ক্যামেরাগিরি। ফরহাদ মজহার। আগামী প্রকাশনী। ফেব্র“য়ারি ২০১০। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা। পৃষ্টা: ৫৪। মূল্য: ১০০ টাকা।
কবিতাগুলির মধ্যে ‘বাণী’ হওয়ার একটা বাসনা আছে – প্রথম কয়েকটা কবিতা পড়ার পর এই কথা মনে হইলো। যা কিছুই বলা হইতেছে, তা একটা উদ্দেশ্য থিকা বাইর হয়া আসতেছে, যার ফলে কবিতা লিখা এমন একটা অ্যাক্টিভিটি যার ভিতর দিয়া কিছু কথা বলা যাইতেছে। কবিতা অ্যাজ অ্যা ফর্ম একটা মিডিয়াম-ই, একটা ইনোভেশন না আর। মানে প্রি-ফিক্সড যে ভাবনা, তার প্রকাশ আছে। কবিতা লেখাটা, লেখকের ইনটেনশনের বাইরে আর কিছুই না, এইরকম হতাশা আসছে, মনে। মানে, কবিতা’তে কবি তো নিজের কথা কইবেনই, কিন্তু কবিতা ব্যাপারটা যদি হয়া উঠে এক রকমের ‘সমাজ-বিপ্লবের হাতিয়ার’, ‘সমাজের দর্পন’ ‘সার্টেন আর্দশের ঘটনা’ এইরকমের আজাইরা জিনিস, তাইলে তো মুশকিলই। (এইগুলি থাকতে পারবো না – তা না, এমনিতেই তো থাকে।)
এই ভাবনা পার হয়া যখন সামনের দিকে যাই; দেখি যে, দুইটা ঘটনা – তাকায়া থাকা আর দেখা। এই ডিফরেন্সটা তো স্পষ্ট-ই; মানে তাকাইয়া থাকা যেইখানে যাওয়া যাইতেছে না, ধাক্কা দিলেই হয়তো দরোজা খুলবে; আর যেইখানে দেখা, সেইখানে কোন দরোজাই নাই।
কি নাই – তা তো কইলাম, এইবার তাইলে বলি কি আছে কি আছে।
এই কবিতায় ন্যারেশন আছে। সাম্প্রতিক আছে, যেহেতু এরা (এইসব উপমা, দৃশ্যকল্প) সাময়িক, এদের অমরত্বে সওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা নিয়া আছে। সেক্স পার হওয়ার পরের প্রেম আছে।
পুরুষের নারীবেশ শুইনা মনে হইলো, বেশিরভাগ নারীই আসলে সোশ্যাল (বা বলা ভালো মিডিয়া) ন্যারেশনের দিক দিয়া ইনফিরিয়র’র পুরুষের রূপ; যেমন ধরেন, নারী মোহাম্মদ আলী, নারী বেকহ্যাম, নারী সার্ত্র, এইরকম। পুরুষের নারীভাব যে একেবারেই দুর্লভ সেইদূর পর্যন্ত আভাস আছে, অথবা আমি ভুলভাবে সেই কণা দেখতে চাইছি। দারুণ বর্ষাকাল আছে তার আন্তর্জাতিকতাসহ, ‘কাব্য’ আছে আবেগ আর কাঁপা কাঁপা অনুভূতিসহ; শহর আর তার অদূরে দূরবর্তী গ্রাম আছে।
খুব বাজেভাবে বলতে গেলে, আল মাহমুদ কলকাতার যেই ‘গ্রাম-ভাবনা’রে একরকমের ভিজিবল করছেন বাংলা-কবিতাতে, তার কিছু এক্সটেনশনই আছে। এইটুক বইলা থাইমা গেলে আসলে একটু ভুল-ই বলা হবে। ভাষার জায়গাটাতে কাজী নজরুল ইসলাম যেইরকম আরবী-ফার্সী শব্দ ইউজ করার সাহস’টা দিছেন, কিন্তু ‘আধুনিক’ হইতে গিয়া হইতে পারেন নাই; ফররুখ আহমদ যেইরকম ইসলামের ‘আধুনিক’ জায়গাটারে সাবস্ক্রাইব করতে গিয়া এলিটিজমরে হাতছাড়া করতে রাজি হইতে পারেন নাই; আল মাহমুদ যেইরকম ‘গ্রাম-বাংলা’রে পোট্রেট করতে গিয়া কলকাতা বা কলোনির হ্যাং-ওভার’রে ছাড়াইতে পারেন নাই; ফরহাদ মজহারও ‘মুসলমান’ আইডেন্টিটিরে আপহোল্ড করতে গিয়া ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটি’রে ইগনোর করতে চান নাই; কিন্তু আইডেন্টিটির পলিটিক্সটারে এই গ্রাউন্ড থিকা দেখতে যাওয়াটাই তো চিন্তার আসল ট্রাপ’টা। ফরহাদ মজহার উনার কবিতায় এই কাজ-ই করছেন – এইটা আমার ক্লেইম না। কিন্তু এই জিনিসগুলি এমবেডেড আছে উনার কবিতায়।
কিন্তু ঘুইরা ফিরা আগের পয়েন্টটাতেই আসি আবার, এই জিনিসগুলি কবিতা কেন হইলো? মানে কবিতাই তো! গান হইতে পারে, চিন্তা হইতে পারে, প্রবন্ধ হইতে পারে, আলোচনা অনুষ্ঠান হইতে পারে, কিন্তু কেন কবিতা? মানে, এতসবকিছুর পরেও একটা বাজে উদাহারণ মনে আসতেছিলো, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানও কিছু কবিতা লিখছিলেন, মানে, কবিতার ফর্মে কনটেম্পরারি সোশ্যাল কিছু ইস্যু নিয়া। ফরহাদ মজহার এইরকম কাজ করছেন – তা না; মুহম্মদ হাবিবুর রহমান যেইরকম প্রাইমারিলি সমাজ ও রাজনীতির জিনিসরে ডিল করছেন সেইখানে ফরহাদ মজহারের সামাজিকতারে ডিল করার প্রসেসটাও অন্যরকম। কিন্তু ভাবতেছিলাম উনি যে ডিল করার জায়গা থিকা দেখছেন, আর উদাহারণ হিসাবে যে মনে আসলো, এই মিলের জায়াগাটা কি একটা বয়সের বা জেনারেশনের একটা কিছু কিনা? মানে, ‘সোশ্যাল’ জায়গাগুলিতে এনগেইজ হওয়ার যে তরিকাটা, সেইখানে মিলের জায়গাগুলি তো আছে কিছু।
এতসব কিছু বলার পর মনে হইতে থাকে, থাকা আর না-থাকা (মানে হয়তো বলা আর না-বলা) এমন আর কি বিরাট পার্থক্য! কবিতা যাঁরা লিখতেছেন, তারা কি না-বলাগুলারেই বলতেছেন না, বলা জিনিসগুলারে হাইড করতে গিয়া? কিন্তু এইরকম উদাসি হয়া যাওয়াটা বা আনসার্টেনটিটির জায়াগাটাতে রিচ করাটাও কবিতার কোন ঘটনা না। কিন্তু এইরকম খুঁজতে থাকার ব্যাপারগুলি খুবই ভিজিবল উনার কবিতায়।
আমি যেই কপিটা কিনছি, সেইটার একটা ফর্মার প্রিণ্ট (পৃষ্টা৩৩ – পৃষ্টা৪৮) খুবই বাজে। ছাপা মোটামুটি।
এডিটেড অন মার্চ, ২০১৯।
Leave a Reply