নোটস: নভেম্বর, ২০২৩

০২.১১.২০২৩

নিরপেক্ষ লিগ: কি ও কারা?

পলিটিকালি বাংলাদেশে আজকে ক্লিয়ারলি দুইটা পক্ষ আছে। এই নিয়া কোন ক্রিটিকাল এনালাইসিস করা যাবে-না না, বরং যখনই এই ধরণের ক্রুশিয়াল মোমেন্টগুলা তৈরি হয় হিস্ট্রিতে, তখনই একটা পক্ষ নিতে পারতে হয় আমাদেরকে, সো-কল্ড নিরপেক্ষ হওয়ার চাইতে। কারণ ‘নিরেপক্ষতা’ বইলা কিছু নাই না, এইরকম ক্রুশিয়াল মোমেন্টগুলাতে ‘নিরেপক্ষতা’ স্রেফ একটা ইন্টেলেকচুয়াল ভন্ডামি।

চিন্তা করেন ১৯৪৭-এর কথা, ব্রিটিশ-শাসনের জাস্টিফিকেশনগুলা হাইলাইট করার মতো কিছু লোক কি ছিল না? (নীরদচন্দ্র চৌধুরীর কথা মনে হইলো…) বা ইভেন এখনো কি নাই? ১৯৭১-এর কথা মনে করেন খালি রাজাকার-ই না, আল মাহমুদের অটোবায়োগ্রাফি-তে আছে ঢাকার কবিরা কিভাবে বাংলাদেশ ধারণার বিরোধিতা করছিলেন। এতো দূরেও যাইতে হবে না, ১৯৯১-এর ঘটনা তো আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে! এরশাদের দালাল তো কম ছিল না, যারা শেষ পর্যন্ত ট্রাই কইরা গেছে। তো, একইভাবে আওমি জুলুমের, নয়া বাকশালের অবৈধ-শাসনরে ইনায়া-বিনায়া, নিরপেক্ষ-লিগ হয়া সার্পোট করার লোকও থাকবে কিছু। এইটা হইতেছে এক নাম্বার পয়েন্ট।

সেকেন্ড হইতেছে, এরা এদের ইন্টেলেকচুয়াল বাটপারি চালু রাখবে টার্মের ভিতর দিয়া, ঘটনারে বর্ণনা করার টুল ও এপ্রোচ করার ভিতর দিয়া। যেমন ধরেন, বাংলাদেশের মানুশ আজকে BNP ও BAL – এই দুইভাগে বিভক্ত না, বরং বাংলাদেশের মানুশ আজকে ডেমোক্রেসির পক্ষে, আর কিছু লোক লুটপাটের পক্ষে সাফাই গাইতে ব্যস্ত! দুইটারে সমান সমান বইলা দেখানোটাই হইতেছে আই-ওয়াশের ঘটনা’টা।

এইটা খালি BNP’র আন্দোলন না, এইটা বাংলাদেশের মানুশের ডেমোক্রেসির জন্য ফাইট করার ঘটনা। অথচ এই সত্যি-ঘটনাটারে যে কোনভাবে লুকায়া রাইখা দুইটা সমান সমান দল হিসাবে পোর্টেট করার সব চেষ্টা কইরা যাইতেছে বাকশালি-মিডিয়া। এরা পার্ট অফ নয়া বাকশাল, এরা দুইটা দলের মাঝখানে কোন ‘নিরপেক্ষ’ দল না, এরা জুলুমের পক্ষের শক্তি, জালিমের অঙ্গ-সংগঠন, এবং আরো গোঁড়া ও ভয়ংকর! জালিমরে দেখায়া দিবে কারে কারে টার্গেট করতে হবে। এরা হইতেছে লিস্ট সাপ্লাই করার লোক।…

থার্ড এবং ক্রুশিয়াল ঘটনা হইতেছে, এরা ‘ভদ্রলোক’; মানে, এমন একটা এটিটুড নিয়া থাকেন যে, যেহেতু সুন্দর কইরা ও শুদ্দ-ভাষায় উনারা কথা বলতেছেন, উনারা তো সত্যি-কথা বলতেছেন! অথচ ঘটনা হইতেছে, এই এসথেটিকাল সুপিরিয়রিটি’টারে উনারাই তৈরি করতেছেন ক্ষমতা-কাঠামের সাথে খায়-খাতির রাখার ভিতর দিয়া। মানে, এই ‘সুন্দর’ ও ‘শুদ্দতা’ – এইটা আখেরে একটা পাওয়ার-রিলেশনেরই আউটকাম! যেইটা মোরাল করাপশনের ভিতর দিয়া নিজেরে ‘হাই-ক্লাস’ দাবি করার পরে সেইটা দিয়াই মোরাল-জাস্টিফিকেশনের জায়গাগুলারে তৈরি করতে চায়। যার ফলে, ক্ষমতার জায়গাগুলারে সার্ভ করার বাইরে এইটা নিজেদের এগজিসটেন্সটারে ধইরাই রাখতে পারার কথা না!

আমি বলতে চাইতেছি, আজকের বাংলাদেশে যারা নিরপেক্ষ-লিগ, উনারা ক্ষমতার লগে কানেকশনের ভিতর দিয়াই উনাদের এসথেটিকসটারে তৈরি করে, ক্ষমতারে তার সুবিধামতো টার্ম ও নেরেটিভগুলার ভিতর দিয়া সার্ভ করে, এবং এই গ্রুপটা সবসময়ই এন্টি-পিপল একটা পলিটিকাল পজিশন নিয়া থাকে, হিস্ট্রিকালি।

এই জায়গাটারে খালি একটু ভুল-বোঝা, ডিফরেন্ট পারসপেক্টিভ বা কালচারাল সুপিরিয়রিটির জায়গা থিকা দেখতে গেলে বড়সড় রকমের ভুলই করবো আমরা।

০৩.১১.২০২৩

নিউজপেপার বিজনেস

অল্প কিছুদিনের রিসার্চ বাদ দিলে আমার চাকরি আমি শুরু করছি সেলস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশনে, তারপরে মার্কেটিংয়ের কিছু জিনিসও করা লাগছিল। ১৪-১৫ বছর আগের কথা, মার্কেটিং জবের একটা বড় কাজ ছিল অ্যাড-ট্যাড বানানো তদারকি করা আর টিভি-পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দেয়া; পাবলিক তখনো সোশাল-মিডিয়াতে শিফট করে নাই। তো, তখন একবার একটা কাজ পড়লো আমার যে, প্রথম আলো ও ডেইলিস্টারের ফার্স্ট পেইজে পর পর তিনদিন নতুন ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার অ্যাড দেয়া লাগবে। মুশকিল হইলো যেই এজেন্সি দিয়া কাজ করাই অরা ডেইলি স্টারেরটা দিতে পারলেও প্রথম-আলো’র তিনদিনের শিডিউল নিয়া দিতে পারতেছে না ফার্স্ট পেইজে; কিন্তু এইটা ইম্পর্টেন্ট, কারণ অই ফ্যাক্টরি’র ফিতা-কাটার কথা ছিল একজন মিনিস্টারের, উনিও কাভারেজের কারণেই আসতে রাজি হওয়ার কথা। উনি একটা ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান; সেইখানের একজনের নাম্বার দিয়া কইলো, তাঁর লগে যোগাযোগ করো, শে ম্যানেজ কইরা দিবে। ভদ্রমহিলারে ডিটেইলস জানাইলাম, বিকালেই উনি ম্যানেজ কইরা দিলেন। আমি তো খুবই অবাক, দুই-তিনটা এজেন্সিরে ধইরাও তো ম্যানেজ করতে পারি নাই, আপনি কেমনে পারলেন? উনি হাসলেন, একটা এজেন্সির নাম বললেন, অইটা হইতেছে প্রথম-আলোর একজন এডিটরের এজেন্সি, অরা আগে থিকা স্পেইস কিইনা রাখে, অদের কাছ থিকা নিছেন। আমি যাদের লগে কনটাক্ট করতেছিলাম, তারা বেশি টাকা অই এজেন্সিরে দিতে রাজি হইতেছিল না। এইরকম একটা ঘটনা।

মানে, বাংলাদেশে যারা বিজনেস করেন, তাদের জন্য প্রথম আলো ডেইলিস্টারের স্পেইস ও প্রমোশনটা দরকারি একটা জিনিস ছিল একটা সময়। এখনো কম-বেশি ইম্পর্টেন্ট। নিউজপেপার এমন একটা স্পেইস যেইখানে আমরা খালি নিউজ-ই পড়ি না, বিজ্ঞাপণও দেখি। এমনকি নাটক-সিনেমাতে যেইরকম ব্র্যান্ড-পজিশনিং হয়, নিউজে এর ট্রিটমেন্ট তার চাইতেও বেশিই আসলে, কম না। আর নিউজ-মিডিয়া ও বিজনেস-কমিউনিটির (এন্টারটেইমেন্টও বিজনেসই) – এই যে রিলেশন এইটা খালি বাংলাদেশেরই ঘটনা না, ওয়ার্ল্ড ওয়াইডও ঘটনা কাছাকাছি রকমেরই। গার্ডিয়ান, টাইমস নিউ ইয়র্কার, ইকনোমিস্ট বা ইদানিং আল-জাজিরা কি কইতেছে – এইগুলা খালি পলিটিকালি ইম্পর্টেন্ট না, বিজনেস কমিউনিটির জন্যও অনেক দরকারি (এবং সময় সময় হার্মফুল)। যার ফলে এইরকম দরকারি মিডিয়া-হাউজগুলা কিনে নিছে কর্পোরেট জায়ান্টরা। আগে যেইরকম নিউজপেপারের মালিক ছিল পলিটিকাল দলগুলা, এখন সেইখানে যোগ হইছে কর্পোরেট ইনভেস্টর’রা।

এখন মিডিয়া-হাউজগুলা কিইনা নিয়া কর্পোরেটরা নিউজ-এজেন্সিগুলার উপরে ছড়ি ঘুরাইতেছে, তাদের এজেন্ডা ফুলফিল করতেছে – ব্যাপারটা এইরকম স্ট্রেইটকাট ঘটনা না; বরং অনেক সময় প্রেস্টিজের ঘটনা, পলিটিকাল টুল হিসাবে হাতে রাখার ঘটনা যাতে কইরা পলিটিকাল পার্টিগুলার লগে, গর্ভমেন্ট এজেন্সিগুলার লগে নেগোশিয়েন করা সহজ হয়, এবং মাঝে-মধ্যে অল্প কিছু ফেভার নেয়ার ঘটনা যে, কিছু ‘সেন্সেটিভ’ নিউজ ছাপলেন না, এইরকম।

বাংলাদেশে এর লগে যোগ হইছে, গর্ভমেন্টরে খুশি রাখা। এর একটা বড় কারণ হইতেছে, নিউজপেপারগুলা কখনোই সার্কুলেশনের উপর বেইজ কইরা প্রফিট করতে পারে নাই; প্রফিট করে বা টিইকা থাকে সাবজিডাইজ রেটে কাগজ ইমর্পোট করতে পারে বইলা, সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপণ পায় বইলা; এখন আপনার টাকা-পয়সা যেই জায়গা থিকা আসতেছে, সেই জায়গাগুলারে তো আপনি ‘ডিস্টার্ব’ করতে পারেন না! এইটা খুবই ভুল কথা যে, নিউজপেপারের কাজ হইতেছে পাবলিকরে সত্যি-কথা জানানো; বরং শুরু থিকাই এর কাজ ছিল কিছু এজেন্ডা ফুলফিল করা, যেইটা আগে অনেক সময় পাবলিকের ইন্টারেস্টের লগে মিলতো, যেই কারণে পিপলের ইন্টারেস্ট ছিল নিউজপেপারের প্রতি, যেইটা এখন কমে আসতেছে।

নিউজপেপারের হিস্ট্রি যদি খেয়াল করেন, পত্রিকা জিনিসটা শুরু হইছিল অনেকটা ন্যাশনালিজমের সাথে সাথে; মানে, ‘জাতি’ ধারণাটা খুবই স্ট্রংগলি জড়িত নিউজপেপারের সাথে। যে, এইটা এই দেশের পত্রিকা! এখনো সেইটা আছে। এই ন্যাশনালিজম কোন না কোন পলিটিকাল পার্টির ভিতর দিয়াই ছড়াইছে, যাদের সহযোগি ছিল একটা পত্রিকা। ন্যাশন-স্টেট তৈরি হওয়ার পরে এক ধরণের ‘ইন্ডিপেন্ডেড’ পজিশন পত্রিকাগুলারে নিতে হইছে, যেইখান থিকা তারা রাষ্ট্রের এক্সটেন্ডেড মাউথ-পিস হইছে বা ক্রিটিক করতেছে। কিন্তু একটা ইকনোমিক বেইজ তো তাদের লাগবে, যেইটা দিতে বিজনেস কমিউনিটি আগায়া আসছে। যার ফলে পত্রিকাগুলা পলিটিকাল মাউথ-পিস থিকা বিজনেস-ফ্রেন্ডলি জায়গাতে মুভ করছে। যারা এইটা পারে নাই, তারা বাতিল হইছে। বাংলাদেশে প্রথম আলো এইটা পারছে। একটা বিজনেস-ফ্রেন্ডলি পলিসিতে তারা অপারেট করতে পারে। ভালো-ব্যবসায়ীদেরকে তারা প্রমোট করে, যেইরকম, সামিট গ্রুপ! 🙂 আর খারাপ-ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করে, যেইরকম ‘বসুন্ধরা গ্রুপ’। এই কারণে বসুন্ধরা গ্রুপও নিজেরা পত্রিকা-টত্রিকা শুরু করছে। অন্য ছোট-বড় কোম্পানিগুলাও কম-বেশি এই মিডিয়া-বিজনেসের লগে কানেক্টেড হইছে।

একটা সময়ে যেইরকম ছিল যে, বড় ব্যবসায়ি হইতে হইলে কোন না কোন পলিটিকাল এফিলিয়েশন আপনার থাকতে হবে, এখন কোন না কোন মিডিয়া-হাউজের লগেও উঠা-বসা থাকতে হবে। এইটা মিউচুয়াল বেনিফিটের ঘটনাই। কিন্তু মুশকিল হইতেছে যখন সাংবাদিকতারে ‘পবিত্র’ বা ‘বিপ্লবী’ পেশা হিসাবে হাইলাইট করা লাগে, তখন এইটা আগের সেই এক্সপেক্টশনটারে তো ফুলফিল করতেই পারে না, বরং আরো বাজে-ঘটনা হয়া উঠে। একটা পত্রিকা বা একজন সাংবাদিকের কাছ থিকা আমরা এক্সপেক্ট করি যে, সত্যি-কথাটা উনারা বলবেন, ক্যানভাসারের কাজ করবেন – এই এক্সপেক্টশন তো নাই, যার ফলে ‘ভুল বুঝাবুঝি’র জায়গাটা তৈরি হয়। পত্রিকাগুলা বা মিডিয়া-হাউজগুলা এক একেকটা বিজনেস এনটিটি, যাদের কাজ হইতেছে নিউজ বেচা, যেইটা তাদের মালিকের (ব্যবসায়ি, গর্ভমেন্ট ও পলিটিকাল দলের) কাজে আসবে, না আসলেও এটলিস্ট তাদেরকে বিপদে ফেলবে না। নিউজ মানে হইতেছে এক ধরণের এন্টারটেইনমেন্ট। (যারা আট’টার খবর, নয়টার খবর দেখেন… খেয়াল করবেন এক ধরণের নাটক-সিনেমার মতোই দেখেন এইগুলা।) নলেজ তো না-ই, কোনকিছু জানা-বুঝার ঘটনাও না আসলে।

এই যে, জায়গাটা শিফট হইছে – এইটা খেয়াল করা হয় না। আমি মনে করি, ট্রেডিশনাল মিডিয়া-হাউজগুলার পক্ষে সত্যি-কথা বলা এখন আর পসিবল না। আমরা আসলে ভুল এক্সপেক্টশন নিয়া আছি। যে, পত্রিকা পইড়া, টিভি-দেইখা নানান রকমের নিউজ আমাদেরকে জানতে হবে! একটা সোশাল-রিকোয়ারমেন্ট হিসাবে এইটা আসলে পুরান এবং টু সাম এক্সটেন্ড ইনভ্যালিড হইছে। ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার, টেলিগ্রামেই আমরা নিউজ-টিউজ জানি এখন। যেই নিউজ অই জায়গাগুলাতে নাই, সেইগুলা ততো একটা নিউজও হইতে পারে না আসলে।

তো, তাই বইলা নিউজপেপার বাতিল হয়া যাবে, এর কোন ইমপ্যাক্ট থাকবে না – এইটা না; যেমন ধরেন, সিনেমা আসছে বইলা মানুশ তো গল্প-উপন্যাস পড়া বন্ধ কইরা দেয় নাই। কিন্তু এন্টারটেইমেন্টের প্রাইমারি সোর্স হিসাবে বই আর নাই। একইরকমভাবে পত্রিকা পড়া মানুশ-জন বন্ধ কইরা দিবে না, কিন্তু নিউজ-সোর্স হিসাবে দিন দিন আরো আন-ইম্পর্টেন্টই হয়া উঠবে আসলে (এখনই সেইটা হয়া উঠছে মনেহয়)। আর যারা এখনো ট্রেডিশনাল অর্থে, ভালো-সাংবাদিকতা করতে চান, তারা কোন মিডিয়া-হাউজের আন্ডারে জব করাটারে মেবি কমই পছন্দ করবেন।

আমি বলতে চাইতেছি, কোন নিউজপেপার কতোটা সত্যি-কথা বলতেছে, জনগণের পক্ষে আছে, ভালো আইডিওলজিরে প্রমোট করতেছে – সেইটা নিউজপেপারের মেইন পারপাস হিসাবে আর এগজিস্ট করে না, এমনকি এন্টারটেইনমেন্ট মেটারিয়াল হিসাবেও এর ‘আবেদন’ কইমা আসতেছে। এই অবস্থায় মিডিয়া-হাউজের চাইতে ইন্ডিভিজ্যুয়াল জার্নালিজমই পাওয়ারফুল জিনিস হয়া উঠতে থাকবে বইলা আমার অনুমান।

০৪.১১.২০২৩

নয়া বাকশালের ক্ষমতায় টিইকা থাকতে হইলে একটা ডামি-বিরোধিদল মাস্ট! এখন জাতীয় পার্টিরে দিয়া যে এই কাজ হবে না, এইটা মোটামুটি ফাইনাল। নতুন কোন বিরোধিদলও বানানো যাইতেছে না। পুরান কাউরে না কাউরেই নতুন চেহারা দিয়া সাজাইতে হবে। এইক্ষেত্রে সবচে পটেনশিয়াল দুইটা অপশন হইতেছে – চরমোনাই ও জামাতে ইসলাম।

এই দুইটা দলেরই অনেক ঈমানদার সার্পোটার আছেন, তারা ব্যাপারটারে ভুল বুইঝেন না যে, উনারা অলরেডি আওমিলিগের লগে আঁতাত কইরা ফেলছে বা করতে যাইতেছে; বরং লজিকালি চিন্তা করতে গেলে, উনাদের অই সম্ভাবনা এখনো আছে বইলা আমার কাছে মনেহয়। এখন চরমোনাইয়ের পীর তো মাইরও খাইছেন আওমিলিগের কাছে। (হিরো আলমও খাইছিল, কিন্তু উনার আওমিলিগে জয়েন করতে সমস্যা হয় নাই।) তারপরও এই সন্দেহের কারণ হইতেছে, উনাদের কর্মসূচিতে সরকারি কোন বাধা নাই। একটু বিরোধিতা করতে করতে উনারা যদি শেষমেশ ইলেকশনে পার্টিসিপেট করেন তাইলে ‘প্রমাণ’ করা সহজ হবে যে, দেখেন, একটা দল তো চইলা আসছে! উনারা বিরোধিদলের সাথে ছিলেন, কিন্তু এখন আমাদেরকে বিশ্বাস করতেছে! বিরোধিদল তো আছে ইলেকশনে!

আর এইরকম একটা বা কয়েকটা বিরোধিদলই দরকার আওমিলিগের, নয়া বাকশালের। আর এইখানে চরমোনাইয়ের পটেনশিয়ালিটি আছে।

জামাতে ইসলামরে তো আমি বলবো যে, জোর কইরাই মাঠে নামানো হইতেছে! এক তো হইতেছে উনাদের সিনিয়র সব লিডারদেরকেই মাইরা ফেলা হইছে, ডেডিকেটেড কর্মিদেরকে ছত্রভঙ্গ কইরা দেয়া হইছে, তারপরে যেইটা আছে, সেইটা বিএনপি’র জন্য পজিটিভ কোন ফোর্স না, মিডল-গ্রাউন্ড ধইরা রাখার জন্য। সেকুলারদের যেই হতাশা যে, জামাতরে মাঠে নামানো হইছে যাতে কইরা বিএনপি’রে ‘জঙ্গি’ ও ‘ইসলামি’ ট্যাগ দেয়াটা সহজ হয় – এইটা ইন রিয়ালিটি সত্যি না হইলেও, বাকশালি-মিডিয়া অলরেডি নামতা জপা শুরু করছে। আওমিলিগরে বিশ্বাস করার মতো পাপ জামাতে ইসলামি করবে না – ঘটনাটা এই জায়গাটাতে নাই আসলে, ঘটনাটা হইতেছে আওমিলিগের সার্পোট ছাড়া জামাতে ইসলামির নড়চড় করার কোন ক্ষমতা এখন আছে কিনা। যদি না থাকে, তাইলে তো আওমিলিগ যা বলবে সেইটাই করতে হবে তারে। এইক্ষেত্রে যারা ডেডিকেটেড জামাতে ইসলামির সার্পোটার তাদের বরং সাবধান হওয়ার দরকার আছে। এই বাকশাল-বিরোধি আন্দোলনে তাদের এচিভ করার মতোও কিছু নাই আসলে। কিন্তু যদি আওমিলিগের দাবার ঘুটি হিসাবে ইউজড হন, তাইলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা আসলে নাই-ই হয়া যাবে।

গণ-অধিকার পরিষদ এবং গণতন্ত্র মঞ্চের আসলে এখনো কোন সিগনিফিকেন্ট পিপল-বেইজ নাই; যার ফলে উনাদের যেই সম্ভাবনাটা আছে ফিউচারের বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে, আওমিলিগের লগে ইলেকশনে গিয়া অইটা হারানোর মতো ভুল কাজ উনারা করবেন না বইলাই মনেহয়। গণফোরামের বুড়াগুলা তো মনেহয় রিটায়ার করছেন।

এইসব কিছু বলতেছি একটা জিনিস মাথায় রাইখা যে, এই আওমিলিগ কোন গণতান্ত্রিক দল না এখন, এই নয়া বাকশাল হইতেছে শয়তানের মতো ডেডলি; ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন কোন আকাম-কুকাম নাই যেইটা তারা করার ট্রাই করবে না। এই শয়তানের দলের লগে যে হাত মিলাবে সেই দল আসলে শয়তানের কাছে নিজেদের আত্মা বেইচা দেয়ার কাজটাই করবে। এবং কখনোই শয়তানের হাত থিকা রেহাই পাবে না আসলে।

আমি বলতে চাইতেছি, আওমিলিগরে একটা ইভিল হিসাবে ভাবতে পারতে হবে আমাদেরকে, তা নাইলে এইটা কি কি খারাপ-কাজ করছে, করতেছে এবং করতে পারে – সেই আন্দাজ ঠিকমতো করতে পারবো না আমরা। এইটা বেশিরভাগ কেইসেই অন্য কোন দলের বা মানুশের তাদের ট্রাপে পাড়া দেয়া না, বরং আওমিলিগরে একটা শয়তান হিসাবে ভাবতে না পারার রেজাল্টই অনেকবেশি।

০৫.১১.২০২৩

আজকে সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরার পথে দেখতেছিলাম হাতে রশি বাইন্ধা দুইটা ইয়াং পোলারে রাস্তা দিয়া হাঁটায়া হাঁটায়া নিয়া যাইতেছে পুলিশ। একটা পাবলিক ডিসপ্লে করতেছে যে, দেখো, বিএনপি’র লোকজনরে কেমনে শাস্তি দিতেছি।

রাস্তার মানুশ-জন ভয়ে ভয়ে ছেলে দুইটারে দেখতেছে। কিন্তু ছেলে দুইটার চোখে মুখে কোন ভয় নাই!

ভয়-পাওয়া মানুশগুলা শরমে নিজেদের চোখ ফিরায়া নিতেছে। হয়তো বাসায় গিয়া টিভি-নিউজের মিথ্যাটা দেখবে। চোখের সামনে সত্যিটা দেখার সাহস আমাদের নাই।

আজকে হাজার হাজার বিএনপি’র নেতা-কর্মিদেরকে খালি জেলে ঢুকানো হইতেছে না, এইটা দিয়া বাংলাদেশের সব মানুশকে মানসিকভাবে হাজতে ভইরা রাখা হইতেছে; যেন আমরা ভয় পাই! বাকশালি টিভি-পত্রিকার বাইরে যেন আমরা না তাকাই!

আজকে দুনিয়ার সবচে বড় জেল-হাজতের নাম হইতেছে বাংলাদেশ!

এই বড় জেল-হাজত’টাতে কন্ট্রোল ধইরা রাখার জন্য ছোট ছোট জেলখানাগুলায় লোক ভরাট করা হইতেছে। ছোট জেলখানাগুলা উপচায়া পড়তেছে, আমাদের ডরের কিনারায় চলে আসতেছে। আমরা বাকশালি টিভি-পত্রিকার কাছে আমাদের চোখ ও কান বন্ধক দিয়া রাখছি।

কিন্তু বাজারে গেলে মন বন্ধক দিতে পারতেছি না। পেঁয়াজের ঝাঁঝে আমাদের চোখে পানি চইলা আসতেছে। কিন্তু কানতে পারতেছি না। যদি আমাদেরকে আবার বিএনপি বানায়া দেয়!

আমরা বিএনপি হইতে চাই না। আমরা চাই না পুলিশ-রেব কোমরে দড়ি বাইন্ধা আমাদের পাবলিক ডিসপ্লের ভিতর দিয়া ছোট জেলখানাতে নিয়া যাক! আমরা বড় জেলখানাতেই থাকতে চাই।

দুইটা ইয়াং ছেলেরে আজকে পুলিশ বাজারের ভিতর দিয়া দড়ি বাইন্ধা জেলেখানাতে নিয়া যাইতেছিল। আমরা দেখি নাই।

/আজকে সন্ধ্যাবেলায়, বাজার ভিতর দিয়া দুইটা ইয়াং ছেলেরে পুলিশ দড়ি দিয়া বাইন্ধা নিয়া যাইতেছিল…

০৭.১১.২০২৩

৭ই নভেম্বরের সিগনিফিকেন্স: মিলিটারি, ডেমোক্রসি ও পলিটিকাল পাওয়ার
হইতেছে, মিলিটারির সিপাহীরা এইখানে রিলিভেন্ট হয়া উঠেন। এবং প্রো-পিপল একটা জায়গা তৈরি হয়। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ডেমোক্রেটিক-শাসনের বেইজ তৈরি হইতে থাকে।
৬. এই ডেমোক্রেটিক শাসন আবারো বাধাগ্রস্থ হয় এরশাদের ক্ষমতা দখলের ভিতর দিয়া; আর ১৯৯১ সালের ইলেকশনের ভিতর দিয়া মিলিটারি-শাসনের অবসান ঘটে বাংলাদেশে।
৭. ডেমোক্রেটিক শাসনের প্রক্রিয়া আবারো হুমকির সামনে পড়ে ২০০৭ সালের ১/১১-এর ঘটনায়। মিলিটারি, সরকারি আমলা ও নিউজ-মিডিয়া একটা প্যাক্টের মাধ্যমে পলিটিকাল ক্ষমতার জায়গাতে এক ধরণের ইভিল-সার্কেল তৈরি করে।
৮. ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারি “বিডিআর হত্যাকান্ড”র ভিতর দিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে মিলিটারি পাওয়ারের জায়গাটারে অনেকটাই নিউট্রাইলজড করা হয়।
৯. কিন্তু এর পরে, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক শাসন-ব্যবস্থা পাই নাই, বরং এক ধরণের নিউ ফেসিস্ট – ‘নয়া বাকশালের’ শাসন-ব্যবস্থার ভিতরে আমরা আছি।
৩.
আমি বলতে চাইতেছি, ৭ই নভেম্বর’রে একটা পাল্টা মিলিটারি ক্যু হিসাবে মিনিমাইজ করা, বা একটা ব্যর্থ বিপ্লব হিসাবে গ্লোরিফাই করার চাইতে পলিটিকাল পাওয়ার এবং ডেমোক্রেসির জায়গাটাতে মিলিটারির রোল’টা কি ছিল এবং কিভাবে ছিল – সেইটা রিলিভেন্ট একটা আলাপ হইতে পারে।
বিপ্লব-চিন্তারে না, বরং যখন পিপলরে আমরা আমাদের চিন্তার বেইজ হিসাবে নিতে পারবো, তখনই এইটা সম্ভব হইতে পারবে আসলে।
[*সুদীপ্ত কবিরাজ এই জিনিসটা খুব রাইটলি আইডেন্টিফাই করছেন যে, ইন্ডিয়ার বাংলা-প্রদেশের কমিউনিস্টদের মেইন ফেইলওর হইতেছে, উনারা ডেমোক্রেসির জায়গাটারে কিভাবে ডিল করবেন – সেইটা ডিসাইড করতে পারেন নাই; গণ-বিপ্লবের মধুর চিন্তার ভিতরে মাছির মতন ডুবে গেছেন; এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্টরাও যেহেতু বাংলা-প্রদেশের কমিউনিস্টদেরই একটা উপ-দল, উনারাও একই ধরণের নেরেটিভের কান্ডারি; যার ফলে উনারা খালি কলকাতা-বেইজড সাহিত্যেরই পূজারি না, ডেমোক্রেটিক-শাসনের জায়গাটারও ঘোর বিরোধি। এই থিওরেটিকাল কারনে উনারা, ‘ব্যর্থ বিপ্লব’র সাথী ও সারথি’রা পরে নয়া বাকশালের সহযোগি হইতে পারছেন, ইজিলি।]

০৮.১১.২০২৩

আমার চারপাশে, এমনকি ফেইসবুকের নিউজফিডেও তো দেখি লোকজন ক্রিকেট নিয়া খুবই বিজি; কিছুদিন অনেক টেনশন করলেন, চেত-বেত দেখাইলেন; এখনো দেখি। তো, ফেইসবুকে মুখের এক্সপ্রেশন তো দেখা যায় না, সামনাসামনি যখন কেউ ক্রিকেট-প্রেম দেখান তখন তাদের চেহারাগুলা দেখি। উনারা যে ক্রিকেট-পাগল লোকজন তা না, আগে পলিটিক্স নিয়াও কথা কইতেন, টিভি-পত্রিকার নিউজ নিয়াও, কিন্তু এখন এই মিডিয়া-জম্বি লোকজনও টিভি-পত্রিকার নিউজ নিয়া কথা কইতে পারেন না; যেই পরিমাণ দুর্গন্ধ বাইর হয়, সেইটা নিজেরাই মনেহয় আর নিতে পারেন না। যার ফলে ক্রিকেটই ছিল এই কয়দিন ভরসা! এইরকমের বিজিনেসগুলা কি যে আরামের! দিনের বেলা গরুর মত ঘাস খাওয়া, তারপরে রাতেরবেলা জাবর কাটতে কাটতে ঘুমায়া পড়া!

/ক্রিকেট-লাভার

০৯.১১.২০২৩

কিছুদিন আগে এইরকম একটা ‘ফেসবুক বাণী’* দেখতেছিলাম যে, বাংলাদেশের যত না-খাওয়া মানুশ আছে, তাদের খাওয়া-দাওয়া ভুড়িওলা লোকেদের পেটে গিয়া ঢুকতেছে; তো, এইটা ভুয়া-কথাই না, বরং মিডল-ক্লাস স্বাস্থ্য-সচেতন লোকদের বডি-শেইমিংয়ের একটা ঘটনা।

এরা রিকশাওলাদের গতরে মাংস দেখলেও হিংসা করে! বলে যে, এখন তো আর প্যাডেল মাইরা রিকশা চালাইতে হয় না, ব্যাটারিতে চলে, এই কারণে শরীরে চর্বি জমতেছে! মানে রিকশাওলারা কেন জীর্ণ-শীর্ণ, মন-মরা ও দুখী না! কারণ তা নাইলে তো তাদেরকে করুণা করা যাইতেছে না!

তো, বাংলাদেশের আসল টাকাওলা লোকদের দিকে তাকায়া দেইখেন একবার, মোটামুটি সবারই সোহেল তাজের মতো ফিট বডি; যে কোন ১০ জনের নাম নেন, এবং কম্পেয়ার কইরা দেখেন এদের বেশিরভাগেরই ভুড়ি নাই; কারণ উনাদের জিম করার মতো এনাফ টাকা ও টাইম আছে। উনাদের হয়া টাকা কামাইয়ের কাজটা ভুড়িওলা লোকেরা বরং কইরা দেন; বা রাস্তা-ঘাটে পোড়া মবিলে ভাজা পুরি-সিঙ্গারা খাইয়া পেট ফুলায়া রাখতে হয় গরিবদের।

ইউরোপ-আম্রিকাতেও দেখবেন হোমলেস লোকজনের অনেকেই ওবিসিটিতে ভুগেন বইলা মোটা; উনারা প্রচুর খাইতে থাকেন বইলা মোটা না, বরং সবসময় বাজে-খাবার, প্রসেসড-ফুড খাইতে হয় বইলা এই অবস্থা। বাংলাদেশেও ভাত-মাছ-শাক-সবজি দিয়া ভাত খাওয়ার চাইতে ভাজা-পোড়া বা বেকারির প্রসেসড-ফুড ৪/৫ গুণ কম দামে খাওয়া যায়। অথচ অনেকরে দেখবেন শরীর-স্বাস্থ্য ভালো হইলে কোন ফকির’রে ভিক্ষাও দিতে চায় না। কেন, শরীর তো ভালো, কাজ-কাম কইরা খাইতে পারে না!

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ভুড়িওলা, ‘শরীর-স্বাস্থ্য একটু ভালো’ লোক মানেই টাকাওলা লোক না, টাকাওলা লোকেরা বরং বেশিরভাগে কেইসেই ফিট-ফাট, শরীর-সচেতন এবং ‘ফর্সা’ ও ‘সুন্দর’ (মানে, যেইসব জিনিসগুলারে সুন্দর বইলা মার্ক করি আমরা)। আর এইটারে মার্ক না করার মতো যারা ইনোসেন্ট, আমি ভাবি তাদের জীবন কতই না আনন্দের একটা ঘটনা!

*দুনিয়ার সবচে ক্রিপি জিনিস হইতেছে এই ফেসবুক-বাণী, এইগুলা সত্যি-মিথ্যার চাইতে অনেক বেশি ট্রেন্ডি ও টেম্পরারি ফিলিংসের ঘটনাই…

১১.১১.২০২৩

আর্ট এজ এন সোশিও-পলিটিকাল প্রডাক্ট: এ.আর. রহমানের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট…’-এর ফেইলওর

আমার ধারণা, এ, আর. রহমানের সুরটা শুনলে কাজী নজরুল ইসলাম মোটেই খেপতেন না, বেশি হইলে একটু হাসাহাসি করতেন, এর বেশি কিছু না। এইটা মনে হওয়ার কারণ হইতেছে কাজী মোতাহার হোসেনের একটা অবজারভেশন। (কোটেশনটা লেখার শেষে রাখতেছি।) অইখানে কাজী মোতাহার হোসেন বলতেছেন ‘সামান্য রদবদলে’ তেমন আপত্তি করতেন না কাজী নজরুল ইসলাম, যেইখানে রবীন্দ্রনাথ একটু এইদিক-সেইদিক হইলে প্রচন্ড মাইন্ড করতেন!

কিন্তু ঘটনা এইটাও না, এ.আর. রহমান তো আর গানটার ‘সামান্য রদবদল’ করেন নাই, রি-ক্রিয়েট করছেন গানটারে; তো, এই জিনিসটা কাজী নজরুল ইসলামের পছন্দ না হইলেও এই রি-ক্রিয়েশনের জায়গাটা উনি বুঝতেন, এবং এ.আর. রহমানের চাইতে তার সুরটাই যে ফার ফার বেটার এইটা বুঝতে পাইরা একটু হাসতেন।

এখন ঘটনা হইতেছে, একদল রবীন্দ্র-পূজারির জায়গায় নজরুল-মুরিদ পাইতেছি আমরা কালচারাল দুনিয়ায়, যারা মনে করেন একজন আর্টিস্টের কাজ হইতেছে ‘পূত পবিত্র’ জিনিস, একচুল নড়চড় করা যাবে না, একটা শব্দ এইদিক-সেইদিক করা যাবে না, রিডিংয়ের বা মিনিংয়ের কোন ‘ব্যতয়’ ঘটানো যাবে না! মানে, অডিয়েন্স হিসাবে আপনার ‘মর্যাদা’ ডিপেন্ড করতেছে যেন একটা সেন্স অফ অরিজিনালিটির উপর! এইটা খালি ইনসেইন একটা ঘটনা না, এই যে অডিয়েন্স হিসাবে ‘মর্যাদা’ দাবি করাটা – এইটা টু সাম এক্সটেন্ড একটা শেইমফুল ঘটনাই।

২.
এই কথা বলার পরেও, এইটা তো বলা-ই লাগবে যে, এ.আর. রহমানের সুরটা শুইনা আমারও হাসি-ই পাইছে। এই কারণে না যে, এইটা ফানি একটা সুর হইছে বা ‘বুলন্দ’ ব্যাপারটার বারোটার বাজায়া দিছেন; এইগুলা তো আছেই; বরং, যেইভাবে উনি গানটারে রিড করছেন সুর করার সময়ে সেইটা আর ভুল থাকে নাই, একটু ফানিও হয়া উঠছে। মানে, দিন কে দিন আর্ট-কালচার একটা পলিটিকাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের লগে রিলিটেড একটা ঘটনা হয়া উঠতেছে; কোন কনটেক্সট থিকা আপনি দেখতেছেন, সেই বেইজটাই আর্টের জায়গাটারে তৈরি কইরা দিতেছে – গ্রেট বানায়া তুলতেছে, বা ফালতু মনে হইতেছে। মানে, একটা পলিটিকাল অরিয়েন্টশন আর্ট-ক্রিয়েশনের লগে সবসময় এফিলিয়েটড ছিল, কিন্তু এখন আরো ক্লোজলি রিলিটেড।** এ.আর. রহমান এই জায়গাটাতে গ্রস একটা মিসটেক করছেন।

কাজী নজরুল ইসলামরে উনি কলোনিয়াল কলকাতার একজন আর্টিস্ট হিসাবে দেখছেন, ইন্ডিয়ার বাংলা প্রদেশের রিজিওনাল একটা প্রডাক্ট হিসাবে। উনি যে বাংলাদেশ আইডেন্টিটির একজন আর্কিটেক্ট – এই জায়গা থিকা দেখতে পারেন নাই। যেই কারণে দেখবেন, ইন্ডিয়ান মিউজিশিয়ানরা নুসরাত ফতেহ আলী খান’রে কপি করতে পারে না বা অনেক পাকিস্তানি লিজেন্ডরেই; এই কারণে না যে কাওয়ালি সিঙ্গারদের গলা অনেক ‘বুলন্দ’ (যেইটা হাহাহিহি করা হিন্দি-সিঙ্গার পারে না কিন্তু অইটা একটা এক্সটার্নাল ঘটনাই); বরং উনাদের কালচারাল ও পলিটিকাল অরিয়েন্টেশনের জায়গাটাই উনারা মিস কইরা যান; যার ফলে খুব বাজে-ধরণের কপি হয়, আর্ট হিসাবে সাসটেইন করতে পারে না। (যেমন ধরেন, জেমসের গান কে.কে.’র দিয়া গাওয়া ফিল্ম-ফেয়ার এওয়ার্ড দিলেও অইটা জেমসের গানই থাকে।)

আর্টিস্টরা, রাইটার’রা হইতেছে আসলে ফিউচার-থিংকার, উনারা উনাদের আর্টের ভিতর দিয়া এমন একটা অডিয়েন্সরে, জনগোষ্ঠীরে প্রজেক্ট করেন যেইটা এখনকার মোমেন্ট নাই-না, বরং তৈরি-হওয়ার ভিতরে আছে; এবং মানুশ-জন যখন আর্টিস্টের, রাইটারের অই ফিলিংসের জায়গাটাতে পৌঁছাইতে পারে তখন আসলে আর্ট-ওয়ার্কটা একটা আইডেন্টিটি হয়া উঠে; যেমন ধরেন, ইকবাল হইতেছেন পাকিস্তান-ধারণার একজন আইকন, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজও। যেই কারণে দেখবেন বাংলাদেশের যারা ‘ইসলামি-কবি’ (ফররুখ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা…) উনারা পাকিস্তান আমলে ইকবালেরই মুরিদ ছিলেন, কাজী নজরুল ইসলামরে উনাদের ‘আদর্শ’ হিসাবে নেন নাই; বরং একেকজন ‘নতুন রবীন্দ্রনাথ’ হইতে চাইছেন। যিনি বা যারা একটু-আধটু নিতে পারছেন (যেমন, জসীমউদ্দিন) উনারা নজরুলরে প্রেইজ করতে পারছেন।

আমি বলতে চাইতেছি, আর্টের রিডিং আর্ট-ক্রিয়েশনেরই একটা পার্ট। ভুল-রিডিং দিয়া আপনি ট্রু-আর্ট ক্রিয়েট করতে পারবেন-না না, এইটা এখনকার সময়ে টাফ। আর এ.আর. রহমানের মিউজিকটা এর একটা ভালো উদাহারণ।

৩.
আমার কথাটারে যদি আরেকটু ডিটেইল করি, তাইলে বলবো, এ.আর.রহমান ইন্ডিয়ার বাংলা-প্রদেশের একটা গানরে রি-ক্রিয়েট করছেন; দেখছেন যে এইখানকার মিউজিশিয়ানরা কি করেন – একটু দোতারা বাজান, সুরেলা গান গান… তো, এই জিনিসগুলারে উনি ইন-করপোরেট করছেন উনার মিউজিকে। নজরুলের অন্য অনেক গানের ব্যাপারেই এইটা করলে বেটার একটা জিনিস হইতে পারতো। কিন্তু নজরুল তো বাংলা ফোক-সংয়ের একটা এক্সটেনশন না! আর এই ‘ফোক সং’-এর জায়গাটারেও ইন্ডিয়ান-বাংলার মিক্লা-টোন দিয়া ধরতে পারবেন না আপনি, অইগুলা মোস্টলি সিলঅটি, ভাটিয়ালি, ভাওইয়া… গানের একটা পুওর মেনিফেস্টশন। এখন নকলরে বেইজ করলে তো আর আসল পাওয়া যাবে না। যার ফলে, এ.আর. রহমান আরেকটা ‘নকল সুরের’ কাছে গিয়াই পৌঁছাইছেন।…

আর যে কোন গ্রেট আর্টিস্টের মতোই, নজরুলের নিজের কিছু ক্রিয়েশন আছে। গজল, কাওয়ালি বা কিছু দেশি-গানের সুর উনি নিছেন, কিন্তু উনার ‘অরিজিনালিটি’ হইতেছে বাংলা-রক গানের পাইওনিয়ার হিসাবে; যেইটা ১৯৭১-এর পরে বাংলাদেশের ব্যান্ডের গানে পাইবেন। মানে, সলিল চৌধুরি, ভূপেন হাজারিক বা ফকির আলমগীররা অই জায়গাগুলা এক্সপ্লোর করতে পারেন নাই। অনেক পরে আইসা আজম খান, জেমস, এবং কিছু অল্প-পরিচিত ব্যান্ডরা উনাদের কাছ থিকা সাহস পাইয়া সেইটা পারছে। (রাধারমণ, হাছন রাজা, লালন, আবদুল করিম, রাজ্জাক দেওয়ানদের সাথে রিলেশনের জায়গাটারে কিছুটা কানেক্ট করতে পারছেন। খেয়াল করলেন দেখবেন, সব ব্যান্ডের ক্যাসেটেই একটা-দুইটা কইরা ‘ফোক সং’ থাকতো…) উদাহারণ হিসাবে কাজী নজরুল ইসলামের গানের কয়েকটা রক-ভার্সন দিতেছি।*** আমার ধারণা, কাজী নজরুল ইসলাম বাঁইচা থাকলে, এইরকম রি-ক্রিয়েশন দেখলে খুশি হইতেন, ‘মারহাবা, মারহাবা’ বলতেন! 🙂

তবে সবচে স্যাড ঘটনা হইতেছে, এখন এ.আর.রহমান যে তার ভুল পলিটিকাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা অরিয়েন্টশনের কারণে ফেইলড হইছেন – তা না, বরং একটা ‘ইন্ডিয়ান মিউজিকের’ জায়গা থিকা যে কাজী নজরুল ইসলামের গানরে একোমোডেড করতে চাইতেছে – সেইটা; আর ব্যাপারটা ঠিক স্যাডও না, বরং চিন্তার কথাই একটা। এই জায়গাতে যদি উনি সাউথ-এশিয়ান আইডেন্টিটি বা ওয়ার্ল্ড-মিউজিকের কনটেক্সট থিকা রিড করতে চাইতেন তাইলেও মেবি বেটার একটা ক্রিয়েশন হইতে পারতো।

এমনিতেও রক-মিউজিক এ.আর. রহমানের সবচে উইক-পয়েন্টই, উনার এন্টায়ার মিউজিক-ক্যারিয়ারে।

ব্যাপারটা (এই পলিটিকাল ‘ভুল’টা) খালি এ.আর. রহমানের না, ওয়ার্ল্ড-কর্পোরেটগুলা বাংলাদেশরে একটা ইন্ডিয়ান টেরিটোরি হিসাবেই কন্সিডার করে – নেটফ্লিক্স, এমাজন, ফেইসবুক, টুইটার, কোকা-কোলা, পেপসি, গার্ডিয়ান, নিউজউইক… মোটামুটি সবাই। এবং বাংলাদেশের মার্কেট দখল করার লাইগা ইন্ডিয়ান কালচারাল প্রডাক্টগুলাতে ‘বাংলাদেশি’ জিনিসপত্র আরো আরো ইনক্লুড করতে থাকবে তারা, ফিউচারে। তো, এইখানে তর্ক’টা মোটেই এইটা না যে, জিনিসটা এনাফ ‘বাংলাদেশি’ হইছে কিনা, বরং বাংলাদেশের অডিয়েন্সের কাছে সেইটা রিচ করতে পারতেছে কিনা! খারাপ হোক, ভালো হোক রিচ করতে পারাটা হইতেছে ইনিশিয়ালি সাকসেসর ঘটনা, এরপরে ‘কালচারালি কারেক্ট’ তো কইরাই নেয়া যাবে।

আমার মতে, এইটাই হইতেছে সবচে চিন্তার ঘটনা। যে, বাংলাদেশের কালচারাল-প্রডাক্টগুলা ইন্ডিয়াতেই তৈরি হইতেছে অনেকদিন থিকা (কলকাতা বা মুম্বাই) আর সেইটাই যে হইতে থাকবে – এর একটা কনর্ফামেশনও এইটা। আর এইটা ঠিক ইন্ডিয়ার পলিটিকাল সাকসেস না, মোস্টলি বাংলাদেশের কালচারাল ফেইলওরের ঘটনা একটা। বাংলাদেশের কালচারাল কনটেক্সটে হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, ইংরেজি… নানান ইনফ্লুয়েন্স থাকবেই, কিন্তু সেই জিনিসগুলারে কোন বাংলাদেশি-বেইজ থিকা না দেখতে পারাটাই কোর ঘটনা এইখানে।

এই জায়গাটা এখনো আইডেন্টিফই করতেই আমরা রাজি না, এর এফেক্টটারে ইনটারনাইলজ করতে পারাটা তো আসলে আরো অনেক দূরের ঘটনাই…

*“এখানে আরও একটি বিষয় আলোচিত হতে পারে সেটা সঙ্গীতের স্বরলিপি-ঘটিত বিষয়। রবীন্দ্রনাথের অনুমোদিত প্রয় ছাব্বিশ খানা স্বরলিপি এবং মোহিনী সেনগুপ্তাকৃত “রবীন্দ্রসঙ্গীত স্বরলিপি” যা রবীন্দ্রনাথ অনুমোদন করেছিলেন সে-গুলোর কাঠামো-ভিত্তিক রূপ ছাড়া অন্যরূপে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে দিতে রবীন্দ্রনাথের প্রচণ্ড আপত্তি ছিল। অথচ নজরুলের অনুমতি নিয়ে যে-সব গানের স্বরলিপি তাঁর জীবিতকালে প্রকাশিত হয় উৎকর্ষ সাধন হেতু তার সামান্য রদবদলে তিনি তেমন আপত্তি করতেন না। এটা ভাবতে অবাক লাগে যে রবীন্দ্রনাথ, যিনি পুরনো রীতিকে ভেঙ্গে স্বাধীন রীতির জন্ম দিলেন, তিনিই স্ববিরোধিতা করলেন সঙ্গীতের শিক্ষকদের অভিনবত্ব দানের জন্য তাঁর গান গাইবার স্বাধীনতা দিতে অস্বীকার করে।”

/আমার বন্ধু নজরুল : তাঁর গান, কাজী মোতাহার হোসেন,

**দুই-চাইর বছর আগে এইরকম একটা আলাপ হইছিল যে, একজন রাইটারের পারসোনাল লাইফ, ফেইসবুক এক্টিভিটি দিয়াও তার আর্টরে জাজ করবে মানুশ-জন; আমি তখন অই জিনিসটারে একসেপ্ট করি নাই, বরং আমার কথা যে, এইগুলা সবসময়ই ছিল, থাকবেও; বরং একজন রাইটারের সোশিও-পলিটিকাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা তার আর্ট-ক্রিয়েশনের জায়গাটারে এফেক্ট করতো, করে এবং করবেও আসলে; যেই জায়গাটা এতোদিন এতোটা চোখে পড়তো না আমাদের, এখন সেইটা ক্রুশিয়াল একটা জায়গা হিসাবে এমার্জ করতেছে…

***
ঝর্নার মত চঞ্চল: https://www.youtube.com/watch?v=lArX_cnBMlo
চল চল চল: https://www.youtube.com/watch?v=PpXBTZacycw
কান্ডারি হুশিয়ার: https://www.youtube.com/watch?v=AwLUf-xVk8s
শিকল পরা ছল: https://www.youtube.com/watch?v=E7m03NbnXGg
কারার ঐ লৌহকপাট: https://www.youtube.com/watch?v=fUB3OP67lC0

১৩.১১.২০২৩

ভায়োলেন্স ইন পলিটিকাল মুভমেন্ট

কয়দিন আগে একটা জায়গায় দেখতেছিলাম, একজন ব্রিটিশ সরকারি অফিসিয়াল ইন্ডিপেন্ডেসের পরে ইন্ডিয়াতে আইসা একটা পারসোনাল কথা-বার্তায় বলতেছেন, গান্ধী’র অহিংস আন্দোলনের ডরে তো ব্রিটিশরা তাড়তাড়ি কইরা ইন্ডিয়া ছাইড়া যায় নাই, বরং সুভাষ চন্দ্র বসু যে একটা মিলিটারি ওয়ারের প্রিপারেশন নিতেছিল, সেই কারণে তারা ডরাইছিল; কারণ সেকেন্ড ওয়ার শেষে ব্রিটিশ আর্মি’র অবস্থা ছিল খুবই কাহিল, আরেকটা যুদ্ধ করার মতো অবস্থা তাদের ছিল না; মানে, ভায়োলেন্সের ডরে তারা কলোনি ছাইড়া দিছিল। নো ডাউট, যিনি এইটা কোট করছেন, তিনি সুভাষ-ভক্ত একজন লোক ছিলেন, কিন্তু কথাটার মধ্যে কিছুটা সত্যি তো আছেই। মানে, ভায়োলেন্স করতেছেন না, কিন্তু ভায়োলেন্স করার কেপাবিলিটি আছে, এইটা একটা ইম্পর্টেন্ট ঘটনা।

সাউথ আফ্রিকাতে ন্যাশনাল কংগ্রেস যখন অহিংস আন্দোলন কইরা পারতেছিল না, তখন নেলসন মেন্ডেলা অস্ত্রপাতি যোগাড় কইরা একটা গেরিলা ওয়ারের প্রিপারেশন নিতেছিলেন; উদ্দেশ্য এইটা ছিল না যে, সেনাবাহিনির বিরুদ্ধে উনারা যুদ্ধ করবেন, বরং একটা পলিটিকাল প্রেশার তৈরি করার জন্য এইটা মাস্ট ছিল। ৩৫ বছর জেল খাটছেন এর জন্য, কিন্তু এইটা যে দরকারি কাজ ছিল, এইটা উনি সবসময় বলছেন, উনার অটোবায়োগ্রাফিতেও লেখছেন। মানে, খালি রেভিউলেশন-ই না, একটা সিস্টেমেটিক পলিটিকাল মুভমেন্টেও ভায়োলেন্সের কিছু এলিমেন্ট থাকে; সেইটার উদ্দেশ্য একটা টোটাল-ওয়ার না, বরং জুলুমের জায়গাটারে স্পষ্ট কইরা তোলার জন্য দরকার পড়ে।

কিন্তু এই ভায়োলেন্সটা যখন সারফেইস লেভেলে চইলা আসে, সরাসরি এনকাউন্টার শুরু হয়, তখন সেইটা এর এক্সপেক্টেড রেজাল্ট বেশিরভাগ সময়েই আনতে পারে না, বা অন্য রকম একটা জিনিস হয়া পড়ে। তখন কাউন্টার-ভায়োলেন্স শুরু হয়; আর এইটা কখনোই ডিজায়ারড রেজাল্ট নিয়া আসতে পারে না, বরং জালিম অনেক সময় জুলুমের পক্ষে ‘যুক্তি’ হিসাবে ইউজ করে, বা করতে পারে।* মানে, জুলুম যদি কন্টিনিউ হইতে থাকে তাইলে জালিমেরও হারানো কিছু আছে, সে-ও সিকিওরড থাকতে পারবে না – এই ডর’টার দরকার আছে, কিন্তু যখন এইটা রিয়ালিটি হিসাবে সামনে চইলা আসে তখন এর এফেক্টিভনেস থাকে না আসলে ততটা, বা অনেকসময় ব্যাক-ফায়ারও করতে পারে, এবং খুব কম সময়েই ‘বিপ্লব’ সংগঠিত হইতে পারে; এখনকার সময়ে এই চান্স আসলে নাই বললেই চলে।**

২.
তো, আমার সাজেশনটা তাইলে কি? বিএনপি’রে ভায়োলেন্স করতে হবে? পাল্টা-আঘাত করতে পারতে হবে? মোটেও না, বরং সেইটা সুইসাইডাল একটা ঘটনাই হবে। তাই বইলা অবৈধ বাকশালি-সরকারের যে কোন ডর-ভয় নাই – তা না, তারা ডরাইতেছে আম্রিকার স্যাংশনরে; যে বিএনপির মুভমেন্টে পাওয়ার ইউজ করলে সেইটার কারণে নতুন স্যাংশন খাইতে পারে, ডর’টা অইখানে। বা ডর’টা হইতেছে ইকনোমিক অবস্থা আরো খারাপ হইতেছে, বাকশালি-মিডিয়া যতই হাইড করুক, দেশে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা চলতেছে; এবং এইটা আরো বাজে-ই হবে। কিন্তু ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পরে যেইরকম বাকশাল ক্ষমতা ছাড়ে নাই, বরং আরো পোক্ত হইছিল; এখনো ইকনোমিক ক্রাইসিসের কারণে পলিটিকাল-ক্ষমতার একটা রদবদল হইলেও সেইটা ১/১১’র মিলিটারি-আমলাদের শাসনেই ফিরা যাওয়ার চান্সটা বেশি বইলা আমার কাছে মনেহয়।

মানে, আওমিলিগ যদি ইলেকশন করে, এতো বাজে ইকনোমিক অবস্থার পরেও ক্ষমতা না ছাড়ে, পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য বিএনপি কি করতে পারে? শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিং, এমনকি হরতাল-অবরোধও একটা সার্টেন টাইমের পরে ইন-এফেক্টিভ হইতে শুরু করবে, মানে গর্ভমেন্টরে বাধ্য করতে পারবে না আসলে, কারণ পিপলের সাফারিংস দিয়া আওমিলিগের কিছু যায় আসে না তো! তারা নিজেরাই এই কাজে আরো বড় মাস্টার!

তো, ব্যাপারটা এইরকম না যে, ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে’ আন্দোলন কইরা আওমিলিগরে ক্ষমতা থিকা নামানো যাবে না এবং ভায়োলেন্স করতে গেলে সেইটারে আওমিলিগ কেপিটালাইজ করবে; বরং এই যে নেরেটিভ’টা আছে – এর বাইরে না যাইতে পারলে বিপদ। এইটা হইতেছে, ফার্স্ট ঘটনাটা। যেইভাবে ‘শান্তি’ ও ‘ভায়োলেন্স’রে ডিফাইন করা হইতেছে – সেইটা বাতিল করতে না পারলে এফেক্টিভ কিছু করাটা মুশকিল হবে। খালি যুদ্ধই না, যে কোন পলিটিকাল মুভমেন্টও একটা মিডিয়া-ওয়ারের ঘটনা। বাকশালি-মিডিয়া আমাদের চারপাশ দখল কইরা আছে, কিন্তু আমরা জানি যে তারা মিছা-কথা বলতেছে; তারপরও এইটা আছে। এর বাইরে যাইতে পারতে হবে, এট এনি কস্ট।

সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, আওমিলিগরে সোশালি বাতিল করতে পারতে হবে; এমন কিছু এলাকা তৈরি করতে পারতে হবে, যেইখানে আওমি-ভয় আর এফেক্টিভ থাকতে পারবে না; আর এইটাও সহজ কাজ না। যেমন ধরেন, এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে ভার্সিটিগুলা ছিল একেকটা ‘স্বাধীন টেরিটরি’; ১৯৯৬-এ আওমিলিগ খুব ন্যাক্কারজনকভাবে সচিবালয় দিয়া সিভিল-ক্যু করাইছিল, ২০০৭-এ মিলিটারি দিয়া; মানে, কোন একটা জায়গাতে ক্রাক করতে পারাটা জরুরি। সেইটা কেমনে করা যাবে – সেইটা সবসময়ই পলিটিকাল ফিল্ডের ঘটনা। আনফরচুনেটলি কোন এনালাইসিস বা সাজেশন তেমন কোন কাজে দিবে না আসলে। 🙁

১৫.১১.২০২৩

আওমিলিগ সরকারের আন্ডারে ৩টা ইলেকশন হইছে বাংলাদেশে – ১৯৭৩, ২০১৪ আর ২০১৮-তে। সবগুলা ইলেকশনেই অন্য কোন দল অংশ নিতে পারে নাই। এইবারও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোন কারণ নাই।

মানে, আওমিলিগ কখনোই কোন ইলেকশন করে নাই, করবেও না; ইলেকশনের নামে জালিয়াতি করা-ই আওমিলিগের হিস্ট্রি। এইটা নতুন কিছু না।

এইবার ঘটনা’টা হইতেছে, দুনিয়া-শুদ্ধা মানুশ জানে, আওমিলিগ হইতেছে নিও-ফেসিস্টদের দল। আজকে ইলেকশনের তফসিল ঘোষণা করার ভিতর দিয়া আওমিলিগ বাংলাদেশের মানুশের বিরুদ্ধে, মানুশের ডেমোক্রেটিক রাইটসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে আসলে। আর এই কাজ করছে তাদের পালা-পোষা মানুশ নামের কিছু জানোয়ারদের দিয়াই।

১৬.১১.২০২৩

বসুন্ধরা আবাসিকের গেইটে টমেটো’র কেজি ১৬০ টাকা দেইখা কিনি নাই আগের দিন, পরের দিন ভাটারার নতুনবাজারে গিয়া দেখি একই দাম। ৮০ টাকা দিয়া ৪টা মাঝারি সাইজের টমেটো কিনলাম।

একটা টমেটোর দাম ২০ টাকা! নিজের কাছেই খারাপ লাগলো। (নিকেতন গেইটের বাজারে নাকি টমেটোর কেজি ১০০ টাকা। দামের কোন মা-বাপ নাই।) টাকা থাকলেও এই দামে জিনিস কিনা তো ঠিক না! আর আমি না কিনলেও মানুশ-জন তো কিনবেই, কেউ না কেউ। কাদের আছে আসলে এতো আন-লিমিটেড টাকা?

সন্ধ্যার বাজারে আমি ছাড়া ২-৩ জন কাস্টমার। একজন হাফ কেজি মাছ কিনতেছে, মাছের দোকানদার তারে ১ কেজি গছায়া দিতে চাইতেছে, কাস্টমার না, না করতেছে। আরেকজন আমার মতো অফিস-ফেরত শার্ট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোক 🙂 মোটামুটি আমার মতোই কনফিউজড, ব্ল্যাংক-লুক নিয়া মুর্গির দোকানের পাশে, ডিমের দোকানের পাশে ঘুরতেছে।

বাইর হওয়া সময় দেখলাম দুইজন মহিলা আলু, পেঁয়াজ, রসুনের দোকানের সামনে হাফ-কেজি পিঁয়াজ কিনতেছে। দোকানদার জিগাইতেছে, আরো কিছু লাগবে কিনা! উনারা চুপচাপ মনে মনে হিসাব কইরা, দীর্ঘশ্বাস বাইর কইরা কইলো, নাহ্!

বাজারের সামনের দিকে একটা বড় দোকানঘরের মতো জায়গায় দেখি ২৫-৩০ জন মানুশ চুপচাপ একটা টিভি’র দিকে তাকায়া আছে। উইয়ার্ডই লাগলো একটু। দোকানের সাইনবোর্ড দেখলাম – আওমিলিগের অফিস, ভাটারা থানা।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে তখন। গতকালকের কথা। ইলেকশনের শিডিউল ঘোষণা করার পরে ‘আনন্দ-মিছিল’ করবেন মনেহয় উনারা। (উনাদের চেহারাতেও অবশ্য আনন্দ নাই তেমন। মিছিলের টাকা মেবি তখনো তাদেরকে দেয়া হয় নাই।)

রাস্তায় পুলিশ, বিজিবি। রিকশা, মানুশের তাড়াহুড়া। একটা অন্ধকার থিকা আরো গাঢ়, গভীর অন্ধকারের দিকে যাইতেছি যেন আমরা।

/সন্ধ্যার বাজার

১৮.১১.২০২৩

তিন ধরনের ক্রিটিক

যদিও তিন ধরণের বলতেছি, ব্যাপাটার আসলে এতোটা আলাদা আলাদা না, বরং মিক্স এন্ড ম্যাচ টাইপেরই ঘটনা; মানে একটা আরেকটা লগে মিইলা-মিইশা থাকে। এই জিনিসটা মনে হইলো কবি ও সাহিত্যিক মহীউদ্দিনের একটা লাইন পইড়া। [মহীউদ্দীন’রে সেকুলার’রা চিনবেন নিটশের জরাথুস্টের বাংলা-অনুবাদক এবং ইসলামিস্টরা চিনবেন মরু-সুন্দর রাইটার হিসাবে।]

উনার অটোবায়োগ্রাফিকাল একটা লেখাতে মুজাফফর আহমদের (১৮৮৯ – ১৯৭৩, ব্রিটিশ আমলের কমিউনিস্ট লিডার) কথা উনি বলতেছিলেন, এইটারে আমি বলতে চাইতেছি “ক্লাস-সার্ভিস” দেয়া ক্রিটিক:

এলিটক্লাস-সার্ভিস
“মুজফফর সাহেব… বলতেন, যে ব্যক্তি সমাজের যে শ্রেণীর কাছ থেকে বেতন অথবা ভাতা পেয়ে বর্তে থাকেন, সে ব্যক্তি সে শ্রেণীর লোকদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিচার করবেন একজন কবি এবং তার সৃষ্টিকে।”

এইটা বেসিক একটা সার্ভিস, একজন ক্রিটিক যেইটা দিয়া থাকেন, সমাজরে না বরং তার ক্লাস-রে, ক্লাস-এসথেটিকসরে। কিন্তু এইটা খুব লিনিয়ার একটা ঘটনা না, বরং ইনায়া-বিনায়া অই জায়গাটারে এস্টাবলিশ করতে পারতে হয়, এবং বেশ পরিশ্রমের কাজই এইটা; এই সেন্সে যে, সে যে ডমিনেন্ট ক্লাস’রে সার্ভ করতেছে না এই জিনিসটারেও হাইড করতে হয়, একটা সিউডো-এবসুলেট স্ট্যান্ডার্ড ক্রিয়েট করার ভিতর দিয়া, লিটারেরচারের। মানে, যেইটা লিটারারি স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে ক্রিটিকে ইউজ করা হয়, তার বেশিরভাগ জিনিসই হইতেছে আসলে এলিট ক্লাসের এসথেটিকাল মেনুয়াল।

মুজাফফর আহমেদর এই কথা মিছা না, কিন্তু এইটাই একমাত্র ঘটনা না। যেইটা মহীউদ্দীন পরে নিজের’টা পয়েন্ট’টা এড কইরা বলছেন…

ইগো-বুস্টার
“কথাটা অমান্য করি না। তবে আমি বলতে চাই সমালোচক… কেবল একটা ‘বাহাদুরি’ প্রদর্শনের মোহে অগ্রসর হয়ে যায় সৃষ্টির তপস্যার ক্ষেত্রে। অবশেষে সৃষ্টির বেদনা বইতে অক্ষম সে ব্যক্তিটি গ্রহণ করেন সৃষ্টিকে নিন্দা করার কাজ।”

মানে, ক্রিটিকরা খালি একটা ক্লাসের ইগো’রে সেটিসফাই-ই করেন না, নিজের ইগো’রেই সেটিসফাই করেন তার আগে; যে, আমি তো একটু বেশি জানি! মানে, ক্রিটিক একদিক দিয়া একটা ইগো-সেটিসফাইয়িং একটা জিনিসও। (অনেক সময় রাইটারের ইগো-বুস্টিং করার কাজও করেন।) কিন্তু মহীউদ্দীন দাবি করতেছেন, এই জানার প্রাইডের কারণে তার মনের মধ্যে ‘সৃষ্টির বেদনা’রে ফিল করার জায়গাটা তৈরি হইতে পারে না। আর এইটা পুরাপুরি সত্যি না হইলেও পুরাপুরি মিছা-কথা না মেবি; যে আমি যতটুক জানি, ততটুকই যেন জানতে পারার সীমানা – এইটা একটা অবস্টেকলই বেশিরভাগ সময় আর্টরে ফিল করার।

২.
থার্ড-কাইন্ড
হাউএভার, উনারা দুইজনেই ক্রিটিক-করা জিনিসটারে আর্টের বা লিটারেচার’রে লিমিট করার, আটকায়া দেয়া একটা চেষ্টা হিসাবে দেখছেন; এইটা ইন টার্ন এইরকম একটা জায়গাতে গিয়া রিচ করছে যে, ক্রিটিক করা তো ভালো না! (উনাদের ইনটেশন এইটা না হইলেও।) কিন্তু উনারা নিজেরাও ক্রিটিক করছেন, এবং ক্রিটিক করাটা যে সবসময় খারাপ-কাজ না – এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং উনাদের ছিল বইলাই আমার মনেহয়। তারপরও আর্ট ও লিটারেচারের দিক থিকা একটা নেগেটিভ-কাজ হিসাবেই দেখছেন, কারণ উনারা সার্টেন মিনিংয়ের ভিতরে আর্ট-ওয়ার্করে রিডিউস করেন।

এখন ক্রিটিকের কাজ যেমন ‘খারাপ-কথা’ বলা না, একইভাবে ‘ভালো-কথা’ বলাটা একজন ক্রিটিকের কাজ হইতে পারে না (পারসোনাল ইগো’র জায়গা থিকা)। কোন স্ট্যান্ডার্ড’রে সার্ভ করা বা নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করাটাও আসলে ক্রিটিকের কাজ না (সোশাল ইগোর জায়গা থিকা) এতোটা। তবে অবশ্যই আর্টের একটা রিডিং সাজেস্ট করাটা ক্রিটিকের কাজ, আর এইটা করতে গিয়া মিনিংয়ের ভিতরে আর্টরে রিডিউস করাটা ঘটনা না, কিন্তু সোশাল-মিনিংগুলা যে এইখানে এটাচড আছে বা থাকে, সেইটারে বাদ দিয়া আর্টরে কনজিউম করার ঘটনাটা যে ঘটতে পারে না – এই কনফার্মেশনটা ক্রিয়েট করাটা তার কাজ। মানে, এইখানে খালি আর্টের রিডিং থাকে না, আর্টের কনটেক্সটটাও এইখানে ইনক্লুডেড, এবং এইটারে বাদ দিয়া আর্টের রিডিং হইতে পারে না।

এখন ঘটনা হইতেছে, আর্টের এই রিডিং আর্টের উপর এফেক্ট ফেলে, আর্টিস্টরে বা রাইটাররে যেমন তার ট্রু-ফিলিংসের প্রতি সৎ থাকা লাগে, একইভাবে আর্টের রিডিংয়ের প্রতিও কনশাস থাকা লাগে, অনেক সময় এইটা হেল্পফুল ঘটনা, অনেক সময় ডিস্টার্বিংও হইতে পারে; কিন্তু একজন আর্টিস্ট আসলে জানেন, বা তার আসলে খেয়াল করতে পারতে হয়, এমনকি নিজেরও এক ধরণের ক্রিটিক (বা রিভিউ) করতে পারতে হয়।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ক্রিটিক যেমন সুপিরিয়র কেউ না যিনি আর্টরে ডিফাইন করতেছেন (একটা শ্রেণি-স্বার্থ রক্ষা করার জায়গা থিকা), একইভাবে ইনফিরিয়র কেউও না যিনি “আর্ট বুুঝেন না” (একটা পারসোনাল ইগো দিয়া অন্ধ হয়া থাকেন বইলা); বরং একজন ক্রিটিক একটা আর্ট বা লিটারেচাররে দেখার বা পড়ার কিছু তরিকা সাজেস্ট করেন, যেইটা আর্ট বা লিটারেচারের জন্য দরকারি ঘটনাও হয়া উঠে অনেক সময়। মানে, ক্রিটিক যদি বেরিয়ারও হন আর্টিস্টের বা রাইটারের কাজ হইতেছে তারে একসিড করা বা ইরিলিভেন্ট কইরা তোলা।

দুনিয়াতে গ্রেট আর্টিস্ট রেয়ার, গ্রেট ক্রিটিক তার চাইতেও রেয়ার ঘটনা। একজন গ্রেট ক্রিটিকের কাজ সমাজে আর্টের রিলিভেন্সের জায়গাগুলারে একভাবে তৈরি করা। আর এইটা সোশাল অর্থে শ্রেণি-স্বার্থের বাইরে গিয়া এবং পারসোনাল অর্থে ইগো’রে ক্রস কইরা করতে পারাটা টাফ। পারফেক্ট তো কোনকিছুই না, তারপরও এই ডিরেকশনে যতদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়, ততটুকুই ক্রিটিক হিসাবে নিতে পারাটা বেটার।

১৯.১১.২০২৩

মুভি: গ্লাস ওনিয়ন

ভালো-সিনেমা একটু পরে দেখলেও সমস্যা নাই। এই সিনেমাটা অল্প একটু দেইখা রাইখা দিছিলাম। শুক্রবারে পুরাটা দেখলাম। দেইখা ভাল্লাগছে।

দুইটা পয়েন্ট স্পেশালি। যখন খুনের ঘটনাটা রিভিল হইতে শুরু করে, তখন ডিটেকটিভ ডিলিউশানটারে যেমনে এক্সপ্লেইন করে, অই জায়গাটা ইন্টারেস্টিং। যখন মাইলস বলে যে, আরে, ডিউক তো আমার গ্লাসের মদ’টা খাইছে, তার মানে আমারে কেউ মারতে চাইতেছে! তখন সবাই মাইলসের কথা বিশ্বাস করে যে, টেবিলে দুইটা গ্লাসই ছিল অইখান থিকা ডিউক মাইলসেরটা নিয়া নিছে! অথচ ঘটনা হইতেছে মাইলস কায়দা কইরা তার গ্লাসটা ডিউকের হাতে দিয়া দিছে। যখন মাইলস ভুল’ভাবে বলে, তখন সবাই ভুল’টারেই ফ্যাক্ট হিসাবে নিতে থাকে, উইদাউট এনি ডাউট। এইটা হইতেছে চালাকি’টা। নেরেটিভ বা বর্ণনাটাই যখন হিস্ট্রিকাল ফ্যাক্ট হইতে থাকে, তখনই সেইটা বিপদের ঘটনা! আর ডিস্টরশন মোটামুটি হরহামেশাই ঘটতেছে তো!

সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, হেলেন যখন চেইতা গিয়া জিনিসপত্র ভাঙতে থাকে তখন সেইটা অন্যদেরকেও নিজেদের ভারনারাবিলিটি থিকা বাইর হয়া আসতে হেল্প করে। এবং যখন আগুন লাগায়া মোনালিসা পুড়ায়া ফেলে, মাইলসের মেইন এসেটগুলারে নাই কইরা দিয়া তার পাওয়ারের জায়গাটারে কমায়া ফেলে তখন সবাই সত্যি-কথাগুলা বলার সাহসটা করতে পারে। মানে, পাওয়ার একটা ঘটনা, পাওয়ারের সামনে চুপ কইরা থাকি তো আমরা! এবং যখন পাওয়ারের জায়গাটা ভ্যানিশ হয়া যায়, আমাদের ডরগুলা নাই হয়া যায়, কেবলমাত্র তখনই সত্যি কথা বলতে পারি আমরা।

তবে অই জিনিসটা একটু হাস্যকরই, যে একটা ন্যাপকিন-পেপারে একটা কিছু লেইখা একটা কর্পোরেট এম্পায়ার তৈরি কইরা ফেলা, বা একটা মার্কেটিং-গিমিক দিয়া সাকসেসফুল হয়া যাওয়া – এইগুলা আসলে হয় না। গোয়েন্দা কাহিনির প্লটগুলা এই কারণে কিছুটা ঝামেলার আর কি! একটা খুনের ঘটনা বা ক্রিটিকাল ইস্যুটারে বড় কইরা দেখানোর জন্য অন্য অনেককিছুই ঠিকঠাক কইরা না দেখানোটা এই জনরা’টারে এই কারণে কিছুটা “কৈশোরক” বা ইয়াং-এডাল্ট বয়সের ঘটনা কইরা রাখছে। একটা ভিলেন আবিষ্কারের জন্য এইটা মেবি জরুরি না! 🙁

যা-ই হোক, ভালো-সিনেমা দেখতে গেলে এইগুলা একটু-আধটু তো ইগনোর করা লাগেই…

২৭.১১.২০২৩

২০১৪, ২০১৮’র সাথে এইবারের, ২০২৩’র ডিফরেন্স হইতেছে অই সময়ের (সংসদ সদস্য) সঙ’দের নাম আমাদের জানা লাগতো না, এখন মুখস্ত থাকা লাগবে। জালিমের শাসনে, জুলুম কখনোই কমে না, বাড়ে!

মানে, খালি সঙ’দেরই না, এই সঙ’দেরকে যারা নাচাইতেছে সেইসব ডিসি, এসপি, সচিব, আমলা, নেতা, পাতি-নেতা… সবারই নাম মুখস্ত থাকা লাগবে। কোন একটা ‘বেয়াদবি’ করলেই টের পাইবেন কত ধানে কত চাল! জোকারের হাতে ক্ষমতা থাকে, তারে আরো বেশি ক্রুয়েলিটি শো করতে হয়, নিজেরে কম্পিটেন্ট/যোগ্য প্রমাণ করার লাইগা।

ইকনোমিকাল ডিজাস্টার তো আছেই, কিন্তু সেইটারে পলিটিকালি আরো ভিজিবল ইমেজ-পলিটিক্স, সাটল জোকারি এবং আন-স্পোকেন ক্রূয়েলিটি দিয়াই সাপ্রেস করা/দমায়া রাখা হবে।

সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নেড়ে’ গল্প নিয়া

যদিও রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের শুরু ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ, কিন্তু ‘বাংলাদেশি’ বইলা একটা আইডেন্টিটি আসলে তারও আগে লিটারেচারে একভাবে তৈরি হইতেছিল; স্পেশালি ‘পাকিস্তান আন্দোলনের’ ভিতর দিয়া ১৯৪০’র দিকেই ‘পুব-বাংলা’ যে আলাদা একটা ঘটনা – সেইটা স্পষ্ট হইতেছিল; আর ১৯৪৭ সালের ১৪ই অগাস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রে ইনক্লুড হওয়ার ভিতর দিয়া এর পলিটিকাল পরিচয় ক্লেইম করা হইছিল।

কিন্তু গল্প-উপন্যাসে এই জায়গাগুলারে আলাদা কইরা লোকেট করা হয় না বইলা ‘বাংলা-গল্প’ কেটাগরিতেই রিড করি আমরা লেখাগুলারে। যার ফলে এর নিশানাগুলা এখনো স্পষ্ট হইতে পারে না আমাদের কাছে। যেন এই ডিফরেন্সগুলা নাই! কখনো ছিলও না! বা যেন কোন রিজিওনাল সাহিত্যের ঘটনা! এই জায়গা থিকা রিড করার ফলে ফিকশনগুলার পলিটিকাল নিশানাগুলারেও মিস কইরা যাওয়া হয়।

বিফোর পাকিস্তান এটলিস্ট তিনজন ফিকশন-রাইটার – আবুল মনসুর আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম (অল্প হইলেও) এবং সৈয়দ মুজতবা আলী’র ফিকশনে এই জায়গাগুলা লোকেট করা যায় বইলা আমি মনে করি। এই লিংকে সৈয়দ মুজতবা আলী’র একটা ফিকশন পড়তে পারেন।

অন্য সব লেখার তুলনায় উনার এই ফিকশনটা খুব একটা বেশি পরিচিত না, কিন্তু মুসলমান মানে যে একটা নিচু-ক্লাস, সেইটার মেনিফেস্টশনটা খালি জাত-প্রথার ঘটনা না, মেবি আলাদা আইডেন্টিটির দিকে ঘাড় ফিরা তাকানোর একটা একটা ঘটনাই।

পইড়া দেখতে পারেন!

২০২৪’র ইলেকশন আগের দুইটার মতো হবে না, তার চাইতে ভয়াবহ-ই হবে। জোর কইরা বাসা-বাড়ি থিকা, ভার্সিটির হলগুলা থিকা লোকজনরে নিয়া যাওয়া হবে ভোটকেন্দ্রে। হাসি-হাসি মুখে ভোট দিতে যাইতে হবে। [ আরো ফিউশন করতে চাইলে শরীরে ফিলিস্তিনের পতাকা বাইন্ধাও যাইতে পারেন! 🙂 আল-জাজিরা’র কাভারেজ পাইতে পারবেন তখন। ]

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উন্নয়নের লাইনটা আসলে এইরকম:

২০১৪: ভোট দেয়ার দরকার নাই, বিনা-ভোটে নির্বাচিত!

(যারা ভুলে গেছেন, তাদেরকে মনে করায়া দেই ১৫৪ জন বিনা ভোটে ইলেক্টেড হইছিলেন। ৫০% ভোটারের ভোট দেয়ার দরকারই পড়ে নাই!)

২০১৮: ভোট দেয়া হয়ে গেছে, বাসায় চলে যান!

(দুনিয়ার ইতিহাসে সবচে বড় শয়তানিগুলার একটা ছিল এই ইলেকশন। ইলেকশনের আগের রাতেই ইলেকশন শেষ করা হইছিল। নাম-কা-ওয়াস্তে ভোট দেয়ারও দরকার পড়ে নাই!)

২০২৪: ভোট দেয়ার নাটকে পার্টিসিপেট করেন, নাইলে পাকিস্তান চলে যান!

(এইবার নাটক’টারে আরো রিয়ালিস্টিক করার জন্য ভোট দেয়া লাগবে! হাজার হাজার মানুশ দরকার। যারা এই নাটকে পার্টিসিপেট করবেন না, তারা ভবিষ্যতের হেনস্তার জন্য রেডি থাকেন। জামাত তো আর নাই দেশে, বিএনপি-ও নাই কইরা দেয়ার পরে আসতেছে আপনার টার্ন। আপনি তো ‘সাধারণ জনগণ’!

আপনি চান না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক, তো, আওমিলিগের পুটকি-মারা খাওয়া কেমনে এনজয় করতে হবে সেই বিষয়ে পিআলো ও ডিস্টারের পরামর্শ মেনে চলুন!)

গত দুই-তিনমাস আগে হঠাৎ কইরা খেয়াল করলাম, ফেইসবুকের নিউজফিডে মোটামুটি হাজার-হাজার বলিউডি সিনেমার পেইজের আপডেট সাজেশন আসতে শুরু করলো। শুরুতে দুই-একটা দেখতে ভালোই লাগতো, টিনএইজ বয়সে হিন্দি-সিনেমা দেখার মেমোরি হিসাবে। কিন্তু কোন লাইক-টাইক করি নাই, তাইলে তো ফ্লাড কইরা ফেলবে!

কিন্তু লাইক না দিলেও এরা আসতেই থাকলো, হাজারে-হাজারে! পরে ব্লকও করলাম অনেকগুলা, কারণ আমি তো ফেইসবুকে হিন্দি-সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের খবর নিতে আসি না রে ভাই!

তারপরেও কমে নাই এইগুলা, ঘুরায়া-ফিরিয়া ইন্ডিয়ান এন্টারটেইনমেন্টের (ইনক্লুডিং কলকাতা) পেইজ, নিউজগুলাই আসতে থাকে নিউজফিডে। মানে, এর লগে আমার লাইক, কমেন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের কোন রিলেশনই নাই। এমনকি পেইজগুলার এড-ও নাই কোন, ফেসবুক থিকা জাস্ট পিওর ডাম্প করা হইতেছে!

ও, আপনি বাংলাদেশি, তাইলে তো হিন্দি-সিনেমার স্টার বা কলকাতার গসিপগুলা পছন্দ করবেন! এইরকমের বাই-ডিফল্ট একটা ব্যাপার!

তো, ব্যাপারটা এইরকম না যে, বাংলাদেশের মানুশ-জন হিন্দি ও কলকাতার-বাংলা সিনেমাই দেখে খালি, বরং ফেসবুকের নিউজফিডে এই জিনিসগুলারে এমনভাবে প্লেইস করা হয় যেন এইসব নিয়াই মানুশ-জন কথা বলতেছে এখন! বা আমাদের কনসার্নড হওয়া উচিত!

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইখানে এলগারিদমের বাইরেও ইম্পোজ করার ঘটনাগুলা বেশি ঘটে। কিছু ঘটনারে ভ্যানিশ কইরা দেয়া হয়, খামাখাই আজাইরা কিছু জিনিস দিয়া অকুপাই কইরা রাখা হয়। কোন সেন্ট্রাল জায়গা থিকা এইটা ঘটে, আপনার-আমার পারসোনাল চয়েসের জায়গা থিকা না এতোটা।

এই ঘটনাটা আমি এক্সপ্লেইন করতে পারবো না পুরাপুরি, কিন্তু আমার এই মনে-হওয়াটা একদমই জাস্ট মনে-হওয়াই না মেবি।…

২৯.১১.২০২৩

নিউজ-পর্ন

এরশাদের শাসনামলে কিছু সফট-পর্ণ সাপ্তাহিক পত্রিকা ছাপা হইতো, যেইখানে একটা সেকশন থাকতো সারাদেশের রেইপ নিউজের; এমনকি ডেইলি নিউজপেপারেও বেশ ‘গুরুত্ব সহকারে’ রেইপের নিউজ ছাপা হইতো। ভিক্টিমের ছবিসহ। এবং ডিটেইল ডিসক্রিপশন দিয়া, আর এইটাই ছিল ক্রুশিয়াল পার্ট’টা – সফট-পর্ণের ঘটনা’টা। অই নিউজ পইড়া রিডার হিসাবে ইরোটিক-ফিলিংস না হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু সাংবাদিক হিসাবে উনারা তো একটা অন্যায়’রে তুলে ধরতেছেন 🙂

আরো ইন্টারেস্টিং ঘটনা হইতেছে, অই নিউজ পইড়া রেপিস্টরে বিশাল ‘ক্ষমতাবান’ কেউ মনে হবে; না হইলেও তারে অইভাবেই পোর্টেট করা হবে। যেন সে খালি একটা ক্রাইম-ই করতেছে না, বরং ম্যাচো-পুরুষ হিসাবে নিজেরে এস্টাবলিশ করতেছে। রেইপ করে যে, ম্যাচো পুরুষ সে 😎 বেশিরভাগ সময় তার নাম-ধামও থাকতো না।

তো, এই রেইপের নিউজগুলারে এখনকার পলিটিকাল নিউজের লগে মিলায়া দেখেন। কোন কোন বিএনপি’র নেতা কর্মিরে গ্রেফতার করা হইতেছে, কেমনে নির্যাতন করা হইতেছে, জামিন না দিয়া জেলখানায় রাখা হইতেছে তার ডিটেইল ডিসক্রিপশন পাইবেন।

কিন্তু কে গ্রেফতার করতেছে? মামলার বাদী কে? কারা নির্যাতন করতেছে? কোন বিচারক জামিন দিতেছে না? রাবার-স্ট্যাম্প রায় দিতেছে? তার কোন নাম-গন্ধও পাইবেন না কোথাও! যেন ভূতে করতেছে এইগুলা! সিস্টেম করতেছে, রাষ্ট্র করতেছে, কোন মানুশ না!

আর এইভাবে রেপিস্টদের মত ক্রিমিনালদেরকে আড়াল কইরা রাখা হইতেছে, ম্যাচো ও পাওয়ারফুল হিসাবে পোর্টেট করা হইতেছে। কি পাওয়ারফুল এই লোকগুলা! এই ইমেজ তৈরি করা হইতেছে।

আর এইটা খুব ইনটেনশনালিই করা হইতেছে। যারা মাইর খাইতেছে তারা দুর্বল, আর যারা মারতে পারতেছে তারা ক্ষমতাবান! ল এবং মোরালিটি যেন দর্শক মাত্র! এবং আমরাও! যারা একটু সূড়সুড়িই নিতে পারি খালি! কারণ আমরা তো দর্শক, অডিয়েন্স!

তো, অই রেইপ-নিউজগুলা যে আসলে নিউজ-পর্ন এইটা বুঝতে বেশি সময় লাগে নাই মানুশের; এখনকার বাকশালি-মিডিয়ার পলিটিকাল-পর্নের কনজামশনটারেও আমরা আইডেন্টিফাই করতে না পারার তেমন কোন কারণ আসলে নাই। অনেকে এইটা এখনই বুঝতেছেন, অন্যরাও না-বুঝার ভান কইরা বেশিদিন থাকতে পারবেন না মনেহয়।

Leave a Reply