বিয়া নিয়া আমার তেমন কোন টেনশন ছিলো না। একটা হইলেই হয়। এমনকি যার সাথে বিয়া হইলো ফোনে ফোনে, তারেও কেমন জানি বউ বউ লাগে না। জন্ম দিলেই যেমন বাপ হওয়া যায় না, বিয়া হইলেই তো আর কাউরে বউ লাগতে পারে না। মেয়েটা চাকমা। আম্রিকায় থাকে। মেয়েটা দেশে চইলা আসতে পারে বা আমিও যাইতে পারি। ভাবি নাই তেমনকিছু। আব্বা-আম্মা হয়তো ভাবছে।
একদিন হুট কইরাই বিয়াটা হইলো। মাস্টার্স পাস কইরা বইসা আছি। চাকরি করতে ইচ্ছা করে না। আর বাপের টিনের ব্যবসায় বসতে মন চায় না; বাপও চায় না। কয়, মাস্টার্স পাশ করাইছি কি ব্যবসা করার লাইগা নাকি! বলার টোনটা এইরকম, আমি ম্যাজিস্ট্রেট টিএনও হবো। আমিও বিসিএসএস দেয়ার ভান করতে করতে পেরেশান। ভাল্লাগে না আর বাল। কিন্তু আমি জানি, ঘটনা আসলে অন্য। ছোট আরো দুইভাই আছে আমার। মাইঝাটা তো ছোট থিকাই ব্যবসায়। ছোটটাও পড়ালেখা করে না। আলাদা ব্যবসা করতে চায়। এরমধ্যে আমি ঢুকলে সমস্যা। আগে থিকাই আমি ফ্যামিলির বাইর, এখনো একই। খারাপ লাগে না আমার। একই তো ব্যাপার।
যখন চাকরি-বাকরি হইতেছে না, আম্মা তো কান্দে মামারা’র কাছে। বড়মামা কইলো, বিযা করাইয়া দেন! বড়মামা আম্রিকায় থাকে অনেকদিন। উনিই ব্যবস্থা করলেন। উনাদের কমিউনিটিতে মেয়ের বাপের প্রেস্টিজ আছে। এরশাদ ফল করার পরে বড়মামা পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম নিছিলেন, কিন্তু মেয়ে’র বাপ স্কলার মানুষ, আদিবাসী ক্যাটাগরিতে গেছেন মনেহয়। মেয়েটার চেহারা ভালোই। আমার ডিসিশানের কিছু নাই। ফোনে ফোনেই বিয়া হইয়া গেল। বিয়ার পরে ভিডিওতেও চোখ চাওয়া-চাওয়ি হইলো কিছুক্ষণ। সবাই খুব হাসাহাসি করতেছিল। আমরাও (মানে, আমি আর আমার বউ) হাসি-হাসি মুখ নিয়া বইসা ছিলাম, ভিডিওক্যামের সামনে। বড়মামার পোলার বিয়াও এমনেই করাইছিলেন। বড়মামার কোন তাড়াহুড়া আছিলো মনেহয়। আম্মা্ও কুইক রেন্টালের মতো সলিউশনে গেছিলেন। আব্বা তো মহাখুশি। উনার বিয়াই আম্রিকান। চাকমা যে এইটা আর কাউরে বলেন নাই।
তো আমি যাবো নাকি বউ আসবে – তাড়াহুড়ার কারণে এইটা আর ঠিক করা হয় নাই। বিয়া হইয়া গেলে এইটা তো ঠিক করাই যাবে। এইটা তো কোন ঘটনা না।
আমার বউয়ের ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিল। আমারটাও ওর কাছে। কিন্তু আমরা কেউ কাউরে ডিস্টার্ব করতাম না। কি দরকার খামাখা!
বছরখানেক পরে আম্মার হঠাৎ মনে হইলো, কি রে ঘটনা দেখি আগায় না! একদিন বেশ ডরাইন্না মুখ নিয়া আমারে জিগাইলো, কি রে বউয়ের লগে তোর কথা হয় নি? আমি কইলাম, হ, হয় তো। আম্মা কইলো, বউ কি কয়? দেশে আইতো না? আমি কই, না লেহাপড়া তো শেষ হয় নাই, অহনো তো বয়স কম। সামনের বছর পরীক্ষা শেষ হইলে আইতো পারে। আম্মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কিছু আর কয় না। পরে বড়মামা’র লগে প্যান প্যান করে। বড়মামা কয়, এইগুলা নিয়া আপনে এতো টেনশন কইরেন না। এখনকার পোলাপান নিজেরাই এইসব ঠিক কইরা নিতো পারবো। বড়মামা ওভার কনফিডেন্ট। কিন্তু আম্মা ভরসা পায় না খুবএকটা; কয়, আমারে পোলারে আমি চিনি না! পাতে যদ্দূর ভাত দেই, ততদ্দূরই; কোনদিন নিজের পাতে ভাতটা পর্যন্ত তুইলা খায় না… এইসব কয়। কান্দে।
আমিও ভাবি, আম্রিকা না যাই, কিছু একটা করা দরকার তো। ইউনির্ভাসিটির ফ্রেন্ডরা সবাই চাকরি-বাকরি নিয়া বিজি। বিদেশও গেছে কয়েকজন। মেইনলি কানাডা আর অস্ট্রেলিয়া। আমার বিয়ার খবর শুইনা অনেকেরই মেজাজ খারাপ হইছে আমি বুঝতে পারি। ফ্রেন্ডরা ভাবে, আমার একটা গতি হইয়া গেছে আর সেইটা ওদের চাইতেও বেটার। সবচে বাজে ব্যাপার হইলো, এইটা তো আমি ডিজার্ভ করি না, এই কারণে মেবি অদের আরো বেশি খারাপ লাগে। বিয়ার আগে গেলে যেমন পাত্তা দিতো, এখন আর তেমন একটা দেয় না। বা হয়তো আগে এই চাকরির লাইফে ঢুকতে অদের ইচ্ছা করতো না। এখন আর না-ইচ্ছাটা নাই অদের। চাকরিটা লাইফ হইতে পারছে। আর নিজের লাইফের অস্বস্তি, ঝামেলার কথা বউরেই কইতে পারে। তা না হইলে অফিসের ফিমেইল কলিগরে বা সিনিয়র আপারে। বা ইউনির্ভাসিটি পাশ করা মেয়ে ইর্ন্টানদের দেখলে তো ভালোই লাগার কথা। আমরা ইউনির্ভাসিটি লাইফে এইটা করতাম, ওইটা করতাম… বলতে বলতে ইউনির্ভাসিটি লাইফে চইলা যাওয়া যায়, ইউনির্ভাসিটির ফ্রেন্ডরে চোদা লাগে না আর।
অদেরকে হিপোক্র্যাট ভাবার মতো শান্তি আমার হয় না। আমি ভাবি, এইটাই তো আসলে ওয়ে অফ লাইফ।
আমি বরং স্কুল-ফ্রেন্ড আজিজুলের লগে টাইম পাস করি। রিহ্যাব থিকা ফিরছে সে কয়েকদিন আগে। তারও বউ আছে, লগে একটা বাচ্চাও। বাচ্চাটা অর না। পাড়ার এক ভাবীরে ভাগাইয়া নিয়া বিয়া করছিলো। বউটা খুবই সুন্দরী। আজিজুলও সুন্দর ছিল অনেক। এখন শরীর ভাইঙ্গা গেছে। শরীরের রূপ আর কয়দিন থাকে! কিন্তু আজিজুলের বউয়ের এখনো আছে। আজিজুল আগে টুকটাক নেশা করতো, কিন্তু বিয়ার পরে বাইড়া গেছিলো। আজিজুল বাপ-মা’র একমাত্র পোলা। টাকা-পয়সারও কোন সমস্যা নাই। বাপের বিজনেসে আগে যাইতো মাঝে-মধ্যে, এখন বাপেই আর যাইতে দেয় না, গেলে টাকা কামাই করার চাইতে পাওনা টাকা নিয়া আইসা খরচই করে বেশি। তো, আমাদের দুইজনের স্ট্যাটাস মোটামুটি একই। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, কিন্তু খুবএকটা ইউজ করি না, এইরকম।
সিনেমা নিয়া কমই কথা কই আমরা। পয়লা দিকে কইতাম। তখন দেখলাম ওরও নটিংহিল পছন্দ, আমারও। ওরও দিল চাহতা হে ভাল্লাগে, আমারও। বাট কেয়ামত থেকে কেয়ামতের কথা আমরা কেউই ভুলতে পারি না। একদিন এইরকম ভাবছিলাম যে, মৌসুমীর কোন শ্যুটিং দেইখা আসবো। কারে নিয়া যে কতকিছু ভাবতাম, তারে তো একবার সামনাসামনি দেইখা আসা দরকার… হা হা হা। হাসতে হাসতে আজিজুল জিগায় আমারে, ক্লাশ নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা যখন শেষ হইলো, সিনেমা দেইখা ফিরার সময়, রেললাইনের সাইডে দাঁড়ায়া পেশাব করার ঘটনা’টা মনে আছে কিনা? আমিও হো হো কইরা হাসলাম। অন্ধকারে সবাই যখন চুপচাপ হাত মারতেছিলাম, বাসেত হঠাৎ চিল্লান দিয়া গান গাইতে শুরু করছিলো, ‘মৌসুমী, কারে ভালো বাসো তুমি?’ ভালোবাসা তখন কি যে দরকারি জিনিস ছিলো! ইভেন হাত মারতে হইলেও লাগতো।
সারাদিন এমনে এমনেই টাইম পার হয়। বিকালে বাইর হই। আজিজুলও আসে চা-এর দোকানে। চিপায় বইসা চা খাই আমরা। পোলাপান জানে এইখানে আমরা বসি, অরা একটু দূরেই বসে। রিহ্যাবের গল্প করে আজিজুল। প্রাইভেট জেলখানা অইগুলা। বউয়ের কথা কোনদিনই বলে না। আমিও জিগাই না।
একদিন কিছু ফর্ম নিয়া আসলো ও, ইংলিশে। কইলো, ফিল-আপ কইরা দিতে। খুইলা দেখি, ডিবি ভিসা’র ফর্ম। কি ঘটনা? আমি জিগাইলাম, ও আম্রিকা ক্যান যাবে? কেমন জানি অস্বস্তি’তে পইড়া গেলো; কাঁচুমাচু কইরা কয়, অর বউয়ের এক খালাতো ভাই থাকে, পুরা সেটেলেড অইখানে… অর বউ যাইতে চায়; সেও ভাইবো দেখলো যে, খারাপ না তো ঘটনাটা, যাওয়াই তো যায়। তখন, আমার বউয়ের কথাও অর মনে হইলো; কইলো, তুইও অ্যাপ্লাই কর। তো, করতে তো আর ঝামেলা নাই। দুইজনেই কইরা ফেললাম। পরে চা খাইতে খাইতে ভুইলাও গেলাম।
এরমধ্যে বাড়িতে গ্যাঞ্জাম বাড়তেই থাকলো। ছোট দুইভাইও বিয়া করছে। ছোটটা আবার বাচ্চাও পয়দা দিছে। বিয়ার আগেই মনেহয় ঝামেলা বাঁধাইয়া ফেলছিলো। আব্বা-আম্মা দুইজনেই মহাখুশি। ঝামেলা হইলো, ভাইয়ের বউগুলি খালি টিটকারি মারে। আম্মারে কয়, আপনার বড় বউরে তো আর আমরা দেখলাম না! উনি কি আসবো না? না আইসা আমরারে নিয়া গেলেও তো হয়! আমরা গিয়াই না হয় উনারে দেইখা আসলাম… হি হিহি! এইগুলা শুনলেই আম্মা চেতে। কয়, দেখো, এতো জেলাসি ভালো না! আমার বড় পোলা সবসময়ই অন্যরকম… তোমারার জামাইয়ের লগে আমার পোলারে মিলাইও না। বউগুলা এই ইমোশনাল জায়গাতে আইসা চুপ কইরা যায়। কয়দিন পরে আবার শুরু করে। মাইঝাটার ঝামেলার বেশি। বাচ্চা-কাচ্চা হয় না দেইখা ছেলেমানুষি এখনো যায় নাই। আমার খারাপ লাগে না। অদের বাচ্চামি এইগুলা। অরা যে এতো বড় হয়া যাইতেছে এইটা অরা মানতে পারে না। অরা মনেহয় কিছু একটা টের পায়। আমি আমার ভাসুরগিরি নিয়া বাংলা-ভাষার মতো গম্ভীর থাকার ট্রাই করি। অরা এই দেয়ালটাও পছন্দ করে মনেহয়। মাঝে-মধ্যে বাড়ি দিয়া দেখে, ভিতরটা ফাঁপা হইছে নাকি, ঝনঝন করে কিনা। ফাটল’টা খুঁইজা বাইর করার ট্রাই করে। পরে না পাইয়া হতাশও হয় মনেহয়। অন্য কোন দেয়ালের কাছে যায়।
এর মধ্যে ডিবি ভিসা’র রেজাল্ট আসে। আজিজুল শালা লাকি! ওরটাই লাগে। যাইতে যাইতে অবশ্য আরো দুইবছর লাইগা যায়।
দুইবছর যে কি জিনিস! চইলা যাওয়ার পরে টেরই পাওয়া যায় না।
আমার বউয়ের কথা আমি অলমোস্ট ভুইলাই যাই। আম্মা ভুলে না। তিনটা নাতি-নাতনি তাঁর। এর মধ্যেও মনে কইরা মাসে কয়েকবার আমার বউয়ের খবর নেয়। এখন জোর কইরা আমারেও ধরাইয়া দেয়, কয়, নে, আমার সামনে কথা ক! না-পাইরা কথা কইছি কয়েকবার। আম্মার সামনে নরমাল থাকি সবসময়। আম্মা ফোনটা আমারে দিলে শে জিগায়, ‘ভালো আছেন আপনি?’ আমি সরাসরি তুমি’তে চইলা যাই, ‘তুমি কি করো এখন?’ যেন কয়েকদিন আগেই কথা হইছে, আম্মা যাতে এইরকম বুঝতে পারে। হাসে শে, ভাঙা ভাঙা বাংলায় কয়, ‘আপনার সাথে কথা বলি।’ তারপর শে-ই বলে এইটা ওইটা, আমি হুঁ হ্যাঁ করি। আমার সামনে হাসি-হাসি মুখ নিয়া আম্মা বইসা থাকে। আমিও খুশি, যাক বাবা, একমাসের লাইগা শান্তি!
আম্রিকা যাওয়ার আগে থিকাই আজিজুলের ভাব বদলাইয়া গেছিল। লোকাল ফ্রেন্ডদের সাথে সে যোগাযোগ রাখবে কম, এইরকম ভাব। শালা ডিবি পাইয়াই গ্লোবাল হয়া গেছে! তখন রুম্মান, রাসেল, ফজলুল হক আর বাসেতের লগে আমি খাতির করলাম। সবাই ব্যবসা করে, ফজলুল হক বাদে; ও একটা ব্যাংকে চাকরি করে। বৃহস্পতিবার রাতে আসে আবার রবিবারে সকালে চইলা যায়। অরা মাঝে-মধ্যে মদ-টদের আসরও বসায়। আমার ওইসব খুবএকটা ভাল্লাগে না। আজিজুল যাওয়ার আগে কইলো, বিদেশি মদ পাঠাবে সে সবার লাইগা। যেইদিন বিদায় নিবে, আমারে জড়ায়া ধইরা রাখলো অনেকক্ষণ। ফালতু ইমোশন!
যাওয়ার এক বছরের মাথায়ই সে ফিরা আসলো। বউ-বাচ্চা ছাড়াই। কারো লগেই অর কোন কথা নাই। চা-এর দোকানে নাকি আমারে খুঁজতে আইছিল। অর বাড়িতে গিয়া দেখা করলাম। তারপর থিকা মাঝে-মধ্যে বিকালে হাঁটতে বাইর হইতাম আমরা। অর নেশা নিয়া যেমন কোনদিন কথা বলে নাই আমার লগে, অর আম্রিকার লাইফ নিয়াও কিছু বলে নাই কোনদিন আমারে। আমিও জিগাই নাই। যেই কথা মানুষ বলতে চায় না, সেইটা না জিগানোই ভালো।
আজিজুলের ফিরা আসার পরে মনে হইলো; না, আম্রিকাতেই চইলা যাই। লাইফ তো বাল এইরকমই। ঢাকায় গিয়া এক এজেন্সিরে ধরলাম। অ্যাপ্লাই করলাম। এইগুলা প্রসেস-টসেস হইতে বহুত টাইম লাগে। এই সার্টিফিকেট দাও, সেইটা দাও… আর টাকা-পয়সা তো আছেই। ফ্যামিলিতে কাউরে আর জানাইলাম না। খামাখা টেনশন করবো। একবার ভাবলাম, বউরে জানাবো কিনা। এরমধ্যেই একদিন আম্মা খুব টেনশন-ভরা মুখ নিয়া আইসা কইলো, কি রে তর বউয়ের বলে একটা ঠ্যাং ছোড? আমি কই, কেডা কইছে আপনেরে? আম্মাও কোন উত্তর না দিয়া আবার জিগায়, তুই জিগাইচছ কোনদিন তর বউ’রে? আমি আরো চেইতা গিয়া কই, এইডা কেমুন কথা? ঠ্যাং ছোড হইলে তো নিজে থিকাই কইবো। আর এইডা লইয়া কথা কওয়ার কি আছে! আম্মা বুঝে যে, আমার লগে কথা কইয়া কোন লাভ নাই। নিজের মনে মনেই কয়, এহতেশামরে লইয়া সবসময় আমার মনে কু-কথা ডাক দেয়; ছোড থিকাই ও নিজেরটা বেশি বুঝে… এহতেশাম হইলো আমার বড়মামা। চুপ কইরা বইসা থাকে আম্মা। আমিও একটু পরে বাইর হয়া যাই ঘর থিকা।
আজাইরা যতো সব। আরে ভাই, মাইনষের ঠ্যাং ছোড হইলে মাইনষের কি! ফেসবুকে আমার বউয়ের অ্যাকাউন্টের লগে আমি ফ্রেন্ড হইছি কয়েকদিন আগে। নরমাল পোস্টই দেয় শে, কোন ঝুট ঝামেলায় নাই। ফুল ভালোবাসে আর অরনামেন্ট স্টোরগুলার ডিজাইন শেয়ার দেয়। আজিব আজিব টাইপ অরনামেন্ট আছে দুনিয়ায়। ফ্রেন্ডদের লগে ভালো ফান করে ও। কয়েকটা পোলাও আছে এর মধ্যে। আমার এইসব দেখতে ভাল্লাগে, আবার কেমন একটা বাজে ফিলিংসও হয়। বউ হইছে বইলা কি তার সবকিছু আমার দেখা লাগবো নাকি! এইজন্য খুববেশি যাই না অর ওয়ালে। মোস্টলি অন্য মানুষের জিনিস দেখতেই ভাল্লাগে। ভালগার না হইলেই হইছে জিনিসটা। আড্ডায় গেলেও কে কি কইছে ফেসবুকে, এইগুলা নিয়াই আলাপ। আমার অ্যাপ্লাই করার কথাটা কাউরে বলি নাই। একবার ভাবছিলাম আজিজুলরে বলবো নাকি; পরে আর বলি নাই।
মাইগ্রেশনের আসলে নানান রকম তরিকা আছে। আমি যার মাধ্যমে ট্রাই করতেছি সে আমারে কইলো, বউয়ের মাধ্যমেই ট্রাই করতে। ও অইখান থিকা কাগজ-পত্র পাঠাইলে কোন সমস্যাই নাই। বড়মামা যে পাঠাইবো না এইটা আমি শিওর। কিন্তু বউ’রে কেমনে বলি! বা বলবো কিনা সেইটাই বুঝতেছি না। এর মধ্যে এজেন্সির লোকটাও ফোন কইরা ফলো-আপ করতেছে। আমি কইছি, ভাই টাইম লাগে তো! ওয়েট করেন না একটু! এজেন্সির লোকটা পুরা বোকাচোদা হয়া যায়। কয়, ভাই, মাইনষে আমরারে কয় তাড়াতাড়ি করার লাইগা আর আপনি কন আস্তে ধীরে করতে! আমি বুঝতে পারি, কেন সে আমার লগে ফলো-আপ করে কারণ সে জানে, আমারটা হইয়া যাইবো। তাইলে সে বাকি টাকাটা তাড়াতাড়ি পাইবো। অন্যরার পাওয়ার ব্যাপারটা তো এতোটা শিওর না। বাট আমি ডিসিশানই নিতে পারি না – বউরে বলবো কিনা। মানে, বলা তো যায়-ই। বলাটা আবার কেমন না! সুবিধা নেয়ার লাইগা তো আমি বিয়া করি নাই! আবার সুবিধাটা যেহেতু নেয়া যায় নিবো না কেন! রিলেশনের এই লাইনটা খুবই পাতলা। কখন যে কে কোন সময় লাইনটা ক্রস কইরা ফেলে, টেরও পাওয়া যায় না। বলা যায় দেইখা বলাই লাগবো – এইটা তো কোন কারণ হইতে পারে না।
ভাবি যে, বউয়ের লগে নরমাল কথা-বার্তা শুরু করবো। জিগাবো, শে কি করে যখন ফোনে আমার সাথে কথা বলে না? ওই একবারই তো কইছিল। মানে, ওর সেন্স অফ হিউমার ভালোই হওয়ার কথা। জীবনে কোনদিন বউয়ের কথা ভাবতে হয় নাই আমার। আর এখন একটা দরকারে পইড়া যে ভাবা লাগতেছে এইজন্য একটু অস্বস্তিই লাগে। মনেহয় আমার উদ্দেশ্যটা না বললেও শে বুইঝা ফেলবে যে, আমি আম্রিকাতেই আসতে চাইতেছি। এমনিতে আমি তো ওর সাথে দেখাও করতে চাই না। ও থাকুক ওর মতো, আমার জাস্ট মনে হইতেছে আজিজুলের যাওয়াটা একদিন গিয়া দেইখা আসি। আজিজুল এখন আর ঘর থিকা বাইর হয় না। আমিও যাই না আর। টায়ার্ড লাগে।
একদিন সন্ধ্যাবেলা বইসা ভাবি। বউরে লিইখাই ফেলি। ফোন না করি, ফেসবুকে মেসেজ পাঠাইলাম। শে ভালো আছে। উত্তর শে দিবে তো। এমনো হইতে পারে যে শে-ই কথা বলতে চায়। আমি বলি নাই বইলা হয়তো শে বলে না। তারও তো নিজের অস্বস্তি থাকতে পারে। একটা মেয়ে কি নিজে নিজে আইসা নক করবো নাকি। হাজব্যান্ডের কাছেও তার লজ্জা তো থাকতেই পারে। অথবা লজ্জা করতে পারে বইলাই হয়তো আমারে হাজব্যান্ড ভাবতে পারে। যা-ই হোক, জিনিসটা ভালো হইতেছে না। এতদিন বউয়ের কথা আমি কিছু ভাবি নাই। এখন খামাখা ভাবা লাগতেছে। এমনকি গতকালকে রাতে স্বপ্নেও দেখলাম, বউ’রে মেসেজ পাঠাইছি আমি ফেসবুকে। ‘সিন’ দেখাইতেছে, অথচ বউ কোন রেসপন্স করে না। এমনকি স্ট্যাটাসও দিতেছে। এর ওর পোস্টে লাইকও দিতেছে। মানে, হাজব্যান্ড মনে না করুক, ফ্রেন্ড হিসাবেই শে আমারে ইগনোর করতেছে!
এইটা তো ভয়ংকর একটা ব্যাপার। স্বপ্নের ভিতরই আমার এমন অস্বস্তি লাগতে থাকে! মনেহয় মাইলের পরে মাইল লম্বা ট্রাফিক জ্যামে বইসা আছি। লং রোডে। একবার মনেহয় গাড়ি থিকা নাইমা যাই। পরে দেখি আজিজুল বইসা রইছে স্টিয়ারিং ধইরা। হুড-খোলা একটা গাড়ি। আজিজুলের চোখে সানগ্লাস। ওরে ছাইড়া যাইতে পারতেছি না। আজিজুলও গাড়ি রাইখা কেমনে হাঁইটা যাবে? এইরকম একটা ইনডিসিশানের জায়গাতে আইসা ঘুমটা ভাইঙা যায়।
উইঠা শুনি দুই ভাইয়ের বউ চেঁচাইতেছে। পোলাপানগুলারে নিয়া ঝগড়া-ঝাঁটি লাইগাই আছে। তখনই ডিসিশান নিয়া নেই – এই নরকে আর থাকবো না বাল। ম্যাক্সিমাম আর তিনমাস। এজেন্সি’র সেকেন্ড অপশনটাই নিবো। বউরে আর মেসেজ পাঠাবো না। ট্রেন্ডের সাথে চলতে হবে। বউয়ের খাটো ঠ্যাং ধইরা আম্রিকা যাবো না আমি। লেখালেখিই করবো এখন। সারাদিন তো বইসাই থাকি। অনেক টাইম লস হইছে লাইফে। আর না! বিছানায় শুইয়া শুইয়া ইন্সট্যান্ট শুরু করি। অনেকদিন পরে ফেসবুকে কাঁপা কাঁপা হাতে স্ট্যাটাস লিখি, জয় বাংলা!
Leave a Reply