রিয়েল-ফেইক

ফেইক করতে পারাটাই আসল।

এইটা মনে হইতেছিল গতকালকে, মনুর সাথে কথা বলার সময়; আজকে সকালে ওয়াসিউল ভাইয়ের কথা শুইনাও মনে হইলো। কনটেক্সট দুইটা ডিফরেন্ট।

পলিটিক্যাল সিচুয়েশন নিয়া মনু যখন বলতেছিলেন, তখন আমি বলতেছিলাম গণজাগরণ মঞ্চ এখন কিভাবে খালি গর্ভমেন্টের না বরং ‘প্রতিবাদী জনতা’র পারপাস সার্ভ করে। ফেইসবুকের মতোই অনেকটা। আপনারে একটা রিলিফ দেয় যে, প্রতিবাদ তো করছি আমি! একটা বাজে টাইমে বাঁইচা আছেন আপনি, গর্ভমেন্ট অনেক অন্যায় করতেছে দেখতেছেন, ‘মানুষ’ হিসাবে আপনার তো এইটার একটা প্রতিবাদ করা দরকার; গর্ভমেন্টও চায় এই ‘প্রতিবাদ’টা আপনি করেন, তাইলে আপনার মেজাজ-মর্জি একটু ভালো থাকবো, ‘বিপ্লবী’ হিসাবে আপনার রোলটা প্লে করতে পারলেন আর গর্ভমেন্টও এইটুক মাইনা নিয়া  ‘উন্নয়নের কাজে’ মনযোগ দিতে পারবেন; তো, জয়েন গণজাগরণ মঞ্চ বা এইরকমকিছু। যা কিছু করার অপশন আপনার ছিল, সেইটা তো করতেই পারলেন এবং সেইফও থাকতে পারলেন আপনার এক্টিভিজম আর ইন্টেলেকচুয়ালিটি নিয়া। এফেক্টিভ হওয়াটা ইর্ম্পটেন্ট না, ইর্ম্পটেন্ট হইলো নিজের ইমোশনরে চ্যানেল আউট করতে পারাটা। নিজের কাছে ফেইক করতে পারাটা হইতেছে আসল; তখন ফেইকটা রিয়েল হইতে পারে, পারফেক্টলি। আওয়ামী লীগ গর্ভমেন্ট যে মিলিটারির গর্ভমেন্ট (ইভেন ব্যবসায়ীদের গর্ভমেন্টও না, পাবলিক তো দূর কি বাত) এইটা দেখবেন বিএনপিও বলতে পারে না। পলিটিক্যাল পার্টি হিসাবে এই ফেইকটা উনাদেরকেও করতে পারতে হয়।

 

ভাবার কোন কারণ নাই যে, এইগুলি খালি ইন্ডিভিজ্যুয়ালের ক্ষেত্রে ঘটে, বরং সোশ্যাল প্রাকটিসগুলির ভিতর এইগুলি খুব শক্তভাবে ইমবেডেড।

ওয়াসিউল ভাই বলতেছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কেমনে টাকা খায়, সেই প্রসেসটা। অ্যাকচুয়াল ঘটনার সিনটাতে এসআই থাকে না; সে (কোন মহিলা এসআই কি আছেন? আছেন মনেহয়, কিন্তু দেখি নাই… বা থাকলেও পাওয়ার পুরুষ একটা ব্যাপারই তো!) মোটরসাইকেলে একটু দূরে বইসা থাকে। ট্রাফিক পুলিশ প্রথমেই ড্রাইভারের কাছ থিকা কাগজপত্র নিয়া এসআই-এর কাছে দিয়া দেয়। ড্রাইভার তখন গাড়ি রাইখা এসআই এর কাছে যায়; এসআই কয় গাড়ির কাগজপত্র ত ঠিক নাই, মামলা কইরা দিবো… করতে চাইলে সাথে সাথে কইরা দেয়, টাকা খাইতে চাইলে বলে, করে না। তখন ড্রাইভার গাড়ির মালিকের কাছে যায়, কথা কইয়া আবার এসআই-এর কাছে যায়, সে তখন বিজি থাকে অন্যদিকে; তার কাছে গিয়া বলে, ৩০০ টাকা দিতেছি কাগজ দিয়া দেন… এসআই চেইতা গিয়া মামলা করার কথা বলে আবার। ড্রাইভার আবার মালিকের কাছে যায়; বুঝে যে এসআই-এর কাছে কাজ হইবো না, ট্রাফিক পুলিশের কাছে গিয়া ৫০০ টাকার কথা বলে, ট্রাফিক পুলিশ বলে ১০০০ টাকার নিচে হইবো না, তারপরও দেখি ট্রাই কইরা… ট্রাফিক পুলিশ গিয়া এসআই’রে রিকোয়েস্ট করে, ছাইড়া দেন, স্যার। এই রিকোয়েস্টটা ইর্ম্পটেন্ট খুব। এই জায়গাতে এসআইও ফেইক করার ভিতর দিয়া রিয়েল হয়া উঠেন, দেশ জাতি আইন-শৃঙ্খলা নিয়া কিছু কথা বইলা ‘রিকোয়েস্ট’-এর খাতিরে, ‘নাগরিকের দুঃখ-কষ্টের’ কথা ভাইবা মামলা না কইরা ছাইড়া দেন। টাকাটা ট্রাফিক পুলিশেরই রাখতে হয়। এই ফেইকটা না করতে পারলে আসলে পুরা ঘটনা ঘটতেই পারে না, পসিবলই না।

আপনারে ভাবতে পারতে হয় আপনি একজন লেখক। তারপরে আপনারে লিখতে হয়। আগে আপনারে ভাবতে হয়, আপনি অনেক ভালো মানুষ, তারপরে ওই রোলে আপনারে অ্যাক্ট করতে হয়। পয়লাই ফেইক করা লাগে। ফেইক করতে করতেই আপনি একদিন রিয়েল হয়া উঠবেন; বা আপনি যে রিয়েলই আসলে – এই ভাবনাও মনেহয় থাকতে হয়।

ফেইক করতে পারাটাই রিয়েল না বা ব্যাপারটা এইটা না যে, কোনটা ফেইক আর কোনটা রিয়েল, বরং ইন দ্য প্রসেস সার্টেন জিনিস পারফর্ম করতে পারতে হয়; এই পারফর্মন্সের জায়গাটা ক্রুশিয়াল।

 

Leave a Reply