এপ্রিল ১১, ২০২২
অনেক সময় এই জিনিসটা আমার মনেহয়, এই যে “ধর্মীয় উন্মাদনা” “কুসংস্কারচ্ছন্ন লোকজন” “রিপোর্ট করা” এইগুলাতে ফেসবুক-বট, পেইড-আইডি টাইপের জিনিসগুলা অনেকবেশি ইনভলব।
মানে, মব বইলা কিছু নাই না, এই মব’টারে আসলে অনেকবেশি তৈরি করা হয়। আর এইটা অনেক বেশি ডাইরেক্টেড থাকে, যারা মনে করেন যে, না, এইরকমের একটা “গোষ্ঠী” তো আছে! [আবারো বলি, নাই – এইটা আমার ক্লেইম না, কিন্তু] এইটা হইতেছে “প্রমাণ”টা, যে দেখেন! যদি না থাকতো, আপনার আইডি কে রিপোর্ট করতো! কে এইরকম গালি-গালাজ করতো!
তো, আমি যেইটা মনে করি, একজন মানুশ মব-এর পার্ট হয়া উঠার চাইতে এইখানে একটা মব-কালচারটারে ট্রিগার করাটা হইতেছে ঘটনা, আর এইটা খুব অটোমেটিক্যালি ঘটে না, বেশিরভাগ সময় ঘটানোই হয়। যেন আমার মনের ভিতরের মব-ফিলিংসটা জাইগা উঠতে পারে, জাস্টিফাইড হইতে পারে তখন 🙂
মানে, ব্যাপারটারে কন্সপিরেসি থিওরির জায়গা থিকা না দেইখা মিডিয়া-রিয়ালিটির মতোই এক ধরণের রিয়ালিটি-জেনারেটিং মেশিন হিসাবে দেখতে পারলে বেটার। আপনার নিউজফিডে যদি ১০টা পোস্ট আসে একটা সাবজেক্টে তখন আপনারও অইটা নিয়া কথা-বলার, একটা পারসপেক্টিভ প্রোভাইড করার আর্জ তৈরি হইতে থাকার কথা তো।
তো, নিউজফিডে অই স্পেইসটারে কেমনে অকুপাই করা হইতেছে, অই ঘটনাটার কথা বলতে চাইতেছি আর কি…
এপ্রিল ১২, ২০২২
একটা জিনিস খেয়াল কইরা খুব সারপ্রাইজড হইছি, মানে, ব্যাপারগুলা তো চোখের সামনে আছেই, কিন্তু খেয়াল করা হয় না অইভাবে।
ঘটনা’টা হইতেছে, নন-কলোনিয়াল লিটারেচারের যেই ধারা (ধরেন, লালন, রাধারমণ, হাছন) সেইখানে তেমন কোন ফিমেইল-ফিগার পাইবেন না, ১৮ শতকের দিকে, এবং মেবি এখনো নাই। এর আগে খনা, রামী, চন্দ্রাবতী, যেই কয়টা নাম আছে, উনারা মোটামুটি একসেপশনাল ঘটনাই। কমন বা রেগুলার একটা ঘটনা হিসাবে দেখতে পাই না আমরা।
তবে “বঙ্গের মহিলা কবি” বইয়ে যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত ‘অভিজাত নারীদের’-ই মনেহয় জায়গা দিছেন। এইটা মনে হইছিল বিনোদিনী দাসীর নাম না দেইখা। মানে, “সাহিত্য’ তো সবসময় কলোনিয়াল জিনিসই। কলকাতার অভিজাত-সম্প্রদায়ের বাইরের জিনিসগুলারে “গ্রাম্য” “ফোকলোর” বা “মধ্যযুগীয়” ঘটনা হিসাবেই আইডেন্টিফাই করা হয়, সেইটা ধরেন ২০০০ সনে লেখা হইলেও।
তো, সেইখানেও কবি/বয়াতি (মানে, সিঙ্গার বা মিউজিশিয়ান পাইলেও রাইটার) হিসাবে কোন ফিমেইল-ফিগার যে আমরা পাই না, অই ঘটনা’টা মনেহয় খেয়াল করাটা দরকার। মানে, কলোনিয়াল-ধারা’তে ‘নারী কবি’ ক্যাটাগরি নিয়া আমরা হাসি-ঠাট্টা তো করতেই পারি। কিন্তু খারাপ-ভালো কিছু নাম ও কাজ আমরা পাই। বাউল-ভাটিয়ালি-মুর্শিদি যেই ধারাটা আছে সেইখানে এই ঘটনাগুলা কি একদমই নাই?
এটলিস্ট এখনো তো জানি না আমরা। আমি জাস্ট কোশ্চেনটা রাখলাম। যদি থাকেও, সেইটা যে ভিজিবল হইতে পারে না অইটা খালি ট্রাডিশন না, কোন অপ্রেশনের ঘটনাও কিনা…
***
যে কোন কালচারাল ইভেন্ট আসলে কখনোই নন-পলিটিক্যাল জিনিস না।
কিন্তু পয়লা বৈশাখের দিনে সকালবেলায় ছায়ানটের গান-গাওয়ার ঘটনাটারে যেমনে পাকিস্তান আমলে আইয়ুব-সরকারের বিরোধিতা বা পতন ঘটানোর জিনিস হিসাবে হাইলাইট করা হয়, এইটা ঠিক না আসলে। অই সময়ের সরকার হয়তো একটু অপছন্দ করছিল, মতের মিল হয় নাই; এর বেশি কিছু এইখানে থাকার কথা না। কিন্তু পরে ব্যাপারটারে ফুলায়া-ফাঁপায়া, সিগনিফিকেন্ট কইরা তুলতে চাওয়া হইছে।
একইভাবে ১৯৮৯ সাল (?) থিকা শুরু হওয়া ঢাকার চারুকলার “মঙ্গল শোভাযাত্রা”র শুরুর দিকে “স্বৈরাচার-বিরোধী” একটা ক্লেইম ছিল। পরে যেইটা “সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী” হইছে। মানে, আমরা খালি আমোদ-ফূর্তিই করতেছি না, একটা পলিটিক্যাল অ্যাক্ট করতেছি – এই জিনিসটা যতোটা জোশ দিতে পারে, তারে বাদ দিলে এর সিগনিফিকেন্সটা কইমা আসে তো কিছুটা।
আমার কথা হইতেছে, এই কানেকশনগুলা আছে কি নাই – এইটার চাইতে পিপল এর লগে কেমনে কানেক্টেড হইতেছে, সেইটা খেয়াল করাটা বেটার হইতে পারে।
আমি দেখি যে, এইরকম চৈত্র-সংক্রান্তির মেলা (৩১শে চৈত্র), “বান্নি”, হালখাতা, নানান রকমের সেলিব্রেশন ছিল বা থাকার কথাই। তবে অইগুলা ছিল “গ্রামের মেলা” 🙂 কিন্তু ঢাকা অ্যাজ অ্যা মেট্রোপলিটন-সিটি, রাজধানী, সেলিব্রেশনের জায়গাটা মিসিংই ছিল এইখানে। মেইনলি অই কালচারাল নিড’রে স্যাটিসফাই করতে গিয়া ঢাকা-ভারসিটির ক্যাম্পাস বেইজড এই প্রোগ্রামগুলা শুরু হইছে, (ষাট-সত্তরের দশকের ইনিশিয়েটড হইলেও) আশির দশকে আইসা। বাংলাদেশের ‘শিক্ষিত’ মিডল-ক্লাসের কোন কালচারাল ইভেন্ট অইভাবে নাই।
রমনা-টিএসসি-চারুকলার পয়লা বৈশাখ হইতেছে শহুরে, শিক্ষিত, মিডল-ক্লাসের কালচারাল ইভেন্ট।*
যার ফলে দেখবেন এই ‘পহেলা বৈশাখ’ বা ‘বর্ষবরণ’ টাইপের ‘উৎসব’গুলা অন্য সব ভারসিটির ক্যাম্পাস-বেইজড ঘটনাই মোস্টলি। স্কুল-কলেজের ঘটনাও। এবং শহরের। শহরের হইলেও পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত এখনো অইভাবে যাইতে পারে নাই। যদিও ধানমন্ডি, বারিধারা, উত্তরাতেও পয়লা বৈশাখের প্রোগ্রাম এখন হয়। তারপরও সেন্টারের ক্লেইম এখনো চারুকলা আর ঢাকা ভারসিটিতেই আছে। কিন্তু এর দাপট কইমা আসতেছে।
একটা সময়ের আইয়ুব-বিরোধী, এরশাদ-বিরোধী কালচারাল ইভেন্ট এখন পলিটিক্যালি বাকশালি-ন্যারেটিভের বাইরে যাইতে পারেতেছে না। জালিম এর দুশমন না, বরং জুলুমের তাবেদারিই করতেছে। যার ফলে বাতিল হয়া উঠতেছে কালচারালি। যদি এই ধারাতেই থাকে, ধীরে ধীরে এন্টি-পিপল ঘটনাই হয়া উঠার কথা আরো (যেইটা আগে ছিল না বইলাই আমার ধারণা)।
…
*কিন্তু তাই বইলা একটা ক্লাসের ঘটনা হয়াই থাকে নাই। ঢাকায় এখনকার ডেড-লক ট্রাফিক জ্যাম শুরু হওয়ার আগে সাইকেল-চালানোর ঘটনা দিয়া এইটা টের পাইবেন কিছুটা। একদল শিক্ষিত, শৌখিন, অভিজাত লোকজন সাইকেল চালানো শুরু করছিলেন। দামি দামি সাইকেল, হেলমেট, ড্রেস-আপ, লাইট, গিয়ার লাগায়া। অইগুলা দেখলে বাস-সিএনজি-প্রাইভেটকার সাইড দিতো, উনারাও শান্তি মতো চালাইতে পারতেন। তো, সাইকেল জিনিসটা তো ভালো। উনাদের দেখাদেখি গরিব লোকজনও কিছু সাইকেল নিয়া রাস্তায় নামছিল। কিন্তু টিকতে পারেন নাই। বাস-সিএনজি তো দূরের কথা রিকশাই চাপাইতে চাপাইতে রাস্তা থিকা ফালায়া দিতো।… মানে, পয়লা বৈশাখ শহুরে হয়া উঠাতে গেরামের মানুশ-জনও এইটা নতুন ফর্মে ফলো করতে পারতেছিল, আনটিল রিসেন্ট পাস্ট।
এপ্রিল ১৩, ২০২২
– “এসো হে খাজনা ও টাকা, এসো হে সুখ” –
“তোমরা জেনে খুব অবাক হবে যে” পয়লা বৈশাখের গান রঠা ছাড়া আর তেমন কেউ লেখেন নাই!
তারপরে যদি তোমরা খেয়াল করো তাইলে দেখতে পাবা যে, চৈত্র-বৈশাখে গেরামে ও গঞ্জে ‘উৎসব’ করার মতো কিছু ছিল না, বরং অই সময়টাতে ধান-চালের অভাবই থাকতো একটা সময়, কম-খাইয়াই বাঁইচা থাকার কথা, হিস্ট্রিক্যালি। [শাক ও ভর্তা খাওয়ার ঘটনা পাইবেন কিছু।]
মঙ্গা জিনিসটাও সেপ্টেম্বর-নভেম্বরের পাশাপাশি মার্চ-এপ্রিলের সময়টাতেও ছিল একটা সময়। (হাউএভার, এখন ঘটনাগুলা একইরকম নাই।) মানে, এই সময়টাতে, ‘হাজার বছর ধইরা’ সেলিব্রেশনের কোন অকেশন কেমনে থাকার কথা যে, লোকজন গান গাইবো, মৌজ-মাস্তি করবো? মানে, হোয়াই?
যে কোন কালচারাল জিনিস, সোসাইটির ইকনোমিকসের বাইরের ঘটনা তো না, কখনোই!
ও, জমিদার খাজনা আদায় করতো তো! (বৈশাখ মাস ছিল সেইটা?) মহাজনের পাওনা মিটানোর সময় ছিল তো এইটা! [এইটা মোটামুটি শিওর।]
তো, ঢোল বাজায়া খাজনা আদায়ের, ‘পাওনা’ আদায়ের, জমি-দখলের গান জমিদারের পোলাদেরই তো লেখার কথা! আর সেই ট্রাডিশনরে এখন মানতে পারার ভিতর দিয়া নিজেদেরকে জমিদারের নাতি-পুতিও মনে হওয়ার কথা না আমাদের! 🙂
এপ্রিল ১৪, ২০২২
– ফ্যাক্টবাজ ইন্টেলেকচুয়াল কি ফাঁপড়বাজ ইন্টেলেকচুয়ালের চাইতে ভালো? 🙂 –
ফেইসবুকের ফ্রি-ফ্লোয়িং ইন্টেলেকচুয়ালিটি তো আছে, কিন্তু এতোদিন পর্যন্ত ইন্টেলেকচুয়ালিটি ছিল আসলে বুকিশ বা একাডেমিক একটা ঘটনা।
অই জায়গাটা এক ধরণের পাবলিক এনগেইজমেন্টের মধ্যে এখন আসতে চাইতেছে বইলা আমার ধারণা।
মানে, নিউজ-মিডিয়ার ওকালতি করার ভিতর দিয়া, তাদের মাউথ-পিস হওয়ার ভিতর দিয়া অই চেষ্টা’টা তো আছেই। মানে, ইন্টেলেকচুয়ালিটি যতোটা না একটা আরগুমেন্টের ঘটনা, তার চাইতে অনেক বেশি সোশ্যাল-পজিশনের ঘটনাও তো অনেকটা।…
তো, পাবলিক এনগেইজমেন্টের জায়গাতে এইরকম বুকিশ-ইন্টেলেকচুয়ালদের একটা টেকনিক খেয়াল করতে গিয়া এইসব জিনিস মনে হইতেছিল। ফ্রি-ফ্লোয়িং ইন্টেলেকচুয়ালরা যদি হন ‘ফাঁপড়বাজ’, এই বুকিশ-ইন্টেলেকচুয়ালরা হইতেছেন ‘ফ্যাক্টবাজ’।
একটা উদাহারণ দিয়া বলি। ধরেন, অবৈধ বাকশালি গভরমেন্ট নিয়া কথা কইতেছেন, তখন এই ফ্যাক্ট-বাজ’রা আরগুমেন্ট নিয়া আসবো, জিডিপি-গ্রোথ তো হইতেছে! পার কেপিটা ইনকাম এত থিকা এত হইছে! মানে, ফ্যাক্ট হিসাবে তো মিথ্যা না, কিন্তু ইরিলিভেন্ট।
তো, এই ফ্যাক্টবাজদের মেইন কাজ সত্যি-কথা বলা না, বরং একটা ইরিলিভেন্স ক্রিয়েট করা। অইটা না করতে পারলে আপনারে ফাঁপড়বাজ বানায়া দিবে! যে, আপনি ফ্যাক্ট মানেন না! 🙂
এখন দুনিয়াতে এই দুইটা ক্যাটাগরিই আছে, বা সব ফ্যাক্টই ইরিলিভেন্ট, বা কেউ রেফারেন্স ইউজ করতেছেন না বইলা ফাঁপড়বাজ – এইগুলা ঠিক না আর কি। কিন্তু টেনডেন্সি হিসাবে এইগুলা তো আছে আমাদের সামনে, থাকতেছে।…
এপ্রিল ১৫, ২০২২
“আওয়ামী আধিপত্যের বিরোধীতা করতে গিয়ে খোদ সেই সব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিরোধীতা করার অর্থ হল সেই সব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে আরো বেশি আওয়ামী ক্ষমতার উপর নির্ভরশীলতার দিকে ঠেলে দেয়া।” – Kallol Mustafa
বাকশালি ক্ষমতা-কাঠামোর বাইরে গিয়া এই ধরণের “সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের” যে কোন অস্তিত্ব নাই, কোন পলিটিক্যাল মিনিং নাই আর, এইটা খেয়াল করাটা আসলে দরকার। এইগুলা হইতেছে বাকশালের কালচারাল-উইং, প্রপাগান্ডা-মেশিন। [কোন একটা কালচারে সাবস্ক্রাইব করাটা একটা দেশের/সমাজের মানুশের কাজ না, কালচারাল-ইভেন্টের বরং কাজ হইতেছে মানুশের কাছাকাছি হইতে পারা। যেইটা শুরুতে মিডল-ক্লাসের ঘটনা হইলেও এখন আর অই পারপাসটাও সার্ভ করতে পারতেছে না, পলিটিক্যাল পুতুল-নাচের বাইরে যাইতে পারতেছে না।…]
এখন এরা বাকশালের লেজ নাকি শিং? – এই তর্ক তো হইতেই পারে, কিন্তু এরা বাকশালি ক্ষমতা-কাঠামোর ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট একটা – এইটা রিকগনাইজ করতে পারার পরেই শুরু হইতে পারে সেইটা।
এপ্রিল ১৬, ২০২২
– কবিতা ও পলিটিক্স: আল মাহমুদ ও হুমায়ূন আজাদ –
ব্যাপারটা আইরনিক, এবং ইন্টারেস্টিংও। একটা সময়ে হুমায়ূন আজাদ, আল মাহমুদের কবিতারে বাদ দিছিলেন, ‘আধুনিক’ না বইলা। আর এখন হুমায়ূন আজাদের কবিতারে এতোটা নেয়া যাইতেছে না সেক্যুলার বা কলোনিয়াল বইলা। এই ধরণের একটা অবস্থা আগে বেশি ছিল, এখনো কম হইলেও আছে যে, “আল মাহমুদের কবিতা ভালো, কিন্তু উনি তো সাম্প্রদায়িক!” 🙂 আর এখন “হুমায়ূন আজাদের কবিতা খারাপ না, কিন্তু উনি তো সেক্যুলার!” – এইরকম একটা জায়গাতে পুরাপুরি না যাইতে পারলেও কাছাকাছিই আছি আমরা।
মানে, আল মাহমুদের পলিটিক্যাল পজিশনের কারণে উনার কবিতারে নেয়া যাইতো না, বা এখন নেয়া যাইতেছে; একইভাবে হুমায়ূন আজাদের পলিটিক্যাল পজিশনের কারণে উনার কবিতা-সাহিত্যরে নেয়া যাইতো, বা এখন খুব একটা নেয়া যাইতেছে না, উনার কলোনিয়াল হেইট্রেট’রে ‘সাহসী’ বলাটা যে ঠিক না – এইটা অনেকেই টের পাওয়ার কথা। তো, কবিতা/সাহিত্যের বিচার কি পলিটিক্যালি হইতে পারে? 🙂 বা পলিটিক্সরে বাদ দিয়াই কেমনে দেখবো আমরা? এই জিনিসটা কেন আর কেমনে ঘটতেছে?
যতই আর্ট ফর আর্ট সেক করি আমরা, সাহিত্য কোনদিনই পলিটিক্সের বাইরের জিনিস ছিল না। এর একটা কনটেক্সটুয়াল বা পলিটিক্যাল মিনিং থাকেই। যার ফলে একজন রাইটারের পলিটিক্যাল পজিশন তার সাহিত্যের রিডিংয়ে হেল্প করে বা বাধা তৈরি করে। কিন্তু একইসাথে, এইটাই একমাত্র ঘটনা হয়া থাকতে পারে না। আপনি কোন পলিটিক্যাল পজিশনরে আপহোল্ড করতেছেন, সেইটা দিয়া আপনার সাহিত্যের ভালো-খারাপ মাপা যায় না। কিন্তু আপনার সাহিত্যরে রিলিভেন্ট বা ইরিলিভেন্ট কইরা তুলতে পারে একটা সময়ে।
ব্যাপারটা এইরকম না যে, সাহিত্যের ইন্টেলেকচুয়াল কোন ভ্যালু নাই, বা সেইটারে ওভারকাম করা যায়। বরং সাহিত্যে কানেকশনের ঘটনা একটু অন্যরকম জায়গা থিকা ঘটে। সেইটারে একটা টার্ম দিয়া এক্সপ্লেইন করাটা মুশকিলই হবে, কিন্তু ব্যাপারটা হইতেছে এক ধরণের কমপ্যাশন বা মায়া তৈরি করার ঘটনা, এক ধরণের এনগেইজমেন্ট তৈরি করতে পারার ঘটনা। ব্যাপারটা ঠিক ইমশোনাল হইতে পারা না, অনেকটা শব্দের ইমোশনের ভিতর দিয়া বা এর সাথে এনগেইজ হইতে পারার ঘটনা। হিস্ট্রি ব্যাপারটা এইখানে এবসেন্ট না, বরং ডাইমেশনটা ডিফরেন্ট।
আল মাহমুদ এবং হুমায়ূন আজাদ দুইজনেরই প্যাশনটা টের পাইবেন আপনি। আল মাহমুদের মায়া অনেক বেশি, হুমায়ূন আজাদের কবিতারও যট্টুক নেয়া যায়, সেইটা অই মায়ার ঘোর’টাই।
এখন এর বাইরে উনাদের কবিতার কোন জায়গা নাই – এইটা তো সত্যি-কথা না-ই, বরং উনারা উনাদের পোয়েটিক্যাল, ইন্টেলেকচুয়াল এবং পলিটিক্যাল বুঝ নিয়াই আগাইছেন, অইগুলারে বাদ দিয়া না। কিন্তু এই জিনিসগুলা উনাদের কবিতারে এনগেইজিং করে নাই। কম-জোরি কইরা তুলছে – এইটাও আমার ক্লেইম না, বরং এইরকম জিনিসগুলা থাকে। বখতিয়ারের ঘোড়ার হিস্ট্রি ভুল হইলেই কবিতা পাতলা হয়া যায় না আর কি! কারণ কবিতা হইতেছে (একটু গ্রসলি কইলে) ইমোশনাল কানেকশনের জায়গাটা। অইটার হইতেছে কোর ঘটনা।
যার ফলে ‘সাম্প্রদায়িক’ আল মাহমুদের কবিতা কখনোই বাজে ছিল না, অই কানেকশনের জায়গা থিকা। এখন যখন আমরা ফিল করতে পারি, ব্যাপার ‘সাম্প্রদায়িক’ না, বরং নন-কলোনিয়াল একটা স্ট্যান্ড (আল মাহমুদ নিজেও বুঝতে পারছিলেন সেইটা এবং কইছিলেন যে, আমি ত্রিশের কবিদের বাইরে গিয়া একটা জায়গা তৈরি করতে পারছি বাংলা-কবিতায়), তখন তার কবিতারে আরো বেশি নেয়া যায়। মানে, একটা এস্থেটিক্যাল গ্রাউন্ডরে কিছুদূর পর্যন্ত এক্সপ্লেইন তো করা-ই যায়, পলিটিক্যালিও পড়া যায়, বা এর বাইরে গিয়া এনগেইজ করাটা সম্ভব হইতে পারে না, বেশিরভাগ সময়।
এখন এই পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাগুলাও চেইঞ্জ হয়। কবিতা পড়া বা না-পড়ার প্রেফারেন্সের সাথে যোগ হয়। এসথেটিকসের জায়গাগুলাও বদলায়। আমার কথা হইতেছে, পলিটিক্যালি দূরের ঘটনা হইলেও এসথেটিক্যালি আল মাহমুদ এবং হুমায়ূন আজাদ খুব বেশি দূরের লোক না। ডিফরেন্স তো কিছু আছেই। আল মাহমুদ ‘গ্রাম্য’ 🙂 হুমায়ূন আজাদ ‘শহুরে’; কিন্তু দুইজনেই আসলে ‘মফস্বলী’ 😛 আল মাহমুদের আছে নন-কলোনিয়াল প্রাইড, হুমায়ূন আজাদের কলোনিয়াল হেইট্রেট, কিন্তু দুইজনে মিডল-ক্লাসের সাহিত্যই করছেন, করতে চাইছেন। এবং দুইজনেই প্যার্টিয়াক্যাল, প্রেমিক! 😃 একটা সময়েরই ঘটনা। আলাদা রাজনীতির লোক উনারা, কিন্তু এসথেটিক্যাল গ্রাউন্ডটা কম-বেশি কাছাকাছিও।
আমি বলতে চাইতেছি, রাজনীতির কারণে কারো সাহিত্যরে বাদ দেয়ার জায়গা তৈরি হইতে পারে, কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, সাহিত্যও একটা পলিটিক্যাল স্পেইসরে রিলিভেন্ট কইরা তুলতে পারতেছে। আল মাহমুদে এই জোরটা ছিল। উনার কবিতা ও সাহিত্য একটা পলিটিক্যাল স্পেইসরে ভিজিবল করতে পারছে। হুমায়ূন আজাদে মেবি এইটা নাই। হুমায়ূন আজাদের কবিতা পড়তে হইলে তার পলিটিক্যাল পজিশনটারে ইগনোর কইরাই পড়তে হবে এখন। এবং পরেও।
***
কেন ফ্যাসিজম/ফ্যাসিবাদি না বইলা বাকশাল/বাকশালি বলবেন?
হিটলার ফ্যাসিস্ট, মুসোলিনী ফ্যাসিস্ট, ফ্রাঙ্কো ফ্যাসিস্ট, পিনচোট ফ্যাসিস্ট, আরো অনেক ফ্যাসিস্ট ছিল দুনিয়ায়, আছে। এরা সবাই জালিম। শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারও ফ্যাসিস্ট, জালিম। কিন্তু এই টার্ম দিয়া এর জুলুমের, ক্রুয়েলিটির পুরাটা ধরতে পারবেন না। এর স্পেশালিটি’টারে মিস কইরা যাওয়া হবে।
১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ শেখ মুজিবর রহমান যখন সরোয়ার্দিতে বাকশালের ঘোষণা দেন, অই ভাষণে উনি স্পেশাল একটা জিনিস কইছিলেন যে, সরকারি কর্মচারীরাও চাইলে বাকশালের সদস্য/পার্টি-মেম্বার হইতে পারবে। যেইটা ইউনিক একটা ফিচার। জার্মানির পুলিশেরও মেবি অফিসিয়ালি নাৎসি পার্টির মেম্বার হইতে পারতো না, কিন্তু বাকশালে এইটা ছিল।
আর এখন বাকশালি হিসাবে নিজেরে প্রমাণ করতে না পারলে সরকারি চাকরি পাওয়াই মুশকিল। চৌদ্দগুষ্টির মধ্যে কেউ যদি বিএনপি-জামাত থাকে, তাইলে রিস্ক আছে, সরকারি চাকরি পাইবেন না।
বাংলাদেশে এখন পলিটিক্যাল পার্টি নাই কোন, সরকারি লোকজনই হইতেছে বাকশালের আসল মেম্বার। পুলিশ সুপার, রেবের মহাপরিচালক, ডিজিএফআই হেড উনারাই হইতেছেন মেইন লিডার।
এইটা নিউ কাইন্ড অফ ফ্যাসিজম। যেইখানে পলিটিক্যাল দল বইলা কিছু নাই। থাকতে পারবে না। সিপিবি-ন্যাপ-বামমিডিয়া কালচারও এর পার্ট।
বাংলাদেশে আওয়ামি ফ্যাসিজমের, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ফ্যাসিজমের নাম হইতেছে বাকশাল।
এই জন্য আমি বলবো, ভাশুরের নাম মুখে নেন। বাকশালরে বাকশাল বলেন। এই জায়গা থিকা ফ্যাসিজম, ফ্যাসিবাদ বলাটা হইতেছে এর কোর ফিচারটারে গোপন কইরা একটা আইডিওলজিক্যাল (ফ্যাসিজমের কোন আইডিওলজি নাই) ইউনিভার্সাল (এইটা খুবই লোকাল) এবং দূরের জিনিস (ডেইলি জুলুমের ঘটনা এইটা) বানায়া দেয়ার ঘটনাও অনেক সময়।
এপ্রিল ১৭, ২০২২
ফেসবুকের শুরুতে (২০০৭/৮ সালে), বা ইভেন ৫/৭ বছর আগেও এক ধরণের ‘যুক্তিবাদীদের’ দেখা পাওয়া যাইতো, ধরেন, পুলিশের বা ডাক্তারের কোন খারাপ-কাজ নিয়া কেউ কোন আলাপ তুললো, তখন এই ‘যুক্তিবাদীরা’ ‘যুক্তি’ দিতেন “সব পুলিশ তো খারাপ না!” “সব ডাক্তার তো খারাপ না!” এইরকম। এমনকি বাপ হিসাবে, ভাই হিসাবে কতো ভালো, অইরকম উদাহারণের কথাও তুলতো!
এখন এইগুলা কমছে বইলা মনেহয়। লোকজন বুঝতে পারে যে, এইগুলা কাউরে পারসোনালি ভিলিফাই করার ঘটনা না, বরং পজিশন হিসাবে কিভাবে সোশ্যাল অপ্রেশনের বা জুলুমের ঘটনা হয়া উঠে, সেইটার আলাপ।
তো, এইটারে একটা ম্যাচুরিটির ঘটনা হিসাবেই আমাদের দেখতে পারাটা দরকার মনেহয়।
এপ্রিল ১৮, ২০২২
বাংলাদেশের সরকারি প্রজেক্টগুলার কতো % টাকা লুটপাট হয়? ৫০%? ৬০%? ৭০%? কিছু কেইসে তো পুরাটাই লুটপাট হয়। কাজেরই কোন খবর থাকে না। পর্দা-বালিশ, নাট-বল্টু যে পাওয়া যায় এইটাই অনেক বেশি! মেগা-প্রজেক্ট হইলে সুবিধা বেশি, লুটপাটের হদিসই থাকে না তখন। হাজার হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৫%–১০% তো সিস্টেম লস হবেই, তাই না! 😃
কিন্তু ছোটখাট কাজেও এইটা হয়। বাংলাদেশে এইটাই নিয়ম। সরকারি কাজ মানেই % আছে, দিতে হবে। এইটা বাংলাদেশের আসল ‘কালচার’! 😛
আগে শুনতাম কোন ঠিকাদারি কাজ পাইলে ২০%-৩০% টাকা সরকারি অফিসগুলাতে দিতে হইতো। এখন এইটা বাড়ার কথা। কারণ, সব তো নিজেদের লোক! পুলিশ, সাংবাদিকদেরও তো % দিতে হয় মনেহয়। মানে খাওয়ার লোক তো বাড়ছে!
রাস্তা দিয়া যাইতে যাইতে মনে হইতেছিল, এই রাস্তাটা গত ১০ বছরে না হইলেও ৫/৬ বার “মেরামত” [আরেকটা বাকশালি-শব্দ আছে মিডিয়ার – ‘সংস্কার’] 🙂 হইছে। এখনো চলতেছে “উন্নয়ন”-এর কাজ। রাস্তা, ব্রিজ, ফ্লাইওভার বানায়া যদি কোটি কোটি টাকা কামানো যায়, একটা দেশে তো খালি রাস্তা, ব্রিজ, ফ্লাইওভারই বানানো হইতে থাকবে তখন।
মানুশ হাঁটার জন্য, গাড়ি চলার জন্য, ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য বাংলাদেশে রাস্তা, ব্রিজ, ফ্লাইওভার বানানো হয় না, বানানো হয় টাকা খাওয়ার জন্য। যতদিন টাকা খাওয়া-খাওয়ি চালু আছে ততদিন পর্যন্ত চলবে এই মেগা-প্রজেক্ট আর “উন্নয়ন”।
এইটাই হইতেছে বাংলাদেশের ইকনোমিকস, বাকশালের পলিটক্যাল-ইকোনমি!
এপ্রিল ১৯, ২০২২
– নিউমার্কেট-গাউসিয়া এলাকার খাজনা (চান্দা) তোলার অথরিটি কার – পুলিশের নাকি ছাত্রলীগের? –
যে কোন আলাপে যেই বাইনারি-স্ট্যান্ডটা আছে আলাপের, এই জিনিসটা সবসময় ঝামেলার জিনিস আসলে। এই ‘তর্ক’ নেসেসারিলি যেইটা করে, দুই পক্ষের যে কোন একটারে বাইছা নেয়ার ভিতর দিয়া সিচুয়েশনটা যেইভাবে অপারেট করতেছে, তারে আন-কোশ্চেনড রাখে।
তার মানে আবার এইটা না যে, আপনি কোন পক্ষ নিতে পারবেন না, বরং দুইটা পক্ষ কেন কাইজ্জা করতেছে, কিভাবে একজন আরেকজনের দুশমন হয়া উঠতেছে, অই জায়গাটারে খেয়াল না করার কথা আমি বলতে চাইতেছি।
দোষ দোকানদারদের নাকি ঢাকা কলেজের স্টুডেন্টদের – এইটা নিয়া স্ট্যান্ড নেয়া যাইতেই পারে; কিন্তু এই স্ট্যান্ড নেয়াটা কোনকিছুই মিন করে না, যদি এই মুখামুখি হওয়ার সিচুয়েশনটা চেইঞ্জ না হয়। এই দুশমনি চলতে আছে, চলতেই থাকবে।
এইখানে গেইমটা সবসময় পাওয়ারের। খালি পুলিশরে চান্দা দিয়া নিউমার্কেট-গাউছিয়া এলাকায় বিজনেস করা পসিবল না, ঢাকা কলেজের ‘ছাত্রনেতাদেরকে’ও টাকা দিতে হয়। (এরশাদ-আমলের পর থিকাই মেবি।) দোকানদারেরা চান্দা দেয় ‘ছাত্রনেতাদেরকে’ আর কয়েক বছর পরে পরেই এই চান্দা দেয়ার অত্যাচার বাইড়া গেলে স্টুডেন্টদেরকে ধইরা পিটায়। ১৯৯১-৯২ সালে একজনরে খুনই করছিল।
কিন্তু ‘ছাত্রনেতাদের’ কিছু হয় না। দোকানদারদেরও কিছু হয় না। কারণ, সিস্টেমটা একই আছে। সিস্টেমটা বদলায় না। পিপলের সাফারিংস বরং বাড়ে সবসময়।
এইসব “ছাত্রনেতারা” এলাকার একমাত্র ইজারাদার হইলে ঝামেলাটা কম হইতো। এদের মধ্যেও কয়েকটা গ্রুপ থাকে আবার – কলেজের, লোকাল, যুবলীগের, ছাত্রলীগের…। আর এদের সবাইরে আবার দরকারও বাকশালের। পুলিশও মাঝে-মধ্যে খেইপা যায়, কারণ অদের চান্দাতে তো কম পড়ে! যার ফলে দোকানদার, পুলিশ, ‘ছাত্রনেতাদের’ একটা ত্রিমুখী ‘টাগ অফ ওয়ার’ সবসময় জারি আছে এই এলাকায়।
বাকশালি-জমিদারের উচিত ‘জায়গীরদারদের’ মধ্যে এলাকা ভাগ কইরা দেয়া। অবশ্য নিজেদের মধ্যে কামড়া-কামড়ি না লাগলে “বিএনপি’র দোষ” দেয়ার মতো ঘটনাও তো থাকবো না! 🙂 মিডিয়ারও কিছু একসাইটমেন্ট তো দরকার!
Leave a Reply