শি, অ্যান্ড দ্য রিটার্ন অফ শি (১)

এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]। 

তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।

—————————————

The noblest kind of beauty is not that which suddenly transports us, which makes a violet and intoxicating assault upon us (such beauty can easily disgust), but that which slowly infiltrates us, which we bear away with us almost without noticing and encounter again in dreams, but which finally, after having for long lain modestly in our heart, takes total possession of us, filling our eyes with tears and our heart with longing. – What is it we long for at the sight of beauty? To be beautiful ourself: we imagine we would be very happy if we were beautiful. – But that is an error.


The slow arrow of beauty

Friedrich Nietzsche; Human, All Too Human (1878)

 

 

আমি ও শি

কত যে কথা শি, বলতেছো তুমি। আর তোমার চোখে কী যে হাসি! বাসর রাতের পরের দিন সকালবেলা ওইঠা দেখি বিশটা মিসকল। চিন্তা করো কেমন লাগে! তখনই আবারো হুদা ভাইয়ের ফোন, তাও সকাল সাতটায়। সাহিল ত পাশে মরা’র মতো ঘুমাইতেছে। ফোনটা ধরেই বললাম, কেন ফোন দিছেন? বলে, ওই ফাইলটা ত আজকে সকালেই মিটিংয়ের আগে দরকার! চিন্তা করো, গতকালকে আমার বাসর রাত গেছে আর সকালবেলা ফাইলের খোঁজ দেয়া লাগে। অফিস জিনিসটা এতো বাজে! সবগুলা পুরুষ খালি জামাইয়ের পোস্ট চায়। আমি কি দ্রৌপদী নাকি? বইলা শি ঠোঁট টিইপা আবার হাসে।

মেঘনার পাড়ে বিকালের উল্টা পাল্টা বাতাস। বঙ্গোপসাগর থিকা জাহাজ ঘুরাইয়া মরতে মরতে বাঁইচা আসছি আমি। ঝঞ্ঝা’র পরে এই পুনরুত্থান। এখন আমার আত্মা তোমার হাতে। তুমি কথা বলতেছো, ইলেকট্রিকের খাম্বার মতো নির্বাক নিশ্চল আমার সাথে। যদি আমি কথা কইতে পারতাম, আমিও কি এইগুলাই বলতাম!

আমাদের কথা যেন সব শেষ, এইরকম হাসি হাসি মুখ। বইসা আছি। পাশে-বসা আমারে ইগনোর কইরা জাহাজের ডেকে দাঁড়ানো আমারে দেখতেছে শি। কী যে স্বপ্ন-ভঙ্গিমার আওয়াজ জাগতেছে তার চোখে। এতদূর থিকাও দেখা যায়।

 

আলেকজেন্দ্রিয়া ও ঢাকা

বোবা লাইকগুলা আমি কার কাছে বেচবো? আপনারাই আমারে নেন, লাইকগুলাসহ। কমেন্ট মিউট করা এই ষ্ট্যাটাসে! – এইরকম লিখতে পারলাম আমি। শি’র কোন ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট যেহেতু নাই। আমি ইচ্ছামতো চিল্লাই। আলেকজেন্দ্রিয়ায় গিয়া বাংলায় কথা বলার মতো। অন্য যে কোন ভাষার মানুষরেই ওরা ভাবে, এলিয়েন না তো! অথবা পারস্য থিকা আসা স্মৃতিভ্রষ্ট পাগলা কোন সেনাপতি, যুদ্ধে হাইরা-টাইরা পেরেশান। যেহেতু আমার ভঙ্গিমা এমনই ইর‌্যাশন্যাল।

যেই দুনিয়ায় তুমি নাই সেইটা ত আমার দুনিয়া না আর। এই না-থাকা দুনিয়াতে আমি করতে পারি যা খুশি তা-ই। কিন্তু খুশির কথা যদি বলা হয়, মরার আগে কি খাইতে চাই জিজ্ঞাসা করা হইলে আমি হয়তো আরেকবার করলা-ই খাইতে চাইবো, যেহেতু জীবনে এর স্বাদ আমি নিছি বেশি এবং এমন একটা অভ্যাসের মধ্যে যে জীবন মানে করলা খাওয়াই। সুতরাং মরার আগে আমি চাই জীবন একবার। আরেকবার। জীবন মানে খাওয়া এবং হাগা। বেসিক্যালি এইটুকুই।

এর বাইরে ফেইসবুক। সবারই জীবন ইমেজময়। দেখি। একসময় বন্ধ কইরা দেই। চুপচাপ বসে থাকি।

সারাদিন বসে তোমার গু আমি সাফ করি। যেই প্যানে তোমার পাছা তুমি রাখো সেই প্যানে গাল লাগাইয়া বসি। পাবলিকের এই দুনিয়ায় টয়লেটের প্যান ছাড়া আর কোথায় আমরা নিজেদেরকে একলা পাইতে পারি? নৈতিকতার হারপিকে (ভ্যানিশ, ফিনিশ এইরকম আরো অনেক ব্র্যান্ডও আছে) সাফ হয়া যাওয়ার আগে ভাবি আর আমার নিজ-ভাবনা দিয়া তোমারে গায়েব কইরা দেই। ‘আহা রে’ দিয়া যে ‘ঢাকা রে’ রিপ্লেইস করা যাইতেছে চিরকুটের গানে, এসথেটিকস ত ওইটুকুই। মিউচ্যুয়ালি ট্রান্সফারেবল বস্তুসমুহ। মা’র মতো এবং মা। এই যে উপমার মতো বস্তু এইখানে, সেই উপমাই বস্তু। বস্তুজ্ঞান এইটাই।

আলেকজেন্দ্রিয়া হোক আর ঢাকা, আমরা আসলে উদ্বাস্তুই। ঘুরতেছি, ঘুরতেছি। আমি আর শি।

 

আয়না ও চুল

ছোটবেলা থিকাই শক্ত কইরা চুল বাঁধার অভ্যাস শি’র। যার ফলে চুলের মাঝখান দিয়া পায়ে হাঁটার বাদামী পথ। স্ক্যাল্প দেখা যায়। দুই-একটা খুশকি’র মতো হাঁটি আমি। এমন নির্জন পথ। গরমের দিনের সন্ধ্যার উতলা বাতাস। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়া একটা সময় শি’র সাথে কাঠের বাড়িতে বসে থাকি। দমকা হাওয়া হঠাৎ। কাল বৈশাখী হবে নাকি? শি জিগায় আমারে। জানালা দিয়া দেখলাম বাইরে। বললাম, না, পশ্চিমের মেঘে কোনদিন বৃষ্টি হয় না।

এমনিতেও যখনই কোন কাজ থাকে না তখনই চুল বাঁধে শে। আজকে ত তেলে জবজব চুল। বেণী করা একটা। একলা। নিঃসঙ্গ। একা একটা পিঠের ওপর ঝুলে আছে। কি যে খারাপ লাগতেছে তার। কালো বেদনা। মেঘের। সামনে ধইরা রাখা আয়না আমি। শি’র নিঃসঙ্গতা দেখি। চুলের ভিতর বিত্রস্ত পথে হাঁইটা যাই। প্রতিটা চুলের গোড়ায় গন্ধ নেই। জবাকুসুম তেল গো আমার, জবাকুসুম তেল! পিছলা যে গো কালা আমার, সুবাসে বান্ধিয়েন! ‘চুল ত দেখি আমার আয়নার গান গায়’। শি হাসতে হাসতে কয়।

 

প্লাতেরো ও শি

আই ফাইন্ড অ্যা নেইম হুইচ আই ক্যান ট্রেজার ফর লং। একজন মানুষের এর চাইতে বেশি আর কী চাইতে পারে। এই যে শি’রে আমার প্লাতেরো বইলা ডাকতে হয় না বা আসলে যে ডাকা যায় না; এইটা ত শে আছে বইলাই। এই শব্দ-চিহ্নের ভিতর, উচ্চারণ-ধ্বনির ভিতর। ধীরে ধীরে গুটাইয়া যাইতেছে শে। লাল লাল গোল গোল আপেল আর না শে। একটা অস্তিত্ব যা চিৎকার কইরা ওঠতে পারে; যেকোনসময়েই জুয়ার আসরে আইসা আমারে ধইরা ফেলতে পারে, অথবা মাগিপট্টিতে যাওয়ার রাস্তায় সামনে আইসা খাড়াইতে পারে, অথবা মদ খাইয়া বাইর হওয়ার সময় শার্টের কলার ধইরা নিয়া যাইতে পারে ঘরে, অথবা জেলখানাতে থাকার সময় টিফিন ক্যারিয়ারে বাসায় রান্না করা ভাত-তরকারিও নিয়া আসতে পারে। প্লাতেরো, গাধা সে, কবি’র বোঝা-ই টানতে পারে না। আমি তারে অস্বীকার করি না। কিন্তু আরেকটা গাধা-ই যে আমারে আবিষ্কার করতে হইলো না, এই কারণে প্লাতেরোরে গিয়া বলি, আয় ব্যাটা, শবে-বরাতের রাতে, শি’দের বাসার নিচ দিয়া ঘুরি!

প্লাতেরো ত নির্বাক; বোবা বোবা চোখে তাকায়, বোবা কাব্যিক বাস্তবতার মতো। সে কি আর শি’র মতো কথা কইতে পারে নাকি!

 

দূরে ও কাছে

দূরে ও কাছে শি’র কল্পনা আসে! অথচ সবকিছুই দেখা যাইতেছে। শাড়ির আঁচল সরে গেলে দেখা যায়; শরীর যা, ফ্যাকাশে রংয়ের চামড়া, যা আমরা জানি – পিঠ, তিল ও মসৃণ তল। শাদা শাড়িতে লাল পাড়। ঝুঁকে আসে আমাদের প্রেম। পাশাপাশি উবু হয়া বসে। কি জানি দেখতেছে তারা। ‘কল্পনা-ই সব, যা কিছু দেখি আমরা’ – শি বলে আমারে; দুই হাতের মুঠোতে শাড়ির আঁচল নিয়া বইসা থাকতে থাকতে। কাছে ও দূরে, বিস্তারিত বাস্তবে এইসব কথা-বার্তাই বলি আমরা। একই জিনিস এরা, একই কথা। অথচ ভিন্ন ভিন্ন মানে; শি বলে বইলাই আমি বুঝতে পারি।

আচ্ছা, তুমি যে এতোসব কিছু বলো; এইসব কথা-বার্তা আমাদের কবে বলা হইছে? বানায়া বানায়া মিথ্যা বলতে তোমার এতো ভালো লাগে! দূরে আর কাছে কথাগুলি আজ আমাদের প্রাণে আসে। হাসে।

ল্যাঙ্গুয়েজগুলা বিভিন্ন। এরা কথা কয় বিভিন্ন স্বরে এবং উচ্চারণে। ভঙ্গিমাগুলার দিকে তাকাইলে বোঝা যায়। আমরাও বুঝতে পারি, ভাষার যে সামাজিক বিজ্ঞান, সেইখানে কাছাকাছি আসা যায় না আসলে।

 

প্রেমের শিশু

তোমার ভাঙা নাকে শ্বাস নেই। এইটুক হাড়-ভাঙ্গার ভিতরই বাঁইচা থাকা। আমি বারবার দেখতে চাই। আর চোখ সরাই। এইটুক। খালি এইটুকই!

ইমেজগুলা যে কী ভয়াবহ। তুমি এইগুলা বিশ্বাস কইরো না। এই ছবিগুলা যা দেখায়। বা তোমারে যে প্রজেক্ট করে খালি একটা ফোকাসে, ভাঙা-হাড়, নাকের। দেখো, তুমি কী এইগুলা বিশ্বাস করো!

আমি আর দেখিই না এইগুলা, বুঝলা। খালি শ্বাস নেই। বাঁইচা থাকি। আমাদের দেখাদেখিগুলা খুবই অসম্পূর্ণ, এইরকম একটা ভাবনার ভিতর গিয়া খুব মন খারাপ কইরা শুইয়া থাকি। কুন্ডলী পাকাইয়া আসে শ্বাস। প্রতিটা শ্বাসের ভিতর আমাদের কাঁদতেছে, একটা প্রেমের শিশু! খালি ছন্দ-মিল দেওয়ার লাইগা তুমি তারে যিশু কইয়া ডাইকো না। নিরবতার ভিতরই ঘুমাক সে।

মুখ নিচু কইরা বইসা আছে শি। কোন কথাই শে আর বলবে না।

একটু দূরে, সূর্য ডোবার আগেই, ডুবে যাবে, যাইতেছে… কালো চুল। ঝাপসা ইমেজ। না-দেখার।

 

দেখা

শি যে আছে, এইটাই ভালো। দুনিয়া এমন একটা বাস্তবতা যেইখানে আমরা দুইজনেই বাঁইচা আছি। প্রাণপণে বাঁইচা থাকতে থাকতে যাইতেছি; বাঁচতেই আছি খালি। এইটুক যৌথতা নিয়া ভাবতেছি, যে দুনিয়া সে ত আছেই। দুনিয়ার থাকার ভিতরে আমরাও ঘুরতে থাকি। কোন সময় আসি পাশাপাশি; আবার সরে যাই। একটাই দুনিয়া এইটা। মেইনলি তরল একটা ব্যাপার। আরো বায়বীয় একটা জিনিসের ভিতরে ঘুরতেই থাকে। সেইখানে, শি যে আছে, থাকে; এইটাই ত ভালো!

আমাদের ভালোবাসা দুনিয়ার মতোই একটা ইল্যুশন; আমরা দেখি। যদিও আমাদের দেখা খুব কমই হয়। এখন ত আরো দূরে! সেই দূর থিকা শি হাসে; কয়, ঠিক আছে, আরো কিছুদিন আমারে দেখার পারমিশন দিলাম, তোমারে!

 

চোখ

ভেসে ওঠে চোখ; বিলের পানিতে, একটু দূরে হঠাৎ দুইটা শালুক, পাশাপাশি ভাসতেছে। কুসাই নৌকায় বসে আমি দেখি। জট-বাঁধা শাপলার ডাটাঁর পাশে ওই, ঢেউয়ে ডুবে যাইতেছে; ভেসে উঠতেছে একটু আবার। দূর থিকা দূরে, ভেসে যাইতেছে শে। আর আমার ভাঙা নাওয়ে পানি ওঠে  খালি, ভুস ভুস।

শি কয়; ইস, কী সুন্দর ন্যাচারাল ফতোয়া দিতে পারো তুমি!

তার চোখে ভেসে যাইতেছিলো এতো এতো পানি, স্বচ্ছ ও গভীর; ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমি চোখ সরাইয়া ফেলি আর বিলের পানিতে ভেসে যাওয়া কোন শাপলা-শালুকের কথা ভাবতে থাকি।

 

নিরবতা

বামহাতে মোবাইলফোন আর ডানহাত আরেক কানে রেখে, ঘুরে ঘুরে কথা কয় শি। বিদেশি কল মনেহয়। অনেকবেশি অ্যাটেনশন রিকোয়ার্ড। বিশেষ কইরা যখন কথা হইতেছে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজে এবং মানুষগুলি অনেক দূরে। এইরকম সাবধানতা আমরাও মেইনটেইন করি। প্রেম আসলে একটা ফ্রেন্ডশিপ- এইরকম ভুয়া কথা-বার্তা বলাও দরকার মনেহয়। কিছু কিছু বলা ত যায়; মানে, বলতেই পারি। নিরবতার কাছেই আমরা বন্দী, মেইনলি। আমাদের নিরবতা আরো কথা কইতেই থাকে। কই থিকা কই যে সে নিয়া যায় আমারে, আমাদেরকে!

ফোন রাইখা ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে আইসা দাঁড়ায় শি। ক্লান্ত লাগে তারে। তারপরেও, শে ত হাসে। কয়, আসো, নিরবতার প্যানপ্যান তোমার শুরু করো আবার, তাইলে!

 

Leave a Reply