একটা পুরান কুয়ার কাছে গিয়া একটা শব্দ খুঁইজা পাইলো শহরের একদল ট্রাভেলার’রা। এমনিতেই পুরান, তার উপরে বাড়ি-ঘর থিকাও অনেক দূরে। অনেকদিন কেউ আসে না মনেহয়। ট্রাভেলার’রা ঘুরতে ঘুরতে চইলা আসছে। ৫টা মাইয়া আর ৪টা পোলা।
অরা বাইর হইছে, অ-জানা’রে জানতে। গুগুল দেইখা তো সবকিছু জাইনা ফেলা যায়। অ-জানা নাই কিছু আর। সবাই-ই জানে সবকিছু। এমনকিছু নাই যে, কাউরে জানানো যায়। সবকিছু’র জাইনা ফেলার যে বোরডোম – এর থিকা বাইর হওয়ার আর যেন কোন রাস্তা নাই, এক মরলেই শান্তি! এইরকমের হাঁসফাঁস সিচুয়েশন। তো, তখন মনে হইলো, আছে তো আরেকটা পথ! ট্রাভেলিং! ঘুইরা ঘুইরা আমরা নিজেরা নিজেরা দেখলাম! আর এমন একটা জায়গাতে গেলাম, যেইখানে সহজে যায় না কেউ। মানে, হিমালয়ের ভীড়ে না বা সাহারা’র ডেজার্ট ট্রিপে না; যেইখানে গিজগিজ করতে থাকে দুনিয়ার সব সেনসেশন।
তো, কই যাওয়া যায় তাইলে?
দিলীপকুমার প্রপোজ করলো, ইসলামপুর! কই এইটা? সবাই গুগুল সার্চ করার আগেই, চিমটিকুমার কইলো, আমার দাদাবাড়ি; প্রত্যন্ত (অনেক জোর দিয়া দাঁতে জিহ্বার বাড়ি দিয়া উচ্চারণ করলো সে, শুনছে, বাংলা-কবিতা নাকি এইরকম…) অঞ্চল! মীনাকুমারী তো শুইনাই প্রেমে পইড়া গেলো। শে লগে লগে রাজি! কিন্তু অপোজ করলো, টম ক্রুজ। কয়, দাদাবাড়ি ঠিকাছে, কিন্তু গিয়া থাকবো কই? টয়লেট করবো কই? বিশুদ্ধ পানি কি আছে? এই-সেই…। নিকোল কিডম্যান তারে একরকম ইশারা দিয়া বুঝাইলো, আরে, একসাইটমেন্ট তো এইটাই! কই থাকবো, কেমনে যাবো – এইগুলা ফিক্সড কইরা ফেললে তো মুশকিল। দেখো, হোটেল.কম এখনই অফার পাঠায়া দিতে শুরু করবো! জাফর ইকবাল, ববিতা’র তেমন কোন সে নাই। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কইলো, ব্যাপারটা অ্যাডভেঞ্জারাস হইলে তার কোন প্রব্লেম নাই। অন্য’রা জানা-অজানা ধুইয়া পানি খাক! তার অ্যাডভেঞ্জার হইলেই হয়!
তারপরও গুগুল ম্যাপ ছাড়া তো আর চলা সম্ভব না। মেট্রোপলিটন সিটি থিকা জেলা শহর, জেলা শহর থিকা মফস্বল, মফস্বল থিকা গ্রাম। মনেহয়, ‘মনেহয় কতো অজস্র মৃত্যু’রে পার হয়ে আসিলাম…’ জাফর ইকবাল কয়, জোকসের মতোন। আর সবাই হাসে।
কিন্তু গ্রামে আইসা অরা তো অবাক। দেখে, সবাই তো স্মার্টফোনই চালায়। টারানটিনোর সিনেমাই দেখে। গ্রেটা’রেই প্রেইজ করে। আর রিপন ভিডিও’রে নিয়াই হাসে! তখন মন-খারাপ হয়। যদিও থাকা-খাওয়া, চলাফেরা’র কোন প্রব্লেম নাই। কিন্তু অরা তো অদের আরেকটা প্রটো-টাইপ দেখতে আসে নাই! আসছিলো, কোন অ-জানা’রে ইনভেন্ট করা’র লাইগা। খুব মন-খারাপ হয়, অরা’র।
হাঁটতে হাঁটতে অরা একলা একলা এইদিক-অইদিক যায়। দুইদিন, চাইরদিন পার হয়া যায়।
তখন একটু প্রাইভেসি খুঁজতে গিয়া জাফর ইকবাল আর ববিতা দেখে, দূরে একটু জঙ্গলের মতোন। দিলীপকুমার’রে আইসা জিগায়, অইটা কি? দিলীপকুমারও তো গ্রামে নতুন। কইতে পারে না কিছু। গ্রামের মানুষজন’রে জিগায়। অরাও কেউ ঠিক কইরা কিছু কইতে পারে না। কয়, কোন ঝামেলা আছে মনেহয়। কাউরে আমরা যাইতে দেখি নাই। আমরা যাই নাই, দরকার পড়ে নাই তাই। এইসব!
এইসব শুইনা ট্রাভেলারদের চোখ চকচক করে। অ-জানা’রে আমরা পাইতে যাইতেছি মনেহয়। গুগুল ম্যাপে সার্চ কইরা দেখে, আরে, কোন এন্ট্রি তো নাই!
নতুন আম্রিকা খুঁইজা পাইতে যাইতেছি আমরা! আমরা নতুন কলম্বাস!
প্ল্যান করে, পরেরদিন সকালে যাবে অরা, ঘুম থিকা উঠার পরে।
সারারাত টেনশন।
সকালে উঠার পরে অনেক প্রিপারেশন। আর হাঁটতে হাঁটতে মাইল খানেক আসার পরে অরা এন্টার করলো, সেমি-জঙ্গলে। মীনাকুমারী কইলো, মনেহয় শশ্মান ছিলো। টম ক্রুজ কইলো, গ্রামে তো কোন হিন্দু দেখি নাই। দিলীপকুমার কইলেন, সেই তো! আগে ছিলো, এখন নাই। থাকলে তো মরতো, শশ্মানঘাটেও আসতো লোকজন। তাই না? কেউ আর কথা বাড়াইলো না। দিনের বেলাতেও ছায়া ছায়া অন্ধকার।
কিন্তু শশ্মান-ঘাট তো নতুন কিছু না। আম্রিকা না। কোন একটা অ-জানা’রে আবিষ্কার করার লাইগা হাঁটতে লাগলো অরা তখন। কোন তাড়াতাড়ি নাই। কোথাও পৌঁছাইতে হবে না। খালি কোন একটা অ-জানা’রে পাইলে হয়। কিন্তু যা কিছু খুঁজতে হয়, তারেই খুঁইজা পাওয়া যায় না আর।
টায়ার্ড লাগে অদের। আর তখনই অই পুরান কুয়াটার কাছে আসে অরা।
কুয়া মানে মাটি থিকা দুই-তিন ফুট উঁচা গোল দেয়াল। ভিতরে মাটি, গাছের পাতা দিয়া ভরাট। এইটা কিছুটা অ-জানা’র মতোন মনেহয়। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি-ই প্রথম দেখে এইটা; যে, কুয়ার দেয়ালে একটা জায়গায় লেখা, উদকুম্ভ। সবাই’রে আইনা দেখায়।
উদকুম্ভ! কি উদ্ভট একটা ব্যাপার। মানে, দিলীপকুমারের উত্তমকুমারের লগে একটু চিন-পরিচয় আছিলো বইলা উদ্ভট তক জানেন। কিন্তু তাই বইলা, উদকুম্ভ! অ্যাবসার্ড একটা ব্যাপার!
এইরকম একটা জায়গা, যেইখানে কিনা গুগুল ম্যাপ কাজ করে, ইন্টারনেটও আছে, সেইখানে উদকুম্ভ নামে কোন শব্দ তো নাই! সবাই সার্চ দিয়া দেখে। অনেককিছু ট্রাই করে। ফ্রাস্ট্রেটেড ফিল করে, আবার খুশিও হয়। শেষমেশ, অরা নিজেরাই ডিক্লেয়ার দেয়, একটা অ-জানা আমরা আবিষ্কার করতে পারছি মনেহয়।
আর অ-জানা হিসাবে ক্লেইম কইরা সারা দুনিয়ারে জানায়।
তখন অনেকে আইসা অনেক কথা কয়। যেহেতু জঙ্গল, যেহেতু কেউ থাকে না, নাই; মহাভারতের কুম্ভ এইখানে ঘুমাইতো মনেহয়। কেউ কেউ ছবি দেইখা কইলো, এইখানের সিন-সিনারি এতো সুন্দর, এইখানে মেবি উদলা হয়া থাকতে হয়, এই কারণে উদকুম্ভ নাম এইটার। কিন্তু তাই বইলা পুরান কুয়ার গায়ে এইটা লেখা থাকবো ক্যান? কেউ জানে না আসলে। কেউ শিওর না। এই কারণে অনেকে জেলাস হয়া কয়, এইরকম কোন শব্দ আসলে নাই। এরা ইয়াং পোলাপাইন। ফেইম-সিকার। আজাইরা একটা জিনিস নিজেরা নিজেরা লেইখা রাখছে, ফেমাস হওয়ার লাইগা।
যেহেতু লাস্টের গ্রুপ’টা স্ট্রং ছিলো অনেক। এইটাই চালু হয়া গেলো, পপুলার কালচারে। সবাই অদেরকে উদকুম্ভ কইয়া ডাকতে লাগলো। আর চালুও হয়া গেলো, ওয়ার্ডটা! কলম্বাস হইতে গিয়া অরা উদকুম্ভ হয়া গেলো! 🙁
নতুন একটা শব্দের আবিষ্কর্তা!
এখন, যখনই কেউ কয় যে, সে বা তারা ‘অ-জানা’ কিছু আবিষ্কার কইরা ফেলছে; লোকজন তারে বা তাদেরকে খেপায়, শালা, উদকুম্ভ কোনখানকার!
Leave a Reply