সেপ্টেম্বর ০১, ২০২২
খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আরেকটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা হইতেছে, সুন্দরী মেয়েদেরকে ভালোবাসার বা হেইট করার জায়গা থিকা দেখার ঘটনাই এইখানে আছে; কিন্তু যতোটা “পচানোর”, আন্ডার-এস্টিমেট করার ঘটনা আছে, রেসপেক্ট করার, কোন কাজে লিডার হিসাবে মানার এক্সাম্পল ততটা নাই। মানে, সুন্দরী-মহিলা মানেই ‘বুদ্ধি একটু কম’ – এইরকমের (কমন না) ভুল-পারসেপশন এস্টাবলিশড করার যেই টেনডেন্সি আছে, খালেদা জিয়া অই জায়গাটারও সাফারার। সুন্দরী-মহিলা বইলা উনারে খালি প্রেইজ-ই করা হয় না, ‘স্রেফ একজন মহিলা’ বানায়া রাখার পলিটিক্স’টাও আছে এইখানে।
আরো একটা জিনিস খেয়াল করবেন, মা হিসাবে এবং মেয়ে হিসাবে মেয়েদের রোল বা আইডেন্টিটিটারে যতোটা ‘পবিত্র’ বানানো হয় বা বানানো পসিবল, বউ হিসাবে বা পার্টনার হিসাবে এতোটা হইতে পারে না আসলে। এইটা খালি সেক্সুয়ালিটিরই ঘটনা না, মানে, সেক্সুয়াল পার্টনার হিসাবে তারে এক ধরণের ইকুয়ালিটির জায়গাতেও নিয়া আসে তো তখন, অইটা প্রব্লেমেটিক অনেকটা। মা এবং মেয়ে, আগের এবং পরের জেনারেশন হিসাবেও বেনিফিট পান একটা, ইনহেরিটেন্সের জায়গাতে। কিন্তু বউ হিসাবে অই জায়গাটারে তৈরি করার একটা ব্যাপার থাকে। যেমন ধরেন, শেরে-বাংলা এ কে ফজলুল হকের বউয়ের নামই আমরা জানি না, শেখ মুজিবুর রহমানের বউ বেগম ফজিলাতুন্নেসা “মা” হিসাবেই আছেন, “বউ” হিসাবে বা পার্টনার হিসাবে এতোটা নাই। কিন্তু জিয়াউর রহমানের পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারেও খালেদা জিয়ার প্রেজেন্স আছে, ইভেন ‘ফার্স্ট লেডি’ ব্যাপারটা অই সময়েই শুরু হওয়ার কথা বাংলাদেশে।… তো, এইটা খালি ‘ওয়েস্টার্ন’ ফেনোমেনাই না, প্রব্লেমেটিকও তো কিছুটা… অইটার কথা বলতেছি।
মানে, এই জায়গাগুলারে আপনার গ্লোরিফাই করার দরকার নাই। কিন্তু যেই ঘটনাগুলা ঘটছে এবং ঘটতেছে – সেইগুলারে খেয়াল না করতে চাওয়াটা, বিচার না করতে রাজি হওয়াটা খালি ইন্টেলেকচুয়াল ইন-এবিলিটির ঘটনা না, বরং অসততার ঘটনাই আসলে।
***
আগের দিনের (মানে, এইটিস বা নাইনটিজের) নিউজপেপার বা ম্যাগাজিনের রেইপের ঘটনাগুলা যদি পড়েন, অইখানে যেই মহিলারে রেইপ করা হইছে তাঁর ছবি-ই খালি ছাপানো হয় নাই, তাঁর চৌদ্দগুষ্টির ডিটেইলসও বলা আছে, যে কার মেয়ে, কার বউ, কার বইন, কার মা…এইরকম। রেপিস্টের ব্যাপারে ট্রিটমেন্ট’টা ছিল যে, সে কতো পাওয়ারফুল! – সেইটা ফুটায়া তোলা। মানে, সে পাওয়ারফুল বইলাই খালি রেইপ করে না, রেইপ করার ঘটনার ভিতর দিয়া সে পাওয়ারফুল হয়া উঠে আরো।
একইরকমের ঘটনা দেখবেন নয়া বাকশালের পুলিশ-বাহিনীর খুন করার ঘটনাগুলার ভিতরে। যেই মানুশগুলা মারা যাইতেছে, তাদেরকে নিয়া আহাজারি করবেন-না না, কিন্তু খুনিদের কোন নাম-নিশানাও নাই। অই সময়ে কোন ওসি-এসপি ছিল, কে গুলি করার পারমিশন দিছে, কারা কারা গুলি করছে – এই নাম-ধাম, ডিটেইলগুলা যে জানা যাবে না – তা না, বরং এই কোশ্চেনগুলা না করতে দেয়াটাই হইতেছে বাকশালি-মিডিয়ার কাজ।
ব্যাপারটা এইরকম না যে, রাষ্ট্র হইতেছে খুনী, সিস্টেম হইতেছে দোষী; বরং এইখানে স্পেসিফিক খুনীরা আছে, যারা রাষ্ট্রের উর্দি পইরা, সিস্টেমের দোহাই দিয়া খুনগুলা করতেছে। যাদেরকে দিয়া আরো খুন করানো হবে। সেই খুনিদের নাম বলতে পারতে হবে আমাদেরকে।
সেপ্টেম্বর ০২, ২০২২
বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম (নিউজপেপার, টিভি-চ্যানেল এবং বইপত্রের) পলিটিক্যাল বয়ান হইতেছে জালিমরে হিরো বানানোর এবং পিপলরে দুশমন বানানোর একটা বয়ান। দেশের মানুশ হইতেছে খারাপ, দেশের মানুশের পক্ষে যারা কথা বলে, তারা হইতেছে “কম বুঝে”… অথচ এই অবৈধ সরকারের জুলুম নিয়া একটা লাইন, এক মিনিটের কোন কথা পাইবেন না।
গত ১০ বছরে পুলিশ এবং সরকারি-বাহিনি কতোগুলা খুন করছে, কতোগুলা গুম করছে – এই নিয়া কোন আলাপ কোন টিভি-পত্রিকার নিউজে পাইবেন না। কারা করছে? তাদের নাম-ঠিকানা কোথাও নাই। কিন্তু এরা তো ভূত না! এরা সরকারের কিলিং এজেন্ট। দিনের পর দিন গুম-খুন-নির্যাতনগুলা কইরা যাইতেছে।
অথচ দেখবেন এরাই হিরো! বুক-ফুলায়া টিভিতে, পত্রিকাতে বক্তৃতা-ভাষণ দিতেছে! শয়তানগুলারে, শয়তানের দালালগুলারে আমাদের সামনে “হিরো” হিসাবে বারবার দেখানো হইতেছে! অদের মিছা-কথাগুলাই বারবার আমাদেরকে শোনানো হইতেছে।
আর যারা গুলি খায়া মরতেছে, এই শয়তানির, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা কইতেছে তাদেরকে নাই কইরা দেয়া হইতেছে! “নরমাল” ঘটনা বানায়া দেয়া হইতেছে। ভিলেন বানায়া দেয়া হইতেছে, হাসি-ঠাট্টা করার লাইগা এনকারেজ করা হইতেছে। ভিক্টিমরেই দোষ দেয়াটাই হয়া উঠতেছে “নিয়ম”, আর এর ভিতর দিয়া জালিমের “পাওয়ারফুল” ইমেজ ক্রিয়েট করা হইতেছে।…
এই কারণে, আমাদের ফার্স্ট কাজ হইতেছে, খুনিরে খুনি বলতে পারা। এদেরকে খুনি হিসাবে পরিচয় করায়া দেয়া। যারা খুনিদেরকে আড়াল করতে চায়, তাদের নাম মুখে নিতে পারে না, তাদেরকে সন্দেহ করতে পারতে হবে আমাদেরকে, তাদের কাছ থিকা নিজেদেরকে আলাদা করতে পারতে হবে।
যারা মানুশের বুকে গুলি চালাইতেছে, আর যারা গুলি খাইতেছে – তারা একই দলের লোক না। এই ডিফারেন্সিয়েশনটা জরুরি।
বাকশালিদেরকে, নয়া বাকশালের দালালদেরকে হিরো হিসাবে পোট্রেট করার যেই প্রজেক্ট – তার থিকা বাইর হইতে পারা, তারে বাতিল করতে পারাটাই হইতেছে ফার্স্ট স্টেপ।
***
“চলচ্চিত্র শিল্প জাতীয়করণ নীতিমালা ১৯৭১” নামে একটা ড্রাফট বানাইছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আলমগীর কবির আর জহির রায়হান। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে একটা ফাইনাল ড্রাফট করা হইছিল। এই ড্রাফট’টা পরে বই হিসাবে ছাপানো হইছে ২০২১ সালে। পরস্তাবের মূল কথা ছিল সবকিছু (জাতীয়করণের নামে) দখল করা। এমনকি লুটপাট ও ডাকাতি করা।
“পরিবেশনা সংস্থাগুলো… জাতীয়করণের সমস্যাও খুব বেশী নয়। গত ২৫শে মার্চের আগের হিসেবে দেখতে গেলে দেখা যাবে বাংলাদেশের পরিবেশনা সংস্থাগুলোর বেশিরভাগ হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানী ও তাদের তাবেদারদের। এদের অনেকেই ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে চলে গেছে। অনেকেই পাকিস্তান সরকারের দালাল হিসেবে কাজ করেছে এবং করছে। – এই দুই শ্রেণীর লোকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশনা সংস্থাগুলোকে জাতীয়করণে সরকারকে কোন আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হবে না।” (পেইজ ৫০)
“আরো অনেক সিনেমা হলের মালিক পাকিস্তানী শাসকচক্রের দালালী করেছে। এ সমস্ত সিনেমা হলকে জাতীয়করণের ক্ষেত্রে কোনরকম ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” (পেইজ ৫২)
মানে, ‘পাকিস্তানের দালাল’ বানায়া দিয়া মানুশের বিজনেস-সম্পত্তি লুটপাট করার ইন্টেলেকচুয়াল বেইজটা অনেক আগে থিকাই শুরু করছিল বাকশালের লোকজন। যেইটা এখন রিভাইব করা হইছে আসলে, নয়া বাকশালের আমলে।
অই সময়ের অনেক ডকুমেন্টই নাই কইরা দেয়া হইছে। কিন্তু নিজেদের বাহাদুরির অনেক ডকুমেন্টই শো করতে থাকবে এরা, আর এইগুলাতেই দেখা যাবে, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশের মানুশদের ফ্রিডম কাইড়া নিতে চাইছিলো এরা। বিপ্লব করার নামে একটা নন-ডেমোক্রেটিক এবং দখলদারি ও জুলুমের শাসন কায়েম করছিল।
১৯৭২ – ১৯৭৫ এর যে কোন ডকুমেন্টেই এর কোন না কোন নিশানা পাওয়া যাবে বইলা আমার ধারণা। যেমন গত ১০ বছরের বাংলাদেশের সরকারি প্রেসনোট, আদেশ-নির্দেশগুলা দেখলেই টের পাওয়া যাবে, কি রকমের জুলুম আর জবরদস্তির শাসন কায়েম করা হইছে দেশে।
মানে, এই ডকুমেন্টটাতে দেখেন, খুব সরাসরিই বলা হইতেছে – দখল করেন, লুটপাট করেন! কিন্তু যেহেতু “জাতীয়করণের” নামে বলা হইতেছে “পাকিস্তানি দালালদের” কথা বলতেছে; তখন এইগুলা যেন লুটপাট করতে বলা না! পশ্চিম পাকিস্তানিদের রাইখা যাওয়া ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আর সিনেমাহলগুলার মালিক কারা হইছিল পরে? 🙂 কোন “মুক্তিযোদ্ধারা”? ইতিহাস এতো দূরের কোন ঘটনা না…
সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
চিটাগাংয়ের পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তারের বউ মিতু’র খুনের উপরে বানানো ইলিয়াস হোসাইনের ইউটিউব ভিডিও’টা দেখলাম, সন্ধ্যাবেলায়। ভালো কাজ হইছে এইটা। (শুরু আর শেষের অংশটা বরং আরেকটা ভিডিও-নিউজ হইতে পারে আসলে, ইন ডিটেইল। অইটা বাড়তি আলাপই হইছে এইখানে। অইটা ইগনোর করা যাইতেই পারে) ভালো হইছে কয়েকটা সেন্সে –
১. এমন না যে, এইটা সিম্পল একটা কন্সপিরেসির ঘটনা, বরং বাংলাদেশের ওভারঅল সিস্টেমটাই এইরকম। এমন না যে, গর্ভমেন্টের লোকজনরে চোখে আঙুল দিয়া সত্যি’টারে দেখায়া দেয়া হইলো! বরং এই অবৈধ সরকার জাইনা-শুইনাই ক্রিমিনালদের পালে, পুষে। খালি পলিটিক্সেই না, পুলিশে, সরকারি চাকরিতেও আপনি যদি ক্রিমিনাল কাজকাম করতে রাজি না হন, বিপদে পড়তে পারেন। আপনারে ক্রাইম করতে হবে, তা নাইলে চুপ কইরা থাকতে হবে। পুরা দেশের অবস্থাটাই এইরকম এখন। তো, এই ওভারঅল অবস্থার একটা উদাহারণ হইতেছে এইটা। এই জায়গা থিকা দেখতে পারলে ভালো।
২. গ্রসলি বলতে গেলে, বাংলাদেশে সাংবাদিকরা যতোটা না অসহায়, তার চাইতে বেশি এই ক্রাইম সিস্টেমের একটা ইন্ট্রিগ্রেটেড পার্ট। বাকশালের সব আকাম-কুকামে নিউজ-মিডিয়ার লোকজনের একটা স্টেইক বা ভাগ আছেই, বা থাকার কথা। ইন্সিটিটিউশনালি হোক আর পারসোনালি – “পুলিশ-সাংবাদিক (এবং আর্টিস্টরা 🙂 ) ভাই ভাই”!
৩. আমি মনে করি, এইরকম ইন্ডিভিজ্যুয়াল জার্নালিজমের জায়গাগুলা দিনে দিনে আরো ইম্পর্টেন্ট হয়া উঠবে। মানে, নিউজপেপার আর টিভি-চ্যানেলগুলার খবরে আমরা তো বিশ্বাস করি না আর। কিন্তু ধীরে ধীরে অল্টারনেটিভ কিছু স্পেইস তৈরি হইতে পারবে বইলা আমার আশা আছে। কিন্তু সেইটাও কিছুটা কালেক্টিভ এফোর্টের ভিতর দিয়াই মেবি একটা বেটার শেইপে আসতে থাকবে।…
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, একটা আলাদা ঘটনা হিসাবে না দেইখা, বা বিশাল কন্সপিরেসির পার্ট হিসাবে না ভাইবা, আমাদের এগজিসটিং রিয়ালিটির একটা নমুনা হিসাবে নিতে পারলে বেটার। এইটা সুরিয়াল না, কম-বেশি এইটাই রিয়ালিটি আমাদের।
***
বাংলাদেশের বেশিরভাগ (যেহেতু সব পড়ি নাই এই কারণে ‘সব’ বলতে পারতেছি না টেকনিক্যালি, কিন্তু আসলে হবে – সব) পলিটিক্যাল ইতিহাস হইতেছে কি কি “বিপ্লব” হইতে পারতো, কি কি “বিপ্লব” হয় নাই – সেইসব গল্প-কাহিনির ইতিহাস। মানে, সেন্টার পয়েন্ট হইতেছে “বিদ্রোহ” এবং “বিপ্লব”। ডেমোক্রেসি বা পিপলের শাসনের জায়গা থিকা কখনো দেখা হয় নাই (বা হয় না)।
এর ফলে দুইটা ঘটনা ঘটছে বইলা আমি মনে করি। এক নাম্বার জিনিস হইতেছে, আমাদেরকে হিরো বা নায়ক খুঁইজা বাইর করতে হইতেছে; ইভেন অনেক সময় কে হিরো আর কে ভিলেন? – এইরকমের আন-নেসেসারি তর্কের ভিতরেই থাকতে হইতেছে।
মানে, একটা হিস্ট্রিক্যাল ঘটনাতে কোন হিরো বা ভিলেন থাকে না – তা না, কিন্তু কাউরে হিরো বানানো বা কাউরে ভিলেন বানানোটাই যে কোন হিস্ট্রিক্যাল ন্যারেটিভের একটা উদ্দেশ্য হয়া উঠে।
এইটা নেসেসারিলি যা করে, সোসাইটির ইকনোমিক্যাল ও কালচারাল ফেনোমেনাগুলারে হাইড কইরা ফেলে, কনটেক্সট’টারে ফোকাস-পয়েন্ট হিসাবে পুরাপুরি নিতে পারে না আর।
সেকেন্ড হইতেছে, এই কারণে, হিস্ট্রিতে যখন যখন ‘জনতার রায়’ এস্টাবলিশড হইছে, সেই মোমেন্টগুলারে আমরা মার্ক করতে পারি নাই, বা সিগনিফিকেন্ট ঘটনা হিসাবে মানতে পারি নাই। পিপলস পার্টিসিপেশনের জায়গাটারে, ডেমোক্রেসির জায়গাটারে সবসময় সাইডলাইনের ঘটনা কইরা রাখা হইছে।
যেমন ধরেন, ১৯৪৭ সালের ঘটনা’টা, রিসেন্ট হিস্ট্রিতে সবচে রিমার্কেবল জিনিস, কম-বেশি পিপলের পার্টিসিপেশন এবং রায়ের ভিতর দিয়াই বাংলাদেশের মানুশ “পূর্ব পাকিস্তান” হওয়ার ডিসিশান নিছিল। কিন্তু তেমন কোন “হিরো” (শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সেন্ট্রাল ফিগার ছিলেন না অই সময়টাতে) আবিষ্কার করা যায় নাই বইলা, এই ঘটনার সিগনিফিকেন্সটারে আন্ডারমাইনই করা হয়। ১৯৭১-এর ঘটনাতেও কাউরে না কাউরে “বাপ” যে বানাইতে হয় – এইটা অই ভুল-রকমের হিস্ট্রি-রিডিংয়ের অভ্যাসের কারণেই হয়। আর এইখানে আমার সবচে বড় আপত্তিটা হইতেছে, এতে কইরা পিপলের রায় দেয়ার জায়গাটারে বাতিল করা হয়। যেইটা নতুন হিস্ট্রি তৈরি করার ব্যাপারে সবচে বড় অবস্টেকল।…
বাংলাদেশের মানুশ নিজেদের রায় দেয়ার সুযোগ খুব কমই পাইছে, হিস্ট্রিতে। যে কোন শাসনামলেই, দেশের মানুশের রায় দেয়ার ক্ষমতা ছিল কি ছিল না – এই জিনিসটারে সেন্টার কইরা যদি বাংলাদেশের হিস্ট্রি’টারে দেখতে রাজি হইতে পারি আমরা, তাইলে দেশের মানুশের শত্রু-মিত্র কারা – এইটা চিনতে ভুল কম হওয়ার কথা।…
সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
যে কোন গ্রেট আর্টিস্টের সবচে বড় জিনিস হইতেছে, ট্রান্সপারেন্সি; সহজে বইলা ফেলতে পারার জায়গা।… তো, এইটা মনে হইলো, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের একটা কথা’তে। উনি বলতেছিলেন, গানে আমি কোনদিন কঠিন শব্দ বসাই নাই, আমি চাইছি আমার গান যারা শুনবে তারা যেন সহজে বুঝতে পারে।… মানে, আমাদের কঠিন ও অপরিচিত শব্দে কবিতা লেখার রুচির জায়গা থিকা উনার গানের লিরিকসরে এভারেজ মনে হইতে পারে। কিন্তু অই এভারেজ জায়গাটাই উনার সিগনেচার হয়া উঠছে আসলে একভাবে।
***
খুবই উইয়ার্ড একটা ঘটনা ঘটলো আজকে। ফুডপান্ডাতে লাঞ্চ অর্ডার করছি, রেস্টুরেন্ট থিকা পিক করার ২ মিনিট পরেই দেখাইতেছে – ডেলিভারড! কি হইলো!
ফুডপান্ডার মেসেজ সিস্টেমে জানাইলাম, ফুড ডেলিভারি দেয় নাই, কিন্তু বলতেছে ডেলিভারড! নাম, ঠিকানা কনফার্ম করার পরে কইলো ২-৩ মিনিট সময় দেন, দেখতেছি। মিনিট খানেকের মধ্যেই টাকা রিফান্ড কইরা দিল। (ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করছিলাম।) সরি কইলো, একটা ভাউচার দিল। জিগাইলাম, কি হইছিল? কইলো, রাইডারের পারসোনাল প্রবলেমের কারণে ডেলিভারি দিতে পারে নাই, একশন নেয়া হইতেছে যাতে এইরকম ঘটনা আর না ঘটে।
তো, আমি মনেহয় আন্দাজ করতে পারতেছি কিছুটা 🙁 রাইডার ফুডপান্ডার চাকরিটা আর করবে না, খাবার নিয়া হয়তো চইলা গেছে। মানে, না-ও হইতে পারে। কিন্তু এইরকম ঘটনা গত ১০০ টা অর্ডারে কখনো ঘটে নাই আর কি!
একবেলা না খায়া থাকলে তেমন কোন সমস্যা নাই আমার। খাওয়া-দাওয়া তো সবসময় হয়-ই কিছু না কিছু। ফুডপান্ডার রাইডারটার জন্যই বরং খারাপ লাগতেছে একটু।…
বাজারে জিনিসপত্রের দাম কি কমবে কোনদিন? নাকি জিডিপি গ্রোথের খবর খাইয়াই খুশি থাকতে হবে আমাদের?
সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২
এই জিনিসটা কি খেয়াল করছেন, যে কোন সরকারি অফিসই না খালি কোন প্রাইভেট কোম্পানিতেও যদি কোন কাজের/সার্ভিসের লাইগা যাইতে হয়, আমরা ফার্স্টেই খোঁজ করার ট্রাই করি, পরিচিত কেউ আছে কিনা! মানে, অই পরিচিত-মানুশটাই আমাদের কাজটা কইরা দিবেন – তা না, একটু ‘বইলা’ দিলে ভালো হয়! এবং এই জিনিসটা সত্যি সত্যি কাজও করে। মানে, আপনি ‘অপরিচিত’ বা ওয়াক-ইন কাস্টমার হইলে সার্ভিসটা পাইবেন না – তা না, ‘পরিচিত’ কারো থ্রু’তে গেলে কনফিডেন্সটা বাড়ে একটু! ভালো-মতো সার্ভিস পাইলে তো ভালো, ভালো না হইলে আইসা গালি-গালাজটা এটলিস্ট করা যায়। 🙂
মানে, এই জিনিসটা গ্রসলি আমাদের সোশ্যাল প্রাকটিসের মধ্যে আছে।
এইটা মনে হইলো একটা জিনিস দেইখা। কারো ‘পরিচিত’ একজন মেয়ে’রে নিয়া মেবি ট্রল হইতেছে। (আই ডাউট যে, ‘পরিচিত’ বইলা হইতেছে কিনা, বরং ‘আরবান-মিডলক্লাস-রুচিশীল’ বয়ানের জায়গা থিকাই হইতেছে আসলে।) তো, কয়েকজন বলতেছেন, উনারে তো আমি চিনি! উনি ভালো-মেয়ে! উনারে নিয়া কেনো ট্রল করতেছেন! 🙁
এখন অনলাইনে আপনি-আমি যাদেরকে নিয়া ট্রল করি, তাদের সবাই তো আর সেলিব্রেটি না, তাদের পরিচিত মা-বাপ-বোন-ভাই-বউ-জামাই-ফ্রেন্ডস-রিলেটিভ তো আছেন! (সাভারের একজনের মহিলার ঝগড়া করার কথা মনে হইলো। এইরকম আরো উদাহারণ পাওয়া যাবে।) বাংলা-সিনেমার জসিমের ছেলেও দেখলাম একটা রক ব্যান্ডের মেম্বার! মানে, আমি বলতে চাইতেছি, কেউ আপনার পরিচিত, এবং ভালো-মানুশ – এই কারণেই ট্রল করা যাবে না – এই পজিশনটা ঝামেলারই।
ব্যাপারটা এইরকমও না যে, দিনের পর দিন হিরো আলম, রিপন ভিডিও, অনন্ত জলিলদের নিয়া আপনারা ‘ফান’ করছেন বইলা এখন আপনাদেরকে নিয়া ট্রল করা হবে! মানে, এইরকম হইলে ব্যাপারটা সেইম লেভেলেরেই বাজে!
কিন্তু ঘটনা এইটা না। বরং আমি মনে করি, আমরা যেইরকমের একটা জায়গাটাতে আইসা হাজির হইছি, যেইখানে সবসময় কোন কিছু নিয়া আমাদেরকে ফান/ট্রল করতে থাকতেই হবে! এইটা ছাড়া কোন রিলিভেন্স/মিনিং তৈরি করা টাফ হয়া উঠতেছে! কারণ, আপনারে খালি ইম্পর্টেন্ট কোন কথা কইলেই হবে না, এন্টারটেইনমেন্টও দিতে পারতে হবে তো!
যেই মেয়েটারে নিয়া ট্রল হইতেছে, শে খালি একটা পয়েন্ট মেইক করতে চাইছে ব্যাপারটা এইরকম না, সেইটা এন্টারটেইনিং-ওয়েতেই করতে চাইছে তো! কিন্তু জিনিসটা ব্যাক-ফায়ার করছে আর কি! 🙁 (মিডল-ক্লাস সেন্টিমেন্টের জায়গাগুলাই ‘ফানি’ হয়া উঠতেছে আসলে।)
ডোন্ট গেট মি রং, খুবই চান্স আছে এইটা ভাবার, যেন আমি সার্পোট করতেছি ট্রল’টারে, কিন্তু এইটা ঘটনা না। আমি বলতে চাইতেছি, আপনি যারে ‘অপরিচিত’ ভাইবা ট্রল করতেছেন, তাদের কেউ আপনার ‘পরিচিত’ কাউরে ট্রল করতে পারবে না – এই শর্ত কাজ করবে না। (এইটা স্যাড একটা ঘটনাই।)
কারণ, যখন আপনি (ইন্টারেস্টিং হইতে পারেন) ‘ট্রল’-ই করতে পারেন, আপনি (হ্যাপি কেন হইবেন) ‘ক্রিটিক’ কেন করবেন! এই ডিলেমারই একটা ঘটনা এইটা।
***
যেই দেশে মানুশের মিনিমাম পলিটিক্যাল রাইটস নাই। ভোট দিতে পারে না। মিছিল করলে সরাসরি বুকে গুলি কইরা খুন করে পুলিশ। বাসা থিকা ‘ডিবি পুলিশ পরিচয়’ দিয়া ডাইকা নিয়া গুম করা হয়। (দুইদিন আগেও নেত্রকোণাতে হইছে।) দিনের পর দিন একটা অবৈধ সরকারের শাসন চলতেছে।
যেই দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হইতেছে “উন্নয়ন” আর “মেগা-প্রজেক্টের” নামে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম হু হু কইরা বাড়তেছে। দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পৌঁছায়া গেছে দেশের ইকনোমিক অবস্থা। রাইজিং টাইগার থিকা ছাল-চামড়া উঠা কুত্তার দশা।
সেইখানে “পোশাকের বৈচিত্র” রক্ষা করার নামে দেশের মানুশরে “মূল শত্রু” হিসাবে চিহ্নিত কইরা কথা-বলার জায়গাগুলা পলিটিক্যালি কার পারপাস সার্ভ করে আসলে? যারা এই হাইপগুলা ক্রিয়েট করতে চায় তাদেরকে (সো-কল্ড পক্ষ এবং বিপক্ষ – দুই দলের লোকদেরকেই) ‘বেকুব’ ও ‘বলদ’ ভাবা বন্ধ কইরা ‘বাটপার’ বইলা চিনতে পারতে হবে। তা নাইলে পলিটিক্যালি ভুল করবো আমরা।
এট এনি কস্ট, নয়া বাকশাল এই কালচারাল ইস্যুটারে পলিটিক্যাল কালার দিতে চাইবে। কিন্তু মনে রাখবেন, কালচারাল-কনফ্লিক্ট আর পলিটিক্স-স্ট্রাগল দুইটা একই জিনিস না। যেইখানে মানুশের মিনিমাম পলিটিক্যাল রাইটস থাকে না, সেইখানে কালচারাল ফ্রিডম বইলা কিছু থাকতে পারে না। এই জায়গাটারে সবকিছুর আগে রিকগনাইজ করতে পারতে হবে।
ফ্রিডম কোন সিলেক্টিভ ঘটনা না। পলিটিক্যাল এবং ইকনোমিক্যাল ফ্রিডমই কালচারাল ফ্রিডমের জায়গাটারে তৈরি করবে। এবং ব্যাপারটা ভাইস-ভার্সা না, এতোটা।…
সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২২
আকবর আলী খান
ব্যাপারটা এইরকম না যে, আকবর আলী খান ২০০৬ সালে আইসা ‘সাহস’ দেখাইছিলেন, বরং ১৯৭৩ সালেও উনি সরকারি-চাকরি ছাইড়া দিছিলেন।
(যদিও এই ব্যাপারে উনি কম-বেশি মুখ বন্ধই রাখছেন, শাহাবুদ্দিন আহমেদের মতো। কি রকম – সেইটা আরেকটা পোস্টে লেখছিলাম, কমেন্টে লিংক দিতেছি। যেই কারণে উনার ‘রাইটার’ পরিচয়রে দেখবেন ‘প্রগতিশীল’-গংয়ের লোকজন হাইলাইট করতেছে বেশি। উনার হিস্ট্রিক্যাল-এক্টের জায়গাগুলারে না।)
উনি বাকশালি-লুটপাটের অংশীদার হইতে নিজেরে রাজি করাইতে পারেন নাই। টিচার হিসাবে চাকরি চেইঞ্জ করছিলেন। পিএইচডি কইরা আসার পরে ১৯৭৯ সালে আবার সরকারি-চাকরিতে ফিরার জন্য বলা হয়। এবং পরে টিচারশিপের চাইতে সরকারি-আমলা হিসাবেই উনি কমফোর্টেবল ছিলেন বইলা মনেহয়।
তো, উনার নিরবতা ‘হিরন্ময়’ না। কিন্তু এইটারে মোটাদাগে একটা জেনারেশনের আইডিওলজিক্যাল এরর হিসাবে আমি মার্ক করতে পারি। উনারা ‘বাঙালি’ নামের ‘ভ্রান্ত’ ধারণা থিকা বাইর হইতে পারেন নাই। ১৯৬০-৭০ এর জেনারেশনের জন্য এইটা ‘কালচারাল-ভুল’, কিন্তু আমাদের সময়ে আইসা এইটা একটা ‘কালচারাল-ক্রাইম’ আসলে।…
হি, হু ইজ নট অ্যা হিরো, মে নট বি নেসেসারিলি অ্যা ভিলেন! যে কোন হিস্ট্রিক্যাল আলাপে এই স্পেইসটারে আমাদেরকে বাঁচায়া রাখাটা জরুরি বইলা মনে করি আমি।
***
হিউম্যান হিস্ট্রিতে মনার্কি (বা রাজা-বাদশাদের আমল) এবং ধর্মের ‘রাজনৈতিক ব্যবহার’ মোটামুটি কাছাকাছি সময়ের ঘটনা। আমার আন্দাজ তো এইরকমও যে, রাজা’র ধর্মই ছিল প্রজাদের ধর্ম! এর বাইরে মানুশের নিজস্ব ধর্ম-বিশ্বাসের কোন জায়গা ছিল না – তা না, বরং যেইটা রাজাদের ধর্ম ছিল, সেইটাতে প্রজাদের সাবমিশন করতে হইতো। এইটাই ছিল কম-বেশি ‘নিয়ম’। তার বাইরে গিয়া নিজেদের ধর্মের জায়গা থাকলে সেইগুলা বরং ‘রিচুয়াল’, ‘ঐতিহ্য’ এবং ‘কালচারের’ ঘটনাই হয়া থাকার কথা। ‘ধর্ম’ হয়া উঠতে পারে নাই।…
রাজারা রাজা হইতেন এক ধরণের “গড’স উইল” বা “ঐশ্বরিক বিধানের” বেসিসেই। মানে, উনারা যে জমির মালিক – এইটা খালি মিলিটারি-পাওয়ারের কারণেই না, “খোদার আদেশ”ও এইখানে এমবেডেড ছিল একভাবে। এই জিনিসটা মাস্ট ছিল, রাজা’র অথরিটি ধইরা রাখতে। ধর্ম ছিল একটা বড় যুক্তি। যেইটা পরে চার্চের-রাজনীতি হিসাবে আমরা দেখি যে, চার্চের সম্মতি (যত শ্যালোই হোক) ছাড়া কোন রাজার ক্ষমতায় থাকাটা কঠিন। রাজারা হইতেছেন দুনিয়াতে গডের রিপ্রেজেন্টেটিভ! এইরকমের ব্যাপার ‘হাস্যকর’ মনে হইলেও লিগ্যালিটির জায়গাটা মেইবি অইটাই।… তো, এইটা খালি খ্রিষ্ট-ধর্মের ঘটনাই না, যে কোন রাজাই যে কোন একটা ধর্মের “প্রতিনিধি” হিসাবে অথরিটি ক্লেইম করছেন। (মোগল আমলের মাজারের কথা ভাবতে পারেন। বৌদ্ধ-রাজাদের কথাও।)
এখনকার দিনের রাষ্ট্রের স্ট্রাকচারে ধর্মের দরকার পড়ে না – এই চিন্তাটা মনেহয় ঠিক না, বরং রিলেশনের জায়গাটা একটু নড়চড় হইছে। দুনিয়াতে এখন গডের রিপ্রেজেন্টেটিভ হইছেন মানুশ বা পাবলিক। পাবলিকের ধর্ম হইছে রাষ্ট্রের ধর্ম। কিন্তু যেহেতু পাবলিক বইলা ভিজিবল কিছু নাই অইভাবে, যার ফলে রিলিজিয়াস ইন্সিটিটিউশনগুলার পাশাপাশি পাবলিক ইন্সিটিটিউশনগুলা (স্কুল-কলেজ, পত্র-পত্রিকা, নানান এসোসিয়েশন) এর পার্ট হয়া উঠছে। মানে, আমি বলতে চাইতেছি, রাষ্ট্র হোক বা রাজতন্ত্র, এর sovereignty বা চূড়ান্ত ক্ষমতার যেই জায়গাটা, সেইটা ধর্ম-চিন্তার লগে এফিলিয়েটড একটা ঘটনাই। সবসময়, এবং এখনো।…
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২
ইউনিলিভার লাক্স, হুইলের দাম মোটামুটি ৫০% মতো বাড়াইছে – এইটা নিয়া কিছু কথা-বার্তা দেখলেও ব্যাপারটা এখনো ‘ভাইরাল’ হইতে পারতেছে না। তবে ইস্যু প্যারামিটারে টপ টেনে আসতে পারছে মনেহয়।
এর যে বেশি ভাইরাল না হইতে পারার কারণ মনেহয় দুইটা। (আরো তো থাকতেই পারে। আমার এই দুইটার কথা মনে হইছে আর কি!)
এক হইতেছে, জিনিসপত্র কোনটার দাম বাড়ে নাই! কতগুলা নিয়া কত কথা কইবেন আপনি! এমনকি দাম আরো বাড়বে – এই ডরও আছে আমাদের মনে। (স্কয়ার, প্রাণ অরাও তো দাম বাড়াবে কয়দিন আগে আর পরে।) মানে, এইটারে খালি “বহুজাতিক কোম্পানির শোষণ” নাম দিলে দেশি বাকশালি ডাকাতদেরই সার্পোট করার রাস্তা কইরা দেয়া হয়, একভাবে। এই আন্দাজ আমাদের সবারই কম-বেশি আছে আসলে।
কিন্তু এইটা মেইন ঘটনা বইলা মনেহয় না আমার কাছে। আমরা যা দেখি, তার মোটামুটি পুরাটাই একটা আয়না, ভিজিবিলিটির। তো, এইখানে বড় কোম্পানিগুলার একটা স্টেইক আছে। এই স্টেইকটা মেইনটেইন হয় ভিজিবিলিটির ভিতর দিয়াই মোস্টলি। বাংলাদেশি টিভি-চ্যানেলগুলাতে খেয়াল করলে দেখবেন কনটেন্ট বা নিউজের চাইতে অ্যাডের টাইম বেশি; তো, যদি খুব ‘কড়া’ নিউজও করেন 🙂 সেইটা আউট-পাস করতে পারবে না অ্যাডের ভিজিবিলিটিরে।
যদিও ফেসবুকে, ইউটিউবে আমরা টাইম স্পেন্ড করি, কিন্তু এইটা প্রাইভেট-ভিউ’র স্পেইস; পাবলিক-ভিউ’র স্পেইস এখনো ট্রাডিশনাল মিডিয়াতেই – নিউজপেপার এবং টিভি-চ্যানেলের দখলে। যদিও পাবলিক-ভিউ’র ধরণটাই চেইঞ্জ হইতেছে, সবকিছুরেই অনলাইন হইতে হইতেছে, কারণ ক্রাউড’টা এইখানে, বাজারটা। নিউজপেপারের, টিভি-নিউজের নিউজের আলাদা কোন ইমপ্যাক্ট নাই, যদি না সেইটা ভাইরাল হইতে পারে অনলাইনে। কিন্তু অইখানেও খালি ‘বিজ্ঞাপণ’ না, সোশ্যাল-ইনফ্লুয়েন্সার এবং অনলাইন-সেলিব্রেটিদের “নিরবতা” আমরা পাইতেছি তো! যেই কারণে, নিউজ-পেপার এবং টিভি-চ্যানেলের উপরে আমরা খেপি, এইরকম অনলাইন সেলিব্রেটিদের উপরও আমরা বিলা হই – অরা কথা কইতেছে না কেন!
কিন্তু এইখানে একটা কথা-বলা’র যতোটা না দাম, না-বলার দাম তার চাইতে বেশি।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আমাদের যেই রিয়ালিটি-প্রডিউসিং মেশিনগুলা আছে, সেইখানে ইউনিলিভারের লাক্স, হুইলের দাম যে বাড়ছে, সেই জিনিসটারে ইস্যু না কইরা তুলতে পারাটারে খালি টেকনিক্যালি “পুঁজির দালালি”র জায়গা থিকা এক্সপ্লেইন করা যাবে-না না, বরং অই জায়গাগুলার অপারেটিং-সিস্টেমটার লগেই লাগানো (এমবেডেড বা ‘অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত) একটা ঘটনা।
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
যেই জিনিস মানুশের পছন্দের, সেই জিনিসটা দিয়া দুনিয়ার অনেক কিছু সেই মানুশটা টের পাইতে পারে বইলা আমার মনেহয়। যেইরকম আমার পছন্দের জিনিস হইতেছে গডফাদার সিনেমাটা, ম্যাট্রিক্স-ও (ট্রিলজির ফার্স্ট সিনেমাটা) দেখা হইছে অনেকবার। তো, দেখতে দেখতে অনেক কিছু টের-পাওয়ার ঘটনাটা ঘটে।
যেইরকম নিও’র লগে বিট্রে করে যেই লোকটা, সে নিজেরে মনে করতো হিরো বা ‘দ্য ওয়ান’; এমনকি মরফিয়াস তারে এই কারণেই নিয়া আসছিল, রিক্রুট করছিল। পরে দেখা যায়, সে আসলে ‘দ্য ওয়ান’ না। সে এইটা মাইনাও নেয়। কিন্তু যখন টের পায় নিও হইতেছে ‘দ্য ওয়ান’ তখন বিট্রে করে, আঁতাত করে দুশমনের লগে।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ভিলেন খুব কম সময়েই ভিলেন, বরং ভিলেন হইতেছে ফেইলড-হিরো’র ঘটনাই বেশিরভাগ সময়, যে আসলে হিরো ছিল বা হিরো বইলা ভাবতো নিজেরে, তারই ঘটনা একটা। যে একটা সময়ে গিয়া বুঝতে পারে যে, সে আসলে ‘হিরো’ না, হিরো হইতেছে অন্য আরেকজন। আর তারে ‘হিরো’ না হইতে দিতে চাওয়ার ভিতর দিয়া ‘ভিলেন’ হিসাবে এপিয়ারড হইতে থাকে তখন।
তো, এই জায়গা থিকা আমার টেইক-আউট এইটা না যে, হিরো না হইতে চাওয়াটা ভালো একটা জিনিস! বরং যেই বেইজ থিকা আপনি লাইফটারে দেখেন, সেইটা নিয়া ফ্ল্যাক্সিবেল বা সাবধান থাকাটা ভালো, সবসময়!
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
“শিবির-বুলিং” যেইভাবে কাজ করছে, বাকশালিদের “বিএনপি-বুলিং” একইভাবে কাজ করবে না। ব্যাক-ফায়ার করবে উল্টা।
মানে, ব্যাপারটা কখনোই ‘সত্যি-মিথ্যার’ ঘটনা না। যেমন ধরেন, মামুনুল হকের দুই-বিয়া’র প্রপাগান্ডা নিউজ-জম্বি মিডল-ক্লাসরে খাওয়ানো গেছে কারণ “মাদরাসার লোকজনদের যৌন-অবদমন (sex strive)”-এর একটা ন্যারেটিভের লগে এইটারে মিলানো গেছে। একইরকমভাবে, শিবিরের রগ-কাটার (রিয়ালিটি থাকুক বা না-থাকুক) ন্যারেটিভ ছিল।
তো, বিএনপি’র লোকজনের মাস্তানি ছিল না – তা না, কিন্তু বাকশালের তুলনায় অইটা কিছুই না! এমনকি, পুলিশ আর নেতা, গর্ভমেন্ট আর পার্টি – দুইটা আলাদা জিনিসই ছিল।
গতকালকে একজন একটা ঘটনা বলতেছিলেন, তার বাপ আওয়ামী লীগ করেন, বিএনপি আমলে তার নতুন বাড়ি করার সময় বিএনপির মাস্তানরা ডিস্টার্ব করতেছিল, এমনই পেইন দিতেছিল যে উনি প্রাইম মিনিস্টার অফিসে চিঠি লেখছিলেন। এর কয়েকদিন পরেই প্রাইম মিনিস্টার অফিস থিকা একশন নেয়া হইছিল। ইউএনও-ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ-ফোর্স নিয়া আইসা মাস্তানদেরকে এমন দাবড়ানি দিছিল যে, কেউ আর ঝামেলা করে নাই।
এখন সরকারি-লোকজন আরো বড় বাকশালি। আওয়ামী লোকজনও জানে, কথা বইলা কোন লাভ নাই। কথা কইতে গেলে বিপদ বরং আরো বাড়বে! এর চে সরকারি মাস্তানির একটু ভাগ পাইলেই খুশি!
মানে, “বিএনপি খারাপ” – বাম-বাটপারদের এই “বিপ্লবী” ন্যারেটিভ কাজ করবে না এখন আর। এমনকি “বিএনপি আওয়ামী লীগ দুইটাই খারাপ!” – এই টাইপের মিচকা-শয়তানদেরকেও আমরা বাকশালের দালাল বইলা এখন চিনতে পারি।
মানে, আমির আজিজের লাইনটারে এইভাবে কনটেক্সচুয়ালাইজ যাইতে পারে,
“তোমরা এগজিস্টিং ন্যারেটিভ দিয়া বিএনপি-ব্লেমিং করো,
আমরা তোমাদের বাকশালি-জুলুমের দালাল বইলা চিনবো!”
***
হাওয়া সিনেমা দেখলাম। পুওর ইন্টেলেক্টচুয়াল ন্যারেটিভ।
ট্রাডিশনাল ‘ভিলেন’ চাঁদ সওদাগররে আরো ডিমোশন দিয়া বানানো হইছে খুনি, চোর, ছোটলোক-মেন্টালিটির, লুইচ্চা, ক্রুয়েল, পেটি-বুর্জোয়া, ম্যানেজার-শ্রেণীর, বুড়া (অ্যান্ড নট ইয়াং) – চান-মাঝি। আর বেহুলাই মনসা। লখিন্দরের হেল্প নিয়া যে বাপের খুনের বদলা নেয়।
আর পলিটিক্যালি দেখতে গেলেও, নাওয়ের যে মালিক, তার কোন দোষ নাই, উনি সবাইরে “সমান ভাগ” দিবেন (লখিন্দরের বিশ্বাস গডে ঈমান রাখার মতো), কিন্তু চান-মাঝি’র মতো মন্ত্রী-এমপি’রা দুর্নীতি করে খালি! আর সবাই মারা যাবে, কিন্তু নাও ডুববে না! ব্যাকগ্রাউন্ডে “জিতবে এইবার নৌকা!” ইউজ করা যাইতো মনেহয় লাস্ট সিনে! তাইলে ব্ল্যাক-কমেডি হইতে পারতো। কিন্তু না, সিরিয়াস-সিনেমা তো এইটা!
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
ভালো লেখতে পারা এবং বাঁইচা থাকতেই ভালো-লেখা বইলা রিকগনাইজড হইতে পারাটা হইতেছে জাস্ট শুরুর একটা ঘটনা।
একটা লেখা ভালো কি এভারেজ – এর বিচার এটলিস্ট ৫০ বা ১০০ বছর আগে আসলে পসিবল না। লিটারেচারে নোবেল প্রাইজ পাওয়া সাহিত্যিকদের লিস্টটা নেন, দেখবেন অনেকরেই চিনেন না, বা পড়ার দরকার নাই আর এখন তেমন! কিন্তু উনারা তো ওয়ার্ল্ড ফেমাসই ছিলেন তখন।
ঘটনা হইতেছে, পারসোনাল এটাচমেন্টের কারণেই ভালো-লাগার কিছু জায়গা তো তৈরি হয়, এফিলিয়েশনের কারণেও; যে দোস্ত-দুশমনরা আলাপ করতেছে, খারাপ-ভালো বলতেছে, তখন আর্ট’টা তো কনজিউম করা হইতেছে আমাদের, এসোসিয়েটেড হইতে হইতেছে। (প্রচার-প্রপাগান্ডা, অথরিটি-ফিগারের রিকমেন্ডশন, যুক্তি-তর্কের ধারা’র কারণেও অনেক কিছু নজরে আসে বা আসে না।)
যেমন ধরেন, রফিক আজাদ একসময় ‘বড়-কবি’ ছিলেন ঢাকা শহরে (এখন উনি ছোট-কবি হইছেন – তা না, ইরলিভেন্ট হইছেন তো কিছুটা), এইটিইসে যারা কবিতা লেখতে আসছেন এইখানে, তাদেরকে চিনতে হইছে বা পড়তে হইছে উনার কবিতা। এখন জিনিসটা ফেড-আউট হইতেছে। এটলিস্ট উনার কবিতা মাস্ট না আর। (একটা উদাহারণ হিসাবে বলতেছি, উনার কবিতার ক্রিটিক হিসাবে না।)
আবার ধরেন, ছোটবেলা কোন কবিতা-গান-ফিল্ম ভাল্লাগছিলো আপনার, সেই পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সটা বড় জোর একটা জেনারেশন পর্যন্ত ট্রান্সফার করা যাইতে পারে যে, আমার মায়ের বা বাপের পছন্দের জিনিস ছিল অইটা। বা অই সময়ের হিট জিনিস ছিল। এইরকম। কিন্তু সেইটা ৫০ বছরের বেশি ট্রাভেল করতে পারে মনেহয় না।
বা একটা সময়ের ভালো-লেখার একটা টেস্ট বা ফ্যাশন তো থাকেই। সেইটাও একটা বা দুইটা জেনারেশন পরে চেইঞ্জ হয়। আর ১০০-১৫০ বছর পরে তো ভাষার প্যাটার্নই চেইঞ্জ হয়া যায়!
তারপরও দেখবেন, সব কবিতা একইরকমের বাতিল হয়া যায় না। যেমন ধরেন, মধুসূধনের ‘আধুনিক কবিতা’ আর পড়তে পারবেন না (এমনকি রবীন্দ্রনাথের কবিতাও), কিন্তু একই সময়ের রাধারমণের ভাষা অই দূরের জিনিস না। মানে, ভাষার কারণেই সাহিত্য বাঁইচা থাকে না, কিন্তু ১০০ বছর পরেও সেইটাও ডিসাইডিং ফ্যাক্টর তখন।
আমি বলতে চাইতেছি, সাহিত্য অবশ্যই ট্রানসেন্ডেড ঘটনা, কিন্তু এইখানে বিচারের নানান লেয়ার আছে। একটা সময়ে এক ধরণের জিনিস এপ্রিশিয়েটেড হইতেছে বইলা সেইটারে ‘শুদ্দ-সাহিত্য’ বইলা মাইনা নেয়াটা একটা এভারেজ ঘটনা।
ভালো-লেখতে পারাটা তো ভালোই, এতোটা ভালো না আর কি।
***
সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে এক বুড়া লোক খেইপা গেলো, টিভি’তে সাউন্ড নাই ক্যান! উনার হাতে মোবাইল নাই, টিভি-যুগের লোক। এয়ারপোর্টের লোকরে খুঁইজা বাইর করলেন। কইলেন, নিউজ-চ্যানেল দেও!
এয়ারপোর্টের লোক কইলো, টিভিতে বিটিভি ছাড়া আর কোন চ্যানেল দেয়া যাবে না! অনেক কাকুতি-মিনতি কইরা কইলো, আমি ছোট চাকরি করি, ঢাকাতে কেউ এইটা রিপোর্ট করলে আমার চাকরি চইলা যাবে, বইলা গেছে। এই-সেই।
কিন্তু বুড়া লোকটা মনেহয় এককালে বিপ্লবী ছিলেন। একটা না একটা চেইঞ্জ উনি কইরা ছাড়বেন। কইলেন, চ্যানেল না চেইঞ্জ করতে পারো, টিভি’তে সাউন্ড দেও!
বিটিভি’তে ব্যান্ড মিউজিক বাজতেছে। আমরা কয়েকজন লাস্ট ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার, রাত বাজতেছে দশটা, ফ্লাইট ডিলে, ‘বিদ্যু-সাশ্রয়ের’ কারণে লাউঞ্জের আধা-অন্ধকারে বইসা, অই গান শুনতেছি এখন।
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!
***
– বাকশালি-সেক্যুলারদের এখন কিছু ইসলামিস্ট-জঙ্গি দরকার –
বাকশালি-সেক্যুলার’রা দেখবেন কথায় কথায় আফগানিস্তানের আলাপ দেয়। যে, বাকশাল না থাকলে “অসাম্প্রদায়িকতা” (মানে এন্টি-পিপল এলিটগিরি কইরা লুটপাটের অবস্থা) থাকবে না আর!
তো, আমার কথা হইতেছে, হিস্ট্রি খালি উইয়ার্ড ওয়েতেই কাজ করে না, বরং এক ধরণের হিন্টস আসলে থাকেই, আগে থিকা। যেমন, এই কথাটাতেই, একটা মিনিং বা আর্জি হইতেছে আফগানিস্তানের মতো আম্রিকা-ব্যাকড একটা গর্ভমেন্ট বসানো হোক!
বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়া যাবে না, বরং বাংলাদেশরে আফগানিস্তান বানানো দরকার! এই কারণে কিছু সো-কল্ড “ইসলামিস্ট”-ও তৈরি করার কথা। তাইলে গিয়া বাকশালি সার্কেলটা কমপ্লিট হয়। যদি অইরকম “ইসলামিস্ট” তৈরি করতে না পারে, তাইলে তো দূতাবাস-ব্যাকড গর্ভমেন্টের বেইজটা তৈরি করা যাবে না!
এইটাই ঘটনাটা না, কিন্তু এইরকমের একটা ‘সাব-কনশাস’ রিয়ালিটি থাকতে পারে এইখানে। বাকশালি-সেক্যুলারদের পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ থিকা এইটা ডিরাইভ করাটা ভুল হবে না মনেহয় এতোটা।
মানে, বাংলাদেশে খাঁটি সেক্যুলার কয়জন, বা ইসলামিস্ট-জঙ্গি আছে কি নাই – এইরকমের লিনিয়ার আলাপ দিয়া জায়গাটারে ধরা যাবে না। কনটেক্সচুয়াল মিনিংগুলাই বরং মোর রিয়েল হওয়ার কথা।
Leave a Reply