মে দিবসের গান
একটা প্রলেতারিয়েতদের বিপ্লব হওয়ার কথা ছিল,
সেইটা যে হইতেছে না – লেবার’রা এইটা জানে না,
এখন রেভিউলেশন হয়তো হইতে পারে, কিন্তু এর
লাইগা অদেরকে শ্রমিক হইতে হবে, রেভিউলেশন
করার চাইতে তো অইটা আরেক প্যারা, শরমিক
হওয়ার পরে নিজেদেরকে লেবার বইলা অপমান
করা যাবে না, মানুশ হইতে গেলে আবার ষ লেখা
লাগবে, শ দিয়া হবে না; তাইলে ইদের আগে বেতন
কি দিবে অরা? না, বোনাস-ই দিবে, বেতন বাকি
থাকবে মনেহয়, অইটা ব্যাকারণ-সম্মত হবে কিনা
পে-রোলের বাংলা কি হবে? এইসব ডিসিশান নিতে
টাইম লাগবে তো আরো… ততদিনে কুরবানি চইলা
আসবে, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হইতে হইতে গলার জোর
কইমা আসবে, চামড়া ঝুইলা আসবে, কাশি কাশি
লাগবে, কিন্তু আমাদের জিদ কমবে না, আমরা তো
একটা কিছু করতে চাইছিলাম, জীবন-যৌবন দিয়া
এনজয় করছিলাম বিপ্লব-বিপ্লব খেলা আর ভালোও
বেসেছিলাম, এ-কার দিবো নাকি আ-কার ঠিক কর
তে পারতেছিলাম না বইলা দেরি হইতেছিল, বলতে
ছিলাম, একটা প্রলেতারিয়েত বিপ্লব হওয়ার কথা ছি
ল, লাইনে জায়গা নিতেছিল না, আর চুতমারানিরা
বুঝছো, নিজের ভালোটাও তো বুঝে না, বুঝাইতে
বুঝাইতে আমাদের জীবন-যৌবন, বুঝছো, যাইতেই
থাকলো, গান গাইয়া, কবিতা লেইখা, প্রথা-বিরোধী
হয়া, তারপরও আমাদেরই থাকতে হইলো, দুয়েক্টা
প্রাইজ-টাইজ ছিল না, কিন্তু অনেক মদ ছিল, ছিল
না আসলে, আমরা ভাবতামও না, কি কি আমাদের
ছিল, যা ছিল না, তা নিয়া চিল করতাম খুব, বিপ্লব
জিনিসটাই খালি হইতে হইতে হইলো না, কিন্তু হবে
বুঝছো, আমরা ট্রেনিং নিতেছি, তোমাদেরও বুঝায়া
শিক্ষিত কইরা ফেলবো, তখন তোমরা বিপ্লবের মুড়ি
খাবা, আর আমরা, বটগাছের তলায় বাঁশি বাজাবো
পোঁ পোঁ পোঁ, পোঁ পোঁ পোঁ, পোঁ পোঁ পোঁ, পটাস…
ঝড়
একটা গাছের ছায়া, গাছ’টারে বলতেছে,
“হেই, তুমি এতো তাউরাইতেছো কেন?
আমার ডিস্টার্ব হইতেছে তো!”
আমি বইলা যা যা কিছু আছে, থাকতে চাইতেছে…
আমি হইতেছি ব্রিজ
আমি হইতেছি ব্রিজের নিচের ট্রাবল ওয়াটার,
আমি ব্রিজের নিচে স্রোতের পানিতে ডুইবা যাওয়া স্মৃতির অন্ধকার
আমারে দেখে চাঁদ, একটা টর্চের আলোর মতো
আমারে শোনে রাতের ট্রেন, তার ঝিক ঝিক ঝিক আওয়াজের মতো
আমারে আদর করে দেয় ঝড়ের শেষের একটা শান্ত বাতাস; বলে, ঘুমাও তো!
আমি অন্য কোন পথ, যেই পথ তুমি হাঁটো নাই
আমি অন্য কোন আত্মা, যার বাঁইচা থাকাটারে তুমি ভয় পাও
আমি যে কোন একটা সময়, ধীরে ধীরে নাই হয়া যাওয়া, একটা ঘটনা
জুতা কাহিনি
ইগো’র জুতাগুলা
পায়ে পড়ার পরে
তুমি খুলতে ভুলে গেছো
এইটা আমাদের ঘর
তোমার জুতাগুলা
খুইলা আসো
বসো,
কথা বলি, জুতাগুলা
খুইলা রাখার পরে, আমরা
আম্মা
মানুশের প্রতি মানুশের যেই (আন-কন্ডিশনাল) দয়া,
মানুশের প্রতি মানুশের যেই (কোন কারণ ছাড়াই) মায়া,
সেইটাই হইতেছে আমাদের মা, মায়ের ধারণা, মাদারহুডের ঘটনা
বৃষ্টি
বৃষ্টি
মাটির মতন
আমাদের মন’রে
নরোম করে,
যেন কোন
বীজ
চারাগাছ
হয়া উঠতে
পারে
কাফকা
একদিন রাতে
ঘুমাইতে না পাইরা
একটা তেলাপোকা
অস্থির হয়া ভাবলো,
আরে, আমি তো আসলে
গ্রেগর সামসা
ঈদের দিনের মতন
এই জীবন,
ঈদের দিনের মতন
আমরা জানি যে
সেলিব্রেট করতে হবে,
হাসি-খুশি থাকতে হবে
কেউ কেউ তা পারতেছে
মনেহয়, ভাইবা আমরাও
ভালো কিছু খাই,
নতুন কিছু পরি
নিজেদেরকে বলি,
আরে, আমরা তো সেলিব্রেট করতেছি!
আমরা তো হাসি-খুশি আছি!
ঈদের দিনের মতন
জীবনের দিনগুলাও
আমরা সেলিব্রেট করতে চাই,
হাসি-খুশি থাকতে চাই
আর বুঝি যে
জীবন এইরকমই
কোনকিছু বুঝতে পারার আগেই
পার হয়া যাওয়ার মতন
যেন একটা ট্রেন
সামনের রেললাইন দিয়া চলে যাইতেছে
চলে যাওয়ার পরে মনেহয়
আন-রিয়েল, যেন ঘটে নাই
এই ঘটনা কোনদিন, প্রতিটা দিনের মতন
মদখোর কল্যাণ সমিতি
ঈদ,
৩০ দিন রোজা রাখার পরে
ঠান্ডা বিয়ারের গ্লাসে ফার্স্ট সিপ
রাইটার্স ব্লক
সূর্য উঠার পরে
একটা রাতা-মুর্গি যেমন
চুপ কইরা থাকতে পারে না
ডাকতে থাকে, কুক্কউরুকু, কুক্কউরুকু!
বলতে থাকে, উঠো!
এইরকম
শব্দগুলা আমার ভিতর
চিল্লাইতে থাকে, লিখতেছো না কেনো
আমারে তুমি! বলতে থাকে, লেখো!
নিরব শহর
নিরব শহর, কোন হাউকাউ নাই
কি শান্ত, ছিমছাম রাস্তা
রিকশার ক্রিং ক্রিং নাই, গাড়ির হর্ন নাই
হুট কইরাই হর্নি হয়া উঠতেছে না কেউ,
সাজানো-গোছানো বাসার ড্রয়িংরুমের মতন
‘সুস্থ-ধারার চলচ্চিত্রের’ মতন
ফিল-গুড কোটেশনগুলার মতন
এইরকম শহর আমারও পছন্দের
কিন্তু আমি ভাবি এমন একটা নিরবতার কথা,
যেইখানে হাজার হাজার লাখ লাখ মানুশ
জেলখানার বন্দিদের মতন চুপ কইরা আছে,
আর যারা নিজেদের সেল থিকা
চিল্লায়া উঠবে একটু পরেই,
চিল্লাইতে চিল্লাইতে
নিরবতার দেয়ালগুলারে ভাইঙ্গা ফেলবে,
যেইভাবে অনেকগুলা ছোট ছোট মাছ
গিইলা ফেলে একটা হাঙর
থম-ধরা একটা ঝড়, যা শুরু হবে যে কোন সময়
বিশাল একটা ঢেউ, যা আছড়ায়া পড়বে, আর
কোনকিছুই থাকবে না আগের মতন
নিরবতা, কেউ কথা বইলা উঠবে বইলাই সুন্দর
হাজার হাজার মানুশের একই সুরে গান গাওয়া
হাজার হাজার মানুশের একই অধিকারের কথা বলা,
এই হাঙরের মতন নিরবতার চাইতে সবসময়ই সুন্দর
নিরব শহর, তুুমি অই নিরবতা ভাঙ্গতে পারবা কখোন?
বৃষ্টি
যে কোন পুরান কথা,
মনে না করতে পারার মতন
আবার নতুন কইরা দুঃখ না পাইয়া,
বরং দুঃখের কথা মনে কইরা হাইসা ফেলার মতন
বৃষ্টি, সুন্দর!
না-থাকা
আমি নাই তোমার মনে
তোমার মনে থাকে
আমার একটা না-থাকা
মিথের শক্তি
একটা বলদ আরেকটা বলদ’রে বলতেছে,
“বুঝছো, আমরা তো সুন্দর! আল্লা আমাদেরকে
সুন্দর কইরা বানাইছে, কি করবো বলো…”
এই কথা কথা শুনতেছিল একটা ছাগল,
দিন শেষে সে বাড়িতে ফিরা মুর্গিরে কইলো এই কথা,
“খালি কি বলদ’রাই সুন্দর?”
মুর্গি’টা যখন তারে সাত্বনা দিতেছিল, বলতেছিল
“না, না, ছাগলও সুন্দর…”
মুর্গির বাচ্চা’টা তখন ঘুমায়া ঘুমায়া
শুনতেছিল অদের কথা,
যেহেতু সে ঘুমাইতেছিল, পুরাটা শুনে নাই
সকালবেলায় একটা চিল
ছোঁ মাইরা নিয়া গেলো মুর্গির বাচ্চাটারে,
তার ঘুম তখনো ভাঙ্গে নাই,
তারে গিইলা ফেলার আগে,
বলতেছিল সে, “বলদ’রা সুন্দর…”
চিল ভাবলো এইটা মন্ত্র কোন, গোপন কথা
স্বপ্নে-পাওয়া-মহৌষধ
আর আকাশে-বাতাসে ছড়ায়া দিলো এই বাণী,
একটু চেইঞ্জ কইরা –
“বলদরাই সুন্দর!”
তার এই ধর্ম-কথা চিল-সমাজ মানে নাই,
অইখানে নাস্তিকের সংখ্যাই বেশি, কিন্তু
আরো আরো পশু ও পাখিরা নিজেদের মতন
জাইনা নিলো, বলাবলি করতে থাকলো এই কাহিনি
শুওর’রা ঘোঁত ঘোঁত করলো,
ঘোড়ারা ঘাড়েই নিলো না
হাতি’রা হাসলো
খালি ভেড়াদের সমাজ এই কথা মাইনা নিলো,
যখন অরা হাঁটতে পারে না, বোবা চোখ নিয়া
তাকায় থাকে চারপাশে, লস্ট একটা ফিলিংস হয়
তখন অরা মন্ত্রের মতন বলে, “বলদরাই সুন্দর!”
এইটা হইতেছে, ভেড়াদের সমাজের
“দেজা ভ্যু!” এখন
মানবজনম
বিকালের লম্বা
গাছটার ছায়া,
গাছ’টারে বলতেছে,
“আমারে
স্যার ডাকবা!”
ঢাকার সাহিত্য-সমাজ
দুইটা গরু’র মধ্যে
কোনটা ভালো ঘোড়া?
এই নিয়া তর্ক করতেছে কয়েকটা গাধা
বাইরের দুনিয়া
চোখের সামনে যা কিছু দেখানো হয়,
এর বাইরে যে কিছু দেখতে চায় না, সে হইতেছে কানা।
কানের ভিতরে যেই আওয়াজ যায়,
এর বাইরে যে কিছু শুনতে চায় না, সে হইতেছে বয়রা।
যা কিছু বুলি তারে শিখানো হইছে
এর বাইরে যে কিছু বলতে পারে না, সে হইতেছে বোবা।
কানা, বয়রা আর বোবাদের দুনিয়ায় যদি
আপনারে দেখা না যায়, আপনার কথা শোনা না যায়
আপনার কথা-বলা হয় না বইলা বলা হয়, তাইলে
এর লাইগা আপনি কানা, বয়রা আর বোবা হয়া যাইয়েন না,
এইটুক করতে পারি আমরা।
যে দেখে না তারে বলতে পারি না, দেখেন!
যে শুনতে পারে না তারে বলতে পারি না, শুনেন!
যে বলতে পারে না তারে বলতে পারি না, বলেন!
এইটা উনাদের নিয়তি না, উনাদের চয়েস
উনারা ঠিক কইরা নিছেন।
আপনিও আপনার’টা চুজ করেন।
যা কিছু দেখা যায় না তারে দেখান!
যেই কথা শোনা যায় না তারে শোনান!
যেই কথা বলা যায় না তারে বলেন!
যারা একটা ডেফিনেশনের ভিতর আপনারে আটকায়া ফেলতে চায়,
তাদেরকে বলেন, “তোমাদের পথ তোমাদের,
আর আমার পথ হইতেছে আমার।”
যারা দেখে আর যারা দেখতে চায় না,
যারা শোনে আর যারা শুনতে চায় না,
যারা বলে আর যারা বলতে চায় না,
তারা কখনোই একই মানুশ না!
রিলেশনশিপ নিয়া তিনটা এডভাইস
“ক্ষতস্থান ঢেকে রাখুন”
“অযথা চুলকায়া ঘা বানাবেন না”
“টিটেনাসের টিকা নিন”
ছোট-বড়
ছটাকের বাটখারা’টা
কইলো একটা এক মইণা এক বস্তা’রে
“ভাই, আপনার তো সাইজ-ই ঠিক নাই!
নিজেরে চেইঞ্জ করেন!”
এর পরে এক মইণা বস্তাটা
পইড়া থাকে গুদামের একটা কোণায়,
কান্দে; কয়, “কেউ আমারে বুঝলো না!”
ছটাক’টারও খারাপ লাগে তখন
কয়, “আমি তো তোমারে ভালোবাসতেই চাই,
কিন্তু তোমার এটিটুড তো ঠিক নাই!
আর এইটা তুমি বদলাইতেও পারবা না।”
এক মইণা বস্তা’টা ভাবে,
কোন না কোনদিন ছটাক’টা হয়তো
এক মইণা একটা বাটখারা হইতে পারবে।
আর ছটাক’টা ভাবে,
চাইলেই এক মইণা বস্তা’টা
ছটাকের মাপে কি নিজেরে সাজাইতে পারতো না?
ভাবে, আর অরা ভালোবাসে, অদের না-পারা’গুলারে…
গরমের দিনের ড্রিম
আমরা একসাথে চুপ কইরা আছি।
আমরা টায়ার্ড। আমরা দম নিতেছি।
আমরা এই গরম বাতাস টেনে নিতেছি আমাদের ভিতর।
আমাদের ভিতরটা পুড়ে যাইতেছে।
আমরা একসাথে চুপ কইরা আছি।
আমাদের নিরবতাগুলা থম ধইরা আছে।
এতো গরম পড়ছে! ঝড় কি হবে না কোন, এরপরেও!
আমরা আমাদেরকে জিগাইতেছি।
আমরা এই গরমের দিনের মতোই অসহ্য হয়া উঠতেছি।
আমরা জানি, ঝড় হবে। আমরা জানি বৃষ্টি হবে।
এই অসহ্য দিনগুলা সবসময় থাকবে না।
এর শেষ হবে।
কিন্তু এই দিন আমরা আর নিতে পারতেছি না।
গরমের ভিতরেই আমরা ঘুমায়া পড়ি।
ঘুম থিকা জাইগা উঠি।
অপেক্ষা করতে থাকি আর নিজেদেরকে জিগাইতে থাকি
এর কি কোন শেষ নাই!
আর জিগাইতে গিয়াই বুঝি, আমরা আসলে কিসের শেষ চাই।
এই গরমের দিন আরো গরম হইতে থাকে।
জুলুমের দিন আরো প্রোলংগ হইতে থাকে।
আমরা জানি গরমের দিন যতোই লম্বা হোক,
বৃষ্টি একদিন নামবেই।
আমরা একসাথে চুপ কইরা থাকি।
আমরা একসাথে কথাও বইলা উঠতে পারি।
আমাদের কথাগুলা একদিন বৃষ্টির মতন, সেন্সরহীন
বাইজা উঠতে থাকবে।
আমরা বৃষ্টির দিনের মতন কথা কইতেই থাকবো, কথা কইতেই থাকবো…
আমাদের নিরবতাগুলা আমাদের কথাগুলার ভিতর হাইসা উঠবে
কি যে সুন্দর! কি যে সুন্দর!
আমরা একসাথে চুপ কইরা থাকি।
আমরা একসাথে কথাও বইলা উঠতে পারি কোনদিন।
বৃষ্টির ফোটাগুলা তখন হাসতে থাকবে আমাদের সাথে।
বলবে, আমি জানতাম! বুঝছো, আমি না এইটা জানতাম!
আর নিয়তির মতো তখন আমরা সত্যি হয়া উঠবো একদিন।
বারো আনা
এইসব রিয়ালিটি, বাস্তবতা
এইগুলা হইতেছে চাইনিজ মাল,
বেশি দিন টিকে না, বুঝছো!
আমি বুঝাইতেছি তোমারে
আর তুমি উদাস
গরমের দিনের দুপুরে
নদীর পাড়ের বাতাসের মতো
দূরের চর’টাতে আটকায়া আছো
রিয়ালিটির রইদে
আমাদের শরীর পুইড়া যাইতেছে
কাপড় ভিইজা যাওয়ার ভয়ে
আমরা নদীতেও নামতে পারতেছি না
বব ডিলান
যেই পথে আমরা হাঁটতে থাকি,
আমরা টের পাই
অই পথে আছে,
তোমারও পায়ের ছাপ
মাটির পথ অইটা
কাদা-মাখা
আর পিছলা
গরুর গাড়ি’র চাকা
আটকায়া যায়
আর আমরা হাসি,
“দেখ, সোনার তরী
একটা!
রাস্তা দিয়া হাঁইটা যায়!”
তোমার হাসিও
আমরা শুনি
মাথার বোঝা
রাস্তার সাইডে রাইখা
আমরা জয়নুল আবেদিনের
দ্য স্ট্রাগল ছবিটার ভিতরে ঢুইকা যাই
তখন একটা গান
তখন অনেকগুলা গান
বাজতে থাকে আমাদের মাথার ভিতর
এই গান তো কান্ট্রি সং!
বলে একটা কুকিল
আর
কাক হয়া আমরা গ্রাম-বাংলার
আকাশে বাতাসে উইড়া যায়
আমরা গান গাই
আর আমরা জানি
এর মধ্যে কয়েকটা গান
(তুমি না লিখলেও, তুমি না গাইলেও
তুমি না জানিলেও…)
তোমার
সব চরিত্র কাল্পনিক
মেয়েটা যে কতো চেষ্টা করতেছে মেয়ে হইতে!
শে বলতেছে, শে আসলে একট্রেস, কিন্তু অভিনয়
করতে চায় না, শে ক্যামেরা চালাইতে জানে, ইনভিজিবল
থাকতেই তাঁর ভাল্লাগে, ক্যামেরার পিছনে; শে তাঁর ফ্যামিলি’তে
অনেক আদরের ছোটবোন, তার অনেক ক্লোজ-ফ্রেন্ড আছে
আর একটা বয়ফ্রেন্ডও আছে (বইলা শে হাসতেছে একটু), আর শে আসছে
তাঁর টিনএইজ বয়সের প্রেমিকের সাথে দেখা করতে, তারে
কমলা ছিলায়া দিতেছে, তার ছবিও শে আঁকবে একটা ফুল-তোলা ডাইরিতে,
কথা দিছে; ছবি আঁকা হইলে অইখানে প্রেমিক
কবিতা লিইখা দিবে। অরা পুরান দিনের গল্প করতেছে।
পুরান দিনের মতো সুন্দর রইদ বাইরে।
মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডটা আসতেছে, কল করতেছে,
শে এখন চলে যাবে। আবার শে আসবে।
পুরান প্রেমিকাদের আর কি কাজ, ফিরা ফিরা তারা খালি
আসতেই থাকবে, তাঁদের নতুন প্রেমের গল্প নিয়া
অরা খালি হাসে, ভালো থাকে আর ভালোইবাসে,
আর পুরান প্রেমিকটা যেন তাঁরই পুরান প্রেমিক, সেই রোলে
অভিনয় করতে করতে ভাববে, মেয়েটা যেই সিনেমাটা বানাবে
বইলা ভাবতেছে, যেই সিনেমা শে কখনোই বানাবে না, সেইখানে
এইসব দিনের কথা কি থাকবে? শে কি এই গল্পটারে কাহিনির ভিতরে
নিয়া আসতে পারবে? সে যদি তার প্রেমিকারে নিয়া তাঁর
বাসায় যায়, তাইলে শে কি সারারাত ধইরা বইসা বইসা
গল্প না কইরা, নতুন প্রেমিকার লগে তারে তাঁর বিছানায়
শুইতে দিবে? তাঁর তো নতুন প্রেমিক আছে, আরো একজন খালি
বলতে চায় তার দুঃখের কথা তাঁরে, তার কথাও শে শুনে, আর
তাদের সবাইরে নিয়াই পুরান প্রেমিকরেও শে তো ভালোইবাসে;
আমাদের বর্তমান আর কি জিনিস! এইরকম কিছু অতীত-ই তো, নাকি?
শে তাঁর প্রেমিকরে জিগায়, প্রেমিক জানে, তারে পুরান প্রেমিক
হয়াই থাকতে হবে, আর সে বলে, হ, এইরকমই, এইরকম একটা কিছুই হবে…
কবিতা লেখার একটা তরিকা
কবি হইতে গেলে ফার্স্ট কাজ হইতেছে, কবি হইয়েন না।
আর্টিস্ট হইতে গেলে ফার্স্ট কাজ হইতেছে, আর্টিস্ট হইয়েন না।
পলিটিক্যাল লিডার, ভালো মানুশ, ভালো মা, ভালো বাপ, ভালো পার্টনার…
এইরকম যা যা আপনি হইতে চান, তারা যা যা কিছু হয়া আছে
তার ভিতর দিয়া সেই জিনিসটাই আপনি হইতে পারবেন না।
যদি কিছু হইতে চান, সেই জায়গাটা আসলে আপনারে বানায়া নিতে হবে।
তৈরি করতে পারার কষ্টটা করতে হবে।
যা কিছু হয়া আছে, তারা আসলে কিছু হইতে না দিতে চায় না।
আর কোন কিছু হইতে হবে, এইটা তো কোনদিনই জরুরি না।
কবি না হয়া কবিতা লেখতে পারাটা আরো ভালো।
আর্টিস্ট না হয়া ছবি আঁকতে পারাটা।
প্রেমিক না হয়াও কাউরে ভালোবাসতে পারাটা।
ভালোবাসতে পারলে তখন সেইটা টের পাইতে পারবেন ভালো কইরা।
একটা কিছু হওয়া সবসময় একটা কিছু না-হওয়ার দিকে
আমাদেরকে নিয়া যাইতে থাকে।
আর যখন ঐ অপজিট’টা সামনে চইলা আসে,
বুউউমমমম! কইরা ফাঁপা পলিথিনের ভিতরের বাতাসের মতো
হাওয়া হয়া যায় হঠাৎ কইরা,
তখন মনে হবে, ধুর বাল!
এইসব কবিতা কবেই তো আমরা না-লেইখা ফালায়া দিছি!
কবি তো হইতে হবে, মন থিকা!
কবিতা আসতে হবে খুবই গভীর কোন ফিলিংস থিকা!
এইসব মোস্টলি ভুয়া কথা।
একটা কুয়া যতোই গভীর হোক, কোন শব্দ সে দিতে পারে না
একটা ইকো ছাড়া!
নিজের ভিতরে অইটুক পানি বাঁচায়া রাখবেন।
আকাশের দিকে মুখ তুইলা রাখবেন।
কেউ যদি তার কথাগুলা বলতে পারে আপনার কাছে আইসা
সে যেন তার কথাগুলারে শুনতে পারে আবার।
এইটুকই কবিতা।
এইটুক করার লাইগা নিজেরে খুঁড়তে হয়।
নিজের চারপাশে পাড় দিতে হয়।
আর পানিটুক ধইরা রাখতে হয়।
কবিতা এইটুকই।
অপেক্ষা করতে থাকা।
যদি কেউ আসে, যদি কেউ তার কথা বলে, যেন সে নিরাশ না হয়।
কবিতার ভালো হওয়ার দরকার নাই।
কবিতা খারাপও হইতে পারে না আসলে।
কবিতা হইতেছে দুপুরবেলার একটা একলা থাকার ঘটনা
যেইখানে যে কেউ যে কোন কথাই বলতে পারে,
ভাবতে পারে, হায়, হায়, এই কবিতা’টা কেনো আমিও লেখলাম না!
লস্ট সৌল
রাস্তার গর্তে
যেইখানে জমছে বৃষ্টির পানি,
অইখানে চাঁনটা কাঁপতেছে, একটু একটু
একটা কুত্তা
যে আগের জন্মে
বুদ্ধ হইতে চাইছিল
সেই চান্দের দিকে তাকায়া
নিজেরে দেখতেছে, আর
কিছুই মনে করতে পারতেছে না
শুক্রবারের দুপুরের ঘুমের মতো
জীবন,
একটা শুক্রবারের দুপুরের ঘুমের মতো ডিপ
যেন মাছ সাঁতরাইতেছে নদীর পানির ভিতর
আর তার উপরে রইদ করতেছে চিক চিক
কলব
তোমার দেখার বাইরে,
আমি তাইলে কে?
একটা আয়না জিগাইলো,
তার চেহারাটারে।
Leave a Reply