শি, অ্যান্ড দ্য রিটার্ন অফ শি (৯)

এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]।

তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।

————————————————

১ ।।  ২ ।। ৩ ।। ৪ ।। ৫ ।। ৬ ।। ৭ ।। ৮ ।।

————————————————

 

হঠাৎ

তোমার বাঁইচা থাকার লাইগা আমারেই কেন মরা লাগবে? শি জিগায় আমারে। মরো নাই তো তুমি! আমরা জাস্ট কথা বলা বন্ধ কইরা দিছি। একটা জিনিসরে কেন এক্সাজারেট করা লাগে তোমার? তোমার বাঁইচা থাকা তুমি চোদাও না গিয়া বাল। হোয়াই ইট হ্যাজ টু বি মি? এইরকম হাউকাউ করতে গিয়াও চুপ কইরা থাকি আমি। যে কোন কনভারসেশনই পসিবল না আর। একজন মানুষরে ন্যাংটা দেইখা ফেলার পরে যতোই তুমি তারে ঢাইকা রাখতে চাও, তার ইমেজ থাইকাই যায়। চোখ বন্ধ কইরা রাখলেও। অন্ধ হয়া গেলেও। একটা ট্রাজিক বা রোমাণ্টিক এন্ডিংয়ের লাইগাই তো ছিল এতকিছু। শি মেবি অপেক্ষা কইরা আছে, মেমোরিটা মুইছা গেলেই হয়। তখন ফোঁস ফোঁস কইরা ফিরা আসতে পারে। আমি ভয় পাই। আমি অন্য আরেকটা শি’র কথা ভাবি যে কখনো টেম্পট হইতে রাজি হয় নাই। অথবা দুই-তিনজন তারা ক্যাফেতে বইসা সিগ্রেট খাইতেছে। এই প্লেইসটা সেইফ। তারপরে সেলফি তুলে। আরেকজন শি আইসা বলে, বিয়া করছি ঠিকই, বাচ্চা তো নিবো না; আমার পেটে বাচ্চা দিয়া সে আরেকটা প্রেমই করতে চায়। ধোঁয়ায় বসে থাকে সবাই। আমি ভাবি যে উইঠা চইলা যাবো। আমি ভাবি, আমি তো মারা গেছি। মানে, আমি যদি মারা না যাই শি আর কেমনে বাঁইচা থাকতে পারে? এইটা এমন একটা দুনিয়া যেইখানে একজনই থাকে। আর আমাদের আইডেন্টিটি পিক করে সবচে নমিনাল এলিমেন্টটারে, যেইখানে ইউনিকনেস ক্লেইম করা যায়। উই আর ডান উইথ আওয়ারসেলফস। সো, একজনই আছে, শি। সামনের দিকে তাকায়া পিছনে হাঁটতে থাকি আমি। তেমন সমস্যা হয় না আসলে। বস্তার ভিতর দুই পা ঢুকাইয়া ব্যাঙের মতো লাফাইতেছে শি। আমি দেখতেছি। কুয়াশায় কিছুটা ঝাপসা লাগে। এখনো সন্ধ্যা আবার? একটা দিনের ভিতর কয়বার সন্ধ্যা হয়? ট্রাফিক জ্যাম কি আজকে ভাল্লাগতেছে? বুকার প্রাইজ পাওয়া বইয়ের পাইরেট কপিটা যদি তোমার গাড়ির জানালায় ধরি তুমি কি কিনতে পারো? পড়বা বইলা না, ধরো তুমি উদাস, ভাল্লাগতেছে না, কারো সাথে কথা বলাই যায়, এইরকম। আর সাথে সাথে ধূলা-বালি যত ঘিইরা ধরলো। ধরো, ৫০ টাকার নেগোশিয়েশন শেষ হইতে না হইতেই সিগন্যাল ছাইড়া দিলো। নীল গাড়ির ড্রাইভার সে। প্রাইড আছে। চইলা গেলো। পরের দিন মেবি দেখা হবে। পরের দিন। পরের দিন। পরের দিন। ধরো, মরার পরেও তো আছে পরের দিন। কয়েকটা পরের দিন পার হইলেই মনে হবে, মারা গেছি। কবরের ঘাসে বাতাস। পাকুড় বটের কাছে গোদারা ঘাটের কিনারে সন্ধ্যাবেলায়, আমি ভাবতেছিলাম, সবকিছুই কিরকম শেষ হয়                         হঠাৎ।

 

বইসা ছিলাম

অনেকক্ষণ বইসা থাকার পরে, অনেক অনেক ক্ষণ বইসা থাকার পরে লেখা হইলো, বইসা ছিলাম। “হইছে না এইবার?” শে জিগাইলো আমারে। আমি হাসলাম। কইলাম, ‘বইসা তো ছিলা-ই।’ শে কইলো, “না, না… বইসা থাকারে বসতে যে দিলাম; ঠিকাছে না এইটা?” তার চোখ হাসতেছিল, ঠোঁট নড়ে নাই। আমি বুঝতে পারলাম আর ওর হাসিটা হাসতে থাকলাম নিজেই আবার। কইলাম, ‘বইসা যে আছে, সে কি দাঁড়াইবো না আর… এতো শিওর তুমি কেমনে হইলা?’ “তখন না হয় লিখবো, দাঁড়ায়া গেলাম। 🙂 ” শি’র ঠোঁটও হাসলো এইবার। চোখগুলি ঝলমল। সূর্য ডুবে যাইতেছিল। দূর থিকা ভেসে আসতেছিল বৃষ্টির বাতাস। একটু একটু কাঁপতেছিল টিলার উপরের ঘাসগুলি। হাসিগুলি শেষ হয়া আসলো একটা সময়। ভাবতেছিলাম আমিও, লিইখা রাখবো কিনা, ‘বইসা ছিলাম।’ দূরে, জাহাজের ডেকে দাঁড়ানো শি’র চুলের মতোন উড়তেছিল পাশে বসে থাকা শি’র চুল। তখন।

 

মধ্যযুগের কথা

জানো, আনন্দে তো আমি কাইন্দা ফেলছি, যখন সে প্রপোজ করছে আমারে। নিজেরে নিয়া এতো লজ্জা লাগছে আমার! আমি কি আর শে, সে যা ভাবছে আমারে!… বলতে বলতে আবার চুপ কইরা থাকে শি। এখনো তার বাজেই লাগতেছে। আমি জানি। নিজ বইলা একটাকিছুরে নিতে পারতেছে না শে। আমি যা ভাবি অথবা তার প্রেমিক অখবা প্রেমিক বইলা শে ভাবছিল যারে। আমাদের ভাবনার ব্যারিকেড দিয়া আমরা যে যারে বাঁচাইয়া রাখি। একটা মানুষ মানুষও হইতে পারে না। ছবি দেখি, একটা মা জন্তু একটা মেয়ে জন্তুরে আদর করে দিতেছে। একটু দূর থিকা একটা খরঘোশ লাল চোখে তাকায় আছে আমার দিকে। আমি কি ঠিকঠাকমতো অরে ভাবতে পারতেছি। ও কি ঠিকঠাকমতো ভাবতে পারতেছে, আমারে? আমাদের ভাবনাগুলি নিয়া শি তো কখনো ভাবেও নাই মনেহয়। আসলে শি ত ভাব, আমি ভাবি। রাধার কোলে কালা, বইসা থাকি।

 

আবারও এইরকম হয়

আবারও এইরকম হয়। মানে, হইতে যে পারে এইরকম; কি রকম লাগে না? যে, একটা সিন বারবার ঘটতেছে। ক্যামেরা জানি শাট-ডাউন হয় নাই। অথবা ক্যামেরাটা যখন ওপেন হয় তখন একটাই সিন দেখতে পারে, দেখাইতে পারে। আমি দেখি, শি যাইতেছে। আমরা ক্রস করি। কথা কইতে চাই। কি কথা কইতে পারি আমরা? ভাবি যে, এইরকম ত হয়-ই, মানে হইতেই পারে, তাই না? কথা নাই, কিন্তু কথা-বলার একটা ব্যাপার আছে। আমাদের কিছু কথা বলাটা দরকার বা বলা যাইতেই পারে। কিন্তু আবার বলি না যে, এইটা বলা হিসাবেই থাকে। আমরা টের পাই, কিছু কথা না-বলা থাইকা যাইতেছে। যেহেতু আমরা কথা বলতেছি না, না-বলাগুলা আমাদেরকে বলতে পারতেছে। তারপর ভুলে যাই, রিপিটেশনের আগে। আবারও এইরকমই হয়। হইতেই থাকে। শীত আসে, কুয়াশার মতো আমাদের মনে।

 

কাহিনির দিন

কাহিনির দিন শেষ হয়ে আসছে। আমি টের পাই শীত আসার আগেই আমার হৃদয় জমে যাচ্ছে বধিরতায়। পূব দিকে সূর্য উঠবে আর ডুবে যাবে পশ্চিমে। এইরকম দিনও ছিল, যখন একই আলো বাতাসের ভিতর আমরা বেঁচে থাকতাম সর্বোচ্চ আশায়; যে, একদিন সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। আর আজকে শেষের শুরু; বিকালবেলার বৃষ্টি। শীত আসছে। কি খুশি শি! পুরানা জামাকাপড়গুলা খুঁজে খুঁজে বাইর করতে হবে। নতুন একটা শুরুর ভিতর পুরানা অনেক কিছুই আমরা হারায়ে ফেলি। আবার খুঁটাইয়া খুঁটাইয়া খুঁজে বাইর করি। যেইদিন গেছে অসহায়তার, যেইদিন মন-খারাপের, ভালো-না-লাগার; তাদের শেষ শুরু হইতেছে শেষে। একটা বরফের দুর্গের ভিতর আমরা বন্দী ছিলাম। আর এখন ওড়ে যাচ্ছে শি। দিনের ভিতর কোন ক্লান্তি নাই। কোন পুনরাগম নাই। যে যায়, তার ছায়াও মুছে যাইতেছে, সূর্য ডোবার সময়ে।

 

সোনা

‘আমি যা দেখতেছি সোনা, তাই তো আমি দেখি, তাই না?’ ‘আমারে আর দেইখো না তুমি। আর বালের সোনাও কইবা না। তুমি কি মিডল-ইস্টের লেবার নাকি?’ আমি ভাবি মাইগ্রেশন করবো। দেশে থাকলেই খালি বিদেশের খোটা শুনতে হয়। বিদেশে থাকলেই ভালো, এক চোখ দিয়া দেশের দিকে তাকায়া থাকবো, নিউজ পড়বো আর এক ঠ্যাং উঁচা কইরা পাদ দিবো একটু পরে পরে। রেমিটেন্সও দিবো, অল্প। এইসব কথা আর কই না অবশ্য। অশ্লীল না হোক, এইগুলি ত আর সাহিত্য না। শি’রে কইতে পারতাম। শি কয়, আর কোন কথাই তুমি বলবা না। আমি কই, আমাদের কালো-আত্মা আমাদের শাদা-মুখের কথারে পাত্তা দেয় নাকি! শুইনা শে চুপ থাকে। যা কিছুই বলি আমরা একটা না-বলার দিকেই যাইতে থাকে। ‘ফুঁ…’ আমারে উড়াইয়া দিয়া যাইতে থাকে শে। বিদেশে?

 

রিগ্রেশন

আমার কপাল নিয়া শে তার কপালে ঠেকায়। তারপর চোখ বন্ধ করে। আমিও চোখ বন্ধ করে রাখি। আরেকটা আমি হয়া আমি একটু দূর থিকা আমাদেরকে দেখি। চুপ থাকি। ভাবি, যদি কানতে কানতে হাসতে পারতাম আমরা। যদি শে বলতে পারতো, কি যে প্রেমে পড়ছি আমি ওই ছেলেটার! তোমারে চে-ও অনেক পাগলা ও আমারে একলা থাকতেই দেয় না আমি ভাবতেই পারি না তোমার কথা আর যদি আমি বলতে পারতাম, আমারে তো ফিরতে হবে; নরমাল, রেগুলার লাইফ মিস করতেছি আমি; যেইখানে রাস্তায় কলার খোসা পইড়া আছে, যেইখানে পিছলা খায়া পইড়া যাইতে পারি আমি বা অন্য যে কেউ-ই অন্য যে কারো কথা ভাবতে ভাবতেই তো আমি আবারও প্রেমে পইড়া যাইতে পারি আমাদের কথাগুলি আমাদের শ্বাস। ক্যামেরা অফ থাকলেই যেমন ভাবা যায় ঘটনাটা আর ঘটতেছে না, এইরকম না বইলাই আমাদের ভাবনাগুলি কি আমরা ভুলে যাইতে পারি না? এই শি’টা পারতেছে না মনেহয় এখনো। অন্য কোন শি হইলে শে পাইরা যাইতো। আমার কপালটা সরাইয়া দিয়া ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাসের ভিতর ডুইবা যায় শে। ‘কি রকম উইয়ার্ড! ওর কথাই মনে হইতেছে বারবার আমার।’ অস্বস্তির একটা হাসি হাসে শি। হাসতে হাসতে আমি বলি, ‘দেখো গিয়া, ও-ও মনেহয় কানতেছে এখন।’ শি বুঝতে পারে এই ফিলিংস আমি বুঝতে পারবো না কখনোই। যেইভাবে আমরা একজন আরেকজনরে দেখি, সেই দেখার বাইরেও আমরা থাকি তো; আমি জানি, শিও জানে। আমাদের এই জানার বাইরে আমরা খুবএকটা যাইতে পারি না। চুপচাপ বসে থাকি। সামনে ব্যালকনি। তারপরে সাগর। ঢেউয়ের পরে ঢেউ। অনেক অনেক দূর থিকা আইসা আছড়াইয়া পড়তেছে। আমাদের বুকে।

 

হাজারটা সূর্য

‘আসো তোমার কান্দাটা আমি কাইন্দা দেই। কেমনে কান্দবা তুমি? ছোট বাবু’র মতোন… নাকি তুমি তাকায়া থাকবা খালি, তোমার পুরুষ-ইগো বাইয়া বাইয়া পড়বো চোখ দিয়া? কি রকমের কান্দা তোমার পছন্দের?’ শি বলে না এইসব। কি রকমের শক্ত একটা সাইলেন্সে আটকা থাকে। একটা ঈগল রাতের বেলা পুরান কোন বিল্ডিংয়ের ভেন্টিলেটারের ফাঁকে ভুল কইরা ঢুইকা পড়ছে। বাইর হইতে পারতেছে না। শি দেখতেছে আমারে। আমি একটা পর্দা সরাই আর হাজারটা সূর্য আইসা আমার চোখ ঝলসাইয়া দেয়।

শি হয়তো আমারে দেখে। আমারে দেখো তো তুমি, শি?

 

শি ও আমি

কত যে কথা শি, বলতেছি আমি। আর আমার চোখে কী যে হাসি! বাসর রাতের পরের দিন সকালবেলা ওইঠা দেখি বিশটা মিসকল। চিন্তা করো কেমন লাগে! তখনই আবারো নীলা ম্যাডামের ফোন, তাও সকাল সাতটায়। সায়রা ত পাশে মরা’র মতো ঘুমাইতেছে। ফোনটা ধরেই বললাম, কেন ফোন দিছেন? বলে, ওই ফাইলটা ত আজকে সকালেই মিটিংয়ের আগে দরকার! চিন্তা করো, গতকালকে আমার বাসর রাত গেছে আর সকালবেলা ফাইলের খোঁজ দেয়া লাগে। অফিস জিনিসটা এতো বাজে! সবগুলা বস খালি বউ-এর মাতবরিটা চায়। আমি কি কৃষ্ণ নাকি? বইলা আমি ঠোঁট টিইপা আবার হাসি।

মেঘনার পাড়ে বিকালের উল্টা পাল্টা বাতাস। বঙ্গোপসাগর থিকা জাহাজ ঘুরাইয়া মরতে মরতে বাঁইচা আসছে শি। ঝঞ্ঝা’র পরে এই পুনরুত্থান। এখন শি’র আত্মা আমার হাতে। আমি কথা বলতছি, ইলেকট্রিকের খাম্বার মতো নির্বাক নিশ্চল শি’র সাথে। যদি শি কথা কইতে পারতো, শিও কি এইগুলাই বলতো!

আমাদের কথা যেন সব শেষ, এইরকম হাসি হাসি মুখ। বইসা আছি। পাশে-বসা শি’রে ইগনোর কইরা জাহাজের ডেকে দাঁড়ানো শি’রে দেখতেছি আমি। কী যে স্বপ্ন-ভঙ্গিমার আওয়াজ জাগতেছে আমার চোখে। এতদূর থিকাও দেখা যায়।

 

 

Leave a Reply