ফ্যাণ্টাসি মানে কি?
কিন্তু তার আগে ‘বিনয় মজুমদার’-এর কথাটা বইলা নেই। অনেকেই হয়তো চিনেন তারে; তারপরও বলি, উনি ইন্ডিয়া-রাষ্ট্রের পশ্চিমবাংলা প্রদেশের বাংলা-ভাষার একজন কবি। উনার বিখ্যাত কবিতার বইয়ের নাম, ফিরে এসো চাকা, অঘ্রাণের অনুভূতিমালা। এই কবিতাগুলা আমি ‘বিনয় মজুমদারের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামের একটা বইয়ে পড়ছি। উনার অনেক কবিতা অনেকবার পড়ছি। কিছু লাইন এখনো মনে আছে, যেমন ‘মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়’, ‘বালকের ঘুমের ভিতরে প্রস্রাব করার মতো অস্থানে বেদনা ঝরে যাবে’ এইরকম বেশ কয়েকটা। [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]
‘অনুমান’ করি, বাংলাদেশে যাঁরা কবিতা লিখেন, তাঁরা এখনো উনার কবিতা মনোযোগ দিয়া পড়েন। পছন্দ করেন। ভালোবাসেন। আবৃত্তি করেন। ইত্যাদি।
আমি নিজে অনেকদিন ধইরা উনার কবিতা পড়ি না। তার মানে এই না যে, উনার চাইতে ‘ভালো’ বা ‘অন্যরকম’ কবিতা আমি লিখি। বরং, কবিতা লিখা ব্যাপারটা যে ‘এইরকম’ চিন্তার ভিতর একজিস্ট করে না, উনার কবিতা পড়ার অভিজ্ঞতা থিকা সেইটা আমি একভাবে শিখছি। দেখছি যে, উনার কবিতার যেইটা ‘রিয়ালিটি’, সেইটা এক ধরণের ‘ফ্যাণ্টাসি’ হিসাবে পারসিভ করতে পারেন, যাঁরা পড়বেন, উনার কবিতাগুলি।
বিনয় মজুমদারের কবিতা বিষয়ে অনান্য বিবেচনাগুলা স্থগিত রাইখাই এইটা নিয়া কথা বলা যাইতে পারে। উদাহারণ দিয়া বলতে পারলে সুবিধা হইতো, কিন্তু যেহেতু উনার কোন পুরা কবিতা আমার মনে নাই, যেই ২টা লাইন মনে আছে, সেইটা দিয়াই বলার চেষ্টা করি। যেমন ধরেন, ‘প্রকৃত সারস’ একটা ‘ফ্যাণ্টাসি’ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। ফ্যাণ্টাসি, যা রিয়ালিটিতে নাই, কিন্তু আমরা কল্পনা করতে পারি এবং এমন একটা লেভেলে নিয়া যাওয়ার সক্ষমতা রাখি, যা এক্সটেনডেট হইতে পারে কোন লজিক্যাল কনসিকোয়েন্স ছাড়াই… কিন্তু এই ‘প্রকৃত সারস’টা আমার ধারণা অনুযায়ী, বিনয় মজুমদারের কবিতার রিয়ালিটি। একইভাবে, ‘বেদনা’ ত ফ্যাণ্টাসিরেই উত্তেজিত করে! ত, এইসব ফ্যাণ্টাসি বাদ দিয়া উনার কবিতা আমি পড়তে পারি।
বিনয় মজুমদার নিয়া কোন ফ্যাণ্টাসি আমার নাই!
২.
এইবার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার বন্ধু মুকুল (নারায়ণগঞ্জের) একবার ইন্ডিয়া গেলো, মানে কলকাতা (বিপুলও ছিল মনে হয়)। একটাই উদ্দেশ্য যে, বিনয় মজুমদারের সাথে দেখা করবো, একটা ইন্টারভিউ নিবো। এখনো ইমাজিন করতে বেশ ইমোশনাল হই যে, শুধুমাত্র কবিতার জন্য ভ্রমণ করা, মানে একজন কবি’র সাথে দেখা করার জন্য, এই যে ডেডিকেশন, বেশ একটা ঘোরের মতোই ত লাগে, আমার কাছে…
বিনয় মজুমদারের ত উপাধিই ‘কবিতার শহিদ’। উনার কবিতার পাশাপাশি উনার ব্যক্তি-জীবন নিয়াও মুগ্ধ ছিলাম আমরা (মানে, আমি ও আমার পরিচিত বন্ধুরা)। ফিরে এসো, চাকা নাকি উনি লিখছেন গায়ত্রী চক্রবর্তীরে নিয়া। উৎসর্গও করছেন তারে। উনি নিজে গণিতবিদ, উনার সূত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। থাকেন গ্রামে। খাইতে পান না। কোন পেশা নাই। আয়-রোজগার নাই। ব্যক্তি হিসাবে, কবি হিসাবে উনারে নিয়া একটা সময় ফ্যাণ্টাসিতে ভুগেন নাই এইরকমটা স্বীকার করতে অনেকেরই দ্বিধা হওয়ার কথা। ফ্যাণ্টাসি মানে, নানান কল্পনা, যা তিনি না ইন রিয়ালিটি, সেইসব কিছু ভাবনা-করা…
কিন্তু উনারে একজন সামাজিক ব্যক্তি এবং কবি হিসাবে ইমাজিন করতে আমার তেমন একটা কষ্ট হয় না। উনার কিছু ভিডিও ফুটেজ আমি দেখছি, টিভি-সাংবাদিক যেইভাবে উনারে বর্ণনা করতেছিলেন, অনেকটা আমাদের দেশের দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবেদনের মতো অবস্থা।
এইক্ষেত্রেও, বিনয় মজুমদার নিয়া কোন ফ্যাণ্টাসি আমার নাই!
৩.
এই যে ‘সম্ভাবনাগুলা’, যা আমি ‘অনুমান’ করতে পারি, সেইগুলা কি একজিস্ট করে না? বা, এই জিনিসগুলারে ‘ফ্যাণ্টাসি’ বলাটা কি ঠিক হইতেছে না আমার?
ফ্যাণ্টাসি মানে কি খুব পাতলা ধরণের কিছু? পরিতাজ্য?
কিন্তু ইন রিয়ালিটি, আমি ত অনেক ফ্যাণ্টাসি নিয়াই চলি এবং হয়তো অন্য অনেকেও! বরং, চিন্তা যদি করতেই হয় ফ্যাণ্টাসি-রিয়ালিটি এই ক্যাটাগরিগুলা নিয়া আরো ভাবা যাইতে পারে।
জানুয়ারি ২৩, ২০১২
Leave a Reply