সমাজের নৈতিকতাই হইলো আইনের রিয়ালিটি

এইটা নতুন কোন কথা না। জাস্ট আরেকবার বলা। এখনকার আওয়ামীলীগ সরকার যে অবৈধ, সেইটা যতোটা না আইনি রিয়ালিটি তার চাইতে সামাজিকভাবে অনেকবেশি অ-নৈতিক একটা ঘটনা। সমাজের এগজিস্টিং নৈতিকতার বেসিসেই আইনি রিয়ালিটিগুলা ক্রিয়েট হয়। এই কথাটা আবার মনে হইলো টু কিল অ্যা মকিংবার্ড সিনেমাটা দেইখা।

এইটা একটা ভালো-সিনেমা, যেইখানে সিনেমার ‘আইডিয়া’টা হাইরা গিয়াও জিইতা যাইতে পারে। কেয়ামত সে কেয়ামত তক-ও একটা ভালো-সিনেমা। কেয়ামত-এ যেইরকম নায়ক-নায়িকা মারা যাওয়ার পরেই ফিল করা যায়, প্রেম মরে না! সেইরকম মকিংবার্ড-এও টম রবিনসন’রে ডেপুটি শরিফ মাইরা ফেলার পরেই ফিল করা যায় যে, সব কালা-মানুষরাই খারাপ না!

মকিংবার্ডে আরোকিছু জিনিস আছে, ভালো-সিনেমা হওয়ার বাইরে। এইটা কালা-মানুষদেরকে সমাজে অ্যাকোমোডেড করার সাজেশন দেয় সামাজিক নৈতিকতার ধারণারে এক্সটেন্ড করার ভিতর দিয়া। মাইয়াদেরও ডিজায়ার আছে এবং পাগলরাও ভালো। এইরকম।

সিনেমাটা যারা দেখছেন বা উপন্যাসটা যারা পড়ছেন, তাদের কাহিনিটা জানা থাকার কথা। লিটারারি ফর্ম হিসাবে এইটা ‘যখন আমি বাচ্চা ছিলাম’ টাইপের ব্লগ-রচনা। তারপরও এইটার পুলিৎজার প্রাইজ পাওয়া, সিনেমা বানানো এবং হিট হওয়ার কারণ মেইনলি এই মামলার ঘটনাটাই। যেইখানে একজন কালা-বেটা’রে আসামি করা হইছে একজন শাদা-বেটি’রে রেপ করার অভিযোগে। আর যে বাচ্চা-মাইয়াটা কাহিনিটা বলতেছে তাঁর বাপ হইলো কালা-বেটার উকিল। এই সিনেমা পেশা হিসাবে ওকালতি’রেও মহান করতে পারার কথা। মামলার সময় উকিল, যে হইলো বাচ্চা-মাইয়াটা’র বাপ এবং তাঁর ও সিনেমার হিরো, দেখাইতে পারে যে, কালা-বেটাটার বামহাত অচল এবং সে ভালো-মানুষ। তারপরও সে শাদা-বেটিরে দোষী করে না কারণ শে একটা অপরাধবোধের জায়গা থাইকা বাঁচার লাইগা কালা-বেটারে অ্যাকুইজ করছে – অ্যাজ অ্যা হোয়াইটওমেন যেই ডিজায়ার তার থাকার কথা না, সেইটা তার ছিল। তারে আপনারা মাফ কইরা দিয়েন!

কালা-বেটা’র স্টেটম্যান অনুযায়ী শে বলে যে কোন অ্যাডাল্ট পোলা তারে কখনো কিস করে নাই! তখোন ত ডিজায়ারেবল-অবজেক্ট হিসাবে মাইয়াটার ইমেজ কালা-বেটা’টার চাইতেও নিচে নাইমা যায়! তবে ভয়ংকর জিনিস যেইটা মনেহয়, যেই ডিজায়ার কালা-বেটাদের আছে বইলা ভাবা হয়, সেইটা নাই বইলাও শে টের পায়। আর এইটা ট্রমাটিক একটা ঘটনা হওয়ার কথা শাদা-বেটিদের লাইগা। নিমফোম্যানিয়্যাকেও এইটা আছে, কালা-বেটাদের খালি সেক্সুয়াল ডিজায়ার না, আরো কি কি জানে আছে, যেইটা শাদা-বেটি বুঝতে পারে না। তবে এই কালা-বেটা’টা ভালো, কারণ সে বুঝতে পারে যে তার ব্ল্যাকনেসের জায়গা থিকা হোয়াইটওমেনরে ডিজায়ার করার মানে তার মরার রাস্তা ওপেন করা। সোসাইটি হইতেছে হোয়াইট-পিপলদের, ব্ল্যাকরাও সেইখানে থাকতে পারে এখন, এরবেশি কিছু না। এই লিমিট মানার কারণে তারেও মাফ কইরা দেয়া দরকার।

এই জিনিসটা খুব বোল্ডলিই আছে যে, সমাজের নৈতিকতা আইনি প্রমাণের চাইতে বড় জিনিস বা আইনের যে ইমপ্লিমেন্টশন সেইটা আসলে সমাজের নৈতিকতার ভিতর দিয়াই ইন্টারপ্রেটেড হইতে থাকে। ক্লিয়ার ইন্ডিকেশন থাকার পরেও টম রবিনসন’রেই দোষী বইলা রায় দেয় জুরি’রা, সামাজিক নৈতিকতার বেসিসে আইনরে ইন্টারপ্রেট করতে পারার রিপ্রেজেন্টেটিভ যাঁরা।

এর আগে, যদিও যুক্তি দেয়া যায়, প্রমাণও করা যায়, তারপরও গড-এর নামে সুবিচার চাইতে থাকেন উকিল। একজন শাদা-আদমি হিসাবে তিনি কালা-মানুষের আইনি-অধিকার’রে যে সার্পোট করেন, সেইটা শাদা-আদমিদের সমাজের টোটাল সার্পোটের চাইতে কম না, বরং বেশি; কারণ তিনি ইন্ডিভিজ্যুয়াল এবং একজন ইন্ডিভিজ্যুয়ালই সোসাইটির এক্সটেন্ডেড ভ্যালুরে আপহোল্ড করতে পারে। অন্যদিকে, জুরিরা অ্যাজ অ্যা হোল আপহোল্ড করেন সমাজের এগজিস্টিং নৈতিকতারে, কারণ ট্র্যাডিশন’রে ভাইঙা ফেলতে পারেন না তারা, তারা ত আর ইন্ডিভিজ্যুয়াল না। ইন্ডিভিজ্যুয়াল অ্যাক্টের মধ্যে সোসাইটি’র ধারণা’রে পার হওয়ার একটা ব্যাপার থাকে; আর যে কোন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটি হইলো ইন্ডিভিজ্যুয়ালরে নেগলেজিয়েবল বইলা প্রুফ করার একটা ব্যাপার। ইন্ডিভিজ্যুয়াল এর এই যে ধারণা, এইটা কখনোই ওই জায়গাটাতে যাইতে পারে না যে, সোশ্যাল বইলা কোনকিছু নাই আসলে, কারণ তখোন ইন্ডিভিজ্যুয়ালও থাকতে পারে না।

তখনকার সোসাইটি একটা শাদা-বেটারে শাস্তি দিতে পারেন না একটা শাদা-বেটিরে মাইর-ধর করার লাইগা। বরং কালা-বেটা যে শাদা-বেটি’রে ডিজায়ার না-কইরাও থাকতে পারে, এইটারে ইম্পসিবল ভাবতে পারে। সব কালামানুষ-ই খারাপ না – এইটা মাইনা নেয়ার মানে হইলো কালা আর শাদা একই জিনিস, আদমি আর মানুষের মিনিং একই! শইলের কালারের কোন সিগনিফিকেন্সই আর নাই! সোসাইটি ওই জায়গায় যায় নাই এখনো – ব্যাপারটা ওইরকম না খালি, এইটাই যদি হয়, তাইলে ইন্ডিভিজ্যুয়াল-এর আর কাম কি? এইকারণে সোসাইটির কাছেই আপিল করেন উকিল, তার ইন্ডিভিজ্যুয়ালিটি দিয়া; গড-এর নামে, কারণ দেখেন, বাইবেল-ই একমাত্র বই যেইটা ব্ল্যাক এবং হোয়াইট দুই কালারের লোকেরাই হাত রাখেন।

জুরি’রা দোষী বলেন কালা-বেটারে; তারপরও শাদাপিপলরা বুঝতে পারে ঘটনাটা; তখন একজন ইন্ডিভিজ্যুয়ালই আগাইয়া আসেন। ক্রস-ফায়ারে টম রবিনসনরে মারার খবরটা পাই আমরা, অডিয়েন্স, মানে সোসাইটি-পিপল যারা। মানে আমরা ইন্ডিভিজ্যুয়ালই, যখন ঘটনাটা বলা হয়, দেখানো হয় না, এই না-দেখাটা সোসাইটিরই একটা সিম্বল আর আমরা যে জানতে পারলাম এবং ইমাজিন করতে পারলাম, এইটা আমরার ইন্ডিভিজ্যুয়াল ট্যালেন্টই একরকমের। হইতে পারে এইটাই ক্রসফায়ারের প্রথম ঘটনা না। শেরিফ আইসা কয় যে, টম রবিনসন (কালা-বেটা’টা) পালাইতে গেছিল, শালা এতো জোরে দৌড়ায়, তখন ডেপুটি-শেরিফ তারে গুলি কইরা মারে। আবারো, ইন্ডিভিজ্যুয়াল অ্যাক্টই আপনার সোসাইটিরে বাঁচাইয়া দিতে পারে!

এখন ইন্ডিভিজ্যুয়ালরে কে বাঁচাইবো? বাচ্চা-কাচ্চাদের? বা প্রতিশোধের যে আগুন? সেইটা নেচার। আর নেচার হইলো, পাগল। বদ্রিয়াঁ ত কইছেন যে, এমন না যে হিস্ট্রি বিকামস ফার্সিক্যাল, বরং ফার্সিক্যাল বিকামস দ্য হিস্ট্রি।

অবশ্য এখন আর সোশ্যাল ইস্যু’র দরকার পড়ে না সিনেমা বানাইতে গেলে। এলিয়েনরা আছে। ওরাও ভালো। তারপরও সমাজ-এর যে ‘আইডিয়া’. সেইটা একটা না-নেয়ার নৈতিকতার ভিতর দিয়াই অপারেট করতে থাকে। মিথ অফ অর্ডিনারি পিপল-ই হইলো আর্ট করার মিনিমাম একটা শর্ত। আপনি যে একটা জিনিস বুঝতে পারতেছেন তার মানে হইলো এইখানে আরো অনেকেই আছে যারা বুঝতে পারতেছে না; কারণ তারাও যদি এইটাই বুঝতে পারে তাইলে আপনার বুঝতে পারা আর অপারেট করে কেমনে!

ইন্ডিভিজ্যুয়াল মকিংবার্ডের গানে ও কথায়, সোসাইটিরে ডিফেন্ড করতে পারতেছি তো আমরা, ঠিকঠাকমতো?

এই কাহিনি ১৯৩০-এর দিকের, আম্রিকার। লেখা হইছিলো ১৯৬০-এ।

 

নভেম্বর, ২০১৪।

 

 

Leave a Reply