নোটস: সেপ্টেম্বর, ২০২১ [পার্ট ২]

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১

আমাদের যে পারসোনাল ভালোলাগা-খারাপলাগা, রুচি-বোধ, সৌন্দর্য্য-চেতনা, এইসেই… এইগুলা পুরাপুরি হিস্ট্রোরিক্যাল ঘটনার ফলাফল না হইলেও, এর লগে কানেক্টেড একটা জিনিস।

এইটা মনে হইতেছিল, বেল-মাথা বা মাথা ন্যাড়া করার ঘটনা’টা ভাবতে গিয়া। এখনো জিনিসটা সোশ্যালি ইনফিরিয়র বা অকওয়ার্ড জিনিস তো! লোকজন খেপাবে, বা ধইরা নিবে মেডিক্যাল কোন সমস্যা, মাথায় চুল-টুল নাই মনেহয়, এই কারণে মাথা কামায়া ফেলছে। আর বেশিরভাগ কেইসে ঘটনা তো এইরকমই। তো, এই ইনফিরিয়টিরটার শুরু কই থিকা?

আমার ধারণা, বৌদ্ধধর্মের জায়গা থিকা এইটা শুরু হইছে; বৌদ্ধরা তো মাথা কামায়া ফেলে, বা এইটা একটা সময় আইডেন্টিটি বা রিচুয়াল হিসাবে ছিল এই অঞ্চলে; তো, বৌদ্ধদের তো পালাইতে হইছে এই অঞ্চল থিকা বা নিচু-জাত হিসাবে হিন্দু-ধর্মের আন্ডারে থাকতে হইছে; সেই থিকা একটা নিচু-জাতের ব্যাপার হিসাবে পারসিভ হইতে পারার কথা। আগের দিনে বা দুই-তিন জেনারেশন আগেও গ্রামে কোন চোর ধরা পড়লে তারে মাথা-কামায়া (পুরা না, উল্টা-পাল্টা কইরা চুল কাটায়া) গ্রাম থিকা বাইর কইরা দেয়ার ঘটনা ঘটতো; মানে, চুল যে কাটতে হইতেছে, এইটা হইতেছে একটা শাস্তি!

এই কারণে দেখবেন, বেটা-মানুশদের বড় চুল-দাড়ি দেখলেও রেসপেক্ট করার একটা ব্যাপারও অলমোস্ট অটোমেটিক্যালি চইলা আসে (সুট-কোটের মতোই, আরেকটা ভার্সন); এইটা হিন্দু-ধর্মের জায়গা থিকা আসে – এইটা আমার দাবি না; কিন্তু এইটারে সুপিরিয়র বা সুন্দর মনে করার পিছনে মুনি-ঋষিদের বেশ-ভূষার ইমপ্যাক্ট যে নাই – তা তো না।

মানে, আমি একটা ধারণার কথাই বলতেছি। বলতেছি যে, কোনটা সুন্দর, কেমনে সুন্দর – এইটার এসথেটিক্যাল একটা হিস্ট্রি আছে, প্রতি ৫০/১০০ বছর পর পর ড্রামাটিক্যালি চেইঞ্জ না হইলেও জায়গাগুলা সরতে থাকে একভাবে।

তো, বাংলার এসথেটিক্যাল হিস্ট্রিটাও তো লেখা দরকার আসলে 🙂

 

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১

আবারো দেখেন পাবলিকরেই গালি-গালাজ করা হইতেছে, লোকজন বেক্কল, লোভী এবং কিছুই বুঝে না! ডেসটিনি, যুবক, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এবং মওলানাদের ওয়াজ শুইনা ধরা খাইতেছে; নিজেদের কোন বোধ-বুদ্ধি নাই!

আসলে কি নাই? নাকি লোকজন বিশ্বাস করে যে, নিয়ম মাইনা বাংলাদেশে কিছুই করা সম্ভব না? নাকি প্রশ্নটাই উল্টা’টা যে, দেশে পাবলিক ইনভেস্টমেন্টের কোন সিকিউরিটি নাই?

যেহেতু ক্ষমতা চলে ‘অবৈধ’ উপায়ে, নিয়ম না মানার ভিতর দিয়া; সেই কারণে যেই জিনিসটা কোন ‘নিয়ম’ মানে না, সেইটারই সাকসেসফুল হওয়ার চান্স কি বেশি না? মানে, এইরকম একটা ‘যুক্তি’তে কেউ যদি বিশ্বাস করেন, দোষটা আসলে কতোটা অই লোকের, বা লোকদের?

তাই বইলা ‘রেশনাল’ হওয়া যাবে না – তা না; কিন্তু ঘটনা এইখানে দুইটা – রেশনাল কি জিনিস আপনি জানেন বা বুঝেন কিনা? দুই হইতেছে, বাংলাদেশে এই রেশনাল কাজ কইরা আপনি ভাত পাইবেন কিনা? ধইরাই নেয়া হইতেছে যে, মানুশ জানে না! জাইনাও ইরেশনাল কাজ করার জন্য ইন্সপায়ারড হইতেছে কিনা, বা কেন হইতেছে – এইটা নিয়া কোন আলাপই নাই।

আমার ধারণা, তিনটা কারণে নাই। এক হইতেছে, ঘটনাগুলা ‘বিচ্ছিন্ন’ হিসাবে দেখা; যেন দেশের ওভারঅল পলিটিক্যাল সিচুয়েশনের ইকনোমিক এক্টিভিটির উপরে কোন ইমপ্যাক্ট নাই, বা অনেক দূরের ঘটনা; আসলে তো তা না। সেকেন্ড হইতেছে, দোষ তো সবসময়ই দেশের মানুশের! বাঙালি জাতটাই খারাপ, লোভী, এই-সেই।

আর থার্ড এবং সবচে জরুরি ব্যাপার হইতেছে, অথরিটিরে ডরানো এবং কোশ্চেন না করতে চাওয়া আসলে; যখন আপনি ক্ষমতার জায়গাটারে আন-কোশ্চেনড রাখতে চান, তখনই দেখবেন পাবলিকের কোন না কোন দোষ খুঁজেই পাইতেছেন সবসময়।

পাবলিকের দোষ নাই – এইটা আমার কথা না, কিন্তু পাবলিক যাতে কম ভুল করতে পারে, সেই অবস্থাটা কখনোই তৈরি হইতে পারে না যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা-দখল করাটাই নিয়ম হিসাবে কায়েম করা হয় সমাজে। তখন এইটা খালি রাজনীতির নিয়ম না, বরং একটা সোশ্যাল-নর্মস হিসাবে এমার্জ করে। এই জায়গাটারে বাতিল করতে চাওয়ার ন্যারেটিভটারে মাইনা নেয়াটা ঠিক হবে না, কোনভাবেই।…

 

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১

খ্রিস্টিয় পয়লা শতকের দিকে যখন মার্কেন্টাইল ইকোনমি গ্রো করতেছিল ইন্ডিয়ায়, তখনকার সময় নিয়া কথা বলতে গিয়া রমিলা থাপার বলতেছিলেন, যারা আগে ধর্ম-কর্ম নিয়া থাকতেন, হিন্দু-ব্রাহ্মণ বা বৌদ্ধ-শ্রমণ, উনারা আরেকটা sect বা জাত/শ্রেণী হিসাবে সমাজে ইনক্লুডেড হইছিলেন – “Alternatively the religious sect itself became a jati.”

তো, উনার এই কথা পইড়া কয়েকটা জিনিস মনে হইলো।

এখনকার সেক্যুলার, ‘মানবতার সৈনিক’ যারা, উনারা দেখবেন অই ‘মওলানা-পুরোহিত-ভিক্ষু-প্রিস্টদের’ উপ্রেই সবসময় খেইপা থাকে; যে কাজ-কাম নাই কোন (মানে, মোড অফ প্রডাকশনের লগে কোন রিলেশন নাই), আল্লা-ভগবান-ঈশ্বর-নৈতিকতার ডর দেখায়া মানুশের উপর ছড়ি ঘুরায়, অথরিটি হয়া উঠতে চায়! (কবি-সাহিত্যিকরা যে আজাইরা লাইফ লিড করে – সেইটাও এই প্রডাকশন-সিস্টেমের বাইরের ঘটনা বইলা একভাবে ফানি লাগে বা গা-জ্বলে; আরো অনেক জিনিসের বাইরেও…)

এইটা যে হয় না – তা না; কিন্তু এইটা যে একটা ‘জাত/ক্লাস/শ্রেণী’ – এই রিকগনিশনটা এখনো আছে, সমাজে। এইটা অবশ্যই চেইঞ্জ হইছে, evolve হইছে নানানভাবে, কিন্তু আছে। এইটা একটা পয়েন্ট।

সেকেন্ড পয়েন্ট হইতেছে, এইটা যে সবসময় অথরিটি হয়া উঠতে চাওয়ার ঘটনা – তা না, ব্যক্তির জায়গা থিকা অনেক সময় এস্কেপিস্ট জিনিসও; যেমন খেয়াল করছেন কিনা, গল্প-উপন্যাস-অটোবায়োগ্রাফিতে এইরকম জিনিস পাইবেন, যারা ‘সংসারি’ হইতে চাইতো না, এখনো এই গ্রুপটা আছেন, যারা মেবি ‘ঘুরতে চান’ বা ট্রাভেলার হিসাবে মার্কড হইতে চাইতেছেন এখন; একটা সময়ে ‘তাবলীগে’ এই সুযোগ’টা ছিল; মাইজভান্ডারি, বাউল, এমনকি ‘স্বদেশি-বিপ্লবী’ হওয়াটাও… মানে, এইগুলারে খালি ধর্ম-সমাজ-রাজনীতির ট্রাডিশন্যাল সংজ্ঞার ভিতর দিয়া দেখতে গেলে খেয়াল করা যাবে না আসলে।…

এই জায়গাটা আরো জটিল অবশ্যই; মানে, একটা ইকনোমিক সিস্টেমের ‘পরগাছা’ বা ‘জরুরি আধাত্মিক ঘটনার’ বাইরেও দেখার স্কোপ আছে।

 

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১

– কবিতা কেমনে পড়বো আমরা? –

কবিতা কেমনে পড়বো আমরা – তার সুর দিয়া, ধ্বনি-মাধুর্য দিয়া, নাকি তার মিনিং দিয়া? এইরকমের একটা পাতি-কোশ্চেন দেখবেন আছে বাজারে। পাতি বলতেছি কারণ এইটা কোন কোশ্চেন না আসলে, বরং কোশ্চেন করার ঢং একটা। কারণ, আমরা যারা কবিতা পড়ি, তারা জানি যে, পুরা ঘটনাটাই কবিতা – ভাষা, শব্দ, সুর, মিনিং এবং এমনকি যা যা কিছু দেখা যায় না, ফিলিংস, কনটেক্সট, ঘটনা, অইগুলাও থাকে।

এইটা ট্রু যে কোন কোন সময়ে এবং কোন কোন কবিতাতে সার্টেন প্যারামিটার মেইন হয়া উঠে; যেমন, বিফোর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধায় ছন্দ এবং অন্তমিলের বাইরে যে ‘গদ্য কবিতা’ হইতে পারে বাংলা-ভাষায় (এবং সম্ভবত দুনিয়াতেই) এই ধারণা ছিল না; এমনকি এর পরেও ৫০/৬০ বছর লাগছে জিনিসটা শুরু হইতে এবং মাইনা নেয়ার জায়গাটাতে এখনো আপত্তি পাইবেন, খেয়াল করলে।

তো, যে কোন একটা জিনিস যেমন ‘কবিতা’ হয়া উঠতে পারে না, একইরকমভাবে কবিতার কোন মিনিং নাই, সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট এবং পলিটিক্যাল ও আইডিওলজিক্যাল প্রপাগান্ডা নাই, সেইটা বললেও ভুল হবে আসলে।

কবিতা, বরং আমরা পড়ি একটা কবিতা-ধারণার জায়গা থিকাই। আর একটা কবিতা এই ধারণার জায়গাটাতেও কন্ট্রিবিউট করে, তারে চেইঞ্জ করতে পারে; যে, আরে, এইটাও কবিতা! যে কোন আর্ট-ফর্মেই এই জিনিসটা কম-বেশি ঘটে। কিন্তু একটা সময়ে এইরকম ধারণার জায়গাগুলাও থাকে যে, এই এই রকম ভাবে লেখতে হবে বা পড়তে হবে কবিতা।

এইরকম রিডিংগুলা সবসময়ই আল্টিমেট ঘটনা তো না, আবার বাতিল জিনিসও না। আমি মনে করি, আমাদের কাজ হইতেছে, কবিতা যতটুক মিনিং তৈরি করতে পারে; সোশ্যাল, পলিটিক্যাল ও আইডিওলজির দালালি করে, সেই জায়গাগুলারে আন-নোটিশড না করা, তারে জোর কইরা ‘গোপন’ ও ‘রহস্যময়’ না কইরা তোলা; আর এইরকমের রিডিং কবিতারে ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ করার চাইতে আর্ট-ফর্ম হিসাবে আরো সুন্দর কইরা তুলতে পারারই কথা।

#########

বিরোধিতা তো ভালো জিনিস, কিন্তু খারাপ হইতেছে ফেইক-বিরোধিতা বা আপাত-বিরোধিতা, যেইটা আসলে কোন বিরোধিতাই না। যেমন ধরেন, সিপিবি আর আওয়ামী লীগ’র ঘটনাটা; কোন বিরোধিতা এইখানে নাই – দুইটা আসলে একই দল; এখন এইটারে অপজিশন হিসাবে নিলে সেইটা হবে অন্য কোন জরুরি-বিরোধিতার জায়গারে বাদ দিতে চাওয়ার ঘটনা। একটা ইভিল-সার্কেল এইভাবে ছদ্ম-বিরোধিতার ভিতর দিয়া জায়গাটারে ভরাট করতে থাকে, যাতে কইরা বিরোধিতার জায়গাগুলাতে আপনি রিচ-ই না করতে পারেন।

খালি পলিটিক্সের জায়গাতেই না, অন্য সব জায়গাতেও এই ধরণের ঘটনাগুলা ঘটে।

এমনকি যে কোন ইস্যুতেই দেখবেন অনেক সময় সার্পোট করতে গিয়াও মেইন কনসার্নটারেই গায়েব কইরা দেয়া হয়। যেমন, রেইপের ঘটনাটা; যে কেউই বলবে, ক্রাইম এইটা; কিন্তু সমাধান হিসাবে যেই জায়গাগুলা আসে যে, মেয়েদেরকে বইনের মতো, মায়ের মতো দেখতে হবে! যেইটা বাই এনি মিন্স, ফিমেইল আইডেন্টিটিরে দেবী ভার্সেস ডাইনি ক্যাটাগরিতে ফেলে দেয় যে, ‘খারাপ-মেয়ে’ হইলে রেইপ করা ঠিকাছে! ভয়াবহ একটা জিনিস এইটা। যেইরকম কেউ ‘খারাপ-মানুশ’ বইলা তারে গুম-খুন-ফাঁসি দেয়াটাও মাইনা নিতে হবে।… মানে, উপরে উপরে মনে হইতে পারে, আমি ‘ভালো’ চাইতেছি; অথচ মেইন কনসার্নটারেই এভেয়ড করা হইতেছে এইখানে। এইরকম ‘মিল’র জায়গাগুলা নিয়াও সাবধান থাকা দরকার সবসময়।

মানে, কে বিরোধিতা করতেছে বা কে পক্ষে আছে – এইটা দিয়া জায়গাটারে লোকেট করা যাবে না; বরং কোন জায়গা থিকা বিরোধিতা বা সার্পোট করার ঘটনাগুলা ঘটতেছে, সেইটাই ঘটনা। যার ফলে পক্ষ-বিপক্ষ তেমন কিছু মিন করে না অনেক সময়; দেখা যায়, একই গ্রাউন্ড থিকা ‘পক্ষ-বিপক্ষ’ গেইমটাই চলতেছে, বেশিরভাগ সময়।…

 

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১

[ কয়দিন আগে Mijanur Rahman’র শেয়ার করা জিজেকের কাহিনি’টা পড়তে গিয়া মনে হইলো এই জিনিসটা; যে,] ‘ভালো-বাপ’ ‘ভালো-গর্ভমেন্টের’ মতোই রেয়ার একটা জিনিস!

নাই যে – তা না, যেমন ওয়েল-ফেয়ার স্টেইটগুলার গর্ভমেন্ট (আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, এইরকম…) কম্পারেটভলি ভালো বইলা আমার ধারণা। যেই গর্ভমেন্ট কম এন্টারভেইন করে তার সিটিজেনের লাইফে, সেইটা যেইরকম বেটার গর্ভমেন্ট; একইরকমভাবে যেই বাপ তার বাচ্চা-কাচ্চাদের লাইফে কম এন্টারভেইন করেন, উনি কিছুটা হইলেও ভালো হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে আছেন বা থাকতে পারেন বইলা মনে হইছে, আমার পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সের ভিতর দিয়া। মানে, এইটারে ইউনিভার্সাল কোন সূত্র হিসাবে নেয়া যাবে না।

এমনিতে গত শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাপ’র আইডেন্টিটি তো ছিল অথরেটেটিভ, পরে একটা এবসেন্ট-টাইপ ঘটনা হইছে; এখন মনেহয় ফ্রেন্ডলি-টাইপ হইতে হয়; মানে, আমি পারসোনাল না, বরং সোশ্যাল-এক্সপেক্টশনটার কথা বলতেছি।

ফ্যামিলিও যখন যৌথ-ফ্যামিলি ছিল, যেহেতু একটা জায়গাতে থাকতে হইতো আর জমি-জিরাত ছিল সেন্টার পয়েন্ট ইকনোমিক এক্টিভিটির; কিন্তু অই জায়গাটাতে যখন কল-কারখানার প্রডাকশন সেন্টার হইছে, সিঙ্গেল ফ্যামিলি এমার্জ করছে; তখন অথরিটি দেখানোর স্কোপও নাই তেমন, পজিশন বা আইডেন্টিটি হিসাবে মোরাল একটা জায়গাতেই শিফট করছে; আর তালগোল পাকাইতেছে।…

কিন্তু গর্ভমেন্ট যদি একটা দেশের বাপ হইতে চায়, মোরাল অথরিটি হয়া উঠতে চায় তাইলেই সবচে বড় বিপদের কথা। কারণ গর্ভমেন্ট দেশের বাপ না (চাকর বলাটাও মনেহয় ঠিক হবে না), বরং একটা ওয়ে, যেইখানে পিপলস অথরিটি ঠিকমতো ফাংশন করতে পারে।… আর বাপ আসলে অথরিটি না বইলাই চাকর না; রোল বা পজিশন হিসাবে একটা ওয়ে হইতে পারলেই মেবি বেটার।

মানে, এইখানে একটা ডিলেমা আছে; উপমা বা উদাহারণের। জিনিসগুলা যে কখনোই হুবহু একই ঘটনা না, মিল ও অমিল আছে – অই জায়গাগুলারে নজর-আন্দাজ না করতে পারলে, আলাপগুলা একেকটা ডিজাস্টারই হয়া উঠতে পারে, যে কোন সময়।…

#########

অনেকেই বলতেছেন, ইভ্যালির এমডিরে জেলে নেয়ার ভিতর দিয়া ঘটনাটার কোন ফয়সালা হয় নাই, বরং তারে ভাগ-বাটোয়ারার একটা ব্যবস্থা কইরা পালায়া যাওয়ার সুযোগ কইরা দেয়া হবে। ইভ্যালির মালিকদের কাছে যা টাকা আছে, সেইটাও এখন রিমান্ডে নিয়া খাইয়া ফেলা হবে। এই অনুমান সত্যি নাকি মিথ্যা – সেইটা ঘটনা না, বরং বারবার এইরকমই তো হয়া আসতেছে, একইরকম তো হইতেছে, বাংলাদেশে!

পাবলিকরে এক টাকাও দেয়া হবে না। দেয়ার কোন ইচ্ছাও নাই। বা এই নিয়া কোন কথাই পাইবেন না কোথাও।

শেয়ার মার্কেটের ডাকাতি থিকা শুরু কইরা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলা ফিনান্সিয়াল ক্রাইম হইছে, কোনটার টাকাই পাবলিকের কাছে ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় নাই। বরং কিছু লোকজনরে জেলে নেয়ার ভিতর দিয়া অইসব টাকার ভাগ সরকারি লোকজনই নিয়া নিছে।
এই কারণে যারা এই ঘটনায় খুশি হইতেছেন, উনারা এই কারণেই খুশি হইতেছেন যে, কিছু লোক বিপদে পড়ছে এবং এই বিপদ থিকা তারা আর উদ্ধার পাইবেন না। এইটা ‘ন্যায়বিচারের’ আনন্দ না। এইটা হইতেছে মানুশের বিপদ দেইখা হাততালি দেয়ার ঘটনা।

ইভ্যালির এমডিরে রেব গ্রেফতার করার মানে হইতেছে শেয়ালের কাছে মুর্গি বাগি (বন্ধক) দেয়া। এর বেশি কিছু না।

 

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

এই অবিচুয়ারি যে কেমনে লেখি! 🙁

এম এম ওবায়দুর রহমান’রে তো আমি চিনি না আসলে, চিনি না মানে সামনাসামনি কখনো তো দেখা হয়ই নাই, ফেসবুক বা মেসেঞ্জারেও না; কিন্তু উনার পোস্ট আমার নিউজফিডে আসতো, দেখছি। কখনো খুববেশি যে লাইক-টাইক দিছি তা-ও না, উনার লাইক-কমেন্টও নোটিশ করি নাই আমার পোস্টে, মানে লাইকালাইকির যোগাযোগও ছিল না তেমন। ইলেকট্রনিক্স বা সিসি-টিভির বিজনেস করতেন মনেহয়, বিজনেস নিয়া, লাইফ নিয়া, ফ্যামিলি নিয়া পজিটিভ কথা বলতেন। বিএনপি করতেন বইলা ফেসবুক আইডি নিয়া বিপদে পড়ছিলেন মনেহয়। নতুন আইডি থিকা রিকোয়েস্ট পাঠাইছিলেন কিছুদিন আগে, তখন চিনতে পারছিলাম, উনার আইডিটা।

গতকাল রাতে উনার আইডি থিকা কয়েকটা পোস্ট আসলো নিউজফিডে। উনার ওয়াইফ উনার আইডি থিকা পোস্ট দিয়া হেল্প চাইতেছেন, এম্বুলেন্স চাইতেছেন।… আজকে নিউজফিডে দেখলাম কয়েকজনের পোস্ট, উনি মারা গেছেন।

এইরকমের কাছাকাছি একটা ঘটনা ঘটছিলো, কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের বেলায়। ফেসবুকে অনেক তর্ক-বির্তক হইছে উনার লগে। পারসোনালি একবার দেখা হইছিল। কিন্তু রিলেশনটা ফেসবুক বেইজডই ছিল।

ফেসবুক আইডি’টা তো আছে এখন! কিন্তু আইডিটাই মানুশটা না। কিন্তু আইডিটাই ভিতর দিয়াই তো আমাদের যোগাযোগটা। আর আইডিটা তো আছে! যখন আশেপাশের লোকজন বলতে থাকবে আইডিটারে ট্যাগ কইরা যে, মারা গেছে, তখন বুঝতে পারবো আমরা যে, এই আইডি থিকা কোন পোস্ট, লাইক, কমেন্ট আসবে না আর। এমনকি ৫হাজার ফ্রেন্ড হয়া গেলে, অই আইডিগুলারে কি আনফ্রেন্ড কইরা দিবো না, একটা সময়? (না করলেও) অই আইডিগুলা তো মনেহয় ‘রিমেম্বারিং’ হয়া যায় বা ইন-এক্টিভ থাকতে থাকতে একটা সময় বাতিল হয়া যাবে না?

আমাদের ডিজিটাল কবরখানাগুলা কি রকম হবে আসলে, ফিউচারে? অটো মেমোরি শেয়ার দিতে পারবে? ডেথটারে কি ডিজ-এপিয়েরেন্সের জায়গা থিকা উদ্ধার কইরা ফেলতে পারবে? বার্থডের মতো মনে করায়া দিবে যে, কবরে ফুল দিতে যাও!

 

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১

টিকটক

টিকটক আসলে ফর্ম হিসাবে ফেসবুক, এমনকি টুইটারের চাইতেও মোর প্যাসিভ, যার ফলে ইউজারের দিক থিকা বেটার।

মানে, এই দুইটা তো কম-বেশি টেক্সট বেইজড, বা আসলে ইমেজ-প্রধান। টেক্সটের ব্যাপারে যা হয়, শব্দগুলা পইড়া তারপরে মাথার ভিতরে নিয়া চিন্তা কইরা কানেক্ট করা লাগতেছে, দুইটা স্টেপের ঘটনা। এই কারণে ফেসবুক দেখবেন টেক্সটের বদলে ইমেজ’রে প্রমোট করে বেশি। (চেহারা সুন্দর, ভালো ফটোগ্রাফির ঘটনা না এতোটা, সবসময়।) ইমেজও রিড করা লাগে, কিন্তু টেক্সটের মতো দুইটা লেয়ারের জিনিস না এতোটা। একটা ইনার-মিনিং আর ভিজিবল-মিনিং টাইপের লেয়ার থাকলে তো বেটার, কিন্তু টেক্সটের চাইতে ইমেজের কানেকশনটা অনেক বেশি ডাইরেক্ট, সবসময়।

১৫/২০ সেকেন্ডের ভিডিও তো আরো বেশি আসলে ডাইরেক্ট আসলে। আসতেছে-যাইতেছে, না-দেখলেও দেখা হয়া যাইতেছে। রাস্তা দিয়া হাঁইটা যাওয়ার মতন। না তাকাইলেও অনেক কিছু চোখে পড়তেছে। এইটা তো তখন মোর রিয়েল! তো, এই জিনিসটা টিকটকে আছে। ফেসবুকের ভিডিও ফিচার কপি করার ট্রাই করতেছে কিছু, কিন্তু পারবে না আসলে। পারার কোন কারণও নাই। মানে, তখন সেইটা আসলে ফেসবুক থাকবে না আর, টিকটক-২ হয়া উঠবে, এক রকমের।

তো, ফর্মের এই ইজিনেস বা মোর-প্যাসিভনেসই পুরা ঘটনা না, কিন্তু এইটা একটা মেজর ঘটনা।

#########

– বাংলাদেশে মাদরাসার স্টুডেন্টরা ছাড়া অন্য কেউ বাংলা-বই কেন পড়বে? –

যত যা-ই বলেন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-ভার্সিটির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যদি না থাকে, বইয়ের বিজনেস থাকবে না। মানে, হাজার হাজার বই ছাপানোর দরকার আসলে পড়বে না। স্টুডেন্টদের বাইরে যারা বই পড়েন, সেই সংখ্যাটা সবসময়ই কম ছিল সমাজে, এখনো খুববেশি বাড়েও নাই, কমেও নাই। বরং একটা সময়ে বই-পড়া যেমন স্মার্টনেসের ঘটনা ছিল, এখন অইখানে সিনেমা-দেখা, গেইমস-খেলা আরো অনেককিছু অ্যাড হইছে। বই-পড়ার স্টিল সোশ্যাল এবং ইন্টেলেকচুয়াল ভ্যালু আছে, কিন্তু বিজনেস হিসাবে টিইকা আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্টুডেন্টদের কারণেই।

এখন বাংলাদেশে যারা ইংলিশ-মিডিয়ামে পড়াশোনা করেন, তাদের তো বাংলা-বই পড়ার কোন মানে নাই; মানে, পড়তেই পারেন, কিন্তু না পড়লে কোন জিনিসটা উনারা মিস করবেন আসলে, জ্ঞান-বিজ্ঞান বা জানা-শোনার? এমনিতে পড়তেও সমস্যা হওয়ার কথা, কারণ লিখিত-বাংলা বা বলাবলির-বাংলার ডিফরেন্স হিউজ; যেইসব জিনিস আমাদের ডেইলি কথা-বার্তার মধ্যে নাই, সেইসব শব্দ দিয়া লেখাটাই এখনো লেখার জায়গায় ‘আধুনিক’ বাংলা হয়া আছে; যেইটা মোটামুটি ১০০ বছর আগের অন্য আরেকটা ভাষা-ই।…

বাংলা-মিডিয়ামের স্টুডেন্টদের হয়তো বাধ্য হয়াই পড়তে হয়। কিন্তু যারা পড়াশোনা করেন তাদের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারার কথা যে, এই বাংলা-বইগুলা তো আসলে সেকেন্ডারি বই; যেইসব জিনিস লেখা হইতেছে সেইগুলা ইংরেজিতে বহুতদিন আগেই বলা হয়া গেছে, বা মোস্টলি অইগুলারই একো (প্রতিধ্বনি) এক রকমের। যার ফলে, যে কোন বিষয়েই আপনি পড়াশোনা করতে চান, ইংরেজি পড়তে জানতে হবে আপনারে। বাংলাতে বই নাই না, বাংলাতে কোন নতুন চিন্তার বই নাই।

এখন মাদরাসার স্টুডেন্টরা কি ইংরেজি জানেন না? তাই বইলা উনাদেরকে বাংলা বই পড়া লাগবে? না, ব্যাপারটা এইরকম না। এইখানে দুইটা ঘটনা আছে বইলা আমার ধারণা, এক হইতেছে, উনারা যেই আরবী, ফারসি বই পড়েন, সেইখানে বাংলায় তরজমাটা হেল্প করে। মাদরাসা লাইনে যেই আলেমরা আছেন, উনারা ব্যাখ্যামূলক বইগুলা বেশিরভাগ বাংলাতে লেখেন, যেইগুলার একটা রিলিভেন্স আছে, আরবী-ফারসি টেক্সটগুলার লগে। (এইটা আমারা ধারণা, কিন্তু যারা মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন, তারা বেটার বলতে পারেন এইটা কতোটা সত্যি কথা।)

কিন্তু সেকেন্ড জিনিসটা আমি আরেকটু জোর দিয়া বলতে পারি, সেইটা হইতেছে, মাদরাসাতে হিস্ট্রিক্যালি ইংরেজি প্রতি এক ধরণের হেইট্রেট বা ঘৃণা থাকার কথা। কারণ ইংরেজরা আসার পরে রাষ্ট্রীয়-ভাষা ফারসি থিকা ইংরেজি যখন করা হইছে, তখন খালি রেফারেন্স ও চিন্তার জায়গাটায় চেইঞ্জ হয়া যায় নাই, বরং ফারসি একটা ইনফিরিয়র ও পুরানা আমলের জিনিসে কনভার্ট হয়া গেছে। অই হিস্ট্রিক্যাল ট্রমা’টা এখনো অইখানে থাকার কথা। এই কারণে এমনকি ইংরেজি কোন ওয়ার্ড দেখলেও সেই ঘৃণাটা জাইগা উঠতে পারে অনেকসময় 🙁 এবং এই জায়গাতে বাংলা বরং অনেকবেশি মাইনা নেয়ার মতো ঘটনা, বা রিলেটিভলি আপন লাগার কথা।…

এইরকমের একটা সোশিও-পলিটিক্যাল অবস্থার কারণে, আমার ধারণা, ফিউচারে বাংলা ভাষাতে ‘ভালো’ বাংলা-বই মাদরাসার স্টুডেন্টদের কাছ থিকাই পাবো! এমনকি বেশ প্যারাডক্সিক্যাল শুনাইলেও, এই যে সংস্কৃত-ঘরানার ‘শুদ্ধ-বাংলা’ আছে, তার জিম্মাদার হয়তো এই মাদরাসা লাইনের রাইটারাই হয়া উঠবেন, বা অলরেডি হয়া উঠতেছেন এখন। যার ফলে, ‘শুদ্ধ-বাংলার’ রাইটারদের ঘৃণা (হুমায়ূন আজাদ থিকা এর শুরু) অইদিকে ‘ধাবিত’ হইতেছে; কারণ জমিদারিটা শিফট হয়া যাইতেছে একভাবে। আর এইটা খালি নাম্বারের কারণে হইতেছে না আসলে।

একটা ভাষা খালি বেশি মানুশ বলে বইলা টিইকা থাকে না, বা ইকনোমিক পাওয়ারের কারণেও না; মানে, এইগুলা আছে; কিন্তু এর বাইরেও দুইটা ঘটনা আছে – এক হইতেছে, ভাষাটা কতোটা নিতে পারে অন্য ভাষাগুলা থিকা, মানুশের বলাবলির কতোটা কাছে থাকতে পারে, এইটা জরুরি একটা জিনিস। ভাষারে সরতে পারতে হয়, মানুশরে নেয়ার জায়গা কইরা দিতে হয়।… সেকেন্ড হইতেছে, কতোটা নতুন চিন্তা তৈরি হইতে পারতেছে ভাষাটাতে; দেখবেন, অনেক ভাষা মারা গেছে, কিন্তু চিন্তাগুলা এক ভাষা থিকা আরেক ভাষাতে ট্রান্সফার হইতে হইতে এখনো চলে আসতেছে। অনেক ভাষা মারা গেলেও অই ভাষার চিন্তা, কবিতা মারা যাইতেছে না, বরং চিন্তার কারণে অই ভাষার রিলেভেন্স থাইকা যাইতেছে। মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইগুলাও আসলে কন্সিডারেশনের জায়গা।…

 

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১

– শাহবাগ ৪: মিডিয়া-রিয়ালিটির কবরস্থান –

শাহবাগ নিয়া ২০১৩ সালের মে মাসে তিনটা লেখা আমি লেখছিলাম। অইখানে আমার মেইন আর্গুমেন্ট ছিল তিনটা – এক, শাহবাগের দুইটা ফেইজ ছিল, ফার্স্ট ওয়েবটা ছিল খুবই স্টানিং, এসটোনেশিং, মানে হঠাৎ কইরা উদয় হওয়া; এইরকম একটা মোমেন্ট ছিল; যেইটা খুব তাড়াতাড়িই একটা মিডিয়া-রিয়ালিটিতে কনভার্ট হইছে, বা শুরু থিকাই হয়তো তা ছিল, কিন্তু সেইটা রিভিল হইতে, পুরাপুরি মিডিয়ার কন্ট্রোলে যাইতে কয়েকদিন সময় লাগছে; আর যখন এইটা হইছে, কোণায় কোণায় সিসি-ক্যামেরার মতো টিভি-ক্যামেরা, ফটোগ্রাফার’রা তাদের পজিশন নিয়া নিছে। সেকেন্ড হইতেছে, শাহবাগের ভিতর দিয়া কিছু পুরানা প্রশ্নরে জাগায়া তোলা হইছে – ইসলাম ভার্সেস মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ভার্সেস নাস্তিকতা, এইরকম কিছু জিনিস, যেইগুলারে এখন পর্যন্ত চিন্তার যেই বেইজ আছে, তা দিয়া আমরা সমাধান করতে পারবো না; আমাদেরকে এইসব প্রশ্নের গ্রাউন্ডগুলারেই কোশ্চেন করতে পারতে হবে; তা নাইলে এই চক্কর থিকা আমরা বাইর হইতে পারবো না। থার্ড, শাহবাগ শেষমেশ একটা মিডিয়া-শো’তে পরিণত হইছে।*

[*এই কথাগুলা এখন যেইরকম ক্লিয়ারলি বলতে পারতেছি, তখন তো সেইটা পসিবল ছিল না। ঘটতে-থাকা-ঘটনাগুলারে হিস্ট্রিক্যাল পারসপেক্টিভ থিকা দেখতে গেলে কিছু আন্দাজই করা সম্ভব; যেকোন ঘটনারই একটা অংশ সময়ের সাথে সাথে পাল্টাইতেই থাকবে আসলে, সবসময়। কারণ হিস্ট্রি হইতেছে বর্তমান দিয়া দেখার একটা জিনিস, যেই বর্তমান কখনোই স্থির না, যার ফলে পাস্ট ও ফিউচার সবসময়ই কন্সট্রাক্ট হইতে থাকবে, এইরকম সদা ভ্রাম্যমাণ একটা বর্তমানের ভিতর দিয়া। আর সেইখানে অতীত কোন ফ্লোটিং জিনিস না, বরং কম-বেশি স্থির হইতে থাকে আসলে। তো, শাহবাগও এইরকম, ঘটনা হিসাবে অরো স্থির একটা ব্যাখ্যার জায়গাতে আমরা রিচ করতে পারবো, যতদিন পার হবে।…]

তো, পরে শাহবাগে আরো নানান-রকমের ফানি ঘটনা ঘটছে। তখন শাহবাগ ৪ নামে এই লেখাটা লেখতে চাইছি। যেমন একবার মনেহয় কোনএক ঈদের আগে আওয়ামীলীগের কোন নেতা কয়েকজন পোলাপাইনরে দিয়া শাহবাগ মোড় দখল করাইলেন সরকারি-চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা-কোটা ৫০% করতে হবে বইলা, বা এইরকম কিছু। মানে, আরো কয়েকবার আওয়ামী লীগের লোকজন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, সেক্যুলার-বলদরা শাহবাগ দখল করার ডাক দিছে। এখনো গান গাইতে, নাটক করতে, শাহবাগেই তো যায় অইসব লোকজন। শাহবাগ যে একটা ব্লাফ ছিল, এইটা নিয়া কোন কনফিউশন তো কারো থাকার কথা না। মুক্তিযুদ্ধের নাম দিয়া যতো বিহারি খুন করা হইছে তার চাইতে কয়েক গুণ বেশি মানুশ গুম-খুন করা হইছে এবং হইতেছে এই শাহবাগের নাম দিয়া। তারপরও অইসব মানুশ-জন শাহবাগে আসলে কেন যায়?

যাওয়ার কোন জায়গা নাই বইলা? প্রেসক্লাবের সামনে খুব একটা যায় না, কারণ পত্রিকা-অফিসগুলা পল্টনের দিকে নাই আর; টিভি-ক্যামেরাগুলারও কাওরানবাজার, তেজগাঁ থিকা আসতে অনেক টাইম লাগে তো! সেই তুলনায় শাহবাগে গেলে ক্যামেরাগুলার সুবিধা হয়। শাহবাগে যাওয়া মানে পাবলিকের কাছে যাওয়া না, বরং মিডিয়া-রিয়ালিটির কাছে যাওয়া; এমনকি যাতে পাবলিকের কাছে যাইতে না হয়। মিডিয়া হইতেছে এখন একটা বেরিয়ার, পাবলিকরে কোনকিছু জানানোর না বরং পাবলিকের কাছ থিকা কোনকিছু লুকাইতে চাওয়ার একটা মাধ্যম। শাক দিয়া মাছ ঢাকার গেইম।…

একই জিনিস দেখবেন, শহীদ মিনারে গিয়া করলে হবে না। পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে না নিতে দিয়া শহীদ মিনারে সেক্যুলার-দখল কায়েম করা সম্ভব হয় নাই, বরং একটা ডেড পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি হয়া গেছে। এইটারে আর টাইনা তোলা সম্ভব না।

শাহবাগের বিপরীতে মতিঝিল দেখেন মিডিয়া ব্ল্যাক-আউটের একটা ঘটনা। কোন ছবি নাই, টিভি-ফুটেজ নাই, ইভেন কথা-বার্তা পর্যন্ত নাই; অ্যাজ ইফ ইট ডিডন্ট হ্যাপেন! এই ব্ল্যাক-আউটের ভিতর দিয়া যা হইতেছে এক ধরণের ‘ইসলামি-মিডিয়া’ এমার্জ করতেছে, পপুলার স্পেইসগুলাতে। বায়তুল মোকারম একটা স্পেইস হয়া উঠতেছে। কিন্তু আমার ডর’টা এই জায়গাতেই যে, যেকোন স্পেইস যখন মিডিয়া-রিয়ালিটির দখলে চইলা যায়, সেইটা আর তার পলিটিক্যাল জায়গাটাতে ফাংশন করতে পারার কথা না।

এমন না যে, একটা মিডিয়া-রিয়ালিটির বাইরে একটা কোর রিয়ালিটি আছে, যেইখানে আমাদেরকে থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে মিডিয়া-হাউজগুলা যে নয়া বাকশালের সমর্থক না, বরং অন্যতম একটা পিলার, সেইটার শুরু হইতেছে শাহবাগ।

এই কারণে দেখবেন মিডিয়ার ক্যামেরাগুলা, পত্রিকার নিউজগুলা, মিডিয়া-বলদগুলা জম্বিদের মতো ফ্যানাটিক লোকজন খুঁজতে থাকে। কোনকিছু হইলে, পাবলিকের দোষ দিতে থাকে; যে, পাবলিক ভুল করতেছে, পাবলিক নাচতেছে! অথচ এইরকম ফ্যানাটিক পাবলিকই তারা তৈরি করতে চাইতেছে সবসময়; যারা সারাক্ষণ একটা টিভির দিকে তাকায়া থাকবে, পত্রিকার নিউজ নিয়া কথা বলবে! কিন্তু পাবলিকের সামনের স্ক্রিনটা তো আসলে আরো অনেক এক্সপান্ড কইরা গেছে – ফেসবুক, ইউটিউব এবং টিকটকের মতন জায়গায়। যার ফলে অইটুক মিডিয়া-রিয়ালিটি আর বুঁদ কইরা রাখতে পারতেছে না; জাতীয়তাবাদী ড্রিমও আর নাই।

শাহবাগ ছিল মিডিয়ার লাস্ট এক্সপ্লোরেশন। এই কারণে টিভি-ক্যামেরাগুলাও ঘুইরা-ফিরা অই জায়গাতে ফিরা যাইতে চায়। মরার পরে ভূত যেইরকম তার থাকার জায়গাগুলাতে ফিরা আসতে চায়, অইরকম। শাহবাগ হইতেছে মিডিয়া-রিয়ালিটির হন্টেড একটা প্লেইস। মিডিয়া-লোভী ভূতেদের পারফর্মিং সেন্টার এখন।

 

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১

আনোয়ারা সৈয়দ হকের পুরান কথাটা মনে হইলো, উনার নতুন একটা লেখা দেইখা। অইটাও নতুন কোন লেখা না, ২/৩ বছরের পুরান লেখাই। চর্যাপদ নিয়া বলতেছিলেন, ভুসুক তো বাঙালি ছিলেন না, বুদ্ধ বইলা কোন বিহারের/ভার্সিটির টিচার হিসাবে এই দেশে আসছিলেন, বাঙালদেরকে চন্ডাল বইলা গালিও দিছেন, এইরকম। মানে, উনি বাঙালি ছিলেন কিনা, সেইটা আমার কাছে কনসার্নের জায়গা বইলা মনেহয় নাই এতোটা, উনি যেই ভাষাতে লেখছেন, সেইখানে বাঙালি’র মেনশনটা হইতেছে হিস্ট্রিক্যাল একটা ঘটনা। হাউএভার, তর্কটা ইন্টারেস্টিং।…

এইটা পড়তে গিয়াই মনে হইলো, উনারে সামনাসামনি দেখছিলাম আমি ১৫/২০ বছর আগে, একটা সাহিত্য-সেমিনারে। কে জানি ধইরা নিয়া গেছিলো অইখানে। তো, উনার একটা কথা মনে আছে, উনি যদিও ঠাট্টা কইরা বলতে চাইতেছিলেন, কিন্তু সিরিয়াস খোটা দিয়াই বলতেছিলেন, পাবলিশার’রা তো নারী-লেখকদের বই ছাপাইতে চায় না, এখন চাইলে উনারা হালকা ইরোটিক লেখাও লেখলেন, তাইলে তো বই-টই বেশি বেচা হইতে পারে; তো, অই ইরোটিসিজম এপ্লাই করতেও রাজি আছেন, তারপরেও নারী-লেখকদের বই যাতে ছাপান পাবলিশার’রা। উনি বেশ সিরিয়াসই ছিলেন।

কিন্তু আমি খুব অবাক হইছিলাম। কিছুটা আমার না-জানার কারণে তো অবশ্যই। কারণ তখন ‘ভালো লেখা’ কেউ ছাপাবে না কেন? – এই টাইপের ইনোসেন্স আমার ছিল। কিন্তু এমনকি ‘ভালো-লেখা’ লেখার পরেও আইডিওলজিক্যাল ডিফরেন্স বাদেও খালি নারী হওয়ার কারণেই অনেকের লেখা ছাপা হইতে পারে না, এপ্রিয়িশিয়েটেড হইতে পারে না – এই রিয়ালিটি (বলা ভালো পুরুষ-ইগোর ডমিনেন্স) তখনো ছিল, এখনো আছে।

এর বাইরেও, অবাক হওয়ার একটা জায়গা ছিল আমার। এইরকম সেক্স-আপিল’রে পুঁজি কইরা একজন রাইটার কি লেখতে পারেন? মেয়েদের মুখে ‘অশ্লীল’ কথার তো ইরোটিক ভ্যালু আছে, আনোয়ারা সৈয়দ হক এই ট্যাবু’রে ভাঙ্গার কথা না, বরং ইউজ করার যে কথা বলতেছেন, সেইটা কি একই ট্রাপে ফেইলা দিবে না? ‘সিস্টেমে ঢুইকা সিস্টেমটারে বাতিল কইরা দেয়ার’ মতো ট্রাপ-ই না একটা?

মানে, আমি শিওর না। কিন্তু আমার মনে হইছিল, সাহিত্যে ফিমেইল-গেইজ বইলা জিনিস সেইটা নেসেসারিলি ইরোটিক হইতে হবে – ঘটনা’টা এইরকম হয়া গেলে বেশ স্যাড-ই হবে। এই কারণে আমি বরং এলিস মুনরো, মার্গারেট এটউড, Elena Ferrante’র সার্পোটার। উনারা সাহিত্যে এমন একটা টোন’টারে প্রমিনেন্ট কইরা তুলছেন যেইটা হেমিংওয়ে, মার্কেজ, মুরাকামি’র চাইতে আলাদা হওয়ার চাইতে বরং আলাদা একটা ওয়েভ। যেইখানে খালি উনারা ‘ভালো-সাহিত্য’ করেন নাই, বরং ভালো-সাহিত্যের জায়গাটাতে একটা আলাদা লাইন অফ থট, ওয়ে অফ সিয়িং’র স্পেইস ক্রিয়েট করছেন; যেইখানে ইরোটিক হইতে পারাটা উনাদের সাফল্য না, বরং ইরোটিসিজম ব্যাপারটাও যে ডিফরেন্ট, সেই জায়গাগুলারে তৈরি করছেন।…

আমি শিওর না, ব্যাপারটারে স্পষ্ট করা গেলো কিনা।… মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আপনার সামনে যেই অবস্টেকলটারে হাজির করা হইতেছে, সেইটা দিয়া কনজিউমড হয়া যাইয়েন না। তাইলে অইটার ভিতরেই বন্দী হয়া যাইতে হবে, চিন্তাটা আটকায়া যাবে। রেদার, আপনি যা বলতে চাইতেছেন, সেইটারে ফোকাস করতে পারলে ভালো; দেখা যাবে অই অবস্টেকলটা বাতিল হয়া যাইতেছে, বা ইনভ্যালিড হয়া উঠতেছে।
ডাইরেক্ট কনফ্রন্ট করা যাবে না – এইটা আমার কথা না, বরং বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, কনফ্রন্টেশনটা অই অবস্টেকলেন জায়গাটাতে হারায়া যাইতেছে, কোন ক্রিয়েশনের ঘটনা হয়া উঠতে পারতেছে না।

মানে, আনোয়ারা সৈয়দ হক যে অবস্টেকলটার কথা বলছেন, সেইখানে আমার কোন কনফিউশন নাই; কিন্তু যেইভাবে নেগোশিয়েট করতে চাইছেন, সেইটারে রেজিসট্যান্স হিসাবে অনেকের কাছে একসেপ্টেবল হইলেও, আমি অই জায়গাটাতে ক্রিটিক্যাল হইতে চাই। এমন না যে, রেজিসট্যান্সের চাইতে রেভিউলেশন বেটার; বা প্রশ্নটারে এড়ায়া যাইতে হবে, বরং এইটারে একটা ‘সাহিত্য প্রকাশের’ সমস্যা হিসাবে না দেইখা ‘সাহিত্যের সমস্যা’ হিসাবে দেখতে পারলে বেটার। এতে কইরা সমস্যাটার সমাধান হয়া যাবে না, কিন্তু এর গোড়ার দিকে যাওয়ার রাস্তাটা ওপেন হইতে পারে মনেহয়।

আপনার সামনে যেই প্রশ্নটারে হাজির করা হইতেছে, সেইটা দিয়া কনফিউজমড হয়া যাওয়া যাবে না, বস! দেখতে হবে, এইটা আসল প্রশ্ন কিনা।

#########

দেশের যে কোন মানুশই একটু চিন্তা করলেই বুঝতে না পারার কোন কারণ নাই যে, মিডিয়া’রে টাইট দেয়ার জন্যই ‘সাংবাদিক-নেতাদের’ ব্যাংক-হিসাবের খোঁজ নেয়া হইতেছে।

কিন্তু সাংবাদিকদের টাইট দিয়া লাভ নাই। দেশের মানুশ টিভি-পত্রিকার কথা বিশ্বাস করে না আর। কারণ জানে, অইখানে কোন ‘আসল’ খবর নাই। উনারা একেকটা বিটিভি’র বাইরে কিছুই না এখন।

তারপরও মিডিয়ার একটা ভ্যালু আছে। বলা আর না-বলার একটা ডিফরেন্স আছে। এই জায়গাটা ভোট-চোর বাকশালিরা ‘প্রমাণ’ হিসাবে দেখাইতে চায়। কিন্তু অই ‘প্রমাণ’ পাবলিক খায় না আর। কিছু ফিল্টার কইরা নিতে পারলে ফেসবুক অনেক ভ্যালিড একটা সোর্স। ফেসবুকে যেইটা নিয়া আলাপ, টিভি-পত্রিকাও দেখবেন অইগুলা নিয়াই কথা কয়। কথা কইতে বাধ্য হয়।

কারণ, পত্রিকা ছাপানো হয়, টিভিতে নিউজ চলে পাবলিক দেখবে বইলা; পাবলিক না দেখলে এইগুলার কোন বেইল নাই। লেজ ধইরা কিছু সময়ের জন্য টিকিটিকিরে নাড়ানো যায়, কিন্তু মনে রাখবেন টিকটিকিই লেজরে নাড়ায়। টিকটিকির শরীর থিকা খইসা পড়লে অই লেজ’টা লেজ থাকে না আর।

বাংলাদেশের মিডিয়ারও অই অবস্থা। পিপলস এজেন্সি হিসাবে ফাংশন করতে পারতেছে না, লেজ হয়া টিকটিকিরে নাড়াইতে গিয়া নিজেরাই খইসা পড়তেছে। ক্ষমতার কাছেও আন-ইম্পর্টেন্ট হয়া উঠতেছে, যেহেতু এফেক্টিভ না আর। উনাদেরকে খালি টাইট দেয়া না, মোর এফেক্টিভ এবং ক্রিয়েটিভ হওয়ার একটা সিগন্যালও আসলে এইটা। তা নাইলে পুলিশ দিয়া সাংবাদিকতা শুরু করা হবে 🙂
মানে, মিডিয়া-পিপল’রা এইরকম দুইদিকের বিপদের মধ্যে আছেন বইলা আমি মনে করি – পাবলিক উনাদেরকে বিশ্বাস করে না, ভোট-চোর গর্ভমেন্টেরও তেমন কাজে লাগতেছেন না।

আমি মনে করি, এইখানে একটা গ্রুপ আছেন, যারা আসলেই ‘প্রকৃত সাংবাদিকতা’ করতে চান; পাবলিকরে কিছু জিনিস জানাইতে চান, পিপলস-এজেন্সি হিসাবে এফেক্টিভ থাকতে চান। উনাদের উচিত হবে পারসোনাল বা ইন্ডিপেন্ডেড প্লাটফর্ম তৈরি করার দিকে নজর দেয়া। এইটা একদিনে তৈরি হবে না, কিন্তু এই সময়ে এইরকমের কিছু শুরু না করতে পারাটা উনাদের প্রফেশনাল ব্যর্থতা হিসাবেই হিস্ট্রিতে রিড করা হবে বইলা আমি মনে করি।

 

Leave a Reply