ব্লগার-চরিত্র

 

রিসেন্টলি হলিউডের দুইটা সিনেমা দেখছি। একটার নাম Contagion, আরেকটার নাম Larry Crowne.  দুইটাই মোটামুটি টাইপের সিনেমা; কোনটা যে বেশি বাজে, সেইটা নিয়া একটু কনফিউজডই আছি। কনটাজিউন’টা অনেকবেশি স্ট্রেইট-মিনিং’এর সিনেমা; গিনেথ প্যালেট্রো, কেট উইন্সলেট, ম্যাট ডেমন, জুড ল- এতগুলা নাম দেইখা কিনছিলাম আর ল্যারি ক্রাউন-এর জন্য ত জুলিয়া রবার্টস আর টম হ্যাকন্স-এর নামই এনাফ। [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

সিনেমা দুইটাতে একটা জিনিস চোখে পড়লো, যা আগে-দেখা সিনেমাগুলাতে দেখি নাই; সেইটা হইলো যে, দুইটাতেই ‘ব্লগার’ চরিত্র আছে।

কোন সামাজিক চরিত্ররে পপুলার মিডিয়া কিভাবে দেখতে চায়, সেইটার ভালো রিফ্লেকশন সম্ভবত সিনেমাতেই সবচে’ ভালোভাবে পাওয়া সম্ভব। যেমন ধরেন, আগের দিনের বাংলা-সিনেমায় টাকা-পয়সাওলা লোক মানেই ‘খারাপ’ কিংবা স্কুল-মাষ্টার মানেই ‘ভালো’ অথবা বাসার চাকর মানেই ‘বোকা’, ‘গ্রামের মানুষ’ মানে ‘সহজ সরল’ – এইরকমের ‘ডেফিনেশন’গুলা হাজির হইতে দেখতাম। হলিউডের সিনেমাতেও একটা সময় ভিলেনরা ছিলো ‘রাশিয়ার গুপ্তচর’। আর এখনকার সিনেমাগুলাতে ‘ব্লগার’ চরিত্রগুলারেও হয়তো আরো দেখা যাইবো।

হলিউডের সিনেমা ‘বর্তমান’রে ইনক্লুড করে বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু এরপরে যেইটা করে, সেইটার একটা ‘ডেফিনেশন’ তৈরি করে, মানে খুব রিজিড না হইলেও, সেইটা আছে, এই সিনেমা দুইটাতে যেমন।

ল্যারি ক্রাউন ক্যাটাগরি হিসাবে একটা রোমাণ্টিক-কমেডি সিনেমা। জুলিয়া ররার্টসের জামাই একজন ব্লগার। এই ব্লগার কোন কাজ-কাম করে না, অন্যদিকে ‘নায়ক’ টম হ্যাকন্স-এর চাকরি চইলা যায় কলেজ এডুকেশন না-থাকার উছিলায়। আর জুলিয়া বরার্টস কলেজে পড়ান। এইখানে ব্লগার-চরিত্রটা বেশ কমিক টাইপের। যে ব্লগ-লেখার নাম কইরা বড়বুকওলা নারীদের ছবি দেখতে পছন্দ করে। তার পর্ণ-আকর্ষণের কথা তার বউ জানে। কিন্তু ‘ব্লগার’ তার অবস্থারে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে। বলে যে, সে আসলে ব্লগ-ই লিখে নানারকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়া; মাঝে-মধ্যে বড়বুকওলা মেয়েদের ছবি দেখে আর কি! আরো অল্প কিছু এক্সটেনশন আছে, এই চরিত্রটার।

এক অর্থে, এই সিনেমার ব্লগার একটা নেগেটিভ চরিত্র। যে কাজ-কাম করে না, পর্ণ দেইখা টাইম পাস করে। মাঝে-মধ্যে হয়তো কিছু লেখালেখি করে এবং এইটা নিয়া প্রাউড ফিল করে। এইরকম চরিত্র হয়তো থাকতেও পারে। কিন্তু ‘ব্লগার’ হিসাবে এইটা পিক করাটার কিছু সিগনিফিকেন্স ত কাজ করে; মানে, এইভাবে একজন ব্লগারের পোট্রেট করা যখন সম্ভব হয়, তখন দর্শকদের কাছে একটা উদাহারণ তৈরি হয়, যেইটা দিয়া সে আরো আরো কাউরে অনেকদূর পর্যন্ত ‘ডিফাইন’ করতে পারার কথা।

কনটাজিউন’টার কাহিনিটা আবার বেশ সিরিয়াস। একটা অ-জানা রোগ ছড়াইয়া পড়ে আম্রিকায়, যেইটার শুরু হংকং থিকা, তারপর সারা দুনিয়ায়। এই অ-পরিচিত রোগ’টা কিভাবে শুরু হইলো এবং মোকাবিলা করা হইলো, সেইটার ডিটেইলস এই সিনেমা। কাহিনির কারণেই, এইখানে যে ব্লগার, তিনিও সিরিয়াস। একটা পত্রিকায় সাংবাদিক টাইপের কাজ করতেন। কিন্তু তারা এই রোগটার গুরুত্বটা বুঝতে পারেন না। তাই তিনি নিজেই অনুসন্ধান শুরু করেন এবং নিজের ব্লগে এর আপডেট দিতে থাকেন। যেহেতু তিনি জিনিসটার অনেককিছু রিভিল করতে পারেন, যা গর্ভমেন্ট এবং মিডিয়া লুকাইতে চায়, তার হিট বাড়তে থাকে। কিন্তু একটা সময় সম্ভবত [সম্ভবত, কারণ সিনেমাটা ভালো কইরা দেখি নাই বা দেখার সময় এই জায়গাটাতে খুববেশি ইস্টারেস্ট ছিল না] তিনি একটা ঔষুধ কোম্পানীর কাছ থিকা অফার পান প্রচার করার জন্য যে, একটা টনিক খাইলে এই রোগ আর হয় না। ত, এক পর্যায়ে দেখা যায় যে, তিনি অনলাইনের দর্শকদের দেখাইয়া সেই টনিক খাইতেছেন আর বলতেছেন যে, উনার এই রোগটা হইছে, তিনি টনিকটা খাইলেন, সকালে যদি বাঁইচা থাকেন, তাইলে দেখা হবে। কিন্তু উনার আসলে রোগটা হয় না। শেষে গর্ভমেন্টের লোকজন তারে একটা পার্ক থিকা ধরে ঔষুধ কোম্পানীর লোকের সাথে কথা-বলার সময়। যেহেতু কোন প্রমাণ নাই প্রতারণার, তারে ছাইড়া দিতে বাধ্য হয়।

এই সিনেমার ব্লগার প্রতিবাদী, সত্য ‘উন্মোচন’ করতে চায়, কিন্তু কোন রেসপনসিবিলিটি নেয় না এবং ব্যক্তিগত সুযোগ নিতে পারে – এইরকম একটা ‘ডেফিনেশন’ তৈরি করে।

এই দুইটা সিনেমা দেইখা আমার আন্ডারষ্ট্যান্ডিং হইলো যে, পপুলার মিডিয়া ‘ব্লগার-চরিত্র’রে ‘ডিফাইন’ করা শুরু করছে এবং যেইভাবে এই ‘চরিত্র’ ডিফাইনড হইতেছে, সেইটা আবশ্যিকভাবে এক ধরণের ‘কন্ট্রোল’-এর সাজেশন দিতেছে। আর পপুলার মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্টের পাশাপাশি এইরকম এজেন্ডাগুলা প্রচার করার কাজ ত বেশ ভালোভাবেই করতে পারে!

 

জানুয়ারি ১২, ২০১২

Leave a Reply