নোটস: মে, ২০২৪

০১.০৫.২০২৪
ছুটির দিন, বাজারে গেছি, সকালবেলায়। একজন ইয়াং বাজারি, হইতে পারে তার দুইজনের নতুন সংসার – জামাই-বউ, ছোট একটা বাচ্চাও থাকতে পারে, এইরকম। হাফ-কেজি হাফ-কেজি কইরা তরকারি কিনতেছে।

একটা ছোট্ট, সুন্দর, কিউট মিস্টি কুমড়া (ছবি তুলতে পারলে ভালো হইতো, কি যে কিউট, সেইটা দেখানো যাইতো…) দেখায়া দোকানদার’রে জিগাইলো, এইটার দাম কত? দোকানদার মিডল-এইজড, আমার বয়েসিই হবে; কইলো, ৮০ টাকা।

রাস্তার পাশে দোকান, তরকারির ডালাগুলার সামনে আমরা দুইজন ছাড়াও আরেকজন বয়স্ক মানুশ ছিলেন, অনেক জিনিস কিইনা দাম বুঝায়া দিতেছিলেন। দাম শুইনা উনি হাইসা দিলেন। ইয়াং বাজারি জাস্ট স্পিচলেস হয়া গেলো; অইটা সামলায়া, চেইতা গিয়া কইলো – বেচার কি দরকার, এই মিস্টি কুমড়া যাদুঘরে সাজায়া রাখেন!

মানে, আমরা চাইরজনই (ইয়াং-বাজারি, বয়স্ক লোকটা, আমি আর দোকানদার) চুপ হয়া গেলাম এই কথার পরে, কারন আমরা তো একভাবে ফিল করতেছিলাম যে, দারিদ্রের যাদুঘরের সামনে আমরা দাঁড়ায়া আছি! আর ছোট্ট, সুন্দর, কিউট মিস্টি কুমড়াটা আমাদেরকে দেখে হাসতেছে।

/মিস্টি কুমড়া

#বাজারেরআলাপ

০৫.০৫.২০২৪

গাড়িতে রেডিও শুনতেছি। মিউজিশিয়ান অর্নব এনডোর্স করতেছে রেডিও চ্যানেলটারে, ঢাকার নাম্বার ওয়ান রেডিও চ্যানেল।

পয়লা ইনডিয়ান-বাংলার একটা পুরান গান বাজাইলো, তারপরে শুরু হইলো নন-স্টপ হিন্দি গান! নো ডাউট, ঢাকার এক নাম্বার রেডিও চ্যানেল এইরকমই তো হওয়ার কথা। 🙂

এইগুলা ঠিক পলিটিকাল না-বোঝাও না, কালচারাল বলদ গার্বেজে সব জায়গা অকুপাইড

হাইওয়েতে গেলে গাড়ির রেডিও’তে গান শুনি; কিনতু আমি মনে করতে পারতেছি না গত কয়েক বছরে কোন রেডিওতে বাংলাদেশি সিনেমার গান শুনছি কিনা… মানে, বাংলাদেশের রেডিও স্টেশনগুলাতে বাংলাদেশি সিনেমার গান বাজানো যাবে না – এইরকম কোন নিয়ম তো নাই, তারপরও একভাবে ‘নিষিদ্ধ’ হয়া আছে জিনিসটা… কেন? 🙂

মানে, রেডিও’তে বাংলাদেশি সিনেমার গান বাজাইলে প্রেস্টিজ থাকবে, বলেন! পুরা পাংচার হয়া যাবে না! ‘লোকজন’ হাসাহাসি করবে না যে, কি ক্ষ্যাত! বাংলাদেশি-সিনেমার গান বাজায়!

জিনিসটা জাস্ট খেয়াল কইরা দেখেন, বাংলাদেশের রেডিও স্টেশনগুলাতে বাংলাদেশি-সিনেমার গান-ই ‘নিষিদ্ধ’, ট্যাবু হয়া আছে একভাবে… ‘সবাই’ (মানে, কালচারাল-বলদগুলা) ‘সম্মিলিভাবে’ (কোন গোপন চুক্তি না, বরং এক ধরনের মিচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের ভিতর দিয়া) এই কাজ করতেছে… ইন্টারেস্টিং না জিনিসটা?

০৮.০৫.২০২৪

বাংলা-সাহিত্য ও বাংলা-সিনেমা

এই ইন্টারেস্টিং জিনিসটা কেউ খেয়াল করছেন কিনা যে, বাংলা-সাহিত্য বলতে যদিও মেইনলি কলকাতার সাহিত্য-মেটেরিয়ালগুলারে আমরা বুঝি, বাংলা-সিনেমা বলতে কিনতু কলকাতার সিনেমা না, বরং মেইনলি বাংলাদেশি সিনেমারেই মিন করি আমরা… এই যে বাংলাদেশি সিনেমা ৬০-৭০-৮০’র দশকে বাংলা-সিনেমা হয়া উঠলো – এইটাই এর প্রতি কালচারাল হেইট্রেটের একটা বড় কারন মেবি…

মানে, বাংলা-সিনেমা যে ‘ভালো না’ 🙂 এর মানে খালি এইটা না যে, এইগুলা কমার্শিয়াল মুভি, এইগুলার ক্রিয়েটিভ ইনটেলেকচুয়াল ইসটেনডারড খুব পুওর (এইগুলা তো আছে, এমনকি হলিউড, বলিউড, তামিল, কোরিয়ান সিনেমার ৮০%-৯০%ই তো এরকম… আর্ট-ফিল্ম বা ভালো-সিনেমা সব দেশে সব সময়েই নিশ বা ছোট একটা কেটাগরি), বরং এর একটা ক্রুশিয়াল মিনিং হইতেছে যে, ‘বাংলাদেশি’ জিনিসটা আসলে ভালো না; যদিও অনেকদিন ধইরা সত্যজিৎ-টত্যজিৎদেরকে বাংলা-সিনেমা বইলা পরিচয় করায়া দেয়ার ব্যাপক ট্রাই করা হইছে, হইতেছে… কিনতু সেইটা এসটাবলিশড করা যায় নাই

না যাওয়ার একটা কারন হইতেছে, এই দুইটা আর্ট-মিডিয়ার এসথেটিকাল পজিশন দুইটা আলাদা; (অডিয়েন্সও আলাদা আসলে) বাংলাদেশি সিনেমা প্রাকটিকালি শুরু হইছে ১৯৫৬-৫৮ সালের দিক থিকা, যেইখানের মেইন কনটেকসট হইতেছে পুব-পাকিস্তান, পুব-বাংলা বা আজকের বাংলাদেশ; বাংলা-সাহিত্যে যেইটা ট্রেডিশনালি হইতে পারে নাই, আর্ট-ফর্মের বাইরেও কনটেকসটের কারনেই একটা এসথেটিকাল ডিফরেন্স তৈরি হইছে এইখানে; একটা ভালো-উদাহারন হইতেছে আমজাদ হোসেনের একই কাহিনির উপন্যাসের নাম “ধ্রুপদী এখন ট্রেনে” আর সিনেমার নাম হইতেছে “গোলাপী এখন ট্রেনে”; মানে উপন্যাস আর সিনেমার নাম একইরকম তো হইতে পারে না আসলে (বাদবাকি আরো অনেক আলাপ তো আছেই…)

তো, (কলোনিয়াল-কলকাতার) বাংলা-সাহিত্যের দিক থিকা (বাংলাদেশি) বাংলা-সিনেমার প্রতি যে হেইট্রেট এইটা খালি একটা এসথেটিকাল ঘটনা না, বরং যেই পলিটিকাল রিয়ালিটির জায়গা থিকা অপারেট করে সেই জায়গা দুইটাই ডিফরেন্ট; আর এই জিনিসটারে রিকগনাইজ না কইরা বাংলা-সিনেমার প্রতি হেইট্রেটের ঘটনাটারে লোকেট করা যাবে না আসলে

১০.০৫.২০২৪

এটিএম মেশিনে টাকা তুলতে গেছি; সবচে বড় এমাউন্টের বাটন’টাতে চাপ দিছি, কিনতু টাকা আসে না, জিগায় – আপনি কি ঠিক এমাউন্ট চাইছেন? ইয়েস বা নো বলেন… আজব তো! তো, ইয়েসে চাপ দেয়ার পরে আগের উইনডো’টা আসলো, তখন নো’তে চাপ দিলাম, তা-ও আগের জায়গায় ফেরত নিয়া গেলো; (মানে ফেইসবুকের ডামি-ইস্যুর মতোই ঘটনা, পক্ষে বলেন আর বিপক্ষে বলেন, জিনিস একই!) তারপরে বুঝলাম অই এমাউনট তোলা যাবে না, মেশিনে মেবি টাকা কম; কম এমাউনটে চাপ দিলাম, ফড়ফড় আওয়াজ দিয়া টাকা বাইর হয়া আসলো

তখন বুঝলাম আসল ঘটনা! মেশিনে ১ হাজার টাকার নোট নাই, সব ৫০০ টাকার নোট আসছে; মানে, সেটিংসে দেয়া আছে বড় এমাউন্টে সব ১ হাজার টাকার নোট আসবে, কিনতু যেহেতু তার কাছে ১ হাজার টাকার নোট নাই, বলতেছে, তুমি ভুল করছো 🙂 তার নিজের কোন ভুল নাই! তার কাছে বড় নোট নাই তারপরও কেন আমি সেইটা চাইতেছি! দোষ তো আমার – “তুমি ভুল এমাউন্টের বাটনে চাপ দিতেছো”! মেশিনের কোন দোষ নাই।

নাউ আই ক্যান রিলেট, কবি কতো কষ্ট পাইয়া বলছিলেন – সব দোষ আমার! নিজের দোষ মাইনা নিয়া দুইবারের টাকা চাইরবারে তুললাম।

/”দেশ আমার, দোষ আমার”

১৬.০৫.২০২৪
আমি খেয়াল কইরা দেখলাম, নিজের বাসার বাইরে ভাত খাইতে খুব একটা ভালো লাগে না আমার; মানে, বাসার বাইরে খাইতে হইলে ভাতের বাইরে অন্য কিছুই প্রেফার করি আমি; বেপারটা এইরকম না যে, ভাত খাইতে হইলে একটা বাসা লাগে, বরং বাসার বাইরে ভাত খাইয়া আরাম পাই না তেমন… (মানে, ভাত খাওয়া বেপারটা অবশ্যই আরাম-আয়েশের একটা ঘটনা)

তো, স্ট্রিট-ফুডই (মানে, রাস্তার পাশের ভাজা-পোড়াই) আমার বেশি পছন্দের; গরম গরম কিছু ভাজতেছে মানে যেন দাওয়াত দিতেছে, বলতেছে, খিদা থাকলে খাইতে পারেন তো! এখন তো স্ট্রিট-ফুডের অনেক ভেরিয়েশন বাড়ছে, খালি পুরি-চপ-বেগুনি-সিঙগারা না, নুডুলস, মম, হালিম, রোল, ফ্রাইড-চিকেন, ডিম-স্যান্ডুউইচ, নানান কিছু পাওয়া যায়, বিকাল-সন্ধ্যাবেলায়…

এমনকি বাইরে, দোকানে ভাত-মাছ হইতেছে সবচে দামি খাবার; শস্তা হইতেছে খিচুরি, তেহারি, বিরানি, কিছুদিন আগেও ১২০-১৫০ টাকায় প্যাকেট পাওয়া যাইতো; যেইখানে মোটামুটি-মানের একটা রেস্টুরেন্টে ২০০-২৫০ টাকার নিচে ভাত-সবজি-মাংস-ডাল দিয়া ভাত খাওয়া মোটামুটি ইমপসিবল এখন; আর অইরকম হোটেল খুব বেশি নাইও তেমন; ভালো-ভালো যেইসব রেস্টুরেন্টের নাম শুনি, অইগুলা আগে তো ছিল সব ‘চাইনিজ’; এখনো নানান দেশের কুইজিন – জাপানিজ, কোরিয়ান, স্প্যানিশ, তার্কিশ…

মানে, আমি কমপ্লেইন করতেছি না, জাসট বলতেছি আর কি, এই হইতেছে গিয়া ঘটনা…

/ভাত-খাওয়া

২৪.০৫.২০২৪

হিস্ট্রি রিডিং: শুদ্দ(দ্ধ) বানান ও সঠিক উচ্চারন(ণ)

এই জিনিসটা দেইখা পুরান দুই-তিনটা জিনিস মনে পড়ছে, যেই কারনে পরে ছবি তুলছি, যে ছবি দিয়া বলতে পারলে তো ভালো…

বাংলাতে তো বানান’টা নরমালি ‘ডেকচি’ (মানে, যেইটা হাড়ি-পাতিল যেইটা), কিনতু সেইটারে লেখা হইছে ‘ডেক্সি’… তো, বেপারটা যে ‘ভুল’ – তা না, যেইটা ধরেন হানিফ সংকেত ও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ গং’রা আমাদেরকে বুঝাইতে চান; বরং এইটা হইতেছে জাইনা-শুইনাই একটু সইরা যাওয়া… এবং দেখেন ইংলিশ-বানানটা হইতেছে ‘আসল’ বা ‘প্রায়োরিটি’ – Degchi; এই ইংলিশ থিকা বাংলা-বানানটা হইছে ‘ডেক্সি’; তো, বেপারটা ‘সেক্সি’ হইছে না তাতে!

যেমন ধরেন, টেগোর ছিল, রামাদান হইছে… – এইগুলা ভুল না, বরং একটু সইরা যাওয়া; এইরকম ‘হাজার হাজার’ উদাহারন আছে, ইসপেশালি জায়গার নামে পাইবেন; আমার ‘জীবন থেকে নেয়া’ বা ‘বেইজড অন আ ট্রু স্টোরি’ হইতেছে – আমার বাপ যেইখানে বাড়ি বানাইছেন সেই জায়গাটার নাম হইতেছে ‘পুলতাকান্দা’ – মানে, পুলের (ব্রিজ বা সেতু’র) কান্দায় বা গোড়ার জায়গা; কিনতু অফিসিয়ালি, শুদ্দ কইরা নাম লেখা হয় ‘পলতাকান্দা’ – যেন এক টুকরা জায়গা, একটু ‘কাব্যিক’-ও তো হয় বেপারটা; কিনতু প্রুফ করার কোন উপায় নাই যে কোনটা ‘অরিজিনাল’; খাল-বিল শুকায়া পুল-টুল আর নাই এখন তেমন; মানে, নাম তো একটা হইলেই হইলো… বানান এবং উচ্চারনও…

কিনতু বেপারটা এতোটা ‘সহজ’ না আর কি… যেমন Maxmuller বাংলাতে ‘মোক্ষমূলার’ হয়া থাকতে পারেন নাই বেশিদিন, তারে ‘ম্যাক্সমুলার’ হইতে হইছে, মানে ইংলিশ, ইউরোপিয়ান (এবং ইদানিং এম্রিকান) উচ্চারন হইতেছে ‘অরিজিনাল’; এবং এইভাবে যে কইতে পারে সে হইতেছে বেশি ‘শিকখিত’; অইদিন তো দেখলাম ফোর-স্টার হোটেলের এক ডোর-কিপার ইয়াং-গার্ল কি সুন্দর ব্রিটিশ-একসেন্টে ইংলিশ কইতেছে, আএলটিএস দিয়া বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা তাঁরও তো আছে মনেহয়…

মানে, আমি ঠিক ভাষা-বির্তক নিয়া আলাপ করতেছি না আসলে; আমি বলতে চাইতেছি লজিক-ইভেন্ট-এভিডেন্স মাইনা হিস্ট্রি এতোটা চলে না, বরং এইখানে এইরকম ভাষার মতো ‘একটু সইরা যাওয়া’র ঘটনাগুলা অনেকবেশি ক্রুশিয়াল; এবং এই সইরা-যাওয়াগুলা খুব একটা ‘অকারনে’ ঘটে না আর কি…

কাজী নজরুল ইসলামরে ‘বড় কবি’ মনে না করতে পারার একটা বড় কারন হইতেছে উনার গানগুলারে লিরিকস বইলা আলাদা কইরা ফেলতে পারা, এবং ‘কবিতার মর্যাদা’ না দিতে পারা; যে, কবিতা ও গান তো আলাদা আলাদা ঘটনা!

এইটা (কবিতা ও গানের লিরিকস – আলাদা জিনিস) ট্রু, কিনতু সবসময়ের জন্য না; প্রি-কলোনিয়াল পিরিয়ডে কবিতা ও গান আলাদা কোন কেটাগরি ছিল না, এমনকি গদ্য ও পদ্য বইলা কিছু আলাদা করার দরকার পড়তো না; সাহিত্য মানেই ছিল ‘ছন্দোবদ্ধ’ টেক্সট, এখন সেইটা দিয়া কবিতা বানানো হোক, কাহিনি কিংবা গান

যেই কারনে দেখবেন যারা কলোনিয়াল পিরিয়ডে যারা কবিতা লেখা শুরু করছেন, গান না লেইখা কবিতা লেখতে পারেন নাই; কিছু গান উনাদেরকে লেখতে হইছে, এর কারন এইটা না যে উনারা গানও লেখছেন কবিতার বাইরে – যেইরকম বাংলা-সাহিত্যের অধ্যাপকরা আমাদেরকে শিখান, বরং বিফোর ১৯৩০ বাংলা-ভাষায় কবিতা ও গান এতো আলাদা আলাদা ঘটনা ছিল না; গান লেইখাই কবি হওয়া লাগতো, যেইটা অনেকদিন পর্যন্ত রয়া গেছিল, এটলিস্ট ‘৩০-এর দশকে ‘গদ্য-ছন্দে’ কবিতা লেখার আগ পর্যন্ত মোটামুটি ‘অঙ্গাঅঙ্গিভাবে’ রয়া গেছিল… কিনতু ততদিনে যেহেতু আমরা কবিতা ও গানরে আলাদা আলাদা কেটাগরি করতে শিখে গেছি, একজন কবি’র গানরে তার কবিতা-লেখার বাইরের জিনিস বইলা ভাবতে পারছি, যেইটা সবসময় কাজের জিনিস হয় নাই

এখন ধরেন বব ডিলান বা লেনার্ড কোহেনের গানের লিরিকস শুইনা বুঝতে পারি এইগুলা কম-বেশি কবিতা-ই; মানে, ‘কবিতা’ বইলা একটা জিনিস গানের লিরিকসেও পাওয়া যায় – এইটা অনেকক্ষেত্রে মাইনা নিতে পারার কথা আমাদের, যার ফলে কেটাগরিটারে রিভিউ করার একটা সুযোগও তৈরি হইছে এখন

মানে, আমি বলতে চাইতেছি কাজী নজরুল ইসলামের গানের লিরিকসরেও কবিতা হিসাবে কনসিডার করেন, তাইলে উনার কবি-প্রতিভার জায়গাটারে পুরাপুরি খেয়াল করা যাবে, এমনকি হাছন রাজা, রাধারমন, উকিল মুন্সি, আবদুল করিম’রে কবি ভাবতে আমাদের সমস্যা কিছুটা কম হবে তখন

২৮.০৫.২০২৪
এনকাউনটার করা আর ইগনোর করা

এইরকম একটা ধারনা তো আমাদের আছে যে, নতুন যে কোন চিন্তা, কিছুদিন সময় লাগলেও আমরা রিকগনাইজ করতে পারি বা বুঝতে পারি যে, এইটা ইমপরটেনট; কিনতু এইটা মেবি সবসময় সত্যি না, বরং এইটা মনে-হওয়ার একটা কারন হইতেছে যে, আমরা মনে করি (জ্ঞান, নলেজ, এলেম বা) জানা-বোঝা একটা লিনিয়ার ঘটনা; কিনতু সবসময় তো তা না

এইটা মনে হইতেছে ডেভিড গ্র্যাবারের “ডেবট: ফার্স্ট ৫০০০ ইয়ারস” বইয়ের একটা রেফারেনস দেইখা; উনি ১৯১৩-১৪ সালের দুইটা লেখার* উদাহারন দিতেছিলেন যেইখানে ‘ Money’র বেপারে কিছু ধারনা পেশ করা হইছিল যেইটা আমলে নিলে ‘Barter Economy’ ধারনাটারে ভালোভাবে সন্দেহ করতে পারার কথা, কিনতু অইটারে মোকাবেলাই করা হয় নাই, জাসট ইগনোর করা হইছে, যেন আরগুমেনট তোলা-ই হয় নাই

একইরকমের একটা উদাহারনের কথা Judea Pearl তার The Book of Why বইয়েও বলতেছিলেন; মানে, ইনটেলেকচুয়াল থটের জায়গাতে ‘ট্রেডিশনাল’ বা ‘মেইনস্ট্রিম’ যেই থট আছে বা ভিজিবল থাকে, এর বাইরে অন্য যে কোন পারসপেকটিভ হাজির করলে অনেক সময় জাস্ট ‘ইগনোর’ করতে পারার ভিতর দিয়া-ই ‘মোকাবেলা’ বা এনকাউনটার কইরা ফেলা যায় আসলে, যে অনেক লোকজন তো এইটা নিয়া কথা বলতেছে না! বা যেই লোক বলতেছে সে তো এতোটা পরিচিত না, বা একটু আউট-অফ-দা-বক্স ভাবতে চাইতেছে আর কি… এইভাবেই বাতিল করার বা সরায়া রাখার ঘটনাটা ঘটতে পারে আসলে… যতক্ষণ না অন্য কোন পারসপেক্টিভ আইসা তারে রেলিভেনট কইরা তুলতেছে…

*Innes Mitchell A.; New York’s Banking Review Journal; What is Money (1913), The Credit Theory of Money (1914)

আসিফ নজরুলের একটা ভিডিও ভাইরাল হইছে, সেইখানে উনি বিএনপি’র কি করা উচিত – সেই বিষয়ে বলছেন, যে বিএনপি’র একটা নেরেটিভ তৈরি করা উচিত; তো, এই কথা শুইনা বিএনপি’র লোকজনও মনেহয় খুশি হইছেন, ভাবছেন যে, না, আমাদের তো আশা আছে!

তো, আসিফ নজরুলের কথা সুন্দর, শুনতেও ভালো-লাগে, কিনতু কোন কাজের জিনিস মনে হয় নাই আমার কাছে; মানে, একটা নেরেটিভ তৈরি করা উচিত না – তা না, বরং এই নেরেটিভ বা বয়ান বা মোটাদাগে বলতে গেলে পলিটিকাল প্রপাগান্ডা খালি ইনটেলেকচুয়াল ঘটনা না, এমনকি টেকনিকাল এফিশিয়েনসির ঘটনাও না পুরাপুরি, এইটা কালচারাল ঘটনা না, ইকনোমিক এবিলিটি ও পলিটিকাল পাওয়ারের লগে এসোসিয়েট ঘটনা-ই…

মানে, বিএনপি’র কোন নেরেটিভ নাই বা বিএনপি’র কোন শক্তিশালি ইনটেলেকচুয়াল উইং নাই বা না-থাকাটা বিএনপি’র ব্যর্থতা না, যেইভাবে আসিফ নজরুল পোর্টেট করতে চাইছেন, বরং এইটা বাংলাদেশের পলিটিকাল এনালিস্টদের ডেমোক্রেসির জায়গাটারে লোকেট না করতে পারার ঘটনাই, এমনকি বাটপারি ও দুই-নাম্বারির ঘটনা-ও না, যেইভাবে জিনিসটারে দেখানো হয়; আমাদের দেশে “লিবারাল ডেমোক্রেসি = ১০০% পুঁজিবাদ” বইলা ভাবার ও দেখার যেই ‘হাজার বছরের ঐতিহ্য’ আছে, তার বাইরে গিয়া ক্রিটিকালি ভাবার মুরোদ-ই তৈরি হয় নাই; এখন এইটারে দালালি বা বিএনপি’র ব্যর্থতা বইলা ভাবা’টা অই জায়গাটারে একভাবে এড়ায়া যাওয়ার ঘটনা-ই হয়া উঠে আসলে

২.
সেকেন্ড কথা হইতেছে, বিএনপি তাইলে কি করবে? বা লোকজনের বিএনপি’র উপরে ভরসা নাই কেন? এইটার সহজ কোন উত্তর দেয়াটাও বোকামিই হবে, বরং আমি একটা জায়গার কথা মেনশন করতে চাই, যেইটা আগে অস্পষ্টভাবে বললেও সরাসরি অইভাবে বলা হয় নাই, কারন জিনিসটারে স্যাবোটাজ করা বা উসকানি দেয়া বলা মনে হইতে পারে, কিনতু ট্রুলি স্পিকিং “শান্তিপূর্ন আন্দোলন” বইলা কিছু হয় না আসলে; ভায়োলেন্সের জবাবে ভায়োলেন্ট হইতে হবে – তা না, কিনতু ভায়োলেন্সরে যদি কোনভাবে মোকাবেলা না করা যায়, আরেকটা পাল্টা-ভয় না দেখানো যায়, এই ভায়োলেন্স বাড়তেই থাকবে… এর কোন শেষ হবে না

এইরকমের ধারনা তো আছেই যে গান্ধী’র অহিংস আন্দোলনের বাইরে সুভাষ বসু’র মিলিটারি প্রিপারেশনেরও একটা রোল ছিল ব্রিটিশ-শাসন তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার; নেলসন মেন্ডেলাও ‘অহিংস আন্দোলনের’ লোক ছিলেন না, বরং গেরিলা আক্রমন শুরু করছিলেন বইলা তারে জেলে ঢুকানো হইছিল… মানে, আমি বলতেছি না যে, বিএনপি’রে গেরিলা-যুদ্ধ শুরু করতে হবে! বরং এইটা এবসার্ড একটা ঘটনা হবে। কিনতু যদি কোনভাবে পলিটিকাল মোকাবেলার রাস্তা বাইর না করতে পারে, এজ আ পলিটিকাল পার্টি দে উইল সিজ টু এগজিস্ট।

নেরেটিভ বানায়া বড়জোর হারমোনিয়াম পার্টি হইতে পারবে! নেরেটিভ বানানো পলিটিকাল দলের কাজ না, পলিটিকাল দলের কাজ নেরেটিভগুলারে তৈরি হইতে দেয়া, তাদের সাথে এনগেইজমেন্ট তৈরি করা, পলিটিকাল স্পেইসগুলারে তৈরি করা।

আজকে বাংলাদেশে বিএনপি’র কোন পাল্টা-আঘাত করার ক্ষমতা নাই। তাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মিদের জেলে ভইরা রাখলে, মাইরা ফেললে, তারা কেবল কান্দা-কাটি করতে পারে, এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা তাদের নাই। এখন এই না-থাকাটা বিএনপির ব্যর্থতা না, বরং বালের (BAL)’র নৃশংসতা। কিনতু এইটারে তো এনকাউন্টার করা লাগবে, মোকাবেলা করা লাগবে! কেমনে পলিটিকাল স্পেইসে পাওয়ার গেইন করতে হবে – সেই স্ট্রাডেজি তৈরি না করতে পারলে, একটা মিনিমাম লেভেলে অপারেট না করতে পারলে, সেইটা হবে না। এইটা হইতেছে আমার অবজারভেশন।

৩.
বিএনপি বিরোধি-দলে থাকলেও একটা সময়ে এলাকায় (ওয়ার্ডে বা ইউনিয়নে) বিএনপি’র নেতা হওয়াটা একটা কিছু মিন করতো, একটা পলিটিকাল পাওয়ারের সিম্বল হিসাবে কাজ করতো; এখন স্বেচ্ছাসেবক লিগের সহ-সভাপতি হইলেও তার চাইতে বেশি পলিটিকাল ‘মর্যাদা’ পাওয়া যায়; কেন? কারন বিএনপি’র নেতা হইলে পরে সে খালি সরকারি-জুলুমের শিকারই হবে না, সে যখন বিপদে পড়বে তখন তার পার্টিও কিছু করতে পারবে না; এই না-পারাটা পলিটিকাল পার্টি হিসাবে বিএনপি’রে কম-জোরি কইরা রাখে, এবং পাওয়ারফুল লোকজনরে দূরে সরায়া রাখে; আপনি যদি বড় বিজনেস-পারসন হন, নামি-দামি লোক হন, এবং মিনিমাম ‘মানবিকতা-বোধ’ থাকে আপনি বড়জোর নয়া বাকশালে যোগ দিবেন না, কিনতু বিএনপি করার মতো ‘ভু্ল’ করতে চাইবেন না… এইটা এখনকার বাংলাদেশের পলিটিকাল রিয়ালিটি

এই জায়গাটা থিকা বাইর হইতে হইলে বিএনপি’রে নয়া বাকশালি ভায়োলেন্সের বিপরীতে একটা পলিটিকাল স্পেইস তৈরি করতে পারতে হবে বইলা আমি মনে করি, যেইটা একটা নেরেটিভ তৈরি করার ঘটনা না আর কি…

২৯.০৫.২০২৪
এখনকার সময়ে কিছু রাইটার আছেন যারা জানেন কেমনে ‘সাকসেসফুল’ হইতে হয়, এবং ফরচুনেটলি এমন কিছু রাইটারও আছেন, যারা জানেন এইটা কতোটা অ-দরকারি জিনিস

মানে, সাহিত্য কইরা পপুলার হওয়া যাবে-না না, কিছু মানুশ আপনার নাম-টাম জানলো, ভালো-ভালো কইলো, ধরেন টাকা-পয়সাও ইনকাম হইলো কিছু, এইগুলা তো দরকারি জিনিসই, হইলে বা এচিভ করতে পারলে অবশ্যই ভালো, কিনতু এইটা যে তেমন কিছু মিন করে না, এইটা বুঝতে পারার মতো কিছু রাইটারও আছেন বইলা আমি মনে করি

একটা রিডারশিপ তো দরকারি জিনিস, কেউ যদি আপনার লেখা না পড়ে, লেখা নিয়া কথা না বলে, কোথাও যদি সেইটা এভেইলেবল না থাকে তাইলে তো মুশকিলই; কিনতু একইসাথে যেইটা ভালো-লেখা, দরকারি-লেখা সেইগুলারে যদি আমরা ‘দাবায়া’ রাখি সেইটা সাহিত্যের জন্য, চিন্তার জন্য কোন ভালো ঘটনা না আর কি; তো, একজন রাইটারের (এমনিতে রাইটার একজন ভারনারেবল পারসনই কনফিডেনসের দিক দিয়া, কিনতু) অই কনফিডেনস থাকাটা ভালো যে, অনেকে আমার লেখা পড়তেছে, খারাপ-ভালো কিছু বলতেছে এইভাবে ‘সাকসেসফুল’ হওয়াটা মোটাদাগে তেমন কিছু মিন করে না আনলেস এইটা এজ আ আর্ট-ওয়ার্ক এমনকিছু এচিভ করতে পারে যেইটা বলার মতো একটা কিছু… মানে, পরিচিত-হওয়া, রিডারশিপ পাওয়া অবশ্যই জরুরি জিনিস, কিনতু লিটারারি-সাকসেসের ঘটনা না আর কি তেমন একটা

৩১.০৫.২০২৪

ফেইসবুকে আমের বেচা-কেনা কি রকম, এই বছর?

মানে, আমি আমের বিজনেস শুরু করতে চাইতেছি না 🙂 কিনতেও চাইতেছি না আসলে, বরং এই জিনিসটারে একটা প্যারামিটার হিসাবে দেখতে চাইতেছি… কোন দোকান যদি খুব চালু হয় এলাকায়, দেখবেন অইখানে স্লো-আইটেমও অনেক বেচা হয়া যায়, কারন নানান ধরনের, অনেক মানুশ যাওয়া-আসা করতে থাকলে কারো না কারো চোখে পড়ে জিনিসগুলা, বেচাও হয়া যায়; আবার দেখবেন অনেক চালু-আইটেমও অনেক দোকানে বেচা হয় না, কারন মানুশ-জনের আসা-যাওয়া কম…

তো, আমার একটা ধারনা হইতেছে, ফেইসবুকে আমের বিজনেস কমছে (অন্য অনেক বিজনেসের বেচা-কেনাও কমার কথা); এই কারনে না যে, এইখানে মানুশ-জন সিগনিফিকেনটলি কইমা গেছে, মানুশ খুব-একটা আর আসে না, টাইম পাস করে না, বা মানুশের হাতে খরচ করার মতো টাকা-পয়সা কইমা গেছে (এইটা তো কমছেই, মানে এইটা সত্যি কথা, কিনতু এইটা অন্য সব জিনিসের বেলাতেও খাটে…); বরং আমার ধারনা হইতেছে, ফেইসবুকের নিউজফিড আওমি-বটদের দখলে চইলা গেছে, মোটামুটি আরো বছর খানেক আগেই, কিনতু এখন মোটামুটি সবার-ই সেইটা টের পাওয়ার কথা; যে রিয়েল-আইডি বা রিয়েল-বায়ার নাই না, তাদের কাছে আর রিচ করা যাইতেছে না…

মানে, বেপারটা আর এইরকম না যে, অইরকম ‘তর্ক’ করার মতো ইসু-টিসু নাই, বরং যারা তর্ক-টর্ক করতেছে এরা একটা ‘শো’-ই করতেছে, যেইখানে জিনিসটা আর ‘ফানি’ তো না-ই, বরং এতোটাই মেকি আর বানানো যে, মিনিমাম এন্টারটেইনমেন্টের রিকোয়ারমেন্ট’টাও ফুলফিল করতে পারতেছে না

খেয়াল কইরা দেখবেন, খেলা/ওয়াজ/ওরশ/কনসার্ট যদি জইমা উঠে কোন মাঠে, বাদাম-টাদাম বা খাওয়ার জিনিসপত্রের বেচা-কেনাও বাইড়া যায়; আমি অইরকম একটা এফেক্টের কথা বলতে চাইতেছি…

আরেকটা ঘটনা হইতেছে, একেক সময় একেকটা ক্রেইজ উঠে, এলাকায় নতুন দোকান খুললে যেমন লোকজন ঢুঁ মারে, একবার-দুইবার কিইনা দেখে, অইরকম ফেইসবুকেও লোকজন কিছুদিন কিনছে বইলা আমার ধারনা, এখন আর অইরকম বেপারটা নাই বা ফেইড হয়া আসছে জিনিসটা, ক্রেইজ তো না-ই; যেমন PayPal’র একজন ফাউন্ডার Peter Theil বলতেছিলেন একটা সময়ে বাবল তৈরি হইছিল সিলিকন-ভ্যালি’তে ইনভেস্ট করার, উনারা জাস্ট বাবল’টা ফাটার আগে ইনভেস্টমেন্টটা ম্যানেজ কইরা বাইর হয়া আসতে পারছিলেন… এইরকম ফেইসবুক থিকাও অনেকে বিজনেস বড় করতে পারছেন, পাবলিক-ফিগার হইতে পারছেন, কিনতু অই অপারচুনেটির যেই বাবল’টা ছিল সেইটা ফাইট্টা না গেলেও এক রকমভাবে কিছুটা চুপসায়া আসছে মনেহয়…

অবশ্য কিছুটা আশাও আছে মনেহয়; কারন ফেইসবুকের নিউজফিডে দেখার মতো আম-টাম কেনার অ্যাড ছাড়া দেখার মতো তেমন কিছু নাই আর 🙂

তো, এইটাই আবার ডরের জায়গাটাও; এইটা মনে হইলো বাংলাদেশের টিভি-চ্যানেলগুলার কথা মনে কইরা (এখন কেউ কি দেখেন আর?); ৫-৭ বছর আগে যখন দেখার ট্রাই করতাম তখন অ্যাড ছাড়া আর কিছু দেখা যাইতো না, এই কারনে দেখা-ই বাদ দিছি; এমনকি কোম্পানিগুলা আর বেশি টাকা-পয়সাও দেয় না মনেহয় টিভি-চ্যানেলগুলারে, কারন ভিউ বা বিজনেস তো আসার কথা না তেমন… ফেইসবুকের এখনকার অবসথাও সেইটার একটা আর্লি-এলার্ট কিনা, ভাবতেছিলাম…

অনেকগুলা আমের অ্যাড দেইখা ভাবতেছিলাম, বিজনেস হইতেছে তো তাদের ফেইসবুকে, আগের মতন?

Leave a Reply