(শিরক না,) শরিক বাড়ান
এইবারের কুরবানি’র হাটে এবং রাস্তা-ঘাটে অনেক ছোট ছোট গরু চোখে পড়লো। অনেকে বলাবলিও করতেছিল, লাখ টাকার নিচে গরু নাই।
কিন্তু যেই জিনিসটা কমছে মেবি, সেইটা হইতেছে, শরিকে কুরবানি দেয়া। (দেয়া যায় কি যায় না – অই আলাপে আমি নাই; যেহেতু চালু ছিল রীতি’টা, ধরে নিতেছি, যায়।) ১৯৮০’র দশকে ছোট শহরগুলাতে মধ্যবিত্ত (তখন মধ্যবিত্ত মানেই নিন্ম-মধ্যবিত্ত) ফ্যামিলিগুলাতে এই জিনিসটা চালু ছিল কিছুদিন। মাংস নিয়া মন-কষাকষি যে হইতো না – তা না, কিন্তু কুরবানি দিতে পারার আনন্দ’টা সেইখানে ছিল।
কয়দিন আগে দেখতেছিলাম, রাজহাঁস কুরবানি দেয়া যাবে কিনা – এই নিয়াও আলাপ হইতেছে; মানে, ইন্ডিভিজ্যুয়ালের জায়গা থিকা আমরা কেউ সরতে রাজি না।
অথচ আমার ধারণা, শরিকে কুরবানি দেয়া যদি সমস্যা না হয়, কোন এসোসিয়েশন/অথরিটি যদি ১০ হাজার টাকা দিয়া কুরবানি’র “শরিক” কেনার একটা বন্দোবস্ত করতে পারেন, সেইটা একটা ভালো ওয়ে-আউট হইতে পারে। (প্রাকটিস হিসাবে সাত শরিক পর্যন্ত মনেহয় পারা যায়। কমেন্টে একজন জানাইলেন।..) এইভাবে বাংলাদেশের ‘কুরবানি-অর্থনীতি’ সারভাইবই করতে পারবে না খালি, আরো এক্সপান্ড করতে পারবে আসলে।
লোকজন যতো যা-ই বলুক, লোক-দেখানি ব্যাপার কিছু থাকেই। যারা লোক-দেখানি’র লাইগা কুরবানি দিতেন, তারা এইবার শরমের কারণেই সেইটা করতে পারার কথা না। (কারণ, সমাজের মানুশ হিসাবে তারা জানেন, মানুশের দুর্দিনে উৎসব করা যায় না।) আবার যারা কিনছেন, নিজেদের প্রেফারেবল সাইজের গরু কিনতে স্ট্রাগল করার কথা। যারা কিনতে পারেন নাই, তাদের কথা আর বললাম না।…
মানে, কুরবানি’র ব্যাপারটা শরিকের ভিতর দিয়া ইনক্লুসিভ করতে পারলে ভালো। যাদের ‘সামর্থ্য’ আছে, তারাও এই ইনিশিয়েটিভে যোগ দিতে পারেন, বা শুরু করতে পারেন।
জাস্ট মনে হইলো ব্যাপার’টা…
সমাজ-ভাবনা
একটা সমাজের মানুশ-জন যদি সমাজের অন্যসব মানুশদেরকে নিয়া চিন্তা করে, কাজ করে সমাজের জন্য সেইটা ভালো না হওয়ার কোন কারণ নাই। মানে, ফিলোসফিক্যালি খুব ঠিকঠাকভাবে চিন্তাও করা লাগবে না আসলে, কারো ক্ষতি না হইলেই হইছে।
কিন্তু এই জিনিসটাই, আমার ধারণা, করতে দেয়া হয় না, একটা জুলুমের সমাজে। আমার এই চিন্তার পক্ষে একটা ‘প্রমাণ’ পাইলাম খুলনার একটা ঘটনায়। হসপিটালে অক্সিজেন শেষ হয়া গেছিল, ভলেন্টিয়ার’রা অক্সিজেন নিয়া গেলে হাসপাতালের লোকজন ঝামেলা করতেছিল। (কমেন্টে দিতেছি পোস্টের লিংক’টা।) তো, এইটাই ফার্স্ট ঘটনা না, রোজার সময় বরিশালে ইফতার দেয়ার সময়ও আওয়ামী লীগের কোন নেতা ধরছিল, তাদেরকে না-জানায়া, তাদের অনুমতি না নিয়া ইফতার দেয়া হইতেছে কেনো! মানে, আপনি চাইলেই সমাজের জন্য কাজ করতে পারবেন না। অবস্টেকলগুলা সবসময়ই কম-বেশি ছিল, কিন্তু এখন এইটা পলিটিক্যালি আরো কঠিন কাজ।
সেকেন্ড হইতেছে, আইনি বাধাও আছে। যে, এইগুলা করার জন্য তো সরকার আছে! কোন খালি মাঠ-ই খালি মাঠ না, সরকারের কোন না কোন অথরিটির সম্পত্তি – রেলওয়ের, সিটি করপোরেশনের, পৌরসভার। নিউইয়র্কের উপর ছোট একটা ভিডিও দেখতেছিলাম, অইখানে পইড়া থাকা জায়গাগুলাতে গ্রীন মুভমেন্টের লোকজন চাষ-বাস করতেছে, সিটি করপোরেশনের কাছ থিকা লিজ নিয়া। এক তেজগাঁ’তে যেই পরিমাণ জমি/প্লট খালি আছে, অই সবগুলাতে এই কাজ করলে রমনা, সরোয়ার্দি’র চাইতে কম কিছু হবে না। কিন্তু, কোনদিন কি সম্ভব হবে? (দখলদারির নতুন রাস্তা শিখায়া দিলাম না তো? 🙁 )
থার্ড, বা, আরো ক্রুশিয়াল জিনিস হইতেছে, এইগুলা নিয়া আমি কেন ভাববো? 🙂 চিন্তা-ভাবনা করার লোক আছে না! কাজ করার লোক আছে না! আমাদেরকে কেনো ভাবতে হবে!
এইখানে, আমার ফার্স্ট প্যারার কথাটারে রিভার্স কইরা বলি, যেই সমাজের লোকজন নিজের সমাজের অন্য লোকজনের কথা ভাবে না, অন্যদের কথা ভাইবা কাজ করে না, সেই সমাজের ভালো কিছু হওয়া কঠিন আসলে। গাছ যেমন বীজের ভিতর থিকা তৈরি হয়, সমাজও তার ভিতরের মানুশ-জনের কাজকাম, চিন্তা-ভাবনা দিয়াই তৈরি হয়। অবভিয়াসলি এনভায়রনমেন্ট’টা ক্রুশিয়াল – মাটি থাকতে হয়, রইদ-বৃষ্টি-আলো-বাতাসও জরুরি; কিন্তু গাছটারে নিজে নিজে বাড়তে হয়। এইটা তার ইচ্ছা ও কাজের মধ্যে থাকতে হয়।
ডাকাতিই যদি করতে পারেন আপনি, বিজনেস কেন করবেন?
একটা সময় যে কোন এলাকার সব ডিশ-ব্যবসায়ীরা ছিলেন এলাকার সব মাস্তানরা; মানে, এলাকায় পাওয়ারফুল মাস্তান না হইলে ডিশের ব্যবসা করা সম্ভব ছিল না। এর একটা অবভিয়াস কারণ তো অবশ্যই একটা মনোপলি এস্টাবিশ করা লাগতো, মনোপলি ক্রিয়েট না করতে পারলে ব্যবসা করা সম্ভব না। বড়জোর দুইটা পার্টি থাকতে পারে, একটা এলাকায়, এর বেশি হইলে ঝামেলা। কিছু কিলিং-ও হইতো ডিশ-ব্যবসার “আধিপত্য” এস্টাবলিশ করা নিয়া। যা-ই হোক, অইটা একটা যুগ ছিল।
আমার ধারণা, চামড়া ব্যবসার সিন্ডিকেটও এইরকম পলিটিক্যাল পাওয়ারের ঘটনা। এলাকায় যারা চামড়া নিয়া যাইতো, এদের মধ্যে মেইন ছিল মাদরাসাগুলা; অনেকে বেচতো, অনেকে দান কইরা দিতো। কিছুদিন পরে দেখলাম এলাকার পলিটিক্স করা ‘ছোট ভাই’রাও কালেক্ট করতো। কিন্তু সব গিয়া জমা হইতো, পলিটিক্যালি পাওয়ারফুল লোকজনের রাস্তার পাশের অস্থায়ী গুদামেই। পরে শুনলাম এই সিজনাল সিন্ডিকেট বিজনেসে নাকি শান্তি নাই, ফ্যাক্টরিগুলা চামড়া নেয় না, দাম কমায়া কয়, আগেরবারের টাকা বাকি, এইরকম…। মানে, কেউ যদি চামড়া না কিনে, কপালে পিস্তল ঠেকায়া চামড়া তো কিনাইতে পারেন না আপনি!
এখন ব্যবসা থাকুক বা না-থাকুক, চামড়া ঠিকমতো প্রসেস করা হোক বা না-হোক, অই পলিটিক্যাল সিন্ডিকেটের কাছেই চামড়া বেচতে হবে আপনার, কিনতেও হবে অদের কাছ থিকাই। গত কয়েক বছরে শুনছি, কাঁচা চামড়া ইন্ডিয়াতে পাচার করার লাইগা নাকি দেশে এই অবস্থা কইরা রাখা হয়। প্রতি বছর কতো কাঁচা পাট ইন্ডিয়াতে রফতানি/পাচার হইতেছে সেইটার ডেটা থাকলেও আমার ধারণা কাঁচা চামড়ার হিসাব পাওয়াটা কঠিনই হবে।…
বাংলাদেশের পলিটিক্যাল-ইকনোমি’তে এই সিন্ডিকেট বা মিডলম্যান’রা যতোটা না স্ট্রাকচারাল কারণে এগজিস্ট করেন, তার চাইতে অনেক বেশি এগজিস্ট করেন পলিটিক্যাল কারণে। এই গ্রুপ’টার আগে বিজনেসগুলা দখল করা লাগতো। সরকারি টেন্ডার, নানান রকমের লাইসেন্স, সিজনাল বিজনেস, এইরকমের এরিয়াগুলা। যেই কারণে বড় বড় সরকারি আসলে যতোটা না “অর্থনৈতিক উন্নয়ন” তার চাইতে অনেকবেশি পলিটিক্যাল ফিডিং’য়ের কাজ করে।
এরশাদ সরকারের আমলে যমুনা সেতু এই সার্পোট দিতে পারছিল; এই সরকারের পদ্মাসেতু মেইনলি এইরকম পলিটিক্যাল ফিডিংয়েরই ঘটনা, ইকনোমিক্যালি ভায়াবল কোন প্রজেক্ট হওয়াটা কঠিনই হওয়ার কথা (সোশিও-কালচারাল প্যারামিটারগুলা কন্সিডার কইরাও।) পদ্মা-সেতু করা যাবে না – তা না, বরং এর ইকনোমিক কস্ট মেইন কন্সিডারেশনের জায়গা না।
এখন এবসুলেট পলিটিক্যাল পাওয়ারের কারণে, বড় বড় অপারচুনেটির কারণে এইসব টুকিটাকি বিজনেসের গুরুত্ব কমে গেছে – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং বিজনেসের জায়গাগুলা আরো পলিটিক্যাল হয়া উঠতে গিয়া বিজনেসগুলাই কল্পাস করতেছে। মানে, এইটা আমার একটা জেনারেল অনুমান। অনেক ডিটেইল দিয়া এই অনুমানরে আরো উইক বা স্ট্রং প্রমাণ করা যাইতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির আলাপে এইরকমের জায়গাটা কন্সিডার করা দরকার বইলা আমি মনে করি।
গত বছর কোন একটা অকেশনে এই কথাটা বলতেছিলাম, এখন আবার এই প্রসঙ্গে রিপিট করতে পারি, ডাকাতিই যদি করতে পারেন আপনি, বিজনেস কেন করবেন? 🙂
ফকির আলমগীর
কোন রিকশার ড্রাইভার’রে কোনদিন “ও সখিনা…” গান গাইতে শুনছেন? 🙂
মানে, গাইতে পারবে না – এইরকম না, বা কখনোই গায় নাই – তাও না; এখন অনেকে ক্যামেরা নিয়া বাইর হয়া শ্যুটও কইরা ফেলতে পারেন, দেখেন, গান গাইতেছে! কিন্তু ঘটনা অইটা না আর কি! 🙁
এই গান রিকশা যারা চালান তাদের যতোটা পছন্দ তার চাইতে যারা রিকশায় চড়েন, সেই মিডল-ক্লাসের গান আসলে। মিডল-ক্লাসের কাছে গরিবি-বেচার গান!
এই গানের ভিতর দিয়া আমাদের গ্রাম-লাভার, কিন্তু ‘খ্যাত’ না; টাকা-পয়সা নাই অতো, কিন্তু গরিব না; সেই মন শান্তি পায়, যে, আহারে কতো কষ্টে আছে, রিকশাওলা’রা!
অবশ্য এর চাইতেও বাজে উদাহারণ আছে, জেমসের বাচ্চাকালে “রিকশাওলা” নামে; অইখানে দরদ বরং আরো বেশি এইরকম বাটপার বাম প্রগতিশীলতার চাইতে; কিন্তু উনার আর্জি মিডল-ক্লাসের কাছে যে, আপনারা হরতাল দিয়েন না, রিকশাওলা’রা তো খাইতে পায় না! মানে, খুবই সিরিয়াস এবং ফানি একটা জিনিস ছিল সেইটা।
তো, এইগুলা যে আমাদের “গরিব-প্রেমের” উদাহারণ হয়া আছে, সেইটা একটা বাজে জিনিসই। কারণ আর্ট-কালচার’রে একটা মিডল-ক্লাস অডিয়েন্সের বাইরে আমরা কল্পনাই করতে পারি না!
না পারলেও, এই জিনিসগুলারে ‘মহান’ বানানোর যেই চেষ্টাটা, সেইটা না-করাটা এটলিস্ট দরকার।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মেজর কন্ট্রিবিউশন হইতেছে উনি একটা স্নবিশ মিডল-ক্লাস জেনারেশন তৈরি করার কাজ করছেন বাংলাদেশে, যারা “অন্যদের চাইতে আলাদা”; কারণ উনারা বই পড়েন; আর এইভাবে সামাজিকভাবে “বই পড়া” জিনিসটারে একটা “প্রেজুডিস” (বলা যায়, “কুসংস্কার”) হিসাবে প্রতিষ্ঠা করছেন। এইটা অন্য যে কোন জিনিসের চাইতে “বই পড়া” জিনিসটারই ক্ষতি করছে সবচে বেশি।
পোকাদের কথা
চিন্তা করার জন্য calm and quiet একটা অবস্থা যে জরুরি, এইরকম একটা ঘটনা Pawn Sacrifice সিনেমাতে আছে। দাবা খেলতে এমনেও তো চুপচাপ একটা পরিবেশ লাগে। তো, সাউন্ড-প্রুফ একটা ঘরে ববি ফিশার আর Boris Spassky’র দাবাখেলাটা যখন চলতেছিল তখন বরিস কমপ্লেইন করলেন যে, রুমে একটা পোকা ভনভন করতেছে। কিন্তু চেক-টেক কইরা দেখা গেলো, রুমে তো কোন পোকা নাই! পরে খেলা যখন আবার শুরু হইলো বরিস কনসানট্রেট করতে পারতেছিলেন না, কইলেন যে, তার স্টিলের চেয়ারটার মধ্যে পোকাটা ভনভন করতেছে, ডিস্টার্ব হইতেছে তার; এইটা চেক না করা পর্যন্ত উনি খেলবেন না। তো, মিস্ত্রি আইনা চেক করানো হইলো, চেয়ারের একটা পায়ের নিচের নাট-বল্টু খোলা হইলো, আর পোকাটা বাইর হয়া উইড়া গেলো।
মানে, এইটা খুব উইয়ার্ড মনে হবে নরমালি যে, চেয়ারের পায়ের ভিতরে একটা পোকা নড়াচড়া করলে আপনার চিন্তায় ডিস্টার্ব কেমনে হয়? অথচ যিনি খুব মনোযোগ দিয়া দাবা খেলতেছেন, তার জন্য এইটা একটা সিরিয়াস প্রবলেম। আমার ধারণা, ফেসবুকে বটগুলার মেইন কাজ হইতেছে এইটা, আপনারে ডিস্টার্ব করা। এবং মোটাদাগে, বাংলাদেশে নিউজমিডিয়ার কাজও হইতেছে এইটা, আপনারে বিরক্ত করা। যা কিছু আপনার চিন্তা করা দরকার, তার থিকা আপনার মন’রে সরায়া রাখা।
আপনি যখন ধরেন, করোনা নিয়া, বাংলাদেশের পলিটিক্যাল অবস্থা নিয়া বা কালচারাল প্রেজুডিসগুলা নিয়া কথা কইতে যাবেন তখন ব্যাপারটারে নিয়া ফান করা, কিছুটা অ-দরকারি আলাপের আইটেম বানায়া তোলা বা ফুটবল-ক্রিকেট-কানফেস্টিভল-দুইবিয়া টাইপের জিনিস নিয়া খুব সিরিয়াস হইয়া যাওয়া – এইরকম চেয়ারের ভিতরের একটা পোকার মতন ঘটনা। মুশকিল হইলো, পোকাটা খালি চেয়ারের ভিতরে নাই এখন, ইমাজিন করেন যে, ঘর-ভর্তি খালি পোকাই উড়তেছে, দাবা-খেলার ঘটনাটাই নাই!
তো, যদি মনে করেন, কোনকিছু পোকাটার মতন আপনারে ডিস্টার্ব করতেছে, তারে চেয়ারের ভিতর থিকা বাইর কইরা দিবেন। অস্বস্তি, ডিসকমফোর্ট অনেকসময়ই আপনারে নতুন চিন্তার দিকে নিয়া যাবে; কিন্তু distortion এইরকম জিনিস না। যে কোন ডিসটরশনকেই মাইনা নিতে না পারা, কোন প্যারানয়া না, বরং বেশিরভাগ সময়ই জরুরি ঘটনা। তা নাইলে বেশিরভাগ সময়ই আপনার কাজগুলা আপনি ঠিকঠাক মতো করতে পারবেন না।
রেশনের দোকান
আগের সময়ের রেশনের দোকান কি কেউ দেখছেন? মনে আছে কারো, সিস্টেমটার কথা? আমার যদ্দূর মনে পড়ে, এরশাদের আমলের শুরুর দিকেও জিনিসটা টিইকা ছিল মনেহয়। মানে, এখন টিসিবি যেমন ট্রাকে কইরা বাজারের চাইতে একটু দামে চাল-ডাল-পেঁয়াজ বেচে, অইরকম। ৪/৫ টা আইটেম বেচতো মনেহয় – চাল, ডাল, আটা, তেল আর কেরোসিন। (কুপি, হারিকেন জ্বালাইতে লাগতো 🙂 ) সবাই অই দোকান থিকা কিনতে পারতো না, “রেশন কার্ড” থাকা লাগতো। দুস্থ, গরিব, বিধবা, বয়স্ক – এইরকম নানান রকমের ক্যাটাগরিতে রেশন কার্ড দেয়া হইতো মনেহয়। একটা মাসিক লিমিটও থাকতো; যে, ৫ কেজির বেশি চাল কেনা যাবে না, এইরকম।
এলাকায় এলাকায় ডিস্ট্রিবিউরের মতন “রেশনের দোকান” থাকতো, যারা গর্ভমেন্টের কাছ থিকা এই জিনিসগুলা কিনতো, আর ১/২টাকা লাভে বেচতো। একটা সময় বাজারে টার্মও ছিল “রেশনের চাল” “রেশনের আটা” “রেশনের তেল”; মানে কোয়ালিটি একটু খারাপ।
কিন্তু এই সিস্টেম বেশিদিন কাজ করে নাই। কোয়ালিটি তো খারাপ ছিলই, তার উপরে বাজারের দামের চাইতে ডিফরেন্সও কইমা গেছিল। মানে, ২টা কম দামে ৫টাকার সমান খারাপ কোয়ালিটির জিনিস পাওয়া যাইতো। রেশন কার্ড পাইতে হইলে ঘুষ দিতে হইতো। ১ কেজি চাল দিয়া কার্ডে ১০ কেজি লেইখা বাকি ৯ কেজি বাজারে বেইচা দিতো রেশনের দোকানগুলা। বা কার্ড ছাড়া লোকজনের কাছে বেশি দামে বেচতো। বলতো, রেশন শেষ। তবে সবচে বেশি ঝামেলা ছিল মেবি, সরকারি কর্মচারীদের “লাভ” বেশি হইতো না, “পাবলিক ক্যাঁচাল”-ই বেশি হইতো। এইভাবে কোন একটা সময় জিনিসটা বাতিল হয়া যায়।
এইটার কথা মনে হইলো, গতবছর করোনার শুরুতে (ইকনোমিকসে নোবেল পাওয়া) কৌশিক ব্যানার্জি সাজেশন দিছিলেন, লোকজনরে চাল-ডাল না দিয়া টাকা দেন! টাকা দিলে এই হেল্পটা বেশি পৌঁছাইবো পিপলের কাছে। এইটা দিয়া নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা মনেহয় দেয়া হইছিল, কিন্তু যেইটা হইছিল, “ত্রাণ সাহায্য দেয়া ভালো না” – এই “সত্য”টা এস্টাবলিশ করা গেছিল। অবভিয়াসলি, এইটা কৌশিক ব্যানার্জির সাজেশনের দোষ না (অন্য অনেক ডিবেট থাকতে পারে মনিটারি পলিসি নিয়া), বরং একটা পলিটিক্যাল পাওয়ার কেমনে আপনার পরামর্শরে নেয় বা নিবে, সেইটার একটা ঘটনাই।
মানে, রেশনের দোকান যেমনে কাজ করে নাই, লার্জ স্কেলে টিসিবি’র ট্রাক অপারেট করতে থাকলেও যে প্রডাক্টগুলা বাজারের দোকানেই যাবে, টাকাও যে গরিব পর্যন্ত পৌঁছানো যায় না বা যাবে না – এইগুলা পলিটিক্যাল সমস্যাই মেইনলি। গাছের গোড়া মইরা গেলে, আগায় পানি ঢাইলা কোন লাভ হবে না। যেই গর্ভমেন্টের পিপলের কাছে কোন দায় নাই, সেই গর্ভমেন্ট পিপলের কোন দায়িত্ব নিবে না। এইটা ইকোনমিক-সিস্টেম, হেলথ-সিস্টমের কোন ফেইলওরের ঘটনা না এতোটা, বরং একটা রেসপন্সিবল পলিটিক্যাল সিস্টেম না-থাকার ঘটনা এইটা।
পোশাকের মিনিং
অফিসে স্যুট-টাই পরাটা তো লিখিত নিয়মই ছিল, করোনা আসার আগে। পরে এই বিধি-নিষেধ অনেক আলগা করা হইলো। অনেকে তো প্যান্টের বেল্ট, হাতঘড়ি পরাও বাদ দিছেন।… তো, অফিসে একটা জ্যাকেট (কোট) পইড়া ছিল; কিছুদিন আগে অইটা গায়ে দিয়া নামার সময় খেয়াল করলাম ব্যাপারটা।
অফিসের নিচের সিকিউরিটি গার্ডরা একটু অস্বস্তি নিয়া সালাম/স্যালুট দিতেছিল। আমারও অস্বস্তি হইলো। কারণ আমি তো অইরকম বড় স্যার না। কোট পরছি দেইখাই সালাম দেয়া লাগবে!
পরে টের পাইলাম, এইটা আসলে উনাদের পারসোনাল চয়েসের ঘটনা না, অফিসিয়াল নিয়ম। অফিসে তো হাজার হাজার এমপ্লয়ি। এর মধ্যে দাড়িওলা, বয়স্ক যারা উনাদেরকে সালাম দেন। আর যারা কোট পিইন্দা ঢুকেন, বাইর হন, তাদেরকে সালাম দেন। এইটা অফিসিয়াল কোন ডিরেকশনই হওয়ার কথা।
ব্যাপারটা এইরকম না যে, “পোশাকের মূল্য” উনারা দেন, বরং পোশাকের একটা মিনিং আছে সোসাইটিতে; আপনি থ্রি-কোয়ার্টার পিইন্দা সুপারস্টোরে গেছেন মানে তো আপনি ড্যামকেয়ার ব্যাপারটা শো করতে চান, সমাজ-বিপ্লবী না হইলেও; প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পিইন্দাও ভার্সিটির ক্লাসে লেকচার দিতে যাওয়াটা খালি একটা “পারসোনাল চয়েস”-ই না, একটা “সোশ্যাল মিনিং” প্রডিউস করতে চাওয়ার ঘটনাও।
মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, “পোশাকের মূল্য” আছে বা নাই, বরং পোশাকের মিনিং সবসময়ই ছিল, থাকবেও।
ডিফরেন্ট পারসপেক্টিভ নিয়া
একটা ঘটনাটারে অনেকগুলা পারসপেক্টিভ বা নজর দিয়া তো দেখা যায়। ট্রেন্ড হিসাবে চালুও আছে যে, আপনি ভালো/খারাপের জায়গা থিকা দেখতেছেন, সত্য/মিথ্যার জায়গা থিকাও তো দেখতে পারা দরকার! হাজার হাজার পারসপেক্টিভ না পাইলেও ডমিনেটিং ৫/৭টা ভিউ-পয়েন্ট তো পাইবেনই, যেইগুলা নিয়া জাগলিং করা যায়।
একটা উদাহারণ দিয়া বলি, তাইলে ব্যাপারটা আরো সহজ হইতে পারে, ধরতে পারাটা। যেমন ধরেন, কয়দিন আগে, ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপালের অডিও যে লিক হইলো, ফেসবুকে।
১. পারসোনাল আলাপ পাবলিক করা ঠিক?
– এইটা তো বেআইনি জিনিস।
– দেশে যেইখানে লিগাল বিচার নাই, মানুশ তো কোনভাবে তার বিচার দিবেই।
– মব-জাস্টিস তো বিচার না!
– 🤨
২. গালি-গালাজ করা কি ভালো মানুশের কাজ?
– ভাষার মধ্যে কি গালি-গালাজ নাই? রাইগা গেলে মানুশ কি করবে?
– আরে, গালি-গালাজ তো ক্ষমতা দেখানোর জন্য করতেছে!
– মানুশের স্বতঃস্ফূর্ত এক্সপ্রেশনে তো বাঁধা দেয়া যাবে না!
– 🤠
৩. একজন টিচার কি গালি-গালাজ করতে পারেন?
– টিচার কি মানুশ না? উনাদের কি ইমোশন নাই?
– কোন পেশাই মহান না। “মা”রে মহান বানানো হইতেছে তারে দমায়া রাখার ঘটনা।
– প্রফেশনালিজম বইলা কি কিছু থাকবে না তাইলে?
– 🤗
৪. শিক্ষা-ব্যবস্থা তো ধ্বংস হয়া যাইতেছে!
– স্কুল-কমিটির লোকজন কি খারাপ আপনি জানেন?
– প্রিন্সিপাল’দের পলিটিক্যাল কানেকশন না থাকলে প্রিন্সিপাল থাকতে পারবে নাকি? ভিসি আছে কোন ভার্সিটির?
– সবাই তো এইরকম না। জেনারেল কথা-বার্তা এইগুলা।
– 👊
৫. এইটা উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে করা হইছে, উনারে “খারাপ” প্রমাণ করার লাইগা…
– দেখেন, ভিতরে আরো অনেক কাহিনি আছে
– আছে বইলা যা ঘটছে, তা তো মিথ্যা না!
– পুরাটা জানলে এই কথা কি বলতে পারতেন! পুরাটা তো আমরা জানি না, জানতে পারবোও না!
– 🥱
এইরকম আরো কয়েকটা “পারসপেক্টিভ” যোগ করা সম্ভব। কিন্তু আলাপগুলা কি করে আসলে? মানে, এর ইমপ্যাক্টগুলা কি?
আমার ধারণা, মেইন ঘটনা হইতেছে, আপনারে যে কোন একশনে যাওয়া থিকা আটকায়া রাখে। আলাপ করতে পারার একটা মজা আছে, অই মজাটার ভিতরে মইজা থাকা যায়।
সেকেন্ড হইতেছে, ভিজিবল একটা দুনিয়ার ভিতরে আটকায়া রাখা যায়, যেন এই পারসপেক্টিভগুলার বাইরে আর কিছু নাই! আর এইভাবে অ-দরকারি আলাপগুলারেও দরকারি বানায়া তোলার ভিতর দিয়া “দরকারি” এবং “জরুরি” আলাপগুলারেও অ-দরকারি বানায়া ফেলা যায়।
থার্ডলি, এই কারণে, নানান ধরণের পারসপেক্টিভ নিয়া আলাপ করতে আমি রাজি না – তা না, বরং এই “পারসপেক্টিভের” আলাপগুলা যে অনেকসময় একটা অবস্টেকল এবং ডিস্টরশনের ঘটনা – এইটা কন্সিডার করতে পারাটাও দরকার।
একটা জেনারেল রুল (যেইটা ফিক্সড না আসলে) হইতেছে, যেই আলাপে ক্ষমতা-সম্পর্কের জায়গাটা মিসিং, সেইটা (সবসময় না হইলেও) বেশিরভাগ সময়ই হইতেছে, আজাইরা আলাপ, স্পেইস দখলে রাখার এবং কোন একশনে না-যাইতে-দিতে-চাওয়ার আলাপ।
পুলিশ ও রাষ্ট্রের রাইটস
পুলিশ যে এখন মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসায়া রেন্ডমলি যেকাউরে জিগায়, “কই যাইতেছেন? কই থিকা আসতেছেন?” এইটা জিগানোর রাইটস কি পুলিশের আছে? যতো পোলাইটলিই জিগাক। এখন জার্নালিস্টরাও এইটারে তাদের “অধিকার” বানায়া নিতেছেন।
মানে, রাস্তায় অপরিচিত কাউরেই আপনি জিগাইতে পারেন; এইটা অনেকটা “কি খবর” বা “হ্যালো” বলার মতো; কিন্তু একজন মানুশরে তো আইনিভাবে বাধ্য করতে পারেন না, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য। খালি “লকডাউন” বইলা যে এইটা হইতেছে – তা না, বহুদিন থিকাই এইটাই চালু আছে বাংলাদেশে। যে কোন মানুশরে যে কোন জায়গায় পুলিশ ধইরা “জিজ্ঞাসাবাদ” করতে পারে।
এইটা শুরু হইছে মেইনলি ২০০১ সালে আম্রিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পরে; “জঙ্গী” ধরার জায়গা থিকা। বাংলাদেশেও “পটেনশিয়াল টেররিস্ট” হিসাবে যে কাউরেই সন্দেহ করাটা জায়েজ হয়া উঠছে। দুনিয়ার অনেক দেশের সরকারই এই সুযোগটারে লুইফা নিছে। এইটারে “এন্টি-ইসলামিস্ট” একটা ঘটনা হিসাবে দেখলে আসলে ছোট কইরা দেখা হবে। যে কোন জুলুমবাজ গর্ভমেন্টের লাইগাই এইটা একটা গ্রেট অপারচুনেটি; যে, “দেশে জঙ্গী আছে” “ষড়যন্ত্র চলতেছে” বইলা সব মানুশের চলাফেরার, কথাবলার অধিকাররে বাতিল করার।
করোনা’রেও এইরকম “জঙ্গী”র মতো একটা ইস্যু হিসাবে দেখতে পারাটা দরকার; মানে, এইটা যে একটা মেডিকেল-ইর্মাজেন্সি না – তা না, কিন্তু এইটারে যে একটা ‘কন্ট্রোল-উইপেন’ হিসাবে ইউজ করা যায়, বা ইউজ করা হইতেছে, টু সাম এক্সটেন্ড। এই ফ্যাক্ট’টারে এড়ায়া যাওয়াটা ঠিক না কোনভাবেই। মানুশের বেসিক রাইটসের জায়গাগুলারে এইসব সিরিয়াস ইস্যু’র বেসিসে “স্থগিত” কইরা রাখা হইতেছে আজকে অনেকদিন ধইরাই। ধীরে ধীরে এইটারে “নরমালাইজ” কইরা তোলা হইতেছে।
আর এইটা “টু বি কন্টিনিউ”র মতো চলতেই আছে…
আর মনে হইতেছে যেন অপেক্ষা করা হইতেছে নতুন আরেকটা “জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা”র জন্যে, যার বেসিসে, এই অধিকারের জায়গাগুলারে বাতিল কইরা রাখা যাবে আরো কিছুদিন, তারপরে আরো কিছু, তা র প রে আ রো কি ছু দি ন… যতোদিন না আমরা ভুইলাই যাবো যে, এইগুলা ছিল আমাদের অধিকারের জিনিস।
রাইটারের বিচার
এইরকম একটা আলাপ দেখতেছি যে, একজন রাইটার’রে, ইন্টেলেকচুয়ালরে তার লেখালেখি না বা থিওরেটিক্যাল কন্ট্রিবিউশন দিয়া না, বরং তার জীবনের ঘটনাগুলা দিয়া বুঝতে হবে! কারণ লেখালেখিটাই সব না! লেখার বাইরেও সামাজিক মানুশ হিসাবে তার কাজকামের অনেক ইমপ্যাক্ট আছে। এইটা তো থাকতেই পারে। কিন্তু এইসব কিছুর কারণে তারে মানুশ হিসাবে মহান বা ইমপ্যাক্টফুল একজন পারসন হিসাবে ভাবা যাইতে পারে। কিন্তু তারে রাইটার হিসাবে কেমনে এইটা ইম্পর্টেন্ট কইরা তুলতে পারে?
সমাজে ‘কর্মবীর’ বা এক্টিভিস্ট লোকজন তো সবসময়ই ছিলেন। ধরেন, জাহানারা ইমাম, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ইমপ্যাক্টফুল একজন পারসন ছিলেন; উনারাও টুকটাক লেখালেখিও করছেন; তো, এই এক্টিভিজমের কারণে কি গ্রেট রাইটার ধইরা নিবো আমরা উনাদেরকে? তা তো না; উনারা উনাদের এক্টিভিজমের জন্যই পরিচিত। সমাজে উনাদের যেই কন্ট্রিবিউশন, সেইটা রাইটার হিসাবে না।
তাই বইলা রাইটারদের এক্টিভিজম যে নাই – তাও না; বরং আরো বেশি উদাহারণ পাইবেন, জর্জ অরওয়েল, জেমস বল্ডউইন, ভার্জিনিয়া উলফ, বেগম রোকেয়া… উনাদের লেখালেখি ভিতর দিয়া যেই এক্টিভিজম চালাইছেন, সেইগুলা রাইটার-এক্টিভিস্ট হিসাবে উনাদের লেখাগুলারে সোসাইটিতে রিলিভেন্ট কইরা তুলছে আরো বেশি। কিন্তু উনাদের সোশ্যাল ইমপ্যাক্টের কারণেই উনাদের রাইটিংস ইম্পর্টেন্ট হয়া উঠে নাই।
একজন রাইটারের লেখারে অবশ্যই তার লাইফের কাজকামের সাথে মিলায়া পড়া যাইতে পারে; কিন্তু তাই বইলা উনি কি কাজ করছেন জীবনে, সমাজে; সেইটা দিয়া তার লেখালেখিরে যাচাই করা যাইতে পারে না। তাইলে জীবনানন্দ দাশরে কোনদিনই কবি হিসাবে মানতে পারবো না আমরা, বোর্হেসরেও রাইটার কইতে শরম লাগতে পারে।
মানে, এমন বিচার কইরেন না, যাতে কইরা আপনার পছন্দের মানুশরে গ্রেট বানাইতে গিয়া অন্যদেরকে ছোট বানাইতে হয়; তাইলে সেই বিচার আসলে টিকবে না। একজন রাইটার’রে সবসময় তার লেখার ভিতর দিয়াই বিচার করতে হবে, বাদবাকি জিনিস হইতেছে তার অ্যাড-অন ফিচার, কখনোই কোর ঘটনা না। যদি তা-ই হয়, তাইলে উনি আসলে রাইটার না; এক্টিভিস্ট, সমাজ-বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ, বা অন্য যে কোনকিছুই। মানে, এই ক্যাটাগরির লোকজন যে রাইটার হইতে পারবে না – তা না; যদি রাইটারই হন, তাইলে সেইটার যাচাইয়ের বেসিস তার রাইটিংসই হবে, সবসময়।
জুলাই ৩০, ২০২১
এইরকম একটা সাইকোলজিক্যাল টেস্ট আছে (ইন্টারনেটে খোঁজ করলেই পাইবেন) যে, ফার্স্টে একটা অস্পষ্ট অডিও বাজানো হইলো, আপনি কিছুই ধরতে পারবেন না, কি বলতেছে; কিন্তু যদি স্পষ্ট জিনিসটা আপনারে একবার শোনায়া নেয়া হয়, তারপরে অস্পষ্ট’টা বাজানো হয়, আপনি ঠিকঠাক ধরতে পারবেন, যে, আরে, এই কথাটা বলতেছে!
একইরকমভাবে, কোন ইংরেজি বানানে একটা হরফ এইদিক-সেইদিক বসায়া দিলেও পড়তে তেমন কোন সমস্যা হয় না – Individual আর Indivdiual একইরকম লাগবে; এইরকম একটা এক্সপেরিমেন্টও আছে।
মানে, যেই জিনিস আমরা অলরেডি জানি, সেই জিনিসটার অল্পকিছু কোণা-কানচি দেখলেও আমরা বাকিটা আন্দাজ কইরা নিতে পারি।
কিন্তু আমার কথা’টা আসলে এই জায়গাটাতেই; যে, আমরা ‘জানি’ বইলাই অনেক সময় মিসও কইরা যাই আসলে। ধরেন, অই অস্পষ্ট অডিও’টার মধ্যে একটা শব্দ যদি বদলায়াও দেয়া হয়, নোটিশ করাটা মুশকিল হওয়ার কথা, মনোযোগ দিয়া খেয়াল না করলে। বা এই যে একটা হরফ এইদিক-সেইদিক করা; আপনি যদি কোন একটা চিন্তার জায়গা থিকা এই চেইঞ্জটা করেন, ইচ্ছা কইরাই, তারপরও ‘ভুল’ মনে হইতে পারে!
“জানা” জিনিসটা অলওয়েজ হেল্প করে – ব্যাপারটা এইরকম না সবসময়, এইটা একটা ট্রাপও অনেক সময়। আমার ধারণা, সোশ্যাল মিনিংয়ের ব্যাপারগুলা এইরকম “জানার” জায়গা থিকা অপারেট করে। (যেমন, মিডিয়াতে দেখাইতে দেখাইতে এইরকম একটা অবস্থা করছে যে, ৮/১০ জন লোক একসাথে দাঁড়ায়া থাকলে, এমনকি কাউরে কবর দিতে গেলেও মনে হবে যে, করোনা ছড়ানোর কাজ করতেছে!) এইরকম জানা’র জায়গা থিকা দেখা যাবে না – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু সাবধানও মনেহয় থাকা দরকার যে, নিজেদের জানা জিনিসগুলারেই আমরা ঘটনার উপর প্রজেক্ট করতেছি কিনা।
এন্ড অফ দ্য টানেল
এইরকম একটা প্রশ্ন আছে, যখন আপনি একটা টানেলের মধ্যে ঢুকেন, আপনি কি জানেন কিনা, এর শেষে কি আছে? নাকি জানেন না? অনেকটা ফিলোসফিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যাল টাইপের কোশ্চেন।
আমার উত্তর হইতেছে, না জানলেও একটা ধারণা আমাদের থাকে; স্বীকার না করলেও বা এক্সপ্লিসিটলি না বললেও, কোন একটা ধারণা বা এক্সপেক্টশন থাকারই থাকা। নট নেসেসারি যে, শেষটা এইরকমই হইতে হবে, যেইরকমটা আপনি ভাবছিলেন; কিন্তু একটা ভাবনা থাকে, টানেলের শুরুটাতেই।
তো, এইটা খালি পারসোনাল রিলেশনশিপের ঘটনাই না, সোশ্যাল জায়গাগুলাতেও এইটারে সত্যি বইলা ভাবতে চাই আমি। যখন বিনা-ভোটের সরকার হইলো দেশে, দেশের পলিটিশিয়ান, সরকারের লোকজন, ইন্টেলেকচুয়াল, শিক্ষিত-সমাজ এবং দেশের সব না হইলেও অনেক মানুশ কি জানতো না যে, দেশে কি হইছে? হইতেছে? (অনেকে তো এর পার্টই আসলে, ফর্মেশনটাতে হেল্পই করছেন।)
পুরাপুরি না জানলেও, ধারণা তো করতেই পারছেন। কিন্তু উনারা ধইরা নিছেন, ‘আন-কালচারড’ ও ইসলাম-ঘেঁষা বিএনপি’র চাইতে ‘বাঙালি-মনা’ ও ‘সেক্যুলার’ আওয়ামী লীগ তো ভালো! এই ভাবনা না থাকলে নয়া বাকশাল আসতে পারার বা টিইকা থাকতে পারার কথা না। কিন্তু আমাদের ভাবতে পারা দরকার ছিল – পিপলের ভোটে ইলেক্টেড একটা ‘খারাপ গর্ভমেন্ট’ পিপলের ভোট না নিয়া ক্ষমতায় থাকা গর্ভমেন্টের (যদি ‘ভালো’-ও হয়) চাইতে হাজার গুণে ভালো।
কারণ কোন গর্ভমেন্ট যদি ‘খারাপ’-ও হয়, তারে ভোট দিয়া আবার সরাইতে পারবেন। কিন্তু যে পিপলের ভোটের কোন তোয়াক্কাই করে না, সে তার পিপলরে বাল’টা দিয়াও পুছবে না। পুছেও না। এই কারণে, আগে এই চিন্তাটা সরান – গর্ভমেন্ট ‘ভালো’ না ‘খারাপ’; বরং এই চিন্তা করেন – গর্ভমেন্ট কি পিপলের ভোট নিয়া ক্ষমতার আছে নাকি ভোট মাইরা আসছে?
টানেলে ঢোকার সময় এইটা চিন্তা করেন নাই – ভালো কথা, কিন্তু এখন তো চিন্তা করতে পারেন; রং টানেল থিকা বাইর হওয়ার রাস্তা কোনটা?
মানে, আপনারে তো কেউ হাতে ধইরা সখী আইসা বাইর কইরা নিয়া যাবে না! আগে চিন্তাটা থিকাই বাইর হইতে হবে আমাদের, তাইলে কাজেকামে এর দেখা পাওয়া যাবে, কোনসময়। বা যদি কখনো দেখা পাওয়া যায়, তখন চিনতে ও সার্পোট করতে সুবিধা হইতে পারবে আমাদের।
Leave a Reply