্রেম যে ছিল, সেইটা বলাটাও একটু মুশকিল। শি’র সাথে আমার পরিচয় কখনোই হয়া ওঠতে পারে নাই। আমি ভাবছিলাম যে, জীবনে কেউ কেউ হয়তো সেকেন্ড চান্স পাইতে পারে। দুনিয়াতে যেহেতু নারী-পুরুষ নাম্বারের ক্ষেত্রে ভারসাম্যের কিছু উনিশ-বিশ আছে; কুড়ি বছর পরে, যদি না-চিনার ঘটনা ঘটে, তখন একটা কিছু ঘটতে পারে ত, একজন একস্ট্রা হিসাবেই হয়তো! এই সেকেন্ড চান্সের জায়গা থিকাই তারে আমি ইনভেন্ট করি।
শে আমারে দেখছিলো আর আমিও তারে একভাবে চিনছিলাম। আমাদের চিনা-জানা এইরকম অহেতুক একটা ব্যাপার। কলেজ লাইফে একবার একটা কনসার্টের সময় টেবিলের ওপর পাশাপাশি বসছিলাম আমরা। শে ছিল শাড়ি পরা, বসতে কষ্ট হইতেছিল। আর কনসার্ট কাভার করতে আসা ভিডিও ক্যামেরাম্যান বারবার ক্যামেরা তাক করতেছিল তার দিকে। এইটা নিয়া আমি ফ্লার্ট করতেছিলাম আমি তার সাথে। শি ওয়াজ পাজলড, কোন এক কারণে। এইটার ফ্লার্ট ভাববে নাকি সিরিয়াসলি নিবে নিশ্চিত হইতে পারতেছিলো না। এই আর কী। মানে, নিশ্চয়তা যে এক ধরণের বোকামি এইটা আমরা দুইজনেই একইসাথে বুঝতে পারতেছিলাম। দ্যান উই বিকাম ফ্রেন্ডস ইন আওয়ার উইন্ডোজ।
জানালা খুলে দিলে যেমন বাতাস আসে, ধূলা-বালিও; আমরা কথা কইতে কইতে আবিষ্কার করতে থাকলাম যে, আমরা কেবল আমরা না; সায়েন্স ফিকশনের ভিতর আমরাই আছি, ক্ল্যাসিক উপন্যাসের ভিতর আমাদের কারেক্টার খুঁইজা পাই আমরা, বাংলাদেশের নাটক-সিনেমা না পাইলেও বিদেশী আর্ট ফিল্মগুলাতেও আমরা নিজেদেরকে দেখতে পাই, প্রায়ই। আর পুরান হিন্দি সিনেমাগুলি পুরা আমাদের নিয়াই বানাইছে। বিয়া-শাদী, বাচ্চা-কাচ্চা ইত্যাদির পরে পরে। উই ক্যান লাভ ইচ আদার অ্যান্ড ক্যান বি অ্যালোন অ্যাজ ওয়েল। মানে, পাজলড হইতে হইতে আমরা নিজেরাই পছন্দ করি ধাঁধাঁ তৈরি করা। তা নাইলে জীবন কি ও কেন ইত্যাদিতে সময় অনেক নষ্ট হয় আসলে।
একবার শে কইলো যে, হি ওয়ান্টস মি টু সাক হিজ ডিক, বাট নেভার এভার ওয়ান্ট টু টাচ মাই ক্লিটস উইথ হিজ টাঙ্ক। ন্যাস্টি জিনিস না এইটা, বলো! সে আমারে স্লেভ বানাইতে চায়, যেহেতু সে একটা স্লেভের মতো জীবন কাটায়, কর্পোরেটের। এইটুকু করুণা ত আমি করতেই পারি তারে, তাই না? শে সমর্থন চাইতে থাকে আমার। আমি চুপ থাকি। দুইটা মানুষ কি কখনোই পারে সমান উচ্চতার ভিতর দাঁড়াইতে। আই হ্যাভ নেভার এচিভ দ্যাট রিলেশন ইন মাই লাইফ। মানে, আমরাও। এইরকম সমর্থন আর দিতে পারি না, একজন একজনরে। আমাদের নিরবতা আমাদেরকে অ্যাকোমোডেড করে না আর। আটকাইয়া যাই একটা সময়। স্ক্রীণটাও ব্লার হয়া যাইতে থাকে।
আমাদেরও ক্লান্ত লাগে, মন এলায়া পড়ে; এই যে ক্লান্ত ক্লান্ত লাগে, তখন শরীর জাইগা ওঠে। দৌড়াইতে ইচ্ছা করে। শরীরের কোষে কোষে জীবন ছড়াইয়া পড়ে। উই ওয়েক অ্যাপ এগেইন, ইন আওয়ার ড্রিমস।
৫.
– লেটস ডু ইট স্ট্রেইট দ্যান। আমি বলি।
– কেন তোমার কি হাঁটুতে সমস্যা হচ্ছে? শে জিজ্ঞাসা করে।
– আয়নার ভিতর আমি হাসার চেষ্টা করি।
– না, আমি তোমার চোখটা দেখতে চাই। দেখতে চাই, তুমি কার কথা ভাবো? আকুল হয়া বলি আমি।
আয়নার ভিতর শে হাসার চেষ্টা করে।
– হাসির ভিতর নিজেরে লুকাইয়ো না। আমি সিরিয়াস।
– লেটস ডু ইট স্ট্রেইট দ্যান। শে আমার কথাই বলে।
৬.
আর কোন কথা না কইয়াই শে তার ওয়েবক্যামটা জানালার দিকে সরাইয়া দিলো। কমলা রংয়ের ভারী পর্দাটা সইরা গেলো। সকালের আলো আসতেছে। পর্দাটা ওড়তেছে। দূরের দালানের বারান্দায় কাপড়গুলি পতাকার মতো ওড়ে। গাছের সবুজ পাতা।
দৃশ্যটা মুছে যায়। ঘুমের ভিতর।
৭.
শিট!
রেকর্ডই করা হয় নাই!
রিয়েলি রিয়েলি বোকাচোদা হয়া আমি বইসা থাকি! কারণ প্রমাণ ছাড়া আদালত ত দূরের কথা আমি নিজেও আর কখনোই বিশ্বাস করতে পারবো না এই ঘটনা যে ঘটছিল। শে যে ছিল, তার ফুটেজ ছাড়া, অন্তঃত একটা অস্পষ্ট ইমেজ ছাড়া কেমনে সম্ভব এইটারে ঘটনার মর্যাদা দেয়া; এই ডিজিটাল রাষ্ট্রে! মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশ যে কোন ঘটনা হইতে পারলো না ওনলি বিকজ কোন ফুটেজ পাওয় গেলো না। মুসলমানরা এবং আম্রিকানরা মাথা কুইটা মইরা গেলো, তবু ইন্ডিয়ানদের কাছ থিকা কোন ইমেজ লিক করতে পারলো না। তো, ইমেজই যখন বাস্তবতা; আমি কেমনে তারে মনে রাখবো? যেইখানে রিপ্রডাকশনের কোন পসিবিলিটি নাই, তারে উৎপাদন বলাটা যেমন, এইটা সেইরকমই একটা ব্যাপার। তাই ভুলেই গেছিলাম।
৮.
যখন দেখা হইলো আট বছর আগে একদিন, হঠাৎ কইরাই এক ফ্রেন্ডের বাসায়; শি ওয়াজ উইথ হার হ্যাজব্যান্ড অ্যান্ড উইথ হার রিয়েলি রিয়েলি প্রিটি ডটার। তাঁর চোখের দিকে তাকাইয়া দেখতে পাইলাম আমি – হৃদয়ের কামনা-ব্যথা, শরীরের নদী, নক্ষত্র, রাত্রির অগাধ বন, শাহেরজাদী, এখন সকাল, এইসব। আর দেখি, আমার চোখের দিকে তাকাইয়া আছে শে, স্ট্রেইট।
আমি ভাবার চেষ্ট করি ব্যাপারটা কী রকম না; আপনার বউ-বাচ্চা আছে, চাকরি বাকরি করেন অ্যান্ড স্টিল একজন ব্যর্থ প্রেমিক হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে থাইকা যাইতেছেন! শে আসলে আমারে কোনদিনই ভালোবাসে নাই, হয়তো কৌতুহলী হইছিলে যে, হায় হায় এই বয়সেও মানুষ প্রেম চাইতে পারে, স্কুল-কলেজ-ইউনির্ভাসিটি-বিয়া-বাচ্চা পার হইয়া! শরীরের আর কি থাকে তখন, কেন প্রেম? জীবনানন্দের আবিষ্কারযোগ্য বিপন্ন বিস্ময় থাইকা যাওয়ার পরেও একটা শরীরের কল্পনাই শরীর থিকা কেন বাইর হইয়া যাইতে চায়?
আর একটা জিনিসটা যদি আমি ব্যাখ্যাই করতে পারি, তাইলে সেইটা ত ব্যাখ্যাই; জিনিসটা ত আর থাকে না। ভাইঙ্গা যায়। শত-হাজার-লাখ টুকরার ভিতর খালি সম্ভাবনাই, ঘটনার।
৯.
নৌকায় কইরা যাইতেছি। আমি আর শি। সন্ধ্যা হইয়া আসছে। রাস্তায় কেউ একজন কইছিলো যে, রাত এগারোটা পর্যন্ত নৌকা থাকে। কিন্তু ঘাটের রাস্তা চিনতাম না আমরা। দুইজন দুইদিক থিকা আসছি। ঘুরতে ঘুরতে একটা বাসায় আইসা দেখা হইছে, কাজই ছিলো আমাদের; তারপর ফিরতেছি একসাথে। আরো একজন মেয়ে ছিলো, অফিসের; তারে রেখে আসছি, শে হয়তো অন্যভাবে আসবে বা থাইকা যাবে ওইখানেই। ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়া রাস্তা। নৌকায় আগে আরো দুইজন বসা ছিল। আমি কইলাম, আর ওয়েট না কইরা ছাইড়া দিতে; দরকার হইলে না হয় আরেকটু বেশি টাকা দিলাম। মাঝি একটু বয়স্ক। হাসলো।
সেইখান থিকা আরেক ঘাটে। আরেক নৌকায়। হাতিবান্ধায় না মনে হয়, চিলমারি’তে পৌঁছাইলাম।
বাসে কইরা ঢাকা আসছিলাম। সারা রাস্তা ঘুম। কিছুই খেয়াল করতে পারি নাই।
শি’র সাথে নৌকায় বইসা আছি। মনে আছে, এইটুকুই।
এপ্রিল, ২০১৪।
*শিরোনামটা কমলকুমার মজুমদারের কাছ থিকা নেয়া।
Leave a Reply