অগাস্ট ১৭, ২০২২
ইসলামি ব্যাংকিং নিয়া কিছু আলাপ চোখে পড়তেছে। তো, কিছুদিন আগে এইটা নিয়া একজনের লগে কথা কইতেছিলাম। যে, হঠাৎ কইরা ব্যাংকগুলা ‘ইসলামি ব্যাংকিং’ করতে ইন্টারেস্টেড হয়া উঠতেছে কেন?
এইখানে একটা মার্কেট তৈরি হইতেছে, একটা ডিমান্ড আছে বা লোকজন “ইসলামি রীতি-রেওয়াজ” মাইনা চলতে চাইতেছে – এইটা মেইন রিজন না এতোটা। মানে, এইটা তো আছেই, কিন্তু যে কোন কিছুর ইকনোমিক বেনিফিট’টারে কন্সিডারেশনে না নিতে পারলে ঘটনাটারে পুরাপুরি বুঝতে পারবো না আসলে আমরা। ইসলামি ব্যাংকিং করলে ব্যাংকগুলারও লাভ আছে একটা, খেলাপি-লোনের জায়গাটাতে। ইসলামি ব্যাংকিংয়ে যেহেতু সুদ নাই, লোন হয় নরমালি ডিল বেইজড। তিনমাস, ছয়মাস, এক বছর একটা বিজনেস কইরা লাভের একটা অংশ ব্যাংকরে দিতে হবে। এখন একটা ডিল যদি ডিফল্ট হয় হয়, দ্যান আরেকটা বড় ডিল ক্রিয়েট কইরা সেই খারাপ-ডিলটারে শোধ দিয়া দেয়া যায়, এতে কইরা ডিফল্ট-লোনের সংখ্যা ও সাইজ কম হয়, বা বলা ভালো কম দেখানো যায়। শোনা কথা, এই টেকনিক নাকি নিয়ম-নীতি মাইনাই খুব ভালোভাবে ইউজ করা যায়।…
মানে, ব্যাপারটা তো এতো সহজ কিছু না, অবশ্যই কিছু প্যাঁচ-গোচ আছে। কিন্তু ইসলামি-ব্যাংকিংয়ের আলাপে (অন্য সব আইডিওলজিক্যাল গপ-সপের মতোই) এই প্রাকটিসটার কথা বা এইরকম পসিবিলিটগুলা নিয়া কথা-বার্তা গ্রসলিং মিসিং বইলাই মনেহয়…
অগাস্ট ১৮, ২০২২
গত ১৫ বছর ধইরা বাকশালি আকাম-কুকামের ক্লোজ কোলাবরেট হইতেছে বাংলাদেশের জুডিশিয়ারি সিস্টেম; জামিন না দেয়া, রিমান্ডে পাঠানো, মিথ্যা-মামলাগুলা ঝুলায়া রাখা – এইগুলা হইতেছে মোটামুটি কমন ফিচার। ব্যাপারটা হইতেছে, কাউরে শায়েস্তা করা দরকার, প্যারা দেয়া দরকার, তার নামে একটা মামলা দিয়া দাও! কোর্ট-কাচারি হইতেছে বাংলাদেশের হাবিয়া-দোজখ!
তো, অইখানে কি একটা রায় জানি দিছে কয়দিন আগে, এই নিয়া দেখলাম বাকশালি-ফেমিনিস্টরা খুব অবাক! এইটা কি হইলো! অরা তো বিএনপি-জামাতের নামে মিথ্যা-মামলাগুলারে লিগালাইজ করবে! অরা মেয়েদের ড্রেস নিয়া কথা বলতেছে কেনো! এই লিগ্যাল সিস্টেম তো হইতেছে আমার ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস’ বাকশালের গোলাম, এরা আমাদের ব্যাপারে কথা-বলার ‘অধিকার’ কই থিকা পাইলো!
পুলিশের লোকজনও দেখবেন, পার্কে গিয়া স্টুডেন্ট ধরে, কারণ চোর-ডাকাইত তো নাই তেমন দেশে 🙂 তো, জজ-ব্যারিষ্টাররাও কি করবে, যেহেতু দেশে পুরাপুরি আইনের শাসন আছে, সমাজ-সংস্কারের কাজকাম করবে না একটু! আফটার অল, “সব দোষ তো সমাজের” এবং “এই সমাজ ভাঙতে হবে” দলের লোক তো মনেহয় উনারাও! 😛
অগাস্ট ২১, ২০২২
২১শে অগাস্ট নিয়া আজকে পত্রিকায়-টিভিতে-নিউজফিডে অনেক মর্সিয়া পাইবেন, কিন্তু ডিটেইল কোন ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট না পাওয়ার পসিবিলিটিই বেশি। যেন কে ঘটাইছিল এই ঘটনা – সেইটা আমরা সবাই জানি, মিডিয়া-ট্রায়ালের বেসিসে। জানাজানি শেষ আমাদের! 🙂
তবে সবচে চিন্তার ব্যাপার হইতেছে, রাজাকারদের বিচারের নামে যেইভাবে জামাতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদেরকে খুন করা হইছে, ২১ শে অগাস্টের বিচারের নামেও এইরকমের ঘটনা ঘটতে পারে। মানে, এইটা একটা রিভেঞ্জের টুল হয়া উঠতে পারে। বিচারের নামে প্রতিশোধের এবং অপোনেন্ট পলিটিক্যাল পার্টিরে শায়েস্তা করার যেই ট্রাডিশন বাংলাদেশে শুরু হইছে, এর থিকা বাইর হওয়া একটা কঠিন কাজই এখন।
একটা ট্রাজেডি এইখানে পরে কমেডি না, বরং আরেকটা ট্রাজেডির, জুলমের জাস্টিফেকশন হয়া উঠে। ২১শে অগাস্ট নিয়া এই ইমোশনাল বিল্ড-আপগুলাও অই “প্রতিশোধের রাজনীতি”র দিকে নিয়া যাইতেছে কিনা, সেইটা নিয়া এই কারণে আগে-ভাগেই সাবধান হওয়াটা দরকারি।
অগাস্ট ২৩, ২০২২
– বাংলাদেশের সাংবাদিকতা: একটা ইন্ড্রাষ্ট্রি ফেইলওর’রে ইন্ডিভিজ্যুয়ালের ক্রাইসিস হিসাবে হাইলাইট করার বিপদটা নিয়া –
আমাদের গ্রেট গ্রান্ডপা কার্ল মার্কসের অনেক কথাই আমি মান্য করি, তার মধ্যে একটা হইতেছে, যে কোন ইস্যুর ইকনোমিক আসপেক্ট’টারে খেয়াল করা।
এইটার কথা আবার মনে হইলো, বাংলাদেশের নিউজ-মিডিয়া বা সাংবাদিকতার জায়গাটারে অনেকে “বাধ্য হয়া” “চাকরি রক্ষার জন্য” “মালিকের গোলামি” করার জায়গা থিকা যখন ডিফেন্ড করার ট্রাই করেন, সেইটা দেইখা। তো, এইটা সত্যি কথা না। মানে, ব্যাপারটা এইরকম ‘সিম্পল ট্রুথ’র ঘটনা তো না-ই!
একটা ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমের মধ্যে বাঁইচা থাকতে হইলে নানা রকমের নেগোশিয়েশন আমাদেরকে করতেই হয়, ইন্ডিভিজ্যুয়াল লেভেলে; কিন্তু করাপ্ট হওয়াটা, ইভিল হওয়াটা যখন একটা প্রফেশনাল রিকোয়ারমেন্ট হয়া উঠে তখন সেইটা ইন্ডিভিজ্যুয়ালের ক্রাইসিস হিসাবে দেখানোটা না-বুঝতে-পারা’র কোন ঘটনা না, বরং কোনকিছু লুকাইতে চাওয়ার ঘটনাই হওয়ার কথা।
তো, একটা ইন্ড্রাষ্ট্রির ক্রাইসিসরে ইন্ডিভিজ্যুয়াল ফেনোমেমা হিসাবে শো করার ভিতর দিয়া কোন জিনিসগুলারে লুকানো হয় আসলে? এইখানেই আমার কথাটা, যে, এর ইকনোমিক ইম্পর্টেন্সটারে ভুলভাবে দেখানো হয়। অনেকেই বলেন যে, একটা বিজনেস-গ্রুপ বড় হইলেই তার একটা পত্রিকা, টিভি-চ্যানেল লাগে, নিজেদের বিজনেস ইন্টারেস্ট প্রটেক্ট করার লাইগা। কিন্তু এইটা সেকেন্ডারি ঘটনা। মাঝে-মধ্যে কাজে লাগে, কিন্তু সাংবাদিক পালতে হইলে নিউজপেপার, টিভি-চ্যানেল খোলার দরকার নাই তো এতোটা, টাকা-পয়সা দিলেই তো হয়! রিস্কও কম।
নিউজপেপার, টিভি-চ্যানেলের সবচে বড় ইকনোমিক বেনিফিট হইতেছে ‘কালা-টাকা’ শাদা করা। এইগুলা যেহেতু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি না, এদের কোম্পানি ফিনান্সিয়ালস আমরা জানি না, কিন্তু ট্যাক্স ফাইল থাকার কথা, সেইখানে পাওয়া যাবে, এরা কতো কোটি টাকা লস দেয়, বছর বছর। যদি ১০ কোটি টাকা লস দেয়, সেইটারে ১০০ কোটি টাকা দেখায়া ৯০ কোটি ব্ল্যাক-মানি হোয়াইট করতে পারার কথা, অন্য বিজনেসগুলার। এইটা হইতেছে মেজর ইকনোমিক বেনিফিট বাংলাদেশে, মিডিয়া-বিজনেসের।
এইটা সাংবাদিকরা জানেন না – এইটা আমার কাছে মনেহয় না। কিন্তু এইটা নিয়া কথা কইলে নিজেদের ভারনারিবিলিটিরে গ্লোরিফাই করাটা তো মুশকিলই হয়।… মানে, আমি বলতে চাইতেছি, সাংবাদিকরা তাদের নিউজ-টিউজের ভিতর দিয়া তাদের মালিকদেরকে এতোটা ইকনোমিক বেনিফিট দিতে পারতেছেন না, যদি পারতেন, উনাদের মান-সম্মান আরেকটু বেশি থাকার কথা। উনারা হইতেছেন একটা কাভার-আপ, মোস্টলি। (ধরেন, মুদির দোকানে মদ-বেচার মতো। মুদির দোকানের সাইনবোর্ডটা লাগে তো। এইরকমের একটা ঘটনা।) সাংবাদিকতা কইরা যদি মালিকরে লাভ দিতে পারতেন তাইলে কিছুটা বার্গেইনিং পাওয়ার থাকতো উনাদের। (যারা পারেন, তাদের আছে বইলাই মনেহয় আমার।) যেইটা এখন নাই এখন।
তবে এইটাই একমাত্র ঘটনা না। অন্য আরো জিনিস তো আছেই – একটা কালচারাল-ক্যাপিটাল গেইন করা, পলিটিক্যালি পাওয়ারফুল থাকা, ‘আধুনিক হওয়া’ পার্টি-সার্টি, গ্ল্যামার-ফেইম এভেইল করতে চাওয়া, নানান রকমের এজেন্ডা এইখানে আছে। কিন্তু অই তো, ইকনোমিক জায়গাটারে লোকেট না করতে পারলে অন্য অনেককিছুরেই ঠিকমতো রিড করতে পারবো না আমরা। আমাদের গ্রেট গ্রান্ডপা যেই ব্যাপারে বইলা গেছিলেন আমাদেরকে যে, খেয়াল করবা!
***
পলিটিক্যাল পার্টির এক নাম্বার কাজ হইতেছে যে কোন ইস্যুতে অ্যাক্ট করতে পারা, পিপলের লগে কানেক্টেড থাকতে পারা। শাহবাগের সময়ে বিএনপি’র কোন পলিটিক্যাল পজিশন ছিল-না না, বরং পলিটিক্যালি অ্যাক্ট করতে পারে নাই। পুরা সময়টাতে ছাত্রদল কোন মিছিল-মিটিং করে নাই, করতে পারে নাই, বা করাটা ঠিক মনে করে নাই। এক্টিভিটি মোটামুটি সাসপেন্ডেড অবস্থায় ছিল। অইটা একটা পলিটিক্যাল ভ্যাকুয়াম ক্রিয়েট করছিল।
এখন আইডিওলজিক্যাল পজিশনে ঠিক-ভুল থাকবেই। চীনপন্থী কমিউনিস্ট এবং মুসলিম লীগের লোকজন মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের পলিটিক্যাল পজিশনের কারণেই খালি বাতিল হয়া যায় নাই, পলিটিক্যালি অ্যাক্ট করার জায়গাগুলাতেও যাইতে পারে নাই আর। যারা অই দলগুলার লগে ছিলেন পলিটিক্স করতে পারেন নাই আর পরে, বা অন্য জায়গাতে গিয়া এক্টিভ হইছেন।
এইখানে আরেকটা কথা, বামদলগুলারে যে বাংলাদেশের মানুশ-জন পলিটিক্যাল দল মনে করে না (মোহাম্মদ ফরহাদের আমলে সিপিবি’র একটা ব্রিফ পিরিয়ড বাদ দিলে) এর কারণ এইটা না যে, এরা “বিপ্লবী-দল” (যেইভাবে অরা জাহির করতে চায় নিজেদেরকে), বরং এদের যতো শার্প ও ডিফাইনড আইডিওলজিক্যাল পজিশনই থাকুক, পলিটিক্যাল অ্যাক্ট নাই কোন (মিডিয়া-কাভারেজ আছে, যেইটা একই ঘটনা না), পিপলের লগে কোন কানেকশন নাই।
একটা কালচারাল সুপিয়রিটি ক্লেইম করার কারণেই পিপল এনগেইজমেন্ট’টারে কিছুটা বাজে-জিনিসই মনে করা হয়। যেইটারে মেবি বলা হইতো একটা সময় – “হঠকারিতা”, এই-সেই .. মানে, পলিটিক্যাল অ্যাক্ট ও পিপল এনগেইজমেন্টের জায়গাটা খালি মিসিং না, বরং অই জায়গাগুলাতে গেলে আপনি আর “কমিউনিস্ট”-ই থাকতে পারবেন না।
মানে, পলিটিক্যাল পার্টি নিয়া আলাপে, এই জায়গাটারে খেয়াল করাটা দরকারি মনে করি আমি।
অগাস্ট ২৭, ২০২২
এই জিনিসটা ইন্টারেস্টিং, তারিখের ব্যাপারটা। আজকে আরো স্পষ্টভাবে চোখে পড়লো। উইকিপিডিয়াতে দেখবেন, কাজী নজরুল ইসলামের মারা যাওয়ার তারিখ হইতেছে ২৯শে অগাস্ট; কিন্তু নিউজ-টিউজে আজকে* (২৭শে অগাস্ট) উনার মারা যাওয়ার দিন হিসাবে বলা হইতেছে।
কাজী নজরুল ইসলাম যেইদিন মারা গেছিলেন অইটা ছিল ইংরেজি সনের ১৯৭৬ সালের ২৯শে অগাস্ট, কিন্তু বাংলা সনের তারিখ ছিল ১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩। এখন কবি’র ব্যাপারে বেইজটা ধরা হয় বাংলা-সন, ১২ই ভাদ্র। বাংলাদেশে সরকারিভাবে ১৯৮৩ সালে বাংলা-তারিখ ফিক্সড করার পরে, ইংরেজি সনের লগে এলাইনড করার পরে ১২ই ভাদ্র হয়া গেছে ২৭শে অগাস্ট। (এর আগে বাংলা-সালের তারিখ আর ইংরেজি-সনের ডেইট একই ছিল না, একেক বছরে কয়েকদিন এইদিক-সেইদিক হইতো। এখন যেমন ১৪ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখ ফিক্সড, ১৯৮৩ সালের আগে তা ছিল না।)
বাংলাদেশে মোটামুটি সবকিছুই তো ইংরেজি তারিখ বেইজড। এই একটা বা কয়েকটা জিনিস যে, বাংলা-সন বেইজড হয়া আছে, এইটা ইন্টারেস্টিং জিনিস তো!
…
*ফেসবুক মেমোরিতেও একদিনের একটা হেরফের হয়, খেয়াল করছি… টাইম-জোনের কারণে মনেহয়
***
চা-ছরমিকদের মজুরি
আমরা যখন ভার্সিটিতে ২ টাকা দিয়া চা খাই, তখন শুনতাম শেরাটনে চা’র দাম ৫০ টাকা। আমরা হাসাহাসি করতাম ৫০ টাকা দিয়া কি চা খায় অরা! কেন খায়! কারা অরা!
গত বছরেও যখন ৫ টাকা দিয়া চা খাওয়া যাইতো তখন শুনলাম গুলশানে এক চা’র দোকান হইছে, সবচে কমদামি চা’র দাম নাকি ৫০০ টাকা! আমার কয়েকজন কলিগ হাসতেছিল, এইটা বইলা। তখন আর হাসি আসে নাই আমার তত একটা।
কারণ, ব্যাপারটা কিছুটা বুঝতে পারি, টের পাই এখন। মানে, এইটা তো চা’র দাম না, বা স্ট্যাটাসের দামও না, বরং একটা গ্রুপ অফ পিপলের এন্ট্রি রেস্ট্রিক্ট করা! শেরাটনে চা’র দাম যদি ১০০ টাকাও রাখে ফহিন্নি মিডল-ক্লাস চইলা আসবে না তখন চা খাইতে! ক্লাস কি মেইনটেইন করা যাবে! এই কারণে ২৫-৩০ গুণ ডিফারেন্স রাখতে হবে প্রাইসের।
প্রাইস ডিফারেন্সের এই নিয়মটা অন্য অনেক জায়গাতেও খাটে। যেমন ধরেন, চা-ছরমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থিকা ৩০০ টাকা করলে মুনাফা’তে বড় রকমের হেরফের হবে – এইটা আমার মনেহয় না। মানে, চা’র দাম বাড়ায়া এর চাইতে বেশি টাকা প্রফিট করা যাবে, এই ইস্যুরে কেপিটালাইজ কইরা।
কিন্তু মুশকিলটা হইতেছে, গরিবগুলার তো ডানা গজায়া যাবে! এরা তো টাকা জমানো শুরু করতে পারবে, কিছু টাকা জমায়া ঢাকা-চিটাগাং যাওয়ার বাস-ভাড়া ম্যানেজ কইরা “পালায়া” যাইতে পারবে। ২/৩ মাস থাকা-চলার ব্যবস্থা করতে পারলে অন্য গোলামি শুরু কইরা দিতে পারবে। এরা তো বান্ধা-গোলাম হয়া থাকবে না!
আর অন্য ইন্ড্রাষ্ট্রি থিকাও লোক ধইরা নিয়া আসা যাবে না, যেহেতু মজুরি সিগনিফিকেন্টলি কম হবে, বাড়ানোর পরেও। তার চাইতে বড় কথা হইতেছে, চা-বাগানের যেই ফরম্যাট’টা অইখানে রেসিডেন্ট-লেবার দরকার, যেইটা ভাইঙ্গা গেলে, মানে, কেউ পেটে-ভাতে থাকতে রাজি না হইলে সিস্টেমটা এইভাবে আর কাজ করবে না। এইটা হইতেছে মুশকিলটা।
এইটা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন, বাসা-বাড়িতে কাজের লোক না-পাওয়ার ভিতর দিয়া। এইটা শুরু হইছে গার্মেন্টস শুরু হওয়ার পরে। আগে বাসায় থাকতে-খাইতে দিলে, পরার কাপড় আর বছরে দুইবার বাড়ি যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিলেই ‘লোক’ পাওয়া যাইতো।
কিন্তু গার্মেন্টস হওয়ার পরে সবাই গার্মেন্টেসে চইলা যায়। গার্মেন্টেসে যে খুব শান্তি – তা না, কিন্তু সিস্টেমটাই আলাদা। গার্মেন্টেসে টাকা পাওয়া যায়, বাসা-বাড়িতে আগে যেইটা দিতো না। এখন দিলেও ‘লোক’ পাওয়া যায় না, কারণ খালি টাকা-পয়সা না, বেসিক ফ্রিডমটাই ছিল না অইখানে। আপনি ২৪ ঘন্টার গোলাম। গার্মেন্টেসে ১২-১৪ ঘন্টা ফ্যাক্টরিতে থাকলেও বাকি একটা সময় আপনার। যেই কারণে যেই মানুশ একবার গার্মেন্টেসে কাজ করছে শে বাসা-বাড়ির কাজে ফিরতে চাইবে না আবার। ফিরলেও ‘ছুটা বুয়া’ হিসাবে থাকবে, বাসায় থাকবে না। মানে, মিনিমাম কোন উপায় থাকলে বাঁইচা থাকার, ২৪ ঘন্টার গোলামিতে ফিরা আসতে চাইবে না কেউ।
টাকা-পয়সা তো আছেই, ফ্রিডমের জায়গাটাও এইখানে বড় ফ্যাক্টর। অনেকে দেখবেন হাসাহাসি করে যে, বু্য়ারা শর্ত দিতো আগে যে, “টিভি দেখতে দিতে হবে”; এখন মনেহয় বলে যে, “মোবাইল ইউজ করতে দিতে হবে”… তো, এইগুলা হইতেছে, ফ্রিডমের স্পেইসগুলা অনেকটা।
এই জায়গাটারে আন্ডারমাইন করার ঘটনাটা মিডল-ক্লাস ইন্টেলেকচুয়ালিটিতে, ক্লাস-হেইট্রেটের জায়গা থিকাই ঘটে বইলা মনেহয় আমার কাছে।
২.
তো, চা-ছরমিকদের মজুরি তাইলে বাড়ানো যাবে না? 🙂
না, আমার কথা হইতেছে, চা-বাগানের মালিকরা যেইভাবে জিনিসটারে চালাইতেছে, সেইখানে অরা ছাড় দিবে না, নানান ইকনোমিক এনালাসিস 😛 দেখাবে, ধানাই-পানাই করবে, এবং এমন কিছু জিনিস প্রপোজ করবে যাতে কইরা বান্ধা-ছরমিক পাইতে পারে সবসময়ের জন্য।
এইটা অন্য কেউ জানেন না – এইটা আমার মনেহয় না, তারপরও এই জায়গাটারে ওভারলুক করা হবে। বলা হবে, আজাইরা কথা এইগুলা! মিডলক্লাস ইন্টেলেকচুয়ালরাও কম ইন্টারেস্ট দেখানোর কথা, এইরকম বেসিক জায়গাগুলাতে। অথচ এই জিনিসগুলা তো আমাদের চোখের সামনেই ঘটতেছে। নিজেদেরকে যে দেখতে রাজি করাইতে পারতেছি না আমরা – এইটারেই একটা বড় মুসিবত মনেহয় আমার কাছে।
***
আম্মা, আব্বা, বাংলা-ভাশা
১.
কাজী নজরুল ইসলামের “অগ্নিবীণা” বইটা পড়তেছিলাম। বাংলা ১৩৩০ সালে ছাপানো সেকেন্ড এডিশন। নজরুল তখন জেলে।… তো, কলোনিয়াল আমলে কলকাতায় ছাপানো বাংলা-বইগুলা অনেক দিক দিয়াই ইন্টারেস্টিং। একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা হইতেছে, মুসলমান লেখকদের বইয়ে ‘টীকা’ বা শব্দের বাংলা-অর্থ লেইখা দেয়া হইতো। অগ্নিবীনা’তে এইরকম একটা শব্দ হইতেছে – “আম্মা”, যার অর্থ লেখা হইছে “মাগো”।* (পেইজ ৫৫)
(*কবিতার লাইনটা এইরকম:
“নীল-সিয়া আসমান, লালে লালে দুনিয়া –
“আম্মা! লাল তেরি খুন কিরা খুনিয়া”)
মানে, আম্মা অর্থ মা (একটা ওয়েব সাইটে পাইলাম, ‘মাগো’ বদলায়া ‘মা’ লেখা হইছে, মানে, জিনিসটা চালু আছে এখনো) – এইটা জানানোই আসল ঘটনা না, ঘটনা হইতেছে “আম্মা” শব্দটা যে “বাংলা” না, এবং লেখা উচিত না এই সাজেশন দেয়া। খালি সাজেশনও না, ফিউচারে কেউ যাতে না লেখেন, লেখলে যে ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ বিরোধী একটা ব্যাপার হইতে পারে, সেই ব্যাপারে সাবধান করা এবং ‘প্রচ্ছন্ন’ হুমকি দেয়া আসলে।
এর আগে, মীর মোশাররফ হোসেন’রে, “বিষাদ-সিন্ধু”তে “মসনদ” লেখার কারণে ফুটনোটে “চপেটাঘাত” করা হইছিল এইভাবে যে, “মসনদ পারস্য শব্দ। অনেকে যে মসনদ শব্দ ব্যবহার করেন, তাহা সম্পূর্ণ ভ্রম।” (পেইজ ১০, ১৩৪২ সালের এডিশন।) মানে, ‘মসনদ’ লেখা যাবে না, ‘রাজসিংহাসন’ বা এই টাইপের কিছু লেখা লাগবে।
এর কারণ খালি এইটা না যে, ব্যাকরণের নিয়মে পড়ে না, বরং এই টেক্সট এবং বইগুলা ধইরা নিতেছে যে, বই তো পড়বে ‘শিক্ষিত হিন্দু’রা, অরা তো এইসব শব্দ চিনে না! এমনকি ‘বিষাদ-সিন্ধু’তে ইসলামি-বিয়ার রীতি-নীতিও বুঝায়া দিতেছেন মীর মোশারফ হোসেন, যে ‘পাঠক’ তো বুঝবেন না! বাংলা-ভাষায় কথা বলেন, পড়তে পারেন এবং ধর্মে মুসলমান – এইরকম লোক তো নাই! মোস্টলি হিন্দুরাই তো বইটা পড়বেন, এইটা হইতেছে অনুমানের জায়গাটা।
এখনো এই অনুমানের জায়গা থিকাই বাংলা-ভাষার বই লেখা হয়…
২.
২০১১ সালের দিকে মনেহয় বা তারও পরে ফেসবুকে আমার বাপের একটা ছবি দিয়া ক্যাপশন দিছিলাম – “আম্মার আব্বা”। অই ছবি’র ক্যাপশন দেইখা অনেকেই (এটলিস্ট ৫০% তো হবেই) হাসাহাসি করছিলেন এই ভাইবা যে, আমি মনেহয় ফাইজলামি কইরা “আব্বা” লেখছি। শুদ্দ-বাংলায় লেখলে তো ‘বাবা’ লেখার কথা না!
(তারপরে মেমোরি’তে যখন কয়েকবার আসছে, হাসি থামছে অনেকের। তখন বলছিলাম, আমাদের লেখালেখি’র একটা কন্ট্রিবিউশন এইটা, ‘আব্বা’ লেখা যায় এখন, বাংলা-ভাষায়।)
এখন আব্বা, আব্বাজান, বাপ, এই শব্দগুলা কবেত্তে ভুল-বাংলা হইলো? এইটা হইতেছে কলোনিয়াল বাংলার কন্ট্রিবিউশন – দেশি-শব্দগুলারে ‘ভুল’ বানায়া দেয়াটা।
এই ট্রাডিশনের জায়গা থিকাই লোকজনের বলাবলির মধ্যে যেইসব শব্দ আছে, তারে হেইট করার জায়গাটা চালু হইছে। ‘লেবার’ কইতে পারবেন, কিন্তু লেখলে ‘বাংলা’ হবে না, এমনকি যেমনে বলে লোকজন ‘ছরমিক’, সেইটাও হবে না! লেখা লাগবে ‘শ্রমিক’ – তা নাইলে বাবুগিরি হবে না! মানে, ‘বাংলা’ হবে না!
এই বুলশিট’টারে আর কতোদিন যে খেয়াল না কইরা থাকবো আমরা, আল্লা জানে!
৩.
কয়দিন আগে দুইটা বই ছাপাইছি আমরা। ‘ভাষা’ না লেইখা বইয়ের কাভারে লেখছি ‘ভাশা’। (আমাদের একজন এডিটরের পরস্তাব আছে ‘ষ’ না লেখার।) আর কি যে গালি-গালাজ পোস্টের কমেন্টে, চিনি-না জানি-না এইরকম লোকজনই সব। তখন আরো টের পাইছি, এইটা ‘ব্যাকরণ-সম্মত’ কোন বাংলা লেখার ঘটনা না, বরং মোস্টলি ক্লাস-হেইট্রেটেরই একটা ঘটনা।…
***
পোশাকের কান্না ২
ধরেন আপনার কাছে দুই টুকরা কাপড় আছে। এক টুকরা কাপড় দিয়া আপনি পাছা ঢাকলেন, আরেক টুকরা কাপড় দিয়া মাথা ঢাকলেন। আর দুই হাত দিয়া “বুকের আব্রু রক্ষা করলেন”। তাইলে আপনি হইতেছেন ইসলামিস্ট।
ধরেন আপনার কাছে দুই টুকরা কাপড় আছে। এক টুকরা কাপড় দিয়া আপনি পাছা ঢাকলেন, আরেক টুকরা কাপড় দিয়া বুক ঢাকলেন। কিন্তু কায়দা কইরা একটু পেট দেখায়া দিলেন। (এইটা ক্রুশিয়াল, মাস্ট, করা-ই লাগবে। এইটা ছাড়া হবে না।) তাইলে আপনি হইতেছেন সেক্যুলার।
ধরেন আপনার কাছে দুই টুকরা কাপড় আছে। এক টুকরা কাপড় আপনি উন্নয়নের নিশান উড়াইতে গিয়া হারায়া ফেলছেন। আরেক টুকরা কাপড় দিয়া পাছা ঢাকবেন, না বুক ঢাকবেন, না মাথা ঢাকবেন বুঝতে পারতেছেন না।… জ্বী, ঠিক ধরছেন, আপনি হইতেছেন বাংলাদেশের নাগরিক!
অগাস্ট ৩০, ২০২২
যে কোন ইস্যু ইকনোমিক গ্রাউন্ড এবং পলিটিক্যাল পাওয়ারের লগে মিলায়া দেখতে হবে; মানে, এই দুইটারে বাদ দিলে ইস্যুটারে বুঝা যাবে-না না, বরং পুরা আলাপটারে মিসলিড করা হবে আসলে। ড্রেস নিয়া আলাপেও এই কাজটাই করা হইতেছে। দেশের বর্তমানের ইকনোমিক দুর্দশা এবং পলিটিক্যাল জুলুমরে আড়াল করার একটা ঢাল হিসাবে ইউজ করা হইতেছে। (যে সমাজে কালচারাল ডিফরেন্স থাকবেই, সেইটারে পলিটিক্যাল কইরা তোলাটা বেশিরভাগ সময়ই কোন না কোন শয়তানির জায়গা থিকাই করা হয়।)
ইকোনিকম জায়গা থিকা, যে কোন ড্রেস-ই এভেইলেবিলিটির এবং এফোরডিবিলিটির একটা ঘটনা। যেমন ধরেন, বলা হয় যে, সবাই এখন খালি ফাস্ট-ফুড খায়, কিন্তু ফাস্ট-ফুড ছাড়া রাস্তা-ঘাটে আর কোন জিনিসটা খাওয়ার উপায় আছে আপনার? ঢাকা শহরে এতো যে শপিং-মল, কাপড়ের দোকান, কয়টা দোকানে লুঙ্গি বেচা হয়? কিন্তু ফুটপাতেও হাফ-প্যান্ট, থ্রি-কোয়ার্টার পাইবেন। এবং দামেও শস্তা। (আমি শিওর না, তারপরেও ধারণা করতে পারি যে,) হাজার টাকার নিচে কোন শাড়ি কিনতে পাইবেন না, কিন্তু একশ টাকা হইলে এখনো গেঞ্জি-টি-শার্ট পাইবেন, এবং হাজারে হাজার, তো বাসায় মেয়েরা, ছেলেরা গেঞ্জি-টিশার্ট কেন পিন্দবে না?… মানে, ঘটনাটারে আপনি এভেইলেবিলিটির এবং এফোরডিবিলিটির জায়গাটারে খেয়াল করেন।
এই জিনিসগুলা দামে কম এবং বেশি পাওয়া যায়, গার্মেন্টেসের কারণে। গার্মেন্টসের আগে এই সুযোগটা এতোটা ছিল। গার্মেন্টসের বিজনেস যদি কইমা যায়, ফ্যাক্টরিগুলা যদি বন্ধ হয়া যায়, ঘটনাটা একইরকম থাকতে পারবে না।
আবার হিজাবের ঘটনা’টা যদি খেয়াল করেন, দেখবেন এই জিনিসটা হিস্ট্রিক্যালি কখনোই প্রমিনেন্ট ছিল না বাংলাদেশে, ছিল ওড়না-বোরকা, ছিল (মিডল-ক্লাস) মেয়েদেরকে বাড়ির বাইরে না-যাইতে-দেয়া, বাজারে না যাইতে দেয়া। সেই জায়গায় এখন ঘটনাটা হইতেছে, বোরকা-হিজাব পিইন্দা যাইতে হবে। এই বোরকা-হিজাবের ফ্যাশনটা (যে কোন ড্রেসরেই ফ্যাশনের জায়গা থিকা দেখতে পারতে হবে আমাদেরকে) শুরু হইছে মিডল-ইস্টে এবং মুসলিম দেশগুলা আদম-পাচার শুরু হওয়ার পর থিকা। মালয়েশিয়াতে মেবি এইরকম আছে মোস্টলি যে, মেয়েরা জিন্স-টিশার্টের লগে হিজাব পড়তেছে। এইটা এখন বাংলাদেশে ফ্যাশন হিসাবেও একটা নিউ-লুক দিতে পারতেছে তো! (চয়েস এবং অপ্রেশনের আলাপের বাইরেই।)
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, একটা সমাজের ইকনোমিক এবং পলিটিক্যাল স্ট্রাকচারের বাইরে কালচার আলাদা কোন জিনিস না, ইন্ট্রিগ্রেটেড ঘটনাই অনেকবেশি। এরে গ্লোরিফাই করা থামাইতে হবে। কালচারাল-এনিমেলদের ফ্রিডম-প্রপাগান্ডা খুবই ন্যারো একটা জিনিস। স্পেশালি যখন এইটা পলিটিক্যাল জুলুমরে জাস্টিফাই করার একটা হাতিয়ার হয়া উঠে।
Leave a Reply