শাহবাগ কই গেছে?
শাহবাগ শাহবাগেই আছে। কিন্তু শাহবাগ এখন একটা রিডিফাইন্ড আইডেন্টিটি। এর যে ইন্টেলেকচুয়াল কন্ট্রিবিউশন সেইটা বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থারই একটা ‘উল্লম্ফন’ – ‘বিপ্লব’ অর্থে না নিতে পারলেও, ‘ব্যতিক্রম’ অর্থে ত অবশ্যই। এইটা ‘ব্যতিক্রম’ কারণ বর্তমান রাজনৈতিক যে সম্ভাবনাগুলা ছিল এর প্রায় বাইরে গিয়া এই ঘটনা ঘটতেছে। কেউই ভাবতে পারেন নাই যে, যারা প্রথম আলো পড়ে এবং প্রথম আলোর সমালোচনা করে, যারা হিন্দি সিরিয়াল দেখে এবং এইটা নিয়া বিব্রত থাকে, যাদের বাচ্চারা হিন্দিতে ডোরেমন দেখে এবং এইটার বিরোধিতা করে – মানে, ক্যাটাগরিক্যালি ঢাকা শহরের এবং বাংলাদেশের যারা ‘ডমিমেন্ট মাইনরিটি’ তারা বাসের আলাপ, চাকরির ভয়, ব্যবসার রিস্ক, ব্যক্তিগত বিষাদ পার হয়া ‘অ্যাক্টিভিজম’ এ নাম লিখাইতে পারে। এই সম্ভাবনা কেউ ইমাজিন করছেন বইলা আমি দেখি নাই। [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]
তো সেইটা যখন ঘইটাই গেছে, আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল বিহ্ববলতা কাটতে পারে নাই। আর এখন যখন একটু একটু কাটতে শুরু করছে আমরা জোর কইরা এইটারে একটা ‘সম্ভাবনা’র ভিতর ঠেইলা ঢুকাইতে চাইতেছি। আর আবশ্যিকভাবেই ‘বিপ্লব’ কোন সম্ভাবনার ভিতর থিকা পয়দা হইবো না। ‘বিপ্লব’ সবসময়ই একটা ‘অসম্ভব’ ঘটনা।
কিন্তু কি কইরা এই ‘শাহবাগ’ ঘটনাটা ঘটলো, সেইটার একটা ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে।
একটু দূর থিকাই শুরু করি, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলেরই একটা আইডওলজি আছে। কিন্তু আইডওলজি’টা যতোটা না মুখ্য তার চাইতে মুখ্য হইলো তারা তাদের ‘রাজনৈতিকতা’ কিভাবে প্রচার করেন এবং পারসিভ করাইতে চান। আওয়ামী লীগ নিজেরে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ এর দল এবং জামাতে ইসলামী নিজেরে ‘ইসলাম’ এর দল হিসাবে প্রচার চালায় এবং সেইভাবেই পারসিভ হওয়ার আইডেন্টিটি তৈরি করে। এতে কইরা ‘আওয়ামী লীগ’ এবং ‘জামাতে ইসলামি’ কতোটা সাকসেলফুল হন তার বাইরে গিয়াও বলা যায়, আবশ্যিকভাবে এই ‘ধারণা’ দুইটারে উনারা রিডিউস করতে চান এবং এইরকম একটা বাস্তবতা তৈরি করতে সাহায্য করেন যে; যিনি মুক্তিযোদ্ধা, তিনি আর ততোটা মুসলমান না এবং যিনি মুসলমান, তার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হওয়াটা থাকাটা কিছুটা হইলেও কষ্টকর। এইটা বাস্তব ঘটনা না, কিন্তু বাস্তবতা এইভাবেই আমাদের সামনে হাজির করার চেষ্টা হয় রাজনৈতিক প্রচারের ভিতর দিয়া।
‘মুক্তিযুদ্ধ’ ধারণাটারে কিভাবে ‘রিডিউস’ করা হয় সেইটারই ক্রূড একটা এক্সজাম্পল হইলো কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড। মানে, এইটুকুই লিগ্যাল এবং ‘যথেষ্ঠ’! এইটা যে যথেষ্ঠ না এবং ‘মুক্তিযুদ্ধ’ যে ‘আওয়ামী লীগ’ এর রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার বাইরেও একটা ‘আইডেন্টিটি’ হিসাবে অ্যাক্টিভ আছে, সেইটার রাজনৈতিক নিশ্চিতি হইলো – শাহবাগ।
এখন এই অ্যাক্টিভজম আইডওলজিক্যালি ‘মুক্তিযুদ্ধ’রে রিডিফাইন করার সাহস নিয়া আছে, বলা উচিত এর ‘প্রকৃত’ অর্থ ‘পুনারিষ্কার’ করার ভিতর আছে। ‘শাহবাগ’ এর পরে, যেই যেই রূপকের ভিতর দিয়া ‘মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘ইসলাম’রে অ্যাসথেটিক্যালি কার্যকরী কইরা তোলার চেষ্টা আছে, সেইটারে ‘বাস্তবতা’ হিসাবে অ-কার্যকরী করাটাই এই আন্দোলনের মূল সিগনিফিকেন্স হইতে পারে।
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৩।
Leave a Reply