নোটস: সেপ্টেম্বর, ২০২১ [পার্ট ৩]

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

ইভ্যালি নিয়া তো এই কয়দিনে অনেক কথা-বার্তা হইছে, অনেক এভারেজ আলাপ যেমন হইছে, আবার কিছু ইন্টারেস্টিং আলাপও চোখে পড়ছে; তবে ইভ্যালির ‘ভুল’ ধরতে গিয়া একটা জিনিস মনেহয় পুরাপুরি ইগনোর করা হইছে।

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলা কেইসে পাবলিকের টাকা ডাকাতি হইছে এবং ডাকাতেরা টাকা মাইরা সহি-সালামতে দেশে থাকতে পারছে, সবাই সরকারি দলের লোকজন, বা এর লগে কানেক্টেড। মানে, সরকারি লোকজন এবং সরকারি দলের লোকজনরে (এখন অবশ্য একই, আলাদা আর না) লুটের টাকার ভাগ না দিয়া কেউ টাকা হজম করতে পারে নাই।

ইভ্যালির বিজনেস কেইসে যদি সবচে বড় কোন ‘ভুল’ থাকে, সেইটা হইতেছে কোম্পানির ডিরেক্টর হিসাবে, শেয়ারের মালিকানায় ক্ষমতার আশেপাশের কোন লোকজনরে রাখে নাই। বাংলাদেশে বিজনেস করতে গেলে এর চে বড় কোন ‘ভুল’ আর কিছু হইতে পারে না।

এমনকি এইরকমও হইতে পারে, কেউ শেয়ার চাইছিল, দেয় নাই! এই কারণে ‘রিভেঞ্জ’ নিতেছে! মানে, ইভ্যালির যারা সার্পোটার তাদের কাছে এইরকম কন্সপিরেসি থিওরিও পাইতে পারেন। বা কেউ যদি এইরকম ছড়াইতে পারেন, দেখবেন, মার্কেট পাইতেছে এই খবর! কারণ, বাংলাদেশের এখনকার রিয়ালিটিতে এইগুলাই বিলিভেবল গুজব, যা কিছু সত্যি হইতে পারে তা সবসময়ই গোপন!…

এই পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলা পাবলিক-ডাকাতি হইছে শেয়ার-মার্কেট, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা-পাচার, কোনটা কি সরকারি সার্পোট ছাড়া ঠিকঠাক মতো অর্গানাইজ করা গেছে? আর যেইগুলা ধরা খাইছে, অইগুলাও সরকারি লোকজনরে টাকা দিয়াই ম্যানেজ করা গেছে বা ঘুষ-টুষ দিয়া পালায়া যাওয়া গেছে। এমনকি ইঅরেঞ্জ নিয়াও দেখবেন কথা-বার্তা কম, কারণ অইখানে বাংলার টাইগার মাশরাফি আছেন! আরিফ হোসেইন, তাহসান, সুখনরে গাইল দেয়া যতো সহজ (গাইল দিবেন না – এই কথা আমি বলি না, গাইল্লান) মাশরাফিরে গাইল দেয়া এতো সহজ না; আর এর উপরে তো যাইতেই পারবেন না।

তো, ইভ্যালি ইস্যুতে আমার মনেহয়, বাংলাদেশি ‘তরুণ উদ্যোক্তা’ বা ‘ইয়াং এন্টারপ্রেইনারদের’ জন্য নয়া বাকশালের মেসেজ খুব ক্লিয়ার – বিজনেস করেন আর পাবলিকের টাকা মাইরা খান, যেইটাই করেন কোন সমস্যা নাই; কিন্তু যা-ই করেন, আগে আমাদের ভাগ দিয়া তারপরে আপনার যা করার তা করতে হবে!

৫%-১০% কমিশন দেয়ার দিন শেষ, কোম্পানির শেয়ার দিতে হবে, মালিকানা দিতে হবে! দেশটা যার বাপের, যার নানার, তারে আগে সালামি দিতে হবে! এর নাম হইছে – ডিজিটাল বাংলাদেশ!

 

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১

ঢাকা শহরের কোন ফুুটপাতে দাঁড়ায়া থাকলে দেখবেন আসতে-যাইতে কেউ না কেউ আপনারে ধাক্কা মারবেই; এই ধাক্কা-মারা যেন হইতেছে ‘অধিকার’! আপনি দাঁড়ায়া আছেন কেন! দোষ তো আপনার!

এইরকম ফেসবুকেও দেখবেন, চিনেন-না, জানেন-না এইরকম লোকজন আইসা আপনারে পারসোনাল জায়গাতে ‘ধাক্কা মারতেছে’, মানে উপদেশ দিতেছে, বিচার করতেছে। পাবলিক তর্কের জায়গাটাতে এইটা হইতেই পারে, কিন্তু পাবলিক পোস্ট দেখলেই, আপনার ফেসবুক-ফ্রেন্ড হইলেই, তারে ‘ধাক্কা’ কেন মারতে হবে! 🙁

আমার ধারণা, পারসোনাল স্পেইসের লিমিট আমরা জানি না – এই জায়গা থিকা এই ঘটনা যতোটা না ঘটে, তার চাইতে বেশি ঘটে পাবলিক ইস্যুতে মন খুইলা কথা না-বলতে পারার কারণে। ঢাকা শহরের ফুটপাতেও, হাঁটা-চলার জায়গা তো আসলে নাই তেমন।

#########

– আমার চেহারা –

আমার চেহারা তো খুবই কমন। স্কুল-কলেজে পড়ার সময়ই খেয়াল করছি যে কোন স্কুল-কলেজের ছাত্রের মতই ছিল; স্বাস্থ্য-খারাপ, চুল আঁচড়ানো নাই, কথা-বার্তায় আন-স্মার্ট, এইরকম। এখনো বাংলাদেশের কমন অফিসের লোকজনদের মতোই একটা ব্যাপার আছে, হাইট কম, হালকা-পাতলা ভুঁড়ি আছে, এইরকম।… তো, এই কারণে অনেকে অনেক সময় অন্য লোক ভাইবা সিরিয়াস রকমের ভুল করে।

একবার চিটাগাংয়ে এক বেবিট্যাক্সি (এখনকার সিএনজি অটোরিক্সার আগে যেইটা ছিল) থিকা নামার পরে ড্রাইভার খুবই কনফিডেন্টলি কইলো, ভাই, গতকালকেও আমারে নিয়া আনোয়ারা গেছিলেন না! এই কারণেই আপনার চেহারা পরিচিত লাগতেছে, এতোক্ষণ বুঝতেছিলাম না! উনার কনফিডেন্স দেইখা আমিই কনফিউজড হয়া গেছিলাম, আসলেই গতকালকে আমি আনোয়ারা গেছিলাম কিনা। আবার, এক লোক অফিসে আইসা মিটিমিটি হাসতে লাগলো, বললো, ভাই, অই পিছনের ছবির পোস্টার’টা আপনার, না? আমি মোটামুটি হা হয়া পিছনে তাকাইলাম, কেমনে কি! তারপরে মনে হইলো মিল মনেহয় আছে কিছু। কইলাম, না, ভাই, আমি তো না।

এইরকম কয়েকদিন দেখা হইছে, একজন বলতেছিলেন, ভাই আপনার চেহারাটা পুরা আমার ছোটমামার মতন! আমি বাসায় গিয়া আমার আম্মারে বলছি! আমার ছোটমামা খুব অল্প বয়সে মারা গেছিলেন। গ্রামে প্রায়ই মারামারি হয় না! অইরকম মারামারিতে রামদা দিয়া কোপাইছিল উনার মাথায়। ধানক্ষেতের পানিতে অনেকক্ষণ পইড়া ছিলেন। অনেক রক্ত পইড়া মারা গেছিলেন। মানে, আমি মোটামুটি এসটোনিস্টড! কি সুইট আর কি টেরিবল!

 

সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১

আমি সবসময় এন্টারটেইনমেন্ট সিনেমার পক্ষের লোক। আর্ট-ফিল্ম যে খারাপ – তা না, এন্টারটেইনমেন্টের জিনিস তো অইখানেও থাকে; কিন্তু ফর্ম হিসাবে বা ক্যাটাগরি হিসাবে ন্যারো মনেহয়। (এই কথা ডেভিড লিঞ্চের ব্যাপারে খাটবে না, বা আরো অনেকের ব্যাপারেই।)

এই কথা মনে হইতেছিল এন্টারটেইনমেন্ট মুভির একটা ফিচারের কথা মনে কইরা যে, দেখবেন সার্টেন জিনিস কমন। যেমন ধরেন, কোন কারণ ছাড়াই বাংলা-সিনেমায় নাচ-গান, হিন্দি-সিনেমাতে কমেডি-সিন (আগে ছিল, এখন বাদ দিতেছে মনেহয়), হলিউডি-সিনেমাতে সেক্স-সিন (এইটাও এখন কইমা আসছে অনেক 🙁 জেমস-বন্ড মুভিগুলাতে ছিল বেশি যে, বিকিনি-পরা মেয়েরা ঘুরতেছে আশ-পাশ দিয়া ক্যামেরার 😛)… মানে, এইগুলা হুদাই, সিনেমার কাহিনির লাইগা দরকার নাই, এমনকি জাস্টিফাইও করা যায় না এতোটা। এইখানে বলা যায় যে, পাবলিক খাবে, বা এইগুলা তো রাখতেই হবে, নিয়ম, এইরকম!

সেই তুলনায় আর্ট-ফিল্মে এইরকমের বুজরুকিগুলা কম; খুবই মিনিংফুল 🙁 এমনকি মিনিং না থাকলেও যেন কোন মিনিং আছে বা থাকতে পারে মনেহয় – এইরকম একটা ডর নিয়া দেখতে হয়। কয়েকটা দেইখা ফেলার পরে অবশ্য ‘বুইঝা ফেলছি’ ভাবটা নেয়া যায় বা ইগনোর করা যায়। মানে, দর্শক হিসাবে যে ‘শিক্ষিত’ হইতে হয় – এই প্রেশারটা থাকেই কম-বেশি। ‘নেট টেইক-আউট’টা কি বা ‘কি শিখলাম!’ যেইটা আবার ‘শিক্ষা’-ও না এতোটা! এইরকমের টেনশন!

আর এই যে টেনশন, এন্টারটেইনমেন্ট মুভি’তে এইটা হইতেছে পাবলিক ডিমান্ড! বা ট্রাডিশন। অনেক এন্টারটেইনমেন্ট সিনেমাই এই জায়গাগুলারে ডিল করে না, কিন্তু যদি ডিল করে তখন কি যে বিউটিফুল! যেমন শোলে, যেমন কিল বিল ২, যেমন বিফোর ট্রিলজি… এইগুলা এন্টারটেইনমেন্ট মুভি, খালি আরামের জিনিস না, যে কোন আর্ট-ফিল্মের চাইতে ‘ডিপ-ইন্টেলেকচুয়াল’ ব্যাপার।

(মানে, ব্যাপারটা এন্টারটেইনমেন্ট ভার্সেস আর্ট-ফিল্মের ঘটনা না-ও এতোটা। কিন্তু এইটারে জাস্ট বেইজ ধইরা বললাম। ক্যাটাগরির আলাপ হিসাবে নিলে হয়তো ঝামেলা হবে একটু।)

 

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১

এইটা খুব ভুল কথা যে, মুসলমান-হিন্দু দাঙ্গায় সবচে বেশি ক্ষতি হয় গরিব মানুশদের।

পয়লা কথা হইতেছে, গরিবের (এবং দুর্বলের) সম্পত্তি দখল করার লাইগাই ‘দাঙ্গা’ বাঁধানো হয়। মানে, ব্যাপারটা উল্টাটাই সবসময়। তারও আগের কথা হইতেছে, ১৯৪৭’র পর থিকা দাঙ্গা বইলা কিছু হয় না, যা হয় তা হইতেছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ইন্ডিয়াতে বিজেপি’র সরকার হিন্দুদেরকে সুযোগ কইরা দেয় মুসলমানদের সম্পত্তি দখল করার; আর বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতারা হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে (বা করতো, কারণ এর দরকার কমে আসছে, এবং আরো অনেক আলাপ আছে এইখানে)।

মানে, মুসলমান-হিন্দু ‘দাঙ্গা’ যতোটা না কালচারাল কনফ্লিক্ট, তার চাইতে অনেক বেশি হইতেছে পলিটিক্যাল এজেন্ডা। আর এইটা যে কতোদিন না বুঝতে পারার ভান কইরা থাকবো আমরা! আল্লা মালুম, ভগবান জানে অ্যান্ড গড নৌস!

#########

মিডিয়া কেমনে মিছা কথা কয় সেই টেকনিকটা নিয়া অনেকবারই বলছি আমি যে, অরা ডাইরেক্ট মিছা কথা বলে না, বরং কথাটারে ঘুরায়া-ফিরায়া বলা হয়, সবসময়। এই জিনিসটা আবার মনে হইলো এসডিজি প্রাইজ নিয়া নিউজে, বিলবোর্ডে সরকারিভাবে মিছা কথা বলার ব্যাপারটা দেইখা।

প্রাইজ দেয়া হইছে বাংলাদেশরে সার্টেন জিনিস এচিভ করছে বইলা (অই স্ট্যান্ডার্ডগুলা নিয়াও ক্রিটিক্যাল হওয়া দরকার); অথচ বলা হইতেছে, এইটা পাইছেন প্রাইম মিনিস্টার! এইটা যে মিছা-কথা – এই রিকগনিশনটাও দেখবেন নাই। যেন, দেশ আর প্রাইম-মিনিস্টার একই কথা।

এরশাদ আমলে যমুনা ব্রিজ বানানো শুরু হইছে বইলা যেন অইটা এরশাদের জিনিস! পদ্মাসেতুরও ঘটনা একইরকম, পাবলিকের টাকা দিয়া (আরো স্পেসিফিক্যালি বললে, পাবলিকের টাকা মাইরা) এই ব্রিজ বানানো হইতেছে; কিন্তু যেন কোন পলিটিক্যাল দল বানাইতেছে এইটা!

মানে, মিছা কথা জিনিসটা খুব সময়ই পুরাপুরি ভুয়া একটা কথা না, বরং সত্যের ব্যাপারটা একটু একটু কইরা সরতে সরতেই অই এক্সটেন্ডে যায় সবসময়। ফ্যাক্ট’টারে বাতিল করা হয় না, বরং মোল্ড করা হয়।

এই মোল্ড-করাটারে ‘সাংবাদিকতা’ বা ‘সাহিত্য’ বইলা গ্লোরিফাই করার যেই ট্রেন্ডটা আছে, সেইটারে মার্ক করাটা খুবই জরুরি। এইগুলা হইতেছে প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল মিছা কথা।

#########

বাকশালের সাথে নয়া-বাকশালের একটা মেজর ডিফরেন্স হইতেছে, বাকশাল আছিল একদলীয় শাসন, আর নয়া-বাকশালের সারভাইব করার লাইগা একটা না একটা ডামি-বিরোধীদল অবশ্যই দরকার। এইটা জাসদ হোক, জাতীয়-পার্টি, সিপিবি, বামজোট, এমনকি বিএনপি! যেইটা হবে আসলে একটা বি-টিম, একটা কিং’স পার্টি।

আগামী কিছুদিনের ভিতরে এইরকম আরো কিছু কিংস পার্টি আমরা পাবো বইলা আমি মনে করি; যারা একটা আপাত-বিরোধিতার ভিতর দিয়া নয়া-বাকশালের শাসনরে দীর্ঘস্থায়ী কইরা তুলতে থাকবে।

এই কারণে নয়া-বাকশালের ডামি-ক্রিটিক, পুলিশি-সাংবাদিকতা ও বানানো-বিরোধীদলের ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকাটা জরুরি। এইগুলা কোন অপজিশন না, বরং এই জুলুমের সিস্টেমের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে (বা করবেও) আসলে।

এইগুলারে কয়েকটা লক্ষণ দিয়া চিনতে পারবেন (যদিও এরা এইগুলার ভিতরেই আটাকায়া থাকে না বা থাকবে না) –

১. বঙ্গবন্ধু-পূজা; (এইটা মোস্ট কমন) উনি ভালো-মানুশ, উনার আশেপাশের লোকজন ছিল খারাপ। (অ্যাজ ইফ উনি বাকশাল বানান নাই। উনার নিজের কোন পলিটিক্যাল বুদ্ধি নাই!) যেমন এখন, প্রাইম মিনিস্টার তো ভালো, অন্য মন্ত্রীরা বা সরকারি দলের কয়েকজন মাত্র ‘খারাপ’! এইগুলা হইতেছে জমিদারি-আলাপ।…

২. পাবলিক-হেইট্রেট; এই দেশের মানুশই খারাপ! ভোট যে দিবে, এরা ভালো-মন্দ কিছু বুঝে নাকি! এইটা খালি কলোনিয়াল-বাটপারি থিকা আসে না, এইটা লোকাল ব্রাহ্মণবাদেরও গোড়া। মিডিয়াগুলা হইতেছে এর সবচে বড় ভোকাল।

৩. উন্নয়ন-বলদ; যা-ই বলেন, দেশের তো উন্নতি হইতেছে! জিডিপি বাড়তেছে, পদ্মাসেতু হইতেছে, মসলিন আবিষ্কার হইছে… এইরকমের লিস্ট বানানির লোকেরা। এইগুলা যে লুটপাটের তরিকা, সেই জায়গাগুলারেই আড়াল কইরা ফেলবে।

৪. কোন স্পেসিফিক রাজনৈতিক প্রস্তাব নাই! এইটা ক্রুশিয়াল। কারণ এদের কোন ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ নাই না, বরং কোন পিপল-এনগেইজমেন্ট নাই।

এইরকম আরো কিছু জিনিস পাওয়া যাবে। কিন্তু এইসব জিনিসসহই কিছু সরকারি ‘বিরোধী-দল’ হয়তো আমরা পাবো। আমি মনে করি, এদেরকে বিরোধী-দল হিসাবে মাইনা না-নেয়াটাও একটা রেজিসটেন্সের কাজ। যদিও রেজিসট্যান্সই এনাফ না। কিন্তু একটা মিথ্যারে মানতে রাজি না-হওয়াটাও হইতে পারে একটা শুরুয়াত।…

#########

– এভারেজ ও গ্রেট –

এভারেজ ও গ্রেটের জায়গাটা স্ট্যাটিক না কোনসময়ই, এমনকি এতোটা অপজিটও না আসলে; বরং একটা সময়ে দুই ধরণের জিনিসই থাকে। এভারেজের স্ট্যান্ডার্ড’টারে আপগ্রেড করাটা বরং অনেক সময় গ্রেট-আর্টের কাজ এবং এইটাও দেখা যায় যে, একটা হায়ার লেভেলের এভারেজ ট্রেন্ড অনেক সময় গ্রেট-আর্টের পসিবিলিটি’টারে বাড়ায়া তুলতে পারে, যদিও এইগুলারে একটা ‘জেনারেল রুল’ হিসাবে দেখাটা ঠিক হবে না, তারপরও রিলেশন একটা আছে।

মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, আমাদের কোন গ্রেট আর্টিস্ট নাই, বরং আমি দেখি যে, আমাদের এইখানে চিন্তা-ভাবনার এভারেজ বেইজটা একটা ঘটনা, যেইখান থিকা গ্রেটনসরে আমরা আইডেন্টিফাই করার মতো অবস্থাটাতে নাই।

এইরকম আক্ষেপ দেখবেন অনেকেরই আছে যে, ‘ভালো বাংলা’ লেখতে পারে এইরকম লোক বাংলাদেশে খুব বেশি নাই! কিন্তু অইটা আসলে সমস্যা না, কারণ এইখানে ‘ভালো বাংলা’ হইতেছে উনিশ শতকের একটা জিনিস, যেইটার কোন দরকারই নাই। এই ‘ভালো বাংলা’ হইতেছে পুওর এভারেজের একটা ঘটনা।

এখন এই এভারেজটারে একটা হায়ার গ্রাউন্ডে নিতে পারলেই আমরা গ্রেট গ্রেট সব সাহিত্য, আর্ট পাইতে শুরু করবো – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু একটা জিনিস আমি শিওর যে, গ্রেট ও এভারেজ আর্ট কোনটা, সেইটা টের পাওয়ার জায়গাটাতে আমরা আরো বেশি সজাগ হইতে পারবো।

মানে, মাটি যদি উর্বর থাকে, আলো-বাতাস-বৃষ্টি যদি থাকে, সেইখানে কোন বীজ পড়লে সেইটা চারাগাছ হইতে পারার সম্ভাবনা যেমন বাড়ে, অইরকম, এমনকি বটবৃক্ষ হওয়ার লাইগাও তো একটা আশ্রয় লাগে আগে।… এখন এই উদাহারণের মতো অই এভারেজ থাকাটা মাস্ট না আর কি, কিন্তু থাকলে তো ভালো।

David Lynch একবার বলতেছিলেন, আপনি যত জিনিয়াসই হন, আপনার যদি সারাক্ষণ মাইগ্রেনের ব্যথা থাকে, আপনি তো কাজ করতে পারবেন না! একজন গ্রেট আর্টিস্টরে অবশ্যই এভারেজ এনভায়রনমেন্টের লগে ফাইট কইরা তার জায়গাটারে এক্সপ্লোর করতে পারতে হবে; কিন্তু যদি মাইগ্রেনের পেইনটারে তারে কম নিতে হয়, তাইলে সেইটা বেটার না?

ভালো-এভারেজ’রে আমি মনে করি এইরকম কম-মাইগ্রেন থাকার মতো একটা ঘটনা।

 

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১

– চিন্তা ও কাজ এবং থিওরি ও প্রাকটিস নিয়া –

আরো কিছু লোক আছে, যারা বলে যে, কথা ও কাজের মিল থাকতে হবে, থিওরি ও প্রাকটিস এক হইতে হবে! এখন দুইটা জিনিস তো সবসময়ই আলাদা – কথা আর কাজ তো একই জিনিস না, থিওরি যখন প্রাকটিসে আসে একই জিনিস হিসাবে থাকে না; কিন্তু তাই বইলা একটা জিনিস যে আরেকটা জিনিসরে এফেক্ট করে না তা তো না!

আপনি যা-ই চিন্তা করেন, আপনার কাজের উপ্রে তার এফেক্ট থাকবেই, এবং যেই কাজ আপনি করেন, সেইটা আপনারে চিন্তাতেও কন্ট্রিবিউট করে। এইভাবে দুইটা জিনিস আলাদা আলাদাভাবে একইসাথে চলতে থাকে। একইভাবে, থিওরি খুবই ইউনিভার্সাল জিনিস, কিন্তু প্রাকটিস খুবই লোকাল; কিন্তু লোকাল প্রাকটিসগুলাই ইউনিভার্সাল থিওরির জায়গাটাতে আসে। এইরকম আলাদা না হইলে চিন্তা ও কাজ, থিওরি ও প্রাকটিস জরুরিও হয়া উঠতে পারে না।

মানে, একটা চিন্তা কখনোই খুব ভালোভাবে এক্সিকিউট করা যাইতেছে বইলাই সেইটা খুব ইম্পর্টেন্ট চিন্তা না! মার্ক্সসিজমের কথাই ধরেন, এখন পর্যন্ত অনেকগুলা ফেইলওর এক্সিকিউশন আমরা পাইছি, কিন্তু চিন্তা হিসাবে খুবই দরকারি একটা জিনিস। কাজের ব্যাপারেও দেখেন মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের ঘটনাটারে এখনো ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ পুওর ফ্রেমওয়ার্ক দিয়া আটকানোর চেষ্টা করে যাইতেছেন অনেকে।
এরা আসলে অই মোস্টলি অই ফ্রেমওয়ার্কের লোক, যারা কাজ করার দোহাই দিয়া চিন্তা করার ইন-এবিলিটি’টারে এড়াইতে চান এবং ‘চিন্তা করতেছি’ বইলা কাজ-না-করতে-চাওয়ার অজুহাত বানান।

এরা ভন্ড না, এরা হইতেছে পরগাছা। নিজেদের কোন চিন্তা যেমন নাই, কাজ থিকাও আসলে পালায়া বাঁচতে চায়। চিন্তা বা কাজ কোনটাই করতে পারে না বইলা বলে চিন্তা ও কাজরে মিলাইতেছি আমরা! তো, এইখানে মিলানোর কিছু নাই – এইরকম না, বরং এইটা কখনোই চিন্তা বা কাজের উদ্দেশ্য হইতে পারে না। দুইটা দুই ধরণের ফ্রেম অফ ওয়ার্ক।

#########

আজকে (নাকি গতকালকে ছিল, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার হিসাবে) বিশ্ব কন্যা দিবস; তো, এইরকম দিবস থাকা তো মনেহয় ভালোই, অই জিনিসটা নিয়া কিছু কথা-বার্তা হয়, অ্যাওয়ারনেস তৈরি হয়, এইরকম। যদিও দিনশেষে এইগুলা মিডল-ক্লাসেরই ঘটনা, কিন্তু এইসব আলাপ-আলোচনার ইমপ্যাক্ট তো অন্য ক্লাসের উপ্রেও পড়েই।…

আমি ভাবতেছিলাম, আমিও তো দুইজন কন্যা-সন্তানের বাপ; তো, বাপ হিসাবে কি করতে পারতে পারি আমি, যেইটা জেনারেল এবং বেয়ার মিনিমাম? আমার মনে হইছে, আমরা যারা কন্যা-সন্তানের বাপ, এটলিস্ট একটা কাজ আমাদের করতে পারা দরকার। যদি আমাদের কোন সম্পত্তি থাকে, এর ভাগ/অংশ কন্যা-সন্তানরা যেন ছেলে-সন্তানদের সমান পায়। সম্পত্তির উত্তরাধিকার একটা বড় জিনিস। জেন্ডার হিসাবে মেয়েরা যে গরিব, এর কারণ খালি এইটা না যে, মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে না বা চাকরি করতে পারে না, বরং বাপ-মা’র সম্পত্তির ভাগ তারা পায় না।

এর লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক থাকলে তো ভালোই, কিন্তু লিগালি যেইটা পাওনা সেইটাও আমাদের সমাজে মেয়ে-সন্তানরা পায় না। (জামাই হিসাবে, প্রেমিক হিসাবে আমরা যা-ই হই) বাপ হিসাবে, ভাই হিসাবে এই প্রাকটিসটা আমাদের শুরু করতে পারাটা দরকার। এইটা মিনিমাম একটা রীতি হিসাবে সমাজে এস্টাবলিশড করতে পারাটা দরকার।

 

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১

স্টিভ জবসের মা যখন তারে পালক দিতেছিলেন, তখন উনি একটা শর্ত দিছিলেন, যেই কাপল তার বাচ্চাটারে পালক নিবে, তাদেরকে কলেজ-পাশ হইতে হবে এবং তার ছেলেরেও কলেজে পড়াইতে হবে। এইটা উনার কাছে ছিল একটা বিগ ডিল।

আমাদের সমাজেও এইটা একটা বড় ঘটনা, ভার্সিটিতে পড়াটা। খালি জ্ঞান-গরিমার জিনিসই না, একটা ফিনান্সিয়াল ক্যাপাবিলিটিরও ব্যাপার। স্কুল-কলেজ তো ধরেন সরকারি বৃত্তি-ভাতা পাইলে বিনা-খরচে বা বেসরকারিতে পড়লেও কম-খরচে চালায়া নেয়া যাইতো। এখনো মাদরাসা, বাংলা-মিডিয়াম, এমনকি ক্যাডেটে পড়তে পারলেও খরচ তো কমই। মানে, এক্সপেন্সিভ স্কুল-কলেজে না পইড়াও পড়াশোনা চালানোর উপায় আছে। কিন্তু ভার্সিটি লেভেলে এইটা সম্ভব না। পাবলিক ভার্সিটি হইলেও পড়াশোনার খরচ বাদেও ৪/৫ বছর থাকা-খাওয়ার খরচ যোগানো খুব কম টাকার ঘটনা না।

ধার-দেনা কইরা, জমি-জিরাত বেইচা বা ইনকামের বড় একটা অংশ খরচ কইরা পোলা-মাইয়াদের ‘হায়ার এডুকেশনের’ ব্যবস্থা করতে হয়, বাপ-মা’দের। এইটা সিগনিফিকেন্ট একটা জিনিস। তো, স্টিভ জবসের হাইস্কুল পাশ পালক বাপ-মা তার বায়োলজিক্যাল মা’রে কথা দিছিলেন যে, উনার পোলারে ‘হায়ার এডুকেশনে’ পাঠাইবেন। পাঠাইছিলেনও। যদিও জবস পড়াশোনা শেষ করেন নাই। কিন্তু উনি যে গেছিলেন বা যাইতে পারছিলেন – এইটাও (উনি যে ‘মেধাবী’ বা আমাদের ক্লাসের লোক আসলে 🙂 এইরকম) একটা ঘটনা।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ভার্সিটির পড়াশোনারে খালি এডুকেশন সিস্টেমের একটা ঘটনা হিসাবে দেখলে এর পুরা ইমপ্লিকেশনটারেই মিস কইরা যাওয়া হবে। সোশ্যাল, ইকনোমিক্যাল ও পলিটিক্যাল জায়গাগুলা একদম শুরু থিকাই ছিল এবং এখনো আছে।

এইটারে এডুকেশন সিস্টেম বা জ্ঞান-তাত্ত্বিক জায়গার বাইরে সমাজ-ব্যবস্থার কোর একটা ফাংশন হিসাবেও দেখতে পারাটা দরকার।…

 

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

– আল্লা আর আম্মা –

ছোটবেলায় তো হিউজ মাইর খাইছি আমি আম্মা, আব্বার হাতে। আম্মার হাতেই বেশি খাইছি। তখন তো খুবই স্কিনি বা চিকনা ছিলাম, লাঠির বাড়িগুলা একদম হাড্ডিতে গিয়া লাগতো। ন্যায়-অন্যায় যা-ই হোক, ব্যথা তো পাইতাম অনেক। ব্যথা পাইলে চিল্লাইতামও। আম্মার মাইর খায়া ‘আম্মা’ বইলাই চিল্লাইতাম; আবার অনেক সময় ‘আল্লা’ বইলাও চিল্লাইতাম।

একদিন নানুবাড়ি থিকা আসার সময় রিকশায় আম্মা থ্রেট দিতেছিল আমারে যে, দাঁড়া বাসায় যায়া নেই, এমন পিটানি দিমু তোরে; আর খবরদার, আল্লা, আল্লা কইরা চিল্লাবি না! তখন আমি টের পাইলাম, আল্লা ডাকা’টা আসলে কতো বেশি জরুরি! ইভেন মা’র মাইর থিকাও বাঁচায়া দিতে পারে! পরে কয়েকবার এই টেকনিক ইউজ করছি। কিন্তু তারপরে তো বড় হয়া গেছি, আম্মারও বয়স হইছে, মাইর-টাইর খাওয়া লাগে নাই খুববেশি।

তো, এই কথা মনে হইতেছিল, গতকালকে নিউজপেপারগুলার মাইর-খায়া ‘আম্মা’ ডাক শুইনা। আমার ধারণা, এতো আম্মা ডাইকা লাভ হবে না তেমন কোন 🙁 আল্লা ডাকতে পারলে বরং মাইর কিছু কম পড়তে পারে। মানে, সেক্যুলার থিকা ইসলামিস্ট হয়া যাওয়ার দাওয়াত আমি দিতেছি না। (বলার পরেও বলদগুলা এইটাই বুঝবে, ঠেকানো যাবে না আসলে।) বলতেছি যে, আরো টেকনিক্যাল হইতে পারলে বেটার।

#########

সকালবেলা ফেসবুকে এইরকম একটা পোস্ট দেখতেছিলাম নিউজফিডে যে, চাকরি নাই – এইটা সত্যি কথা না, বরং বাংলাদেশের মানুশ (আবারো, পাবলিকেরই দোষ!) চাকরি আসলে করতে চায় না! কারণ সোনার দোকানের কারখানার গোসলখানা সাফ করার কাজ কইরাও ২৫/৩০ হাজার টাকা মাসে ইনকাম করা যায়। কিন্তু দেশের মানুশ তো অই কাজ করবে না! কারণ অইটা মেথরের কাজ!

তো, মেথরের কাজ করতে হইলেও এক ধরণের স্কিল লাগে – এইটা আমার পয়েন্ট না। বরং চাকরি, বিজনেস, পেশা বা প্রফেশন খালি ইনকাম বা টাকা-কামাই করার ঘটনা না, ক্লাস-স্ট্যাটাসের একটা ঘটনাও। বা মোস্টলি অইটাই। প্রফেশন হইতেছে একজন মানুশের আইডেন্টিটি। যেইটার বাইরে শে বেশিরভাগ সময় বাইর হইতেই পারে না।

একজন জার্নালিস্টরে লাখ টাকা বেতন দিলেও শে ব্যাংকে গিয়া চাকরি করবে না। (আমি করবো – বইলা আবার কেউ আওয়াজ দিয়েন না! মানে, পারসোনাল ঘটনা হিসাবে নিয়েন না।) ইনকাম বেশি হইলেও সিএনজি ড্রাইবার কোনদিন রিকশা চালাবে না।

এইখানে একটা ক্লাস-সিস্টেম আছে প্রফেশনের। প্রফেশন বদলানো সম্ভব না – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং প্রফেশন অনুযায়ী ক্লাস/জাত/বর্ণ জিনিসটা আছে, সমাজে। এমনকি একই প্রফেশনেও ভার্সিটির টিচার, কলেজ শিক্ষক ও হাইস্কুলের মাস্টার একই ক্লাসের লোক না!… আবার সেইম ইনকাম-গ্রুপে বা পাওয়ারের জায়গা থিকা ওভারল্যাপও করে; ভার্সিটির টিচার, বড় কর্পোরেটে উপরের পজিশনে চাকরি করা লোকজন এবং সরকারি আমলা, এনারা সবাই নিউজপেপারের ‘ইন্টেলেকচুয়াল’! এইরকমও আছে।…

মানে, দুইটা জিনিস আমি বলতে চাইতেছি এইখানে। এক হইতেছে প্রফেশন, পেশা খালি টাকা-ইনকাম করার ঘটনা না। সোশ্যাল আইডেন্টিটি’টাও এর কোর একটা ফিচার।

সেকেন্ড হইতেছে, নিজের চিন্তা-ভাবনা, কাজকামরে এই প্রফেশনের সোশ্যাল-আইডেন্টিটির মধ্যে আটকায়া ফেইলেন না! এই প্রেশারটা আছে, সব সময় থাকে প্রফেশনের ভিতরে এবং বাইরে থিকাও। আর এইগুলাও একটা জেলখানা।

অনেক সময় প্রফেশন নিয়া প্যাশোনেট হইবেন আপনি, হইতে পারলে ভালো-ও, দেখা যাবে অনেককিছুতে কন্ট্রিবিউট করতে পারতেছেন; কিন্তু অইটা হইতেই হবে – এই জায়গাটাতে আটকায়া যাইয়েন না।…

#########

কমরেড মনিং সিং’য়ের অটোবায়োগ্রাফি ‘জীবন-সংগ্রাম’ বইটা স্কুলে থাকতে পড়ছিলাম। অইখানে একসাইটিং একটা ঘটনা ছিল, কোন এক আন্দোলনের সময় বিরোধীপক্ষের সাথে (জমিদারদের সাথে মেবি) এক আলোচনায় বসছেন, উনাদেরকে নেগোশিয়েট করার জন্য একটা অফার দেয়া হইছে। একটু্ একটু পছন্দও হইছে। কিন্তু নেগোশিয়েট কইরা ফেললে তো চেত’টা দেখানো যাবে না, আন্দোলন করা যাবে না! তো, উনি তখন বলতেছেন, “যো থুক দিয়া, ও নেহি চাটে গা” এইরকম টাইপ কোন কথা, মানে, যেই থুতু ফেলে দিছি, সেইটা আর চাইটা তুলবো না! নো নেগোশিয়েশন! এইরকম হার্ডলাইন কথা। 🙂

তখন তো ভালোই লাগছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারি যে, এইটা কোন ‘বিপ্লবী’ এটিটুড না, বরং খুবই বেটাগিরির একটা ঘটনা। যে, আপনি কোন ভুলই করতে পারেন না! ভুল করলেও সেইটা স্বীকার করতে পারেন না, কারণ তাইলে বেটাগিরি ছুইটা যাবে আপনার! 🙁

এইরকম বেটাগিরি’র জায়গা থিকাই দেখবেন অনেকেই (ইনক্লুডিং মি), ইমোশনের চোটে অনেককিছু বইলা ফেলে, বলার পরেই বুঝতে পারে যে, ভুল কথা কইছিলাম! কিন্তু বেটাগিরির কারণে সরতে পারে না। পরে সাফার-টাফার কইরা, ইনায়া-বিনায়া ঘুরাপথে জিনিসটার মীমাংসা করে, বেশিরভাগ সময়, এবং আরো বাজেভাবে। কিন্তু এই যে ‘বিপ্লবীপণা’ এইটা ছাড়তে পারে না।

তো, আমি কনশাসলি এইরকম ‘বিপ্লবীপণা’ করতে চাই না। যারা করেন, তাদেরকেও বলতে চাই, এই ইগো-গেইমগুলা ফ্যাশন হিসাবেও ওল্ড-ফ্যাশনড আসলে। মানে, ঝোঁকের বশে, ইমোশনালি ভুল-ভাল কথা বলতে পারেন আপনি। এইটা এতো বাজে কিছু না আর কি!

ভুল-কথা যেমন আপনি বলতে পারেন, ভুল-কাজও আপনি করতে পারেন! মানুশ হিসাবে শয়তান হওয়া যেমন জরুরি না, ফেরেশতা হওয়ার দরকার নাই তেমন। কিন্তু মনি সিং’য়ের বাচ্চারা এখনো ফেরেশতা হওয়ার, ফেরেশতা খোঁজার বা ফেরেশতা বানানোর ট্রাই কইরা যাইতেছেন! এই মেন্টালিটি থিকা সরতে পারেন না। এর থিকা বাঁইচা থাকা দরকার, সবসময়।

 

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১

আমার ধারণা, যে কোন ভাষাতেই যত বই লেখা হয় বা ছাপা হয় এর মিনিমাম অর্ধেক হইতেছে, ট্রান্সলেশন বা তরজমা। এখন আমার ধারণা ভুলও হইতে পারে, যেহেতু এই বিষয়ে তেমন কোন ডেটা-ফেটা নাই, বা আমি পাই নাই, এই কারণে একটা দেখাদেখি, মনে-হওয়ার জায়গা থিকাই বলতেছি। আর অবভিয়াসলি এক ধরণের ক্রিয়েটিভ-ইন্টেলেকচুয়াল বইয়ের কথাই আমি বলতেছি এইখানে।

এর কারণ মেবি দুইটা। এক হইতেছে, চিন্তা জিনিসটা মোটামুটি ইউনিভার্সাল; যে কোন ভাষাতে একটা নতুন চিন্তা তৈরি হইলে সেইটা অন্য ভাষার মধ্যেও ছড়াইতে থাকে। গ্রিক-চিন্তা ইন্ডিয়াতে আসছে, ইন্ডিয়ান-চিন্তা চায়না’তে গেছে, চীনের চিন্তা আরবে-পারস্যে গেছে, পারস্যের চিন্তা ইউরোপে গেছে, ইউরোপিয়ান চিন্তা দুনিয়াতে ছড়াইছে… এইরকম চিন্তাও ঘুরতেছে। একটা ভাষা থিকা আরেকটা ভাষাতে খালি ট্রান্সলেটই হইতেছে না, ট্রান্সফর্মও হইতেছে। চিন্তা কখনোই একটা ভাষাতে, একটা জায়গাতে আটকায়া থাকতে পারে না আসলে।

আর সেকেন্ড জিনিস হইতেছে, অরিজিনাল চিন্তা বইলা কিছু নাই, সবকিছুই রিপিটেশন – এইটা ঠিক কথা না, বরং নতুন বা অরিজিনাল চিন্তার জায়গাগুলা অনেক কম; যার ফলে অই অল্প কয়টা জিনিসই নানান ফর্মের ভিতর দিয়া রিপিট হইতে থাকে।

আর ভাষার দিক থিকা আরেকটা জিনিস হইতেছে, যেই ভাষাতে যত বেশি ভাষা থিকা ট্রান্সলেশন হইতে পারে, সেই ভাষা চিন্তা এবং এক্সপ্রেশনের দিক দিয়াও তত বেশি ফ্লেক্সিবল হইতে পারে। ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ বা স্প্যানিশ খালি কলোনি তৈরি করার ভিতর দিয়া দুনিয়াতে ছড়ায়া পড়ে নাই; বরং সারা দুনিয়ার ভাষা থিকা চিন্তাগুলারে যে ট্রান্সলেট করতে পারতেছে বইলাও ভাষার জায়গাটা এক্সপান্ড করতেছে।

এখন, কিভাবে করতেছে? সেইটা আমি পুরাপুরি জানি না। কিন্তু মনে করি এই নিয়া খোঁজ-খবর করাটা হইতে পারে দরকারি একটা কাজ।

 

Leave a Reply