নোটস: জুলাই, ২০২২ [পার্ট ২]

জুলাই ১১, ২০২৩

– বাংলাদেশের বেস্ট “ওয়েস্টার্ন মুভি” কোনটা? –

প্লিজ, সারপ্রাইজড হইয়েন না!

বাংলাদেশের সো-কল্ড ফিল্ম-ক্রিটিকরা এই জনরা’টারে রিকগনাইজ করতে পারেন নাই বইলা (বা ইন ফ্যাক্ট বাংলাদেশি সিনেমা উনারা দেখেন নাই বইলা) এই ক্যাটাগরিটা এগজিস্ট করে না – এইটা সত্যি না।

অনেকগুলা “ওয়েস্টার্ন” সিনেমাই বানানো হওয়ার কথা বাংলাদেশে, স্পেশালি সোহেল রানা’র ঘোষণাও থাকার কথা, যে উনি ওয়েস্টার্ন সিনেমা বানাইতেছেন! দস্যু বনহুর (১৯৭৬) এবং আসামী হাজির (১৯৭৮) দুইটা সিনেমার কথা মনে হইলো। শুরুতে ইবনে মিজানের, পরে দেওয়ান নজরুল, অশোক ঘোষ এবং এফ.কবিরেরও [উনারা বাংলাদেশি সিনেমার ডিরেক্টর, নাম না জানলে এইটা উনাদের দোষ না, আপনার না-জানার ঘটনাই…] থাকার কথা কিছু জিনিস। এইগুলা হলিউডি ওয়েস্টার্ন, বা ইতালিয়ান-ইউরোপিয়ান স্প্যাগেটি-ওয়েস্টার্নের চাইতে ডিফরেন্ট তো অবশ্যই।…

এখন হরেদরে এই সিনেমাগুলারে “ফোক-ফ্যান্টাসি” ট্যাগ মারা হইছে। “রূপবান” “কাজল রেখা” “সাত ভাই চম্পা” যেই ক্যাটাগরির “ফোক”, দস্যু বনহুর” বা “মতিমহল” একই ঘটনা না; মানে, কোন “লোক-কাহিনি” থিকা এডাপ্ট করা হয় নাই। বরং সরাসরি হলিউডি “ওয়েস্টার্ন” সিনেমা না হইলেও ক্যাটাগরি হিসাবে কাছাকাছি জিনিসই হওয়ার কথা অনেকগুলি সিনেমা। জাস্ট এই জায়গাটারে খেয়াল করা হয় নাই।

খেয়াল না করার একটা মেজর কারণ হইতেছে ইন্ডিয়ার পশ্চিম-বাংলায় এই ধরণের জিনিস কোনদিন বানানো হয় নাই। উনাদের এক ধরণের ঘোড়া-ভীতিও থাকার কথা যে, ঘোড়া দেখলেই মনেহয় মুসলমান! 🙂 এর বিপরীতে যখন বাংলাদেশি সিনেমায় ঘোড়া যখন একটা ক্যামেরায় আসে, সেইটারে “অ-বাঙালি” বইলা বাতিল করার একটা টেনডেন্সি থাকার কথা।…

মানে, কলকাতার সিনেমায় কোন ঘোড়া পাইবেন না, ইংরেজ আমলের আগে এদের হিস্ট্রি যাইতে পারে না, কারণ কোন হিস্ট্রি নাই আসলে; মানে, হিস্ট্রি তো আছেই, হিস্ট্রিতে কলিকাতা বইলা কোন জিনিস নাই, ছিল না। এই কারণে যখন সিম্বল হিসাবে ঘোড়া আসে ফিল্মে, সেইটা প্রি-কলিকাতা একটা ঘটনা হয়া উঠে, যেইটা আসলে নন-কলিকাতা একটা জিনিস আসলে।

তো, এইরকম ‘হাজার হাজার’ ভুল-রিডিং আছে বাংলাদেশি সিনেমা নিয়া। কলিকাতার কষ্টি-পাথর দিয়া যাচাই করতে যাওয়ার কারণে। এখন আপেলের গুণাগুণ দিয়া আম’রে মাপতে গেলে তো মনেই হবে যে, আম তো এতোটা ভালো আপেল না!

একটা উদাহারণের কথা বলি, “সমাধি” নামে (১৯৭৬) একটা সিনেমা আছে। [নামে তো চিনবেন না সিনেমাটা, সিনেমার গান দিয়া চিনবেন, “বন্ধু তোর বরাত নিয়া আমি যাবো” গানটা অনেকের শোনার কথা, মনে থাকার কথা, সুবীর নন্দী আর খুরশিদ আলমের।] অইখানে অলিভিয়ার ড্রেস-আপ “ওয়েস্টার্ন”, ঘোড়ায় চড়ে। রাজ্জাক আর ববিতা হইতেছে গ্রামের মানুশ। অলিভিয়া, উজ্জ্বল জমিদার/রাজা [দুইটা কিন্তু কাছাকাছি ক্যাটাগরিই। আগের দিনের রাজা ধরেন, এখনকার পৌরসভার চেয়ারম্যান বা এমপি’র মতোই অনেকটা… ] । তো, রাজ্জাক এক সময় আউট-ল হয়া উঠে। ববিতারে যেহেতু চাবুক দিয়া মারে অলিভিয়া, রাজ্জাক আর অলিভিয়ার কাইজ্জা লাগে।…

মানে, এইটা পুরাপুরি ওয়েস্টার্ন সিনেমা না। কিন্তু এইটার কিছু সিগনেচার আছে, ওয়েস্টার্নের। এমনকি কোন ওয়েস্টার্ন সিনেমা বেইজ কইরাও সিনেমা বানানো হয়া থাকতে পারে, বাংলাদেশে। যারা অনেক বেশি বাংলাদেশি সিনেমা দেখছেন ১৯৭৬ – ১৯৮৯ সময়টাতে, আমার ধারণা, উনারা আরো কনফিডেন্টলি বলতে পারবেন। আমি পসিবিলিটির কথা কইলেও, মোটামুটি শিওর যে, বাংলাদেশে ওয়েস্টার্ন সিনেমা এটলিস্ট ৫-৭টা হইলেও বানানোর চেষ্টা হইছে। নামগুলা জাস্ট খুঁইজা বাইর করতে হবে আর কি!

জুলাই ১২, ২০২২

এইরকমের একটা লাইন/মেটাফর ছিল, মেবি মওলানা রুমিরই যে, কেউ একজন আগে একটা জায়গায় গিয়া পৌঁছায়, সে অইখানে ওয়েট করতে থাকে, তারপরে অন্যরা ধীরে ধীরে অই জায়গাটাতে রিচ করে।

তো, এই কথাটারে আমি ইন্টেলেকচুয়াল ঘটনা হিসাবেও দেখতে পাই। যে, কেউ একজন একটা চিন্তারে, একটা পারসপেক্টিভটারে লোকেট করতে পারেন ফার্স্টে, তারপরে ধীরে ধীরে আরো অনেকে জায়গাটারে ফিল করতে পারেন, ধরতে পারেন। তারপরে গিয়া জিনিসটা একটা কমনসেন্সে বা সোশ্যাল-কনশাসনেস হিসাবে এস্টাবলিশ হইতে পারে।

মানে, এইখানে একটা প্রসেস আছে… আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল জায়গাগুলা তৈরি হওয়ার… জিনিসটার একটা শুরু আছে, কারো বা কয়েকজনের ভিতর দিয়া এইটা শুরু হয়, তারপরে অন্যরা সেইটারে মানতে পারে, নিতে পারে। তো, টাইম লাগে আসলে।

জুলাই ১৩, ২০২২

ধরেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবর আপনি জানতে চান, এখন যদি রেফারেন্স হিসাবে দৈনিক পাকিস্তানের ১৯৭১ সালের প্রতিদিনের নিউজগুলারে নেন, কি পাইবেন অইখানে আপনি? আমার ধারণা, দেখবেন যে, সবকিছু “স্বাভাবিক” আছে, কিছু “বিচ্ছিন্নতাবাদী” আছে যারা মাঝে-মধ্যে “ঝামেলা” করে, এর বাদে সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছে। কিন্তু “হঠাৎ কইরা” দেখবেন ১৬ই ডিসেম্বরের পরে “দৈনিক পাকিস্তান” এর নাম বদল হয়া “দৈনিক বাংলা” [বাম-বাকশালি বাটপারগুলা “বাংলাদেশ” কইতেই পারে না 🙁 ] হয়া গেছে! 🙂

এরশাদ আমলে সরকারি টিভি-পত্রিকাগুলারও একই অবস্থা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের এখনকার মোটামুটি সব টিভি-পত্রিকার অবস্থাই এইরকম। সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছে, “উন্নয়ন” এখনো চালু আছে।

মানে, আসলে কি অবস্থা সেইটার আন্দাজও করতে পারবেন না! কারণ, উনাদের “দায়িত্ব” হইতেছে সবকিছু “স্বাভাবিক” দেখানো, “আশার আলো” দেখানো! এর বাইরে, “কি ঘটতেছে” সেইটা বলা মানে হইতেছে “বিএনপি” হয়া যাওয়া। এই অবস্থা নয়া বাকশালের প্রেশারে যতোটা না হইতেছে, বাংলাদেশের টিভি-পত্রিকাগুলা নিজেদের জন্য এই অবস্থা বাইছা নিছে। বাকশালের “ফ্রিডম অফ স্পিচ” এদেরকে যাইত্তা ধইরা মাইরা ফেললেও এরা “বিএনপি” হওয়ার রিস্ক নিবে না, নিতে পারবে না! কারণ ন্যারেটিভ’টা অদেরই বানানো।

তো, পাকিস্তান আমল বা এরশাদ আমল থিকা এখনকার সময়ের ডিফরেন্সটা হইতেছে, অই সময়ে যত লোক মিডিয়া-রিয়ালিটিতে বিলিভ করতো বা বলা ভালো, মিডিয়া-রিয়ালিটিরে কনজিউম করতো, তার চাইতে এখন অই নাম্বারটা আরো বেশি। যার ফলে একটা জম্বিনেস তৈরি হইতে পারতেছে, সহজে।

এই মিডিয়া-রিয়ালিটির বাইরে যা ঘটতেছে, মনে হইতেছে “হঠাৎ” কইরাই ঘটতেছে! কারণ মিডিয়া-রিয়ালিিটিতে সাবস্ক্রাইব করার কারণে আমরা মনে করতেছি “আমরা তো সবকিছু জানি!” তো, ব্যাপারটা আসলে জানা বা না-জানার না, একটা পলিটিক্যাল ও কালচারাল সিলেক্টিভ প্রসেসের ভিতর দিয়া “সবকিছু” হিসাবে হাজির করার ঘটনাই। যেইটা কোন সময়েই “সত্যি” না।

জুলাই ১৪, ২০২২

একটা সময়, মানে খুব বেশিদিন আগের কথা না, ১০-২০ বছর আগেই খবর দেখতাম যে, ইন্ডিয়ার পাঞ্জাবে “দরিদ্র কৃষকের আত্মহত্যা” [এখন যে কেউ সুইসাইড করে না – তা না, নিউজ-ভ্যালু নাই আর তেমন এইসব ঘটনার অনেকটা 🙁 ], তো, কি ঘটনা? ঠিক “ক্ষুধার জ্বালায়” না (অইটা তো আছেই), “দেনার দায়ে”, লোনের টাকা না দিতে পাইরা, বাঁচার কোন উপায় না খুঁইজা পাইয়া, না-খাওয়া এবং অপমানের হাত থিকা বাঁচার লাইগা সুইসাইড করতেছেন উনারা। একজন না, অনেকেই করতেন বইলা নিউজ পাইতাম আমরা। এখন কমছে কিনা, জানি না…

বাংলাদেশেও টেনডেন্সি হিসাবে গত দুই-তিন বছর ধইরা, স্পেশালি করোনার সময়ে এবং তার পর থিকা স্টুডেন্টদের সুইসাইড করার কিছু নিউজ আমরা পাইতেছি। মানে, নাম্বারটা হঠাৎ কইরাই বাড়ছে।… এখন প্রতিটা মানুশের জীবন যেমন ইউনিক, প্রতিটা মরণেরও নিজস্ব কিছু ঘটনা আছে। অইগুলারে জেনারালাইজ করতে গেলে আমরা ভুল করবো। কিন্তু আমি যেইটা বলতে চাইতেছি, কিছু সোশ্যাল সিচুয়েশন একটা টেনডেন্সির জায়গারে ট্রিগার করতে পারে। অই জায়গাগুলারে মিস কইরা গেলেও আমরা ভুল করবো।

করোনার সময়ে যেইটা হইছে, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি বন্ধ হয়া গেছে। স্টুডেন্ট, যারা টিউশনি করতেন, সাইড-ইনকামের সোর্স হারাইছেন। লার্জ স্কেলে বলতে গেলে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরি পাওয়া এখন আর কোন মেধা/মেরিটের ঘটনা না, ঘুষ-টুষ বাদেও সরকারি-দলের পা-চাটা লাগবে; মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দিতে দিয়া এখন পুরাটাই বাকশালি-কোটা। বেসরকারি চাকরির নাম্বারও কমার কথা। আর অইখানে, বেশিরভাগ কোম্পানিতে যেই দাস-ব্যবস্থা চালু আছে, বিদেশে গিয়া কামলা খাটলেও এর চাইতে কম অপমান, মেন্টাল-স্ট্রেস সহ্য করার কথা। এই কারণে স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ চইলা যাওয়াটাই বেটার অপশন।… মানে, বাংলাদেশে যারা কলেজ-ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেছেন, তাদের জন্য “ব্রাইট ফিউচার” তো দূরের কথা, কোন ফিউচার-ই নাই আসলে।

তার চাইতে বড় কথা, ইকনোমিক্যালি একটা বাজে-অবস্থায় থাকার কথা, বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের। ফ্যামিলির একটা এক্সপেক্টশন থাকে। মা-বাপগুলাও বুড়া হইতে থাকে।… মানে, বাঁইচা থাকতে হইলে, জীবন চালাইতে গেলে, এই সমাজে কিছু টাকা তো কামাই করা লাগে। এর একটা প্রেশার আছে। যেইটারে হরেদরে “ডিপ্রেশন” দিয়া ট্যাগিং করলে শুনতে ভালো-লাগতে পারে, কিন্তু ঘটনা এতোটা “রঙিন” না, বরং অনেকবেশি “সাদা-কালো”ই আসলে।…

মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, মেন্টাল-ইনস্ট্যাবিলিটিগুলা নাই, বা ডিপ্রেশন নাই; বরং বাজে-ইকনোমিক ব্যবস্থা এবং সোশ্যাল-প্রবলেমগুলারে ইগনোর করার লাইগা ন্যারেটিভে “ডিপ্রেশন” অ্যাড কইরা মেডিকেল ইন্ড্রাষ্ট্রির রেভিনিউ বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকলেই জিনিসগুলা বাতিল হয়া যাবে না আর কি! 🙁

আমি বলতে চাইতেছি, যদি আপনি মনে করেন, কেউ ‘ডিপ্রেশনে’ আছে, তারে সময় তো দিবেনই, টাকা-পয়সাও দিতে পারেন (দান-খয়রাত লং টার্মে কোন ভালো জিনিস না – দেনেওলা আর লেনেওলা, দুইজনের জন্যই), তার চাইতে জরুরি হইতেছে তারে এমন একটা কাজ করার জায়গা দেন যেইটা সে খুশিমনে, মান-সম্মান নিয়া কইরা দুইটা টাকা কামাই করতে পারবে।

তো, আমারে ভুল বুইঝেন না যে, এইটা করলে সমাজে ইয়াং-পিপলদের/স্টুডেন্টদের সুইসাইড করা বন্ধ হয়া যাবে! বরং সমাজের ডিফরেন্ট ক্লাসের, এইজ-গ্রুপের ইকনোমিক ক্রাইসিসগুলারে যদি আমরা খেয়াল করি, তাইলে তাদের ভারনারিবিলিট কমতে পারে।

যেমন ধরেন, শেয়ার মার্কেট ক্রাইসিসে কতো লোক যে সুইসাইড করছে, ‘ডিপ্রেশনে’ চইলা গেছে [একইভাবে, করোনার পরে ছোট-ব্যবসায়ী আর বেসরকারি চাকরবজীবী, যাদের চাকরি চলে গেছে…] আশে-পাশের ঘটনাগুলা দেইখা কিছু হয়তো আমরা আন্দাজ করতে পারি; কিন্তু এইটারে একটা সোশ্যাল-ক্রাইসিসের বদলে যদি পারসোনাল রং লাগাইতে চাই সবসময়, সেইটা কোন কাজের কথা না আর কি! (মানে, একজন মানুশের যার যার ইন্টারনাল ক্রাইসিসগুলা তো আছে, থাকবেই। কিন্তু অই অবস্থায় আমরা সোশ্যালি পৌঁছাইতে পারছি বইলা আমার মনেহয় না। এর বাইরেই অনেক কিছু করার আছে…)

যেমন “বিষন্নতা একটি রোগ” [মেডিকেল-বিজনেস], একই রকমভাবে সুইসাইডও কিছুদূর পর্যন্ত সোশ্যাল-ক্রাইসিসেরই ঘটনা [পলিটিক্যাল-এজেন্ডা] আসলে।

জুলাই ১৬, ২০২২

আমরা যারা এইটিইসের (১৯৭১ – ১৯৭৯, ইভেন নাইটিইজের ফার্স্ট-হাফেরও) কিড, ছোটবেলায় এইটা রেয়ার হওয়ার কথা যে শুনি নাই, তোর বাপ-মা তো তোরে রাস্তা থিকা কুড়ায়া নিয়া আসছে! 🙂 স্কুলের বন্ধু-বান্ধব, চাচা-মামা, পাড়ার বড় ভাই-বইন, এমনকি বাপ-মাও এই “ফান” করার কথা। মানে, আমার আশে-পাশের লোকজনের এক্সপেরিয়েন্স দেইখাই কইতেছি। যে, সবার জীবনেই ঘটছে – তা না, বরং এইরকম একটা কথা চালু ছিল।

তো, এইটা মনে হইলো সেভেনটিইজের (১৯৬১ – ১৯৬৯) বাংলাদেশি সিনেমাগুলা দেখতে গিয়া। অইখানে অনেক সিনেমারই মেইন ক্রাইসিসই হইতেছে, বাচ্চা হারায়া যাওয়া! নায়ক বা নায়িকা বড় হওয়ার পরে, সমাজে ‘প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার পরে, বা বিয়ার আগে জানতে পারে যে, সে/শে আসলে অন্য কারো সন্তান! বা ‘লোক-কাহিনিগুলাতে’ও, রাজকন্যারে বেদেরা চুরি কইরা নিয়া যাইতেছে, কিন্তু শে আসলে রাজকন্যা! বা রাজপুত্ররে সৎ মা রাজপ্রাসাদ থিকা সরায়া দিতেছে। মানে, একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস হইতেছে মেইন ক্লাইমেক্সের ঘটনা। (অবভিয়াসলি অন্য আরো জিনিস তো আছেই। বা সব সিনেমায় যে আছে – তা না, কিন্তু এইটা ছিল বা আছে।)

এই যে সিনেমার আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, এইটা দেখার কারণে আমাদের মা-বাপদের জেনারেশন এই “ফান” করতেন – এইরকম না জিনিসটা, কিন্তু যেইটা হইছে, একটা কমন রেফারেন্স হিসাবে সমাজে কমিউনিকেট করার মতো একটা জিনিস হইতে পারছে, ব্যাপারটা। সিনেমাতে যেইটা সিরিয়াস, হয়তো কান্দা-কাটিও করা লাগছে দেখার সময়; পরে আইসা ব্যাপারটা নিয়া ফান কইরা একটু হাসাহাসি করার ঘটনা ঘটতে পারে। মানে, সিনেমা, মিউজিক এইগুলা তো কোর রেফারেন্স পয়েন্ট সোসাইটির। যেহেতু অনেকগুলা লোক একসাথে কনজিউম করতেছেন, অইগুলার ভিতর দিয়া কানেক্ট করা সহজ হইতেছে।…

আরেকটা জিনিস ইন্টারেস্টিং। এই যে, আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, এইটারে খালি পারসোনাল জায়গা থিকা না, পলিটিক্যাল জায়গা থিকাও দেখা পসিবল। যে, বাংলাদেশ তো আসলে পূর্ব-পাকিস্তান না বা পুব-বাংলাও না, বাংলাদেশ তো হইতেছে বাংলাদেশ! এই সোশ্যাল-আইডেন্টিটির ক্রাইসিসটাও সাব-কনশাসলি থাকার কথা না, একভাবে? 🙂

হাউএভার, এই ট্রেন্ড বাংলাদেশ-সময়ের সিনেমাগুলা নাই হয়া গেছে – তা না, খুঁজলে এইরকম “হারিয়ে যাওয়ার মেয়ে/ছেলে/বইন/ভাই”-এর কাহিনি পাওয়া যাবে, কিন্তু অই তো, অইরকম সিরিয়াস নাই আর, একটু ‘ফানি’-ই হয়া গেছে মনেহয়।

***

১৯৬০-এর দশকে বাংলাদেশে রুচিশীল, আধুনিক ও সেন্সিবল-পারসন হওয়ার (একমাত্র না হইলেও একটা) ক্রাইটেরিয়া ছিল যে, আপনারে অ-সাম্প্রদায়িক হইতে হবে। ইভেন, ১৯৮০-৯০ পর্যন্তও এই ক্রাইটেরিয়া ভ্যালিড ছিল।

এখন ‘অ-সাম্প্রদায়িক’ হওয়া যাবে না – এইটা আমার কথা না, বরং এখন ‘অ-সাম্প্রদায়িক’ হওয়ার মানে হইতেছে বাকশালি জুলুমরে আড়াল করা, এরে বৈধতা দেয়ার একটা গ্রাউন্ড হিসাবে কাজ করা।

(অনেকে বলতে চান যে, এসিড-টেস্ট হইতেছে নারী-প্রশ্নে বা জেন্ডার-সেন্সিবিটি নিয়া আপনার পজিশনটা হইতেছে ডিসাইডিং ক্রাইটেরিয়া। কিন্তু আমার ধারণা, বাকশাল এই জায়গাটারেও খায়া দিছে, বাকশালি-ফেমিনিজম দিয়া।)

মানে, অন্য যে কোন ফ্যাসিবাদের মতোই বাকশাল কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাগুলারে ম্যানিপুলেট করার ভিতর দিয়া নিজের ভেইগ আইডিওলজিক্যাল জায়গাটারে (বা কোন আইডিওলজিক্যাল পজিশন যে নাই খালি ক্ষমতা ধইরা রাখা ছাড়া, সেই জায়গাটারে) ধামাচাপা দিতে থাকে।

কোন সন্দেহ ছাড়াই ‘অ-সাম্প্রদায়িকতা’ হইতেছে এইরকম একটা টুল। এর বাইরে এর কোন পলিটিক্যাল ফাংশন নাই এখন বাংলাদেশে।
তো, এই জায়গায় আমি একটা ক্রাইটেরিয়া প্রপোজ করতে চাই, সেইটা হইতেছে, মিডিয়া-রিয়ালিটির জম্বিনেস। যেই মানুশ মিডিয়া-রিয়ালিটির জম্বিনেস দিয়া যত কম এফেক্টেটেড সেই মানুশ তত বেশি সেন্সিবল বইলা আমি মনে করি।

মানে, পত্রিকায় লেখছে, টিভি’তে দেখাইছে বা ফেসবুকে একজন কইছে – এই জায়গাগুলারে না-নেয়া না, বরং এইগুলাই ‘সত্যি’ – এই ধারণা থিকা যে যতোটা দূরে, সে ততটা বেটার-পারসন, আজকের দিনে! 🙂

***

এই জিনিসটা ফার্স্ট খেয়াল করছিলাম Judea Pearl-এর দ্য বুক অফ হোয়াই বইটা পড়তে গিয়া। অই বইয়ের উনার একজন কো-রাইটার আছেন, Dana Mackenzie. উনি স্ট্যাস্টিশিয়ান না, উনি একজন ম্যাথমেশিয়ান এবং সায়েন্স-রাইটার। উনার কাজ হইতেছে, উনি সহজে, সুন্দর কইরা সায়েন্সের জিনিসগুলা পাবলিক রিডিংয়ের জন্য তৈয়ার করতে পারেন।

মানে, উনি হইতেছেন সায়েন্সের প্রিস্ট বা মাওলানা।

জুডেয়া পার্ল তো খুঁটিনাটি সবকিছু জানেন, কিন্তু উনি যা জানেন সেইটা তো বলেন একাডেমিয়ার ভাষায়, সবাই অই টার্ম-টুর্ম বুঝবো না। মানে, বুঝা যাবে না তা না, বুঝতে গেলে, কিছুদূর পর্যন্ত পড়াশোনা লাগবে, একটা বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং দরকার।

সেইখানে ডানা ম্যাকেঞ্জি হইতেছেন হেল্পার। রিডার এবং জানা-বুঝা একজন লোকের মাঝখানে একজন মেডিয়েটর। আর এইটা অনেক সময় দরকারি জিনিসও। এইরকমের মেইড-ইজি কইরা বলা বা এমনভাবে ইন্টারপ্রেট কইরা দেয়া যাতে কইরা অনেক লোকে সেইটা বুঝতে পারে।…
আমি বলতে চাইতেছি, ধর্মের যেমন মাওলানা আছেন, সায়েন্সেরও মাওলানা আছেন, উনারা বিজ্ঞানী না, বরং “বিজ্ঞান-মনস্ক” ক্যাটাগরির লোকজন।

এখন ঘটনা হইতেছে, ভালো-মাওলানা যেমন আছেন, খারাপ-মাওলানাও তো আছেন, যারা নিজেদের পারসোনাল লাভ-ক্ষতির কথা ভাইবা ইন্টারপ্রিটেশন হাজির করেন, ধর্মের। এইরকম ফ্যানাটিক “বিজ্ঞান-মনস্ক” লোকজন কমও না, বরং ধর্মের চাইতে সায়েন্সে বেশিই আছেন। কারণ অইখানে টাকা-পয়সার লেনদেনটা আরো বেশিই হওয়ার কথা।…

আমি যেইটা বুঝি যে, এই পজিশনটা অ-দরকারি না। সব ডিসিপ্লিনের ডিপ-নলেজ আমাদের থাকা পসিবল না, কোন না কোন মাওলানারে বিলিভ করা লাগবে আপনার-আমার। কিন্তু অই জায়গাতে সাবধান হওয়া লাগবে আমাদের।

আর এর লাইগা ফার্স্টে ডিফরেন্সের জায়গাটারে কন্সিডার করা লাগবে বা আমলে নিতে হবে যে, সাইন্টিফিক-নলেজ থাকা আর বিজ্ঞান-মনস্ক হওয়া একই ঘটনা না। আমার ধারণা, বেশিরভাগ কেইসেই এই জায়গাটারে আমরা এড়ায়া যাই বা খেয়াল করতে রাজি না।…

তো, আমাদের দেখা বা না-দেখা, মানা বা না-মানার ভিতর দিয়া ট্রুথ জিনিসটার তেমন কিছু যায় আসে না! বরং আমরা যদি পারসোনালি এবং সোশ্যালিও এই সত্যগুলার কাছাকাছি একটা জায়গাতে যাইতে পারি, সেইটা আমাদের জন্য বেটার। (এখন এইটা ধর্মের নাকি সায়েন্সের ঘটনা হইলো, সেইটা এতোটা ম্যাটার করার কথা না।)

জুলাই ১৭, ২০২২

বাংলাদেশে নিও-লিবারাল বা সো-কল্ড “অ-সাম্প্রদায়িক” প্রজাতি থিকা আমাদের সাবধান থাকা দরকার। ভুইলা যাইয়েন না, এরাই ১/১১’র গজব নিয়া আসছিল। আবারো নন-ডেমোক্রেটিক শাসনের শুরু করছিল।

এরা বাংলাদেশরে আফগানিস্তান বানাইতে চায় না খালি, অলমোস্ট বানায়া ফেলছিলো। দূতাবাস-বেইজড রাজনীতির শুরু করছিল। পুতুল-সরকার বসাইছিল।

আবারো, ‘সাম্প্রদায়িকতা’র ধু্য়া তুইলা, ইসলামিস্টদের ডর দেখায়া অই জায়গায় নিয়া যাওয়ার আলামত শুরু করতে চাইতেছে।

বাকশাল ক্ষমতা ছাড়লে কোন নন-ডেমোক্রেটিক ফোর্সের কাছেই সারেন্ডার করতে চাইবে, যারা তাদেরকে পালানোর সুযোগ দিবে। যেইরকম ১/১১-এর লোকজনদেরকে দিছিল এই অবৈধ নয়া বাকশালের সরকার।

এই নিও-লিবারালদের কাছ থিকা আমাদের সাবধান থাকা দরকার। এরা বাংলাদেশের পরীক্ষিত বদমাইশ। নন-ডেমোক্রেটিক শাসনের এনেবলার। এরা ইলেকশন চায় না। ইলেকশনের কথা কইতে শরম পায়।

ডেমোক্রেটিক ভার্সেস নন-ডেমোক্রেটিক আলাপটারে এরা সাম্প্রদায়িক ভার্সেস অসাম্প্রদায়িক জায়গাতে শিফট করায়, পলিটিক্যাল ক্রাইসিসটারে কালচারাল ডিফরেন্সগুলা দিয়া গোপন করে, অবৈধ ক্ষমতার জায়গাটারে এরা বৈধতা দেয়।

‘অ-সাম্প্রদায়িকতা’ এদের বিজনেস-প্রডাক্ট। নিও-লিবারলদের, বাকশালি-মিডিয়ার এই বাজে-মাল খরিদ কইরেন না। এরা আরেকটা নন-ডেমোক্রেটিক শাসনরেই নিয়া আসবে বাংলাদেশে, এই কারণে একটা ‘জরুরি অবস্থা’ বানাইতে চায়।

জুলাই ১৮, ২০২২

অনন্ত জলিলের উপ্রে বাংলাদেশের আর্ট-কালচার করা লোকজনের কেন এতো খেইপা থাকে, কেন এতো জ্বালা (দ্য হিট) উনাদের?

এইটা নিয়া একজন বলতেছিলেন যে, উনি অ্যাড-নাটক-সিনেমা করা, মানে মিডিয়ার লোকজনরে উনার সিনেমাতে কাজ কম দেন, বা তেমন দেন না। তো, কারণ হিসাবে এইটা আমার কাছে ভ্যালিডই মনে হইছে। ১০০ কোটি না হইলেও কিছু টাকা তো উনি ঢালতেছেন, কিন্তু এইটা কেন মিডিয়া-সিন্ডিকেটের লোকজন পাইতেছে না? এইরকম একটা “ক্ষোভ” (দ্য জেলাসি) থাকতে পারার কথাই।…

মানে, এই যে ঘোঁট পাকানো “সাহিত্য-সমাজ” বা “মিডিয়া-পরিবার” আছে ঢাকা শহরে, এর একজন মেম্বার হইতে পারলে, এদের লগে একটু ঘোরা-ফেরা, উঠা-বসা করতে পারলেই যেন আপনে অভিনেতা, গায়ক, কবি, আর্টিস্ট, ফিল্ম-মেকার হয়া গেলেন! এইরকমের “স্বীকৃতি”র ব্যাপার এইখানে আছে। যে, আগে কোন না কোন একটা দলের মেম্বার হইতে হবে।

আর কোন সন্দেহ ছাড়াই এইটা বাংলাদেশের আর্ট-কালচারের সবচাইতে নেগেটিভ ঘটনা।

মানে, আমারে ভুল বুইঝেন না যে, এই সার্কেলের লোক মানেই আপনি খারাপ, বা এর বাইরে যা ঘটতেছে, তার সবই ভালো।

কিন্তু এই যে একটা দলের/গ্রুপের মেম্বার হইতে পারা (ইভেন সার্টেন এসথেটিক্যাল পজিশনে সাবস্ক্রাইব করাও না) মানেই ‘প্রতিভাবান’ হয়া যাইতে পারা, এইটা পলিটিক্যাল দলবাজিরই একটা সাব-গ্রুপ। কম-বেশি পলিটিক্যালি কানেক্টেড ঘটনাও।

উদাহারণ হিসাবে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কথা মনে হইলো। এইরকম আরো আছে। এরা খালি দলবাজি সাহিত্য বা আর্ট-কালচার করা লোকই না, আপনি যদি অইরকম কোন গ্রুপের মধ্যে না থাকেন, আপনার কাজকামই তো হয় না!

মানে, অনন্ত জলিল উনার টাকা খরচের কোন ভাগ এইখানে ঢাললেই উনি ভালো-আর্টিস্ট হয়া যাবেন না। বরং চাইল-ডাইলের বাজারের মতো আর্টের বাজারেও সিন্ডিকেট আছে বাংলাদেশে। এর মেম্বার হইতে পারলে সুবিধা।

এর বাইরে, অন্য আরো অনেক হিসাব তো আছেই…

***

হিস্ট্রি কোন সিঙ্গুলার ন্যারেটিভের ঘটনা না
[পিনাকী ভট্টাচার্যের “মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম” (২০১৭) বইটা নিয়া]

পিনাকী ভট্টাচার্যের “মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম”-এর বেসিক প্রবলেম দুইটা। এক হইলো, একটা এস্টাবলিশড বা প্রচলিত সিঙ্গুলার ন্যারেটিভের জায়গাটারে আরেকটা সিঙ্গুলার ন্যারেটিভ দিয়াই রিপ্লেইস করতে চাইতেছেন উনি। ঘটনা এইটা না যে, ধর্ম-নিরপেক্ষ বা সেক্যুলার বয়ানের বদলে একটা ইসলামি-সমাজ কায়েম করার চেষ্টা হইছিল মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়া। দুইটা পজিশনই সমান রকমের বাজে এবং ভুল পজিশন একটা। কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল তার চাইতে জরুরি জিনিস হইতেছে একটা সিঙ্গুলার ন্যারেটিভ সবসময় পুরাটা ঘটনাটারে ধরতে পারার কথা না। এইটা সো-কল্ড “সায়েন্টিফিক” চিন্তার একটা ইন্টারনাল প্রবলেম। একজন ভার্সিটির স্টুডেন্ট যেই কারণে মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন, একজন গ্রামের নওজোয়ান একই কারণে মুক্তিযুদ্ধ করেন নাই। ন্যারেটিভের মাল্টিপ্লিসিটির জায়গাটা এইখানে কমপ্লিটলি মিসিং।

মানে, আমারে ভুল বুইঝেন না যে, পিনাকী ভট্টাচার্যের কথাগুলা ভুল, মুক্তিযুদ্ধের যেই আওয়ামি-সিপিবি বা বাকশালি ন্যারেটিভ সেইখানে ইসলাম’রে পুরাপুরি বাতিল কইরা দেয়ার রাজনীতিটা নাই, সেইটা পুরাপুরিই আছে। আবুল মনসুর আহমেদের কয়েকটা কোটেশন দেখেন, অইগুলা দেখলে আরো বেটার বুঝা যাবে সেইটা।

“প্রথম ঘটনাটা ঘটিল স্বাধীনতার প্রায় শুরুতেই – ১৮ই ডিসেম্বরে। ঐ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদযাপনের জন্য দিল্লীর রামলীলা ময়দানে এক বিরাট জন-সভা হইল। সে সভায় ভারতের দেশরক্ষা মন্ত্রী শ্রী জগজীবনরাম বক্তৃতায় বলিলেনঃ ‘এতদিন পাকিস্তানের গর্বের বিষয় ছিল, সে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। গত পরশু হইতে সে গৌরব বর্তাইয়াছে বাংলাদেশের উপর। বাংলাদেশই এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র।’… কিন্তু বাংলাদেশের সদ্য-দীক্ষিত একজন অফিসার মিঃ রামের উক্তির তীব্র প্রতিবাদ করিয়া বলিলেনঃ ‘মিঃ রামের স্মরণ রাখা উচিৎ ছিল বাংলাদেশ একটি সেকিউলার রাষ্ট্র, মুসলিম রাষ্ট্র নয়।’ আমি বুঝিলাম এটা যদি বাংলাদেশ সরকারের সরকারী অভিমত হয়, তবে বিপদের কথা। বাংলাদেশের পরিচালন-ভার এমন সব ‘অতি-প্রগতিবাদী’ লোকের হাতে পড়িতেছে যাঁরা ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম রাষ্ট্রের পার্থক্য বুঝেন না বা বুঝিতে চাহেন না।” (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, পেইজ ৫৯৩ – ৫৯৪)

“প্রবাসী সরকার ঢাকায় ফিরার সংগে সংগে প্রমাণিত হইল যে এটা সরকারী অভিমত। দেশে ফিরিয়াই তাঁরা যা দেখাইলেন, তাতে রেডিও-টেলিভিশনে কোরান-তেলওয়াত, ‘খোদা হাফেজ’, ‘সালামালেকুম’ বন্ধ হইয়া গেল। তার বদলে ‘সুপ্রভাত’ ‘শুভ সন্ধ্যা’ ‘শুভ রাত্রি’ ইত্যাদি সম্বোধন প্রথা চালু হইল।” (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, পেইজ ৫৯৪)

অনেক আগে, এই জিনিসটাও আমি বলছিলাম যে, ইন্ডিয়ার হিন্দুরা ও অন্য এলাকার মুসলমানরা যেইরকম আমাদেরকে মুসলমান মনে করে না (ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র জবানে এইরকম কিছু ঘটনা আছে, যেইখানে তারে অন্য মুসলমানরা চেতাইতো তুমি মাছ খাও, মাংস খাও না, তুমি আবার কেমন মুসলমান!); মনে করে, এরা তো ‘আদি হিন্দু!’ এইরকম পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানরাও মনে করতো যে, কলমা জানে না, বেটারা মুসলমানি করে না, বেটিরা টিপ, শাঁখা পিন্দে, এরা তো ‘আসল’ মুসলমান না! এখনকার অনেক মৌলবী-মাওলনার মধ্যেও এই জিনিসটা আছে। কালচারাল ডিফরেন্সের জায়গাগুলারে মাইনা নিতে না পারা। ইরানের মুসলমান আর আরবের মুসলমান এক না, তুরস্কের মুসলমান আর আফ্রিকার মুসলমানও কালচারালি নানান দিক থিকা এক না। সারা দুনিয়া জুইড়াই, এমনকি নোয়াখালী আর রংপুরের মানুশে এবং মুসলমানে অ-মিল আছে। থাকারই কথা। এইটারে একটা ইনফিরিয়রিটি হিসাবে প্রজেক্ট করাটা বা পলিটিক্যালি আন্ডারমাইন করার জিনিসটা হইতেছে ঘটনা।

মানে, এইটা আছে এইখানে। কিন্তু তাই বইলা এইটারে সিঙ্গেল ন্যারেটিভ হিসাবে চালু করতে চাওয়া বাকশালি-ন্যারেটিভ কাউন্টার হইলেও একই বেইজের, একই ধরণের চিন্তার ঘটনা। এইটার কোন ক্রিটিক বা নড়চড় এইখানে নাই।

সেকেন্ড হইতেছে, অফিসিয়াল ডকুমেন্ট। এইটা আছে বইলাই সত্যি না। একাডেমিয়ারেই সত্য-বলার ডিলারশিপ আমি দিতে চাই না। আমরা জানি, দুনিয়াতে সবচে বেশি মিছা-কথা বলা হয় সরকারি প্রেসনোটগুলাতে। কোন কিছু বইয়ে লেখা হইছে বইলাই সেইটা সত্যি না। বরং এইটার ভিতর দিয়া সত্যিটারে লিমিট কইরা ফেলা হয়। এই টেনডেন্সি পদ্ধতি হিসাবেও এইখানে আছে। যে, দেখেন, ডকুমেন্টে আছে! এই থাকাটা, আবিষ্কার করাটা বা দেখায়া দেয়াটা অবশ্যই ‘ফ্যাক্ট’, দরকারি ঘটনাও। কিন্তু একইসাথে ফ্যাক্টরেই ট্রুথ বানায়া ফেলতে চাওয়ার ঘটনাও, যেইটা যদি ‘ট্রুথ’রে লিমিট কইরা ফেলার কথা।

শেষের দিকে গিয়া পিনাকী ভট্টাচার্য যেইরকম বলছেন যে, “মুক্তিযুদ্ধ শুধু স্বাধিকারের লড়াই ছিল না, একটা নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে ইসলামকে অবলম্বন করে তার সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় গড়ে তোলারও সংগ্রাম ছিল।… ইসলাম ধর্মের সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির কোনো বিরোধ নেই – এই সত্যটাই রক্ত দিয়ে, প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ।” – এইখানে আমার কথা হইতেছে, ‘আইডেন্টিটি’র জায়গাটা ছিলই, এইটা পাকিস্তানের পার্ট হওয়ার মধ্যেই ছিল, আর বাংলাদেশ হওয়ার ভিতর দিয়া সেইটারে ডিজ-অউন করার কোন ঘটনা ঘটে নাই। আরো জোর কইরা আঁকড়াইয়া ধরার ঘটনাও নাই। ডেফিনেশনের ভিতর দিয়া যেমন বস্তু এপিয়ারড হয় না, এইরকম আইডিওলজির ভিতর দিয়া ঘটনা ঘটে নাই। বরং ঘটনা ঘটার পরে এই জায়গাগুলারে বেড়া দেয়ার ট্রাই করতেছি আমরা। যেইটা এপ্রোচ হিসাবে সিমিলার ঘটনা। মানে, ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্সের’ টুলটা দিয়া জায়গাটারে লোকেট করতে চাওয়াটা একইরকমভাবে ন্যারো কইরা তোলা-ই, অনেকটা।…

লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, তিন নাম্বার একটা পয়েন্টের কথা কইতে চাই আমি, যেইটা খুববেশি এক্সপ্লিসিটলি নাই বইটাতে। কিন্তু আন্ডারলাইন থিওরি হিসাবে এফেক্টিভ আছে। মুসতাহিন জহির যেইটা ইন্ট্রোতে বলতেছিলেন, পরে শেষে গৌতম দাসও মাও সে তু’র দোহাই দিয়া জাস্টিফাই করছেন যে, সমাজে অনেকগুলা কনফ্লিক্টই থাকে, কিন্তু এর মধ্যে সেন্ট্রাল কনফ্লিক্ট’টারে আমলে নেয়া লাগে।… তো, এইটা মিছা-কথা না, কিন্তু তাই বইলা অন্য কনফ্লিক্টগুলা নাই হয়া যায় না। হিস্ট্রি কন্টিনিউশনের একটা ঘটনা। ‘উল্লম্ফন’ যে ঘটতেছে, সেইটা ‘হঠাৎ’ কইরা ঘটা কোন জিনিস না, বরং (গৌতম বসু’র ভোকাবুলারি ধইরা কইলে) একটা ‘সেন্টার-কনফ্লিক্ট’ বদলে আরেকটা কনফ্লিক্টের সেন্টার হয়া উঠার ঘটনা।

১৯৪৭-এ বাংলাদেশের ইন্ডিয়ার লগে না গিয়া পাকিস্তানের পার্ট হওয়ার মেইন সিগনিফিকেন্স ‘ইসলাম কায়েম’ করা না, বরং জমিদারি-প্রথার শেষ হওয়া। (আর এইটা যতোটা না মুসলিম লীগ, তার চাইতে অনেক বেশি এ কে ফজলুল হকের কন্ট্রিবিউশনের ঘটনা।…) কিন্তু বাংলাদেশ হওয়ার সময়ের ‘সেন্টাল-কনফ্লিক্ট’ একই না। মানে, জমিদারি-প্রথা তো বাদ হইছে তখন। তাইলে বাংলাদেশের মানুশ পাকিস্তানের লগে থাকতে চাইলো না কেন? অবভিয়াসলি সেইটা যেমন ‘সেক্যুলার বা ধর্ম-নিরপেক্ষ’ না-হওয়ার জন্য না, একই ভাবে ‘ইসলাম কায়েম’ করার জন্যও না। রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানে আরেকটা জুলুমের জায়গা হয়া উঠছিল। ইকনোমিক বেনিফিট না-পাওয়ার ঘটনা তো আছেই, পলিটিক্যাল রাইটস না-থাকা এবং কালাচারালি ‘মুসলমান’ হিসাবে হিন্দু-ধর্মের একটা ‘লোয়ার-কাস্ট’ থিকা ‘আসল মুসলমান না’ স্ট্যাটাসেই ছিল। সেইটা বরং ঘটনা। (আনফরচুনেটলি কালচারালি কম-বেশি এই অবস্থা এখনো আছে। সেই জায়গাটা আমরা তৈরি করতে পারি নাই। কিন্তু সেইটা আরেকটা আলাপই আসলে।…)

তো, হিস্ট্রিরে একটা সিঙ্গুলার ন্যারেটিভ হিসাবে দেখতে গেলে এই ঝামেলাগুলা তৈরি হয়। আপনি যখন মাল্টিপ্লিসিটির জায়গাটারে আমলে নিতে রাজি থাকবেন তখন বরং খেয়াল করতে পারবেন যে, একেক সময় একেকটা সিঙ্গুলার ন্যারেটিভ কেন ডমিনেন্ট হয়া উঠতেছে। অইটারে ফোকাসের জায়গা কইরা তোলাটারে আমি পলিটিক্যাল-হিস্ট্রি রাইটারের কাজ বইলা ভাবতে চাই।

মানে, যেই ফিলোসফিক্যাল জায়গা থিকা বইটা লেখা হইছে, সেইখানে আমি যেইভাবে ভাবতেছি, তার সাথে ডিফরেন্সের জায়গাটা বলতে চাইছি আমি। আর সেইটা কিছুটা হইলেও ক্লিয়ার করা গেছে মনেহয়।

জুলাই ২০, ২০২২

পদ্মা-বিরিজ বানানোর নাম কইরা লোন নিয়া, লোনের শর্ত দিয়া দেশ অর্ধেক বেইচা দেয়া হইছে। বাকি অর্ধেক বেচা হবে ইলেকট্রিসি, মেট্রোরেল আর বাজেট-গ্যাপের নাম দিয়া। এর একটা বড় অংশই পাচার করা হবে, আবার। খালি টাকা নিয়া না, লোনের শর্ত দিয়া দেশ বেচা হইছে, হবে। কোন সরকারি লোনের ডকুমেন্ট কি পাবলিক করা হইছে? (পিপলের নামে লোন নিলে, লোনের টাকা পিপলের ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা দিয়া শোধ করলে, সেইটা পিপলরে জানাইতে হবে না?) সেইটা যদি দেশ বেচার কোন শর্ত না থাকে, পাবলিকলি জানাইতে পারে না কেন?

খুব বেশি দিন না, ২০-২৫ বছর আগেও একজন এইট-পাশ মহিলা (জ্বী, দুইটাকার ‘শিক্ষিত’ লোকজন এমনেই কইতো, তখন সেইটা মিসোজনিস্ট ঘটনা হইতো না, কলোনিয়াল-কালচারের ঘটনা হইতো না…) কইছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশ বেইচা দিবে! দেশ বেচা কি জিনিস, দিনে দিনে আরো টের পাইবেন। (রেটরিকরে ফ্যাক্ট আর ফ্যাক্টরে রেটরিক বানায়া এই জিনিস এড়াইতে পারবেন না।) এই লোনের টাকা আপনার-আমার পোলা-মাইয়ারা না খালি নাতি-পুতিরাও দিয়া শেষ করতে পারব না।

অবশ্য আমাদের দাস (ইমিগ্রেন্ট ওয়ার্কার) দাসীরা (গার্মন্টেস-বালিকারা, পেডোফেলিক রাইটাররা যেমন লেখে) তো আছেই! অদেরকে দিয়া স্লেভারি কন্টিনিউ করতে পারলেই হবে। আর আমরা ফিল-গুড এক্টিভিজম দিয়া আমাদের জীবনের বাকি দিনগুলা কি পার কইরা দিতে পারবো না! 🙂

***

বাংলাদেশের কিছু বাম-বাকশালি এবং নিও-লিবারালরা (দুইটা একই ক্যাটাগরির লোক আসলে) বুঝাইতে চান যে, দেশে তো কেন লিডার নাই! পলিটিক্যাল দল নাই! যেন এক হিটলার ছাড়া কিছু নাই দেশে! এরাই মিডিয়া-রিয়ালিটির কোর লোকজন আসলে।

নেতা খোঁজার নাম কইরা এরা একটা টার্গেট খুঁইজা বাইর করে, নিউজ-মিডিয়ার সাংবাদিক এবং সোশ্যাল-মিডিয়ার বটগুলার দিয়া তারে হিউমিলিয়েট কইরা, রেব-পুলিশ লেলায়া দিয়া ‘খারাপ মানুশ’ বইলা ‘প্রমাণ’ করে। এইটা মোটামুটি পরিচিত-স্ট্রাডেজি। বাম-বাকশালি এবং নিও-লিবারালদের প্রজেক্ট এইটা, বাকশালের অঙ্গ-সংগঠন হিসাবে।

রিসেন্ট টাইমে ওয়ার্ল্ডে কয়েকটা মুভমেন্ট হইছে (ইন্ডিয়ার পাঞ্জাবে কৃষক মুভমেন্ট, অকুপাই ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট, ইভেন রিসেন্টলি শ্রীলংকার ঘটনা), যেইগুলার সবচাইতে ভালো-জিনিস হইতেছে – কোন (সো-কল্ড) লিডার নাই অইভাবে, যার ভিতর দিয়া পুরা মুভমেন্টটারে দমায়া ফেলতে পারবে। মিডিয়া-রিয়ালিটি দিয়া স্যাবোটাজ করতে পারবে। বরং একটা কনশাসনেস হইতেছে কোর ঘটনা এইখানে।

(এই মুভমেন্টগুলা যে বেশিরভাগ সময়ই একটা জায়গাতে রিচ করতে পারতেছে না, সেইটা অন্য আলাপই। নেতা দিয়া, লিডার দিয়া অই জায়গাটাও তৈরি করা যাইতো না, আমি সেইটা বলতে চাইতেছি।)

মানে, আপনার আন্দোলন বিএনপি কেন কইরা দিবে? মাদরাসার স্টুডেন্টরা কেন জান দিবে? যদি সেইটা করেও সেইটা পিপলের ক্ষমতা ফিরা পাওয়ার কোন ঘটনা হইতে পারবে না।… মানে, ষড়যন্ত্র বা কন্সপিরেসি তো না-ই, কোন লিডার বা পলিটিক্যাল দলের ভিতর দিয়াও না, একটা পিপল কনশাসনেস এবং অ্যাক্ট করার ভিতর দিয়া অই এক্সপ্লোরেশনের জায়গাগুলা শুরু হইতে পারবে আসলে।

Leave a Reply