সাহেবজানের পাকিজা হওয়া

বিয়া যে কি ইর্ম্পটেন্ট জিনিস এইটা পাকিজা (১৯৭২) সিনেমা দেখলে বুঝতে পারা’র কথা। বিয়া পড়ানোর সময় সাহেবজান-এর নাম দেন রাজ কুমার পাকিজা বইলা আর সেইটাই সিনেমার নাম।

সিনেমাটাও প্রেম আর বিয়া নিয়াই। অশোক কুমার নার্গিস নামের এক তাওয়াইফরে (তাওয়াইফরে বেশ্যা বইলা ট্রান্সলেট করলে ভুল হবে) কথা দেন বিয়া করার, বাড়িতে নিয়া আসেন, কিন্তু তার বাপ তারে জায়গা দেয় না, তখন নার্গিস দৌড় মাইরা চইলা যায়, একটা কবরস্থানে গিয়া এক মেয়েরেই পয়দা দেয় শে। সেই মেয়ে’রে তার খালা নিয়া আইসা তাওয়াইফই বানায়। কিছুদিন পরে অশোক কুমার তার খোঁজ পাইয়া যায়, তখন ট্রেনে কইরা পালাইয়া যাওয়ার সময় রাজকুমার (সেলিম) মীনাকুমীরী’রে (সাহেবজান) ঘুমানো অবস্থা দেখে আর একটা চিঠি লেইখা তার পায়ের আঙুলের চিপায় রাইখা যায়। সেই চিঠির কথা সাহেবজান আর ভুলতে পারে না। এর মধ্যে এক পাওয়ারফুল জমিদার, যে নাচ-গানের সমঝদার, সাহেবজানরে ভাড়া কইরা বোটে নিয়া যায়, তখন পাগলা হাতি আসে নদীর পাড়ে আর জমিদার তাদেরকে গুলি করলে হাতিগুলি আইসা তারে মাইরা ফেলে আর সাহেবজান ভাসতে ভাসতে মায়াবী নদীর তীরে’র একটা তাবুতে চইলা আসে আর ডাইরি পইড়া জানতে পারে এই লোকই সে, সেলিম; যে তারে চিঠি লিখছিলো। সেলিম হইলো ফরেস্ট অফিসার; পরের দিন সে যখন কাজে যায় তখন কুঠি’র লোকজন আইসা সাহেবজানরে খুঁইজা পায় আর নিয়া যায়।

ফিরা আসার পরে এক রাত্রে, যে খুব টাকা পয়সা দিতো মাহফিলে, কিন্তু সোশ্যাল গ্রেড খুব নিচে, এইরকম একটা লোক থাকতে আসে সাহেবজানের সাথে; আর একটা সাপ আইসা বেশ ভৌতিকভাবে তারে মাইরা ফেলে (সৌন্দর্য্য সবসময় একটা ক্লাস সুপিয়রিটির ব্যাপার, এইখানে নিচা ক্লাসের লোকজনের কোন একসেস থাকতে পারে না)। সাহেবজান পালায়, কিন্তু ট্রেনে চাপা পড়তে নেয়, তখন অনেকের সাথে সেলিম তারে দেখে, বাড়িতে নিয়া আসে। আবারও সেই ইস্যু তৈরি হয়, নাম পরিচয় না-জানা মাইয়া’রে তো বাড়িতে রাখা যাবে না আর সাহেবজান বলে যে তার কিছু মনে নাই; কিন্তু সেলিম যখন তারে নিয়া বাড়ি থিকা বাইর হয়া আসে আর সুন্দর একটা ঝর্নার পাশে দাঁড়ায়া প্রেমের কথা বলতে থাকে, তখন সাহেবজান সেলিমের পায়ে পইড়া যায় বলে যে, সে তো এক তাওয়াইফ! এইটা জানার পরে সেলিমের প্রেম মনেহয় আরো বাইড়া যায় আর ব্যাকগ্রাউন্ডে মিলনের প্রেমের গান বাইজা ওঠে।

সেলিম তারে বিয়া করতে নিয়া যায় এক পাহাড়ের উপরে, মসজিদের বাইরে; তখন সাহেবজান কবুল বলতে পারে না, তাওয়ইফ পরিচয় তার প্রেমিক মানতে পারলেও সে তো মানতে পারে না; চিৎকার দিয়া পালায় সে, আবার। এরপরে সেলিম তারে চিঠি পাঠায় তার বিয়ার প্রোগ্রামে নাচার লাইগা, ওই প্রোগ্রামে গিয়াই জানা যায় সাহেবজান আসলে অশোক কুমারেরই মাইয়া আর চাচাতো ভাই-বইনে বিয়া তো হইতেই পারে। এরমধ্যে অশোক কুমারের বাপ আবার গুলি কইরা বসে সাহেবজান’রে, তখন মেয়ে’রে বাঁচাইতে গিয়া অশোক কুমারই গুলি খায়। মানে, প্রেমিকার লাইগা না মরতে পারলেও মাইয়ার লাইগা মরতেই হয় তারে, দুর্বল পুরুষরে। শেষে কুঠিবাড়ি’তে গিয়া মেয়ের হাত সে জামাইয়ের হাতে ধরাইয়া দেয়। তাওয়াইফ বিয়া’র ভিতর দিয়া নরমাল সোসাইটিতে চইলা আসতে পারে।

প্রেম আছে, থাক; বিয়া খুবই ইর্ম্পটেন্ট। মানে, প্রেম যে আছে এইটার গ্যারান্টি বা সার্টিফিকেট হইলো বিয়া। সার্টিফিকেট ছাড়া আপনারে যেমন কেউ চাকরি দিবো না, বিয়া ছাড়াও প্রেম বইলা কোনকিছুর এগজিসটেন্স পসিবল না। আর প্রেম জিনিসটাও এক ধরণের ফ্যান্টাসি করতে পারার ক্ষমতা। মানে, ‘তাওয়াইফ যে মানুষ’ এইটা ভাবতে প্রেম লাগে না; কিন্তু ‘তাওয়াইফরাও যে মানুষ’ এইটা ভাবতে পারাটা হইতেছে প্রেম। সাহেবজান’রে পাকিজা বইলা ডাকতে হয়, সেলিম’রে আমি নিশ্চিত সল্লু বইলাই ডাকবে পাকিজা, আবেগের মোমেন্টগুলাতে। মানে, তিনি-ই সেলিম যিনি টাইম টু টাইম সল্লু হইতে পারবেন। আর পাকিজা না হইতে পারলে সাহেবজানের এগজিসটেন্সই থাকার কথা না। যা-ই হোক…

১৯৭২-এ বাঈজী’রা তো সোসাইটিতে ইনক্লুড হয়া গেছেন, কিন্তু এই সিনেমা আসলে ফিল্ম অ্যাকট্রেসদেরকে রিলিফ দেয়ার কথা যে, বিয়ার ভিতর দিয়া উনারা উনাদের পারফর্ম করার যে ‘পাপ’ সেইটা ওভারকাম করতে পারেন, এইজন্য বিয়ার পরে অভিনয় করার রীতিও হিন্দি-ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে বহুদিন আছিলো না। বিয়া মানে এন্ড অফ পারফর্মেন্স, এন্ড অফ ডিজায়ার… যদিও এইটা কখনোই না, কিন্তু এইভাবে দেখা তো আরামের, সোসাইটির জন্যই।

পাকিজার গানগুলি তো দুর্দান্ত। ওই যে একটা লাইন আছে, ‘হামরি না মানো তো সিপাইয়া সে পুছো…’ মানে যে আমার ওড়না ধইরা টান দিছে তারে জিগাও… যেন সে আর মিছা কথা কইতেই পারবো না… (যদিও এইটা একটা নখরাই) অথচ মানুষ বাঁইচা থাকে নিজেরে ব্লাফ দিয়াই (কয়, ড্রিম দেখতেছি, ইল্যুশনে আছি), অনেকগুলি মিথ্যারে সে সত্যি বইলা ভাবতে পারে বইলাই, সোসাইটিও তো, সেইটাই… একটা কমন ট্রমা।

 

Leave a Reply