রোজা-রমজান

বাংলাদেশে পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি হিসাবে মুসলমানি জোশ রাষ্ট্রীয়ভাবেই জোরদার হইতেছে।

কিন্তু এইরকম ফেভারেবল পলিটিক্যাল এনভায়রনমেন্ট থাকার পরেও কালচারাল স্পেইসে (যেমন ধরেন আর্টে, গল্প উপন্যাসে) হিন্দুধর্মের রিচুয়ালগুলার যেইরকম সেলিব্রেশন আছে, সেই জায়গায় ইসলামি রিচুয়ালগুলার ব্যাপারে বরং একরকমের অস্বস্তি আর রেজিসট্যান্স আছে। যেমন, রোজা রমজানের কথাই ধরেন।

মনে হইতেছিল, ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মুক্তিযোদ্ধারা বা দেশের মানুষজন সেহরি খাইতেছেন বা ইফতার করছেন তো। কোন একটা মাইনর টেক্সটে পাইছিলাম, সেহরি খাওয়ার কথা, মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি বা এইরকম কোন বইয়ে, সোর্সটা মনে নাই এখন। 😞 কিন্তু দেখেন, যতো ‘সাহিত্য’ আছে, সেইখানে সিঙ্গেল একটা লাইনও নাই, মুক্তিযোদ্ধারা ইফতার করতেছে বা সেহরিতে খাইতেছে; এতো যে সিনেমা মুক্তিযুদ্ধ নিয়া, কোন সিনেমাতেও দেখছি বইলা মনে হইতেছে না, মানে, আমি মনে করতে পারতেছি না ওইরকম কোনকিছু। যেন, রোজা, ঈদ – এইসব ছিলো না বা নাই। ক্যালেন্ডারে দেখা যাইতেছে ১৯৭১ সালের অক্টোবর নভেম্বরে রমজান মাস ছিল।  অথচ বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ বছরের পর বছর এই কাজ করতেছে তো! (এইটা নিয়া একটু পরে আবার বলতেছি।)

এইখানে আমার ফেভারিট পয়েন্টটা আবার বলি, আর্ট আর লাইফ দুইটা আলাদা আলাদা ঘটনা। আর লাইফের ঘটনা যতোটা না আর্টে রিফ্লেক্টেড হয় আর্টের ফ্যান্টাসি বা রিয়ালিটিটারে আমরা লাইফে পোর্টেট করার ট্রাইটা বেশি করি। তো, রোজা-রমজানের রেওয়াজটারে কালচারাল স্পেইসে কেন সেলিব্রেটেড না, সেই অস্বস্তিটারে এই জায়গাটা থিকা দেখলে কিছুটা ক্লিয়ার হইতে পারার কথা। যা কিছু আর্ট-কালচারে নাই, নতুন কইরা ইনসার্ট করাটা টাফ একটা জিনিস। এক তো মনে হবে, জোর কইরা করতেছেন, ‘হাজার বছর’ ধইরা লাইফে করতে থাকলেও। দুসরা জিনিস হইলো, লাইফের জিনিসগুলা যে আর্টে ট্রান্সফর্মড হয় না – তা না; সেইখানে আর্টরে ট্রান্সফর্মড করতে বা হইতে পারতে হয়; যেই শর্তগুলার ভিতর দিয়া একটা কালচারাল কনটেক্সটে ‘আর্ট’ জিনিসটা পসিবল হয়, সেই কন্ডিশনগুলারে নার্চার করা দরকার তখন।

আমাদের কালচারাল কনটেক্সটে দুর্গাপূজার প্রসাদ খাওয়া, মন্দিরে যাওয়া কালচারালি মুসলমানদের লাইগা বাজে কোন ঘটনা না, বরং ‘গুড মুসলিম’ বা ‘উদারমনা’ হিসাবে পারসিভড হওয়ার ঘটনা। ইভেন হিন্দি সিনেমাতে হোলিতে রং মাখামাখি করে বইলা অইটাও খুশি মনে করা যায় এখন ঢাকাতে। আর রোজার দিনে হোটেল কেন বন্ধ – এই দাবি নিয়া শাহবাগে মানববন্ধন করার মতো একটা সিচুয়েশন এগজিস্ট করে। এই সিচুয়েশন যে এগজিস্ট করে না – এইটা আমার ক্লেইম না, বরং এইটা মোস্টলি একটা কালচারাল স্টিগমা।

দুসরা ঘটনা হইলো, এই কালচারাল স্টিগমাটা কই থিকা আসছে? এর একটা কারণ মনেহয় যে, বাঙালি কোনদিনই ‘সহি’ মুসলমান হইতে পারে নাই। ইভেন ‘বাঙালি’ হওয়াটা ইটসেলফ একটা নন-ইসলামিক ঘটনা হিসাবে আইডন্টিফাইড। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি মিলিটারিদের একটা প্রপাগান্ডার জায়গা ছিলো যে, বাঙালিরা তো এনাফ মুসলমান না, এদেরকে মুসলমান বানাইতে হবে! ইন্ডিয়াও সাবস্ক্রাইব করতো এই জায়গাটাতেও যে, এরা তো আসলে অই রকম মুসলমান না! যদিও কনভার্টেট মুসলমান, অরিজিনালি তো হিন্দুই! ইভেন বাংলাদেশেও যারা ‘আসল মুসলমান’ বইলা ক্লেইম করেন, তারাও বলেন যে, ইরান-টিরান থিকা আসছেন, এইখানের মানুষ না উনারা। তো, নিজের যেই আইডেন্টিটি নিয়া এতোটা পেরশানি, সেইটা নিয়া সেলিব্রেশনের কোন স্পেইস তো থাকতে পারার কথাও না!

এই চিন্তার গোড়া অই ‘সহি’ জায়গাটাতেই; সবকিছুরে যে টু দ্য পয়েন্টে অ্যাড্রেস করা লাগবো – এইটা প্রাকটিসের দিক থিকা একটা জবরদস্তি করার ঘটনা। ধর্মরে কালচারের বাইরে ইউনির্ভাসাল কোন স্পেইসে লোকেট করাটা একটা অবসেক্টল হিসাবেই রিড করাটা দরকার। যা কিছু নিজেদেরকে ইউনির্ভাসাল বইলা ক্লেইম করে, তারেই সন্দেহ করতে পারা দরকার আমাদের।

মাওলানা রুমিও একটা জায়গাতে কইতেছিলেন যে, দ্রাবিরিয়ান মুসলমানরা যেইরকম স্পেশাল রকমের মুসলমান। মানে, ইংলিশ ট্রান্সলেশনে পাইছি এইরকম। এইটা ইন্ডিকেট করে যে, এক রকমের ‘সহি’ ইসলাম আছে, অথচ এই চিন্তাটাই ভুল একটা জিনিস। যতোক্ষণ এই জায়গাটা থিকা আমরা বাইর না হইতে পারতেছি, ধর্মরে কালচারের বাইরের একটা ফেনোমেনা বইলা ভাবতে চাইতেছি ততক্ষণ এই গিট্টু ছুটাইতে পারবো বইলা মনেহয় না আমার।

২.
সোসাইটিতে রোজা-রমজানের সেলিব্রেশনের জায়গাটা নিয়া এখন বলি।

ঢাকার ডেইলি খাওয়া-দাওয়া করার পাড়ার/অফিস এলাকার দোকানগুলা বন্ধই থাকে। রোজার ‘পবিত্রতা’ ধইরা রাখার লাইগা বন্ধ থাকে – এইরকমও না পুরাটা; অই সময় কাস্টমার কম থাকে বইলা বছরের রিনোভেশনের কাজকামগুলাও অই সময়ে হয়, স্টাফদের বছরের ছুটি কাটানোরও মৌসুম এইটা। রোজার পয়লা ৫/৭ দিন একটু ঝামেলা থাকে, দোকান খুঁইজা বাইর করতে হয়, খুববেশি হইলে ১০ দিন। পরের ১০ দিন পর্দা টানানো অনেক দোকান দেখা যায়। আর শেষের ১০ দিন মোটামুটি খোলাই থাকে সব। পর্দা-টর্টাও লাগে না তেমন।

কিন্তু সোশ্যাল কোন চাপ যে নাই, তা না; বরং যেহেতু কালচারাল সুপরিয়রিটির কোন স্পেইসটা নাই, সোশ্যালি আরো ভায়োলেন্ট হইতে পারে ব্যাপারগুলা। সুস্থ-সবল মানুষ রোজা রাখতেছে না – এইটারে ‘নরমাল’ হিসাবে পারসিভই করা হয় না। (ধইরাই নেয়া হয় সবাই-ই মুসলমান। 🙂 ) নানানভাবেই জিনিসটারে ফেইস করা লাগে, বে-রোজাদারের। মানে, এইটা খালি ব্যক্তিগত ইচ্ছা/অনিচ্ছার ব্যাপার না, সোশ্যাল স্টিগমার একটা ঘটনা।

এইখানে কালচারাল স্টিগমাটা সোশ্যাল স্টিগমাটারে ইন্সফ্লুয়েন্স করে কিনা বা কিভাবে করে বা করতে পারে – সেইটা নিয়া আরো ভাবা যাইতে পারে মনেহয়।

অবশ্য ইফতার পার্টি হইতে পারে অনেক, কিন্তু সেইটাও যতোটা না রিলিজিয়াস মাহফিল তার চাইতে অনেক বেশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও পলিটিক্যাল গেদারিংয়ের ঘটনাই।

Leave a Reply