নোটস: অগাস্ট, ২০২১ [পার্ট ৩]

অগাস্ট ২১, ২০২১

ট্রুথ এন্ড ফ্রিডম

একটা সত্য বা ঘটনা, আপনি কতোটা বলতে পারতেছেন বা পারতেছেন-না, বুঝতে পারতেছেন বা পারতেছেন-না, সেইটার উপরে ডিপেন্ড কইরা কখনোই ঘটে না বা রিভিল হয় না।

কিন্তু ফ্রিডম একই জিনিস না। আপনি যতক্ষণ না বলতে পারতেছেন, অ্যাক্ট হিসাবে প্রাকটিস করতে পারতেছেন, ততক্ষণ সেইটা ফ্রিডম না।

 

অগাস্ট ২২, ২০২১

“হোয়ার টু ইনভেড নেকস্ট”

তিউনিশিয়ার কাহিনি’টা ভাল্লাগছে। (“হোয়ার টু ইনভেড নেকস্ট” ডকুমেন্টারি’টাতে।) একটা মুসলিম দেশ, আফ্রিকার। এবরশন লিগ্যাল অই দেশে। আরো অনেক উইমেন-ফ্রেন্ডলি আইন-কানুন আছে। তো, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরে পিপলের ভোটে যখন একটা ‘ইসলামি দল’ রাষ্ট্র-ক্ষমতায় আসলো, তখন দলের মুফতিদের লগে লিডারদের মত-বিরোধ দেখা দিল। মেয়েরা তো আন্দোলন শুরু করলো যে, ‘সমান অধিকার’ দিতে হবে। এইদিকে দলের লিডার’রাও কনভিন্স করতে পারতেছিল না নিজেদেরকে মুফতিদেরকে; তখন কইলো, ঠিকাছে আমরা তাইলে পদত্যাগ করি! কারণ আমরা তো পিপলের ভোটে ক্ষমতায় আসছি, এখন পিপলের দাবি-দাওয়া যদি মানতে না পারি, আমাদের তো ক্ষমতায় থাকা ঠিক না!

তো, সোশ্যাল অবস্থা যা-ই থাক, রাষ্ট্রীয়ভাবে এবরশন অই দেশে ক্রাইম না, হিজাব পরাও মেন্ডেটরি না। তিউনিসিয়ার যিনি রাষ্ট্র-প্রধান (২০১৪/১৫ সালে), উনি বলতেছিলেন, মানুশ তার নিজের ঘরের ভিতরে কি করবে – রাষ্ট্র তো সেই ব্যাপারে কথা বলতে পারে না। রাষ্ট্র হইতেছে পাবলিক ম্যাটারগুলা নিয়া ডিল করবে।… মানে, এইগুলা ওয়েস্টার্ন ডেমোক্রিসির ঘটনা না, বেসিক ডেমোক্রেটিক নর্মস।

আজকে সেক্যুলার বাটপারিগুলা যখন আমাদের সামনে এক্সপোজড হয়া যাইতেছে, আমরা ডরাইতেছি যে, খুব রিজিড ‘ইসলামি শাসন’ কায়েম হয়া যাইতে পারে বাংলাদেশে; কিন্তু এইটা আমার কাছে প্রব্লেমেটিক মনেহয় না, বরং এই নয়া বাকশালি আমলে পিপলস এজেন্সিগুলা যে পুরাপুরি ধ্বংস করা হইছে, সেইগুলা যেন কখনোই ফোর্স হিসাবে সমাজে এক্টিভ থাকতে পারবে না – সমস্যা হইতেছে এই চিন্তাটা। যদি পিপলের কথা-বলার, কাজ-করার স্পেইস না থাকলে তাইলে সেইটা সেক্যুলার নাকি ইসলামি নাকি কমিউনিস্ট সরকার – সেইটা দিয়া কিছু যায় আসে না, সবকিছু একইরকমের বাজে শাসন হওয়ার কথা।

২.
আরেকটা ইন্টারেস্টিং উদাহারণ হইতেছে, আইসল্যান্ড। দেখানো হইছে, উইমেন-এমপাওয়ারমেন্ট হইতেছে অইখানে হায়েস্ট লেভেলে আছে। আছে দুয়েক্টা আইনের কারণেই। যে, কোন কোম্পানিতে এটলিস্ট ৪০% নারী বা পুরুষ থাকতে হবে! খুবই অ্যামেজিং একটা জিনিস মনে হইছে এইটা। (বাংলাদেশে দেখেন, সরকারি চাকরিতেই কোটা-সিস্টেম বাতিল করা হইছে, বেসরকারি অফিসগুলাতে তো কোন নিয়মই নাই, এইসবের।)

এখন আইন কইরাই এইগুলা এস্টাবলিশড করা যায় না সবসময় (যেমন বাংলাদেশে উত্তরাধিকার আইনে বইনদেরকে এখনো বাপ-মায়ের সম্পত্তির ভাগ দেয়া হয় না, সোশ্যালি ‘লোভী’ ঘটনাও; আমার ধারণা, ‘যৌতুক’ জিনিসটাও টিইকা আছে, এই জায়গা থিকাই), কিন্তু আইন না থাকলে সোশ্যাল বিহেভিয়ারগুলারে ড্রাইভ করাটা মুশকিল হওয়ার কথা। পর্তুগালে যেমন, ড্রাগস নেয়া বা ড্রাগস রাখা ক্রাইম না কোন, বরং এরে ক্রাইম না-ভাবার ভিতর দিয়া ড্রাগস নেয়ার যে সেক্সিনেস, বিপ্লবী-পণা তারে খারিজ কইরা দেয়া হইছে। (আর বাংলাদেশে, ড্রাগস তো কাজে লাগে বিরোধীদলের লোকজনরে ক্রসফায়ারে দেয়ার লাইগা, বা কারো পকেটে ইয়াবা ঢুকায়া মামলা দেয়ার লাইগা।…)

৩.
অবশ্য মাইকেল মুর তো ‘বেস্ট প্রাকটিস’গুলারে হাইলাইট করতে চাইছেন, যার ফলে খুব ‘সুখ-শান্তির’ জিনিস বইলা মনে হইতে পারে, ঘটনাগুলারে। কিন্তু এইরকম যে না, সেইটা মাথায় রাখতে পারলে ভালো। কিছু জেনারেল বেইজ তৈরি না কইরা বিচ্ছিন্ন সব প্রাকটিসগুলা কখনো ইমপ্লিমেন্ট করা-ই সম্ভব হবে না।

#########

নতুন একটা ক্লাস ফর্মেশনের সময়ে আমরা আছি। ন্যাশনালিস্ট-মিডল-ক্লাসের জায়গায় একটা গ্লোবাল-কালচারাল-মিডলক্লাস পাইতে যাইতেছি আমরা। এর ফিচারগুলা দিনে দিনে আরো স্পষ্ট হইতে থাকবে বইলাই আমার মনেহয়। (বুর্জোয়া শ্রেণির ভালো-ভালো জিনিসগুলা যেমন আমরা দেখতে পাইতাম শুরুর দিকে, এখনো এই ক্লাসটারে মোস্ট প্রগেসিভ ভাবতে পারার কথা আমাদের।)

তো, সেইখানে সেক্যুলার’রা যেমন থাকবে, ইসলামিস্টরাও থাকবে। কিন্তু মেইন ফিচার হইতেছে, এরা একটা ইন্টারনাল ক্লাস-স্ট্রাগলের ভিতর দিয়া নিজেদেরকে ফুলফিল করতে পারবে। গরিব বা প্রলেতারিয়েত ক্লাস বইলা কিছু থাকবে না আর। দুনিয়া থিকা গরিবি শেষ হয়া যাবে না, বরং ক্লাস হিসাবে আরো ইনভিজিবল হয়া উঠবে, একটা ডিজ-অ্যাপিয়েরেন্সের ভিতরে হারায়া যাবে।

জ্বীন-ভূতের মতো মাঝে-মধ্যে হয়তো দেখতে পাবো আমরা। কিন্তু কোন ক্লাস-স্ট্যাটাসের নিয়া থাকতে পারবে বইলা মনেহয় না। গ্রিসে স্লেইভদের যেমন কোন হিস্ট্রি নাই, ইন্ডিয়াতে অচ্ছুৎদের যেমন কোন সাহিত্য নাই, এইরকম। ক্লাস হিসাবে গরিব জিনিসটা বাতিল হয়া যাবে। (যদি এখনো জিনিসটা স্পষ্ট না হয়া থাকে, খুব তাড়াতাড়িই এইটা ঘটতে থাকবে বইলা মনেহয়।)

#########

এন্টি-অডিপাসের ইন্ট্রো’তে ফুকো বলতেছিলেন, একেকটা সময়ে ইন্টেলেকচুয়াল হওয়ার কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে, অইগুলা ফুলফিল করতে হয়। উনি ইউরোপের কিছু টেনডেন্সির কথা বলতেছিলেন। তো, বাংলাদেশেও এইরকম কিছু জিনিস ছিল, এখনো আছে (সবসময়ই থাকবে মনেহয়)।

যেমন, সিক্সটিইজে কমিউনিস্ট হওয়াটা ছিল মাস্ট, রবীন্দ্রনাথের গান পছন্দ করা এবং ‘একটা শুদ্ধ-ভাষায়’ কথা বলতে পারা ছিল কালচারালি আপগ্রেডেড থাকার লক্ষণ। ‘কে সাচ্চা কমিউনিস্ট?’ – এই বিতর্ক ছিল হট জিনিস।

সেই হিসাবে, এখনকার বাংলাদেশেও এইরকম কিছু ফিচার পাইবেন। যেমন ধরেন, সিনেমা-দেখা বা এই নিয়া কোন আলাপে থাকা; যে কোন আলাপে অন্য আরেকটা পারসপেক্টিভ নিয়া আসতে পারা; এবং মোস্ট ক্রুশিয়াল হইতেছে, ‘নারী-প্রশ্নে’ একটা পজিশন নিতে পারা। ‘৬০-এ কমিউনিস্ট হওয়া যেমন মাস্ট ছিল, এইরকম ফেমিনিস্ট না হয়া বা এই জায়গাটাতে ক্রিটিক্যাল না হয়া ২০২১ সালে, ঢাকা শহরে ইন্টেলেকচুয়াল আপনি হইতে পারবেন না।

লেনিনপন্থী হন, ট্রটস্কিপন্থী বা চীনাপন্থী, কমিউনিস্ট যেমন হওয়া লাগতো; এখনো এইরকম যে কোন ধরণের নারীবাদী-ই আপনি হন, হওয়া লাগবে আসলে। আর এই কারণে “কে সত্যিকারের ফেমিনিস্ট, কে ভুয়া” – এই তর্কটা দেখবেন খুবই enthusiastically করা যায়। (কোনটা “অথেনটিক ইসলাম” – এইরকম তর্কও দেখবেন শুরু হয়া যায়।)

মানে, এইটা খুব ‘জরুরি একটা তর্কের’ এগেনেস্টে ‘আজাইরা একটা আলাপ’ না; বরং অন্য অনেক কিছুর বাইরে এইটা হইতেছে একটা ইন্টেলকচুয়াল সুপরিয়রিটি ক্লেইম করার ঘটনা। এই জায়গা থিকা দেখলে জিনিসটারে বুঝতে পারাটা মেবি সহজ হইতে পারে, আমাদের জন্য। 🙂

#########

এবনে গোলাম সামাদ

বাংলাদেশের ইন্টেলেকচুয়াল আখড়াতে এবনে গোলাম সামাদের সিগনিফিকেন্স হইতেছে, উনার সময়ে কমিউনিস্ট ভাব-ধারার জায়গা থিকা যখন সবকিছুরে দেখার একটা প্রাকটিস চালু ছিল, অইসময়ে উনি এর বিপরীতে একটা ন্যাশনালিস্টিক-ভিউ থিকা জিনিসগুলারে দেখছেন; যেইটা আমাদের সময়ে একটা ওয়াইডার জায়গা থিকা একটা ‘লোকাল-নজর’ বইলাও রিড করতে পারি আমরা এখন (উনার ন্যাশনালিস্ট-ভিউটারে না নিতে পারলেও)।

আরেকটা ঘটনা হইতেছে, উনি যে কোন কথা বা টেক্সট’টারে তার টেক্সচুয়াল মিনিং’য়ে নেন নাই, বরং একটা কনটেক্সচুয়াল মিনিংটারে ধরার বা বাইর করার ট্রাই করছেন সবসময়। তো, চিন্তার প্যাটার্ন হিসাবে এইটা ইম্পর্টেন্ট।

এই দুইটা জিনিস মনে হইলো উনার “বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি” (২০১৩) বইটা পড়তে গিয়া (২০১৬ সালের সেকেন্ড এডিশন)।

বইয়ে উনি যে খুব ‘সত্যি’ কথা বলছেন – তা না, কিন্তু উনি অন্য একটা নজর থিকা দেখার ট্রাই করছেন। আওয়ামী লীগরে সার্পোট করলেও, উনার বলার ধরণ ও পারসপেক্টিভের কারণে উনারে যেমন আওয়ামী লীগ নিতে পারে নাই, বিএনপিরও উনার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদরে নিতে পারাটা কঠিনই হওয়ার কথা। উনার পলিটিক্যাল পজিশনটারে ‘সাম্প্রদায়িক’ বইলা ট্যাগ দিতে চাওয়ার কথা ‘কমিউনিস্টদের’; কিন্তু যারা “ধর্মীয় মূল্যবোধ”রে প্রায়োরিটি দিতে চান, তারাও উনার ন্যাশনালিস্টিক পজিশন নিয়া একটা অস্বস্তির মধ্যে থাকার কথা।

যে কোন একটা সময়ে একটা চিন্তা তো একসপ্টেড হয়া উঠে সমাজে অই সময়ের পলিটিক্যাল সিচুয়েশনটার বেসিসে। তো, সামাদের চিন্তা যেমন ন্যাশনালিস্টদের পারপাস সার্ভ করতে পারে নাই, একইরকমভাবে ‘ধর্মীয় মৌলবাদীদের’ পক্ষেও যায় না আসলে পুরাপুরি। যার ফলে কোন পক্ষই উনারে নিতে পারে নাই।

কিন্তু এখন যখন এক ধরণের ‘বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদের’ (‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ না) একটা সম্ভবনা বাংলাদেশে জাইগা উঠতেছে, উনার অনেক কথা-ই রিলিভেন্ট হয়া উঠতে থাকার কথা। তো, অই জায়গাতে এই জিনিসটা মনে রাখলে ভালো যে, উনি একটা হিস্ট্রোরিসিটির চাইতে হিস্ট্রির টাইমলাইনেই যে আস্থা রাখছেন, সেইটা পদ্ধতি হিসাবে ঝামেলার একটা জিনিস। আলাপে প্রায়ই যে সইরা যান উনি, সেইটা অই বেইজটা না-খুঁইজা পাওয়ার একটা জায়গা থিকাও আসতে পারে।…

একটা ‘সংজ্ঞা’ দিতে চাওয়ার, ডিফাইন করতে চাওয়ার একটা আকাংখা উনার আছে, যেইটারে ক্রিটিক্যালি দেখতে পারাটা দরকার।

এর বাইরে, রিপিটেশনের জায়গাগুলারে কেউ একজন এডিট করলেই আরো বেটার রিডেবল টেক্সট বানানো যাইতো আসলে, বইটারে; উনার আর্গুমেন্ট মেবি আরো ক্লিয়ার হইতে পারতো। এই জায়গাতে আরেকটা জিনিসও খেয়াল করার মতো, উনি প্রায়ই কিছু রেফারেন্স ইউজ করেন, যেইগুলা এতোটা রিলিভেন্ট মনেহয় না, বা কানেকশনগুলা স্ট্রংগলি বিল্ড করা হয় না; এইটা একটা উইক জায়গা মনে হইলেও, রিলিভেন্সগুলারে অনেক বেশি ছড়ায়াও দিতে পারে মনেহয়, অনেক সময়।

মানে, যতোটা না উনার পলিটিক্যাল ও ইন্টেলেকচুয়াল পজিশন (সেইটা তো আছেই), তার চাইতে গোলাম এবনে সামাদ যেইভাবে উনার ইন্টেলেকচুয়ালিটির প্রাকটিস করছেন, সেইটা অনেক বেশি অবজারভ করার মতো একটা জিনিস মনে হইছে আমার কাছে।…

 

অগাস্ট ২৩, ২০২১

জামিন

বাংলাদেশের আইনে, একটা জায়গারে এক্সপ্লয়েট কইরাই জুলুমের ঘটনা’টা সহজে ঘটানো যাইতেছে, সেইটা হইতেছে, যে আপনার নামে যে কেউ, যে কোন অভিযোগ করলেই আপনারে পুলিশ ধইরা নিয়া জেলে ঢুকাইতে পারে। এমনকি কারো অভিযোগ করারও দরকার নাই, পুলিশ যদি ‘সন্দেহ’ করে তাইলেই জেলে ঢুকাইতে পারে! এবং জামিন না দিয়া দিনের পর দিন, মাসের পর মাস জেলে আটকায়া রাখা ‘আইনিভাবেই’ পসিবল।

দেশের জেলখানাগুলাতে কতো মানুশ এইরকম আদালতের রায়ে ‘ক্রিমিনাল’ না হওয়ার পরেও আটক আছে – এর কোন নাম্বার কি আমরা জানি? ‘স্বাধীন গণ-মাধ্যম’ কি এই খবর জানাইতে পারে আমাদেরকে?

আমার একটা ওয়াইল্ড গেইজ হইতেছে, বাংলাদেশের জেলখানাগুলাতে, পুলিশ কাস্টডিতে আটক থাকা মানুশগুলার মধ্যে এটলিস্ট ৫০% মানুশ আদালতের রায়ে ক্রিমিনাল না হওয়ার পরেও, খালি অভিযোগের বেসিসে এবং জামিন না হওয়ার কারণে আটক আছেন।

আর এইরকম ‘ভুল অভিযোগের’ বা ‘অহেতুক সন্দেহের’ কারণে যে জেল খাটতে হইলো, এর কোন ক্ষতিপূরণ কি উনারা পাইতেছেন? বা পাইবেন, এইরকম কোন আইন কি আছে?

মানে, এইরকম কথা তো আমরা শুনছি যে, আইনের মিনিমাম শর্ত হইতেছে, অপরাধী ছাড়া পাইলে পাক, কিন্তু একজন নিরপরাধ মানুশ যেন শাস্তি না পায়; অথচ বাংলাদেশের আইনে তো দেখতেছি উল্টা’টা, আগে তারে শাস্তি পাইতে হবে, পরে তার বিচার হবে। তো, এইটা কি ফ্রিডমের বেসিক প্রিন্সিপালের জায়গাটারেই ভায়োলেট করে না? আর এই ভায়োলেশনটা হয়, অভিযোগগুলারে ‘জামিন অযোগ্য’ বানানোর ভিতর দিয়া।

বাংলাদেশের আদালতে জামিন জিনিস এতো ‘কঠিন’ হওয়া শুরু করলো কবে থিকা? ২০১৪ সালের নাম-কা-ওয়াস্তে হওয়া ইলেকশনের পর থিকা?

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইটা খালি ‘আইনি সমস্যা’ না, বরং একটা গ্রেটার সেন্সে একটা পলিটিক্যাল, এমনকি সোশ্যাল একটা ক্রাইসিস। যেইটার জুলুমের শিকার খালি পলিটিক্যাল নেতা-কর্মীরাই হইতেছে না, বা সরকারের ও ক্ষমতার ‘বিরাগ-ভাজন’ লোকজন; বরং যখন এইভাবে জুলুম করার সিস্টেমটা এস্টাবলিশড হয়া যায়, একটা ইনকামের রাস্তা ওপেন হয়া যায়, তখন সেইটা আর পলিটিক্যাল উইপেন হিসাবেই ইউজড হয় না খালি, একটা নর্মস হয়া উঠে, হয়া জুলুমের একটা হাতিয়ার।

আদালতে জামিন না-দেয়ার ঘটনা’টারে যদি এই জায়গা থিকা আমরা দেখতে না পারি, তাইলে এর টেররের জায়গাটারে টের পাবো না আমরা।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইটা একটা আইনি সমস্যা না, যারে থিওরেটিক্যালি কারেক্ট করা লাগবে; একটা পলিটিক্যাল উইপেন হিসাবে শুরু হইলেও ‘জামিন-দেয়া বা না-দেয়া’ একটা সামাজিক জুলুমের ঘটনা এখন। এইটা রিকগনাইজ না করতে পারলে এর সলিউশনের দিকে যাইতে পারবো না আমরা।

 

অগাস্ট ২৪, ২০২১

আর্ট দুই রকমের – এভারেজ-আর্ট আর গ্রেট-আর্ট। একজন আর্ট-ক্রিটিক বা সাহিত্য-সমালোচকের কাজ হইতেছে এই এভারেজ ও গ্রেটনেসের জায়গাগুলারে স্পষ্ট করার ভিতর দিয়া একটা সময়ের আর্ট-হিস্ট্রির জায়গারে তৈরি করতে পারা।

মানে, এই জায়গাটা ইম্পর্টেন্ট। কোনটারে এভারেজ বলতেছি আমরা, আর কোনটারে গ্রেট; সেইটা কোন ‘রুচি’ ‘ভালো-লাগা’ এবং পুরাপুরি পলিটিক্যাল কোন ঘটনা না; বরং কিছু হিস্ট্রিক্যাল কন্সট্রাকশনের ভিতর দিয়া ব্যাপারগুলা ‘আর্টের’ ঘটনা হয়া উঠে। সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের মতো, চিন্তার ইতিহাসের মতো আর্টেরও একটা ইতিহাস আছে। যেইটার ভিতর দিয়া একটা আর্ট, আর্ট হয়া উঠে।

‘প্রতিভার’ কোন জায়গা এইখানে নাই – এইটা আমার পয়েন্ট না; বরং কোনটারে ‘প্রতিভা’ বইলা আইডেন্টিফাই করতেছি, সেইটা এক ধরণের আর্টের কনজামশনের ভিতর দিয়াই আমরা ফিল করি। আর সেই জায়গাগুলা আর্ট-ক্রিটিকের ভিতর দিয়াই তৈরি হয়। (আমরা মানতে রাজি না হইলেই ব্যাপারটা ইন-ভ্যালিড হয়া যায় না আর কি।)

আমি তো এইরকমও বলতে চাই যে, একটা সময়ে, একটা সমাজে গ্রেট-আর্ট তখনই তৈরি হইতে পারে বা তৈরি হইতে থাকে যখন এই রিকগনিশনের জায়গাগুলা স্পষ্ট হইতে পারে।

এই কারণে, আর্ট-ক্রিটিক বা সাহিত্য-সমালোচক মানে আর্টের শত্রু তো না-ই, বরং enabler-টাইপের জিনিস। আর আমার ধারণা, বাংলাদেশে হিস্ট্রিক্যালি এই জায়গাটারে খেয়াল করতে, তৈরি করতে আমরা ব্যর্থ হইছি, আর্টিস্টের দিক থিকা (“বরং তুমি নিজেই লেখো নাকো একটা কবিতা…”) এবং আর্ট-ক্রিটিকের জায়গা থিকাও (“ধুইয়া দিছি পুরা”-এটিটুড) – দুই জায়গাতেই।

#########

পপুলার আর্ট আর গ্রেট আর্ট – এই দুইটা জিনিসরে আলাদা আলাদা জিনিস হিসাবে দেখার এবং দেখানোর কিছু প্রাকটিস আমাদের সমাজে চালু আছে। কিন্তু জিনিস দুইটা একই সময়ে, একই স্পেইস যেমন ভাগাভাগি করে, সেই হিসাবে এতোটা আলাদা তো না-ই, বরং অনেক কাছাকাছি জিনিস। পপুলার আর্ট যেমন গ্রেট আর্টের কাছ থিকা অনেক কিছু ধার করে, গ্রেট আর্টও পপুলার আর্টের লগে এক ধরণের রিলেশনের বাইরে গিয়া এগজিস্ট করতে পারে না। মানে, দুইটা ক্যাটাগরি হিসাবে যদি দেখতে থাকি আমরা।

দুইটা জিনিসই পাবলিক দেখে বা এনজয় করে। আমরা মনে করি যে, পপুলার জিনিস ওভার দ্য পিরিয়ড অফ টাইম ট্রান্সমিট হইতে পারে না, বা দুই-তিনটা জেনারেশনের পরে গিয়া বাতিল হয়া যায়। কিন্তু ঘটনা তা না বইলাই আমার মনেহয়।

একটা সময়ে পপুলার ছিল বইলা বরং দেখা যায় পরের অনেক জেনারেশনের লোকজন দেখতে থাকে সেইটা। অইরকম অনেক সিনেমার নাম বলা যাবে হয়তো, ধরেন, ক্লাসাব্লাংকা বা সিংগিং ইন দ্য রেইন; বা বাংলায় শরৎচন্দ্র, হুমায়ূন আহমেদ; একটা সময়ে পপুলার ছিলেন/আছেন বইলাই অনেকগুলা জেনারেশন পার হইতে পারছেন/পারবেন।

উল্টাদিকে, একটা গ্রেট আর্ট আসলে কেমনে গ্রেট হয়? কোন পিপল কানেকশন ছাড়া তো সেইটা হইতে পারে না। একটা কবিতা পইড়া বা পেইন্টিং দেইখা কারো ভালোলাগে ফার্স্টে, আর এতোটাই যে, এইটার কথা যখন কেউ বলতে থাকে, তখন তার গ্রেটনেসটা অন্যদের চোখেও পড়ে, অনেকে ফিল করতে পারে। এর বাইরে গ্রেট আর্টের অনেক সময় পপুলার হওয়ার জায়গাটতে হয়তো স্ট্রাগল করতে হয়। কিন্তু যতো স্মল সার্কেলেই হোক, সেইটা কোনভাবে পরিচিত হওয়ার বাইরে গিয়া তো গ্রেট হইতে পারে না আসলে।

যেইটা হয়, কানেকশনটা তৈরি করতে হয়। পপুলার আর্ট আর গ্রেট আর্ট – দুইটা জায়গাতেই। এইটা বেসিক। কোন ক্রিয়েশনই কানেকশনের বাইরের ঘটনা না।

আর্টের ইন্টারেস্টিং পার্ট’টা হইতেছে, প্রপাগান্ডার ভিতর দিয়া, একটা সার্কেলে একসেপ্টেড হওয়ার ভিতর দিয়া, আলাপে বা রেফারেন্সের জায়গাতে থাকতে পারে জিনিসটা একটা সময় পর্যন্ত; কিন্তু অইটা টিইকা থাকতে পারে ততদিনই, যতদিন পর্যন্ত হিউম্যান ইমোশন না, বরং যতদিন পর্যন্ত একটা ইমোশনাল এক্সপ্রেশন হিসাবে সার্টেন জায়গাতে রিলিভেন্ট হিসাবে থাকতে পারে।

এই রিলিভেন্সের কারণেই দেখবেন, গ্রিক মিথ, শেক্সপিয়র, কাফকা ও কারবালা মোটামুটি একই জায়গাতে থাকতেছে, একটা সময়ে। এইটা টাইমলেসনেস না। এইটা হইতেছে টাইমের কন্সট্রাকশনটা, যেইটার ভিতর দিয়া টাইম জিনিসটা তৈরি হইতেছে।

একটা সময়ের গ্রেট আর্টই অনেক সময় দেখা যায় পরের সময়ের পপুলার আর্টরে তৈরি করতেছে; আর গ্রেট আর্টও পপুলার এলিমেন্টগুলারে নিতেছে। ডিফরেন্সের জায়গাটা মেবি এইটাই যে, একটা গ্রেট আর্ট যেই ‘গভীর বেদনা-বোধ’র এক্সপেরিয়েন্সটা দিতে পারে, সেইটা কম-বেশি মিসিং থাকে পপুলার আর্টে। (সবসময় একইরকম না হয়তো।)

মানে, আমি আসলে দুইটা কথা বলতে চাইতেছি –
১. কোনকিছু টিইকা থাকে বইলাই সেইটা গ্রেট-আর্ট না, বা কোনকিছু হারায়া যায় বইলাই সেইটা দামি না। সারভাইব করতে পারাটা ডিসাইডিং ফ্যাক্টর না এইখানে। মনে রাখা ভালো যে, অনলি অ্যা ফিউ গুড থিঙ্কস সারভাইব।
২. নাথিং লাস্টস ফরএভার।

#########

গরু’র শিং ও লেজ যখন গরু হয়া উঠে…

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে যেই গর্ভমেন্ট ফর্ম করা হইছিল বাংলাদেশে, সেইটা দেশ শাসনের জন্য ইলেক্টেড কোন গর্ভমেন্ট ছিল না। দেশের শাসন ক্ষমতায় কারা থাকবে, সেইখানে পিপলের রায় অনেকদিন পর্যন্ত নেয়া হয় নাই। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফার্স্ট ফেয়ার ইলেকশন হইলেও রাষ্ট্র-ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের হাতে থাকে নাই, বরং সিভিল-সোসাইটির মোড়কে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ নামে সরকারি-আমলা, ব্যবসায়ী এবং এলিট-শ্রেণির হাতেই বন্দি করা হইছিল। ১৯৯৬ সালের ‘জনতার মঞ্চ’ বানানোর ভিতর দিয়া সেই ঘটনা স্পষ্ট হইলেও ২০০৭’র (এক এগারোর) পরে সেইটা নিয়া সন্দেহ করার কোন স্কোপই নাই যে, পিপলস এজেন্সিগুলারে (সমাজ-সংগঠন, পলিটিক্যাল দল, টিভি-পত্রিকা-মিডিয়া…) পুরাপুরি কবর দেয়া হইছে, বাংলাদেশে। ২০১৪ সালের ইলেকশন হইতেছে সেই কবর সিমেন্ট দিয়া ঢালাই করার ঘটনা। ২০১৮ সালে সেইখানে ‘গণতন্ত্রের মনুমেন্ট’ বানানোর কাজ শেষ হইছে বলা যায়।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, রিসেন্ট হিস্ট্রির জায়গাগুলাতে আমরা কেমনে চোখ ফিরায়া রাখতে পারি? এখনকার ইলিগ্যাল গর্ভমেন্টরে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ টিকায়া রাখে নাই, বরং এরা হইতেছে মিলিশিয়া বাহিনি, পিপলরে টর্চার করার; এরা হইতেছে জুলুমের ফেইসটা। আসল পাওয়ার হইতেছে পুলিশ-মিলিটারি-সরকারি আমলাদের হাতে (তাদের ছাড়া আর কারে-ই বা বিশ্বাস করতে পারেন আপনি 🙂 ) , আর এইটা তৈরি হইছে গত ২০/২৫ বছরে, একদিনে না।

কোন জুলুম-ই এককভাবে টিইকা থাকতে পারে না, তার কোলাবরেটরদের ছাড়া। পলিটিক্যাল দলগুলা হইতেছে এই এন্টি-পিপল সিস্টেমটার কোলাবরেটর, এর মেইন ফোর্স না। এই জায়গাটারে ইগনোর করলে, বুঝতে রাজি না হইলে বাংলাদেশের পলিটিক্যাল অবস্থাটারে মিসরিডই করা হবে আসলে।


অগাস্ট ২৬, ২০২১

এইরকম জিনিসটা আগেও ছিল। জালালউদ্দিন খাঁ’রে (“ও আমার দরদী আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নৌকায় চড়তাম না” “কেহ করে বেচাকেনা কেহ কান্দে রাস্তায় পড়ে” গানগুলার লিরিসিস্ট…) আব্বাসউদ্দিন বা এইরকম কেউ বলতেছিলেন, আর কতোদিন আপনি ‘লোকচক্ষুর অন্তরালে’ পইড়া থাকবেন, আপনারে আমি রেডিও’তে নিয়া আসবো! মানে, আপনি রেডিও’তে নাই মানে তো হইতেছে আপনারে কেউ চিনে না!

এখনকার অবস্থা দেখেন, ফেসবুকে, টুইটারে, ইন্সটাতে আপনার লাখ-খানেক ফলোয়ার থাকার মানে হইতেছে আপনি বিখ্যাত কেউ। অথচ দুনিয়া তো ৭ বিলিয়ন লোকের, এর মধ্যে ১ বিলিয়ন লোকও যদি আপনারে চিনে, তাইলে সেইটা ‘সারা দুনিয়া’ কেমনে হয়!

দুনিয়া-ভর্তি বিখ্যাত লোক গিজগিজ করতেছে যাদের কথা ৫/৭ বছর না হইলেও ২০/৩০ বছর পরেই কেউ মনে করতে পারবে না। অথচ এখন উনাদেরকে না চিনতে পারলে, মনে হইতেছে যেন কিছুই জানি না!

তো, এইগুলা চারপাশের ঘটনাই, সবসময় কেউ না কেউ আলাপে আছেন, বিখ্যাত হয়া উঠতেছেন। যেই সমাজে, যেই সময়ে আমরা আছি সেই রেফারেন্সিয়াল ঘটনাগুলার ভিতর দিয়াই আমাদেরকে কথা বলতে হইতেছে, ভাবতে হইতেছে, আমাদের এগজিসটেন্সগুলারে ভিজিবল কইরা তুলতে হইতেছে। এই এলিমেন্টগুলা আছে, সবসময়ই থাকবে।

এইরকম রেডিও’তে, টিভি’তে, ফেসবুকে থাকতে পারাটা খারাপ জিনিস না, কিন্তু এইটারে ‘সারা দুনিয়া’ ভাইবা নেয়াটা খুবই hilarious ব্যাপার না!

কিন্তু ঘটনা বেশ উল্টাই। আপনি যতক্ষণ না এই জায়গাগুলাতে কানেক্ট হইতেছেন, ততক্ষণ যেন আপনি এগজিসটেন্স হিসাবে ভ্যালিড কোন এনটিটি না আর!

আর এইটা তখন আজিব কোন ঘটনা না, বরং বাতিল একটা ফিলিংস দিতেছে! এই জায়গাটাতেই মিডিয়াম জিনিসটা তার কনটেন্টের চাইতে বিগার রোল প্লে করতেছে আসলে।…

 

অগাস্ট ২৭, ২০২১

– সরকারের কাছ থিকা পাবলিকের ভ্যাট-ট্যাক্সের হিসাব নেয়ার সিস্টেম চালু করা দরকার –

Roxana Gay’র লেখাটা পড়তে গিয়া মনে হইলে সাইকলোজিস্ট Dan Ariely’রও এই এপ্রোচ’টা আছে। Roxana Gay ট্রমা/দুঃখ নিয়া বলতে গিয়া একদম শুরুতেই বলতেছিলেন, ছোটবেলায় উনি গ্যাং রেইপের ভিক্টিম হইছিলেন। Dan Ariely’র মুখের একটা পাশ পোড়া; তো, উনি যে কোন ফরমাল আলাপে বইলা নেন যে, একটা একসডিন্টে উনার মুখের এক পাশ পুইড়া গেছে, অই জায়গাটাতে বেশি নজর দেয়ার দরকার নাই।

এইরকম বাংলাদেশের ট্যাক্স-সিস্টেম নিয়া কথা বলার আগেও বইলা নেয়া ভালো, অফিস থিকা তো বেতনের একটা বড় পার্ট ট্যাক্স হিসাবে কাইটা নেয় আমার, ভ্যাটও দেয়া লাগে অনেক জায়গায়, কিন্তু এর বাইরে নিজের ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়া আমার পারসোনাল নজর খুবই কম এবং আজাইরা জিনিস মনেহয়। কখনোই মনোযোগ দিতে পারি নাই। 🙁

কিন্তু ভ্যাট-ট্যাক্স সবচে ইম্পর্টেন্ট একটা জিনিস, রাষ্ট্রের মামলায়। কে কে ট্যাক্স দিতেছে না, ভ্যাট ফাঁকি দিতেছে – এইসব নিয়া দেখবেন মামলা হয় অনেক; এমনকি ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি না দিলে বাংলাদেশে বিজনেস করাও টাফ। মানে, আগের দিনের মতোই কে খাজনা দিতেছে, কে দিতেছে না – তার মনিটরিং আছে। কিন্তু দেশের নাগরিকের জানার কোন উপায় নাই তার ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা কোথায় খরচ হইতেছে।

ধরেন, কোন বেসরকারি অফিসের একজন এমপ্লয়ি থিকা বছরে ১ লাখ টাকা কাটা হইলো ট্যাক্স বা কোন রেস্টুরেন্ট থিকা ৫ লাখ ভ্যাট নেয়া হইলো; সেই লোকের বা রেস্টুরেন্ট-মালিকের জানার কোন উপায় নাই তার টাকা কই গেলো, কোথায় খরচ হইলো?

খালি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে না, আমি বলতেছি প্রতিটা ট্যাক্স-পেয়ার, ভ্যাট-দেয়া বিজনেসগুলার কাছে গর্ভমেন্ট অফিসগুলার হিসাব দেয়া দরকার। যে দেখেন, আপনার টাকা থিকা ৫০০ টাকা দিয়া প্রাইম মিনিস্টারের বেতন দেয়া হইছে, ১০০ টাকা দিয়া পুলিশের বেতন দেয়া হইছে, ৫০০০ হাজার দিয়া কুইক রেন্টালের বিল দেয়া হইছে…; এইরকম হিসাব দেয়ার ব্যবস্থা চালু করা দরকার। এক বছরের হিসাব বুইঝা পাওয়ার পরেই গর্ভমেন্টরে পরের বছরের টাকা দেয়া হবে।

এইরকম একটা সিস্টেম চালু করা না গেলে, সরকার যে জনগণের টাকায় চলে, এইটা বুঝানো যাবে না। অবশ্যই এর অনেক ডিটেইলিং করা লাগবে; কিন্তু এইটা না কইরা একটা ‘জবাবদিহি-মূলক সরকার’ এবং ওয়েল-ফেয়ার সোসাইটির দিকে আমরা যাইতে পারবো না।

এখন দেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকুক আর বিএনপি, ইসলামিস্টরা থাকুক আর সেক্যুলার, যে কোন আইডিওলজিই থাকুক, এইরকম বেসিক নিয়ম ও পলিসি বানাইতে হবে। আর এইরকম সোশ্যাল এবং ইকোনমিক জায়গাগুলা এচিভ করার জন্য পলিটিক্যাল মুভমেন্টের চাইতে নানান ধরণের সোশ্যাল মুভমেন্ট আসলে জরুরি।…

 

অগাস্ট ২৮, ২০২১

কয়দিন আগে আয়মান সিদ্দিকের একটা পোস্ট বেশ ভাইরাল হইছিল, মোটামুটি এইরকম একটা কথা যে, অন্যের মুখের ঝাল খাইয়েন না, কাউরে বা কোনকিছুরে খারাপ-ভালো ভাবার আগে নিজে একটু যাচাই কইরা নিয়েন। খুবই ভালো একটা ইনটেনশন থিকা কথাটা বলা হইছিল বইলা আমি মনে করি, কিন্তু সব ভালো কথা বা সুন্দর কথাই তো আসলে হক-কথা না। মানে, এইটা কি আসলেই সম্ভব, নিজে নিজে সবকিছু যাচাই করাটা? বা আসলে কি দরকার আছে?

সেকেন্ড প্রশ্নটা নিয়া আগে বলি, দুনিয়ার সবকিছু তো আমার কনসার্ন না। একটা আলাপে কেউ হয়তো কইলেন, টুইংকেল খান্নার অটোবায়োগ্রাফি’টা পড়ছেন, দুর্দান্ত লেখছে কিন্তু! এখন টুইংকেল খান্নার সাহিত্য কি রকম? – রাইটার হিসাবে এইটা নিয়া আমার তো কোন ইন্টারেস্ট নাই; সুতরাং উনার লেখা ভালো না খারাপ – এইটা দিয়া আমি কি করবো আসলে? তো, এইগুলা হইতেছে আন-নেসেসারি ব্লকেজ। ইগনোর করাই বেটার। আমিও শিওর, দুনিয়াতে এইরকম আরো হাজার হাজার জিনিস এবং কোটি কোটি মানুশ আছেন, যারা খারাপ কি ভালো – এইটা নিয়া আমার চিন্তা নাই, বরং চিন্তা যে থাকতে হবে – এইটা হইতেছে একটা ইম্পোজ করা জিনিস, যেইগুলা বেশিরভাগ সময় এড়াইতে পারলে ভালো।

এইবার আসেন, বেসিক কোশ্চেন’টাতে, যেইটা নিয়া আমার কনসার্ন আছে, এইরকম আছে তো কিছু জিনিস, যেইটা খালি আমার কনসার্ন না, পাবলিক কনসার্নের ঘটনা; যেমন, পরীমনি কি ভালো? 🙂 রেহনুমা আহমেদ’দের “রাতের রাণী” প্রতিবাদ কি ঠিকাছে? এইরকম জিনিসগুলা।… এইখানে পাবলিক অপনিয়ন বা অন্যদের কথা-বার্তা তো আমাদের চিন্তা ও বিচাররে এফেক্ট করে। তো, সেইখানে ব্যক্তির চাইতে কিছু গ্রাউন্ড রুলস বরং জরুরি বইলা মনেহয় আমার কাছে। যেমন ধরেন, কোন ঘটনা প্রথম আলো, আনু মুহাম্মদ বা আমার কোন ক্লোজ-ফ্রেন্ড সার্পোট করছেন বইলা কোন জিনিস ভালো না। (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপরে ভরসা রাখা যাবে না – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু ব্ল্যাংক-চেক দিয়া দিয়েন না, এইটা উনাদেরকে ফাংশনেবল না কইরা, উল্টা ভোঁতা কইরা দেয় বেশিরভাগ সময়।) বরং জুলুম সবসময়ই খারাপ, সেইটা পরীমনির সাথে ঘটুক, আর শাবানার সাথে। ভুল প্রতিবাদ বইলাও কিছু নাই, যতক্ষণ না এইটা জুলুমের জায়গাটারে জাস্টিফাই করতেছে ততক্ষণ পর্যন্ত এইটা ঠিকাছে।… এই গ্রাউন্ড রুলগুলা খুব সলিড বা ইউনিভার্সাল হইতে হবে – এইটা জরুরি না, কিন্তু দেখবেন, বেশিরভাগ সময়ই টুলস হিসাবে কাজে দিতেছে। এখন ছুরি দিয়া আপনে আপেল কাটবেন নাকি খুন করবেন, সেইসব ঘটনা তো আছেই।…

এইরকম পাবলিক ঘটনার বাইরেও পারসোনাল টেস্টের ব্যাপার থাকে। এইসব জায়গাতে নিজের টেস্টের কাছাকাছি কিছু খুঁইজা নিতে পারলে বেটার। যেমন ধরেন, হলিউডি সিনেমার ব্যাপারে আমার ফ্রেন্ড মুয়ীদের সাজেশন একটা সময় আমি নিছি, মোটামুটি কোনদিন সমস্যা হয় নাই; বা আর্ট-ফিল্মের ব্যাপরে সুদীপের সাজেশনে অনেকগুলা ভালো সিনেমা দেখছি; ইট হেল্পস! এমন না যে, আমাদের সিনেমা দেখার রুচি একইরকম, কিন্তু উনাদের লগে কিছু জিনিস আমার মিলে। এইটা বুঝতে পারলে ভরসা করা যায়, ঝামেলা কমে; আবার না মিললে তখন রিভিউ-ও করা যায়। এইটা খালি দরকার-ই না, বরং এইটা ছাড়া সম্ভব-ই না আসলে!

কিন্তু মানুশের ব্যাপারটা অনেক ক্রিটিক্যাল। আমি বলবো, কে ভালো-মানুশ, কে খারাপ-মানুশ – এই বিচারটাই করতে যাইয়েন না। এইটা খালি অদরকারি-ই না, ডিগ্রেডিং একটা ব্যাপারও। ব্যাপারটা পুরাপুরি এইরকম না যে, মানুশের বিচার করা যায় না, বরং মানুশ স্ট্যাটিক কোন আইডেন্টিটি না; তার কাজের বিচার যায় এবং করাটা দরকারিও অনেকসময়। এমনকি মানুশের একটা-দুইটা কাজের এফেক্ট এতো বেশি যে, আপনি চাইলেও তারে সারাজীবনে মাফ করতে পারবেন না। তো, অইগুলা খুবই পারসোনাল ঘটনাই। এইখানে দুইটা জিনিস মানতে পারলে মনেহয় ভালো। এক, একজন মানুশ যতক্ষণ পর্যন্ত আমার লগে কোন দুশমনি না করতেছে, আমার কোন ক্ষতি করতেছে, তারে নিয়া আমার কোন ভালো-খারাপের চিন্তা আসলে নাই। (দুশমনিও আমি এড়াইতে চাই। কিন্তু জগতে এতো প্রেমের ফাঁদ, এড়ানো তো মুশকিল-ই হয়। 🙁 ) সেকেন্ড হইলো, আমার পরিচিত কারো ভিজিবল কোন ক্ষতি বা বাজে-কাজ সে/শে করছে, তারেও আমি এড়াইতে চাই। এই দুইটা পয়েন্টে আমি স্টিক করার ট্রাই করি। কিন্তু এইগুলা পারসোনাল বিচার-ই। এবং বেশিরভাগ সময়ই ইমোশনাল। দেখবেন, বেশিরভাগ সময় ‘খারাপ-মানুশদেরকে’ই আমরা পছন্দ করি। 🙂 মানে, কেউ ভালো বা খারাপ বইলা আমরা কাউরে পছন্দ বা অপছন্দ করি না, বরং এটাচমেন্টের জায়গা থিকাই কানেক্ট করি বেশি। আর এইগুলা থাকবেই।…

মানে, আমি দুইটা কথাই বলতে চাইতেছি। এক, অন্যের মুখের ঝাল খাইবেন না – ব্যাপারটা এইরকম না; মিডিয়ার সব কথা যেন বিশ্বাস করেন না, কেউ কিছু খাওয়াইতে চাইলেই সেইটা মুখে নিয়া নিয়েন না। দরকার তো নাই আপনার! দুই, যদি দরকারই থাকে খাওয়ার, তাইলে কিছু গ্রাউন্ড রুলস বানায়া নিবেন , বা আপনার লগে জিনিসটাতে মিলে এইরকম কয়েকজনের উপরে ভরসা করবেন; এবং জিনিসগুলা রিভিউ করবেন, টাইম টু টাইম। ইন ফ্যাক্ট আমরা এমনেই চলি আসলে।

আর শেষ কথা হইলো, ভুল করবেন, বইন ও ভাইয়েরা! ভুল করা মহান না, কিন্তু ভুল করা ঠিকাছে! উইমেন অ্যান্ড ম্যান আর মরটাল।

#########

কেউ ভালো বা খারাপ বইলা আমরা কাউরে পছন্দ বা অপছন্দ করি না, বরং এটাচমেন্টের জায়গা থিকাই কানেক্ট করি বেশি

 

অগাস্ট ৩০, ২০২১

একটা এবসুলেট ট্রুথের লগে একটা ডাঁহা মিথ্যা কথার ডিফরেন্স আসলে বেশিরভাগ সময়ই ‘এক চুল’ পরিমাণ। নানান সময়েই এই জিনিসটা টের পাওয়া যায়। পারসোনাল জায়গা থিকা শুরু কইরা পাবলিক ম্যাটারগুলাতে এইটা ঘটে।

(কারণ সত্য জিনিসটা সবসময় ডিপেন্ড করে ‘কি ঘটছে’ – সেই জায়গাটাতে না, বরং ‘কেমনে দেখতেছেন’ সেই জায়গাটাতে। ট্রুথ ইজ নট হোয়াট উই সি, ট্রুথ ইজ হাউ উই সি।)

যেমন ধরেন, নতুন কইরা যে বলা হইতেছে, মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে চান নাই, উনারে জোর কইরা ধইরা নিয়া দেয়ানো হইছে, এই-সেই। আমরা জানি, পলিটিক্যাল বাকোয়াজি এইগুলা। বাকশালের বাটপারি।

কিন্তু আমি ভাবতেছিলাম, ঘটনা’টা কি রকম হইতে পারে। যখন অনেকে ছিলেন কালুরঘাটে, সেইখানে মেজর জিয়া কার্টেসি দেখায়াই বলতে পারেন যে, আপনারা কেউ বলেন… বা আমার তো ভাষণ দেয়ার অভ্যাস নাই… এই সেই… মানে, এইটা তো খুবই পসিবল। এইরকম একটা আলাপ-আলোচনা তো কইরা নেয়াই লাগে আগে।

এখন এইটারে কেউ যদি বলে যে, “মেজর জিয়া তো স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে চান নাই!” খালি ভুল-ই বলা হবে না, অইটা হবে কমপ্লিট একটা মিথ্যা কথা! উনার ভদ্রতাটারে, ওপেননেসটারেও বাতিল কইরা দেয়া হবে তখন।

মানে, এইরকম ঘটছে – তা না; কিন্তু দেখবেন, যখন কেউ মিছা কথা কয় তখন দুয়েক্টা জিনিস ঠিক রাইখা, বর্ণনাটারে ঘুরায়া দেয়। এইগুলা হইতেছে শয়তানের কাজ। শয়তান এইরকম ‘এক চুল’ জায়গাতেই অপারেট করে।

(অবশ্যই অনেক কিছু নিয়া অনেক তর্ক করার অনেক জায়গা আছে, কিন্তু শয়তানিগুলারে শয়তানি হিসাবে মার্ক না করলে তর্ক কইরা কোন লাভ নাই।)

#########

এই জিনিসটা এথিক্যালি দরকারি জিনিস মনেহয় আমার কাছে যে, আপনার বাজে সিচুয়েশনের যে হাততালি দিছিল, তার বাজে-অবস্থায় হাততালি না দেয়া, ‘খুশি হওয়া’ থিকা নিজেরে বাঁচায়া রাখা। এইটা একটা দরকারি ঘটনা।

ব্যাপারটা এইরকম না যে, কাউরে খারাপ বলা যাবে না। আমাদেরকে বরং ভালো’রে ভালো এবং খারাপ’রে খারাপ বলার প্রাকটিস বেশি বেশি কইরা করতে পারা দরকার।

কিন্তু আমার পছন্দের কারো খারাপ কিছু হইলে, সেইটা খারাপ; আর আমার অপছন্দের কারো খারাপ কিছু হইলে, সেইটা ভালো – এইটা ঠিক না।

যেমন ধরেন, বাংলাদেশে সরকারি বাহিনিগুলা যে গুম-খুন করে, অবৈধভাবে গ্রেফতার করে, রিমান্ডে নিয়া পিটায়, জামিন দেয় না – এইগুলা কোন সেক্যুলার-মনা বামপন্থীর লগে করলে যেমন খারাপ, কোন ইসলামিস্ট-আইডিওলজির লোকের লগে করলেও খারাপ।

আমার ধারণা, এই জায়গাটা বাংলাদেশে একটা সোশ্যাল নর্ম হিসাবে এস্টাবলিশ করতে পারি নাই আমরা। যখন সর্বহারা মারা হইছে, মিডিয়া হাততালি দিছে; যখন বাংলা-ভাইরে মারা হইছে, তখন হাততালি দেয়া হইছে; যখন জামাত-শিবির মারা হইছে, তখন হাততালি দেয়া হইছে; যখন ড্রাগ-ডিলার মারা হইছে, তখনও হাততালি দেয়া হইছে।

এখন এতো হাততালি দিতে দিতে আমাদের হাত-ব্যথা হয়া যাওয়ার কথা। আর বুঝতে পারার কথা যে, ন্যায়বিচার বা জাস্টিস এইরকম জাঁকজমকের কোন ঘটনা না। বরং ন্যায়বিচারের নামে আইনি-ব্যবস্থার বাইরে একটা জুলুমের রাজত্ব তৈরি করা হইছে, যেইখানে কোন বিচার-ই আর নাই!

এইটা একদিনে হয় নাই। একদিনে শেষও হবে না। তবে হাততালি দেয়া থামাইতে হবে। যদি আপনার শত্রু’র লগে জুলুম হয়, তারে সার্পোট কইরেন না। এই অবিচারের চাকা’টারে বিচারের দিকে ঘুরাইতে হইলে এই জায়গাটা থিকাই শুরু করতে হবে। তা নাইলে হবে না।

 

অগাস্ট ৩১, ২০২১

‘অশ্লীলতা’ আসলে কোন পারপাসটা সার্ভ করে?

এইটা জিনিস’টা ফার্স্ট মনে হইছিল “যাত্রা-পালা”র ব্যাপারে; যে, যাত্রা জিনিসটা আর্ট-ফর্ম হিসাবে মারা যাওয়ার আগে যে ‘অশ্লীল’ হয়া উঠছিল, সেই জিনিসটা সিগনিফিকেন্ট ছিল। যারা আশির দশকে গ্রামে ও মফস্বলে বড় হইছেন, তারা কিছুটা জানবেন যে, শীতকাল হইতছে যাত্রা আর ওয়াজের মওসুম। এলাকায় এলাকায় “মেলা” হবে একমাস/পনেরদিন ধইরা; মসজিদে-মাদরাসায় একবার হইলেও সারারাত ওয়াজ মাহফিল হবে। ওয়াজ মাহফিলের রেওয়াজ এখনো চালু আছে, বা থাকার কথা। কিন্তু যাত্রা মোটামুটি মারা গেছে। অইভাবে পাবলিকের জন্য আর পারফর্ম করা হয় না।

তো, মারা-যাওয়ার আগে, যাত্রারে ‘জনপ্রিয়’ করার জন্য যাত্রার শুরুতে, বিরতিতে এবং শেষে ‘প্রিন্সেস’ এর ড্যান্সের রীতি চালু করা হইছিল। যে যাত্রা না দেখুক, প্রিন্সেসের ড্যান্স দেখতে তো লোক আসবে! আসতোও লোকজন। কিন্তু ড্যান্স-ই দেখতো, যাত্রা আর দেখতো না; বা যাত্রা’টা হয়া উঠছিল উছিলা, প্রিন্সেস-ই হয়া উঠছিল মেইন এট্রাকশন। অনেক জায়গায়, ‘অশ্লীলতার’ কারণে যাত্রা বন্ধও কইরা দেয়া হইতো।
মানে, আমার কথা হইতেছে, ‘অশ্লীলতার’ কারণে যাত্রা বন্ধ হয়া যায় নাই, ফর্ম হিসাবে থিয়েটার, সিনেমাহল, টিভি-রেডিও’র কাছে বা অন্য আরো অনেক কারণে মারা গেছিল আরো আগেই; ‘অশ্লীলতা’ জাস্ট একটা লক্ষণ।

সেইম জিনিস খেয়াল করবেন, এফডিসি’র ‘অশ্লীল সিনেমার’ টাইমেও; এফডিসির সিনেমা সারভাইব করতে পারতেছিল না যখন, তখন ‘অশ্লীলতা’ দিয়া টিইকা থাকার ট্রাই করতেছিল।

এখন পত্রিকা-টিভি-নিউজপোর্টালের ‘অশ্লীলতা’ (মানে, চটকদার জিনিসপত্র, যা আসলে নিউজ-ম্যাটেরিয়াল না) দেইখা এই জিনিস মনেহয়; মারা যাইতেছে এরা! এমনকি ফেসবুকও যখন দাবি করে, ‘অশ্লীলতা’ ছড়াইতেছেন আপনি, তার মানে যতোটা না ‘অশ্লীলতা’ তার চাইতে ঘটনা হইতেছে যে, ফর্মটা, মিডিয়ামটা বা প্লাটফর্মটা আর রিলিভেন্ট থাকতে পারতেছে না। কনটেন্ট বা নৈতিকতার বাইরে প্রাকটিক্যালি ‘অশ্লীলতার’ জায়গাটারে বরং এইভাবে দেখতে পারাটা দরকার আমাদের।

#########

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এইগুলা যে কম-বেশি দুইনাম্বারি বিজনেস এইটা কি বেশিরভাগ লোক জানে না বইলা মনেহয় আপনার (বা শেয়ারবাজারের ডাকাতিগুলিও)? কিন্তু এই ‘জানা’টা খুববেশি চিন্তায় ফেলতে পারে না মানুশ-জনরে বা তাদের ডিসিশান মেকিংয়ে তেমন ভ্যালু অ্যাড করে না; কারণ দেশটাই তো চলতেছে দুইনাম্বারি দিয়া!

বরং লোকজনের একটা জেনারেল পারসেপশন হইতেছে যে, যেহেতু কেউ দুইনাম্বারি করার সাহস করতেছে নিশ্চয় সে পাওয়ারফুল কেউ! ম্যানেজ কইরা ফেলতে পারবে শেষমেশ! আমাদের আশেপাশে কোন লোকটা দুইনাম্বারি না কইরা বাংলাদেশে কোটিপতি হইতে পারছে? বা পারবে বইলা আপনি মনে করেন?

এমনকি কেউ যদি বড় কোম্পানিতে, বিদেশি প্রজেক্টে চাকরি-বাকরি কইরা টাকা-পয়সা কামাই করে, তারেও তো আমরা সন্দেহ করতে পারি যে, কোন দুইনাম্বারি মনেহয় করছে, তা নাইলে এতো টাকা পাইলো কেমনে!*

আমি অবশ্যই জাস্টিফাই করতেছি না যে, ইভ্যালি’রে বা অন্য কোম্পানিগুলারে দুইনাম্বারি চালাইতে দিতে হবে! কারণ ইকনোমিক্যালি এইগুলা তো কোন বিজনেস-ই না। কিন্তু যেই দেশে সবকিছুতে দুইনাম্বারি চলে, সেইখানে আলাদা কইরা এইগুলারে দুইনাম্বারি বইলা যেইটা মিন করা হয় সেইটা হইতেছে যে, দুইনাম্বারি করার জন্য যেই ক্ষমতা দরকার, সেইটা আপনার নাই! এর বেশি কিছু না।

বাংলাদেশে বিজনেস করার বেসিক রুল হইতেছে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারতে হবে; সেকেন্ড হইতেছে, সরকারি কর্মচারীদের লগে (ইনক্লুডিং পুলিশ-মিলিটারি), সরকারি দলের লোকজনের লগে খাতির রাখতে হবে; আর থার্ড এবং মোস্ট ক্রুশিয়াল জিনিস হইতেছে, কাস্টমার ঠকাইতে পারতে হবে… এইগুলা হইতেছে বিজনেসের বেসিক বিজনেস নর্মস!

তো, এইরকম একটা দেশে লোকজন দুইনাম্বারি হইতেছে জাইনাও কেন এইসব জায়গায় টাকা ইনভেস্ট করতেছে – সেইটা না-বুঝার লাইগা যতোটা স্নব হইতে হয়, সেইটা এচিভ করাটাও একটা রেয়ার কোয়ালিটি মনেহয় 🙁

………
*গুলশানে নিজের বাড়িতে থাকা একজন খুবই ভদ্রলোক এবং ভালো-মানুশ কবিও যখন ফেসবুকে পোস্ট দিলেন, কোন দুইনাম্বারি কইরা টাকা উনি কামাই করেন নাই, তখন এইটা মনেহয় হইলো যে, এইরকম পাবলিক পারসেপশনের হিট’টা তো উনি ফিল করেন!

 

Leave a Reply