গ্যাংস্টার

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্যাংস্টারে বিভক্ত পৃথিবী। ক্ষুদ্র মানে ঠিক ছোট না, পৃথিবীও আসলে দুনিয়া না। লিমিটেড অর্থসম্পন্ন তারা, লিমিটেড কোম্পানীর মতোন। সবই ত লোনলিনেসেরই ব্যবসা। আসে, যায়; খাবি খাইতে খাইতে পইড়া যায়; মাঝে মাঝে যেমন, তব দেখা পাই। রবীন্দ্রনাথের কথায় অর্ণবের সুরে, ফিউশন গানের মতোন। কোনটা হয়, কোনটা হয় না। টাকা-পয়সাও মাইর যায় অনেক সময়। তারপরও ব্যবসা ত; চলতেই থাকে। এইরকম একটা ছোটখাট গ্যাংস্টার গ্রুপ চালাই আমি।

চোলাই মদ খাই, কাওরান বাজারে কাঠের দোকানগুলাতে বইসা। মাঝে-মধ্যে রাস্তা পার হয়া সোনারগাঁ’তে যাই। তখন শার্টের উপ্রে জ্যাকেট’টা পড়ি। ফ্রেবিকটা ওলের; যার ফলে সামারেও পড়া যায়। এই ফর্মাল ড্রেস পড়ার পরে একটা স্ট্যাটিক বয়সে আটকাইয়া যাই, হইতে পারে ত্রিশ। আমার বয়স আর বাড়ে না। ইউনির্ভাসিটি পাশ কইরা খালি চাকরিতে ঢুকছি, মাল্টি-ন্যাশনাল। এইরকম একটা ফিলিংস হয়। জেমসের গানের মতো উরাধুরা লাগে, নিজেরে মনে হয়, আন-নোন। কোন পাস্ট নাই। বড় হইছি শহরেই; কোন গ্রামের বাড়ি নাই। প্রতিবছর ঈদে ঢাকা ছাড়া লাগে না। দূরের কোন মামুবাড়ি আছে খালি, নোয়াখালি বা কুমিল্লায়।

একটা রাস্তা পার হইলেই কী চেইঞ্জ! নদ্দা আর বারিধারা; বাড্ডা আর গুলশান এরিয়া। দুইপারে দুইটা দুনিয়া।  

এইরকম রাস্তাগুলায় রিকশাও চলে, মাঝে-মধ্যে। শরীরের কাছ দিয়া গেলে মনে হয়, শালা, শুয়োরের বাচ্চারা! উহারা কেন ঢাকা শহর ময়লা করে? প্রমিত ভাষার লেইন মাইনা এরা চলতেই পারে না। গা ঘিন ঘিন করে। এইসব সেমি-যন্ত্রে আসলে চলবো না; যদিও ব্যাটারি’র রিকশা আসছে, তারপরও রিকশা-ই ত; গাড়ি ত আর না! শালারা, আবার লুঙ্গিও পড়ে! হাউ গ্রাম্য তারা! ইংরেজী বলতে পারে না, কিন্তু বুঝতে পারে, কিছুটা। পিছনে বসা আমাদের কথা-বার্তা শুইনা শুইনা এখন নাগরিক হয়া উঠতে চায়। আমাদের ঢাকা শহরে তারা যে আছে আসলে এক ধরণের অবসর-বিনোদনও এইটা। বিদেশীদের দেখাইতে পারি আমরা। ওই দেখো, ওইটা না রিকশা! এখনো মানুষ মানুষরেই টানে। সভ্যতা আর বেশিদূর আগাইতে পারলো না! এইরকম বিষাদ যদি উহাদের পছন্দ হয়া যায়, তখন গিফটও করা যায়, রিকশার মিনিয়েচার।

এইজন্য আড়ং থিকা রিকশা’র একটা শো-পিস কিনছি। যাত্রা’তে যাওয়া হয় নাই, ওইখানে হয়তো বেটার কিছু পাওয়া যাইতে পারতো। হাজার হোক গান গান, মালিক যিনি, মহিলা; সেন্স অফ অ্যারেস্ট্রোক্রেসি থাকার কথা। শিল্পী-সাহিত্যিক না হইলে এইসব আসলে থাকে না। ফকিন্নির পুতেরা এইগুলা পারে না। চেষ্টা করতে পারে অবশ্য। আমার মতো। কিন্তু ধরা খাইয়া যায়। রিসিপশনের বাটপার’টা যেইরকম টের পাইছে। এইজন্য আমার দিকে তাকাইয়া হাসতেছে, পোলাইটলি। আরে ব্যাটা, তর পাছা-মারানির হাসি দেখার লাইগা ত বিদেশীরা আছে; তুই অদের দেখাইয়া হাস; চয়েস করবো নে। না সেইটা না; সে আমারে ফিলিংসটা দিতে চায়; ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর মাইয়ে হাত দিয়া যেমন ভাবছিলেন রবীন্দ্রনাথ; আমি ত তোমারে চিনি, ওগো বিদেশিনী!

চা’য়ে চিনি দিবেন না। – এই কথা আমি বইলা ফেলছিলাম ওয়েটারের বাচ্চারে, এইটা সে বইলা বেড়াইতেছে এখন। মানে, যারা এইখানে আসে তারা সবাই যে এখনো প্রমিত হইতে পারে নাই, দুই একটা বাদ্দাইমাও আছে, এইটা উহাদের শান্তি দেয়। নিজেদের অস্তিত্বের প্রতি যে ঘৃণা, তারে এস্কেইপ রুট দেয়। আরে শালার বাদ্দাইমারাই এইখানে বেশি আসে; আমরার মতো আদব-কায়দা শিখতে পারে নাই এখনো, এইরকম আনপড়। তা না হইলে তরার এই সোনারগাঁ অরিজিনাল ভাঙা-চোরা সোনারগাঁ হয়া থাকতো, নারায়ণগঞ্জের।

আনপড় হইতে আমার কোন সমস্যা নাই। কাম হইলেই হইলো। এইগুলা ইগনোর করাটাই ভালো, সামাজিক সমস্যাগুলা। শামীম ওসমান নিয়া গল্প লিখার কি কোন মানে আছে? উনারে ত এমনেই গল্প বানাইছে সাংবাদিকরা গ্যাংগস অফ ওয়াসিপুর দেইখা। ওইটাও গডফাদারের ডিজায়ারড কপি। রিয়ালিটি ডাজেন্ট এগজিস্ট; রিয়ালিটি ক্যান বি ক্রিয়েটেড অনলি। এই ওয়েটার বানাইতেছে, রিসেপনেসিস্ট বানাইতেছে, আমি বানাইতেছি। কল্পনাই বাস্তব আসলে। কল্পনাতে ভাসতে ভাসতে আমি চইলা আসছি, সোনারগাঁ’তে; কাওরান বাজার পার হয়া। এখন বইসা আছি। একটা সিঙ্গল সোফাতে। সামনে টি-টেবিল। ফর্সা শাদা চা’এর কাপ। বোবা জিনিসগুলা, বুঝতে পারে ঠিকই; কিন্তু কইতে পারে না! পাঠকের মতো। যেই কথা বোঝা গেলো, কিন্তু বলা গেলো না তার আর ভ্যালু নাই কোন; এমনকি বইলা ফেললেও দেখা গেলো যে, যা বলা হইছে, তা আর বলতে পারার ভিতরে নাই। প্রকাশ মাত্রই বিভ্রম। এইরকম প্রমাণ ত মাহমুদুল হকও কইরা গেছেন না! কিন্তু যারা প্রকাশে বিহ্বল ও সক্ষম, তাদের মাস্তানি দেখার মতোন। তারা যে প্রকাশ্য, এইটাই এনাফ আর এই বেসিসেই বোবা জিনিসগুলার উপ্রে যত অত্যাচার।

কিন্তু আমি না-বললেই আমার-না-বলা ত আরোবেশি কইরা থাইকা যায়!

সোনারগাঁ’তে আসলেই বোবা টগরের কথা মনে হয়। সে আসলে ঠিক বোবা না। কথা কইতে পারতো। ইউনির্ভাসিটিতে যখন ভর্তি হইলো, তখন উহার স্বপ্ন ক্যাডার হইবো; ছাত্রদলের। আমরা ত অবাক; এইটা স্বপ্ন কেমনে হয়! পরে সে আমরারে বুঝাইলো, এইটা আসলে স্বপ্নও না ঠিক, রিয়ালিটি যা সে এচিভ করতে চায় বা করতে পারে। আমরা তারে বুঝাইলাম যে, এইটা রিয়ালিটি হইলে ঠিক আছে, আমরা ব্যাটা গরিবের পোলা, ফরচুন ফেভার করছে বইলা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আইসা উপস্থিত হইয়া অদ্য বৃষ্টি-বৌধিত বিকালবেলায় ডাঃ মিলনের স্কাপচারের রডে বইসা বাদাম খাইতে খাইতে এইসব নিয়া তৎসম শব্দে কথা কইতে পারতেছি। যেইটা স্বপ্ন সেইটারে রিয়ালিটিতে ট্রান্সফর্ম করাটা ঠিক হইবো না। আমাদের ইল্যুশনগুলারে আমাদের কনটিনিউ করা দরকার। ভাইরে, বেকুবি করিস না! তখন সে খুবই অ্যাডামেন্ট। বুঝতে পারে নাই যে, কাটা রাইফেলের গুলি’র কোন ঠিক ঠিকানা নাই; একদিকে ফায়ার করলে শালা আরেকদিকে যায়। সুবিমল মিশ্রের আজাইরা বইগুলা ত সে পড়ে নাই। তার রিয়ালিটিরে সে অ্যাচিভ করছিল ঠিকই; তার গুলিরে সে কন্ট্রোল করতে পারে নাই। কেমনে কেমনে জানি, সনি’র দিকে সে চইলা যায়। তখন টগর আসছিলো টুকু ভাইয়ের লগে দেখা করতে সোনারগাঁতে। টুকু ভাই আসতে পারেন নাই, উনি ডিবি পুলিশরে পাঠাইয়া দিছিলেন।

যা-ই হোক, এইসব ছোটখাট রিয়ালিটি নিয়া কে আর ভাবে; বিশেষ কইরা অ্যাবষ্ট্রাক্ট টাইপের গল্পে।

আমি আর জুয়েল একলা একলা ঘুরতে ঘুরতে ভাবছিলাম যে, জেলে দেখতে যাওয়া দরকার বাবলুরে। যদিও ওর রাজনৈতিক সহকর্মীরা আছে। আর আমি ফুকো পড়ি নাই তখনো। ভাবছিলাম যে, যাবোই যেহেতু একটু গাঞ্জা নিয়া যাই; জেলখানায় সাপ্লাই পায় কি না পায়। আর গাঞ্জা নিয়া আসার পথেই, রাস্তার ওইপার থিকা আসতে আসতে দেখি জুয়েল হঠাৎ কইরা নাই, একটা সাদা প্রাইভেট কার চইলা যাইতেছে। আমি দেখলাম ও রাস্তা পার হইয়া আইতাছে। আমি নেভি কিনতেছি পাঁচটা। পলাশীর মোড়ে।

তারপরে সময়টা জাস্ট ভ্যানিশ হয়া গেলো।

রাস্তা পার হওয়ার ট্রমা আমি এখনো কাটাইতে পারি নাই। দুইটা দিন জুয়েল খালি হাসে। জুয়েলের আব্বা আমারে দেইখা কয়; বাবা বুঝছি, তোমার কোন দোষ নাই। আমি কনফিউজড; গাঞ্জা কিনার কথাটা কি আমিই কইছিলাম? নাকি আমার বেদনা দেইখা, জুয়েল কইছিলো যে, ল, একটু গাঞ্জা কিইনা লইয়া যাই, শালার পুতের লাইগা। ইন অ্যানি কেইস, আমারেই ত আসতে হয়, সোনারগাঁয়। ঘটনাটা ফেইস করতে হয়। কাম হোক বা না-হোক।

বইসা থাকতে থাকতে ওয়েডিং ফর গডো’র একটা ফিলিংস হয়। এইটা সত্যি না আসলে। ব্রেখট এইটারে আটকাইয়া দিতে চাইছে, যাতে ইল্যুশনাটারে আমরা আর মাইনা না নেই; যাতে অ্যাকশনে চইলা যাই। সে ত নিজে যাইতে পারে না। এই কারণে কয়, পাঠক, আপনে ত ডরিয়ান গ্রে; মাগিবাজী করেন আর নেশা করেন। হাততালিও দিতে পারেন। গল্পের ভিত্রে আপনার বয়সরে আমি নিয়া নিছি; আপনে চাইলে এখন অল্পবয়সী বিপ্লব করতে পারেন! আমি জানি, এইটা সত্যি না; অস্কার ওয়াইল্ড এই কারণেই কমেডি লিখছেন ট্রাজেডী না লিইখা। সেলফ অ্যান্ড আদার মিচুয়ালি এক্সক্লুসিভ কোন এনটিটি না। এইটারে এতদূর পর্যন্ত ঠেইলা দেয়াটা ঠিক হইবো না।

টগর হাসে। কয়, তুই ব্যাডা একটা লাইনেই সনিরে মাইরা ফেলতে পারলি। একটা লাইনেই তুই আমার জেলখানারে দেখাইতে পারলি; তুই-ই পারবি শহীদুল জহির হইতে। সচিবালয়ে গেলে কিছু কাজকাম দিস, শহীদুল ইসলাম নামে। টগরই আমারে ফার্স্ট কামটা দিছিলো। বিশ্বাস করতে পারে নাই প্রথমে। কল্পনার কাঁটা ওর ছিল আসলে, রিয়ালিটির ভিতরে। পরে দেখলো যে, আমারে কাজটা দিলে সে তার কাজগুলাতে মোর কনফিডেন্টলি মনোযোগ দিতে পারবে। সে হয়তো ওভার-কনফিডেন্ট হয়া পড়ছিলো। বা ভাবছিলো যে এইটা ছিল লাস্ট চান্স, ফার্স্ট হওয়ার; আর সে এইটারে এচিভ করতে চাইছিলো, এট অনি কস্ট। গুলিটাই খালি বিট্রে করলো।

কাস্টমাররা যেমন বিট্রে করতে পারে, নিজের লোকেরাও করে। সব সম্ভাবনারে ত আর আপনি ডান্ডাবেরি পরাইতে পারবেন না। এখন যেমন, গডো সাহেব আইতেছেন না। বিডি আসলেই উনারা স্যার হয়া যান, টাইমের ঠিক থাকে না। মিটিংয়ে সবসময় মিনিমাম দশ মিনিট পরে ঢুকতে হইবো। বিশ মিনিট হইছে। সুতরাং তিনি আসতেছেন। স্লিম-লম্বা বডিখান। চামড়ার রং দেখলেই ইজ্জত দিতে ইচ্ছা করে। রাণী এলিজাবেদ গেছেন কয়েকদিন আগে আয়ারল্যান্ডে কাঁচাবাজার করতে; ওইখানের এক সব্জিওলা’র ছবি ছাপাইছে পত্রিকায়, দেখলেই জুড ল’র মতো লাগে।

সেই সব্জি-পাচারকারী জুড ল আসতেছেন। আমি ক্ষুদ্র গ্যাংস্টার। তারে দেখি। হ্যান্ডশেক করার লাইগা উইঠা দাঁড়াই। টগর দেইখা হাসে। ইয়াংরা যেইরকম আঙ্কেলদেরকে দেখলে হাসে। বয়স বাড়তে থাকলে হয় কি যে কন্ট্রোল লুজ হইতে শুরু করে; যা যা মানুষ করতে চায়, তা আর করতে পারে না ঠিকমতো, গু-মুত বাইর হয়া যায় বা ফেইসবুকিং বাইড়া যায়, এইরকম। আবার অনেকে এইরকম কন্ট্রোল যে করতে পারলেন, ওইটারেই মনে করতে পারেন, লাইফ। ঠিকঠাকমতো যে বাঁইচা আছেন, সেইটার প্রমাণ; মানে স্বাভাবিক বইলা এর বাইরে কিছু নাই আর।

অ্যাজ অ্যা গ্যাংষ্টার আমি টগররে পাহারা দেই। যাতে সে রিয়ালিটি আর ড্রিমরে কোনভাবেই পলিউট না করতে পারে। বারবার গিট্টু লাগায় সে। অনেকটা পরিবেশবাদীদের কাজ যা আমি করতে চাই বা করতেছি এইখানে। জুড ল চইলা আসছেন একদম আমার সামনে।

‘গডো কই?’ তিনি জিগান আমারে।

‘উনি ত ইন্ডিয়ায় গেছেন।’ আমি কইলাম।

‘উনার লগে ত কারোরই দেখা হয় না শুনি!’ কমপ্লেইন করলেন উনি।

আমি এর মৃদু প্রতিবাদ জানাইলাম, মানববন্ধনের মতো যে, ‘না, না এর আগেরবার যিনি আসছিলেন তার সাথে দেখা হইছিল তো। এর পরেরবার যিনি আসবেন তার সাথেও দেখা হবে। কয়েকদিনের লাইগাই গেছেন উনি ইন্ডিয়ায়।’

উনি নিশ্চিন্ত হইতে পারেন না তারপরেও, কন ‘দেইখো, আবার শামীম ওসমানের মতো ভজঘট পাকাইয়া ফেইলো না!’

আমি ব্যাপারটারে হাল্কা করার চেষ্টা করি, ‘আরে, এদ্দূর পর্যন্ত যাওয়াই লাগবো না। আপনি দেইখেন।’

উনি বিরক্তই হইলেন এই কনভারসেশনে। হইতে পারে পূর্বরাত্রির হ্যাং-ওভার অথবা এটলিস্ট পুরান ঢাকার শহীদুল জহির’রে তিনি এসপেক্ট করছিলেন, যিনি মগবাজারে থাকেন অথবা আমারে কুষ্টিয়ার জহির হাসান ভাইবা নিছেন। এইরকম হইতে পারে। আমি উনারে মাফ কইরা দিলাম। টগরের ইল্যুশন নিয়া যেইরকম চিন্তিত ছিলাম একটা বয়সে, এখন আর সেইটা হই না। আমি জানি যে, যে যার ইল্যুশন নিয়াই থাকে। কাফকা পর্যন্ত আছিলেন। বোর্হেসরা ত এইসব রি-ইনভেন্ট করতে গিয়াই অন্ধ হয়া গেছেন। এইসব ব্যাপার না। তিনি আমারে তার আইপ্যাড দিয়া ব্রিফ করেন। আমি আমার সামসাং গ্যালাক্সি নোট দিয়া বুঝতে থাকি। ছয়টা বুলেট থাকবে পিস্তলে, কিন্তু কাজে লাগবে আসলে যে কোন একটাই।

 

দুই 

জাহাঙ্গীরনগরের স্টুডেন্ট বাসে কইরা যাইতেছি। গাবতলী, আমিনবাজার পার হইয়া সাভার বাজারে আইসা থামছি। এইরকম একটা মাঝামাঝি অবস্থা গল্পের। ভাবলাম যে বিরতি নিলে ভালো, পর্ব-বিভাজন অথবা চোলাই-মদ বিরতি। হোয়াট আই ওয়াণ্ট আসলে প্ল্যানটা করা দরকার। যাদের সাথে চুক্তি-ভিত্তিক কাজকাম করি, তাদেরকে ডাকলাম আবার, কাওরানবাজারে। পুরান ঢাকায় আর যাওয়া যাইবো না। সময়ের চাইতে জায়গটা ইর্ম্পটেন্ট বেশি। টাইমের ওপর ত হাত নাই আপনার। ইট ক্যান ওয়েট।

হয় কি, যখন আপনি ঘটনার ভিত্রে দিয়া যাইতে থাকেন তখন ঘটনা আরো স্পষ্ট হইতে থাকে। একটা ঘটনারে ঘটনা হিসাবে মাইনা নেয়াটা হইতেছে সবচে’ কঠিন কাজ। মানুষ বাঁইচা থাকতে চায় তার ইগনোর করার ক্ষমতার ভিত্রে অ্যান্ড সাডেনলি ঘটনার চাবুকে সে মারা যায়। ব্যাপারটা এইরকমই প্রায়। ঘটনার দিন শুক্রবারই বেস্ট। জুম্মার পরে রাস্তা-ঘাট কিছুটা ফাঁকা। সোহেলও এগ্রি করলো যে, ইয়েস, উই ক্যান ডু দ্যাট। বাবুও চুপচাপ, মানে তারও সম্মতি আছে। বাবু হিন্দু-সম্প্রদায়ের লোক আর সোহেল মুসলমান। যেই কাজে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য প্রতিষ্ঠা পাইছে, সেইটা ত ভয়ংকর ব্যাপার, ইভেন সাম্প্রদায়িকতাও নাই! এইরকম আইডোলজিক্যালি পারফেক্ট সিচুয়েশনে সন্দেহ হয় আসলে। পরে ভাবলাম, মাইনষে কাজকামই পায় না এই সিজনে; সুতরাং এইটা নিয়া সন্দেহ করাটা ঠিক হবে না। তারপরও শ্বাস নেয়ার লাইগা বেহুলার বাসরেও একটা ফুটা রাখা ছিল, সন্দেহ সেই ফুটা দিয়া আসতে থাকে। যা-ই হোক, উই ক্যান ইগনোর দ্যাট ফর অ্যা হোয়াইল। এই যে, উই কইলাম আমরা, এইটা আননেসেসারি, সন্দেহ এই কারণেই।

সন্দেহের ভিতর দিয়াই ঘটনার জন্ম এবং একটা ঘটনারে মাইনা নিতে পারটাই আসলে বাস্তবতা। আর বাস্তবতা সবসময় সন্দেহজনক। বাবু সন্দেহ করতেছিল, বলতেছিল, আমি যদি গাড়ি চালাই, তাইলে গুলিটা কেমন করবো! আর ব্যাপারটা পাবলিক প্লেসেই কেন ঘটতে হইবো! এখন এইসব আজাইরা প্রাইভেট-পাবলিক বিতর্কে যাওয়া যাইবো না; এইখানে উত্তর দিয়া স্যাটিসফাই করার কিছু নাই। স্যাটিসফাই করতে হবে কনফিডেন্স দিয়া, অ্যাকশন দিয়া।

জুম্মার নামাজ শেষ হইছে। গ্লোরিয়া জিনস পার হয়া সে চলে যাচ্ছে বামে, গুলশান এক নাম্বার মার্কেটের দিকে। ওইখানে তাঁর পাজেরোটা পার্ক করা। এট্টুক পথ হাঁইটা যাবে সে। পয়সাওয়ালা লোকরে আসলে মারতে হবে তার মিডলক্লাস স্বভাবে। হাওয়া বয় শন শন; পাতারা কাঁপে! এই দুপুরে। তার পিছনে গাড়ি নিয়া আগাইতেছি আমি। মোবাইলের স্ক্রীণের দিক তাকাইতে তাকাইতে সে চইলা যাচ্ছে। তখনই আমার মনে হইলো, কেন আমি! আর গুলিটা কেন দিলো, জুড ল আমারে। আরে, বিপদে ত আমি। গুলি ত করা যাইবো না! তাইলেই আমি কট; টগর হয়া যাবো! গুলিটা করলাম আমি তার বাম পা’র দিকে। দৌড়াইয়া সামনে চইলা গেলো সে। বামে না গিয়া। ডানপাশে, আলমাসের সামনে দাঁড়াইয়া থাকা, বাবু’র চোখে অবিশ্বাস; সে বুঝতে পারছে এই মিস করাটা তারে বাটে ফেলে দিছে; সে কেন গুলি করবো? ক্লাশে নাইনে ওইঠাই তার ইন্ডিয়া চইলা যাওয়ার কথা। নরেন্দ্র মোদী ত তার অনেক পরের ঘটনা! সোহেল ত শালা ভ্যাবাচাকা খাইয়া গেছে। আমি গাড়িটা ঘটনার উপ্রে তুইলা দেই। ছিটকা গিয়া সামনে পড়ে সে। সিগন্যালের লালবাতি নিভে গেছে। হলুদও নাই। এখন সবুজ সবকিছু। বেশ আগে থিকাই। বাড্ডার দিক থিকা নিশ্চই একটা বাস আসবে; সে ওঠতে পারার আগেই তারে উল্টাইয়া নিয়া ফেলবে আবার মহাখালীর দিকে!

 

তিন

টগর হাসে। কয়, তুই ব্যাডা একটা লাইনেই প্যাঁচ ছুটাইয়া দিলি। একটা লাইনেই তুই ঘটনা ঘটাইয়া ফেললি। তুই-ই পারবি ফিকশন লিখতে। কয়, আর হাসে। ননফিকশন ব্লগের লিখা থেকে।

 

চার

এই আজিব খবর যখন ঘটনা হইতে গেলো, পত্রিকা অফিসে। গোলাম রসু খাঁ কইলেন, এইটারে আপনারা ফিকশন কইবেন কোন সাহসে! মানে, মোটামুটিরকমের সাহস দেখাইতে পারলে, বলা যাইতে পারে।

সরোবরে হাঁস, ভাসিতেছেন মনের সুখে; ডুইবা থাকলেন তিনি; ন্যাচার ইজ অ্যাজ অ্যা ডিজাস্টার যেহেতু; কইলেন, কই কই কি কি কয়, দেখলামই না যে!

যে দেখলো, সে কয়, দেখলাম না, বাল (ল’র জায়গায় * চিহ্নও দেয়া যাইতে পারে); ত, কী করবেন!

রাজা শাহ জামাল; সিগ্রেট খান না এমনিতে, তাও ধরাইছিলেন একটা, ধোঁয়ায় গেলেন ভাসি। ইনডোর্সমেন্টই ত চায়, নাকি! ওইটা থাক। অন্য পত্রিকাগুলা এইটা নিয়া নিউজ করলে তখন আগামীকাল দেশের খবরে ছাপাইয়া দিও। এই ঘটনারে।

***

ততদিনে গডো ফিরা আসছেন আসলে ইন্ডিয়া থিকা। আমার কাজ ভাড়া খাটা। খামাখা। ছোটখাট গ্যাংস্টারের কাজই এইরকম। অনুল্লেখিত। ব্যক্তিগত ডাইরির মতোন। কোনদিন এমপি ত আর হইতে পারবো না! এইরকম বেদনা।


পাঁচ

আমি ভাবি, ইন্টারপ্রিটেশনটা আসলে এইরকম: এমন না যে আমি ন্যারেট করতেছি বা ন্যারেশনটা আমারে তৈরি করতেছে; টেক্সটের  ভিতরে আমি আমি’রে দেখতে পাইয়া তার সাথে মিলতে চাইতেছি। এতে কইরা অনেকগুলা আমি বাইর হয়া আসতেছে। আর চইলা যাইতেছে, আবার। টেক্সটে ভিতর। বারবার, প্রায় একইরকম।

 

Leave a Reply