জুন ১, ২০২২
অবিচুয়ারি: কেকে
এখনকার সময়ে কোক-স্টুডিও যেইরকম, নাইনটিজে সেইটা ছিল এমটিভি ও চ্যানেল-ভি’র হিন্দি পপ-সং। এর আগে হিন্দি পপুলার যত গান ছিল মোটামুটি সবই ছিল সিনেমার-গান। তো পপ-সং’গুলা করলো কি, গানটারে বেইজ কইরা একটা সিনেমা, মানে ভিজ্যুয়াল বানায়া প্রডিউস করতে থাকলো। আর এই ধরণের গানগুলা ম্যাসিভ হিট হইতে শুরু করলো। আমার নিজের পারসোনাল ফেভারিট আছে অনেকগুলা – লাকি আলী’র ও সানম, কে কে’র পল, জুননের সাইওনি, ওস্তাদ সুলতান খান ও চিত্রা’র পিয়া বাসন্তী, সুনীতি চৌহানের পরী… এইরকম ১৫-২০টা গানের কথা বলা যাবে, যেই গানগুলা আমাদের সময়টারে তৈরি করছিল।
মানে, আমাদের সময় খালি বিল্ডিং-রাস্তাঘাট, রাজনৈতিক ঘটনা ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা দিয়া তৈরি হয় না, আমাদের সময়ের গল্প-কবিতা-গান বরং অনেকবেশি পার্ট অফ দ্য রিয়ালিটি এন্ড টাইম।
তো, নতুন নতুন গান ক্রিয়েট করা তো অনেক টেলেন্ট আর সময়ের ব্যাপার; লিরিকস, মিউজিক এন্ড সিঙ্গার’রে একসাথে করাও। কিন্তু পাবলিক-ডিমান্ড তো হিউজ। তখন পপ-সং’র পাশাপাশি রিমেইক, ফিউশন শুরু হইলো পুরান হিন্দি-সিনেমার গানগুলার। আর এইভাবে হিন্দি পপ-সং’র জামানারও শেষ হইলো একভাবে। মানে, এখন যে নাই – তা না, আন্ডারগ্রাউন্ড বা ইন্ডিপেন্ডেড একটা ঘরানা, ইন্ড্রাষ্ট্রি হিসাবে নাই আর।
কে কে হইতেছেন অই পপ-সং থিকা হিন্দি-সিনেমাতে “জায়গা” কইরা নিতে পারা লোক। (এইরকম আরো অনেকে আসছিলেন।) একটা এলবাম রিলিজ দিয়া মিউজিক-ক্যারিয়ার শুরু উনার, তারপরে অনেকগুলা হিট-গান “উপহার” দিছেন। উনার গলা ভালো, তার চাইতে বেশি হইতেছে উনার দরদ। এইটাই উনারে সিঙ্গার হিসাবে টিকায়া রাখছিল। মিউজিকে প্রাতিষ্ঠানিক-শিক্ষা উনার ছিল না। ফ্রেন্ড-সার্কেলে গান গাইতেন, প্রেমিকারে ইমপ্রেস করার জন্য গান গাইতে গিয়া সিঙ্গার হয়া গেছেন 🙂 [আমাদের, বেটা-মানুশদের কাহিনি কম-বেশি তো এইরকমই…]
২.
কিন্তু তখন ঢাকায়, বাংলাদেশে হিন্দি-গান শোনা ছিল আন-কালচারাড একটা ঘটনা! 🙂 আপনি রবীন্দ্র-সংগীত শুনেন না, হিন্দি পপ-গান পছন্দ করেন, আপনি তো কবি না! 😛 এইরকম।
তো, এইসব “কালচারাল-মৌলবাদী” লোকজনের কথা-বার্তারে আমরা তখনো পাত্তা দেই নাই, আপনারা এখনো দিয়েন না। এরা খালি আর্টরে ফিল করতে পারে-না না, আইডিওলজিও বুঝে না। এদের আত্মা সিলগালা কইরা দেয়া হয় নাই, চোখেও পট্টি বান্ধা।
হিন্দি-গান শুনলে আপনি ইন্ডিয়ার সার্পোটার হয়া যান না, কাওয়ালি শুনলে পাকিস্তানের। কিন্তু রবীন্দ্র-সঙ্গীত গাইয়া এদেরকে ‘বাঙালি’ হইতে হয়। এই “কুসংস্কার” থিকা অরা বাইর হইতে পারে না। কে.কে.’র মারা-যাওয়ার খবরে আপনার মন-খারাপ হইলেও আপনি বাংলাদেশের লোক হইতে পারেন, যেইরকম নুসরাত ফহেত আলী’র জন্য মহব্বত থাকলেও পারেন। এইগুলা কোন কন্ট্রাডিকশন না, বরং কনফার্মেশন যে, বাংলাদেশের আর্ট-কালচার কোন শুদ্ধ, বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, একটা রিজিওনাল সাইনারজি (Synergy) ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজেরই পার্ট সবসময়।
৩.
ব্রেকিং ব্যাড সিরিজে বুড়া ওয়াল্টার ইয়াং জেসি’রে কইতেছিল, তোমার এডভানটেজ’টা কি জানো? অনেকে সারাজীবন পার কইরাও তার কি কাজ সেইটা সে জানে না, করতে পারে না, আর তুমি অল্প-বয়সেই অইটা করতে পারছো, এইটা একটা ব্লেসিং। তো, কে.কে. একজন ব্লেইসড সিঙ্গার, তার জীবনের শুরুর দিকের গানটাই ছিল তার জীবনের সেরা গান।
আরো সুন্দর সুন্দর দরদী গান উনি গাইছেন। কিন্তু আমার ধারণা, উনার জেনারেশন এবং তার পরের কয়েকটা জেনারেশন উনারে মনে রাখবে “পল” গানটার জন্যই। জীবন তো ছোট্ট, এইটুকই…
***
– বাংলাদেশের “শিক্ষিত-বজ্জাতদের” টেনডেন্সি তিনটা –
১. “এ আবার কে? এরে তো চিনলাম না!”
এর মানে, দুনিয়ার সবকিছু এরা জাইনা ফেলছে, চিইনা ফেলছে খালি এইটাই না, এদের জানা-বোঝার বাইরে দুনিয়ার কোন কিছুই ঘটতে পারবে না! ‘শিক্ষিত’ হওয়া মানে কোনকিছু জানা না, বরং যতটুক এরা জানে, দুনিয়া যেন অতটুকই – এইরকমের একটা ঘটনা।
মানে, আপনারে আগে উনাদের জানা-বোঝার দুনিয়াতে ঢুকতে হবে, তা নাইলে আপনার কিছু হয় না। এইটা কোনকিছু জানা বা না-জানার ঘটনা না, একটা শিক্ষিত-সমাজ, সাহিত্য-সমাজ, একটা কূপমন্ডুক (এইসব শব্দ না লেখলে আবার বাংলা হয় না)-সমাজের পার্ট হইতে পারার ঘটনাই আসলে।
এইভাবে ‘শিক্ষিত-সমাজের’ লোক হওয়া মানে কোন জানা বা বুঝা না, একটা গ্রুপ তৈরি করা, যারা নিজেদের বাইরে তেমন কিছু জানে না! 🙂
২. “বানাম ভুল”
কি বলতেছেন সেইটা ঘটনা না, ঘটনা হইতেছে কেমনে বলতেছেন! শুদ্দ-বানান, খাঁটি-উচ্চারণ বইলা একটা ‘কুসংস্কারে’ আটকায়া থাকা বানাম-ভুল প্রাণী এরা। কোন ‘ভুল’ না ধরতে পারলে পেটে গ্যাস হয়, পাদতে শুরু কইরা দেয়। এরা ব্যাকরণ-লাভার না, বরং ব্যাকরণ হইতেছে নিজেদেরকে ‘শিক্ষিত’ দাবি করার টুল।
“আমি জানি!” – এই কুৎসিত প্রদর্শনীর ভিতর দিয়া “শিক্ষিত” প্রমাণ করা একটা কোর টেনডেন্সি এদের। এমন না যে, কারো কোন ভুল হয় না, কিন্তু যখন বানাম-ভুলটা মেইন ঘটনা হয়া উঠে, তার মানে অই “শিক্ষিত” লোকটা বানামের বাইরে আর কিছু জানে না! 😎
বজ্জাতি করার লাইগাই করে এইগুলা…
৩. “মাথার উপর দিয়া গেছে ভাই!”
এইটা আরেকটা জিনিস। যেই লোক বুঝতে পারে নাই, এইটা যেন তার সমস্যা না, যে বলছে তার সমস্যা! আমি তো “শিক্ষিত” লোক, আমি অর্নাস-মাস্টার্স পাশ কইরা দুনিয়ার সবকিছু বুঝি! আপনে বুঝাইতে পারেন না।
তো, যেহেতু আমি “শিক্ষিত”, আমি তো সরাসরি আপনারে ছোট করবো না, আমি “হিউমার” 🥱 করবো!
এইরকম হিউমারের নামে ছোটলোকি করা, শিক্ষিত-বজ্জাতদের মোটামুটি কোর টেনডেন্সি একটা।
…
[আপনি “শিক্ষিত” হইলে এই তিনটা আছেই বা থাকতেই হবে – তা না, কিন্তু যদি এই তিনটা টেনডেন্সি থাকে তাইলে “শিক্ষিত” হিসাবে “বজ্জাত” ক্যাটাগরিতে পড়েন কিনা, সেইটা নিয়া ভাবতে পারেন কিছুটা।
মানে, কোন মানুশই কখনোই ‘খারাপ’ বা ‘ভালো’ হয় না, হয় তার কাজকাম। একজন ‘খারাপ-মানুশ’ কোন ‘ভালো-কাজ’ করলেও সেইটা ভালো-কাজ, একইভাবে কোন ‘ভালো-মানুশ’ কোন ‘খারাপ-কাজ’ করলেও সেইটা খারাপ-কাজ। মায়ের পেট থিকা পইড়াই কেউ ভালো-খারাপ হয় না, ধীরে ধীরে শিখে, শিক্ষা-দীক্ষার ভিতর দিয়া নিজেরে বদলাইতেও পারে, বা নিজেরে বদলাইতে পারাটাই শিক্ষার একটা লক্ষণ আসলে। যা-ই হোক…
তবে এই তিনটা জিনিসই না, আরো অনেককিছুই আছে বা থাকতে পারে। এই তিনটা জিনিসের কথা আমার মনে হইছে হইছে আর কি!]
***
কে ভালো, কে খারাপ? – এইরকম প্রশ্নগুলার চাইতে, কোন প্যারামিটার রিলিভেন্ট আর কোন প্যারামিটার ইরিলিভেন্ট? – সেইটা বরং খেয়াল করা দরকার আমাদের।
যেমন ধরেন, জিয়াউর রহমানের চাইতে শেখ মুজিবুর রহমান’রে যে গ্রেট লিডার মনে হয় আমাদের কাছে, এর একটা মেজর কারণ হইতেছে যে, শেখ মুজিবুর রহমান হেব্বি ভাষণ দিতে পারতেন, পুরা কাঁপায়া দিতে পারতেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের এইরকম জ্বালাময়ী ভাষণ নাই, জন্ম-বার্ষিকী, মৃত্যু-বার্ষকীতে বাজানো যায় না, এমনকি হাসি-ঠাট্টাও আছে যে, উনি কি রকমের লিডার, কোন রিমার্কেবল ভাষণ তো নাই উনার! 🙂 মানে, অই লিডার’রেই গ্রেট মনেহয় আমাদের কাছে, যিনি জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে পারেন। (বা অই লোক’রেই ভালো-মানুশ মনেহয় যিনি সুন্দর কইরা কথা কইতে পারেন।)
কিন্তু এইটা ঠিক না।
মানে, যিনি এক্সিলেন্ট ভাষণ দিতে পারেন, তিনিই গ্রেট লিডার না। একজন লিডার কতোটা গ্রেট সেইটা যাচাই করার রিলিভেন্ট প্যারামিটার হওয়া দরকার উনি কি কি কাজ করছেন, কোন কোন পলিটিক্যাল ডিসিশান নিছেন, কি কি পজিটিভ সোশ্যাল-চেইঞ্জ উনি সমাজে নিয়া আসতে পারছেন।
জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে পারা, বা সুন্দর কইরা কথা বলতে পারা অবশ্যই বাজে কিছু না। যার পাবলিক-স্পিকিং কোয়ালিটি আছে, ভালোভাবে কিছু বুঝায়া কইতে পারেন, সেইটা ভালো-কোয়ালিটিই সবসময়। কিন্তু এইটারে গ্রেট-লিডার বা ভালো-মানুশের ক্রাইটেরিয়া বানায়া ফেললে ভুল-ই করতে থাকবো আসলে আমরা।
জুন ২, ২০২২
– লাতিন আম্রিকার ফুটবলে ‘পজ-মোমেন্ট’ ক্রিয়েশনের ঘটনা’টা নিয়া –
গতকালকে ফুটবল তো আসলে আর্জেন্টিনা-ই খেলছে। শুরুর দিকে ১৫-২০ মিনিট ইতালি ছিল মাঠে, এর পরে যা হইছে, মোটামুটি এর পুরা কন্ট্রোল ছিল আর্জেন্টিনার প্লেয়ারদেরই পায়ে।
তো, খেলা দেখতে গিয়া একটা জিনিস মনে হইতেছিল, যেইটারে আগের দিনের স্পোটর্স রিপোার্টাররা “লাতিন আম্রিকার ফুটবলের শিল্প” কইতো, সেইটা আসলে কি রকমের জিনিস?
এখন একটা খেলা দেইখা এইটার বিচার করতে গেলে একটু ওভার-স্টেটম্যান্টই হবে, তারপরও রিস্ক নিয়া বইলা রাখতে চাইতেছি।
ঘটনা’টা হইতেছে, লাতিন আম্রিকার দেশগুলার ফুটবল খেলার জায়গাটাতে এই টেকনিকটা আছে, যে ক্রুশিয়াল টাইমে কি-প্লেয়ার’রা একটা ‘পজ’ ক্রিয়েট করতে পারেন। বল’টারে থামায়া দেন, বা দিতে পারেন। ঝড়ের আগে একটা চুপচাপ-সময় তৈরি হওয়ার মতো। মানে, বল’টা নিয়া দৌড়-মারার আগে, বাউলি-কাটার আগে (আপনারা ফুটবল-টার্মে ট্রান্সলেট কইরা নিয়েন ব্যাপারটা) হঠাৎ কইরা থাইমা যাইতে পারা।
গতকালকে মেসি এটলিস্ট দুইবার এই কাজটা করতে পারছে। টাইম টুইকা রাখলে স্পেসিফিক্যালি বলা যাইতো, কিন্তু কেউ দেখলে নোটিশ করতে পারবেন। নেইমারেরও এই টেকনিকটা আছে। ফুটবল’টারে থামায়া দেয়া।
ইউরোপিয়ান দেশগুলার ফুটবল টেকনিকে এইটা মিসিং একটা জিনিস, মানে, এই টেকনিক অরা ইউজ করে না। বল থামাইতে জানে না। অদের টেকনিক হইতেছে স্পিড, মোটামুটি ছিঁড়া-বিড়া ফেলবে। ব্রাজিল যে জার্মানির কাছে সেভেন-আপ খাইছিল, অইটা মনে কইরা বলতেছি। জার্মানির স্পিডের কাছে ব্রাজিল অই টেকনিক ইউজ করতে গিয়াই ধরা খাইতেছিল বরং।
এখন ইউরোপিয়ান দলগুলা “শিল্প” বুঝে না – ব্যাপারটা এইরকম না, বা লাতিন আম্রিকার দলগুলার মধ্যে স্পিড নাই, তা তো না! বরং সবারই নানান রকমের টেকনিক আছে। স্পেন যে টিকিটাকা শুরু করছিল সেইটা একটা ব্লেন্ড ছিল এই দুইটার। বা নেদারল্যান্ডসের পাওয়ার-ফুটবল। এইরকম টেকনিকের ভ্যারিয়েশন সবসময় ছিল, আছে।
কিছু টেকনিক দেখা যায় ইনভ্যালিড হয়া যায় খুব তাড়াতাড়িই, আবার কিছু পুরান টেকনিক দেখা যাবে রিনিউড হয়া টিইকা থাকতেছে যুগের পর যুগ।
কিন্তু অই তো, আইডিয়াটাই যেমন আর্ট না, ফুটবলের টেকনিকগুলাই ফুটবল-খেলা না আর কি…
***
– দেশের মানুশের মিনিমাম পলিটিক্যাল রাইটসের পক্ষে থাকতে হবে আমাদেরকে –
একটা সমাজে নানান রকমের দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট থাকে, কিন্তু কোন কনফ্লিক্ট’টা সবচে জরুরি, সেই ডিসিশান নিতে পারাটা হইতেছে পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের ঘটনা।
আজকে বাংলাদেশের সবচে ক্রুশিয়াল কোশ্চেন হইতেছে, কারা নন-ডেমোক্রেটিক, কারা জুলুমের শাসনের সার্পোটার আর কারা ডেমোক্রেটিক, পিপলের মেন্ডেটরে মাস্ট মনে করেন। এইটা হইতেছে যে কোন পলিটিক্যাল পজিশনের ডিসাইডিং ফ্যাক্টর।
এখন দুইপক্ষেই ভালো-মানুশ থাকবেন, খারাপ-মানুশ থাকবেন, ইসলামিস্ট থাকবেন, সেক্যুলার থাকবেন, নারী-অধিকারের পক্ষের লোক থাকবেন, বেটাগিরি-করা লোকজন থাকবেন। এইরকম আরো হাজারটা ক্যাটাগরি করা পসিবল।
এমনকি এইরকমের কালচারাল ও নন-পলিটিক্যাল ক্যাটাগরিগুলারে হাইলাইট করতে চাওয়ার ঘটনাও ঘটতে থাকবে।
এইগুলা যে নাই – তা না, কিন্তু এই কনফ্লিক্টগুলারে হাইলাইট করার ভিতর দিয়া বেশিরভাগ সময় বেসিক ডেমোক্রেটিক রাইটসরে ধামাচাপা দেয়ার ঘটনাগুলা ঘটে।
আপনি পিপলের ভোটে ইলেক্টেড সরকার চান বইলা রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ চান না, তা তো না! আপনি আইনের শাসন চান বইলা মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী, তা তো না! এই যে সিউডো কনফ্লিক্টগুলা ক্রিয়েট করা, এইটাও অই জুলুমের ন্যারেটিভের জায়গা থিকাই করা হয়।
তো, এখনকার পলিটিক্যাল বাস্তবতায়, দেশের মানুশের মিনিমাম পলিটিক্যাল রাইটসের পক্ষে থাকতে হবে আমাদেরকে।
***
লোকজন পুলিশের ডরে, ডিজিটাল এক্টের মামলার ডরে কথা কয় না – এইটা পুরাপুরি সত্যি কথা না আসলে। মানে, এই ডর যে নাই – তা না, এইটা আছে, কিন্তু এইটা মেইন ফ্যাক্টর না। মেইন অবসেক্টল হইতেছে, বাম-বাটপার নামের বুদ্ধিজীবী আর বাকশালি সোশ্যাল-পুলিশগুলার নামে এক্টিভিস্টগুলার চোখ-রাঙানি।
বাকশালি জুলুম নিয়া কথা কইলেই আপনারে ইসলামিস্ট বানায়া দিবে, বিএনপি বানায়া দিবে। আন-স্মার্ট বইলা হাসি-ঠাট্টা করবে, এমনকি কেয়ারিংয়ের নাম কইরা থ্রেট দিবে যে, পুলিশ ধইরা নিয়া যাবে কিন্তু! আর আপনিও জানেন, এরাই আপনার বাপ-ভাইয়ের কাছে ‘বিচার’ দিবে। থানায় গিয়া আপনার নাম দিয়া আসবে।
আমি বলবো যে, এদেরকে আন-ফ্রেন্ড করেন, ব্লক করেন! এদের লগে কথা-কওয়া, এদের প্রশংসা এবং নিন্দারে না-নেয়ার লাইগা নিজেরে রাজি করাইতে শুরু করেন! টিভি-পত্রিকার ফেইক নিউজের বাইরে আইসা আপনার চারপাশের মানুশের মুখের দিকে তাকান! দুর্ভিক্ষের ছায়া দেখতে পাইবেন।
আপনার কথা আপনি কইবেন, এতে ডর সাহসের কোন কিছু নাই-না, বরং যে কোন ফ্রিডমই প্রাকটিস করতে পারার একটা ঘটনা আসলে।
বাকশালিদেরকে বিশ্বাস করা বন্ধ করেন, অদের ফিক্সড কইরা দেয়া, প্রমোট করতে চাওয়া ন্যারেটিভের বাইরে আইসা দাঁড়ান! দেখবেন কথা কইতে একটু কম ডর লাগতেছে!
জুন ৩, ২০২২
পদ্মা-ব্রিজ নিয়া আমার তিনটা কথা আছে।
এক নাম্বার ঘটনা হইতেছে, আপনি যদি নিজের টাকায় বাড়ি বানান, তারপরেও কি ভাড়ার টাকা দিবেন? মানে, কিছু সার্ভিস চার্জ বা মেরামত, টুকটাক খরচ তো থাকেই, কিন্তু ভাড়া দেয়ার কোন ব্যাপার তো নাই। আমাদেরকে সবসময় শোনানো হয় যে, “নিজেদের টাকায় বানানো পদ্মা-ব্রিজ”।
কিন্তু তারপরে শুনি যে, হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়া বানানো হইছে। এখন লোন নিয়া বাড়ি বানাইলে তো লোনের টাকা ফেরত দেয়া লাগবে, কিস্তি জমা দেয়া লাগবে!… মানে, আমি বলতে চাইতেছি, সরকারিভাবে এই মিছা-কথা কওয়া বন্ধ করা হোক!
পদ্মা-ব্রিজ “নিজেদের টাকা দিয়া বানানো” না, বরং কাড়ি কাড়ি টাকা লোন নিয়া বানানো। কোন জায়গা থিকা কতো টাকা, কতো সুদে, কি শর্তে লোন নেয়া হইছে, সেইগুলা ক্লিয়ারলি বলা হোক। খরচের সমস্ত খতিয়ান পিপলরে জানাইতে হবে। কম কইরা হইলেও পদ্মা-ব্রিজের লোনের ৫০% টাকা পাচার করা হইছে, বাকশালিরা মাইরা খাইছে।
সেকেন্ড কথা হইতেছে, এই লুটপাটের টাকা, পাচারের টাকার বোঝা দেশের মানুশ উপর চাপানো যাবে না! মাওয়া-ঘাটের ফেরি’র ভাড়ার চাইতে পদ্মা-ব্রিজের টোল ১টাকাও বাড়ানো যাবে না!
ইন্ডিয়ারে ট্রানজিট দেয়া হইতেছে। ইন্ডিয়ান ট্রাকের টোল বাংলাদেশের ট্রাকের টোলের চাইতে মিনিমাম ডাবল আদায় করতে হবে।
টোলের টাকা দিয়া লোন শোধ করার নামে নতুন কইরা টাকা পাচার করার ধান্ধা বন্ধ করতে হবে।
লাস্ট কথা হইতেছে, যারা যারা পদ্মা-ব্রিজের কন্ট্রাকের লগে, কাজ-কামের লগে, এপ্রুভাল ও ইমপ্লিমেন্টশনের লগে জড়িত, সেইসব মন্ত্রী, এমপি, পলিটিক্যাল লিডার, বিজনেস-পারসন, বিদেশি কোম্পানি, দেশি কাউন্টার-পার্ট, সরকারি কর্মচারী, সাপ্লাইয়ার… সবার বৈধ ও অবৈধ ইনকামের সব হিসাব পাবলিকলি শেয়ার করতে হবে! দেশের মানুশের টাকার হিসাব দেশের মানুশের কাছে দিতে হবে!
এই তিনটা জিনিস না করলে আমাদের কপালে আরো অনেক শনি আছে। এই তিনটাই সব না, কিন্তু মিনিমাম এই তিনটা জিনিসের কথা আমার মনে হইছে, পদ্মা-ব্রিজ বিষয়ে।
***
– বাকশাল আর দুর্ভিক্ষ –
ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশি ভার্সন* – বাকশাল, হইতেছে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পরের ঘটনা।
বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়া ডিটেইল কোন স্টাডি হয় নাই (বা আমি পড়ি নাই)। আর এখনো পর্যন্ত এইটারে মুক্তিযুদ্ধের আফটার-ম্যাথ এবং একটা ‘আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’ হিসাবে দেখানো হয়, যেইটা পুরাপুরি ঠিক না। এমনকি মিনিমাম লাখ খানেক লোক যে মারা গেছিল, সেইট নিয়াও পাবলিক-আলাপ কম। মানে, একটা ভুল’রে যদি আপনি ভুল হিসাবে রিকগনাইজ করতেই রাজি না থাকেন, সেইটা কমন-ভুলে পরিণত হয় এবং একটা সময়ে ‘নরমালাইজ’ হইতে থাকে তখন। দুনিয়ার বেশিরভাগ জুলুমই টিইকা থাকে এইরকম ‘নরমালাইজেশন’ প্রসেসের ভিতর দিয়া। (এইখানে আরো অনেক আলাপ তো আছেই…) তো, ১৯৭৪’র দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে এইরকম একটা ‘নরমাল’ ঘটনা এখন। (যেই কারণে এর রিপিটেশন সহজে হইতে পারতেছে এখন। ১৯৭৪-এর মেমোরি এলাইভ থাকলে এইটা কিছুটা হইলেও টাফ হইতো…)
আর এইরকম ‘নরমাল’ হওয়ার কারণে এবং এই নিয়া সাবধান না হওয়ার কারণে ২০২২ সালের নিরব-দুর্ভিক্ষের ভিতরে আমরা ঢুকতে যাইতেছি আবার। যদি আর একমাস চাইলের দাম এই অবস্থায় থাকে, অফিসিয়ালি দুর্ভিক্ষ না বইলা পারবো না আমরা, এমনকি কোন জয়নুল আবেদীন যদি দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকেন, তাইলেও।…
তো, আমার একটা থিসিস হইতেছে, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ পসিবল হইছিল পলিটিক্যাল কারণে। যখনই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাইড়া গেছিল, তখন একদল বিজনেস-পারসনরা মজুতদারি শুরু করছিল। এই ব্যবসায়ীরা আছিলো পলিটিক্যালি কানেক্টেড। মানে, পলিটিশিয়ানরা এর লগে ছিল। আর সরকারি-লোকজনও এর বখরা পাইছিল, ভাগীদার ছিলো। মানে, যাদের বাজার কন্ট্রোল ও মনিটর করার সবগুলা ফোর্স একাট্টা হয়া এই দুর্ভিক্ষ তৈরি করছিল।
রাষ্ট্র-ক্ষমতার তিনটা ইউনিট – ব্যবসায়ী (যারা ন্যায্যমূল্যে জিনিস বেচার কথা, সেইটা করে নাই), সরকারি-কর্মকর্তা (যারা দেশের মানুশের পক্ষ নিয়া ব্যবসায়ীদেরকে মনিটর করার কথা, করে নাই সেইটা) এবং পলিটিশিয়ান (যারা পিপলস-রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিল না, ১৯৭৩’র ভুয়া ইলেকশনে পাশ করছিল, ব্যবসায়ী ও সরকারি-লোকজনের সাথে মিইলা দেশের মানুশের এগেনেস্টে কাজ করছিল), একসাথে মিইলা গেছিল। বাজার-ব্যবস্থারে ম্যানিপুলেট কইরা দাম বাড়ায়া টাকা লুট করছিল।
যে কোন দুর্ভিক্ষই একটা সিজনের বেশি টিকার কথা না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হইলেও। আর হিউম্যান-মেইড ডিজাস্টারগুলা দুই-তিনমাসে রিকভারেবল বেশিরভাগ সময়। তো, ১৯৭৪’র দুর্ভিক্ষও ৫-৬ মাসের মতোই ছিল। তো, অই দুর্ভিক্ষের লাভ থিকা যেই দেশি-জুলুমবাজ ক্লাসটা তৈরি হইছিল – পলিটিশিয়ান, বিজনেস-পারসন এবং সরকারি-আমলাদের, এই তিনটা গ্রুপের লোকজন মিইলাই বাকশাল বানানো হইছিল। [এরপরে জাসদ-বিপ্লব অই লিগাসির বাইরের কোন ঘটনা ছিল না, বরং এরই একটা আইডিওলজিক্যাল-মাস্ক হিসাবে রিড করতে হবে আমাদেরকে হিস্ট্রিক্যালি…]
এখনকার নয়া বাকশালে এই তিনটা মেজর গ্রুপের লগে আরো কয়েকটা জিনিস অ্যাড হইছে, এর মধ্যে ক্রুশিয়াল হইতেছে – নিউজ-মিডিয়া, যারা মোস্টলি বিজনেস-গ্রুপটারই মাউথ-পিস, কিন্তু আলাদা রোল প্লে করে। মিলিটারি-পুলিশ সরকারি আমলা-সমাজের ইউনিট হইলেও আলাদা কইরা সিগনিফিকেন্ট, এইরকম।…
আর ২০২২ সালের দুর্ভিক্ষ এখনো মাস-লেভেলে ইমপ্যাক্ট ক্রিয়েট না করার একটা কারণ হইতেছে – রেমিটেন্স। খেয়াল কইরা দেখবেন, যেইসব ফ্যামিলিতে বিদেশ থিকা টাকা আসে, অরা এই বেশি-দামের বাজারেও কেনা-কাটা কইরা, খাওয়া-দাওয়া কইরা বাঁইচা থাকতে পারতেছে। যাদের দেশেই টাকা ইনকাম করা লাগতেছে, তাদেরকেই একবেলা-দুইবেলা খাইয়া থাকতে হইতেছে। কিন্তু বিদেশ থিকাও আন-লিমিটেড টাকা তো আসবে না, যার ফলে মানুশের বাজার থিকা জিনিস কিনার ক্ষমতা যত কমতে থাকবে, দাম তত বাড়তে থাকবে, মজুত বাড়তে থাকবে, নেকস্ট ফসল উঠার আগ পর্যন্ত এই সাইকেল’টা কন্টিনিউ হবে, রেমিটেন্স এই গ্যাপটা ফিল-আপ করতে পারবে না, একটা পয়েন্টে গিয়া।
তো, যেইটা বলতেছিলাম, এই দুর্ভিক্ষের টাকা লুট কইরা এই গ্রুপটা ইকনোমিক্যালি, পলিটিক্যালি এবং কালচারালিও আরো ডমিনেন্ট হয়া উঠতে থাকবে। ২০২২ সালের দুর্ভিক্ষের পরে পলিটিক্যাল জুলুম আরো বাড়বে আসলে। এমনকি বাকশালের মতোই একটা ফরমাল-স্ট্রাকচারে শিফট করার চান্সই বেশি।
…
*ফ্যাসিবাদের ইউনিভার্সাল কোন ক্রাইটেরিয়া নাই, বরং দেশে দেশে যুগে যুগে ফ্যাসিবাদ নানান রকমের চেহারা নিয়া হাজির হইছে। বাংলাদেশি ফ্যাসিবাদ – বাকশালের ইউনিকনেস নিয় কিছু কথা আমি কইছি নানান সময়ে, কমেন্টে কিছু লিংক দিতেছি।
জুন ৪, ২০২২
– কমন-ন্যারেটিভের এজড (edge) পয়েন্ট: এমবার হার্ড ভার্সেস জনি ডেপ ট্রায়াল –
এমবার হার্ড আর জনি-ডেপের মামলা ফলো করার মতো মানুশ মেবি বাংলাদেশেও কম ছিল না, কিন্তু এইটা নিয়া কথা-বার্তা হয় নাই তেমন, এখনো কমই। এর একটা কারণ তো অবশ্যই এইটা যে, কোন গ্রাউন্ড থিকা আপনি জিনিসটারে দেখবেন? – এইটা এতোটা ডেফিনিটিভ কোন জায়গা না। বেশ কিছু পেচগি আছে এইখানে, যেইটারে এগজিসটিং আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাগুলা থিকা ক্লিয়ারলি বলাটা মুশকিলের। সেলিব্রেটি-ইমেজ, মিসোজিনি, পারসোনাল-লাইফ… এই সবকিছুই মোটামুটি ইন-সাফিশিয়েন্ট টুল, এইখানে।
তো, আমার দুইটা কথা মনে হইছে।
এক হইতেছে, এমবার হার্ডের উপ্রে অনলাইন-জনতা এতো খেপলো কেন? এইখানে জনি ডেপের সেলিব্রেটি-ইমেজ এবং মিসোজিনি’র ব্যাপার তো আছেই, এর বাইরেই আমার মনে হইছে যে, লোকজন ক্ষমতাবান (সেইটা টাকার-ক্ষমতা হোক বা রূপের-ক্ষমতা) মানুশ যে সিস্টেমরে, আমাদের কমন জানা-বোঝার জায়গাগুলারে মেনিপুলেট করে বা করতে পারে – এই জিনিসটারও একটা কন্ট্রিবিউশন এইখানে আছে, বা থাকার কথা।
ইউনিভার্সালি, আমাদের সমাজ-ব্যবস্থাগুলাতে হোয়াইট, মিডল-এইজড, মেইল-পারসনরাই পাওয়ারফুল। এই পাওয়ার দিয়া উনারা চাইলেই এবিউজ করতে পারেন। জনি-ডেপ এবিউজ করছেন কি করেন নাই – তার চাইতে ইম্পর্টেন্ট জিনিস হইতেছে, এর বাইরে অন্য কোন ন্যারেটিভ দাঁড়া করানো মুশকিল।
কিন্তু এই মামলা’তে জনি ডেপের লইয়ার’রা সেইটা পারছেন। সেইটা হইতেছে, পপুলার ন্যারেটিভের বেসিসে যে কাউরেই ভিক্টিম বানানো পসিবল। “পিপলস ভার্সেস ও.জে. সিম্পসন”-এর উল্টাটাও হইতে পারে, যেইখানে পপুলার ন্যারেটিভের উপর বেইজ কইরা ও.জে. সিম্পসন বাঁইচা গেছিলেন। এমবার হার্ড একটা অডিও-তে বলছেন জনি ডেপ’রে যে, “তোমার কথা তো কেউ বিলিভ করবো না!” নরমালি করাটা টাফও। তো, এই কথার ভিতর দিয়া মানুশ-জনরে বেকুব বানানো হয় নাই খালি, বোধ-বুদ্ধি কম বইলা ডিক্লেয়ার করা হইছে। এইটা একটা ঘটনা। এইটা জানার পরে কমন-ন্যারেটিভ নিয়া আরো সন্দেহ হওয়ার কথা মানুশ-জনের। আর সেইটা হইছেও আসলে।
সেকেন্ড হইতেছে, খালি একটা স্পেসিফিক ঘটনা না, বরং অই ঘটনার আগের বা পরের ঘটনাগুলাই অই ঘটনাটারে ডিফাইন করতে থাকে আসলে। আমাদের মেমোরি’তে এবং পাবলিক-সাইকি’তেও একটা ঘটনা একইভাবে থাকে না সবসময়। একটা চারপাশের সাথে মিক্সড হয়াই থাকে। একজন মানুশের ইমেজ দিয়া, তার আগের কাজকামের পারসেপশন দিয়াই তার কাজকামরে যাচাই করতে থাকি আমরা বেশিরভাগ সময়। উল্টাটা যে হয় না – তা না, কিন্তু ইমপ্যাক্টটা পরে তৈরি হয়।… জনি ডেপ তো ক্যারিয়ারে সাফার করছেন। এখন যদি উনার হাতে অনেক কাজকাম থাকতো, ক্যারিয়ারে সাফার না করতেন, তাইলে সন্দেহ একটু বেশি হইতে পারতো তো 🙂 মানে, উনার পারসোনালি ভারনারেবল পজিশন উনারে এই জায়গাটারে এস্টাবলিশড করতে হেল্প করতেছে একভাবে। যেইভাবে আগেরবার মি-টু’র আন্ডারস্ট্যান্ডিং এমবার হার্ডরে হেল্প করছিল।
মানে, পাবলিক পারসেপশনের একটা ঘটনা সবসময়ই আছে এইখানে। ঘটনা যা-ই হোক, আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের বাইরে গিয়া তারে দেখা তো কখনোই সম্ভব না। এমবার হার্ড জনি ডেপের মামলা আমাদের চিন্তা-ভাবনার অইরকম খাদের কিনারা’র জায়গাটাতে গিয়াও হিট করছে আসলে। যেই কারণে এইটা মিডিয়া-বাজের বাইরেও সিগনিফিকেন্ট ও কমন-ইন্টারেস্টের একটা ঘটনা হয়া উঠছিল, একভাবে। যে, এই ‘কমন-ন্যারেটিভের’ জায়গাটারে আমরা কেমনে ডিল করবো তাইলে?
***
এই জায়গাটা ইন্টারেস্টিং। মানে, আমরা যে পলিটিক্যাল জুলুম নিয়া খালি কথা বলতে পারি না – তা না, বরং মনে করি যে, যে কোন অন্যায়-অবিচার নিয়াই কথা-বলা উচিত না আমাদের। 🙂 বিপদ হইতে পারে!
এখন বিপদ যে হইতে পারে না – তা না, কিন্তু এই করতে করতে পাওয়ারফুল লোকদের পক্ষে থাকাটারে আমরা সেইফ-থাকা বানায়া ফেলছি, সোশ্যাল-প্রাকটিসে নিয়া আসছি। পলিটিক্যাল জুলুমের এগেনেস্টে কথা না-বলার যেই অভ্যাস, যেই কালচার আমরা এস্টাবলিশ করছি, এর ‘কর্মফল’ ভোগ করা আরো বাকি আছে আমাদের। সবে শুরু…
আর হিরো-আলম, রবীন্দ্র-সঙ্গীত নিয়া কথা বলা যাবে-না – তা না, কিন্তু কালচারাল রেভিউলেশন যখন পলিটিক্যাল এস্কেইপের ঘটনা হয়া উঠে, সেইটা কালচার হিসাবেও আরো বেশি আজাইরা হয়া উঠে আসলে।
***
বাকশাল [BAL ও তার সার্পোটার বাম-দলগুলা] যে নন-ডেমোক্রেটিক, এইটা নিয়া তো তর্ক করার কিছু নাই!
যারা বাকশালরে সার্পোট করেন [ কিছু পেইড-প্রপাগান্ডা করা লোকজনের কথাই আমি বলতেছি ] তারা না-বুইঝা করেন না। তারা মনে করেন, দেশের মানুশের বুদ্ধি নাই, তাদের ভোট-দেয়ার কোন দরকার নাই! তারা তো বলেনই যে, “উন্নয়ন”-এর জন্য [মানে, ফ্রি-স্টাইলে লুটপাট করার জন্য] বাকশালের কোন “বিকল্প নাই!”
মানে, না-বুইঝা না, বরং জাইনা-বুইঝাই উনারা অবৈধ বাকশালি সরকাররে সার্পোট করেন।
কিন্তু যারা বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি চান, ভোট চান, তারাই মনে করেন, বাকশালও মনেহয় ডেমোক্রেসিই চায়! ইলেকশন করতে চায়! 🙂
বাকশাল ক্ষমতা থাকতে কোনদিনই কোন ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন দিবে না। এই সত্যি-কথাটা, যারা এই জুলুমের শাসন চান না, তাদের বরং আরো ক্লিয়ারলি, কোন সন্দেহ ছাড়া বুঝতে পারাটা বেশি দরকার।
জুন ৫, ২০২২
বিফোর ট্রিলজি’র সেকেন্ড পার্টে “বিফোর সানসেটে” যখন জুলি’র লগে ইথানের দেখা হইছে, তখন একজন আরেকজনরে জিগায়, তাদের কি কি চেইঞ্জ হইছে, চেহারায়। জুলি কয় ইথানের কপালের কাটা-দাগটা, স্কার্স’টা আরো ভিজিবল হইছে। তো, বয়স বাড়তে থাকার সাথে সাথে এইটা হয়। আমি দেখলাম গতকালকে আমার বাম চোখের পাশে চামড়াগুলা কুঁচকাইতেছে। স্কার্সগুলা স্পষ্ট হইতেছে।
আগেরদিনে তো এইরকম ছিল, যার শরীরে স্কার্স বেশি, সে তত বেশি লড়াইয়ে গেছে। মানে, শরীরের একেকটা কাটা-দাগ হইতেছে একেকটা এক্সপেরিয়েন্সের নিশানি। যার শরীরে কোন দাগ নাই, সে খুব এস্কেপিস্ট লাইফ কাটাইছে, এইরকম। পরে তো জিনিসগুলা পাল্টাইছে।…
কমলকুমার মজুমদার হিন্দু মুনি-ঋষিদের কিছু কাহিনি কম্পাইল করছিলেন, অইখানে একটা কাহিনিতে একজন বলতেছিলেন, কড়াইয়ে খই ভাঁজলে সব পদ্মফুলের মতো ফুইটা উঠে না, গায়ে কিছু দাগ থাকেই।… আমাদের মনের সবগুলা দাগ আমাদের শরীরে না থাকলেও কিছু চিহ্ন তো কোন না কোনভাবে আসলে থাকেই!
***
বাকশালি-ন্যারেটিভ কি জিনিস?
যে কোন কালচারাল, ইকনোমিক ও সোশ্যাল ইস্যুরে নন-পলিটিক্যাল ঘটনা হিসাবে দেখতে-পারা এবং দেখাইতে-চাওয়া হইতেছে বাকশালি-ন্যারেটিভের কোর একটা ঘটনা।
মানে, সবকিছুই পলিটিক্স বা কন্সপিরেসি – তা তো না-ই, বরং এইরকম সিউডো-পলিটিক্যাল পজিশন’টা বাকশালি-ন্যারেটিভটারে একভাবে ব্যালেন্স করতে হেল্পও করে অনেক সময়। আমি বলতে চাইতেছি এক ধরণের ডিস-কানেকশন তৈরি করার জায়গাটার কথা।
যেমন ধরেন, চিটাগাংয়ের কনটেইনার ডিপো’তে আগুন লাগলো, সেইটারে একটা ওয়ান-অফ ঘটনা হিসাবে দেখানো, সেইফটি-কালচার না-থাকা, এনাফ রুলস-রেগুলশন না-থাকা, এমনকি এর লগে রিলেটেড লোকজনের ‘অশিক্ষিত’ (এইটা মোটামুটি বাকশালিদের পছন্দের ক্রাইটেরিয়া, পিপল তো বুঝে না, আমরা বুঝাবো 😎) হওয়ার কারণে এইসব ঘটতেছে বইলা আবিষ্কার করতে থাকা!
এখন এইসব জিনিস যে নাই – তা তো না, কিন্তু একটা অবৈধ-সরকারের, জুলুমের শাসনের যেন কোন কন্ট্রিবিউশন নাই এইখানে! অই ডিস-কানেকশনটা তৈরি করা। এবং কন্টিনিউয়াসলি করতে থাকাটা হইতেছে “বাকশালি ন্যারেটিভ”-এর ঘটনা।
[এইটারে অবশ্যই একটা স্ট্যাটিক জিনিস হিসাবে, সংজ্ঞা বা ডেফিনেশন হিসাবে দেইখেন না। ফর্ম হিসাবে ডেফিনেশন এখন যতোটা না কিছু ক্ল্যারিফাই করতে পারে, তার চাইতে অনেক বেশি অবস্টেকল হিসাবেই কাজ করে। বরং, এইটা একটা টেনডেন্সি, যেইটা বাকশালের কাজকামরে লোকেট করতে হেল্প করতে পারে।]
জুন ৬, ২০২২
মিডিয়া-হিরো
বেশিরভাগ কেইসেই মিডিয়া-হিরো’রা খারাপ-লোক না, বরং এইরকমের মানুশ যারা বেকুব হইতে রাজি আছেন।
যে কোন সেনসেশনাল ঘটনাতেই দায়ী করার জন্য, স্কেইপগোট বানানোর জন্য যেমন কিছু মানুশ পাইবেন, একইরকম ভাবে কিছু মানুশও থাকেন, যারা “হিরো” হইতে রাজি আছেন।
এইটা “মানবিক” একটা গুণ। মানে, সিগনিফিকেন্ট কোন কাজ করতে পারা, রিকগনাইজড হইতে পারা, এবং মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি নিজে নিজে সেইটা জাহির না-করা, এইরকম মানুশ-জন আছেন। কিন্তু নিউজ-মিডিয়াতে আপনার-আমার ফ্রেন্ডরা আছে কি করতে! 🙂
নিউজ-মিডিয়ার কাজ হইতেছে নিয়মিত বিরতিতে, নানান বিষয়ে “মিডিয়া-হিরো” খুুঁইজা বাইর করা। এইরকম দিন খুব কম-ই পাইবেন যেইদিন কোন পত্রিকার ফিচার-পাতায়, স্পেশাল টিভি-নিউজে কোন আন-সাং হিরো’র খবর আমরা পাইতেছি না। এন্ডি ওয়ারহল যেইটারে কইছিলেন, ফিফটিন মিনিসট অফ ফেইম।…
তো, এইগুলা কইরা নিউজ-মিডিয়া একটা ফিল-গুডস ফিলিংসই দেয় না, বরং যেইসব চিন্তা-ভাবনা আপনার করা দরকার, সেইগুলা থিকা নজরও সরায়। মিডিয়া-হিরো হইতেছে নিউজ-মিডিয়ার ডোপামিন।
কিন্তু মিডিয়া-হিরোদের লাইফ নরমালি খুবই পেইনফুল, ডিপ্রেসড একটা লাইফ উনারা পার করতে থাকেন। আবার এবং বারবার উনারা হিরো হইতে চান – তা না, কিন্তু নিজেরে ইম্পর্টেন্ট মনে হইতে পারার জিনিসটা তো কখনোই খুব বেশি লং লাস্টিং হইতে পারে না! পেপার-কাটিং নিয়া জীবন কাটানো তো খুব আনন্দের ঘটনা না আসলে।…
আর নিউজ-মিডিয়ার কাছে অনেক অনেক অপশন না থাকলেও নতুন নতুন অপশন তো বানাইতে হয়। টেলেন্ট-হান্ট প্রোগ্রামগুলার কথা ভাবতে পারেন। একটা একসাইটেমন্টই ক্রিয়েট করতে পারাটা হইতেছে এইখানে জরুরি ঘটনা, টেলেন্টের চাইতেও। যে, আরো কতো টেলেন্ট আছে দুনিয়ায়, আমরা তো জানি না!
এখন এই মিডিয়া-হিরো’রা ট্রাজিক না, বরং অই তো শর্ট-লেন্থে ট্রাজেডি, লং-শটে দেখতে হিউমারাস, কিন্তু খুব সময়েই ব্যাপারটা বিউটিফুল হইতে পারে।
‘মিডিয়া-হিরো’ হইতেছে একটা মিডিয়া-টুল, অনেকটা আগের-দিনের ওয়ার-হিরোদের মতোই…
***
সোশ্যাল-ইনফ্লুয়েন্সার
একজন সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারের লগে দেখা হইলো। উনি জেলা শহরের সরকারি কলেজের একজন ইয়াং টিচার। একটা রক্তদান গ্রুপের ইনিশিয়েটর, মিনি-ম্যারাথন দৌড়ান, আরো কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজের লগে জড়িত আছেন। কলেজে, শহরে খুবই পরিচিত মুখ। সবাই উনারে চিনে। উনার সাথে বইসা সন্ধ্যাবেলা কফি খাইলাম। রেস্তোরা থিকা বাইর হওয়ার সময় দোকান-মালিক (সেও ইয়াং) কইলো, স্যার খাবার কেমন ছিলো? ভালো বলা’তে বললেন, ফেসবুক একটা পোস্ট দিয়া দিয়েন, স্যার!
তারপরে দুইজনেই হাসলেন।
ইয়াং টিচার দোকান থিকা বাইর হয়া বললেন, এর আগের বার এই দোকানে একটা বার্গার খাওয়ার পরে পজিটিভ রিভিউ দিছিলেন, দোকানে তিনদিন খালি বার্গারই বেচা হইছে! আমরাও খুশি হইলাম। ভালো-কাজের, ভালো-কথার আসলেই দাম আছে।
জুন ৮, ২০২২
বাকশালের কাছে কোন এগজিট নাই, পালানোর রাস্তা নাই, নেগোশিয়েট করার কোন টুল নাই। সবচে বাজে যেই ঘটনা ঘটতে পারে, সেইটা হইতেছে দেশে একটা সিভিল-ওয়ার লাগায়া দিয়া বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান আর্মি ঢুকানোর ট্রাই করা।…
অনেকেই ভাবতে পারেন, এইরকম ভাবাটা অনেকবেশি ওয়াইল্ড থিঙ্কিং। কিন্তু এইরকম একস্ট্রিম পসিবিলিটি থিকা কতো দূরে আমরা আছি, আমি শিওর না আর কি!
বাংলাদেশে মিলিটারি, বাংলাদেশের পুলিশ দিয়া বাংলাদেশের মানুশের বুকে আর বেশি দিন গুলি চালানো যাবে না। চেতনার আফিম কাজ করতেছে না আর। এই কারণে আরো একস্ট্রিম ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হইতে পারে। “বিপ্লব”-এর নামে “ষড়যন্ত্র” করার একস্ট্রিম টাইম এখন। এই ট্রাপ তৈরি করা হইতে পারে।
বাকশাল ক্ষমতায় আসছে ষড়যন্ত্রের ভিতর দিয়া, ক্ষমতা টিকায়া রাখতেছে নানান রকমের ষড়যন্ত্রের ভিতর দিয়া, এখন নিজেরে বাঁচায়া রাখার জন্য একটা কন্সপিরেসি একস্ট্রিমলি রিকোয়ার্ড। ক্ষমতা টিকায়া রাখার লাইগা যে কোন কিছুই করতে পারে এখন।
কিন্তু বাংলাদেশের মানুশ যদি নিজেদের ক্ষমতা একবার দাবি কইরা বসে তখন বাকশালিদের পতন কেউ ঠেকাইতে পারবো না। এই কারণে, নতুন আফিম দরকার, নতুন কোন ষড়যন্ত্র। এইটা ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নাই বাকশালের কাছে।
২০১৩ সালে যেইরকম “শাহবাগ-ষড়যন্ত্র” হইছিল, আজকে ৯ বছর পরে পলিটিক্যালি এইরকম একটা ষড়যন্ত্রের খুব কাছাকাছি আমরা আছি।
কোন ষড়যন্ত্র ছাড়া বাকশাল বাঁচতে পারবে না। কিন্তু মানুশের ক্ষমতার বাইরে, ভোটের বিচারের বাইরে যে কোন অপশনরে বাতিল করতে হবে আমাদেরকে।
***
ভিজিবিলিটির সবচে বড় সমস্যা হইতেছে লিনিয়ারিটি। ধরেন আমার যেই ফেসবুক প্রোফাইল-পিক আছে অইটাই তো আমি না। কিন্তু যেহেতু অইটা ভিজিবল, সামনে আছে, অইটাই আমি তো! মানে, যা কিছু দেখা যাইতেছে, অইটুক তো ঘটনা না, একটা অংশ মাত্র। এন্ড ইটস ওকে!
একবার একটা পোস্টে চেইতা গিয়া ব্যাপক গালি-গালাজ করছিলাম একজনরে, আমার এক্স-কলিগ দেইখা কইলো, ভাই, আপনি গাইল দিতে পারেন! মানে, আমি তো গুড-বিহেভ করতে চাই সবার লগে। ভদ্রতারে ভন্ডামি মনে করি না আমি। আমি মনে করি এইটা একটা ভালো চয়েস, বেশিরভাগ সময় (যদি এফোর্ড করা যায়)। কিন্তু যে আমারে গালি-গালাজ করতে দেখছে, সে ভাবতেই পারে আমি এইরকমই। যেইটার কোনটাই আসলে ‘ঠিক’ না। মানে, দুইটাই ঠিক।…
আমি বলতে চাইতেছি, এইটা “আমরা যা দেখি, (একইভাবে, আমরা যেমনে ভাবি) সেইটাই সত্যি” – এই ইল্যুশনটারই একটা সমস্যা। মেবি আমাদের সময়ের সবচে বড় ইল্যুশনও এইটাই।
জুন ৯, ২০২২
– বাংলাদেশের আজকের বাজে-ইকনোমিক অবস্থা পলিটিক্যাল জুলুমেরই একটা রেজাল্ট –
মানুশের হাতে টাকার পরিমাণ বাইড়া যাওয়া মানে পারসেচিং কেপাসিটি বাড়া না, বরং ইনফ্লেশনই, বেশিরভাগ সময়।
আর বাংলাদেশে এই ইনফ্লেশন তৈরি হইছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো এবং মেগা-প্রজেক্টগুলাতে ওভার-স্পেন্ডিংয়ের কারণে সরকারের লোন নেয়ার ভিতর দিয়া। মানে, ওভারঅল সবার হাতে টাকা নাই, টাকা যা আছে, সেইটা আছে একটা গ্রুপ অফ পিপলের হাতে। ইভেন প্রিভিলেজড ক্লাসের সবারও এতে একসেস তৈরি হয় নাই।
বাজারে জিনিসের দাম বাড়তেছে, বেচাও হইতেছে, কিন্তু সবাই কিনতে পারতেছে না। এই কারণে সিচুয়েশনটা খালি ইনফ্লেশনেই আটকায়া নাই। এই জিনিসটার এফেক্ট অন্য জায়গাগুলাতে ধীরে ধীরে ছড়ায়া পড়তেছে। মানে, বেশি-টাকা দিয়া কি করবেন আপনি? লাক্সারি-গুডস কিনবেন, লাক্সারি-গুডস না পাইলে বেসিক-গুডসের দাম বাড়ায়া দিবেন বেশি-দামে কিইনা। ট্রেডার’রা ২-৪-১০টাকা কইরা বাড়াইতে থাকবে দাম, মজুত করতে শুরু করবে।…
এতে কইরা যাদের হাতে বাড়তি-টাকা নাই, তারা বিপদে পড়তে থাকবে, নতুন কইরা গরিব হইতে থাকবে। এই সিচুয়েশনটা যদি কন্টিনিউ হইতে থাকে, এর পরে কি হবে? – এইটা আমার কাছে বেসিক কোশ্চেন মনেহয় না। বরং আমি মনে করি, কি কারণে এই অবস্থা তৈর হইলো? সেইটা ফাইন্ড-আউট করতে পারাটা ক্রুশিয়াল।
একটা পলিটিক্যাল জুলুমের শাসনের কারণে এই বাজে-রকমের ইকনোমিক অবস্থাটা তৈরি হইছে। তো, এই জুলুমের শাসন যদি শেষ না হয়, এই বাজে-অবস্থা আরো কন্টিনিউ হইতে থাকবে বইলাই আমার ধারণা।
এই অবৈধ-সরকার তার খরচ কমাইতে পারবে না। কারণ তাইলে ক্ষমতা ধইরা রাখতে পারবে না। আরো বড় বড় মেগা-প্রজেক্ট শুরু করা লাগবে, সরকারি-লোকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াইতেই থাকতে হবে। আর সব টাকা বাজার থিকা তোলার কারণে বাজারে ইন-স্ট্যাবিলিটি ক্রিয়েট করা লাগবে।…
মানে, আমরা যেই ইকনোমিক ক্রাইসিস দেখতেছি সেইটা পলিটিক্যাল জুলুমের রেজাল্ট। শ্রীলংকার ঘটনা কিছুটা উল্টাই ছিল, অদের ইকনোমিক ক্রাইসিস বরং পলিটিক্যাল ইনস্ট্যাবিলিটিরে ট্রিগার করছে। আর আমাদের পলিটিক্যাল ক্রাইসিসটা একটা ইকনোমিক ইনস্ট্যাবিলিটির দিকে নিয়া যাইতেছে আমাদেরকে। এইটাই পুরাটা না হইলেও, এইটাই মেইন ঘটনা।
***
ম্যানুফেকচারিং ফিলিংস (১)
যে কোন ফিলিংস, যত খাঁটি ও অরিজিনালই হোক, বেশি সময় ধইরা রাখতে পারবেন না আপনি। ফিলিংস সবসময়ই টেম্পোরারি। তবে ফিলিংস অনেক সময় “ডোপামিন”-এর মতোও।
ধরেন, আপনি ফানি হইতে পছন্দ করেন, দেখবেন ফান করার মতো কিছু জিনিস সবসময় আপনার চারপাশে খুঁইজা পাইতেছেন। বা ধরেন আপনি “বিপ্লবী”, চেইতা যাওয়ার মতো এল্টিমেন্ট কিছু না কিছু সবসময় খুঁইজা পাবেন। মন-খারাপের, ডিপ্রেশনের কথা কইলাম না আর 🙁 মাকড়সা’র জালের মতন সবকিছুরে এই ফিলিংস গিইলা ফেলতে পারে, তার ভিতর।…
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, একটা ঘটনা একটা ফিলিংসরে জাগায়া তুলে না খালি, আমাদের ফিলিংসের অভ্যাসের কারণেও অনেক সময় ঘটনাগুলারে আবিষ্কার করতে থাকি আমরা। এইটাই ঘটনা না, কিন্তু এইটা হয়।
তবে নিউজ-মিডিয়া যেমনে মেনিপুলেট করে, সেইটার মত না। এখন দেখবেন, রেইপের নিউজ কম, তার মানে এইটা না যে, রেইপ কমে গেছে, নিউজ-ভ্যালু কম। সীতাকুন্ডের আগুনের পরে ছোট-খাট আরো কিছু আগুনের দেখা পাওয়ার কথা আমাদের।
সেকেন্ড যেইটা হয়, কোন ঘটনায় কোন ফিলিংস দিতে হবে – এইটারও একটা নর্মস থাকার কথা। একই ঘটনায় যে দুই-তিন ধরণের ফিলিংস হয় না – তা না, কিন্তু অই তো ৩-৪টা হিউম্যান ফিলিংসই পসিবল। ভ্যারিয়েশন কমই। মানুশের হাজারটা ফিলিংস নাই আসলে।…
থার্ড হইলো, অনেক ফিলিংস আমাদের হয়, হয়তো ফিলও করতে পারি একভাবে, কিন্তু কইতে পারি না, বুঝাইতে পারি না। এইরকম কতো হাজার আছে, আমরা জানি না, কিন্তু কেউ যখন একবার ব্যাপারটারে এক্সপ্রেসবল কইরা তুলতে পারে, তখন সব মানুশই বুঝতে পারেন, কম-বেশি।
আর এইটা বেশি হয় কবিতা, ফিকশন, ছবি, মিউজিকের ভিতর দিয়া। আমাদের নলেজ-সিস্টেমে এন্টার করে একভাবে। এই কারণেও আসলে এই কালচারাল এলিমেন্টগুলা ইম্পর্টেন্ট। এইগুলা খালি ফিলিংস এক্সপ্রেস করার টুলই না, কোন ফিলিংসটা কেমনে দিতে হবে – এর এসথেটিক্যাল এবং ইথিক্যাল নর্মস সেট করার ঘটনাও।…
***
বাংলাদেশের লিবারাল, সেক্যুলার এবং গড়পরতা ফেমিনিস্টদেরকে*ও বাংলাদেশের লোকজন খুবএকটা পছন্দ করেন না বা নিজেদের লোক বইলা ভাবতে পারেন না বেশিরভাগ সময়। মানে, এইরকমের একটা ঘটনা আছে, এখনকার সময়ে।
তো, এইটা এই কারণে না যে, উনারা খারাপ-মানুশ বইলা এইটা ঘটে, বরং মোস্ট অফ দ্য কেইসেই উনারা পারসোনালি খুব ভালো-মানুশ। আচার-ব্যবহার ভালো, চেহারা-ছবি সুন্দর, হেল্পফুল, মানে পজিটিভ অনেক কিছুই আছেই। একটা বামুনগিরি [ব্রাহ্মণ্যবাদ], একটা নাক-উচাঁ ভাব যে “আমি জানি” এইরকম কিছু ব্যাপার আছে, কিন্তু উনারা ভালো-মানুশই কম-বেশি।
তারপরও লোকজন উনাদেরকে বিলিভ করে না কেন, নিজেদের লোক মনে করে না কেন…
এইটা নিয়া ভাবতে গিয়া মনে হইলো, উনারা ধর্ম মানেন না, নাস্তিক – এইটা মেইন সমস্যা না আসলে। মানে, এইটা বেশিরভাগ কেইসে বামুনগিরি বা “আমি জানি”র কলোনিয়াল প্রাইড থিকাই আসে, কিন্তু যতোক্ষণ না পর্যন্ত এইরকম টিটকারিগুলা খবরদারির স্টেইজে আসে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকজন এভেয়ডই করে।
এইটা সারফেইস লেভেলের একটা ঘটনাই।…
কিন্তু এইসবের ভিতর দিয়া লিবারাল, সেক্যুলাররা যেইটা করেন দেশের পলিটিক্যাল প্রবলেমগুলারে ইগনোর করার একটা রাস্তা তৈরি করেন আসলে। বাকশাল’রে বাঁচানোর একটা ব্যারিকেডও তৈরি করেন। পলিটিক্যাল প্রবলেমগুলা যেন কালচারাল ক্রাইসিস – এইরকমভাবে দেখতে এবং দেখাইতে থাকেন। এখনকার কনটেক্সটে এইটারেই আমার কাছে সবচে বড় ইস্যু মনেহয়।
মানে, কালচারাল সমস্যাগুলা যে নাই – তা না, কিন্তু মানুশের রুটি-রুজির চাইতে, ভোট আর বিচারের মতো মিনিমাম পলিটিক্যাল রাইটস না-থাকার চাইতে যখন কালচারাল ক্রাইসিসগুলারে হাইলাইট করা হয়, তখন এইটা আর গুড বা ব্যাড জিনিস থাকে না, আগলি জিনিস হয়া উঠে আসলে। তো, এই আগলিনেসটারে তো নেয়া যায় না কোনভাবেই…
…
*মানে এইখানে তো আরো অনেক ভ্যারিয়েশন তো আছেই এই ক্যাটাগরিগুলার ভিতরে, সেইটা মাথায় রাইখাই বলতেছি।
জুন ১০, ২০২২
বাজেট-আলোচনা
বাজেট নিয়া কথা-বার্তা হবে কিছুদিন। হওয়ার দরকারও আছে। নানান ধরণের আলাপ-আলোচনার মধ্যে দুইটা জিনিস খেয়াল করা দরকার আমাদের।
এক, বাজেটের ডেটা বা নাম্বারগুলা। এইগুলারে যারা কোশ্চেন করবেন না, “সত্যি” ধইরা নিয়া আলাপ করবেন, তাদের আলাপরে সন্দেহ করবেন। বাংলাদেশের সরকারি ডেটা খালি স্ট্যাস্টিক্যালি ভুল না, খুবই ‘উদ্দেশ্য-প্রণোদিত’ ভাবে ভুল ডেটা দেয়া হয়। এবং অনেক ডেটা মেনশন করা হয় না। এইগুলা ‘ভুল’ না, বরং খুবই ইচ্ছাকৃত ঘটনা। এই জায়গাটারে মার্ক না কইরা বাজেটের আলাপ আসলে হইতে পারে না।
সেকেন্ড হইতেছে, এর পলিটিক্যাল ইমপ্লিকেশনগুলারে খেয়াল করা। কোন খাতে কতো টাকা বরাদ্দ দেয়া হইতেছে সেইটা অই সেক্টরের ইকনোমিক গুরুত্বের ঘটনা না, বরং বাকশালের ক্ষমতায় থাকতে হইলে পলিটিক্যাল গুরুত্ব কতোখানি, সেইটার ঘটনা। এডুকেশনে টাকা দেয়ারই দরকার নাই তেমন, কারণ ছাত্রলীগ তো অন্য সেক্টর থিকাই টাকা-মাইরা খাইতে পারে; কিন্তু সেইফটি-সিকিউরিটির নামে পুলিশ-মিলিটারিরে টাকা না দিলে মুশকিল। এইরকম। এই উদ্দেশ্যের জায়গাটারে ভুইলা গেলে বাজেটের হিসাব মিলানো যাবে না।…
***
নারায়ণগঞ্জে নাকি মসজিদের ভিতরে এক পুলিশরে পিটাইছে। তো, একজনরে দেখলাম এর সমালোচনা করতেছেন যে, মসজিদের ভিতরে পিটানো ঠিক হয় নাই।
পরে দেখলাম, রাস্তা-ঘাটেও দুই-এক জায়গায় পুলিশ পিটানি শুরু হইছে। এইটা ঠিকাছে কিনা – এই নিয়া কোন পোস্ট অবশ্য দেখি নাই! 🙂
ধর্মের কারণে পিপল পুলিশরে পিটাইতেছে – এইরকম লিনিয়ার জায়গা থিকা ধর্মরে দেইখেন না! এইটা বাকশালি-দালাল নিউজ-মিডিয়ার বয়ান। (ইন্ডিয়ার কাছে দেশ বেইচা দেয়ার কারণে বরং ঘটতেছে এই ঘটনা। বাংলাদেশের পুলিশ ইন্ডিয়ার পক্ষ নিয়া বাংলাদেশের মানুশরে মারতেছে বইলা এই ঘটনা।) পিপল পুলিশের উপর খেপা আজকে থিকা না, একদিনের ঘটনা না এইটা।
পুলিশ যখন-তখন পিপলরে পিটাইছে, যেইখানে খুশি সেইখানে মারছে। বায়তুল মোকারমের ভিতর ঢুইকা পিটাইছে। গুলি কইরা মানুশ খুন করছে। পুলিশ যখন খুশি যারে তারে ধইরা নিয়া যাইতে পারে, ধইরা পিটাইতে পারে, মামলা দিতে পারে। তখন কোন “কারণ” লাগে না!
এই কারণে পুলিশ পিটাইতেও কোন কারণ লাগার কথা না! যত পাপ জমা হইছে, সহজে তার উসুল হবে না! কোন না কোন ইস্যুতে মানুশের এই রাগ-ক্ষোভ বাইর হয়া আসতে থাকবে।
Leave a Reply