নোটস: মে, ২০২২ [পার্ট ১]

মে ১, ২০২২

আমি মেবি দুনিয়াতে অইসব ফরচুনেট মানুশদের একজন, যারে জীবনে খুবএকটা বাজার করতে হয় নাই। এখনো করা লাগে না। কিন্তু অনলাইনে তো অনেক দোকান হইছে এখন, এইজন্য শখ কইরা মাঝে-মধ্যে সবজি-মাছ-মাংস কিনি, এবং নো-ডাউট ধরাও খাই। 🙂
তো, একটা ওয়েবসাইট আছে “সদাই” নামে, অদের একটা ফিচার দেইখা ইন্টারেস্টিং মনে হইছিল। অরা এইটার নাম দিছে “সোশ্যাল”, বাংলায় যেইটারে আমরা “ভাগা” বা “শেয়ার” বলি; যে, কয়েকজনে মিইলা কিনা; কেউ এক-ভাগা নিলো, কেউ দুই-ভাগা নিলো, এইভাবে ধরেন গরু জবাই হইতো। ধরেন, একটা গরু’র বিশ-ভাগা করা হইলো, ১০/১৫/২০ জনের কাছে বিশ-ভাগা বেচা হইলে গরুটা জবাই করা হবে। এইরকম।

উনারা সাইটে দেখাইতেছে এইভাবে যে, আপনি চাইলে একলা গলদা-চিংড়ি কিনতে পারবেন, কেজি পড়বে ধরেন ৭৫০টাকা, কিন্তু যদি “সোশ্যাল”-এ কিনেন, মানে, ২০ কেজি অর্ডার হইলে পরে খুলনা থিকা আনা হবে, তাইলে ২০ কেজি অর্ডার হওয়া পর্যন্ত আপনারে অর্ডার করা লাগবে, হয়তো ৫-৭ দিন লাগবে, কিন্তু ৬৫০ টাকা দিলেই হবে! একসাথে অনেকে/কয়েকজনে কিনলে দামে কম পাইবেন।

দুয়েকজন নেইবার, বা অফিস-কলিগদের মধ্যেও মাঝে-মধ্যে এই প্রাকটিস দেখছিলাম যে, ২/৩ জন গাড়ি নিয়া কাওরানবাজার চইলা গেলেন ভোরবেলায়, বা যাত্রাবাড়ির পাইকারি মাছের বাজারে, ৫ কেজি কইরা তরকারি, মাছ কিইনা নিলেন! দামে কম পড়লো। আরো ইনিশিয়েটিভের কথা শুনছি, পরিচিত কারো খামারে একলগে কুরবানির গরু কিইনা রাখলেন, সবজি-চাষ করাইলেন কাউরে দিয়া, নিজেরাই কিনলেন! দামে কম তো পড়েই, ফ্রেশটাও খাইলেন! এইরকম। [ ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাপারটা একটু ম্যানেজ করা লাগে। কারো না কারো প্রাইভেট কারে আনা লাগে…]

কিন্তু জিনিসগুলা সোশ্যাল-বিজনেস হয়া উঠতে পারতেছে না এখনো। কোন অরগানাইজড এপ্রোচও তৈরি হয় নাই। একটু শরমও কাজ করে মনেহয়।… কিন্তু ব্যাপারটা ওয়ার্কেবল আসলে। কিছু র্স্টাট-আপ কোম্পানি মনেহয় কাজও করতেছে। তবে ব্যাপারটা ঠিক ‘মিডল-ম্যান’রে কাট-অফ করার প্রজেক্ট হইলে ফেইল-ই মারার কথা, কারণ ব্যাপারটা লং-টার্মে ‘কম-দামে’ কিনার ঘটনা হইতে পারবে না এতোটা, ইকোনমি অফ স্কেইলের কারণে। কিন্তু এইরকম ছোট ছোট গ্রুপ বাজারের উপরে প্রেশার-গ্রুপ হিসাবে কাজ করতে পারবে তখন।

তার চাইতে বড় কথা, এক ধরণের ‘সোশ্যাল’ বা ‘সামাজিক’ অবস্থা তৈরি হওয়ার একটা স্পেইস জেনারেশনের দিকে যাইতে পারবে হয়তো। মানে, ব্যাপারটা খালি ইকনোমিক প্রজেক্টই না, সোশ্যাল এবং কালচারাল ঘটনাও হইতে পারে।… হবেই, এইটা তো ডেফিনেটলি বলা যায় না। কিন্তু এই ধরণের জিনিস নানান দিক দিয়া শুরু হওয়াটা ভালো-জিনিস মনেহয় আর কি…

***

– বাকশাল (আওয়ামী-সিপিবি, বাঙালি-জাতীয়তাবাদ) সবসময়ই বাংলাদেশ-বিরোধী একটা ঘটনা –

কেউ আওয়ামীলীগের পক্ষে কথা কইলে, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ নিলে তারে আওয়ামী লীগ হওয়া লাগে না সিপিবি, বাসদ, এমনকি গণসংহতি কইরাও পক্ষ নেয়া যায় তো! কিন্তু আপনি বিএনপি’র পক্ষে কথা কইলে, জিয়াউর রহমানের নাম মুখে নিলেই কেন বিএনপি হওয়া লাগে?

মানে, এইটা অবশ্যই বিএনপি’র দোষ না।

এর বেইজ হইতেছে ভুল পলিটিক্যাল ন্যারেটিভে, যেই জায়গাটা থিকা দেখার অভ্যাস করানো হইছে আমাদেরকে, ১৯৭১ সালের পরেই।

আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, গণসংহতি যারাই আছে, সবাই ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ লোক, কলোনিয়াল কলকাতার পলিটিক্যাল ও কালচারাল গোলাম। এই গোলামি উনাদের কোর।

বিএনপি হইতেছে এর বাইরের ঘটনা। আপনি যদি পলিটিক্যালি, কালচারালি বাংলাদেশরে সেন্টার করেন, তাইলে আপনি খালি অই ন্যারেটিভের বাইরেই চইলা আসেন না, মাঝখানে পূর্ব-পাকিস্তান বইলা যেই হিস্ট্রিক্যাল রিয়ালিটি’টা ছিল, সেইটারেও মাইনা নেয়া লাগে।

আওয়ামী-সিপিবি, মানে বাকশালি ন্যারেটিভে ‘পাকিস্তান পিরিয়ড’ বইলা কিছু নাই, অইটা যেন ঘটে নাই! বাংলাদেশের মানুশ যেন তখন পাকিস্তানের লগে যোগ দেয় নাই, ‘মুসলিম’ আইডেন্টিটিরে আপহোল্ড করে নাই! এই হিস্ট্রিক্যাল ট্রুথরে উনারা ‘অ্যাজ ইফ ঘটে নাই’ – এইভাবে বর্ণনা করেন সবসময়।

তো, এইটুক হইলেও কোন সমস্যা ছিল না। উনারা উল্টা ফাঁপড় নেন! যেহেতু আপনি ‘কলকাতার কলোনিয়াল জোয়াল’ কান্ধে নিতে রাজি না, আপনি যেন ‘পাকিস্তানের ফাঁদে’ পা দিতেছেন! মানে, ‘বাংলাদেশি’ আইডেন্টিটি বইলা তো কিছু নাই! 🙂 হয় আপনি ‘কলকাতার বাঙালি’ নাইলে ‘পাকিস্তানের মুসলমান’!

‘বাংলাদেশি’ – এই জায়গাটারে সবসময় গুলায়া ফেলা হয় না, খুব কনশাসলি নেগেটিভলি প্রজেক্ট করা হয়। যে কোন কিছুতেই – মিউজিক বলেন [কোক স্টুডিও ঘটনাটাই দেখেন, বাংলাদেশি কইতে পারে না], লিটারেচারে বলেন [বাংলাদেশি বাংলা হইতেছে ‘অশুদ্দ’ ‘অপ্রমিত’], মোটামুটি সব জায়গাতেই। ‘বাংলাদেশি’ হইতেছে যেন ‘অরিজিনাল-বাংলা’ থিকা একটা বিচ্যুতি!

এই জায়গা থিকা বিএনপি’র পক্ষে কথা বলা মানে হইতেছে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি বিরোধী’ 🙂 একটা ঘটনা।

তো, আমাদেরকে আসলে সত্যিকার অর্থে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি বিরোধী’ হওয়া লাগবে না, যেইটা আরেকটা ট্রাপ, বরং অই ভুল জায়গা থিকা সরতে পারলেই হবে। এর জন্য বিএনপিও হওয়া লাগবে না, বাকশালি ন্যারেটিভের বাইরে, কলোনিয়াল ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটির বাইরে যাইতে হবে। (এইটা ন্যাশনালিস্ট হওয়ার কোন ঘটনা না।) তবে ফরচুনেটলি অর আনফরচুনেটলি বিএনপি ছাড়া আর কোন পলিটিক্যাল দল এই জায়গাটারে অউন করে না। যার ফলে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি’র নামে কলোনিয়াল কলকাতার আইডেন্টিটির লোক না হইলে ‘বিএনপি করে’ বইলা ট্যাগ লাগানোটা ইজি হয়।

কিন্তু বিএনপি এই জায়গাটারে পলিটিক্যালি ক্যাপিটালাইজ করতে পারে নাই। এইটা যতোটা না কালচারাল বোঝা-পড়া না থাকা তার চাইতে দল হিসাবে (১৯৯১-এর পরে) আরেকটা আওয়ামী লীগ হইতে পারার ‘লোভ’ থিকা সরতে না পারাটাই মেবি মেইন ঘটনা।…

মানে, উনাদের পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ’টারে পলিটিক্যাল এক্টিভিটির চাইতে কম গুরুত্বই দিছেন। উনারা খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড বলতে পারতেছেন না যে, দেখেন, বাকশাল (আওয়ামী-সিপিবি, বাঙালি-জাতীয়তাবাদ) সবসময়ই বাংলাদেশ-বিরোধী একটা ঘটনা! [খালেদা জিয়ার একটা কথা ছিল যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইন্ডিয়ার কাছে দেশ বেইচা দিবে, যেইটারে একটা মেটাফরিক্যাল-ট্রুথ হিসাবে আমরা নিছি, আইডিওলজিক্যাল-ট্রুথ হিসাবে কন্সিডার করা হয় নাই…]

তো, এখনকার বাংলাদেশে বিএনপি কইরা বা না কইরাও এই কথা আমাদেরকে বলতে পারতে হবে! এই জায়গাটা বুঝতে, এবং বলতে আমরা যত দেরি করবো, বাংলাদেশের পলিটিক্যাল অবস্থা তত বাজে হইতে থাকবে।

আর সবচে বড় কথা হইতেছে, নিজেদের সেলফ-রেসপেক্টের জায়গাটা আমরা খুঁইজা পাবো না, আর পাইতেছিও না আসলে…

মে ৪, ২০২২

এইরকম একটা ধারণা বা বলাবলি আছে যে, আর্টের (গল্প-কবিতা-গানের) কাজ হইতেছে মিছা-কথা বইলা সত্যি’টা বইলা দেয়া। বা এইরকমের শ্লোগানও আছে যে, কবিতা কখনো মিছা-কথা কইতে পারে না! 🙂 তো, এইগুলা মোস্টলি আর্টরে মিথ বানানোর টেনডেন্সি থিকাই বলা হয়।
আর্ট এইরকম জিনিস না।

মানে, সত্যি-কথা বা মিছা-কথা বলার লগে আর্টের কোন কানেকশন নাই – তা না, বরং গল্প-কবিতা-গানের ভিতর দিয়া কিছু কনটেক্সট তৈরি হয় যেইখানে সত্যি-মিথ্যা, রিয়েল-ইল্যুশন এইরকম জিনিসগুলারে আমরা নতুন একটা জায়গা থিকা দেখতে পারি। যেই কারণে গল্প-কবিতা-গানের কথাগুলা সত্যি নাকি মিথ্যা – এই আলাপ তেমন কিছু মিন করে না আসলে, কোন সময়েই।

/আর্ট অ্যাজ অ্যা ট্রুথ-টেলিং এক্টিভিটি

***

আমাদের যে কোন কাজই কোন না কোন ট্রুথ-ধারণার রিফ্লেকশন। মানে, কোন একটা জিনিসরে আমরা ‘সত্যি’ বইলা ধইরা নেই, তারপরে সেইটারে পারফর্ম করি। (এখন আমাদের কাজকামরে আমাদের সত্যি-ধারণার কাছাকাছি কইরা তোলাটা ‘ট্রুথ’-এর ঘটনা না, বরং ‘সত্যি-ধারণা’র ব্যাপারে আমাদের সবসময় খোঁজ-খবর করা দরকার, রিভিউ করতে পারার সাহসটাও জরুরি।…) তো, যার সত্যি-ধারণা যত ঠিকঠাক, তার কাজ-কামই আসলে তত ভালো, নৈতিকভাবে এবং এস্থেটিক্যালিও।…

***

মনে হইতে পারে যে, আমি মনেহয় ভিক্টিম-ব্লেইমিং করতেছি, কিন্তু ঘটনা’টা এইরকম না আসলে, কিছু ইন্সিডেন্ট তো আছেই, কিন্তু গ্রসলি বাংলাদেশের নিউজ-মিডিয়া, “সংবাদপত্রের মূলধারা”, জার্নালিজম হইতেছে এই অবৈধ সরকারের একটা অংশ। এরা কিছু কইতে পারে-না না, এরা কইতে রাজি না।

এবং যদি কেউ এই গভরমেন্টের ভোট-ডাকাতি নিয়া কথা কইতে যায়, তারা যে কতো বাজে-কারেক্টারের লোক, দেশে যে কতো “উন্নয়ন” হইতেছে অই ফিরিস্তি নিয়া বইসা যায়।… যেই পত্রিকা পাবলিকের যত বেশি দোষ ধরতে পারে, সেইটা হইতেছে সবচে ভালো “গণমাধ্যম”!
আমি মোটামুটি গত ৩-৪ বছর ধইরা কোন টিভি-নিউজ দেখি না, নিউজপেপার পড়ি না, বাংলাদেশি কোন নিউজপোর্টালে ঢুকি না (ফেইসবুকে কিছু লিংক-টিংক তো চোখে পড়েই), কিন্তু বাংলাদেশের কোন ঘটনা আমি মিস করতেছি বইলা মনেহয় নাই।

মানে, এইসব জায়গাতে কোন “নিউজ” তো নাই! কিছু দালালির ঘটনা ছাড়া এইখানে আর কিছুই নাই। দুনিয়ার কোন দেশে এইরকম দালালির অবস্থা কখনো ছিল কিনা আমার জানা নাই। বাংলাদেশের “গণমাধ্যম” একটা ইউনিক কেইস, বাটপারির।

যদিও রেংকিংয়ে বাংলাদেশের পরে আরো ১৯টা দেশ আছে, রেংকিংয়ের মেথোডলজি নিয়াও নানান আলাপ থাকতে পারে, কিন্তু গত ১০-১২ বছরে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা যে দালালির ইউনিক মডেল তৈরি করছে, সেইটা দেইখা হিটলার-মুসোলিনীও জেলাস হওয়ার কথা, একভাবে।…

মে ৫, ২০২২

আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড (যোগাযোগ অনিয়মিত হয়া গেছে এখন কিছুটা) ঈদের দিন ফোন দিয়া কইলো, কি রে, তুই দি বিপ্লবী হয়া গেছোস! শুইনা আমি ভাবলাম, হ, তেলাপোকা-ও তো পাখিই!

তারপরে ভাবলাম, কি করছি, বা কি করি আসলে আমি?

দেশ-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি-শিল্প-সাহিত্য নিয়া যেই দুই-চাইরটা কথা মনেহয় অইগুলা ফেইসবুকে বলি। এইরকম তো কম-বেশি সবাই-ই বলে। কোন না কোন ফর্মে, কোন না কোন পাবলিক স্পেইসে – অফিসে, ভারসিটি-কলেজে, চা’র দোকানে, ফ্রেন্ডদের আড্ডা’তে বলে। এই বলাবলি’টা যে একটা ডরের জিনিস, এমনকি ‘বিপ্লবী’ ঘটনা, সেইটাই মনে হইলো।

তার মানে, কথা-বলাটা তো দরকার আমাদের! বিপ্লব করার লাইগা না, নিজেদের আত্মাটারে বাঁচায়া রাখার লাইগা, নিজেদেরকে বাঁচায়া রাখার লাইগাও। দরকারি জিনিস তো এইটা!

জুলুমের এগেনেস্টে কথা-বলার তাগিদ বেশ কয়েকটা হাদিসে আছে। (রিয়াদুস সালেহীনের ১৮৪, ১৮৮, ১৯৪, ১৯৫, ১৯৬, ১৯৭ নাম্বারে পাইবেন।) জেরুজালেমের উদাহারণ দিয়া বলা হইছে, অনেকে জুলুমের বিরুদ্ধে কথা কইতেছিল, কিন্তু পরে কেউ তাদের কথা শুনে না দেইখা পরে তারা জালিমের দলে ভিইড়া গেছিল। এইভাবে সমাজ ধ্বংস হয়া গেছিল।

এইরকম হাদিস-ও (১৯৭) আছে যে, যখন মানুশ-জন জালিমরে দেখে, আর তারে খারাপ-কাজ করা থিকা আটকায় না, তখন আল্লাহ অনেক সময় সবাইরে এর শাস্তি দেন।

মানে, জালিমের বিরুদ্ধে কথা-বলা ‘বিপ্লবী’ (সেক্যুলার) ঘটনা হইতে পারে, ঈমানি-দায়িত্ব-ও (ইসলামিক) হইতে পারে, কিন্তু যে কোন জায়গা থিকাই হোক, জালিমের বিরুদ্ধে, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা-বলাটা দরকারি একটা কাজ, সবসময়ই।

মে ৬, ২০২২

মিরর-ইমেজ

এইরকম একটা জিনিস তো আছে, আয়না’তে যা দেখলেন, সেইটাই যেন আপনি! মানে, আয়নাতে দেখা যাওয়া ইমেজটাই তো আপনি হয়া উঠতেছেন।…

তো, এইটারে “শিল্প-সাহিত্য হইতেছে সমাজের আয়না” 🙂 – এই জায়গাটা থিকা দেখেন। শিল্প-সাহিত্যে-সিনেমা-নাটকে যেইটা দেখানো হইতেছে, সেইটা হইতে পারাটাই ঘটনা হয়া উঠতে থাকে অনেক সময়, সোশ্যাল এক্টিভিটির ভিতরে।… এইটা মনে হইতেছিল, কয়েকটা ঘটনা খেয়াল কইরা।

যেমন, একজন কইতেছিলেন, মেয়েরা সমাজ-দর্শন-সাহিত্য বাদ দিয়া কি সব জিনিস নিয়া গসিপ করে! কোন কাজের আলাপ-ই নাই! তখন মনে হইতেছিল, এই যে “কাজের আলাপ” করা, কয়টা নাটক-সিনেমা-ফিকশনে নায়িকারা এইটা করে? 🙂 মানে, করলে কি আর নায়িকা-গিরি থাকবো তখন? বেটাদের বেলাতেও, কি যে সিরিয়াস হয়া সিউডো ‘সমাজ-চিন্তা’ করতে থাকতে হয়, খামাখাই!…

মানে, মিরর-ইমেজ তো এইগুলা, বেটিমানুশ হওয়ার, বেটামানুশ হওয়ার।

‘৬০-‘৭০ দশকের সিনেমার গানে দেখতেছিলাম নায়িকাদের কোন কাজ নাই, তো “ঘর গোছাইতেছে”… আর এইভাবে দুই-তিনটা জেনারেশনের মধ্যবিত্ত-মেয়েদের জীবন মোটামুটি পার হয়া গেছে এই ঘর গোছাইতে গোছাইতে।…

একটা সময় ছিল পোলারা বেল-বটম প্যান্ট পিন্দলেই হিপ্পি মনে করা হইতো, এইরকম মেয়েদের বব-কাট চুল রাখলেই ‘আধুনিক’ মনে করা যাইতো।… আবার এই মিরর-ইমেজগুলা থিকা বাইর হয়া আসার ঘটনাগুলাও মিররেই ঘটে। ঘটনাগুলা তো অদল-বদল হইতে থাকে, ওভার দ্য পিরিয়ড অফ টাইম…

মানে, কিছু আয়নার দিকেই তাকায়া আছি আমরা, কোন না কোন মিরর-ইমেজের ভিতর দিয়াই তো দেখতেছি…

মে ৮, ২০২২

– বাংলাদেশের ইকনোমিক সমস্যা, ইন ইটস কোর, নন-ডেমোক্রেটিক শাসনের লগে রিলেটেড একটা ঘটনা –

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের মেইন একটা কারণ হিসাবে বলা হয়, বাজারের কন্ট্রোল মজুতদারদের হাতে চলে গেছিল। (সারপ্রাইজিংলি অই বছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন নরমালের চাইতে বেশিই নাকি ছিল। এখনকার জিডিপি-গ্রোথও তো ভালো 🙂 মানে, এইগুলা খেয়াল করার মতো প্যারামিটার না আসলে…) কিন্তু যেইটা বলা হয় না, সেইটা হইতেছে অই মজুতদার’রা ছিল বাকশালের লোকজন, সরকারি আমলাদের সাথে মিইলা তারা এই কাজ করছিল।

আজকে, এই নয়া বাকশালের টাইমে, একই জিনিস রিপিট হইতেছে, আরো অরগানাইজডভাবে। এইটা (এই ইকনোমিক ক্রাইসিসগুলা) যতোটা না ইকনোমিক ফেইলওর, পলিসি-ইস্যু, যুদ্ধ-টুদ্ধ, তার চাইতে অনেকবেশি পলিটিক্যাল ফেইলওর, নন-ডেমোক্রেটিক শাসনের, জুলুমের কনসিকোয়েন্স।

তারপরও বাকশালিদের হম্বি-তম্বি দেখবেন, দেশে তো কোন দুর্ভিক্ষ নাই! এই কথার মানে হইতেছে যেই পরিমাণ লুটপাট হইছে, হইতেছে, মেগা-প্রজেক্টের নামে, সরকারি-খরচের নামে, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর ভিতর দিয়া, ইকনোমি তো কল্পাস করার কথা! তারপরও করতেছে না, কেন?

(যাদের জানা-বুঝা আছে উনারা আরো ভালো বলতে পারবেন, কিন্তু) গরিবরে গরিব-ই বাঁচায়া রাখতেছে। বাংলাদেশের গরিবদেরকে বাঁচায়া রাখতেছে রেমিটেন্স। যদি দুই মাস রেমিটেন্স আসা বন্ধ থাকে, তাইলেই দুর্ভিক্ষের রূপ আরো স্পষ্টভাবে আমরা দেখতে পাবো। যদি রেমিটেন্সের টাকা না আসতো, বাংলাদেশের গরিব’রা আরো আগেই না-খাইতে পাইয়া মারা যাইতো।

এই কারণে দেখবেন, বাজারের লুটপাটে সবচে বেশি সাফারিংস হইতেছে যাদের রেমিটেন্স আসে না, যারা সরকারি চাকরি করে না, বাকশালের লুটপাটের লগে কানেক্টেড না, উনারাই এর ভিক্টিম।

কিন্তু ভিক্টিম আসলে আমরা সবাই-ই। বাজার-দখল, মেনিপুলেশন, নন-ডেমোক্রেটিক পলিটিক্যাল-পাওয়ারের জুলুম ১৯৭৪’র চাইতেও বেশি। এইরকম একটা অবস্থায় আমরা জাস্ট আরেকটা দুর্ভিক্ষের জন্য ওয়েট করতেছি।

আমি বলতে চাইতেছি, এইটা কোন ইকনোমিক সমস্যা না, পলিসি-লেভেলের ঘটনা না (যেইরকম কিছু পাতি-বাকশালি গরু-ছাগল আমাদেরকে বুঝাইতে চায়), ইন ইটস কোর এইটা নন-ডেমোক্রেটিক শাসনের লগে রিলেটেড একটা ঘটনা।

লোকমুখে বলাবলি হয়, ১০-১২ লাখ লোক মারা গেছিল ১৯৭৪-এ, নিউজপেপারে বলা হইছিল, ৩-৪.৫ লাখ, সরকারি হিসাবে আরো কম। এখনকার অবস্থায় যদি দুর্ভিক্ষ হয়, কতো মানুশ না-খাইয়া এবং এর আফটার-এফেক্টে মারা যাইতে পারে?

আমি হিসাব করতে চাই না। আমি চাই দুর্ভিক্ষ যেন না হয়। কিন্তু নন-ডেমোক্রেটিক শাসন যদি বাংলাদেশে কন্টিনিউ হইতে থাকে “নিরব-দুর্ভিক্ষ” ভিজিবল হইতে সময় বেশি লাগার কথা না, ঠেকায়া রাখাটা কঠিনই হওয়ার কথা দিন দিন, এইটা মোটামুটি ইনএভিটেবল। এই জিনিসটা যত আগে ফিল করতে পারবো, বুঝতে রাজি হইতে পারবো, তত সইরা আসতে পারবো আমরা। আশা আমাদের, এইটুকই।

***

স্পেশালি বাম-বাটপারগুলা এই কথা আমাদেরকে বুঝাইতে চায় যে, বাকশাল আর বিএনপি একই, দুইটাই ‘বুর্জোয়াদের দল’!* আর সারাজীবন দালালি করা বাইনচোতগুলা হইতেছে ‘বিপ্লবী’!

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে, বাকশাল আর বিএনপি দুইটা আলাদা ঘটনা।

বাকশাল হইতেছে নন-ডেমোক্রেটিক, একদলীয়, ফ্যাসিস্ট। ১৯৭২ – ১৯৭৫’র সাথে এখনকার অবস্থারই মিল পাইবেন। ১৯৯৬ – ২০০১ সময়টাতেও একদলীয় শাসনের চেষ্টাটাই ছিল…

আর বিএনপি হইতেছে প্রো-ডেমোক্রেটিক একটা দল। জিয়াউর রহমানের আমলেই বাংলাদেশে ডেমোক্রেসির শুরু। যেই কারণে ১৯৯১-এ পিপলের ভোটে বিএনপিই ক্ষমতায় আসছিল। (আর অন্য সব ঘটনা তো ছিলই।) এখন কতোটা ডেমোক্রেটিক, এইটা নিয়া কথা কইতে পারেন, ১৯৯৬-এ এক্স-আমলা ও এক্স-মিলিটারিদের (প্রো-বাকশালিদের) খপ্পরে পড়ছিল, কিন্তু নন-ডেমোক্রেটিক জায়গাটাতে অপারেট করে নাই, যখন ইলেকশনের বদলে সিভিল-ওয়ারের প্রভোকেশন দেয়া হইতেছিল, তখনও ডেমোক্রেসির পথেই থাকতে চাইছে, এখনো ভোটের কথাই বলে।…

মানে, অ-মিলের জায়গা আছে, ডিফরেন্স আছে। যেই জায়গাগুলারে নাই কইরা দিতে চায় বাম-বাটপারদের ন্যারেটিভ, যেইটা বাকশালি সার্পোট-ফাংশন হিসাবেই অপারেট করে আসলে। এরা ‘বিপ্লবী’ না, নন-ডেমোক্রেটিক, এন্টি-পিপল এনটিটি। এই ডিফরেন্সের জায়গাটাও খেয়াল করাটা জরুরি।


*পলিটিক্যাল দল মানেই হইতেছে মিডল-ক্লাস বুর্জোয়া-এনটিটি, ইনক্লুডিং নানান ধরণের কমিউনিস্ট পার্টি…

মে ৯, ২০২২

বাকশালের কাছে যেমন কোন এগজিট নাই, বাংলাদেশি নিউজ-মিডিয়ারও পিপলের কাছে বিলিভেবল হয়া উঠার চান্স আসলে কমই।

কয়দিন আগের রেলের ঘটনা নিয়া আজকে একটা “কার্টুন” বানাইছে মিডিয়া-বদলগুলা। যেন সব দোষ রেলমন্ত্রীরও না, রেলমন্ত্রীর বউয়ের! (তা-ও সেক্সিস্ট একটা জিনিস… একটা পোস্টারও বানাইছে ‘ব্যঙ্গ’ কইরা, আম্মু’র কাছে বিচার দিতেছে…) কেমনে অরা বাকশাল’রে বাঁচানোর রাস্তাগুলা তৈরি করে দেখেন!

মানে, কয়দিন আগেও রেলমন্ত্রীর নাম কে জানতো! রেলমন্ত্রীর বউয়ের কথা বাদ দেন, রেলমন্ত্রীর দুই-টাকার কোন পাওয়ার আছে নাকি! ডিসি-এসপির ক্ষমতা বরং মন্ত্রী-মিনিস্টারের চাইতে বেশি এখন।…

খালেদা-জিয়ার আমলে উনারে ‘ব্যঙ্গ’ কইরা যে কার্টুন বানানো যাইতো, এইটা কোন ‘সাহস’ ছিল না, ছিল ডেমোক্রেটিক-শাসনের ঘটনা। আর এখন আম্মু’র নাম যে নেয়া যায় না (আমিও পারতেছি না) এইটা নন-ডেমোক্রেটিক, বাকশালি-শাসনের ঘটনা। আর এই অবস্থাটা তৈরি করছে মিডিয়ার দালালগুলাই।

অদের কার্টুন দেখলেও এই কারণে হাসি আসে না, বরং একটু খেয়াল করলে চেত-ই উঠার কথা আরো। যে, রেলমন্ত্রীর সমস্যা, রেলমন্ত্রীর বউয়ের সমস্যা, আত্মীয়দের সমস্যা, আর তোদের আম্মু ইনোসেন্ট, ভোলা-ভালা, ‘ভুল-বোঝানো’ হইতেছে খালি!

মে ১০, ২০২২

– আমরা কি চাই? –

(মিনিমাম পলিটিক্যাল রিকোয়ারমেন্ট ঠিক করা)

১৯৭৫-এ বাকশালের পরে একটা সিভিল-ওয়ার সিচুয়েশনের ভিতর দিয়াই আমাদেরকে যাইতে হইছে, বাংলাদেশে। এখনকার নয়া বাকশালও আমাদের সামনে ডেমোক্রেটিক কোন সলিউশন তৈরি করতে দিবে না, দিতেছে না। (এরা যে কোন নন-ডেমোক্রেটিক ফোর্সের কাছেই সারেন্ডার করতে চাইবে, যারা তাদেরকে সেইফ-এগজিট দিবে…)

কিন্তু আমাদের উচিত হবে, যে কোন ভুয়া-বিপ্লবের বদলে দেশের মানুশের ভোট দেয়ার, রায় দেয়ার ক্ষমতার জায়গাটারে এস্টাবলিশ করা, আবার।

পুরান আলাপ অনেকে আবার এখন নতুন কইরা তুলতেছেন, শাপলা-শাহবাগ নিয়া। (এইটা পুরান-খেলা, ট্রাপ আরেকটা।) আমি দেখি, যারা নানান আইডিওলজির নামে ‘বিপ্লব’ করতে চাইতেছেন তারাই হইতেছেন দেশের মানুশের দুশমন। নিজেদের আইডিওলজিরে চাপায়া দেয়ার কাজ করছেন, করতেছেন। নিজেদের কথারে পিপলের কথা বইলা জাহির করার ট্রাই করছেন।…

গরিব-দেশে ‘বিপ্লব’ মানেই হইতেছে নতুন জালিমের জন্ম দেয়া। মানুশরে তার নিজের, সমাজের, রাষ্ট্রের ডিসিশান নেয়ার একটা অথরিটি দেয়া না, বরং পুরান একটা অথরিটির জায়গায় নতুন আরেকটা অথরিটিই হয়া উঠা।

নয়া বাকশাল এইরকমের একটা পলিটিক্যাল-ইকনোমিক্যাল-কালচারাল অবস্থাই বানাইছে যেইখান থিকা পিপলরে হেইট করতে পারা, ‘অশিক্ষিত’ ‘মুর্খ’ ‘জাতটাই খারাপ’ বলতে পারাটা হইতেছে স্মার্টনেস! এই ইস্মার্টনেসের জায়গা থিকা আমাদেরকে সরতে পারতে হবে।
বাংলাদেশের মানুশ সরকারের ভিক্ষা চায় না, সরকার নামের কুত্তার কামড় থিকা বাঁচতে চায়। এর পরে যেই সরকার-ই আসবে, তাদের কাজ হবে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা কুত্তাগুলারে সামলানো! উন্নয়নের নামে দেশ বেইচা দেউলিয়া করার প্রসেসটা বন্ধ করা!

খুব স্পেসিফিক্যালিই আমাদেরকে বুঝতে হবে এবং বলতে হবে যে, আমরা বাংলাদেশে – বিনা ভোটের সরকার চাই না, মেগা-প্রজেক্টের নামে লুটপাট চাই না, বাকশালি জুলুম চাই না।

আমরা পিপলের ভোটে ইলেকটেড গর্ভমেন্ট চাই, গরিবি-কমানোর অর্থনীতি চাই, আইনের শাসন চাই।

এরপরে আর কিছু নাই না, কিন্তু এইটা মিনিমাম। এইটুক যে আমরা চাই, এইটা সবাই মিইলা একসাথে বলতে-পারাটা জরুরি একটা জিনিস।

Leave a Reply