উৎপল-এর কবিতা পড়ছি, ভাবছিও অনেক। একজন কবি আসলে কি নিয়া কবিতা লিখবো – এইটা ঠিক করার পর কবিতা লিখতে বসেন না, কিন্তু কবিতা লেখার পর থিকাই আসলে এই প্রশ্নটা আসতেই থাকে যে, কেন লেখা হইলো কবিতাটা? কেন লিখতেই হইলো?
আমরা এইভাবেই অভ্যস্থ আসলে, কবিতা পড়তে। কিন্তু একটা কবিতার মূল উদ্দেশ্য তো আসলে প্রথমে কবিতা হয়া উঠা। একটা কবিতা কিভাবে কবিতা হয়া উঠলো কিংবা হইতে পারলো না, সেইটাও হইতে পারে কবিতারই বিচার; কবিতার সামাজিকতা, রাজনৈতিকতা, দার্শনিকতা নিয়া কথা-বার্তা তো হইতেই পারে, কিন্তু কবিতা’টা কেমনে কবিতা হয়া উঠলো, সেইটাও দেখাটা দরকার।
অথচ ধইরা নেয়া হয় যে, কবিতা হইছে বইলাই ত কবিতা নিয়া কথা; কিন্তু কিভাবে এইটা কবিতা হইলো, সেইটা সবসময়ই বাদ থাকে। কবিতার আলোচনায় এইটারেই বরং মুখ্য কইরা তোলাটা বেশি জরুরি বইলা আমি মনে করি।
উৎপলকুমার বসু কবিতার জায়গাটাতেই কনসার্ন, ভাষা কিভাবে কবিতা হয়া উঠে, সেই জায়গটাতেই উনি ফোকাসড। যার ফলে, উনার কবিতা খুবই কাব্যময়; তার এই ‘ঘোর-লাগা’ কবিতার দুনিয়াতে পাঠক বিহ্বল হয়া উঠেন, এইটা উনার কবিতার এচিভমেন্ট। কিন্তু একইভাবে এই ‘ঘোর-লাগা’/’ইঙ্গিতময়তা’ যদি ভাষারেই সেন্টার করতে থাকে তাইলে কবিতা ক্রমশঃ ঝাপসা হয়া আসতে থাকবে, এইরকমটাও মনে হয়।
মে ৬, ২০১১।
#
…উৎপলকুমার বসু’র কবিতা পড়তে গিয়া আমার প্রায়ই মনে হয়, একটা অন্ধ গলির শেষে গিয়া পথ হাতড়াইতাছি, কোন শেষ নাই, প্রতিবন্ধকতা আছে, ঠেকতে ঠেকতে যাইতেছে, এইটাই হয়তো সেই জিনিস যারে তিনি “উদ্দেশ্যহীনতা” বললেন।
এই জায়গাটাতে আমার মনে হয়, একটা কবিতা যদি তার আল্টিমেট কোন গন্তব্যকে চিহ্নিত করতে না পারে তার মধ্যে কোন ‘সম্পূর্ণতা’ তৈরী হয় না। আবার জোর কইরাই এইটা ক্রিয়েট করা যায় না, যদি না থাকে। আর এই ধারণা থাইকাই হয়তো, উৎপলকুমার বসু’র ‘যোগসূত্র’ এ দেয়া সাক্ষাৎকারটার একটা অংশ, যেইটা পরবর্তীতে তার ‘কবিতা সংগ্রহ’ এর ফ্ল্যাপে ব্যবহার করা হৈছে, সেইটা পড়ার সময় তার একটা রি-রাইট আমি করছিলাম। সেইটা এখন আবার হারাইয়া ফেলছি। এই সুযোগে সেইটা নিচে আবার রি-কল করার চেষ্টা করলাম।
উৎপলকুমার বসু:
“কবিতা আমরা জানি, কোনও স্বয়ংসম্পূর্ণ বস্তু নয়। কবিতা পাঠক এবং কবির মধ্যে এক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকেন্দ্রিক চরিত্রের জন্য কবিতায় ব্যাকরণ, শৈলী এবং নশ্বরতা তৈরী হয়েছে। অপরদিকে, প্রতিক্রিয়ার জন্মদাত্রী বলে কবিতায় প্রাণ আরোপিত হয়। কবিতায় প্রায়ই আমরা শ্বসিত বস্তু বা ‘অরগনিক’ অস্তিত্বের চিহ্ন দেখে থাকি।
এই দুই কেন্দ্র – অর্থাৎ বস্তু ও প্রাণ, ব্যাকরণ ও বিদ্রোহ, শৈলী ও প্রথামুক্তিকে জুড়ে রয়েছে এক সেতু, যার নাম নশ্বরতা। কবিতার মৃত্যু হয়। লুপ্ত হয় তার ভাষা, সংকেত, উপদেশ ও কলাকৈবল্য … … ”
রি-রাইট করা:
“কবিতা আমরা জানি, কোনও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা বস্তু নয়। কবিতা কেবলমাত্র পাঠক এবং কবির মধ্যে এক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী পদ্ধতি-ই না খালি। তবে তার আছে এক পদ্ধতিকেন্দ্রিক চরিত্র, যার জন্য কবিতায় ব্যাকরণ, শৈলী এবং নশ্বরতা তৈরী হয়েছে। অপরদিকে, প্রতিক্রিয়ার জন্মদাত্রী বলে কবিতায় প্রাণ আরোপিত হয় কবিতায় প্রাণ থাকে বলে প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়। কবিতায় প্রায়ই আমরা যার রূপ দেখতে পাই শ্বসিত বস্তু বা ‘অরগনিক’ অস্তিত্বের চিহ্ন হিসাবে।
এই দুই কেন্দ্র – অর্থাৎ বস্তু ও প্রাণ, ব্যাকরণ ও বিদ্রোহ, শৈলী ও প্রথামুক্তিকে জুড়ে রয়েছে এক প্রবাহমানতার সেতু, যার নাম নশ্বরতা। কালে কালে যার বিলুপ্তি ঘটে আর পুনারাবৃত্তি হয়। কিন্তু কবিতার মৃত্যু হয় না। লুপ্ত হয় তার ভাষা, সংকেত, উপদেশ ও কলাকৈবল্য … … ”
চট্রগ্রাম, ১৩/০৪/২০০৬।
Leave a Reply