ছেলে-কবিদের গল্প অথবা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো’র ড্রিম

মনে মনে যাঁরা জীবনানন্দ এইরকম রবীন্দ্রনাথের মতোই কবিতা লিখতেছিলেন ছেলে-কবিরা। তেমন কোন টেনশনই ছিলো না। যেহেতু লিখেন বাংলা-ভাষায়, এই কারণে থাকতে থাকেন সিলেটে, চিটাগাংয়ে, সিরাজগঞ্জে অথবা ধরেন ঢাকাতেই। বয়স যা-ই হোক মনে মনে উনারা এখনো কচি, কিছুটা সবুজ। ভানুসিংহের পদাবলী পার হইছেন মাত্র। মৃণালিনী দেবী’রেই খুঁজতেছেন, পাইলেই কবি হয়া যাইতে পারবেন, এইরকম একটা ব্যাপার। কিন্তু যুগ তো বদলাইছে। সাঁই সাঁই কইরা চইলা যাইতেছে টাইম। ২০১৫ থিকা ২০৪৬-এ। মানে, ভাবতে পারাটাই তো মেইন, ভাবতে পারলেই তো হইলো! ইয়াং-কবি বইলা ইন্টারনেট ইউজ করেন, পাশের বাড়ি’র ভাবী বা কলেজে সেইম ক্লাসে পড়া মৃণালিনী দেবী’রে থুইয়া আলাদা আলাদা কইরা একজন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো’রে আবিষ্কার করার সম্ভাবনার মধ্যেও থাকতে থাকেন; ধরেন পরে আবার মৃণালিনী দেবীর কাছে ফেরত আসলেন, এইরকম আর কি। থাকে না কতকিছু। পরের’টা আগে ঘটতে থাকে আপনার লাইফে, আগেরটা পরে। লাইফ তো নন-লিনিয়ার আসলে।

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্রনাথ পদ্মার বোটের কথা ভাবেন। খুবই একলা লাগে তার। যদিও ফ্যাভিকল-এর আঠার মতো লাইগা থাকে কলেজ-প্রেমিকা। শে আসলে তারে বিয়া-ইকরতে চায়, এইটা রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পারেন। কিন্তু যে মে বিয়া করতে চায় শে কি মৃণালিনী দেবী হইতে পারবে? তার কনফিউশনই লাগে। নাকি নাটোরের দিকে চইলা যাবেন? বনলতা সেনের মিষ্টি খাইতে? ঠিক ডিসাইড করতে পারেন না। পাড়-ভাঙা যমুনার তীরে হাঁটেন। কোনদিন নৌকায় ঘুরতে থাকেন, কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই, কবিতা লিখেন, নাম দেন – গন্তব্যহীন। বাসায় ফিরেন সন্ধ্যায়, তখনো মন চঞ্চল,পবনদাস বাউলের গান শুইনাও মন মানে না! কলকাতার সিনেমার গান ট্রাই করেন। উল্টা-পাল্টা ঘুরতে থাকেন ইন্টারনেটে। কারে বলা যায় এমনো দিনের কথা! দুই একজনরে নক করেন ফেইসবুকের মেসেজে, কেউ পাত্তা দিতে চায় না, হয়তো সিরাজগঞ্জে থাকেন বইলা। আজকে যদি ঢাকায় থাকতেন, তাইলে এইরকম ইগনোর কি করা যাইতো তারে! যমুনার নৌকা কি তার পদ্মার বোট হয়া ঘুইরা বেড়াইতো না অন্তঃত একশোজনের নিউজফিডে!

মন-খারাপ কইরা সে ঘুমাইয়াই যাইতে নিছিলো, না খাইয়া। টিনের চালে শিশিরের শব্দে সে ফিল করতেছিল যেন কবরের ভিতর শুয়া আছে, যদিও মরে নাই সে। কেন সে মরে না, যখন সে রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ না! তখনই টুং কইরা আওয়াজ হয় মোবাইলে, সে দেখতে পায়, লেখা, ‘জেগে আছো?’

মৃত্যুর ভিতর থিকা একটা আনফুলফিলড স্বপ্নে সে জাইগা উঠে।

পাবলিকলি ডিসট্যান্স মেইনটেইন করতেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো

পাবলিকলি ডিসট্যান্স মেইনটেইন করতেছেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো  এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

২.

জাইগা থাকা কনশাসনেসের ভিতর মরতে না পাইরা তখন কথা কইতেছিলেন ঢাকার জীবনানন্দ। উনি বিপ্লবী রবীন্দ্রনাথ বা পাবলিক জীবনানন্দ। কবিতা লিখেন:

হোয়াট ইজ জীবননান্দ? জীবনানন্দ হইলেন যিনি রবীন্দ্রনাথের চাইতে বড়
হু ইজ রবীন্দ্রনাথ? রবীন্দ্রনাথ হইলেন যিনি জীবনানন্দের চাইতে ছোট

#মানি_ইজ_হোয়াট_মানি_ডাজ

 

শ’খানেক লাইক পড়ে কবিতাতে। একজন বড়কবি’র লাইকও পাওয়া যায়, আর অনেক অনেক ছোটকবিরা তো আছেনই,যাঁরা বড়কবি হইতে চান একদিন, উনারাও লাইক দেন। তারপরো ফিজিক্যালি ঢাকায় থাকতে ভালো লাগে না জীবনানন্দের, ভাবেন যে চইলা যাবেন হয়তো, সিরাজগঞ্জে কোনদিন, ড্রিমে ভাসতে ভাসতে। কিন্তু সিরাজগঞ্জের ইন্টারনেট স্পিড কি স্কাইপের সার্পোট দিতে পারবে? অথবা কলকাতায় চইলা গেলেন বেটার চাকরি’র আশায়, বরিশালে বেশিদিন টাইম নষ্ট না কইরা; ইকনোমিক্যাল স্ট্যাবিলিটি পাইতে না পাইতেই, পাইছেন কি পান নাই – এইরকম বুঝতে না বুঝতেই ট্রামের নিচে চাপা পইড়া গেলেন… হইতে পারে না এইরকম!

কিন্তু লাইফের প্রেসার তারে ব্রেথ-ই নিতে দেয় না; প্রেমিকা ছিল, গার্লফ্রেন্ড ছিল, কাজের বুয়াও ছিল, এমনকি বিয়া করা বউও থাকতে পারতো, তারপরো প্রতিরাতে জাইগা থাইকা আজাইরা প্রেম করার ভূতে পাইলো তারে! সারারাতের প্রেমের লাইগা যেই সারাদিন ফেসবুকের মেসেজবক্সে সে টাইমগুলারে চালান কইরা দেয়, সেই প্লেজার কি সম্ভব হবে কোনদিন, ঢাকার লাইফস্টাইলের বাইরে? এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখেন ফিরা আসছে শে, আবার চইলা যাওয়ার জন্যে –

:শোনো, আমি একটু রান্না করে আসতেছি।

:আপনি রান্নাও করেন! আমি তো ভাবতাম আপনি শুধু বই পড়েন আর সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস লিখেন!

:হা হা হা… মেয়েদেরকে যে কতকিছু করতে হয়…

:আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথ যে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো’র বুকে হাত দিছিলো, এইটা জানেন?

:কোথায়?

:বুকে… দুধে 🙂

:ফাজিল কোথাকার! তোর সাহস বাইড়া গেছে, না?

:তাইলে কি মাই বলবো 🙂

:যা খুশি তাই বলো… তোমার ভাষারে কি আর আমি কন্ট্রোল করতে পারবো!

:না, ব্যাপারটা কিরকম না? মৃণালিনী দেবী’র মাইয়ে কিরবীন্দ্রনাথ কখনো হাত দিছিলো? বা উনার বউয়ের মাই’য়ে তো দিছিলোই, তাইনা? বা এই যে ‘মা’ ডাক এইটা কি ‘মাই’ থিকা আসছে?

:আমার তলপেট’টা ব্যথা করতেছে… প্যাড’টা যে কই রাখলাম…

:আমি কিইনা পাঠাবো?

:না, আমার প্যাড আমি-ই কিনতে পারি… খুঁজেই পাইতেছিনা…

:খুব বেশি ব্যাথা করতেছে তোমার?

:থাক, আর আদর দেখাইতে হবে না… দাঁড়াও চেইঞ্জ কইরা আসি…

 

কনফিডেন্ট ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো বইসা আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আনইজি ঠ্যাংয়ের তলে

কনফিডেন্ট ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো বইসা আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আনইজি ঠ্যাংয়ের তলে

 

৩.

চেইঞ্জরুমের লিক হওয়া ভিডিও দেখতেছিলেন চিটাগাংয়ের রবীন্দ্রনাথ। ভাবতেছিলেন, গে প্রতিভার নাম-ই হইলো মাস্টারবেশন। চিটাগাং বইলাই কি পাখিরা একটা ডানা পিছনে রাইখা ওড়বে? এইটা আসলে অন্যদের একটা ওয়ে-আউট দিতে পারে, এই জোকস’টা। কত যে অবদমন, কতভাবে যে ফাইট্টা বাইর হয়া আসে। কবিতাতে, গল্পে, স্ট্যাটাস-বাণীতে। মে বি সাগরের ঢেউয়ের চাইতে বেশি। কর্ণফুলীর সাম্পান আমি সাগরে না যাই আর। জিইসি’র মোড় থিকা হাঁটতে হাঁটতে প্রবর্তকে যাই আর ফিরা আসি। ডেইলি রুটিনের ভিতর আমার প্রেম তোমারে ধামা-চাপা দিতে পারবো না আমি? অন্য কোন অভ্যাসের ভিতর? পারবো না?

সিলেটের জীবনানন্দ ভাবেন তখোন, দুঃখগুলা পাহাড়ের মতোই জমাট অথবা নিচু হয়া থাকা মেঘ; একটু গুঁতা দিলেই ছাগলের মতো ব্যা ব্যা কইরা ঝইড়া পড়বে গুতাকারিনী’র উপর। তার আগে অব্যক্ত ভালোবাসাসকল কি কইরা বইসা থাকবে এতোক্ষণ! পায়ে পায়ে কি লাগবে না ঠোক্কর। সন্ধ্যার বেদনা কি রাষ্ট্র অ্যাকোমোডেড করবে না কোনদিন!

এইসব বিষন্নতা, প্যানপ্যানানি’র ভিতর দলে দলে রবীন্দ্রনাথরা মার্চ পাস্ট করতেছেন নিউজফিডে ফেইসবুকের। প্রভাবলি উনারা এখন মুসলিম কাজী নজরুল ইসলাম-এ ট্রান্সফর্ম হইতেছেন আর গাইতেছেন…

চল চল চল
উপ্রের আকাশে বাজে ড্রাম
নিচের মাটি কাঁপতে থাক
চল চল চল

জসীমউদ্দিন, জসীমউদ্দিন’রা কই! বাংলাদেশের গীতিকবিতা নিয়া উনারা কি নাটক করবেন না, ব্রিটিশ কাউন্সিলের থিয়েটারে? লিখবেন না কবিতা?:

এইখানে তোর গ্রান্ডমা’রকবর
ডালিম গাছের তলে
থার্টি ইয়ারস ভিজায়া রেখেছি
চ্যানেল আইয়ের জলে

আপেলে প্রেরণা নাই আসলে, নারীতে আছে! আর এইকারণে উই শ্যুড ক্রিয়েট মোর ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ইন আওয়ারলিটারেচার! বোর্হেস পড়া একজন পন্ডিত রিকেমন্ড করতে থাকেন। আর উনার পন্ডিতি শুরু হইতে না হইতেই উনি যে বউ-এর জামাই সেই বউ চইলা আসে উনি যে বাচ্চাদের বাপ সেই বাচ্চাদেরকে নিয়া, পয়লা বৈশাখের মেলা থিকা। উনার হাতের মোবাইলফোন আর কথা কইতে পারে না তখন, বোবা হয়া যায়। যেহেতু মোবাইলফোন আর মোবাইলফোন নাই, সেই পন্ডিতও আর মানুষ থাকতে পারে না; ভুল প্রপাগান্ডার কারণে, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো’রে ক্যাসানোভা বলার কারণে শিয়াল, গাধা এবং কুত্তা হয়া যান। দূর থিকা ভেসে আসা ঘেউ ঘেউ মিলাইয়া যাইতে থাকে একটা সময়।… মনে হইতে থাকে, এইসবকিছুই আসলে কল্পনা!

 

৪.

এইগুলার কোনকিছুই তো আর ট্রু না, তাই না? ছেলে-কবিরা ভাবে, খালি কবিতা লিইখা কি হবে? গল্পও লিখা লাগবো না কিছু, কবি হইতে হইলে? মানে, লেখা তো যাইতেই পারে।

 

এপ্রিল ১৫, ২০১৫।

Leave a Reply