শি, অ্যান্ড দ্য রিটার্ন অফ শি (৩)

 

এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]।

তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।

————————-

১ ।।  ২ ।।

————————-

 

মারা-যাওয়া

মরণ হইলো যখন কেউ আর আমারে নাম নিয়া ডাকবো না। কেউ আর ভাববো না আমার কথা। দশ ফুট মাটির নিচে চলে গেছি আমি তখন। উপ্রে অহেতুক গাবগাছ, পাতা তার দুলতেছে বাতাসে। ফকিন্নি বেটি একটা বইসা আছে বাচ্চা কোলে, তার পাশে। রেলস্টেশন থিকা একটু দূরে। মালের গাড়ির ট্রেইন কয়েকটা বগি নিয়া দাঁড়াইয়া আছে। যাবে নাকি যাবে আরো পরে, ভাবতেছে সে। মরণের পরে একটা অচেনা স্টেশনের কাছাকাছি জেগে ওঠতে চাইতেছে আমার আত্মা। জামাইয়ের ঘর থিকা পালাইয়া শি কি আসছে আর থাকতে আছে এইরকম একটা জায়গায়? নাকি অন্য কোন দেশে মাইগ্রেট কইরা গেছে? সুপারশপে কাজ করে আর ভাবে জীবন পইড়া আছে দূর কোন মফস্বলে, রেলস্টেশনের পাশে। অথবা থাকে ঢাকাতেই, নিজের বাসার ড্রয়িংরুমে পারিবারিক ফটো অ্যালবামে বইসা ভাবতেছে, মরে-যাওয়া কি আর এমন ব্যাপার, কবিতার ভিত্রেও ত মাইনষে লেখে – শান্ত, সমাহিত। মারা গেছি আমরা আসলে। আর মরে-যাওয়া স্মৃতিগুলি জেগে উঠতে চাইতেছে আবার, এই এতদিন পরে; আনফুলফিল্ড কোন ফ্যাণ্টাসি হইয়া। 

 

শি-পাখি

আমি তোমার জন্য উঠে দাঁড়াইছি, হাঁটাহাঁটি করতেছি। আমি জানি তুমি দেখতেছো আমারে, কিন্তু এই দেখার ভিতর দিয়া তুমি কি এচিভ করো? খালি কিছু কল্পনা, মন-খারাপ করার? এইগুলার লাইগা তুমি চাও আমি বাঁইচা থাকি? হাঁটহাঁটি করি, তারপর একদিন তুমি ইগনোর করা শুরু করতে পারো? হাঁটতে হাঁটতেই আমি ভাবি, যদি আমি আর কোন অস্তিত্বেই না-থাকি, একলা পাখি থাকতে থাকতে উড়ে গেছি, নাই; আমার খাঁচা নিয়া তুমি বসে আছো; আর ভাবতেছো, হাঁটতেছি কোন বন্ধ-হয়ে-যাওয়া জুটমিলে, কলোনির দুইতলা বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তায়, বিকালবেলায়; এমনিতেই। আমি আর আমি নাই। যা আছি সে ত তুমিই। কিরকম ভারনারেবল অবস্থা আমাদের, তুমি দেখো!

শি-পাখি তুমি ওইড়া যাইয়ো না, এত তাড়াতাড়ি।

ডানা মুড়ে বসে থাকে বিকালের রোদ। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাচ্ছে সে ও। তারে ধরে রাখি আমি, শি’র গালের কমলা রং-য়ে, কাঁপতে-থাকা কিশোরের থতমত চুমার দাগে।

 

ধরো, চিঠি লিখলাম

দুইটা মাথা নড়ে, সরে আসে আরো কাছে। তোমার প্রেমিক চায়া থাকে, এইটুক ডিসট্যান্সও কাভার করতে চায় সে। কী তীব্র তার চাউনি!আমারই ত ডর-ই লাগে। সে কি তোমার ছেলের কথা জিগায়? কেমন আছে সে? এইরকম ভাওতাবাজি তো আর করতে পারলাম না আমি। আমি কই, তোমার ছেলে’র বোঝা তুমি মাথা থিকা নামাও। সে তোমার অবস্টেকল না, তুমিই তার বাঁধা হইয়া থাইকা যাইতে চাইতেছো; তারে আটকাইয়া ধইরা তুমি বাঁচতে চাও। তোমার না-পারাগুলারে তুমি জাস্টিফাই করো। দেখো, তোমার প্রেমিকের চেহারাও তোমার জামাইয়ের মতোন। তুমি আসলে একটাই প্যার্টান! শি কয়, এত যে ধুন-ফুন তুমি আমারে বোঝাও, তুমি কি করো! এই শালার কবিতা-লেখা, এইটুকই ত তোমার ভন্ডামি! যা তুমি করতে পারো না, তারেই জাস্টিফাই করা, আমার উপ্রে ফেলে-দেয়া; এইটুকই ত, তুমি ত এট্টুকই!

‘খাটো-খোটো খাটো রে মাহুত, মুখে চাপা দাড়ি…’ ক্রসউইন্ডের মেয়েটা গাইতেছিল তখন গাড়িতে। ওর নাকি-কণ্ঠ ভাল্লাগে আমার। শি’র অবশ্য পছন্দ রবীন্দ্র-সঙ্গীত। প্রেম আসলে হইতেছে কোন একটা অসম্পূর্ণতা, যারে আমরা ভালো-লাগাইতে পারি। তোমার প্রেমিক তোমার কম-জোরি’টারে ভালবাসে। আমি ভালোবাসলাম, তোমার ভাঙা-নাক! আচ্ছা, ক্রস-উইন্ডের মেয়েটা, এই কথা কি কখনো জানতে পারে? ধরো, চিঠি লিখলাম কোনদিন আমি তারে।

শি তাকাইয়া থাকে দূরে, এই দুনিয়াতে শে আর নাই, থাকতেই চায় না আসলে; এইসব বাকোয়াজি কার আর ভাল্লাগে!

 

তোমার মলিন মুখের দিকে চেয়ে

তোমার মলিন মুখের দিকে চেয়ে, তোমার সাপের বেণীর হাওয়া পেয়ে, জেগে উঠলাম আমি। বিকালের নরোম আলো হেঁটে বেড়াচ্ছে শহরে। কি যে ভালো এইদিন! পৃথিবী ধ্বংস হয়া যাওয়ার মতো, ভাষা কমপ্লিটলি আউলাইয়া যাওয়ার মতো, আরেকটা অ্যাটাম বোমা ফাটতে পারে ত, মাশরুম ফলের মতো; এইরকম সুন্দর আর ভালো। শি’র চোখে কোন রাগ নাই, হতাশা নাই; দুনিয়া যেমন, সেইরকমই; আছে আর থাকতেই আছে। কোন পরিত্রাণ নাই। ভেসে যেতে যেতে স্থির। সূর্য, কোনদিনই যা ডুবে যাবে না। কমলা রংয়ের ভিতর আমরা ভাসতে ভাসতে একটু দূরে, বসে থাকবো। চড়ুইয়ের মতো সন্ধ্যাবেলা আসবে হঠাৎ। আর এই বিকালবেলা, রয়ে যাবে এই দুনিয়ায়; তারপর, তারো-পর, তারও পরে।

 

ভালবেসে দূরে বসে থাকি

ভালবেসে দূরে বসে থাকি। দূর থেকে আসে তোমার গান – দূরত্ব মহান! সকাল, দুপুর, বিকাল – এইরকম পুরাটা সময়, সবকিছুই ত যায়। বসে থাকলাম অনোন্যপায়। পুরানা গান সব আসে আর ভেসে চলে যায়। পাশ দিয়া হেঁটে যাই। পাই না তোমার ঘ্রাণ।

কুত্তার মত রাস্তার, নাক উঁচা করে বসে থাকি। শুয়া থাকি আবার। কত যে দিন যাবে, কত যে দিন যায়। তোমার প্রেমের স্পর্শ ছাড়া নরকেও যাইতে চায় না মন; তাই বইসা থাকি ধূলায়। সুপার স্টোর থিকা বাজার কইরা যাওয়ার সময় হাঁইটাই রাস্তাটা পার হয় শি। কাছে আর যাওয়া হয় না। ডাস্টবিনে ময়লা খুঁজতে বিজি থাকি তখন।

তোমার চুল ছুঁয়ে আসে যে বাতাস, তোমার ওড়নার হাওয়া – তারা কি আসে না আমার কাছে? আমারেও ছুঁইয়া যায় না? তারপর আরো দূরে, অনেক দূরের একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে দোস্তি পাতায়ে আটকাইয়া যায়।

এই ভাদ্র মাসের রোদরেই শি দোষ দেয়, শেষে। কয়, কি যে দাম বাড়ছে জিনিসপত্রের, রোদের মতোই চড়া। আমার আর ভাল্লাগে না! আমি ভাবি, রাস্তার কুত্তাটার কথা তার কি মনেও পড়ে না; তার কি কোন কন্ট্রিবিউশন নাই, এই খারাপ-লাগায়? যা-ই হোক, ইউনিভার্সাল বেদনার দড়িতে আমাদের প্রেম যে ঝুইলা পড়লো না এইটা ত ভালোই, একদিক দিয়া।

শীতকাল ত চইলাই আসছে প্রায়; এইবারেরটা পার করা যাইবো ত, বালিশের নিচে ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতার বই রাইখা? নাকি না?

 

বালু নদীর তীরে

বালু নদীর তীরে, সন্ধ্যা নামতেছে ধীরে। ছোট ছোট দেয়াল দেয়া প্লটগুলাতে ফুটে আছে শরতের কাশফুল। তার সাথে ফটো তুলতে আসছে অনেকে। অনেকে দেখতে আসছে নিজেদের জমি, জামাইয়ের সাথে, বান্ধবীদের নিয়া। এই খোলামেলা জায়গাটা উনাদেরও ভাল্লাগে। বাতাস আর আওয়াজ না-থাকা। সাইকেল চালায়া নিজে নিজে গান গাইয়া যাইতেছেন পৌঢ় যুবক, গলায় হেডফোন রাখা। ডায়াবেটিস নাই, কিন্তু হওয়ার আগেই তার এই সাবধানতা। আমি হাঁটতে হাঁটতে বালুর পাড়টাতে গিয়া বসি, যার পাশে এখনো ছোট ছোট অনেক গর্ত। বালুতে ভরা, কিন্তু ভরাট হইতে পারে নাই পুরাটা। মনে হয় নদী ছিল এইখানে অথবা নদী-কল্পনা সম্ভব হয়া উঠে এই সন্ধ্যাবেলা। যেইভাবে শি ছিল, এখন আর নাই অথবা থাকা আর না-থাকার কোন সিগনিফিকেন্স নাই আর। বসে আছে শে অন্য কোন জায়গায়, অন্য কোন সন্ধ্যাবেলায়।

একটা ন্যাচারাল ডিজাস্টারের শুরুতে একটা অর্গানিক ডিমের কুসুমের মত সূর্য, ডুবে যাইতেছিল। বালু নদীর তীরে, ধীরে, সন্ধ্যা নেমে আসলো।

 

শাদা পোশাকের পরী

শাদা পোশাকের পরী। তোমার হাতের দাগ থিকা ঝরে পড়তেছে ডেটা ও ফিউচার, ব্যক্তি মানুষের। যে নারী চুল ঢেকে রাখে না, রোজ হাশরে তার প্রতিটা চুল হয়া ওঠবে সাপ আর নিজেরে খাবে – এই ফতোয়া দিয়া আমি বাইন্ধা রাখতে চাই তারে। গোয়াল ঘরের গরু ডাকতেছে; হাম্বা, তোমরারে নিয়া আর পারলাম না! তারপর বিরক্ত হয়া খড়ের গামলায় মুখ ডোবায় সে।

চোখ আমাদের, তারা ত দেখে। একটা মুহূর্তের ছোট ছোট কণায় কিভাবে রিফ্লেক্ট করি আমরা নিজেদেরকে। মেনে-না-নেয়ায় আটকাইয়া থাকি, একজন আরেকজনের ছায়ায়। হাতের দাগগুলা থেকে শব্দ ভেসে আসে। আর তারা ফিরতে পারে না। খরগোশের মত আমাদের লম্বা কানে; বলে, যা কিছু শুনছি আমরা তা বলার ভিতর থাকেই না কোনকালে! দুপুরবেলা মদ খাইয়া বইসা আছি নিজের ঘরে। পুরানা কবিতা ঘাঁটি। আর অপেক্ষায় থাকি, কখোন আসবে রাত। কালো চুলের দিন ছড়ায়ে যাবে আমারই চারপাশে। শি বলে, শাদা-কালো খোয়াবই দেখতে থাকো তুমি, নাইনটিন ফিফটিজের! মুসলিম ট্রাডিশ্যান মানো না, খালি চিনো বাঈজী-পাড়া আর অহেতুক গানের ভিতর তুমি চাও ঘুমাইয়া পড়া। একটা শাদা ওড়নার স্বপ্নে আটকা পইড়া থাকো। তোমার আর কোন উদ্ধার নাই। তুমি একা। ইত্যাদি ইত্যাদি। এতসব অভিশাপের ভিতর আমি সত্যি সত্যি ঘুমাইয়া পড়ি। একটা শাদা পোশাকের পরী তখন আমার শরীরে হাত বুলায়। কালোচুল তার আমার মুখের উপর; বেহায়া, বেশরম, শরিয়ত মানে না, ঘুরে বেড়ায়।

 

ইমাজিন

তোমার ভেড়ার মাথা দুলে। প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছে সে। নড়তেছে, নড়তেছে; কোন কাজ করছে না। হ্যালো, শুনতে পাইতেছো তুমি; শোনা যাচ্ছে? আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাথা শাট-ডাউন করে বসে আছে শি। দুনিয়া ধ্বংস হয়া যাক, পাপের কথা আমি আর শুনবো না। ধর্মের পাঁচালি গান গেয়ে যাচ্ছে জেলাস ভগবান; বলতেছে, আমি অন্যান্যদের চাইতে বেটার। রুচি আর র‌্যাশনালের ভিতর নিজেদেরকে সংহত করতেছে সেমিটিক ধর্মগুলা। বর্ডার ক্রস করতে গিয়া মারা পড়লো একজন মুসলমান মেয়ে। ব্যাপারটা কি এইরকমই? ভিনগ্রহের প্রাণীরা আসছে দুনিয়ার দখল নিতে; ওদের দেখলে মায়া লাগে, ওরাও ত প্রাণ, মানুষের মতই, তাই আর গুলি করা যায় না। শি ডিটারমাইন্ড; যে কোন সময়ই গুলি কইরা দিতে পারে আমারে। খালি হাতে পিস্তলটা নাই। ইমাজিন করি যে, পিস্তল আছে এবং গুলিও। তখনো হত্যা মামলার আসামি ত আর তারে করা যায় না। নিজেরে নিজেই মারতে হইবো। আত্মহত্যা না; একটা অ্যাকসিডেন্টে মারা গেলাম। পইড়া রইলাম লাশ, এক্সপায়ার্ড মেশিন একটা; ডিসকানেক্টেড উইথ দ্য রিয়ালিটি, অর দ্য ড্রিম অফ অ্যাজ সাচ।

 

অচেনা পথ

তোমার সামনে অচেনা অনেকগুলা পথের মত আমি ছড়াইয়া যাইতেছি। যেহেতু তুমি হেঁটে যাইতেছো, আমার শরীরের উপর দিয়া হেঁটে যেতে পারো ত তুমি, কোনদিন। এই ভাবনায় আমি ছড়াইয়া যাইতে থাকি এই পথ থিকা অন্য পথে, আরো দূরের পথে। সকালের সূর্যের সাথে জেগে উঠি। অপশন দেখাই তোমারে! হো হো কইরা হাইসা উঠে শি। হাসি তার, ভাঙা সূর্যের কাঁচ; ছড়াইয়া পড়ে বহুদূর আমার উপরে। কয়, তোমার চেহারা এমনিতেই চার্লি চ্যাপলিনের মত, আর কমেডি না করলেও চলবো।

বুঝলাম, শি কোন ফিল্ম সোসাইটির সদস্য না। এই বুঝতে পারায়, আমার চোখ ঝাপসা হয়া উঠে; ভাবি, সিটি লাইটসের করুণ আলোগুলি কেমন চইলা আসছিলো চার্লির চোখে আর তার বাস্তব-ছবি এইসব গোপন কইরা বেঁচে থেকে থেকে চলে যাচ্ছে। অন্য অনেক জীবন, অন্য অনেক মিনিংয়ের ভিতরে। এমনিতেই।

 

 

 

Leave a Reply