জুন ২১, ২০২২
রাতের বেলা, যেই ভাতের হোটেলে খাইতে বসছি, সেইটার ক্যাশে বসা দোকান-মালিক তার ফ্রেন্ডরে মোবাইলের স্ক্রিন দেইখা জোরে জোরে পইড়া শুনাইতেছে, কি কি খোলা থাকবে আর কি কি বন্ধ থাকবে, রাত ৮টার পরে। পড়তে পড়তেই চেইতা যাইতেছে সে। ফ্রেন্ড কইতেছে, তোর দোকান তো খোলাই থাকবো, দোকান তো বন্ধ করা লাগবো আমার। ভাতের হোটেলের মালিক তা-ও চেইতা গেলো, বন্ধ করা লাগবো ক্যান! পুলিশরে ৫০০ টাকা দিয়া, সামনে দুইটা সিগারেটের প্যাকেট থুইয়া দোকান খোলা রাখা লাগবো তখন! বেচাকেনা শুরুই হয় রাতের ৮টার পরে। সব দোকান বন্ধ থাকলে, হোটেলের লাইগা মানুশ আসবো নাকি! সরকারি অফিসের এসি বন্ধ করে না ক্যান শুয়োরের বাচ্চাগুলি! সব কিছু খালি আমাদের উপ্রে! ভ্যাট-ট্যাক্স কি এই কারণে দেই নাকি!
ফ্রেন্ড তো ডরায়া গেলো তার গলার টোন শুইনা, কয়, এতো জোরে কথা কইস না! পরে নিয়া জেলে ঢুকাইবো। কিন্তু ভাতের হোটেলের মালিক চেতছে সিরিযাসলি, কয়, তুই কথা কইস না, আমিও কবো না, তাইলে বাল করবো’টা কি! দেশটারে একটা গোরস্তান বানায়া রাখছে!
ফ্রেন্ড দেখলো, অবস্থা খুবই খারাপ। এইখানে দাঁড়ায়া থাকলে পুলিশে ধইরা নিয়া যাওয়ার পসিবিলিটি আছে 🙂 কোন কথা না কইয়াই সে চইলা গেলো। দোকান-মালিকও ফোঁস ফোঁস করতে করতে চুপ মাইরা গেলো।
২.
দই খাইতে এক দোকানে ঢুকলাম, আমরা পাঁচ-ছয়জন। রাত দশটা-সাড়ে দশটা বাজে। রাস্তা ক্রস কইরা দোকানে ঢুকানোর সময় একটা পুলিশ ভ্যান গেলো। দোকানে ঢুইকা নানান কথার ফাঁকে একজন কইলো, বাজারে গমের রেইট ৪০ টাকা কেজি, আর সরকারি গুদামে গম কেনার ঘোষণা দিছে ২৮ টাকায়। এই দামে কে বেচবে? তখন আরেকজন কইলো, সরকারি-লোকজনই আড়তদারদের-মজুতদারদের সুবিধা দেয়ার লাইগা এইগুলা করে।… আমি কইলাম, এইখানে একটা চক্র আছে, সরকারি-ইন্সপেকশন যারা করবে, যারা মজুত করবে আর পলিটিক্যাল দলের লোকজনের। এখন পর্যন্ত কোথাও আলাপ নাই, সরকারি গুদামে কতো চাইল আছে, পাইপলাইনে কি আছে! এইগুলা না-জানায়া বরং মজুত-করারে উৎসাহ দেয়া হইতেছে। দোকানের বেচা-বিক্রি তো কমে যাইতেছে, কম বেইচাই আগের লাভ করার লাইগাও দাম বাড়তেছে! কোন মজুতদারিই সরকারি মদদ ছাড়া ঘটতে পারে না আসলে।…
দুইজন লোক বইসা ছিলেন পাশের টেবিলে। উনারা পুরাটা ঘুইরা আমাদের দিকে হা কইরা তাকায়া রইলেন! বলার পরে খেয়াল করলাম। উনারা মাইর-টাইর দেন কিনা – এই ভয় পাইতেছিলাম। তখনই সিভিল-ড্রেসে দুইটা ইয়াং পুলিশ ঢুকলো দোকানে। ওয়াকি-টকি’টা জোরে রাখলো টেবিলের উপরে।… আমরা বুঝলাম, আর কথা বাড়ানো যাবে না। উইঠা পড়লাম।
উঠতে উঠতে শুনি, কিউট রকম চেহারার ইয়াং পুলিশটা দোকানদাররে বলতেছে, সবচে দামি দুইটা মিষ্টি দেন!
***
সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার তেমন কোন এস্থেটিক ফটো আমরা এখনো পাই নাই। (যা পাইছি, এমেচার জিনিসই, মোস্টলি। দুক্খ-কষ্ট আছে, কিন্তু এস্থেটিক-ভাবটা মিসিংই…) “মানবতার” খাতিরে যেই মিডিয়া-হিরো’রা (অবভিয়াসলি এর বাইরেও লোকজন আছেন) গেছেন, উনারাও খুববেশি ছবি তুলতে পারার কথা না। এই কারণে না যে, ক্যামেরা বন্যার পানিতে পইড়া যাইতে পারে বইলা লগে ক্যামেরা নেন নাই, বা লোক-দেখানি কাজকাম করতে চান না, বরং বন্যার এস্থেটিক ছবি-টবি তুললে “মানবতার আম্মা” মাইন্ড করতে পারেন তো! উনাদের এই পলিটিক্যাল-সেন্স খুবই এপ্রিশিয়েট করার মতো একটা ঘটনা। (মানে, এই চিন্তা তো ঠিকই আছে।)
করোনার সময় যেমন, মানুশের গাদাগাদি করা, মাস্ক না পরার শ’য়ে শ’য়ে ছবি পাইছি আমরা, কিন্তু কোন হসপিটালের কোন ছবি আমরা পাই নাই। এই কারণে না যে, “অফিসিয়ালি নিষিদ্ধ” ছিল, বরং গড়পরতা এস্থেটিক ফটোগ্রাফার’রা বাকশালের ইমেজ ধইরা রাখারই সৈনিক। সেইটাই উনাদের কাছে ভালো-ছবি, সেনসেশনাল-ছবি, যেইটা বাংলাদেশের অবৈধ-সরকার’রে “বিব্রত” করে না।
এই যে এস্থেটিক-মিলের জায়গাটা, যত ছোটই হোক, খেয়াল করাটা মনেহয় অ-দরকারি জিনিস না, স্পেশালি যেইখানে ভিজিবিলিটির-দুনিয়াই হইতেছে আমাদের একমাত্র রিয়ালিটির ঘটনা।
জুন ২৩, ২০২২
সিনস অফ সিনেমা ১৩: বউ-জামাই
বলিউডে বিজেপি’র শুরুর দিকের সফট-প্রজেক্ট ছিল “যোধা-আকবর” সিনেমাটা। [খেয়াল করেন, যোধা’র নাম শুরুতে, মেইন কারেক্টারও শে এইখানে 🙂 ] তো, ঘটনা এইটা না; হিটলার হিউম্যান জু বন্ধ কইরা দিছিলেন বইলা অইটা তো বাজে-কাজ ছিল না, এইরকম আর কি! [হিটলারও তো লিবারাল ছিলেন কিছুটা, যেইরকম লিবারাল হইতে হইলে কিছুটা হেইট্রেট রাখতে হয় মনের ভিতর।…]
ঘটনা হইতেছে, সিনেমাতে দেখাইতেছে, যোধা’রে আকবর বিয়া করছিল রাজপুতদের লগে এক ধরণের সমঝোতা করার জন্য। কিন্তু যোধা পাক্কা হিন্দু-মহিলা, মোগল রাজপ্রসাদের ভিতরে ঢুইকা মন্দির বানায়া ফেলছিল। 🙂 কিন্তু সবাই মোটামুটি জানে যে, যোধা’র আকবরের কোন মিল-মহব্বত নাই। আকবর তারে তোফা পাঠায় ইমপ্রেস করার লাইগা। তখন যোধার মনেহয় তারও তো ইমপ্রেস করা দরকার। তখন শে পীরের ওরশের দিন কয়, নিজেই রান্ধা-বারা করবো। আকবরের দুধ-মা এতে খেইপা যায়, কয়, নিজের বুকে তীর ঠেকায়া জালালউদ্দিন আকবর’রে বাঁচাইছি আমি, নিজে না খায়া তারে খাওয়াইছি, আর তুমি দুইদিনের যোগী আইছো রং-ঢং কইরা জালালরে কব্জা করতে! এই-সেই…
যোধা (মানে, ঐশ্বরিয়া) তো দেয় কাইন্দা। (সুন্দরীদের কান্দা যে আরো সুন্দর – এইটা তো মোটামুটি সবাই মানেন।) তারপরও চোখের পানি মুইছা শে, আকবর দ্য গ্রেট না, বরং জামাইয়ের জন্য রান্ধে। আর রাজ দরবারে নিয়া যায়।
আকবর তার বার্বুচিরে কয়, ভালো জিনিস রানছো মনেহয়, সুন্দর খুশবু আসতেছে। বার্বুচি কয়, আমি রান্ধি নাই, রাজরাণী রানছেন। আকবর তো খেইপা যায়, কয়, আমি তো তাঁরে দাওয়াত দিছি, রানতে বলছে কে! যোধা কয়, না, না, আমি নিজেই আপনার জন্য রানতে চাইছি।
তখন শুরু আসল খেলা। আকবরের দুধ-মা কয়, জাঁহাপনা, সালতানাতের নিয়ম হইতেছে, সম্রাটের জন্য রান্ধা যে কোন খাবার আগে বার্বুচি’র খাইতে হবে, তারপরে সেইটা সম্রাটের খাওয়ার উপযোগী হবে। (মানে, খাবারে বিষ মিশানো আছে কিনা, সেইটা পরখ করার ব্যাপার আছে।) আকবর (মানে, হৃতিক রোশন) তখন কিছু কইতে যান, কারণ হিন্দু-মতে জামাই মুখে না দিলে তো বউ মুখে নিতে পারে না, পাপ হয়। এইটাই করতে চায় আসলে দুধ-মা, যে তোর হিন্দুগিরি ছুটাইতেছি! এই কারণে দুধ-মা আবার কয়, সম্রাট নিজে চাইলেও এই আইন অমান্য করতে পারেন না। (যদিও সম্রাট সবই করতে পারেন আসলে।) কি করা! যোধা তখন আবারো কান্দে! মানে, অইরকম একটা সিচুয়েশন হয়…
হিন্দি-সিনেমা মানেই হইতেছে আসলে, এই মেলোড্রামা।
যোধা’র এই পরাণ যায় যায় অবস্থা দেইখা, আকবরেরও খারাপ লাগে। যোধা’র টেস্ট করা শেষ হইলে সে হুকুম দেয়, যোধা যেই প্লেটে খাইছে, তারে যেন অই প্লেটেই খাবার পরিবেশন করা হয়। এইটা হইলো, বউ-জামাই রিলেশনের পয়লা বিজয়।
[ও, অইখানে কিন্তু আকবরের বড় বউ-ও থাকে, বাচ্চাকালে যার লগে তারে বিয়া দেয়া হইছিল। শে মোটামুটি আউট অফ ফোকাস থাকে পুরা ঘটনা’টাতে। এই সময়টাতে শে-ও মায়ের মতো ভালো, প্রশয়ের একটা হাসি দেয়। ]
আকবর যখন খাওয়ার জন্য লোকমা তুলে, যোধা কয়, থামেন, থামেন! এইটা খাইয়েন না! সবাই তো হা হয়া যায়, কেন! কি ঘটনা! যোধা তখন একটু শরমায়া গিয়া কয়, এই তরকারি’তে লবণ একটু কম হইছে।
সবাই তো হো হো কইরা হাইসা দেয়… আকবরও হাসার পরে লোকমাটা মুখে দেন। তখন দুধ-মা অবাক হয়া যায়, কি হইলো এইটা! যোধা তখন নাগিন-মার্কা চোরা চাউনি’টা দেয়, যে দেখো, এইটা হইতেছে বউ-জামাইয়ের রিলেশন, এইখানে থার্ড-পার্টি কেউ এলাউড না। এইটা হইতেছে চূড়ান্ত বিজয়, বিয়া’র রিলেশনের।
তো, এইটা সত্যি আসলে। আপনি একটা পার্টনারশিপ রিলেশনে যতোই ক্লোজ হন, যত খুঁটিনাটি কিছুই জানেন একজন আরেকজনের; একজন বউ তার জামাই নিয়া যা জানে, বা একজন জামাই তার বউ নিয়া যা জানে সেইটা লং-টার্ম ইন্টিমেট সেক্স-পার্টনার হয়াও সেই জানা-বোঝার জায়গাতে রিচ করা পসিবল না। এইটা খুবই অন্যরকম একটা টেরিটোরি।
অনেক ধর্মেই হয়তো অনেক কথা আছে এই রিলেশন নিয়া, কিন্তু কয়েকটা হাদিসের কথা মনে পড়তেছে এখন আমার। এইরকম আছে যে, যেই বেটা-মানুশ সম্পর্কে তার বউ ভালো-কথা বলে, সেই লোক ভালো-মানুশ আসলে। আবার এইরকম আছে, যেই লোক তার বউয়ের গোপন কথা অন্য মানুশরে বলে, সেই লোক জঘন্য। এইরকম। মানে, এইখানে পর্দার একটা ব্যাপারও আছে।…
তো, সিনেমাতে সিনটা এইখানেই শেষ না। সবাই খুব আনন্দ নিয়া, চাইটা-পুইটা খায়। শেষে আকবর কয়, এখন থিকা গোশত-মাংস না খায়া সব বছর ওরশের দিনে যোধা’র রান্ধা সবজি-ই খাবো আমরা। মানে, আকবর তার মুসলমানিত্ব (গরু খাওয়া) ছাইড়া দিয়া হিন্দু (ভেজিটেরিয়ান) হয়া গেলেন যেন তখন! 🙂
এইটারেই বিজেপি-প্রজেক্ট বলতেছিলাম আমি।
সিনটা সিনেমাতে ১:২৮:০০ থিকা ১:৪০:০০ পর্যন্ত। দুই-চাইর মিনিটেই শেষ হয়া যাইতে পারতো হলিউড বা এখনকার নেটফ্লিক্স বানাইলে। মানে, মেলোড্রামা তো বাজে-জিনিস আসলে 🙂 আমাদের আধুনিক এসথেটিক্সে; ম্যারিজও তো মনেহয়, কম-বেশি 🙁
জুন ২৫, ২০২২
আজকে আমার ফেইক (মানে, সার্টিফিকেট) বার্থডে। পাসপোর্টে, এনআইডি’তে, অফিসিয়াল কাগজপত্রে এই ডেইট দেয়া আছে, এখনো দেয়া লাগে। যার ফলে কিছু “অফিসিয়াল” বার্থডে উইশ পাইতে হয়। আমরা মেবি বাংলাদেশের শিক্ষিত মিডল-ক্লাসের লাস্ট জেনারেশন যাদেরকে দুইটা-তিনটা বার্থডে মেইনটেইন করতে হয়।
এরপরে বা এর সাথেই আরেকটা জেনারেশন ছিল, যারা ডেইট ঠিক রাইখা দুই-তিনবছর চেইঞ্জ করতো, মানে কমায়া দিতো। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে তো সেশন-জটে পড়তে হবে, এই কারণে সার্টিফিকেটে বয়সটা কমায়া রাখলে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করার পরে সরকারি চাকরিতে এপ্লাই করার বয়সটা থাকে, এইরকম। পরে পাবলিক ভার্সিটিতে সেশন-জট কমার পরেও কিছুদিন এই ট্রাডিশন ছিল মনেহয়।
তো, সরকারি কাগজ-পত্র বাদে বার্থডে’র তো তেমন কোন দরকার নাই আসলে। বরং আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং মোটামুটি এইরকমই যে, একটু-আধটু মিছা না থাকলে সেইটা “সরকারি” বা “অফিসিয়াল” জিনিস হইতে পারে না। আমাদের এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং খুব বেশি ভুল ছিল না আসলে। আর এখন ব্যাপারগুলা তো অনেকবেশি অন্যরকমই।
জুন ২৬, ২০২২
– পদ্মা-ব্রিজের লোনের টাকার হিসাব নিতে হবে –
“নিজের টাকায়” পদ্মা-ব্রিজ বানানো হয় নাই। এই যে মিডিয়া-গিমিক এরে কাউন্টার করা জরুরি। এটলিস্ট তিনটা পয়েন্ট খুব স্পষ্টভাবে বলা দরকার –
১. পদ্মা-ব্রিজ বানানোর জন্য অনেক টাকা লোন নেয়া হইছে। কার কাছ থিকা, কি শর্তে, কতো সুদে, কতো টাকা লোন নেয়া হইছে, এর কোন হিসাব নাই। লাখ লাখ নিউজের মধ্যে দিয়া এই জিনিস লুকানো হইছে।
২. এই লোনের টাকা কেমনে খরচ করা হইছে, সেইটারও কোন হিসাব নাই। বাংলাদেশের সিটিজেন হিসাবে এই লোনের টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়া আপনারে-আমারে শোধ করা লাগবে। কিন্তু খরচের কোন হিসাব নাই! হিসাব নিয়া দেখেন, নাট-বল্টুর দাম কতো পড়ছে!
৩. কারো জিদের কারণে পদ্মা-ব্রিজ হয় নাই। কারো জিদ না বরং লুটপাটের ব্যবস্থা কইরা দেয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা বেশি ধার-দেনা করতে হইতেছে আমাদেরকে। আজকে না হইলেও কয়দিন পরে হইতোই। বরং আমাদের কনসার্ন হওয়া দরকার যে, কোন ইন্ট্রিগ্রেটেড ইনফ্রাস্টাকচার প্ল্যানিং আমাদের নাই।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, পদ্মা-ব্রিজ একটা ঘটনা, আর এর যেই ন্যারেটিভ বানানোর ট্রাই করতেছে বাকশালি-মিডিয়া – এই দুইটা একই ঘটনা না।
জুন ২৭, ২০২২
– কেন এক ধরণের জম্বি-অডিয়েন্স ক্রিয়েট করা ছাড়া মিডিয়া-রিয়ালিটি নিজেরে রিলিভেন্ট রাখতে পারে না আর? –
ফেসবুকে, টিকটকে মানুশ এডিক্টেড হয়া উঠতেছে – এইটা ঘটনা না আসলে, বরং টিভি-পেপারের যেই মিডিয়া-রিয়ালিটি, সেইটারে মানুশ আর নিতেছে না।
এই না-নেয়ার কারণে টিভি-চ্যানেল, নিউজপেপারগুলার বিজনেস ধইরা রাখার লাইগা দরকার হইতেছে এক ধরণের হাইপ ক্রিয়েট করা, জম্বিনেস জাগায়া তোলা। লাইভ করা, মিনিটে মিনিটে আপডেট দেয়ার মতো ইস্যু আবিষ্কার করতে থাকা। কিন্তু এইরকমের সেনসেশনাল ঘটনা তো ডেইলি ডেইলি ঘটে না, কিন্তু বানাইতে থাকতে হয়, যার ফলে ব্যাপারগুলা ফানি হইতে থাকে, এমনকি সিরিয়াস সব জিনিসগুলাও। ফান’টাই হয়া উঠে মেইন কারেন্সি। পরে ফানি ফানি জিনিস প্রডিউস করতে গিয়া সিরিয়াস আর হইতে পারে না। হইতে গেলেও সেইটা আর হয় না।
“যাত্রা-শিল্প” যে “ধ্বংস” হয়া গেলো, অই সময়ের একটা কাহিনি আছে; যাত্রা’র প্যান্ডেলে যেহেতু লোক আসতো না এই কারণে “প্রিন্সেস” নিয়া আসা হইলো, যে “বিরতি”র সময়, মাঝখানে আর্টিস্টরা যখন রেস্ট নিবে, তখন প্রিন্সেম ৫-৭ মিনিট একটা “নাচ” দেখাবে! পরে দেখা গেলো, যাত্রার শুরুতে, শেষে, এমনকি পুরা শো’টাই হয়া গেলো “প্রিন্সেসের ড্যান্স”র প্রোগ্রাম।
ঘটনা’টা “অশ্লীলতার” কোন ব্যাপার না, যেইভাবে কাহিনি’টা বলা হয়, বরং যাত্রা আরো আগেই মারা গেছিল। এখন “অশ্লীলতা” বইলা কিছু নাই – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু যাত্রা-নাটকে প্রিন্সেসের ড্যান্স তো রিলিভেন্ট জিনিস না। তো, একইরকম ভাবে হাইপ-ক্রিয়েট করা, সেনসেশনাল নিউজ করা তো টিভি, নিউজপেপারের কাজ না! যার ফলে ব্যাপারগুলারে যারা পুরান মিডিয়া-রিয়ালিটির গাহেক তাদের কাছে “অশ্লীল” লাগেই, কিন্তু এইগুলা কইরা তারা ফেসবুক, টিকটকার অডিয়েন্সের কাছে রিলিভেন্টও হইতে পারে না আসলে। যেইরকম যাত্রা, ভিসিপি-ভিসিআরের কাছে রিলিভেন্ট হইতে পারে নাই।
সো-কল্ড সোশ্যাল-মিডিয়াতে অডিয়েন্স ধারণাটাই মিসিং, এটলিস্ট রিঅ্যাকশনের ভিতর দিয়া হইলেও, একটা ভিউ’র ভিতর দিয়া হইলেও তার নিজেরে হাজির রাখতে হয়। তো, একই লোক যখন টিভি-পত্রিকার অডিয়েন্স হিসাবে ঢুকেন, সেইটাতে তো আর ফিট-ইন করেন না, তারে এনাউন্স করতে হয় যে, উনি এইটা পড়ছেন বা দেখছেন। অথচ তার তো সেইটা অই মিডিয়াগুলাতে এক্সপ্রেস করার কোন রাস্তা নাই! এই “অবদমিত” এক্সপ্রেশন নিয়া মিডিয়া-রিয়ালিটির অডিয়েন্স হওয়া যায় না আর, বা হইতে হইলে জম্বি হয়া উঠতে হয়।
এইরকমের একটা জম্বি-অডিয়েন্স ক্রিয়েট করা ছাড়া টিভি-পত্রিকার পক্ষে রিলিভেন্ট থাকা আর পসিবল না।
আপনি যদি একটানা ৫-৭ দিন বাংলাদেশের টিভি-চ্যানেল আর নিউজপেপার পড়েন, আপনি “দুইমাস পাগল ছিলাম”-টাইপ অবস্থায় থাকবেন! এবং দেখবেন, অই জম্বি-কমিউনিটির লোকজন আপনারে “দেশদ্রোহী”-ই খালি বানায়া দিতেছে না, আপনি যে অই জম্বি-বানানোর মিডিয়া-রিয়ালিটিরে নিতেছেন না, এই কারণে কোন গালি-গালাজ ছাড়া কথা-ই কইতে পারতেছে না!
মানে, পিপল জম্বি হয়া উঠতেছে – ঘটনা এইরকম না, বরং মিডিয়া-রিয়ালিটির কনজ্যুমার হিসাবে জম্বি হওয়াটা মাস্ট হয়া উঠতেছে। এই জায়গাটারেই আমি খেয়াল করার কথা বলতেছি।
এখন আপনারে চোখ-কান বন্ধ রাখতে হবে – এইটা কোন সলিউশন না, বরং চোখের সামনে যা দেখানো হয়, কানের ভিতরে যা ঢোকানো হয়, অইটাই সত্যি – এইরকমের পাতলা-বিশ্বাসের মধ্যে থাইকেন না!
জুন ২৮, ২০২২
মুহাম্মদ ইউনুস
মুহাম্মদ ইউনুসের সিগনিফিকেন্সের জায়গা থিওরির জায়গা থিকা ধরতে গেলে সেইটা টের পাওয়া যাবে না। উনার সিগনিফিকেন্সটা হইতেছে প্রাকটিসের জায়গাটাতে।
উনার যেই ইচ্ছা, সেইটা নিয়া কারোরই সমস্যা থাকার কথা না; সমস্যা হইতেছে উনার কামকাজ করার তরিকাগুলা নিয়া, যেই রাস্তায় উনি ট্রাই করতেছেন, সেইটা নিয়া। উনি একটা ইকনোমিক প্রসেস আবিষ্কার করতে চাইতেছেন, যেইখানে পলিটিক্স আর কি-রোল প্লে করবে না তেমন। মানে, আমরা তো মোটামুটি সবাই একমত যে, একটা সৎ পলিটিক্যাল পাওয়ার ছাড়া ইকনোমিক ডিস্ট্রিবিউশনটারে ইক্যুয়াল করা পসিবল না। গরিবের একনায়কতন্ত্রই এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে সত্যিকারের ড্রিম! আমাদের যে কোন আলাপ অই জায়গার বেইজ থিকাই শুরু হয় কম-বেশি। [একসেপশন যে নাই – তা না।] মুহাম্মদ ইউনুসের বেইজ সেইটা না, যার ফলে উনারে কমিউনিজমের শত্রু ও পুঁজিবাদের দালাল মনে করা হয়। এইটারে একটা মিস-রিডিংই মনেহয় আমার কাছে। উনি যেহেতু প্রাকটিসের লোক, এখনকার অবস্থা কি আছে, সেইটা হইতেছে উনার বেইজ। এই বেইজটারে কিভাবে ইভলব (evolve) করা যায়, অইটা নিয়া উনি কাজকাম করছেন, এখনো করতে চান। কিন্তু উনার মডেলটাতে আমার কনফিডেন্স কম। ব্যাপারগুলা অনেক বেশি ইন্ট্রিগ্রেটেড ঘটনাই আসলে। উনার যা সাকসেস, যতটুক সাকসেস, সেইটা মডেল হিসাবে সাসটেইনেবল না, কারণ যেই ইকনোমিক ফ্রেমওয়ার্কটারে এইটারে চেইঞ্জ করার কথা বলে, সেইটা পলিটিক্যাল ঘটনা না হইলেও মোরালিটি ঘটনা তো অবশ্যই।
তো, উনার সোশ্যাল বিজনেস নিয়া যে আইডিয়া, সেইটা নিয়া মনে হইতেছিল, আমাদের দেশের ট্রাডিশনাল প্রডাকশন বা বিজনেস-মডেলটা যদি দেখেন, সেইটাও কিন্তু এতো-বেশি প্রফিট অরিয়েন্টেট না, যদিও দাবি করা হয় “লাভ না হইলে খামু কি!” কিন্তু বেশিরভাগ ইকনোমিক এক্টিভিটি হইতেছে খাওয়া-দাওয়া কইরা চলতে-ফিলতে পারার ঘটনাই, লাভ বা প্রফিট করার ঘটনা এতো বেশি না। অনেক (মানে, অনেক না হইলেও কিছু দেখার এক্সপেরিয়েন্স থিকা বলতেছি) কৃষকরে দেখছি, ধান-চাষে লাভ নাই বইলা ধান-চাষ ছাইড়া দিয়া সূর্যমুখী’র চাষ শুরু কইরা দেন নাই; বরং বলতে শুনছি, আমার জমিতে ধান-চাষ না করলে গ্রামের মানুশ খাইবো কি! বা বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্টি ধান-চাষ কইরা আসতেছে, সেইটা বাদ দিয়া দিবো! মানে, এইটা খালি লাভ/ক্ষতি’র ডিসিশান না, বা পুরান রিচুয়াল ধইরা রাখার ঘটনাও না, যেইটা নিও-লিবারালরা আমাদেরকে খাওয়াইতে চায়।… বা ধরেন, এমনো জিনিস দেখবেন, মুদির দোকান বাকি দিতে দিতে ফতুর হয়া যাইতেছে! বা চাইর-পাঁচ বছর পরেই বিজনেস ধইরা রাখতে পারে না আর। বা এক বছরের লাভ দিয়া দশ বছর চলতেছে।…
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ট্রাডিশনাল-বিজনেস সবসময় প্রফিট-মোটিভের ঘটনা না, যেইটারে অ্যাজাম্পশন হিসাবে সোশ্যাল-বিজনেস ধইরা নিয়া সরতে চাইতেছে। বরং যে কোন করপোরেশন ফরমেশনের জায়গা থিকা সরতে পারলে বেটার। একটা মনস্টাররে আমরা বলতে পারি না যে, ভাই একটু মানবিক হও! 🙂 এই ‘মানবিক’ হইতে দেখানোটা তার জন্য একটা সেলিং-পয়েন্টের বেশি কিছু না। ইকনোমিক এক্টিভিটিগুলার ভিতরে কিভাবে এই মনস্টার (মনোপলি) তৈরি করার জায়গাগুলারে আমরা এড়াইতে পারি, সেইটাই মেইন কনসার্ন হইতে পারা দরকার।
মুহাম্মদ ইউনুস মনোপলিগুলারে মানবিক কইরা তোলতে চান। (এইটা আমার কাছে মনে হইছে।) কিন্তু এইটারে থিওরেটিক্যালিও ইমাজিন করতে পারাটা পসিবল না। যার ফলে প্রাকটিক্যালিও একটা জায়গাতে গিয়া আর এফেক্টিভ কোন এপ্রোচ হয়া উঠতে পারে না। একটা টেকনিক হিসাবে দুই-তিনটা জেনারেশন সারভাইব করতে পারার কথা।…
মানে, থিওরি যেইরকম প্রাকটিসের জায়গাটাতে যাইতে পারে না সবসময়, প্রাকটিসের ঘটনা একইরকম না, তারে এক ধরণের থিওরাইজেশনের ভিতরে না নিয়া আসতে পারলে সেইটা প্রাকটিস হিসাবে টিইকা থাকতে পারার কথা না।
মুহাম্মদ ইউনুসের যেই প্রাকটিক্যাল সাকসেস, সেইটার ফেইলওর মেবি এই জায়গাটাতেই।
Leave a Reply